ঐদিনের কথা আমার পরিষ্কারভাবে মনে আছে। চিংফোর্ডে আমাদের বাড়ির ঠিক পেছনেই পার্কটা ছিল, আমার বাবা এবং ভাইয়ের সাথে সমসময় এখানেই ফুটবল খেলতে আসতাম আমি। কোনো গোলবার নেই, নেই কোনো ভালো খেলার মাঠ। শুধু মাঠভর্তি ঘাস আর দুটো গাছ; এতেই আমরা খুশি ছিলাম। তখন আর্সেনালের ইয়ুথ টিমের হয়ে খেলছিলাম আমি। বলতে গেলে, দারুণ একটা সুযোগ ছিল সেটা।
আমার বয়স তখন মাত্র আট বছর। একদিন বাবার সাথে পার্কে হাটছিলাম, হুট করে তিনি বললেন, “তোমাকে কিছু বলতে চাচ্ছিলাম।”
আমি বললাম, “হ্যাঁ, বলো। কী হয়েছে?”
আমার মনে আছে, তিনি তার হাত আমার কাঁধে রাখলেন, এবং বললেন, “শোনো, হ্যারি… আর্সেনাল তোমাকে আর তাদের দলে রাখছে না।”
তখন ঠিক কেমন লেগেছিল, সেটা আমি এখন আর মনে করতে পারি না। সত্যি বলতে, আমি তখন বুঝতেই পারিনি, বাবা যা বললেন তার অর্থ আসলে কী। আমার বয়স তখন খুবই কম। কিন্তু আমার মনে আছে বাবার প্রতিক্রিয়া। তিনি আমাকে কিছু বলেননি, আর্সেনালের নামেও নিন্দা করেননি। তাকে দেখে মনেও হয়নি তিনি বিরক্ত হয়েছেন। তিনি শুধু বললেন,
“হ্যারি চিন্তা করো না। আমরা আরও বেশি পরিশ্রম করব – এখানেই থেমে যাওয়া চলবে না, আর নতুন একটা ক্লাব খুঁজে নেব, ঠিক আছে?”
আপনি এখন হয়তো ভাবছেন, আমার আরও বেশি মন খারাপ হওয়া উচিত ছিল। এবং আর সকল বাবার মতো, যদি তারা চায় তাদের সন্তান একজন পেশাদার ফুটবলার হবে, তারাও অন্যভাবে বিষয়টিকে নিত। কিন্তু আমার বাবা, যা কিছুই হোক না কেন, কখনও আমার উপর বাড়তি চাপ দেননি। সবসময় তিনি সফলতার কথা চিন্তা করতেন। যেকোনো পরিস্থিতিতে তিনি একটি কথাই বলতেন, “থেমে থাকা চলবে না।”
এবং আমরা সেটাই করেছিলাম।
আর্সেনালের পর সবার সাথে বেশ সময় নিয়ে আলোচনা করে আমি স্থানীয় একটা দলে খেলা শুরু করলাম। তারপর ওয়াটফোর্ডে একজন স্কাউটের নজর গিয়ে পড়ল আমার দিকে, তিনি আমাকে ট্রায়ালে যাবার কথা বললেন। মজার কথা কী জানেন, ওয়াটফোর্ডের হয়ে টটেনহ্যামের সাথে ম্যাচ খেলার পর টটেনহ্যামে যোগ দেবার সুযোগ এসে গেল আমার সামনে। এবং তাদের ইয়ুথ অ্যাকাডেমিতে নাম লেখালাম আমি। আমার মনে হয়, সাদা জার্সিই আমার গায়ে ভালো মানায়। আমার মনে আছে, আর্সেনালের বিপক্ষে যেদিন প্রথম ম্যাচ খেললাম, প্রচণ্ড ক্ষেপে ছিলাম আমি। শুনতে কিছুটা বেখাপ্পা লাগবে, আমার বয়স যখন মাত্র আট বছর, তখন আমাকে বের করে দিয়েছিল তারা। কিন্তু প্রত্যেকবার যখন আমরা যখন তাদের বিপক্ষে খেলতাম, আমি ভাবতাম, “ঠিক আছে, এখন দেখা যাবে, কে সঠিক ছিল আর কে ছিল ভুল।”
এখন সে সময়ের কথাগুলো স্মরণ করে মনে হয়, হয়তো আমার জীবনে ঘটনা অন্যতম সেরা সময় ছিল সেটা। কারণ আমি খুঁজে পেয়েছিলাম জীবনের নতুন এক মানে। এমন কিছু, যা এর আগে আমার মধ্যে ছিল না।
যখন টটেনহ্যাম আমাকে দুই বছরের জন্য লোনে পাঠাল, তখন নানা রকমের প্রশ্ন ঘুরছিল আমার মাথায়। প্রশ্ন উঠছিল আমার মনে, আমি কি পাবো প্রিমিয়ার লিগে অনন্ত একটা গোল করার সুযোগ? তবে ঐ দুই বছরে অনেক কিছু শিখেছিলাম আমি।
২০১২ সালে মিলওয়ালের ম্যাচের কথা মনে পড়ে। তখন আমরা রেলিগেশন এড়ানোর জন্য লড়ছিলাম। দ্য ডেনে আমার প্রথম ম্যাচ। রেফারি একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে, শুধুমাত্র একটা ভুল সিদ্ধান্ত। এবং এক মুহূর্তের মাঝে গ্যালারির দর্শকরা ফেটে পরে। এমন পরিস্থিতি করে তোলে যে তাদের থামাতে ম্যাচ পাঁচ মিনিট বন্ধ করে রাখতে হয়। আর আপনাকে বুঝতে হবে, আমার বয়স তখন মাত্র ১৮ বছর। চারিদিকে দেখছিলাম আমি, “বাপরে, এ তো পুরো পাগলাটে কাণ্ড!”
মৌসুম আরও সামনে এগোতে থাকল, কিন্তু আমাদের উন্নতির লক্ষণ নেই। ড্রেসিংরুমে কয়েকজনের কথায় ভীষণ অবাক হয়েছিলাম আমি। “ভাই! আমরা যদি রেলিগেটেড হই, আমার বেতন অর্ধেকে নেমে যাবে” অথবা “যদি আমরা রেলিগেটেড হই, তবে আমার খেলাই বন্ধ হয়ে যাবে।”
তাদের সবার বাড়িতে ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চা ছিল – সত্যি বলছি, তখনই এই খেলার নতুন একটি দিক উন্মোচন হয় আমার সামনে। কিছু মানুষ ফুটবল শুধুমাত্র খেলা মনে করে খেলছে না, খেলছে তাদের পরিবারকে ভালো রাখতে। মিলওয়ালে আমার অভিজ্ঞতা আমাকে বুঝতে শেখায়, আমি আর ছোট্ট কিশোর নই। খুবই গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ছিল আমার জন্য – আর তখন থেকে আমি দারুণ খেলেছিলাম, এবং সেটা যে নিছক কাকতালীয় ব্যাপার, তা আমি মনে করি না। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমরা জেগে উঠেছিলাম। এজন্য মিলওয়ালের সমর্থকদের সাথে আমার আত্মার একটা যোগাযোগ তৈরি হয়েছিল। তাদের ভালোবাসি আমি… যদিও তারা একটু বেশি পাগলাটে আচরণ করে।
আমি আশা করছিলাম, টটেনহ্যামের মূল দলে থাকার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ দিতে পেরেছি আমি। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তারা আবারও আমাকে লোনে পাঠাল – এবং ঐ দিনগুলো ছিল খুবই কঠিন সময়ের শুরুমাত্র। তাদের মূল দলে খেলার সুযোগ খুবই কম হয়েছে আমার। তখন তারা চ্যাম্পিয়নশিপে খেলত – আর আমি আমার ফ্ল্যাটে বসে বসে চিন্তা করতাম, “লেস্টারের হয়ে চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে পারছি না আমি… স্পার্সের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে খেলব কী করে?”
আমার ক্যারিয়ারে প্রথমবার হতাশায় ভুগতে শুরু করেছিলাম আমি। বেশ রাত করে আমার পরিবার চলে আসে আমার কাছে – এবং তাদের সাথে কিছুটা উত্তপ্ত কথাবার্তা হয় আমার। আমি এতটাই মুষড়ে পড়েছিলাম যে বাবাকে বলি, এই ক্লাব ছাড়তে চাই আমি। এমন কিছু করলে হয়তো আমার চড়া মাত্রা মুল্য দিতে হতো, কিন্তু সত্যিই আমার নিজের নিজেকে নিয়ে ধোঁয়াশা কাজ করছিল। বাবা বললেন, “দেখো, খেলতে থাকো – থেমে যেয়ো না। দেখবে, একদিন সব ঠিক হয়ে গেছে।”
কয়েক সপ্তাহ পরের কথা, আগের মতো আমি আমার ফ্ল্যাটে বসে আছি, এবং সে সময়ে ট্রেনিং না থাকলে আমি এনএফএল দেখতাম, এরপর হয়তো গেম খেলতাম বা ইউটিউবে ভিডিও দেখে সময় কাটাতাম। তো, একদিন হঠাৎ করে আমি টম ব্র্যাডির ডকুমেন্টারি খুঁজে পেলাম।
সারাজীবন সবাই টমকে নিয়ে দ্বিধায় ভুগত। এমনকি যখন কলেজে ছিল সে, কোচেরা তাকে অন্য একজন খেলোয়াড়কে দিয়ে পরিবর্তন করতে চেয়েছিল। ভিডিওতে টমের এনএফএল ড্রাফটের আগের একটা ছবি দেখাল, সেখানে গায়ের জামা খুলে ফেলল সে… হাস্যকর ছিল সেটা। কারণ টম দেখতে আর আট-দশটা সাধারণ মানুষের মতোই। বুঝতে পারছেন কি বোঝাতে চাচ্ছি? এবং একটা কোচ তো বলেই ফেলল, “এই ব্রাডি ছেলেটাকে দেখ। লম্বা আর কেমন শুকনো, গায়ে একরত্তি মাংস নেই। মনে হচ্ছে কোনোদিন ব্যায়ামই করেনি।”
টমের ভেতর আমি নিজেকে খুঁজে পেলাম। আমাকে নিয়েও অনেকে এমন মন্তব্য করেছেন, “আসলে কী জানো, ওকে ঠিক স্ট্রাইকারের মতো দেখায় না।”
টমকে দেখে আমি নতুনভাবে উৎসাহ পেতে লাগলাম। ব্রাডি নিজেকে প্রচণ্ডভাবে বিশ্বাস করত – আর সে কখনও থেমে যায়নি, নিজেকে প্রমাণ করতে একটানা কাজ চালিয়েই গেছে। শুনতে অদ্ভুত শোনাবে, কিন্তু ঐদিন হঠাৎই যেন আশার আলো দেখতে পেলাম; লেস্টারে আমার ঘরের ঐ সোফাতে বসেই হঠাৎ মনে হলো, “আমি থামছি না। যতটা সম্ভব পরিশ্রম করে যাবো আমি, এবং একদিন আমার সুযোগ আসবেই। আর সেদিন সেটাকে হাতছাড়া করা চলবে না।”
বেশ কয়েকটা ম্যাচের পর আমার পুরানো দল মিলওয়ালের সাথে খেলা – এবং ঐ দলের সব থেকে ভালো ডিফেন্ডার সেদিন আমাকে ভয় পাওয়ানোর চেষ্টা করছিল। একবার থ্রো-ইনের সময় ঠিক আমার পেছনে ছিল সে এবং বলল, “ঐ, হ্যারি।”
আমি বললাম, “কী?”
সে বলল, “আমি কিন্তু এখনও একটা হলুদ কার্ড দেখিনি।”
আমি বললাম, “উম… ভালো…?”
এবং সে বললো, “হ্যাঁ ভালো কথাই তো, কারণ এখন একটা কার্ড আমি তোমার উপর ব্যবহার করতে যাচ্ছি।”
সোজা ভাষায় সে আমাকে কথা দিয়ে খোঁচাতে চাচ্ছিল। থ্রো-ইন থেকে বল এলো… দু’জনেই হেড দেবার উদ্দেশ্যে লাফিয়ে উঠলাম… ঘটনাক্রমে আমার কনুই গিয়ে লাগল তার পাঁজরে। নিচে পড়ে গিয়ে কাতরাতে লাগল সে। সে যখন নিচে পড়ে গেল, আমি তাকে একদম এড়িয়ে চলে গেলাম। আমি তাকে কিছু বলতেও যাইনি, একদম উপেক্ষা করে গেছি। আমার নিজের কাছে, তার কাছে এবং সবার কাছে আমি প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম যে, এসব কথায় প্যাঁচে ফেলে আমার আত্মবিশ্বাসে চিঁর ধরানো সম্ভব না।
পরের মৌসুমে আমি টটেনহ্যামে ফেরত এলাম। আমাদের ম্যানেজার আন্দ্রে ভিলাস-বোয়ার সাথে কথা হলো আমার। তিনি পুনরায় আমাকে লোনে পাঠাতে চাচ্ছিলেন। কয়েকটা ভালো ক্লাব আগ্রহী হয়েছিল আমার ব্যাপারে, কিন্তু আমার স্বপ্ন তো সেটা না। আমি তো শুধুমাত্র প্রিমিয়ার লিগে খেলার স্বপ্ন দেখিনি। আমার স্বপ্ন ছিল স্পার্সের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে খেলার।
তাই আমি তাকে সত্যি কথাই বলে দিলাম, “কোথাও যেতে চাই না আমি।”
আমার দিকে বিভ্রান্ত ভঙ্গীতে তাকালেন তিনি। আর আমার যা বলার ছিল, গড়গড় করে বলে দিলাম। আমি বললাম, “আমি প্রমাণ করে দেখাব যে এই দলে থাকার যোগ্য আমি। এবং আপনি ইচ্ছা করলে প্রতি শুক্রবার ম্যাচের আগে আমাকে বলতে পারেন যে আমি খেলার যোগ্য নই, আর আমি মাঠে নামছি না। তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমি দল ছেড়ে যেতে চাই না।”
আমার কথা কাজে লাগল। তিনি আমাকে মূল দলের সাথে অনুশীলন করার সুযোগ করে দিলেন – আমার আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে গেল। আমার সবসময় মনে হতো, আমার দক্ষতা আছে, কিন্তু আমাকে নিজের জন্য কিছু করতে হবে। আমার মনে হচ্ছিল ছোটবেলার স্বপ্নগুলো আমার সামনে নেচে বেড়াচ্ছে… কিন্তু ধরাছোঁয়ার একটু বাইরে। কিন্তু আমি অপেক্ষায় ছিলাম, স্বপ্নগুলো ছুঁতে যদি কেউ আমাকে সাহায্য করে! কিন্তু জীবন তো আর সবকিছু এভাবে পাইয়ে দেয় না, দেয় কী? আপনাকেই সেটা নিয়ে নিতে হবে।
অনুশীলনে আমি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখাচ্ছিলাম, কিন্তু ম্যাচে সুযোগ দেয়া হচ্ছিল না আমাকে। এরপর শীতের মৌসুমের দিকে তিনি চলে গেলে এবং দলের দায়ভার নিলেন টিম শিয়ারউড – তিনিই আমাকে সুযোগ করে দিলেন। এরপর, লোকে যেমনটা বলে, বাকিটা ইতিহাস। নিজের প্রথম তিন ম্যাচে টানা তিন গোল করি আমি। অবিশ্বাস্য লাগছিল সবকিছু, বিশেষ করে হোয়াইট হার্ট লেনে প্রথম গোলের সময়। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, প্রথম গোলের আগে যা কিছুর ভেতর দিয়ে গেছি আমি, সেসব কিছুই আজকের আমিকে তৈরি করেছে।
নিঃসন্দেহে পচেত্তিনো যখন কোচের চেয়ারে বসলেন, সবকিছু পালটে গেল। শুধু আমি নই, পুরো ক্লাবই। আমার ক্যারিয়ারে পচেত্তিনোর মতো প্রভাব আর কেউ রাখতে পারেনি, আর এর অর্থ তিনি যে শুধুই তার কোচিং কারিশমা দেখিয়েছেন, তা কিন্তু নয়; পুরো দলকে তিনি বেঁধেছিলেন এক সুতোয়। ফুটবলার হিসেবে তার যে দারুণ একটা ক্যারিয়ার রয়েছে, সে কথা কখনও মুখে আনতেন না তিনি। কারণ একজন ম্যানেজার হিসেবে এসব কথা বলা তার শোভা পায় না – তার অন্যতম কাজ খেলোয়াড়দের সাহায্য করা, যারা ভালো করছে তাদের, এমনকি যারা কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে তাদেরও। অবশ্য, যদি আপনি পরিশ্রম না করেন, আপনি যদি অলস প্রকৃতির হন… তবে তার কঠোর দিকটাই দেখবেন। এটাই – আপনি ঠিকমতো খেলছেন না, তার সাথে কথা বলার রাস্তাও বন্ধ। কিন্তু তাকে যদি আপনি সম্মান করেন, এবং তার জন্য পরিশ্রম করেন, তাহলে তিনি আপনাকে অঢেল সময় দেবেন।
আমার সবচেয়ে প্রিয় একটি স্মৃতি হচ্ছে, কয়েক মৌসুম আগে একটা ম্যাচে আমি হ্যাটট্রিক করলাম, ম্যাচের পর পচেত্তিনো আমাকে তার অফিসে ডাকলেন। তখন আমাদের ভেতর সম্পর্ক ভালো ছিল বটে, কিন্তু এখনকার মতোও নয়। তাই ভয়ে ভয়েই ছিলাম, কীসের জন্য ডেকেছেন কে জানে! আমি গিয়ে দরজা খুললাম… আর তিনি তার অফিসের চেয়ারে বসে ছিলেন সাথে গ্লাসে করে রেড ওয়াইন। চওড়া হাসি তার মুখে। হাত উঁচিয়ে তিনি ভেতরে ডাকলেন আমাকে, এবং বললেন, “এসো, ভেতরে এসো, চলো একটা ছবি তোলা যাক।”
তিনি আমার কাঁধে এক হাত রাখলেন, অন্য হাতে রয়েছে ওয়াইনের গ্লাস, এবং আমরা ছবি তুললাম। দারুণ ছিল সেই মুহূর্তটা। জীবনে প্রথমবার আমি ভেবেছিলাম, “ওয়াও, দারুণ একজন মানুষ তো।” অমায়িক একজন মানুষ উনি। ম্যানেজার এবং কোচ উভয় দিক থেকেই আমি তাকে সর্বোচ্চ সম্মান করি – অবশ্য ফুটবলের বাইরে তিনি আমার একজন ভালো বন্ধুও। একমাত্র ওনার জন্য আমাদের এই দলটা ভেতর আত্মার সম্পর্ক – আমরা সবাই সবার খুব ভালো বন্ধু, আর আমি মনে করি বর্তমান ফুটবলে এমনটা ঠিক দেখা যায় না।
আমার জন্য, প্রত্যাখ্যানটাই বোধহয় আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলোর একটি। ২০১৫ সালে আমি যখন প্রথম লন্ডন ডার্বির ম্যাচে আমার বুট পায়ে গলাচ্ছিলাম, আমার আর্সেনালের ইয়ুথ টিমে কাটানো ১১ বছর বয়সী সময়টা চোখের সামনে ভেসে উঠল। ঠিক যেন দেজা ভ্যু। প্রতিটা ম্যাচের আগে আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে এমন কিছু দৃশ্য, যেখানে আমার মাথার মধ্যে চলতে থাকে কীভাবে আজ আমি গোল করতে যাচ্ছি। “Left-foot curler into the bottom corner. Right-foot volley from the right corner of the box.” এভাবেই চলে আসছে, এভাবেই পুরো ডিটেইলে ভাবি দৃশ্যপটগুলো। আর্সেনালের খেলোয়াড়দের লাল রঙের জার্সি দেখে আমার গায়ের রোম দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।
টানেল দিয়ে যাবার সময়ে আমি মনে মনে ভাবছিলাম, “ঠিক আছে। ১২ বছর লেগে গেছে আমার। তাও দেখা যাবে, কে সঠিক ছিল আর কে ভুল।”
সেদিন দুটো গোল করি আমি। একটা গোল ছিল ৮৬ মিনিটের ম্যাচ জিতিয়ে দেওয়া গোল। ঐ মুহূর্তের কথা কখনও স্বপ্নেও ভাবিনি। গোলটা হয়েছিল হেডে, মনে হয় হেড থেকে দেওয়া আমার জীবনের সেরা গোল।
আমার মনে আছে, ম্যাচ শেষ হবার বাঁশি বাজার পর… সমর্থকেরা হাততালি দিচ্ছিল… আর আমার মনে হচ্ছিল, “দেখো – আমি বলেছিলাম কিন্তু।”
তবে বিষয়টা আর্সেনালকে নিয়ে নয়, বরং তার থেকেও বড় কিছু। বিষয়টা হচ্ছে নিজেকে নিজের সামনে প্রমাণ করা, পরিবারের সামনে প্রমাণ করা – যারা আমার জীবনের প্রতিটা বাঁকে আমাকে বিশ্বাস করে গেছে। যখন আমি মিলওয়েল, নরউইচ এবং লেস্টারে ছিলাম, যখন আমি নিজের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলাম, কিন্তু তারা আমাকে কখনও অবিশ্বাস করেনি।
এখন ধন্যবাদ অনেকের প্রাপ্য। ধন্যবাদ দেওয়া উচিত আমার বাগদত্তা, আমার বাবা, আমার মা, আমার ভাই চার্লিকে। টম ব্রাডলিকে, আমার সতীর্থদের, এবং পচেত্তিনোকে। এবং অবশ্যই টটেনহ্যাম সমর্থকদের। ছোট থেকেই আমি স্পার্সের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখেছিলাম। একটা বৃহৎ সময়জুড়ে আমার একটাই প্রেরণা ছিল, চোখ বন্ধ করে কল্পনা করতাম প্রিমিয়ার লিগে আর্সেনালের জালে আমি গোল দিচ্ছি। সে কাণ্ড করে ফেলেছি বেশ কয়েক বছর আগে, কিন্তু তার স্মৃতি এখনও তরতাজা। এখন আমার প্রেরণা কিছুটা ভিন্ন। এখন আমি চোখ বন্ধ করি এবং কল্পনা করি আমাদের নতুন স্টেডিয়ামে সতীর্থদের সাথে প্রিমিয়ার লিগের ট্রফি হাতে উল্লাস করছি আমি।
বিগত কয়েক বছর ধরেই অনেকটা কাছে ঘোরাফেরা করছি সেই স্বপ্নের, কিন্তু এই পার্থক্য ঘুচিয়ে দেওয়ার মন্ত্র একটাই – আর বোধহয় এই মন্ত্র কিছুটা পানসে লাগতে পারে। আমার বাবা যেটা বলেন, “আমাদের পরিশ্রম করে যেতেই হবে। কোনোভাবে থামা চলবে না। কাজ করে যাও।”
ঠিক তাই, কাজ চালিয়ে যেতেই হবে।
Come on you Spurs!
হ্যারি।