এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে নাম লেখালেন ডিয়েগো কস্তা। সর্বশেষ ২০১৪ সালে চেলসিতে চলে গিয়েছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান বংশোদ্ভূত স্প্যানিশ তারকা। এই বছর আবার ফিরে এসেছেন পুরোনো ঠিকানায়, এসেই দুটো ইউরোপিয়ান ট্রফি জিতেছেন।
নিজের ফেরার কারণ, অ্যাটলেটিকোর বর্তমান অবস্থা ও গ্রিজম্যানকে নিয়ে কথা বলেছেন ডিয়েগো কস্তা।
আপনি সম্প্রতি বাবা হয়েছেন। আগামী মাসে আপনার বয়সও ৩০ হচ্ছে। সবমিলিয়ে কী ডিয়েগো কস্তা তার সেরা সময়টা উপভোগ করছে?
হ্যা, আমার তা-ই মনে হয়। একজন মানুষ জীবনে যখন বাবা হওয়ার এমন স্তরে পৌঁছায়, সে অবশ্যই খুশী হয়। আর আমি সেরকম একটা স্তরেই আছি এখন।
২০১৪ সাল থেকে কতোটা বদলে গেছেন?
আমি কখনোই আমার স্বকীয়তা হারাতে চাইনি। আমার বাবা আমাকে যে শিক্ষাটা দিয়েছেন, তা হলো, ভালো মানুষ হও। এই নীতিটা কখনোই বদলাবে না। যা বদলাচ্ছে, তা হলো, আমার বয়স বাড়ছে। আমি ইংল্যান্ডে গিয়েছিলাম। আরেকটা লিগে খেলতে গিয়েছিলাম; ওটা আরেকটা জীবন ছিলো।
আমি ওই অভিজ্ঞতা নিয়ে আফসোস করি না। প্রিমিয়ার লিগ দারুণ একটা জায়গা বলেই আমি খেলতে গিয়েছিলাম। চেলসি বড় একটা ক্লাব। ওই সময়ে আমার পরিবর্তন দরকার ছিলো। আমি এর আগে সবকিছু ভালোই করছিলাম। সে সময় আরও ভিন্ন কিছু করতে চাচ্ছিলাম। আমি ওই ক্লাবে সুখেই ছিলাম।
আপনার ফিরে আসার পেছনে সিমিওনের ভূমিকা কতটা?
এল চোলো (সিমিওনে) যে ধরণের কোচ ও যে ধরণের মানুষ, তাতে সে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ। আমি মানুষ হিসেবে তাকে পছন্দ করি। সে সবসময়ই সরাসরি সম্পর্ক রাখতে পছন্দ করে। যখন সে আমাকে বললো যে, সে আমাকে ফেরত চায়, আমার মনে হয়েছে, আমি কখনোই ছেড়েই যাইনি। এখানে তো আমার সবকিছুই আছে। বড় একটা ক্লাব, বড় একটা শহর। এখানকার লোকেরা ব্রাজিলের মতোই। এল চোলো এখানকার বস। আমি খুব রোমাঞ্চিত ছিলাম এবং ফিরে আসতে পেরে খুশি হয়েছি।
চোলো বলেছেন, স্ট্রাইকার হিসেবে আপনিই তার পরিকল্পনার সাথে সবচেয়ে মানানসই। এটা কি আপনাকে গর্বিত করেছে?
আমি সবসময় গর্বিত হই। আর এ ধরণের কথা আমাকে আত্মবিশ্বাস দেয়, আমাকে স্বস্তি দেয়। আমি চলে গিয়েছিলাম। ওখানে গিয়ে দুটো প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জিতেছি। সে (সিমিওনে) জানে, আমি তাকে ও এই দলটাকে ভালোবাসি। এদের প্রায় সবাই তো এখানে আছে। আমি যেসব সতীর্থকে এখানে ছেড়ে গিয়েছিলাম, তাদের অনেককে ১০ বছর বয়স থেকে চিনি।
অ্যাটলেটিকো’র এখনকার দল খুবই ভালো। এটা কি যখন তারা লা লিগা জিতেছিলো, তার চেয়েও ভালো দল?
এটা আপেক্ষিক ব্যাপার। যে কোনো কিছুই ঘটতে পারে। এই বিশ্লেষন আমরা মৌসুম শেষে করতে পারতো। যারা দলে এসেছে, তাদের দায়িত্ব আরও ভালো করা। তাদের দায়িত্ব সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যা হয়েছে, তার চেয়ে ভালো ফল করা। আমাদের খুবই মানসম্পন্ন সব খেলোয়াড় আছে। ক্লাব আরও ভালো যেসব খেলোয়াড়, তাদের ধরে রাখার চেষ্টা করেছে। আমাদেরকে এখন যা আছে, এই নিয়ে খুব ভালো একটা মৌসুম খেলতে হবে।
অ্যাটলেটিকো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক উন্নতি করেছে। কোন জায়গাটায় বেশি উন্নতি হয়েছে বলে মনে হয়?
সব জায়গাতে। এই দলটা আগে যদি ‘ভালো’ হয়ে থাকে, এখন এটা ‘গ্রেট’। সবাই ক্লাবের সাথে সাথে উন্নতি করেছে। এখন নতুন স্টেডিয়াম আছে, নতুন সব গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় আছে, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড় আছে দলে। এটাতেই পার্থক্যটা পরিষ্কার দেখা যায়। আমরা জানি, আমরা আরও উন্নতি করতে পারি।
আপনি, ফিলিপে বা ফ্যালকাওয়ের মতো খেলোয়াড়েরা ইউরোপের বড় বড় ক্লাবের প্রস্তাব পেয়ে অ্যাটলেটিকো ছেড়েছেন। কিন্তু এ বছর গ্রিজম্যান দেখা গেলো বার্সেলোনাকে ‘না’ বলে দিলো…
আমি গ্রিজম্যানের ব্যাপারটা বুঝি। অনেকেই তার সমালোচনা করে। তার চারপাশের লোকেও হয়তো বলবে, তার একটা পরিবর্তন দরকার। আমার ক্ষেত্রে যেমনটা ঘটেছিলো। বাইরের লোকেরা অনেক মত দিতে পছন্দ করে। কিন্তু আমরা দু’জনই অনেকটাই পরিবারের সিদ্ধান্তে পরিচালিত হই। সে তার সত্যিকারের হৃদয়ের কথা শুনেছে। সে এখানে থাকতে চেয়েছে, তাই থেকে গেছে। শুরু থেকে আমি যেমন জানতাম, আমি থাকতে চাই।
অবশ্যই বার্সেলোনা থেকে একটা প্রস্তাব পাওয়া বিশাল একটা ব্যাপার। মেসি, আর এত বড় ক্লাব! এরকম প্রস্তাব পেলে রোমাঞ্চিত হওয়ারই কথা। কিন্তু অ্যাটলেটিকোও বড় ক্লাব, গ্রিজম্যান এখানে একজন নেতা। সে থেকে গেছে এবং দলকে ইউরোপা লিগ এনে দিয়েছে। এরপর সে সুপার কাপ জিতেছে, বিশ্বকাপ জিতেছে। সে হলো এমন কেউ, যে তার আবেগের প্রস্ফুরণটা দেখিয়েছে। আর এটাই আমাদের ক্লাবটার শক্তি। আমরা এখন জানি যে, আমরা যেকোনো ক্লাবের সাথে লড়তে পারি।
আপনার কি গ্রিজম্যানের মতো আরেকটু আক্রমণাত্মক হওয়া উচিত?
হ্যা। আমরা সবাই আরও আক্রমণাত্মক হতে চাই। আমরা আরও গোল করতে চাই। আমরা যখন লিগ জিতেছিলাম, অনেক গোল করেছিলাম। আবারও সেটা হবে। আমাদের যে দল আছে, তা খুব ভালো। সেটা আমাদের মানসিক শান্তি দিচ্ছে।
আপনি কি সিমিওনেকে কখনো বলেছেন যে, আপনার সাথে যেসব খেলোয়াড়ের ভালো সম্পর্ক আছে, তাদের এখানে আনতে চান? লেমার বা সেস (ফ্যাব্রেগাস)?
আমি এটা কখনো বলিনি। আমি যদি সেসকে আনতে পারতাম, তো নিয়েই আসতাম। আমার তার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক আছে। সে আমাকে নতুন জীবন দিয়েছিলো। কিন্তু আমি কখনোই এসব নিয়ে কোচকে কিছু বলি না। কারণ সে যে কারো চেয়ে এগুলো ভালো বোঝে। সে জানে, কিছু খেলোয়াড় দলে নিতেই হবে। আমি কোনো নির্দিষ্ট খেলোয়াড়কে চাইতে পারি না। কারণ সেই পজিশনে আমার সতীর্থরা কেউ না কেউ খেলছে।
আপনি কয়েক মাস হলো, গোল পান না। আপনার কাছে কারণটা কী বলে মনে হয়?
আমার গোল দরকার। অবশ্যই গোল করতে না পারাটা আমাকে চিন্তিত করছে। তবে আমাকে কখনো কখনো পাসও পেতে হয়। সেটাও অনেক সময় আসছে না। তবে এটা আমার সতীর্থদের দায় নয়।
আপনাদের যে দলটা লা লিগা জিতেছিলো, সেটা সেটপিসে অসাধারণ ছিলো। এখন সেটপিস থেকে গোল এত কমে গেছে কেন?
সেটা ভিন্ন একটা দল ছিলো। তখন দলে রাউল গার্সিয়া, মিরান্ডা, টিয়াগো ছিলো। তখন দলে পাঁচ থেকে ছয়জন এরকম লোক ছিল। প্রতিটা কর্নার একটা সুযোগ ছিল। তবে এখন আমরা ওইদিক থেকে ভালো না হলেও অন্যদিকে ভালো আছি।
সাধারণত দলে নতুন আসার খেলোয়াড়দের মাঠে নামাটা এত কঠিন হয় কেন? গ্রিজম্যানের ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছিলো।
আপনি কোনো ক্লাবে নতুন এলে এটাই স্বাভাবিক। আপনাকে তো এসে একটা দল হিসেবে খেলতে হবে। কোচ দলের কাছে ‘টিমওয়ার্ক’ চাইবেন, খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নয়। তারা এখানে আসে কারণ তারা জানে যে, দলের তাদেরকে দরকার। আপনি যদি এল চোলোকে পার করে যেতে চান, তাহলে আপনাকে আমাদের দরকার নেই। অনেক সময় এজন্য কঠিন হয় ব্যাপারটা।
এবার ফিরেই দুটো উপমহাদেশীয় শিরোপা জিতে ফেললেন। আপনার কী মনে হচ্ছিলো?
অসাধারণ অনুভূতি। আমার সবসময় মাদ্রিদের (রিয়াল মাদ্রিদ) বিপক্ষে খেলতে ভালো লাগে। আমার সতীর্থদেরও ভালো লাগে। আমরা ওই শিরোপাটা (সুপার কাপ) খুব চাচ্ছিলাম। কারণ, ওটা আরেকটা ইউরোপিয়ান ফাইনাল ছিলো। ওদের নতুন কোচ লোপেতেগুই তখন মাত্র এসেছে। ওরা জয় দিয়ে শুরু করতে চাচ্ছিলো। ওরা আমাদের উড়িয়ে দেবে মনে করছিলো। আমরাও ওদের ধ্বসিয়ে দেবো বলেই মাঠে নেমেছিলাম। মাদ্রিদ অসাধারণ একটা দল সন্দেহ নেই, তবে আমরা শিরোপার জন্য ক্ষুধার্ত ছিলাম।
Featured Image Credit : Marca