‘১৬-‘১৭ মৌসুমে ইউরোপিয়ান ফুটবল তখনও শুরু হয়নি। ক্লাবগুলো ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গিয়ে অংশ নিচ্ছে প্রাক-মৌসুমের ম্যাচগুলোতে। দলবদল মৌসুম শুরু হবার আগেই খুবই অদ্ভুত ধরনের এক গুঞ্জন ভেসে বেড়াতে লাগে পুরো ইউরোপজুড়ে। ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমারকে নাকি দলে ভেড়াতে চায় ফরাসি ক্লাব পিএসজি। এই খবর অনেকে হেসে উড়িয়ে দিলেও কিছুদিনের ভেতর নির্ভরযোগ্য সাংবাদিকদের কাছ থেকে খবর আসতে শুরু করে, আসলেই নেইমার প্যারিসের ক্লাবটিতে পাড়ি জমাচ্ছেন। আর তাকে ২২২ মিলিয়ন ইউরো রিলিজ ক্লজ পরিশোধ করেই দলে নিতে ইচ্ছুক পিএসজি। অনেকের কাছে এই দলবদল অসম্ভব মনে হলেও শেষ পর্যন্ত নেইমারকে ট্রান্সফারের সকল রেকর্ড ভেঙেই কিনেছিল পিএসজি।
নেইমারের পর থেকে ইউরোপের খেলোয়াড় কেনাবেচার ধরন পাল্টে যায়। বর্তমানে খেলোয়াড় দলে টানা মানেই বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়। কিন্তু এই ট্রান্সফারের পেছনে কারা জড়িত থাকে? দুই ক্লাব কীভাবে চূড়ান্ত মতামতে পৌঁছায়? কখনো ভেবে দেখেছেন কি?
ফুটবলে ট্রান্সফার বলতে আমরা শুধু বুঝি একজন খেলোয়াড়ের নতুন ক্লাবে যাত্রা। তা অবশ্যই নির্দিষ্ট কোনো পরিমাণের অর্থ বদলে এবং খেলোয়াড়ের সাথে চুক্তির সমস্ত কিছু পাকা হবার মাধ্যমেই। তবে যে খেলোয়াড়কে কেনা হচ্ছে, তিনি যদি কোনো ক্লাবের সাথে চুক্তিবদ্ধ না থাকেন বা তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে থাকে, তবে অর্থ ছাড়াই ‘ফ্রি এজেন্ট’ হিসেবে তাকে কিনে নেওয়া সম্ভব। আয়াক্সের ফুটবল অ্যাকাডেমি হোক বা বার্সেলোনার বিখ্যাত লা মাসিয়া, প্রত্যেক ফুটবলার গড়ে ওঠেন কোনো না কোনো ক্লাবের একাডেমি থেকে। ছোট থাকতে একজন কিশোরের ফুটবলার হয়ে ওঠার স্বপ্নকে কোনো ক্লাব সহসা ফিরিয়ে দেয় না। ফুটবলের কারিকুরি কিছুটা দেখাতে পারলেই তারা একাডেমিকে ভর্তি হবার সুযোগ পায়। যেমন, ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালের নায়ক মারিও গোৎজে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের ফুটবল একাডেমিতে যোগ দিয়েছিলেন মাত্র ৮ বছর বয়সে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবাই ফুটবলের আসল মঞ্চে পৌঁছাতে পারে না। কারণ, ক্লাবগুলো প্রধানত নজর দেয় বিস্ময়বালকদের দিকে। যেমন বার্সেলোনা পেয়েছিল লিওনেল মেসি নামক এক অমূল্য প্রতিভাকে।
৮-১০ বছর বয়স যেটাই হোক, ক্লাবে যোগ দেয়া মানেই সে ফুটবলের ট্রান্সফার মার্কেটে প্রবেশ করে ফেলেছে। কিন্তু ১৬ বছর বয়স না হবার আগে কেউ পেশাদার ফুটবলার হয় না। কিন্তু এই কিশোরদের নিয়েও ট্রান্সফার মার্কেট কিন্তু ঠিকই চলে। তাদের দল পরিবর্তনের খবর ফলাও করে প্রচার করা হয় না। দলবদলের অর্থের পরিমাণও বেশ কম থাকে। কিন্তু ইন্টারনেট বা অন্যান্য কারণে অল্প বয়সেও কিছু বালক আবার হুট করে চেনা-পরিচিত হয়ে ওঠে। তাদের দলবদল আবার মাঝে মাঝে স্থানীয় পত্রিকার শিরোনামেও স্থান নেয়। যেমন বার্সেলোনা থেকে পিএসজিতে পাড়ি জমানো ডাচ মিডফিল্ডার জাভি সিমন্স বা রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়া তাকেফুসো কুবো।
ধরুন একজন কিশোর মাত্রই ক্লাবে খেলতে শুরু করেছে। কিন্তু সবাই তো আর ইউরোপের বড় ক্লাবে ক্যারিয়ার শুরু করে না যে ভালো খেলতে থাকলেই সে দ্রুত সবার নজরে পরে যাবে। মূলত অচেনা অজানা ক্লাবের একাডেমি থেকে খেলোয়াড় খুঁজে বের করে মূলত তিন ধরনের কর্মকর্তা। এরা সবাই ক্লাবের অর্থের বিনিময়ে কাজ করা পেশাদার লোক। যারা শুধু খেলোয়াড় খুঁজেই বের করে না, এদের কাজের উপর ক্লাবের অর্থনৈতিক দিকও বেশ খানিকটা নির্ভর করে। কিছু এরা পর্দার পেছনে থাকা অভিনেতা, তাই তাদের কাজ ও প্রভাবগুলো সেভাবে সামনে আসে না।
এদের প্রথমজন ক্যাটাগরির কর্মকর্তা হচ্ছে স্কাউটস। এরা মূলত বিভিন্ন ক্লাবের সাথে জড়িত থাকে। ঝড় হোক বা বৃষ্টি, দিন অথবা রাত, এদের প্রায় পুরো জীবন চলে যায় বিভিন্ন ফুটবল স্টেডিয়ামে ঘুরতে এবং খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স পর্যালোচনা করতে। ইউরোপ বা আমেরিকা, তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ম্যাচে উপস্থিত থাকে এবং নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের উপর চোখ রেখে বুঝতে চেষ্টা করে উক্ত খেলোয়াড়ের খেলার দক্ষতা এবং তার প্রতিভা। দ্বিতীয় আরেক ক্যাটাগরির কর্মকর্তা হচ্ছে পর্যালোচক। এরা ক্লাবে সরাসরি বেতনের বিনিময়ে কাজ করা কর্মকর্তা। স্কাউটদের এনে দেয়া বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত তারা বিশ্লেষণ করে দেখে, যে খেলোয়াড় সম্পর্কে বলা হচ্ছে সে আসলেই তেমন প্রতিভাবান কি না। তবে যেহেতু একজন স্কাউট অনেক বছর ধরে একজন খেলোয়াড়কে পর্যালোচনা করে থাকে, তাই ক্লাবের পর্যালোচকের কাছে কয়েক বছরের বিস্তর তথ্য থাকে। আর কয়েক বছর ধরেই লম্বা এক সময় ব্যবহার করে একজন খেলোয়াড়কে বাছাই করা হয়।
তবে আধুনিক ফুটবলে এই ক্লাবের বেতনের বিনিময়ে কাজ করা পর্যালোচক বা বিশ্লেষক, এদের কাজ সহজ করে দিয়েছে ‘ডেটা সায়েন্স’ নামক নতুন এক প্রযুক্তি। যাই হোক, উদাহরণ হিসেবে বলা যায় আর্সেনালে মাথিউ ফ্লামিনির সাইনিং। গানার্সরা ফ্লামিনিকে দলে ভিড়িয়েছিল কয়েক বছর ধরে পর্যালোচনা করা উপাত্তের উপর ভিত্তি করে। বিপরীতে, বার্সেলোনার নতুন দুই সাইনিং ফ্রান্সিস্কো ত্রিনকাও ও পেদ্রি হচ্ছে বেশ কয়েক বছরের স্কাউটদের কঠোর পরিশ্রমের ফসল।
শেষ ক্যাটাগরির কর্মকর্তা হচ্ছেন এজেন্ট। এরা সরাসরি খেলোয়াড়ের সাথে নিযুক্ত থাকেন এবং একজন খেলোয়াড়ের দলবদল এবং বেতন সম্পর্কিত সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন। তবে আধুনিক ফুটবলের দুনিয়ার ফুটবল এবং দলবদল বাজারের পরিবর্তনের সাথে এজেন্টদের চিন্তাভাবনা ও কাজের ধরনও বদলে গেছে। কোনো ক্লাব খেলোয়াড়ের প্রতি আগ্রহী হলে এখন একজন এজেন্টই ঠিক করে ঐ খেলোয়াড় উক্ত দলের হয়ে চুক্তি করবে কি না। তাই খেলোয়াড় বাছাই ও দলবদলের পেছনে থাকা এই তিন ধরনের কর্মকর্তার ভেতর এই এজেন্টই সব থেকে বেশি পরিচিত ও ক্ষেত্রবিশেষে ‘কুখ্যাত’ও বটে। এজন্য বেশ কিছু অদ্ভুত দলবদল করে হোর্হে মেন্ডিস বা মিনো রায়োলা বর্তমানে বেশ পরিচিত দুই নাম।
এখন পর্দার সামনের গল্পে আসি। একজন ফুটবলার কীভাবে এক ক্লাব থেকে অন্য ক্লাবে পাড়ি জমান? প্রথমত, একজন ফুটবলার যখন একটি ক্লাবের হয়ে খেলছেন, তখন সে ফুটবলার মূলত ঐ ক্লাবের সম্পত্তি। তাই খেলোয়াড়ের সাথে যদি ক্লাবের একটি বড় সময়ের চুক্তি থাকে, তখন ক্লাব ঐ খেলোয়াড়ের উপর প্রভাব রাখতেই পারে। তবে অন্য ক্লাব যদি কোনো খেলোয়াড় কিনতে আগ্রহী হয়, তবে একটি অর্থমূল্য বিনিময়ের প্রস্তাব দিয়ে ক্লাবের কাছে বার্তা পাঠায়; ফুটবলের ভাষায় যাকে ‘ট্রান্সফার রিকোয়েস্ট’ বলা হয়ে থাকে। এই ট্রান্সফার রিকোয়েস্ট ফিরিয়ে দেবার ক্ষমতা ক্লাবের আছে। আবার যদি দলবদলের অর্থমূল্য তাদের পছন্দসই মনে না হয়, তবে তারা অর্থমূল্য বৃদ্ধি করার জন্য পুনরায় বার্তা পাঠাতে পারে। এভাবে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হলে তখন দৃশ্যপটে আসে খেলোয়াড় ও এজেন্টের কাজের সময়।
আবার অনেক সময় আগ্রহী ক্লাব প্রথমে খেলোয়াড়ের সাথে কথা বলে নেয়। খেলোয়াড় যদি আগ্রহী হয়, তবে আগ্রহী পক্ষ সে খেলোয়াড়ের ক্লাবের সাথে কথা বলা শুরু করে। কিন্তু তখনও বিপরীতে থাকা খেলোয়াড়ের ক্লাব সেই আবেদন নাকচ করার ক্ষমতা রাখে। এক্ষেত্রে তা নির্ভর করে খেলোয়াড়ের সাথে ক্লাবের চুক্তি কতদিনের এবং রিলিজ ক্লজের পরিমাণ কত। একটি ক্লাব যখন কোনো খেলোয়াড়ের সাথে চুক্তি করে, তখন সে চুক্তিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের কথা উল্লেখ থাকে। যদি চুক্তি থাকা অবস্থায় অন্য ক্লাব ঐ খেলোয়াড়কে কিনতে চায়, তবে ঐ রিলিজ ক্লজ পরিশোধ করেই তাকে কিনে নিতে হবে। এক্ষেত্রে খেলোয়াড়ের ক্লাব তখন বাধা দিতে পারবে না। ঐ নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থকে বলে ‘রিলিজ ক্লজ’। বার্সেলোনা থেকে এই ২২২ মিলিয়ন ইউরো পরিশোধ করেই পিএসজি নেইমারকে কিনে নিয়েছিল এবং এই চুক্তিতে নেইমার নিজেও রাজি ছিল। তাই নেইমারকে ধরে রাখার কোনো পথ খোলা ছিল না বার্সেলোনার সামনে।
দুই ক্লাবের প্রাথমিক চুক্তি হয়ে গেলে তখন খেলোয়াড়ের সাথে ব্যক্তিগত চুক্তি প্রসঙ্গে ধাবিত হয়। এখানে খেলোয়াড় চাইলে এই প্রস্তাব না করে দেবার ক্ষমতা রাখেন। সদ্য শেষ হওয়া গ্রীষ্মকালীন দলবদল মৌসুমে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বার্সেলোনার উইঙ্গার উসমান দেম্বেলেকে লোনে দলে ভেড়াতে চেয়েছিল। এক্ষেত্রে বার্সেলোনা রাজি হলেও দেম্বেলে রাজি ছিলেন না। তাই শেষ পর্যন্ত আর এই চুক্তি হয়নি।
যদি দুই ক্লাবের সকল সমঝোতার পর খেলোয়াড়ও অন্য ক্লাবে পাড়ি জমাতে রাজি হয়। তখন নতুন ক্লাবের সাথে তার চুক্তির মেয়াদ, সাপ্তাহিক বেতন ও অনান্য বোনাসগুলোর মতো বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলে খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত এজেন্ট। যদি এখানেও দুই পক্ষ রাজি হয়ে যায়, তাহলে দলবদল সম্পন্ন হয়। কিন্তু বর্তমান আধুনিক ফুটবলে এই প্রক্রিয়া বেশ কঠিন। কারণ, বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রত্যেক ক্লাব তাদের খেলোয়াড়ের জন্য চড়া মূল্যের দলবদল অর্থ দাবি করে বসে। আবার এজেন্টরাও পাগলাটে সব বেতনের দাবি করেন, যা বর্তমান ফুটবলের ট্রান্সফার মার্কেটের অবস্থা পরিবর্তন করে দিয়েছে। কোনো খেলোয়াড় যদি পূর্বে মারাত্মক কোনো ইনজুরি আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তবে এই ইনজুরিও খেলোয়াড়ের দাম ও বেতন কমিয়ে দিতে পারে। কোনো খেলোয়াড়ের এজেন্ট যখন চড়া মূল্যের বেতন দাবি করে বসে, তখন বিপরীতে থাকা ক্লাব ইনজুরির মতো বিষয়গুলো তুলে ধরে বেতন ও বোনাস কমিয়ে আনার চেষ্টা করে থাকে।
হুট করে এমন পরিবর্তনের অন্যতম স্বীকার স্পেনের ক্লাব বার্সেলোনা। যদিও দলবদল বাজারকে ঘুরিয়ে দেবার পেছনে তাদেরও হাত আছে। নেইমারকে বিক্রি করার পর ঐ পজিশনে নতুন খেলোয়াড়কে যেকোনো মূল্যে তাদের কিনতে হতো। তাই উসমান দেম্বেলেকে কিনতে তাদের চড়া মূল্য গুনতে হয়েছিল। পরবর্তীতে তারা যেকোনো মূল্যে ফিলিপে কৌতিনহোকে কিনতে চেয়েছিল, যা বুঝতে পেরে লিভারপুল তাদের অতিরিক্ত চড়া মূল্য থেকে একদমই নামেনি। এবং বার্সেলোনার প্রাক্তন বোর্ড খেলোয়াড়দের অতিরিক্ত বেশি বেতনের চুক্তি করে রাখার ফলে বর্তমানে বার্সেলোনা আর্থিকভাবে বেশ বিপাকে।
উপরে বর্ণিত উপায় খেলোয়াড়কে কেনার জন্য সব থেকে সহজ ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। এছাড়াও ফুটবলে ধারে ট্রান্সফার হয়ে থাকে, যেখানে কোনো ফুটবলার একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি ক্লাবে খেলেন এবং সময়সীমা শেষ হয়ে গেলে তিনি তার প্রাক্তন ক্লাবে ফেরত আসেন। অনেক সময় খেলোয়াড় বিক্রি করার সময় ‘বাই-আউট ক্লজ’ যোগ করে দেয়া হয়। এই ‘বাই-আউট ক্লজ’ হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ। খেলোয়াড়কে বিক্রি করার পর একটি নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে ঐ খেলোয়াড়কে তার প্রাক্তন ক্লাব ঐ বাই-আউট ক্লজে উল্লেখ করা অর্থ পরিশোধ করে খেলোয়াড়কে ফেরত আনতে পারেন। যেমন, এই মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ তাদের একাডেমির ফুলব্যাক সার্জ রেগুইলনকে টটেনহ্যাম হটস্পারের কাছে বিক্রি করে দেয়। এক্ষেত্রে চুক্তিতে বাই-আউট ক্লজ উল্লেখ করা আছে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে তারা রেগুইলনকে আবার দলে ফেরত আনতে পারবেন।
এছাড়াও অনেক সময় কোনো ক্লাব খেলোয়াড়কে কিনে আবার অল্প সময়ের জন্য ঐ ক্লাবে ধারে রেখে দেয়। মূলত মৌসুমের মাঝে দলবদল হলে এমন চুক্তি দেখা যায়। বরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে উইঙ্গার ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিচকে এই পদ্ধতিতে কিনেছিল চেলসি। আবার ধারে খেলোয়াড় দেবার সময় ধারের সময়সীমা শেষ হবার পর ঐ খেলোয়াড়কে কিনে নেবার সুযোগ থাকে ক্লাবের জন্য। মোনাকো থেকে কিলিয়ান এমবাপেকে এভাবেই দলে ভিড়িয়েছিল পিএসজি।
একটি চলিত দলবদল প্রক্রিয়া হচ্ছে ‘সোয়াপ ডিল।’ এখানে অর্থ নয়, একজন খেলোয়াড়ের বদলে অন্য এক খেলোয়াড়কে দলে টানা হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, আর্মেনিয়ান উইংগার হেনরিখ মিখিতারিয়ান আর্সেনালে এসেছিলেন এই সোয়াপ ডিলেই, যার বিপরীতে চিলিয়ান উইংগার অ্যালেক্সিস সানচেজকে নিয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
একজন খেলোয়াড় কীভাবে দল পরিবর্তন করে তার সাধারণ একটি ধারনা তো পাওয়া গেলো। তবে এর পেছনে থাকে বিশাল পরিমাণে অর্থের বদল। এক্ষেত্রে এই অর্থ কি শুধুমাত্র ক্লাবই পায়? আর এত টাকা আসেই বা কীভাবে?
উদাহরণ হিসেবে নেইমারের দলবদলকে ধরা যাক। পিএসজি রিলিজ ক্লজে ২২২ মিলিয়ন ইউরো সরাসরি বার্সেলোনার হাতে দেয়নি। স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের হাতবদল হয়ে বার্সেলোনা নেইমারকে বিক্রি করার অর্থ পেয়েছিল। এই ২২২ মিলিয়ন ইউরোর ভেতর প্রায় ৩৮ মিলিয়ন পেয়েছিল এই ট্রান্সফারের সাথে থাকা এজেন্টরা।, যার ভেতর ছিলেন স্বয়ং নেইমারের বাবাও। তাই হয়তো বার্সা নেইমারকে বিক্রি করার অর্থ থেকে ১৮০ মিলিয়ন ইউরোর মতো আয় করতে পেরেছিল। তবে এই ট্রান্সফারের পেছনের বিতর্ক যেমন আজও শেষ হয়নি। তেমনি প্রকৃত সত্য এখনও প্রকাশ্যে আসেনি।
ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলো এমন বড় ট্রান্সফারের অর্থগুলো উঠিয়ে নেয় মূলত জার্সি ও টিকেট বিক্রি এবং টেলিভিশন ব্রডকাস্ট থেকে। আর সেখানে নেইমারের মতো তারকা ফুটবলার ক্লাবে যখন আছে, সেক্ষেত্রে এই সব দিকে আয় করা তেমন বড় কোনো বিষয় নয়।
তবে আয় করার মতো বিষয় হোক বা দলবদল, এখানে যেমন অনেক কিছুই প্রকাশ্যে আসে না, আসতে দেয়াও হয় না। কারণ, সবকিছু ছাপিয়ে ফুটবলও একটি ব্যবসার মঞ্চ। এই একজন খেলোয়াড়কে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে কেনা শুধুমাত্র দলে উন্নতি বা ক্লাবের জন্য শিরোপা এনে দেয়ার জন্য নয়, এর পেছনে থাকে অনেক বড় ব্যবসায়িক চিন্তাভাবনা; যেগুলো আমরা সাধারণ দৃষ্টিতে কল্পনাও করতে পারি না।
তবে এগুলো আমাদের না চিন্তা করলে চলবে। কারণ, আমাদের মতো সাধারণ দর্শকদের কাছে ফুটবল শুধুই একটি খেলামাত্র, এবং সমর্থন করা ক্লাব হচ্ছে সকল আবেগের স্থান।