দলীয় খেলায় একা হাতে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন কোনো একজন, এইরকম দৃশ্য হরহামেশাই ঘটে। আর খেলার নাম যদি হয় ক্রিকেট, তাহলে তো কথাই নেই! তাই অন্য সব দলগত খেলার চেয়ে ক্রিকেটের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ পুরষ্কারটি বেশ চটকদার।
হেরে যাওয়া দল থেকে কেউ ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়েছেন, এমন দৃশ্য ক্রিকেটে নেহায়েতই কম নয়। তবে পুরো একটি দলকে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ পুরষ্কার গ্রহন করতে দেখেছে বিশ্ব, এইরকম ঘটনা ঘটেছে মাত্র তিনবার; দুইবার ওয়ানডেতে, আরেকবার টেস্টে। ভাবা যায়, ক্রিকেটের ১৪২ বছরের ইতিহাসে মোটে তিনবার!
কিন্তু সে পুরষ্কারকে কি ম্যান অফ দ্য ম্যাচ না বলে ম্যান অফ দ্য টিম বলা যায়? সেই জটিলতা অবশ্য খোলাসা হয়নি। সেই জটিলতার কূলকিনারা করার আগে চলুন দেখে নেওয়া যাক সেই তিন ম্যাচের কীর্তিকলাপ।
নিউ জিল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ – ওডিআই (৩ এপ্রিল, ১৯৯৬)
সর্বপ্রথম এইরকম কাণ্ড ক্রিকেট বিশ্ব দেখেছে দুই যুগ আগে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জর্জটাউনে সিরিজের চতুর্থ ওডিআই শুরুর আগে অবশ্য চাপে ছিল নিউ জিল্যান্ড। ৫ ম্যাচ সিরিজের প্রথম ৩ ম্যাচ শেষে সফরকারীরা পিছিয়ে ছিলো ২-১ এ। তাই সিরিজ বাঁচিয়ে রাখতে হলে জয়ের কোনো বিকল্প ছিল না কিউইদের সামনে।
ম্যাচ জিততেই হবে এমন চাপেই কি না হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে টসে হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামা ‘ব্ল্যাক ক্যাপস’ ব্যাটিং লাইনআপ। পিচটা যে জঘন্য কিছু ছিল না, নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা সেটা শুরুতেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন; ১৩.২ ওভারেই তুলে ফেলেছিলেন ৯০ রান, তাতে হারাতে হয়েছিল স্রেফ তিনটি উইকেট। কিন্তু এরপর লাগাম টেনে না ধরে সবাই যেন তাড়াহুড়ো করতে শুরু করলেন। ফলাফল, বিপর্যয়। মাত্র ১৫৮ রানে গুটিয়ে যায় নিউ জিল্যান্ড, ক্রিজে টিকেছিল সর্বসাকুল্যে ৩৬ ওভার। ওপেনিংয়ে নামা ক্রেইগ স্পিয়ারম্যান করেছিলেন সর্বোচ্চ ৪১; আর স্পিয়ারম্যান বাদে দুই অঙ্কের ঘর ছুঁতে পেরেছিলেন আর মাত্র তিনজন — ওপেনার নাথান অ্যাস্টল ২০, অধিনায়ক লি জার্মন ১৯, আর ক্রিস কেয়ার্নসের ২৯।
স্রেফ ১৫৯ রানের টার্গেট, ব্যাটিং লাইনআপে শুরুর দিকেই আছেন শিবনারায়ন চন্দরপল-ব্রায়ান লারা-ফিল সিমন্সদের মতো ব্যাটসম্যান। উপরন্তু প্রতি ওভারে প্রয়োজন ৩.২ রান, সেকেলে হিসেবেও সেটা ঠিক অনতিক্রম্য কিছু নয় বৈকি। কিন্তু ঘরের সমর্থকেরা যা আশা করেছিলেন, তার ঠিক উল্টোভাবে শুরু হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস। ডিবলি-ডবলির পসরা সাজিয়ে বসা নিউ জিল্যান্ড দলের বোলিং, সাথে দুর্দান্ত ফিল্ডিং শুরুতেই টুঁটি চেপে ধরলো উইন্ডিজ ব্যাটিং লাইনআপের।
শুরুতেই নিউ জিল্যান্ডকে ব্রেকথ্রু এনে দেন গ্যাভিন লারসন, প্যাভিলিয়নে ফেরান স্টুয়ার্ট উইলিয়ামস ও শুরুতেই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা ব্রায়ান লারাকে। স্কোরকার্ডে যখন ৩৯/৩, তখন উইন্ডিজদের খেলায় ফেরান ফিল সিমন্স। কিন্তু ২৯ আর ৩৬ রানের পরপর দুইটি পার্টনারশিপও নিরাপদে রাখতে পারেনি তাদের। ১০৪/৪ থেকে মুহূর্তেই ১২০/৮ এ রূপান্তরিত হয় স্কোরবোর্ড। নবম উইকেটে অ্যামব্রোস আর হোল্ডার মিলে ৩২ রানের পার্টনারশিপ করলেও শেষমেশ ৪ রানের হার মেনে নিতে হয় ক্যারিবীয়দের।
সে ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের বোলিং বিভাগ ছড়ি ঘুরালেও একক কৃতিত্ব নেই কারো। সবচেয়ে ভালো বোলিং ফিগার ছিলো গ্যাভিন লারসনের। ১০ ওভারে ১৮ রান দিয়ে তিনি পেয়েছিলেন ২ উইকেট। ২ উইকেট জুটেছিল ক্রিস কেয়ার্নস ও জাস্টিন ভনের থলিতেও। অন্যদিকে, ব্যাটিং পারফরম্যান্সেও একই দশা। তাই এককভাবে কাউকেই ম্যাচ জেতানোর কারিগর হিসেবে ঘোষণা করা যায়নি। তাই ম্যাচশেষে ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অফ দ্য ম্যচের পুরষ্কার দেওয়া হয় পুরো নিউ জিল্যান্ড দলকেই।
পাকিস্তান বনাম ইংল্যান্ড – ওডিআই (১ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬)
‘আনপ্রেডিক্টেবল’ নামে পাকিস্তানের বেশ সুনাম রয়েছে। হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ ফসকে যাওয়া বলুন, কিংবা হারতে হারতে জিতে যাওয়া, মিইয়ে আসা ম্যাচে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পাকিস্তান ক্রিকেটের জুড়ি মেলা ভার। তবে দলগত নৈপুণ্য পাকিস্তান ক্রিকেটে দেখা গিয়েছে খুব কমই। তার মধ্যে যে কয়বারই দেখা গিয়েছে, তাতেই বাজিমাত। কারণ, পুরো পাকিস্তান দলও একবার বগলদাবা করেছিলেন ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরষ্কার।
ক্রিকেট বিশ্বে টেস্ট বলুন কিংবা ওডিআই, প্রথম এই কাণ্ড ঘটেছিল ১১৮ বছর পর। কিন্তু দ্বিতীয়বারের ক্ষেত্রে সময় লেগেছে মাত্র চার মাস। নিউ জিল্যান্ডের সেই অর্জনের চার মাসের মাথায় দ্বিতীয় দল হিসেবে এই অর্জনে নিজেদের নাম ইতিহাসের পাতায় তোলে পাকিস্তান।
তিন ম্যাচের সিরিজ খেলতে সেবার ইংল্যান্ড সফরে যায় পাকিস্তান। প্রথম দুই ম্যাচই হেরে সিরিজ খোয়ানোতে শেষ ম্যাচ হয়ে দাড়ায় নিয়মরক্ষার। আর সেই ম্যাচেই দলগত নৈপুণ্যে ম্যাচ জিতে নেয় পাকবাহিনী।
টসে জিতে ব্যাট করতে নামা ইংল্যান্ড ওপেনার অ্যালেক স্টুয়ার্টকে শুরুতেই ফেরান ওয়াসিম আকরাম। অন্যদিকে, আরেক ওপেনার নিক নাইট থাকেন অবিচল। শুরুতে নেমে একেবারে শেষ পর্যন্ত খেলে তিনি করেছিলেন ১২৫ রান। তিনি ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে, দু’দিনের মধ্যে করে ফেলেছিলেন টানা দুটো হান্ড্রেড; এর আগে এই কৃতিত্ব কেবল ছিল প্রতিপক্ষের হয়ে খেলা সাঈদ আনোয়ার এবং চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম একজন মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান ডিন জোন্স। নিকের অবিচলতা আর অন্যদের টুকটাক ‘মোবাইল ডিজিট’ সংগ্রহে ছোটখাটো সব পার্টনারশিপের উপর ভর করে পুরো ৫০ ওভার খেলে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ২৪৬ রান করে ইংল্যান্ড।
নিক নাইটের পর ইংলিশদের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেছিলেন অধিনায়ক মাইক আথারটন; তার উইলো থেকে এসেছিল মোটে ৩০ রান। হয়তো ইনিংসটা আরো বড় হতে পারতো, তবে নিজের করা দ্বিতীয় বলেই শহীদ নাজির যেভাবে ভড়কে দিয়েছিলেন আথারটনকে, সেটাই হয়তো মনে জুজু ঢুকিয়ে দিয়েছিল। অন্যদিকে, বোলিং বিভাগে বরাবরের মতোই পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দেন ওয়াসিম আকরাম। তার সংগ্রহে ছিল ৩টি উইকেট। অন্য বোলারদের অর্জনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ওয়াকার ইউনিস, শহীদ নাজির ও সাকলাইন মুশতা্কের দুইটি করে উইকেট।
রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা দুর্দান্ত করে পাকিস্তান। শহীদ আনোয়ার ও সাঈদ আনোয়ার প্রথম উইকেটে পার্টনারশিপ করেন ৯৩ রানের। নিজের প্রথম এবং একমাত্র আন্তর্জাতিক ওডিআইতে ৩৭ রান করে সাজঘরে ফিরেন শহীদ আনোয়ার। ৬১ রানে সাঈদের বিদায়ে পাকিস্তানের সংগ্রহে দাড়ায় ১১৪/২। তৃতীয় উইকেটে আমির সোহেল ও ইজাজ আহমেদ গড়েন ৬৩ রানের পার্টনারশিপ। তারপরই ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ পাকিস্তানের ইনিংসে ছোটখাটো একটা ধ্বস নামে (বলা উচিত, ধ্বসটা নামান অ্যাডাম হলিওক), ১৭৭/২ থেকে হয়ে যায় ১৯৯/৬। সেই সময় আস্কিং রেটও ছিল ৬, তবে ঢাল হয়ে ছিলেন ইজাজ আহমেদ।
এরপর ইজাজ আহমেদ ৫৯ রানে বিদায় নিলেও তখনও জিততে প্রয়োজন ২৮ রান। সাকলায়েন মুশতাক টুকটাক ব্যাট চালাতে পারলেও ঠিক ভরসা করে ওঠা চলে না। ক্রিজে ছিলেন রশীদ লতিফ, একমাত্র স্বীকৃত ব্যাটসম্যান। তিনিই দায়িত্ব তুলে নিলেন কাঁধে। তবে ম্যাচের ভাগ্য পেণ্ডুলামের মতো ঝুলতে শুরু করলো ৪৮তম ওভারে, যখন মাইক আথারটনের একটা আন্ডারআর্ম থ্রো’তে পরাস্ত হন। তবে ভাগ্যদেবী সহায় হলেন এ যাত্রায়, অ্যালেক স্টুয়ার্টের প্যাডের ধাক্কায় বেল পড়ে যাওয়ার কারণে থার্ড আম্পায়ার রে জুলিয়ান নট আউট ঘোষণা করলেন তাকে। ক্ষুদ্র এই নাটিকার পর আর তেমন একটা অবশ্য বেগ পেতে হয়নি রশীদকে, ঠাণ্ডা মাথায় ২৮ বলে ৩১ রানের কার্যকর এক ইনিংস খেলে দলকে জয়ের বন্দরে ভেড়ান রশীদ লতিফ।
পাকিস্তান ম্যাচটি দুই উইকেটে জিতে নেয় দুই বল হাতে রেখে৷ ব্যাটিং ও বোলিং দুই বিভাগেই দলীয় পারফরম্যান্স এর উপর ভিত্তি করে ম্যাচ জেতায় সেই ম্যাচে ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরষ্কার জোটে সবার কপালেই।
দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ – টেস্ট (১৫-১৮ জানুয়ারি ১৯৯৯)
টেস্ট ক্রিকেটে এমন অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে একবারই; ১৯৯৯ সালে। সিরিজের পঞ্চম ও শেষ টেস্টে সফরকারী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩৫১ হারিয়ে ধবলধোলাই করে প্রোটিয়ারা। সেই সময় রানের হিসেবে উইন্ডিজদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পরাজয় ছিল এটি।
অথচ শুরুটা ছিল দারুণ। প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে এক পর্যায়ে প্রোটিয়াদের ছিল ৩ উইকেটে মাত্র ১৮ রান। ক্রনিয়ে এবং জন্টি রোডস কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছিলেন বটে, তবে ৫ উইকেটে ৯৮ রানটা ঠিক সেই চেষ্টায় সফলতার সাক্ষ্য দেয় না। কিন্তু মেঘের আড়ালে সূর্য হিসেবে ছিলেন ক্যালিস, ধারাবাহিকতার প্রতিমূর্তি হয়ে যথারীতি তিনি করলেন ৮৩। কিন্তু উইন্ডিজকে যেন ধ্বসিয়ে দিল বাউচারের সেঞ্চুরি, তার ১০০ রানের ইনিংসে ভর করেই দক্ষিণ আফ্রিকার মোট রান দাঁড়ায় ৩১৩।
তবে প্রথম ইনিংসের নায়ক কিন্তু ক্যালিস কিংবা বাউচার নন, ৬ উইকেট নিয়ে কোর্টনি ওয়ালশই ছিলেন প্রথম ইনিংসের পোস্টার বয়। প্রিয় বন্ধু কার্টলি অ্যামব্রোস ছিলেন না হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে, তাই ভারটা যেন তুলে নিয়েছিলেন নিজের কাঁধেই; কারস্টেন, গিবস, বাউচার, পোলকসহ ক্লুজনারও শিকার হয়েছিলেন ওয়ালশের। মজার ব্যাপারটা ছিল, প্রোটিয়াদের সবাই আউট হয়েছিলেন একইভাবে; উইকেটের পিছনে উইকেটকিপার কিংবা স্লিপে ক্যাচ দিয়ে।
ব্যাট করতে নেমে ধাক্কা খায় উইন্ডিজরাও, ৫ রানেই হারিয়ে ফেলে দুই উইকেট। তবে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন ব্রায়ান লারা, ৩৮ বলেই করলেন ফিফটি। তাকে সঙ্গত দেন শিবনারায়ন চন্দরপলও, তবে স্বভাবসুলভ ধৈর্য্যের প্রতিমূর্তি হয়ে। অনবদ্য এক বৈপরীত্যে তারা গড়লেন ১১৭ রানের জুটি। ব্যস, ইনিংসে আর বলার মতো কিচ্ছু নেই; লারার ৬৮ আর চন্দরপলের ৩৮ রানই ছিল বলার মতো স্কোর। ১৪৪ রানেই গুটিয়ে যায় তারা। ওয়ালশের বোলিংয়ের পাল্টা জবাব দেন অ্যালান ডোনাল্ড, ৫ উইকেট নিয়ে ধ্বংসযজ্ঞের নেতৃত্ব দেন তিনি। ডোনাল্ডের যোগ্য সঙ্গী হিসেবে পোলক আর ক্লুজনার উইকেট পান দুইটি করে, অন্য উইকেটটি যায় ক্যালিসের ব্যাগে।
দ্বিতীয় ইনিংসে প্রোটিয়ারা হয়ে ওঠে দুর্নিবার, কারস্টেন আর জন্টি রোডস হাঁকান সেঞ্চুরি। কারস্টেন যেখানে ১৩৪ রান করেছেন ৩০৪ বলে, সেখানে জন্টি রোডস খেলেছেন ওয়ানডে – ৯৫ বলে করেছেন ১০৩! স্কোরকার্ডে যখন ৩৯৯ রানে ৫ উইকেট, অধিনায়ক ক্রনিয়ে এবার ভাবেন, ঢের হয়েছে। ইনিংসের শেষ ঘোষণা করলেন তিনি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ালো ৫৬৯।
পাহাড়সম এই রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ২১৭ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ; পল অ্যাডামস নেন সর্বোচ্চ চার উইকেট। ম্যাচশেষে পরিসংখ্যানের খাতায় দেখা যায়, কমবেশি সবাই একইরকম পারফর্ম করেছেন। প্রথম ইনিংসে শূন্য করলেও ম্যাচে মোটমাট রানের দিক থেকে সর্বোচ্চ আসে কারস্টেন থেকে, ১৩৪। তারপর জন্টি রোডস, ক্যালিস, বাউচার করেন যথাক্রমে ১২৭, ১১০ ও ১০০ রান; ক্রনিয়ের ৮৩ বা গিবসের ৫৩ রানও ফেলনা নয় বৈকি।আবার বোলিং বিভাগেও একই দৃশ্য; সর্বোচ্চ ৬টি উইকেট নেন ডোনাল্ড, পল অ্যাডামস নেন ৪ উইকেট। তিনটি করে নেন পোলক, ক্লুজনার ও ক্যালিস। তাই শেষমেষ কর্তৃপক্ষ পুরো দলকেই ম্যান অফ দ্য ম্যাচ ঘোষণা করে।
ক্রিকেট ১১ জনের খেলা হলেও একা হাতে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া কিংবা একাই নায়ক বনে যাওয়া অন্য যেকোনো খেলা থেকে ক্রিকেটে বেশি পরিলক্ষিত হয়। তবে অর্কেস্ট্রার সমবেত সুর সবসময়ই মধুর। একসাথে সব বাদ্যযন্ত্রের সুর এক লয়ে বেজে উঠলে সেটির সৌন্দর্য্য আর যেকোনো তাল-লয় থেকে সুন্দর, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এতে বোধহয় সব থেকে খারাপ ভাগ্য বোধ করি উইন্ডিজের, তাদের বিপক্ষেই যে দুইবার করে হলো এ ঘটনা, সেটাও আবার দুই ভিন্ন ফরম্যাটে!
তবে সেই ১৯৯৯ সালের পর পেরিয়ে গেছে ২২ বছর। টেস্ট বলুন, ওডিআই, কিংবা নতুন সংযোজন টি-টোয়েন্টি, দলগত নৈপুণ্য তো কম দেখা যায়নি গত দুই যুগে! তাতেও সর্বশেষ পুরো দলের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ পুরষ্কার পাওয়ার শেষ নজির হয়ে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট ম্যাচটিই। ভবিষ্যতে আবার কবে এই অভূতপূর্ব দৃশ্য ক্রিকেটপ্রেমীরা অবলোকন করতে পারবেন, কিংবা আদৌ পারবেন কি না, তা হয়তো সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানেন। সেদিনের আগ পর্যন্ত দলগত নৈপুণ্যের উদাহরণ দিতে গেলে এই তিন ম্যাচের কথাই তো বলতে হবে সবার আগে!