কোপা আমেরিকা জয়ের দৌড়ে যারা এগিয়ে || পর্ব ১

বাংলাদেশ সময়ের হিসাবে কোপা আমেরিকা শুরুর মাত্র কয়েক ঘন্টা বাকি। কিন্তু সব থেকে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, কোপা আমেরিকার মতো এত বড় প্রতিযোগিতা শুরু হবার কয়েক মুহূর্ত আগেও একটি প্রশ্ন এখনও অনেকের মাথাব্যথার কারণ। কোপা আমেরিকা শেষ পর্যন্ত হবে তো?

ইউরোপে করোনাভাইরাস বেশ নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। মাঠে ফিরতে শুরু করেছে সমর্থকেরা। তবে এমন কিছু হয়নি দক্ষিণ আমেরিকাতে। করোনার প্রবল আক্রমণের কারণে কলম্বিয়া-আর্জেন্টিনা থেকে এবারের আসর ব্রাজিলে নিলেও লাভ আসলে কিছুই হয়নি। এ দেশে মহামারী এখনও নিয়ন্ত্রণেই আসেনি। ১৪ জুন, বাংলাদেশ সময় রাত তিনটায় ব্রাজিল বনাম ভেনেজুয়েলা ম্যাচ দিয়ে এবারের কোপার পর্দা উঠবে। কিন্তু শুরুর মাত্র ২৪ ঘন্টা আগে খবর এসেছে, ভেনেজুয়েলা দলে ১৪ জন ও বলিভিয়া দলে নতুন ৪ জনের করোনা পজিটিভ। 

প্রথম ম্যাচ শুরুর আগে এমন ধাক্কা আসলেও প্রতিযোগিতা এবার মাঠে গড়াবেই। অন্তত কনমেবলের ভাবগতিক দেখে সেটাই আন্দাজ করা যায়। তাই কোপা আমেরিকা ২০২১কে সামনে রেখে ‘কোপা আমেরিকা জয়ে এগিয়ে যারা’ আয়োজনের প্রথম পর্বে আলোচনা করা হবে ব্রাজিল ও উরুগুয়েকে নিয়ে।

ব্রাজিল

ব্রাজিল দলের কথা শুরু করতেই সামনে আসে দলের সেরা খেলোয়াড় নেইমারের নাম। তবে শুধুমাত্র ব্রাজিল দলের সেরা খেলোয়াড় বললে কথাটা ভুল হবে, তিনি বর্তমান প্রজন্মের সেরা খেলোয়াড়দের একজন। ইউরোপে পা দেবার আগে থেকেই পুরো বিশ্ব তার নাম জানতো। মেসি-রোনালদোর রাজত্বে ভাগ বসানোর কথা ছিল তার। আশা ছিল, তিনিই ব্রাজিলকে এনে দেবেন বিশ্বকাপ। কিন্তু নেইমারের বয়স ২৯ বছরে পা দিলেও সেই অপেক্ষার অবসান হয়নি। দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম মহাতারকা লিওনেল মেসির মতোই জাতীয় দলে তার ট্রফি ক্যাবিনেট শূন্য।

ব্রাজিল সমর্থকেরা অপেক্ষায় ছিল, ঘরের মাঠে নেইমারের হাত ধরেই আসবে বিশ্বকাপ। কিন্তু নেইমারের ইনজুরি আর জার্মানির সাথে সাত গোল সব স্বপ্নকে ভেঙে গুড়িয়ে দিল। নেইমারের সাথে আরও একটি বিশ্বকাপ ও গোটা কয়েক কোপা আমেরিকাও খেলেছে ব্রাজিল। কিন্তু দেশের সাথে নেইমারও ফিরেছেন শূন্য হাতে। বিধাতার কী লীলাখেলা! ২০১৯ সালে কোপা আমেরিকা ঠিকই ঘরে তুলল ব্রাজিল। কিন্তু চোটের কারণে নেইমার ছিলেন দলের বাইরে। 

নেইমারের উপর থাকবে প্রবল চাপ; Image Source: AS English

ঘরের মাঠে আবারও আরেকবার কোপা আমেরিকার আসর বসছে। তিতে যে দল ঘোষণা করেছেন তা এবারের কোপার সব থেকে শক্তিশালী দল বলাই যায়। সে দলের নেতৃত্ব দেবেন নেইমার। এবার কি ঘটবে ভাগ্যবদল?

২০১৪ বিশ্বকাপের ভরাডুবি ও টানা দুই কোপার ব্যর্থতার পর ব্রাজিল জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিতে। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে তার দল ব্যর্থ হলেও পরের বছর জিতেছেন কোপা আমেরিকা। সেলেকাওদের সাথে দীর্ঘদিন আছেন তিনি। নেড়েচেড়ে দেখেছেন বহু খেলোয়াড়। কোনো প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্যে দল নির্বাচন করার পর তিনি সমালোচিত হয়েছেন বহুবার। তবে এই প্রথম তিনি এমন একটি দলকে ডেকেছেন, যে দলকে কেন্দ্র করে কেউ অসন্তোষ প্রকাশ করেনি।

তিতে সাধারণত ৪-৩-৩ ছকে ব্রাজিলকে খেলিয়ে থাকেন। মাঠে এই ছক ভিন্নভাবে দেখা গেলেও ৪-৩-৩ ফর্মেশন তার প্রাথমিক অস্ত্র। তবে বেশ কিছুদিন তাকে ৪-২-২-২ ছকে ব্রাজিলকে খেলাতে দেখা গেছে। ২০১৯ কোপাতে তাকে ৪-২-৩-১ ফর্মেশন ব্যাবহার করতে দেখা যায়। যদিও তিতে এমন পরিবর্তন এনেছিলেন বার্সেলোনার প্লেমেকার কৌতিনহোর জন্য। কৌতিনহো এবার ইনজুরির কারণে দলে ডাক পাননি। তার মতো প্রথাগত প্লেমেকারও দলে নেই। তাই নাম্বার টেন হিসেবে খেলানোর মতো খেলোয়াড় এবার দলে পাচ্ছেন না সেলেকাও কোচ। তাই এবারের কোপার ছক হতে পারে ৪-৩-৩, ৪-১-৪-১ বা ৪-২-২-২। তবে তিতে যদি ৪-২-৩-১ ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রে সেখানে একজন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারকে নাম্বার টেন হিসেবে দলে জায়গা দিতে হবে – যিনি একাধারে তিন জনের মধ্যমাঠে খেলতে পারবেন, আবার চারজনের আক্রমণভাগের হয়েও।

তিতে কি পারবেন তার দেশকে আরও একটি কোপা জেতাতে? Image Source: DNA India

 

তিতে যে একাদশই খেলান না কেন, রক্ষণভাগ হবে চারজনের, তা নিশ্চিত। যাদের নিচে গোলরক্ষক হিসেবে থাকবেন অ্যালিসন বেকার৷ কোনো দলের গোলবারের নিচে তার মতো একজনের থাকা অর্থ আস্থা ও ভরসা। তাই সময়ের সেরা এই সুইপার কিপারের দক্ষতা ব্যাখ্যা না করলেও চলবে। অ্যালিসনের বিকল্প খেলোয়াড় হিসেবে থাকবেন এডারসন। ফর্ম, পারফরম্যান্সে তিনিও এডারসন থেকে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। তবে তিতের ব্যক্তিগত পছন্দ থেকে অ্যালিসনই সামলাবেন ব্রাজিলের গোলবার।

ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরেছেন থিয়াগো সিলভা। আগে থেকেই রক্ষণের ভরসা হিসেবে ছিলেন মার্কিনোস। আর এ বছর যোগ হয়েছেন নতুন মুখ রিয়াল মাদ্রিদের এডার মিলিতাও। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের শেষ দুই ম্যাচে রক্ষণজুটি হিসেবে দেখা গেছে এ দু’জনকে, আর এই দুইজন একসাথে মাঠে নামায় শেষ দুই ম্যাচে ব্রাজিল কোনো গোলই হজম করেনি। 

যদিও ২০১৯ কোপার পর থেকে ব্রাজিলের রক্ষণভাগের রূপই পাল্টে গেছে। সে বছর যেমন ব্রাজিল গোল হজম করেছিল হাতেগোনা, তেমনই বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচগুলোতে এ পর্যন্ত ব্রাজিল গোল খেয়েছে মোটে দুইটি, বাকি ৫ ম্যাচেই তারা ম্যাচ শেষ করেছে ক্লিনশিট হাতে নিয়ে। যেহেতু ইউরোপ থেকে দক্ষিণ আমেরিকার খেলার ধরন কিছুটা হলেও আলাদা, তাই তিতে হয়তো পরিকল্পনা করছেন আবারও সিলভা ও মার্কিনোস রক্ষণজুটিকে নামানোর। তবে সিলভার বা মার্কিনোসের যেকোনো একজনের সাথে মিলিতাওকে নামানোর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মিশ্রণ।

রক্ষণ ভরসা; Image Source: Getty Images

রাইটব্যাক হিসেবে থাকার কথা ছিল ব্রাজিলের দীর্ঘদিনের সৈনিক দানি আলভেজের। তবে কোপা শুরু আগে চোট তাকে দল থেকে ছিটকে ফেললে তিতে ডাকেন এমারসনকে। তবে রক্ষণের ডানপাশে শুরু করতে পারেন দানিলো। জুভেন্টাসের হয়ে আহামরি কোনো মৌসুম পার করেননি। যে প্রতিভা নিয়ে ইউরোপে তার আগমন হয়েছিল, তা কখনোই পরিপূর্ণরূপে বিকশিত হয়নি। তবুও তাকে দলে ডাকা হয় এই পজিশনে খেলোয়াড় স্বল্পতা থাকার কারণে। এ পজিশনে ব্রাজিলের দুর্বলতা দানিলো নিজেই। তার ফর্মহীনতার প্রভাব বড় ম্যাচে পড়লে তাতে বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে ব্রাজিলের জন্য।

ডানপাশের মতো বাম পাশেও একই অবস্থা। লেফটব্যাক অ্যালেক্স স্যান্দ্রোর পুরনো ফর্ম নেই বললেই চলে। গড়পড়তা এক মৌসুম কাটিয়েছেন। উইং থেকে ট্রাকব্যাক করার সেই ধার আর নেই। তাই ফুলব্যাকে ব্রাজিলের দুর্বলতা এবারও যাচ্ছে না। তবে কিছুটা ভিন্নতা এনে দিতে পারেন রেনান লোদি। তবে এক্ষেত্রে চোখ থাকবে কোচের দিকে; তিতে কি তার বিকল্প ফুলব্যাকদের সুযোগ দেবেন, নাকি পুরো টুর্নামেন্ট শেষ করবেন দানিলো-স্যান্দ্রো জুটির উপর ভর করেই?

ব্রাজিলের মধ্যমাঠে পরিবর্তন সব থেকে লক্ষ্যনীয়। একসময় এখানে দেখা যেতো রেনাতো আগুস্তো ও পাউলিনহোর মতো বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডারদের। কিন্তু তিতে চান তার মিডফিল্ডের খেলোয়াড়রা ছোট ছোট পাসে খেলা গড়বে। মূলত মধ্যমাঠের ব্যাটন থাকতে হবে সৃজনশীল খেলোয়াড়দের হাতে। এজন্য পাউলিনহো ও আগুস্তোরা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেললেও ব্রাজিলের মধ্যমাঠ কিছুটা নিস্তেজ থেকে যেত। 

তিতে এবার খেলাবেন ফ্রেড ও পাকেতাকে। মধ্যমাঠের ঠিক কেন্দ্রে থাকবেন কাসেমিরো, যার মূল দায়িত্ব থাকবে মাঝমাঠেই প্রতিপক্ষের আক্রমণ রুখে দেয়া এবং প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে পাকেতা ও ফ্রেডকে পাস দেওয়া৷ যেহেতু ব্রাজিলের আক্রমণ একদম নিচে থেকে গড়ে ওঠে না, তাই ফ্রেড ও পাকেতা ছোট পাসে খেলা গড়বেন মাঝমাঠের ঠিক উপরে। সেখানে তারা আরও সহায়তা পাবেন নেইমারের প্লেমেকিংয়ের। আর বেঞ্চ থেকে এভারটন ও ভিনিসিয়ুসের মতো গতিশীল উইঙ্গার তো থাকছেনই।

মাঝমাঠের হাল ধরতে হবে ক্যাসেমিরোকেই ; Image Source: Marca

 

মধ্যমাঠেই এই সৃজনশীলতা চর্চার কারণে এই পর্যায়ে এসে তিতের কৌশলে বদল আসতে পারে। লেফট উইং থেকে নেইমার ও রাইট উইং থেকে রিচার্লিসন এসে যোগ দেবেন মধ্যমাঠে। ক্যাসেমিরো থাকবেন তাদের নিচে ও স্ট্রাইকার হিসেবে ফিরমিনোকে দেখা যাবে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে। এতে করে পাস দেবার জায়গা যেমন বাড়বে, তেমনই উইঙ্গারদের সাথে মধ্যমাঠের একটি যোগসূত্র তৈরি হবে যা বল পায়ে রেখে আক্রমণের ধার আরও বাড়িয়ে তুলবে।

বিশ্বকাপ বাছাইয়ে তিতে যে ৪-২-২-২ ছক ব্যবহার করেছেন, সেটাও মধ্যমাঠে পাস দেবার সুযোগকে আরও বাড়াবে দ্রুত আক্রমণে যাবার জন্য। এ জন্য তিনি জেসুসকে ব্যবহার করেছেন রাইট-উইং পজিশনে, রিচার্লিসনকে নামিয়ে এনেছেন মধ্যমাঠে। উপরে ফিরমিনো থাকার বদৌলতে রক্ষণাত্মক দিকেও প্রভাব পড়বে না। কারণ, ফিরমিনো প্রায়ই আক্রমণভাগ থেকে নিচে নেমে এসে রক্ষণে সাহায্য করেন। 

ব্রাজিল এই দলে সুযোগ অনেক। তিতে চাইলে তার ফুটবল দর্শনকে স্বাধীনতার সাথে বাজিয়ে দেখতে পারেন এই দলের সাথে। কিন্তু দলের দুর্বল দিক যেমন তিনি নিজে, তেমনই তার একাদশ। নেইমার, ফিরমিনো বা জেসুস প্রত্যেকেই তার নিজের দিনে যেমন দুর্দান্ত খেলেন, তেমনই বাজে দিনগুলোতে তাদের পারফরম্যান্সই দলকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। দক্ষিণ আমেরিকার প্রায় সকল দেশই রক্ষণে বেশি মনোযোগ দেয়। তাই ফর্ম হারিয়ে নেইমার, জেসুস বা ফিরমিনোরা মিসের মহড়া শুরু করে দেন। আবার প্রতিপক্ষকে দুর্বল ভেবে কখনো তিতে উদ্ভট একাদশ নামিয়ে দেন, তাতেও দল পড়ে হুমকির মুখে।

তাহলে উপায়? দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে খেলতে হবে স্বচ্ছন্দ্যে, আর তিতেকে ঠাণ্ডা মাথায় ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাহলেই মাঠের পারফরম্যান্সে দলের ছোটখাটো ভুলগুলো আর সমস্যার কারণ হয়ে উঠবে না।

ব্রাজিলের সম্পূর্ণ দল; Image Credit: Brasil Football

সম্ভাব্য একাদশ

অ্যালিসন, দানিলো, মার্কিনোস, মিলিতাও, লোদি, ক্যাসেমিরো, ফ্রেড, পাকেতা, নেইমার, ফিরমিনো, রিচার্লিসন।

যাদের দিকে নজর রাখবেন

অ্যালিসন, ক্যাসেমিরো, নেইমার। 

উরুগুয়ে

কোপা আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিরোপা রয়েছে উরুগুয়ের ডেরায়। কিন্তু ২০১১ সালে আর্জেন্টিনায় শেষবার কোপা আমেরিকা জেতার পর এ দলটি সেভাবে উন্নতি করতে পারেনি। ২০১৫ ও ২০১৯ সালে কোয়ার্টার ফাইনাল ও ২০১৬ সালে তাদের যাত্রার সমাপ্তি ঘটে গ্রুপপর্বেই।আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ের সাথে বেশ কঠিন গ্রুপে পড়লেও উরুগুয়ের চিন্তা তাদের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের নিয়ে। সর্বশেষ দুই ম্যাচে প্যারাগুয়ে ও ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে যে তারা গোলই পায়নি!  

দক্ষিণ আমেরিকা ছাড়াও পুরো ইউরোপে উরুগুয়ে একমাত্র দল যারা এখনও দুই স্ট্রাইকারের খেলার ধারণায় অবিচল থেকেছে। ৪-৪-২ ছকে উরুগুয়েকে সর্বাধিক ম্যাচে দেখা গেলেও অস্কার তাবারেজ ৩-৫-২ বা ৪-৫-১ ফর্মেশনও ব্যবহার করেছেন। তবে মাঝে একজন স্ট্রাইকার ব্যবহার কারণ এডিনসন কাভানি না থাকা। তবে কোপা আমেরিকা সামনে রেখে উরুগুইয়ান কোচ ডেকেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের স্ট্রাইকারকে। তাই আবার তিনি ফিরে যাবেন দুই স্ট্রাইকারের কৌশলে।

তবে প্রশ্ন রয়ে যায় রক্ষণে। অস্কার তাবারেজ তিনজন ডিফেন্ডারকে রেখে দু’জন ফুলব্যাককে উইংব্যাক হিসেবে ব্যবহার করবেন? নাকি ফিরে যাবেন প্রথাগত চারজনের রক্ষণভাগে?

কাভানি ও সুয়ারেজ মূল ভরসা; Image Source: Getty Images

 

গোলরক্ষকের ভূমিকায় দেখা যাবে ফার্নান্দো মুসলেরাকে। গ্যালাতাসাইয়ের এই ৩৪ বছর বয়সী গোলরক্ষকের নামডাক তেমন না থাকলেও উরুগুয়ে দীর্ঘদিন ধরে তার উপর আস্থা রেখে এসেছে।

অস্কার তাবারেজ যদি তিনজনের রক্ষণভাগ ব্যাবহার করেন, তবে সেখানে খেলবেন জোসে হিমেনেজ, গোডিন ও মার্টিন ক্যাসারেস৷ জিওভান্নি গঞ্জলেস ও মাতিয়াস ভিনা চলে যাবেন উইংব্যাকের ভূমিকায়। আর প্রথাগত চারজনের রক্ষণ দেখা গেলে কপাল পুড়তে পারে মাতিয়াস ভিনার। হিমেনেজ ও গোডিন তখন দেখভাল করবেন মূলরক্ষণ। ফুলব্যাকের দায়িত্ব পালন কররেন ক্যাসারেস ও গঞ্জালেস। তবে তিনজন হোক আর প্রথাগত চারজন, এবারের কোপায় এই রক্ষণই উরুগুয়ের সবচেয়ে বড় ভরসা।

মধ্যমাঠে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের ভূমিকায় থাকবেন লুকাস তোরেইরা। গত মৌসুমের প্রায় পুরোটা সময় অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বেঞ্চে বসে কাটানোর কারণে তার ফর্ম হবে দলের জন্য চিন্তার বিষয়। কারণ, তিনি ছাড়া এ পজিশনে বিকল্প খেলোয়াড় নেই। আর বর্তমান ফুটবলে একজন বল উইনার মিডফিল্ডার ছাড়া মধ্যমাঠ বেশ ছন্নছাড়া দেখায়।

চোখ রাখুন ভালভার্দের উপর; Image Source: Getty Images

 

তবে শেষ পর্যন্ত তাবারেজ যদি তোরেইরার ফর্মের উপর ভরসা করতে না পারেন, তবে তিনি মাতিয়াস ভেসিনোকে ব্যবহার করবেন এই পজিশনে। ভেসিনোর সাথে মধ্যমাঠে বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডার হিসেবে থাকবেন ফেদ্রিকো ভালভার্দে ও রদ্রিগো বেন্টানকুর। দু’জনই পুরো মাঠ দৌড়ে খেলা ঘরানার খেলোয়াড় হলেও একজনকে পালন করতে হবে মাঠের ডান অংশে খেলার জন্য। এছাড়াও নাহিতান নান্দেজ থাকছেন লেফট-মিডফিল্ডার হিসেবে। 

পাঁচজন হোক কিংবা চারজন, ভালভার্দে ও বেন্টানকুর ছাড়া মধ্যমাঠে আর কোনো খেলোয়াড় স্থায়ী নন। তাদের পাশাপাশি দলে আছেন ব্রাইন রদ্রিগেজ ও নিকোলাস দে লা ক্রুজ, উরুগুইয়ান কোচ তাদেরকে ব্যবহার করবেন ম্যাচের অবস্থা বুঝে৷ 

উরুগুয়ের যে অংশ সব থেকে শক্তিশালী ধরা হতো, সেই আক্রমণভাগ এবার আর তাদের সায় দিচ্ছে না। ৩৪ বছর বয়সে এসেও কাভানি প্রিমিয়ার লিগে করেছেন ১০ গোল। বিপরীতে সুয়ারেজ ২১ গোল করে রীতিমতো দলকে শিরোপা জিতিয়েছেন। কিন্তু দু’জনেই আছেন ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে। এই বয়সে এসে দু’জন মাঠে থাকলে ম্যাচের পরিস্থিতি বদলে যাবে, এমন ভাবার দিনগুলো পার হয়ে গেছে বহু আগেই। কিন্তু ভিন্ন কোনো সুযোগ যে নেই! তাই এবারের কোপাতেও সুয়ারেজ ও কাভানির উপর ভরসা থাকবে উরুগুইয়ানদের। কারণ, বিকল্প হিসেবে জোনাথন রদ্রিগেজ বা ম্যাক্সিমিলিয়ানো রদ্রিগেজ জাতীয় দলে স্থায়ী হতে পারেননি।

এটাই কি তাবারেজের শেষ কোপা আমেরিকা? ; Image Source: Getty Images

গ্রুপপর্ব উরুগুয়ের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। তাদের মূল লড়াই শুরু হবে কোয়ার্টার ফাইনালের মঞ্চ থেকে। যেহেতু গ্রুপপর্ব পার করার পর মাত্র তিনটা ম্যাচ খেললেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ থাকছে, তাই হতে পারে যেকোনো কিছুই। এমন চরম মুহূর্তে রক্ষণকে দিতে হবে কঠিন পরীক্ষা। আর ম্যাচের ভাগ্যবদলের চাবি থাকবে সুয়ারেজ ও কাভানির কাছেই।

কোপা আমেরিকা ২০২১ উরুগুয়ের স্কোয়াড; Image Credit: Marca

 

সম্ভাব্য একাদশ

মুসলেরা, জিওভান্নি গঞ্জালেস,  গোডিন, জোসে হিমেনেজ, ক্যাসারেস, ভালভার্দে, তোরেইরা, বেন্টানকুর, নাহিতান নান্দেস, কাভানি, সুয়ারেজ।

যাদের দিকে নজর রাখবেন

ভালভার্দে, তোরেইরা, সুয়ারেজ, কাভানি। 

This article is in the Bangla language. It is about the Copa America 2021. This article explains the whole Brazil and Uruguay national team, their tactic, and the recent situation ahead of this tournament.

Feature Image Source: Best HQ Wallpapers

Background Image Source:  Copa America

Related Articles

Exit mobile version