এশিয়া কাপের সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যান ও বোলার

মাঠকর্মীরা এরই মধ্যে দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম পরিস্কার করে ফেলেছেন। উইকেটও ঢাকা পড়েছে ভারি কাভারের তলায়। হয়তো মূল ফটকে তালা পড়লো বটে। এই মাঠেই যে টানটান উত্তেজনার একটা ফাইনাল ম্যাচ হয়ে গেল, তা হয়তো মনে রাখবে মরুভূমি, মনে রাখবে গ্যালারির চেয়ার আর দুবাইয়ের বাতাস। আরও মনে রাখবে প্রত্যেক ক্রিকেটপ্রেমী। এশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচে শেষ বলে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতে জয়ের দিন জিতেছে আসলে ক্রিকেট। এমন উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচই যেন সবার চাওয়া। হয়েছেও তাই। কেবল ফাইনাল নয়, পুরো টুর্নামেন্টের পরতে পরতে ছিল উত্তেজনা। বাংলাদেশকে তো বটেই, শ্রীলঙ্কাকেও হারিয়ে দিয়ে চমকে দিয়েছে আফগানিস্তান। ভারতের সঙ্গে করেছে ড্র। এমনকি পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ পর্যন্ত গিয়ে হারের স্বাদ নিলেও, আফগানিস্তানকে মনে রাখবে শোয়েব মালিকের দল। 

তবে এশিয়া কাপের বাছাইপর্ব পার করে আসা হংকং দাঁড়াতেই পারেনি টুর্নামেন্টে। ভারত ও পাকিস্তানের সামনে একরকম উড়ে গেছে। 

দুই গ্রুপের মধ্যে সুপার ফোরে জায়গা পায় ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান। শ্রীলঙ্কা গ্রুপ পর্বেই হংকংয়ের সঙ্গে বিদায় নেয়। সুপার ফোরেও বাংলাদেশকে ভুগিয়েছিল আফগানিস্তান। কিন্তু শেষপর্যন্ত জয়ের হাসিটা হাসে বাংলাদেশ। এরপর ফাইনালে ওঠার শেষ লড়াইয়ে হারায় পাকিস্তানকে। অন্যদিকে, আগে থেকেই আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় তুলে নিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল ভারত। নিয়ম রক্ষার ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ড্র করে তারা। 

এই আসরের মধ্যে দিয়ে তৃতীয়বারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে গিয়ে হেরেছে বাংলাদেশ। তবে জিতেছে কোটি হৃদয়। যার ধারাবাহিকতায় হয়তো আগামী দিনে আরও এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ভারত, আরও একবার এশিয়ার ক্রিকেট রাজত্বের প্রমাণ দিল। আরও একবার নিজেদের সফলতম হিসেবে মনে করিয়ে দিল। 

২৯ তারিখে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফাইনাল ম্যাচের মধ্যে দিয়ে পর্দা নামা এশিয়া কাপে অংশ নিয়েছিল হংকং, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারত। প্রত্যেকটি দল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে  ম্যাচ খেলে। যেখানে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানকে হারিয়ে জায়গা করে নেয় ফাইনালে। অন্যদিকে, হংকং, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানকে হারায় ভারত। 

পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, দুই ফাইনালিস্ট বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়াও পুরো টুর্নামেন্টে ব্যাট-বলে অসাধারণ সময় কাটিয়েছে আফগানিস্তান। যে কারণে এবারের আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ও উইকেটশিকারির তালিকায় আফগানদের একাধিক নাম রয়েছে। তবে সুবিধা করতে পারেনি পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও হংকং। সেরা পাঁচের কোনো তালিকাতেই এই ৩ দলের কারোর নাম নেই। 

ব্যাটিং

ব্যাট হাতে এবারের এশিয়া কাপে মোট ছয়টি সেঞ্চুরি ও ২৫টি হাফ সেঞ্চুরি এসেছে। যার মধ্যে সর্বোচ্চ দুটি সেঞ্চুরি একাই করেছেন ভারতের শিখর ধাওয়ান। সর্বোচ্চ তিনটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন দুজন। আফগানিস্তানের হাসমাতুল্লাহ শাহিদি ও পাকিস্তানের ইমাম-উল-হক। 

কিন্তু সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের তালিকাটা কেমন ছিল? চলুন জেনে নেওয়া যাক সেরা পাঁচের আদ্যোপান্ত।  

শিখর ধাওয়ান (ভারত)

শিখর ধাওয়ান; Image Source: AP

এবারের এশিয়া কাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ভারতীয় ব্যাটসম্যান শিখর ধাওয়ান। ৫ ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছে মোট ৩৪২ রান। যার মধ্যে রয়েছে দুটি সেঞ্চুরি। সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসটি ছিল ১২৭ রানের। সর্বোচ্চ রানের উপহার স্বরূপ, ২০১৮ এশিয়া কাপের ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট পুরস্কার জিতেছেন ধাওয়ান।

রোহিত শর্মা (ভারত)

রোহিত শর্মা; Image Source: AP

সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে নিজের নাম লিখিয়েছেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা। শিখর ধাওয়ানের সমান ৫ ম্যাচে তার সংগ্রহ ১০৫.৬৬ গড়ে ৩১৭ রান। সর্বোচ্চ ১১১ রানের অপরাজিত একটি ইনিংস খেলেছেন রোহিত শর্মা। একটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি দুটি হাফ সেঞ্চুরিও এসেছে তার ব্যাট থেকে। 

মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ)

মুশফিকুর রহিম; Image Source: AP

এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের তালিকায় সেরা পাঁচের তিন নম্বর অবস্থানে মুশফিকুর রহিম। এই তালিকায় বাংলাদেশের পক্ষে তিনিই একমাত্র ব্যাটসম্যান। এবারের টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ১৪৪ রানের ইনিংস খেলা এই ক্রিকেটার ৫ ম্যাচে তুলেছেন ৩০২ রান। তার ১৪৪ রানের ইনিংসটি এবারের পুরো টুর্নামেন্টেই সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। গড় ছিল ৬০.৪০।

মোহাম্মদ শাহজাদ (আফগানিস্তান)

মোহাম্মদ শাহজাদ; Image Source: AP

আফগানিস্তানের উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শাহজাদ তালিকার ৪ নম্বর অবস্থানে। টুর্নামেন্টের ৫ ম্যাচে তুলেছেন ৫৩.৬০ গড়ে ২৬৮ রান। সর্বোচ্চ ১২৪ রানের ইনিংসের সঙ্গে রয়েছে একটি হাফ সেঞ্চুরি।

হাসমাতুল্লাহ শাহিদি (আফগানিস্তান)

হাসমাতুল্লাহ শাহিদি; Image Source: AP

এশিয়া কাপের সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যানের তালিকার পাঁচ নম্বরে রয়েছেন আরেক আফগান ব্যাটসম্যান হাসমাতুল্লাহ শাহিদি। শাহজাদের সমান ৫ ম্যাচ খেলে তুলেছেন ২৬৩ রান, সর্বোচ্চ অপরাজিত ৯৭। রয়েছে মোট ৩টি হাফ সেঞ্চুরি।

বোলিং

আরব আমিরাতের উইকেটগুলো বেশ গতানুগতিক। রসকষ নেই, ন্যাড়া ধরনের। তার মধ্যেও দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এবারের এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচের আগে উইকেট কিউরেটর যা যা বলেছিলেন, তা-ই হয়েছিল। সেই ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এমন উইকেটে ব্যাটিং করাটাই স্বাচ্ছন্দ্যের ছিল। তারপরও প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে নিজেদের এগিয়ে নিয়েছে বোলাররা। যে কারণে সফলতাও এসেছে মুঠো ভরে। 

তবে এবারের টুর্নামেন্টে পেসারদের চেয়ে স্পিনাররা বেশি সফল হয়েছেন। এটারও কারণ এই উইকেট। যেখানে টসের চেয়ে সন্ধ্যার কণ্ডিশনটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেরা পাঁচ উইকেটশিকারির তালিকাতেও স্পিনারদের জয়জয়কার।

রশিদ খান (আফগানিস্তান)

রশিদ খান; Image Source: AP

এশিয়া কাপের সব দলগুলোর মধ্যেই একরকম রশিদ খান ভীতি ছিল। আফগানিস্তানের ২০ বছর বয়সী এই লেগস্পিনার সত্যিকার অর্থেই নিজের প্রতি প্রতিপক্ষের ভয়ের কারণ বাঁচিয়ে রেখেছেন। মাত্র শেষ হওয়া এশিয়া কাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় নিজের নাম লিখেছেন সবার উপরে। ৫ ম্যাচে নিয়েছেন ১০ উইকেট। সেরা বোলিং ফিগার ছিল ৪৬ রান খরচে ৩ উইকেট নেওয়া। 

টুর্নামেন্টে রশিদ মোট বল করেছেন ৪৬.১ ওভার, যেখানে রান খরচ হয়েছে ১৭২। উইকেটপ্রতি গড়ে ১৭.২০ রান করে খরচ করতে হয়েছে তাকে।

মুস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ)

মুস্তাফিজুর রহমান; Image Source: AFP

ডেথ ওভারে দারুণ কার্যকরী মুস্তাফিজুর রহমান রশিদ খানের সঙ্গে যৌথভাবে এবারের এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করেছেন। যদিও আফগান স্পিনারের চেয়ে রান বেশি খরচ করার কারণে দুই নম্বরে নেমে গেছেন বাংলাদেশের এই বাঁহাতি পেসার। ১০ উইকেট নিতে গিয়ে তিনি বল করেছেন ৪২ ওভার, খরচ করেছেন ১৮৫ রান। ‘কাটার মাস্টার’ নামে পরিচিত মুস্তাফিজ উইকেটপ্রতি রান দিয়েছেন ১৮.৫০। 

কুলদ্বীপ যাদব (ভারত)

কুলদ্বীপ যাদব; Image Source: BCCI

ভারতীয় চায়না ম্যান কুলদ্বীপ যাদব এশিয়া কাপের ২০১৮ আসরে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় তিন নম্বরে রয়েছেন। খেলেছেন ৬ ম্যাচে। উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজ-রশিদের সমান ১০টি। কুলদ্বীপ ৫৮ ওভার বল করে ২৩৭ রান খরচ করেছেন পুরো টুর্নামেন্টে। উইকেটপ্রতি খরচ করেছেন ২৩.৭০ রান। সেরা বোলিং ফিগার ৪৫ রানে ৩ উইকেট। 

জশপ্রীত বুমরাহ (ভারত)

ভারতীয় পেসার জশপ্রীত বুমরাহ ৪ ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়ে এবারের এশিয়া কাপের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন। ৩৪.৫ ওভারে ১২৮ রান খরচ করেছেন তিনি। উইকেটপ্রতি দিয়েছেন ১৬ রান, সেরা বোলিং ফিগার ৩৭ রানে ৩ উইকেট। 

রবীন্দ্র জাদেজা (ভারত)

রবীন্দ্র জাদেজা; Image Source: AP

সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় এশিয়া কাপে পাঁচ নম্বর অবস্থানে রবীন্দ্র জাদেজা। ৪ ম্যাচে ঝুলিতে উইকেট ভরেছেন ৭টি। উইকেটপ্রতি ২২.২৮ রান খরচে মোট ১৫৬ রান খরচ করেছেন ৩৫ ওভার বল করে। সেরা বোলিং ফিগার ছিল ২৯ রানে ৪ উইকেট। এক ম্যাচে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার দিক থেকে অবশ্য জাদেজার অবস্থান সবার উপরে। মুস্তাফিজ এক ম্যাচে জাদেজার মতো চার উইকেট নিলেও খরচ করেছিলেন ৪৩ রান। 

ফিচার ইমেজ- AP

Related Articles

Exit mobile version