২০১৮-১৯ মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাসের মত ক্লাবকে টপকে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে পৌছে গিয়ে পুরো বিশ্বকে চমক লাগিয়ে দিয়েছিল একদল তরুণকে নিয়ে গড়া আয়াক্স দলটি। ম্যাথিয়াস ডি লিট, ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং, হাকিম জিয়েখ, নিকোলাস তালিয়াফিকো, ডেভিড নেরেস – এই তরুণ তুর্কিরা মাঠে দুর্দান্ত ছিলেন বটে, তবে আয়াক্সের সাফল্যের নেপথ্য নায়ক ছিলেন তাদের কোচ। এরিক টেন হাগ, যিনি আয়াক্সকে এনে দেন লিগ ও ঘরোয়া কাপের শিরোপা।
অনেকে হয়তো খেলোয়াড়দের দুর্দমনীয় ধারাবাহিকতাকেই আয়াক্সের গত মৌসুমের সাফল্যের কারিগর বলবেন। কিন্তু টেন হাগই যে আয়াক্সের সাফল্যের মূল কারিগর, সেটি দেখা যাচ্ছে এই মৌসুমে এসে। ডি লিট, ডি ইয়ং, ল্যাসে শ্যুন – যারা গত মৌসুমে দলের দুর্দান্ত সাফল্যের কারিগর ছিলেন, তারা ক্লাব ছাড়ার পরও আয়াক্স ডাচ লিগের শীর্ষেই আছে, চ্যাম্পিয়নস লিগেও নিজ গ্রুপের শীর্ষে এখন পর্যন্ত। যারা চলে গিয়েছেন, তাদের পজিশনে নিয়ে এসেছেন আরেক তরুণ তুর্কিকে, যারা এখন পর্যন্ত খেলছেন দারুণ। সব মিলিয়ে দেখলে মাথায় চিন্তা আসে, টেন হাগ জাদুকর নন তো?
টেন হাগ আয়াক্সের দায়িত্ব পান ২০১৭ এর ডিসেম্বরে, এবং এরপর থেকে সবাইকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন আয়াক্সের সোনালী অতীতের কথা। সে কথায় পরে আসা যাবে, আগে টেন হাগের অতীত জীবন সম্পর্কে কিছু জেনে নেওয়া যাক।
জন্ম ও খেলোয়াড়ি জীবন
টেন হাগের জন্ম হয় ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারির দুই তারিখে, নেদারল্যান্ডসের হাক্সবার্গেনে।
খেলোয়াড়ি জীবনে অনেকটা যাযাবরের মতোই ছিলেন টেন হাগ, মাত্র ১৩ বছরের ক্যারিয়ারে খেলেছেন ৪টি ক্লাবে। শেষ ছয় বছর অবশ্য টুয়েন্টেতে থিতু ছিলেন, এর আগের ছয় বছর ঘুরে বেড়িয়েছেন নেদারল্যান্ডসের এক ক্লাব থেকে আরেক ক্লাবে।
টেন হাগ এফসি টুয়েন্টের অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে মূল দলে সুযোগ পান ১৯৮৯-৯০ মৌসুমের শুরুতে। পরের মৌসুমেই ২০ বছর বয়সী এই ডাচ যোগ দেন দ্বিতীয় বিভাগের দল এফসি গ্রাফশাপে, যেখানে ক্যারিয়ারের প্রথম শিরোপা জেতেন টেন হাগ। শিরোপা জিতে গ্রাফশাপ প্রথম বিভাগে উঠে আসে, সেখানে আরও এক বছর কাটিয়ে শৈশবের দল এফসি টুয়েন্টেতে ফিরে আসেন তিনি। তবে এবারও টুয়েন্টে বেশিদিন কাটাতে পারেননি তিনি, দু’বছরের মাথায় তিনি যোগ দেন আরকেসি ওয়ালউইকে। সেখানে মাত্র এক মৌসুম কাটানোর পর তিনি চলে যান এফসি উট্রেখ্ট্-এ, তবে উট্রেখ্ট্-এ নজর কাড়লে ১৯৯৬ সালে তাকে দলে ফিরিয়ে আনে এফসি টুয়েন্টে।
এরপর টুয়েন্টে ছেড়ে যাননি টেন হাগ, ৬ বছর সেখানেই খেলে ২০০২ সালে ৩২ বছর বয়সে কোচিং করার উদ্দেশ্যে খেলার পাট চুকিয়েছেন। টুয়েন্টেতে থাকতেই ২০০১ সালে খেলোয়াড়ি জীবনের একমাত্র মেজর শিরোপা জেতেন টেন হাগ, যখন টুয়েন্টে ২০০০-০১ ডাচ ঘরোয়া কাপ জিতে নেয়।
কোচিং ক্যারিয়ার
খেলোয়াড় হিসেবে অবসর নেওয়ার পরপরই এফসি টুয়েন্টের যুবদলের দায়িত্ব নেন তিনি। প্রথমে অনূর্ধ্ব-১৭ দলের কোচিং করান, এরপর দায়িত্ব পান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের। এ সময় থেকেই তরুণদের তুলে আনার জন্য প্রশংসিত হন টেন হাগ, মার্কো আর্নাউটোভিচ নামক তারকার জন্ম টেন হাগের হাত ধরেই।
টুয়েন্টের ইতিহাসের সেরা সময় কাটে ২০০২ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত, যখন তারা তাদের একমাত্র লিগ শিরোপা জিতে নেয়। এসময় টুয়েন্টের তিনজন ম্যানেজারের সহকারী ছিলেন টেন হাগ, এই তিন ম্যানেজারের একজন ছিলেন স্টিভ ম্যাকলারেন, যার সহকারী হিসাবে টেন হাগ কাজ করেন ২০০৮-০৯ সালে। এরপর বছর তিনেক টেন হাগ কাটান পিএসভি আইন্দোভেনে, সেখানেও ছিলেন সহকারী কোচ।
মূল দলে টেন হাগের কোচিং ক্যারিয়ার শুরু হয় ২০১২ সালে, যখন ডাচ দ্বিতীয় বিভাগ দল ‘গো অ্যাহেড ঈগলস’-এর শেয়ারহোল্ডার মার্ক ওভারমার্স তাকে দলটির কোচ হিসেবে নিয়োগ দেন।
তবে সেখানে টেন হাগ ছিলেন মাত্র এক বছর, ২০১৩ সালে তিনি দায়িত্ব পান বায়ার্ন মিউনিখের রিজার্ভ দলের দায়িত্ব। সেখানে দু’বছর কাটান টেন হাগ, তবে সে দায়িত্ব ছেড়ে আসেন ২০১৫ সালে। বায়ার্নে থাকার সময়ই পেপ গার্দিওলার স্টাইল কাছ থেকে দেখার সুযোগ পান টেন হাগ, যে স্টাইল তার নিজস্ব স্টাইলে প্রচ্ছন্ন প্রভাব বিস্তার করেছে।
২০১৫ সালে টেন হাগ ফিরে আসেন খেলোয়াড়ি জীবনে এক বছর কাটানো ডাচ লিগের দল উট্রেখ্ট্-এ, যেই উট্রেখ্ট্ ২০১৪-১৫ মৌসুম শেষ করেছে লিগে ১১তম হয়ে।
টেন হাগ যে জাদুকর, সেটা প্রমাণ করতে সময় নিলেন মাত্র এক বছর। প্রথম মৌসুমেই উট্রেখ্ট্কে নিয়ে আসলেন লিগে পঞ্চম স্থানে। পরের মৌসুমে আরেক ধাপ উন্নতি, ২০১৬-১৭ মৌসুম উট্রেখ্ট্ শেষ করল চতুর্থ স্থানে, পেল ইউরোপা লিগের কোয়ালিফায়ার খেলার টিকেট।
২০১৭ এর ডিসেম্বর। গত মৌসুমের ইউরোপা লিগ রানার্সআপ আয়াক্সের কিছুটা টালমাটাল অবস্থা। তারা বিদায় জানিয়েছে কোচ মার্সেল কাইজারকে, কাইজারের বদলে তারা নিয়োগ দেয় টেন হাগকে, যিনি নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন উট্রেখ্ট্-এ।
প্রথম মৌসুমে টেন হাগ পেলেন অর্ধেকটা সময়, সেখানে তিনি পরের মৌসুমের দল সাজাতেই বরং বেশি মনযোগী ছিলেন। দলে ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং, ম্যাথিয়াস ডি লিট, ডনি ফন ডি বিক, ডেভিড নেরেস, নুসাইর মাজরুয়াইদের জায়গা পাকা করলেন, দলে নিয়ে আসলেন ডেলি ব্লিন্ড, নিকোলাস তালিয়াফিকো, দুসান টাডিচদের।
এরপর? একটা প্রায় সম্পূর্ণ এক রূপকথা।
চার মৌসুম ধরে অধরা থাকা লিগ জেতালেন আয়াক্সকে, সাথে জেতালেন ঘরোয়া কাপ। আর চ্যাম্পিয়নস লিগ? গ্রুপপর্বে দ্বিতীয় হয়ে উতরে যাওয়া, দ্বিতীয় পর্বে প্রতিপক্ষ রিয়াল মাদ্রিদ। ঘরের মাঠ আমস্টারডাম অ্যারেনায় বেনজেমা আর অ্যাসেনসিওর গোলে ২-১ ব্যবধানে পরাজয়, আয়াক্সের চ্যাম্পিয়নস লিগ যাত্রার শেষটা দেখে ফেলেছিলেন অনেকেই। তবে টেন হাগ বাহিনী যে এত সহজে ছেড়ে দিতে রাজি নয়, সেটি দেখা গেল সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে।
‘লস ব্লাংকোস’দের ঘাঁটিতে গোল করতে হাকিম জিয়েখ সময় নিলেন মাত্র সাত মিনিট, দুসান টাডিচের পাস থেকে দারুণ ফিনিশিংয়ে সমতায় আয়াক্স, তবে তখনও পিছিয়ে অ্যাওয়ে গোলে। সেই ব্যবধানটা ঘোচালেন নেরেস, আবারও টাডিচের পাস, আবারও দারুণ ফিনিশ, অ্যাগ্রেগেটে এগিয়ে আয়াক্স। পরের গোলে পাসটা দিলেন ফন ডি বিক, গোলদাতা এবার টাডিচ নিজেই, দুর্দান্ত এক ৩৬০ টার্নের পর টপ কর্নার ফিনিশ, পিটার ড্রুরি কমেন্ট্রি বক্সে বলে উঠলেন,
‘ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নদের পায়ের নিচে চেপে ধরেছে আয়াক্স!’
মার্কো অ্যাসেন্সিও ব্যবধান কমালেন বটে, তবে ল্যাসে শ্যুনের দারুণ ফ্রি-কিকে পরাস্ত হন কোর্তোয়া। ৪-১ ব্যবধানে ম্যাচ জিতে নেয় আয়াক্স, ৫-৩ অ্যাগ্রেগেটে কোয়ার্টার ফাইনালে টেন হাগের দল।
প্রতিপক্ষ এবার রোনালদোর জুভেন্টাস।
আমস্টারডম অ্যারেনায় জুভেন্টাসই এগিয়ে গেলো আগে। গোলদাতা? ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ডেভিড নেরেস অবশ্য সেই গোল শোধ করলেন, ম্যাচ শেষ হলো ১-১ সমতায়।
তুরিনে গল্পটা একই হবে মনে হচ্ছিল, আবারও রোনালদোর গোল, এগিয়ে গেল জুভেন্টাস। তবে টেন হাগের এই আয়াক্স যে হারার আগে হারবার জন্য প্রস্তুত নয়, সে কথা ততদিনে জেনে গেছে বিশ্ব।
আয়াক্সকে সমতায় আনলেন ফন ডি বিক, আর ৬৭ মিনিটে এক কর্নারে লাফিয়ে উঠলেন আয়াক্সের ১৯ বছর বয়সী কাপ্তান ম্যাথিয়াস ডি লিট, গোল করে এগিয়ে নিলেন আয়াক্সকে। ম্যাচের ফলাফল ২-১, অ্যাগ্রেগেটে ৩-২, আয়াক্সকে সেমিফাইনালে নিয়ে এসেছেন টেন হাগ।
সেমিফাইনালের প্রথম লেগটা টটেনহ্যামের মাঠে ১-০ তে জিতে এল আয়াক্স, নিজেদের মাঠে দ্বিতীয় লেগেও প্রথমার্ধ শেষে এগিয়ে ছিল তারা ২-০ গোলে। টেন হাগ রূপকথা লিখবেন, এ কথাকে সবাই ধরে নিয়েছিলেন নিয়তি হিসেবে। কিন্তু একজন লুকাস মৌরা সেদিন নিজের রূপকথা লিখবেন বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন, যেখানে চির ধরাতে পারেনি অদম্য আয়াক্সও।
দ্বিতীয়ার্ধে একে একে লুকাস করলেন তিন গোল। শেষ গোলটি যখন করলেন, তখন ঘড়ির কাটায় ৯৫ মিনিট। আয়াক্সের স্বপ্নের বিসর্জন, লন্ডনে উচ্ছ্বাস; মাঠেই লুটিয়ে পড়লেন আয়াক্সের খেলোয়াড়েরা।
তবে এই বিদায়ে অবশ্য আয়াক্স বা টেন হাগ – কারও কৃতিত্বই খাটো হয়ে যায় না, কে ভেবেছিল এই দল সেমিফাইনালে যাবে? টেন হাগ নামের পরশ পাথরের ছোয়ায় আয়াক্সের এই স্বর্গমুখে যাত্রা, নাহয় হয়েছে স্বর্গপতন, চেষ্টাটাও যে অমূল্য!
ডি লিট, ডি ইয়ং, ল্যাসে শ্যুনরা চলে যাওয়ার পরও আয়াক্স এ মৌসুমে দুর্দান্ত। সেখানেও বোঝা যায় টেন হাগের ক্যারিশমা। প্রশ্ন থেকেই যায়, কোথায় গিয়ে থামবেন টেন হাগ?
সে প্রশ্নের উত্তর সময় দেবে, ততক্ষণে টেন হাগের গত মৌসুমের আয়াক্সকে একটু খুটিয়ে দেখা যাক, টেন হাগের জাদুর খেলা ফাঁস করার চেষ্টা করা যাক।
ট্যাকটিকাল অ্যানালিস: টেন হাগের ২০১৮-১৯ আয়াক্স
ট্যাকটিকাল দিক দিয়ে টেন হাগ আয়াক্সের কিংবদন্তি জুটি রাইনাস মিশেলস ও ইয়োহান ক্রুইফের অনুসারী, বল পায়ে রেখে টোটাল ফুটবলের দিকেই নজর ছিল তার, সাথে বল-ওরিয়েন্টেড প্রেসিং।
২০১৮-১৯ মৌসুমের আয়াক্সের দুর্দান্ত দলটার ফর্মেশন ছিল ৪-৩-৩। প্রথম একাদশ ছিল এরকম – গোলকিপার আন্দ্রে ওনানা, সেন্টারব্যাকে ডি লিট ও ডেলি ব্লিন্ড, লেফটব্যাকে নিকোলাস তালিয়াফিকো, রাইটব্যাকে নুসাইর মাজরুয়াই, মাঝমাঠে ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং, ল্যাসে শ্যুন ও ডনি ফন ডি বিক, রাইট উইংয়ে হাকিম জিয়েখ, লেফট উইংয়ে ডেভিড নেরেস এবং সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে দুসান টাডিচ। মাঝমাঠে ফ্রেঙ্কি ছিলেন ভোলান্তে রোলে, যে রোলটির কাজ একই সাথে বল ডিস্ট্রিবিউশন করা, এবং ডিফেন্সকে শিল্ড করা। ল্যাসে শ্যুন ছিলেন ডিপ-লায়িং প্লেমেকার, তার দারুণ লং বল অ্যাকুরেসির জন্য। ডি বিক ছিলেন নাম্বার টেন, হুটহাট প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে যেতেন তিনি, এভাবেই তিনি করেছিলেন প্রচুর গোল। জিয়েখ এবং নেরেস দু’জনেই ছিলেন ইনভার্টেড উইঙ্গার, তারা কাট-ইন করে ভিতরে ঢুকে দুই উইংয়ে ফুলব্যাকদের জন্য জায়গা খালি করতেন, সাথে ফুলব্যাকদের ড্র্যাগ করতেন।
এখন আসা যাক, আক্রমণে কীভাবে যেত আয়াক্স। আক্রমণ শুরু হতো গোলকিপার থেকে, যেভাবে ক্রুইফ শুরু করতেন। সেটা ডিফেন্স লাইন পার হয়ে ডি ইয়ংয়ের পায়ে আসলে শুরু হতো প্লেয়ারদের পজিশন বদল। ডি ইয়ং ধীরে ধীরে সেন্টার লাইন পার করতেন, তার পাশে সামান্য আগে জায়গা নিতেন ল্যাসে শ্যুন, আর ডি বিক অন্যদিকে একটু এগিয়ে থাকতেন। ফুলব্যাকরা প্রথমদিকে মাঝখানে সরে এসে ডি ইয়ংয়ের জন্য পাসিং লেন তৈরি করতেন, এরপর যখন উইঙ্গাররা কাট-ইন করে ভিতরে সরে আসতেন, তখন ফুলব্যাক দু’জন তাদের ফেলে আসা জায়গা দখল করতেন। টাডিচ সামান্য নিচে নেমে আসলে ডি বিক উপরে মুভ করতেন, ফলে ডিফেন্সিভ লাইনকে পড়তে হতো দু’টি দ্বিধায়। প্রথমত, দুই কাট-ইন করা উইঙ্গারকে কি তারা মার্ক করতে এগিয়ে যাবেন? কিন্তু সেটা করলে দু’টো ফ্ল্যাংকই এক্সপোজড হয়ে যায়, আবার দু’জন দারুণ শুটারকে স্পেস দিলে গোল খাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আরেকটি দ্বিধা ছিল এই যে, টাডিচকে মার্ক করতে সামনে এগুলে ফন ডি বিক স্পেস পাবেন, আর কাউকেই না মার্ক করলে দু’জনই জোন ১৪-য়ে প্রচুর স্পেস পাবে। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারও ফন ডি বিককে মার্ক করবেন নাকি টাডিচকে, এই দোটানায় ভুগতেন। নিজেদের অসাধারণ ব্যক্তিগত স্কিলের সাথে ডিফেন্সে এরকম কনফিউশন তৈরি – টেন হাগের আয়াক্স এভাবেই বধ করেছে ইউরোপিয়ান জায়ান্টদের।
তবে টেন হাগের দল যে জায়গায় অনন্য ছিল, সেটি হচ্ছে প্রেসিং। বর্তমান সময়ে কোনো দলই বল-ওরিয়েন্টেড প্রেসিং করে না, লিভারপুলের গেগেনপ্রেসিং দেখে বল-ওরিয়েন্টেড মনে হলেও বস্তুত সেটা নয়। কিন্তু গত মৌসুমের আয়াক্স দল এই বলকেন্দ্রিক প্রেসিং করেছে দুর্দান্তভাবে, এরকম প্রেসিং সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল ক্রুইফের বার্সেলোনা ড্রিম টিমে, তারও আগে মিশেলসের আয়াক্স ও নেদারল্যান্ডসে। টেন হাগের আয়াক্স যেভাবে প্রেসিং করত, সেটির সাধারণ নিয়মটি খুবই সহজ – যার কাছে বল, তাকে তিন-চার জন মিলে চেপে ধরো, এভাবে তাকে বল হারাতে কিংবা ভুল পাস দিতে বাধ্য কর। এভাবেই আয়াক্স প্রতিপক্ষের বক্সের কাছে থেকে বল দখলে নিত, নিয়ে সেখান থেকে দ্রুত এক-দুইটি পাস খেলে গোলে শট নিত।
গত এক দশকে ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে সফল দুই কোচের নাম পেপ গার্দিওলা ও জিনেদিন জিদান। কাকতালীয়ভাবে দু’জনই টেকো। এরিক টেন হাগও ‘অতি কাকতালীয়ভাবে’ টেকো, তিনি যে বিশ্বমাতানো কোচদের তালিকায় নতুন সংযুক্তি নন, সেটা কে বলতে পারে?
খেলাধুলার চমৎকার, জানা-অজানা সব বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: https://roar.media/contribute/
ফুটবল নিয়ে আরও জানতে পড়তে পারেন এই বইগুলোঃ