ফুটবলবিশ্বে পরাশক্তি হিসেবে বেলজিয়ামের আবির্ভাব খুব একটা পুরনো ঘটনা নয়। এই শতাব্দীর প্রথম দশকেও ছিল না এই দলের কোনো নামডাক। কিন্তু গত দশকেই তারা উঠে আসে ইউরোপ ও বিশ্বের অন্যতম সেরা একটি দল হিসেবে। দলটিকে বলা হয়েছিল ২০১৪ ও ২০১৮ ফুটবল বিশ্বকাপের ডার্ক হর্স। এই তকমা ফেলে দিয়ে এখন দলটি ফুটবল বিশ্বের অন্যতম সেরা দল হিসেবে ইউরো ২০২০-এর অন্যতম এক দাবিদার। বেলজিয়াম তার এই সোনালী প্রজন্মের হাত ধরে র্যাংকিংয়ে উঠে এসেছে একদম এক নম্বরে।
এই দলে একঝাঁক তারকা খেলোয়াড় নিয়ে ‘ইউরোপের রেড ডেভিল’রা মুখিয়ে আছে তাদের এত বছরের ট্রফিখরা দূর করতে। এত বছরের ইউরো ইতিহাসে তাদের বলার মতো সাফল্য এখন পর্যন্ত কেবল ১৯৮০ সালের টুর্নামেন্টে রানারআপ হওয়া। এরপরের বাকি সময়ের পুরোটাই ছিল বানরের বাঁশে ওঠা সমস্যার মতো, সামান্য উপরে উঠে আবার নেমে যাওয়ার গল্প। এছাড়া সর্বশেষ ১৫টি ইউরোর মধ্যে তারা কেবল পাঁচটিতেই কোয়ালিফাই করতে পেরেছে।
তাদের ফুটবলে নতুন দিগন্তের সূচনা হয় এই সোনালি প্রজন্মের আগমনের মধ্য দিয়ে। তবে শুধু সোনালি প্রজন্ম পেলেই তো হয় না, তাদের পথ দেখানোর জন্য দরকার একজন দক্ষ নাবিকের। এই প্রজন্মটির উত্থান ঘটে মার্ক উইলমোটসের হাত ধরে, আর তাদের গড়ে তোলেন রবার্তো মার্টিনেজ। এই রবার্তো মার্টিনেজের অধীনে খেলে তারা ২০১৮ বিশ্বকাপে ৩য় হয়। অল্পের জন্য তারা হারিয়ে ফেলে শিরোপা জয়ের সুযোগ।
বেলজিয়ামের এই স্কোয়াডটিতে দুর্দান্ত সব তরুণ অ্যাটাকাররা আছেন, আছেন রক্ষণের কিছু অভিজ্ঞ প্রহরী। একদম সামনে প্রতিপক্ষের রক্ষণকে ছিঁড়েফুড়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য রয়েছেন রোমেলু লুকাকু, কেভিন ডি ব্রুইনা ও এদেন আজার। তাদের সমর্থন যোগানোর জন্য একটু নিচে থাকছেন টিয়েলম্যানস, অ্যাক্সেল উইটসেলের মতো খেলোয়াড়রা। আর তাদের নিচে খেলেন অল্ডারওয়াইরেল্ড, ভার্টোঙ্ঘেনের মতো অভিজ্ঞ রক্ষণভাগের খেলোয়াড়। এই খেলোয়াড়দের মাঝে কেমিস্ট্রিটা জমে গিয়েছে দারুণভাবে, যার কৃতিত্ব অবশ্যই পাবেন রবার্তো মার্টিনেজ। টিম-গেম তারা এতটাই দুর্দান্ত খেলে আসছে গত কয়েক বছর ধরে যে এই ইউরোর বাছাইপর্বে ১০ ম্যাচের মধ্যে তারা সবগুলো ম্যাচই জিতেছে পরিষ্কার ব্যবধানে। কতটা? এই ১০ ম্যাচে তারা করেছে ৪০টি গোল, কিন্তু খেয়েছে মাত্র ৩টি!
গোলরক্ষক
বেলজিয়াম দলে গোলরক্ষক হিসেবে আছেন ৩ জন – থিবো কোর্তোয়া, সিমন মিনিওলেট এবং মেটস সেলস।
বেলজিয়াম দলে গোলরক্ষক হিসেবে অটোচয়েস রিয়াল মাদ্রিদ স্টার থিবো কোর্তোয়া। খুব জরুরি প্রয়োজন না হলে কোর্তোয়ার বদলে অন্য দুইজনের কারোর মাঠে নামার সম্ভাবনা খুবই কম। ২০১৮ বিশ্বকাপে গোল্ডেন গ্লাভস জেতা কোর্তোয়া এই মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলেছেন ৫১টি খেলায়। এই সময়ে তিনি হজম করেছেন ৪৪টি গোল, বিপরীতে ক্লিনশিট রেখেছেন ২১টি খেলায়। মিনিওলেটের মৌসুমটা ক্লাব ব্রাগে বেশ ভালো গেলেও কোর্তোয়ার ইনজুরি বা সাসপেনশন ছাড়া তার নামার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
রক্ষণভাগ
বেলজিয়ামের এই দলে ডিফেন্ডার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন পাঁচজন – টবি অল্ডারওয়াইরেল্ড, ডেড্রিক বোয়োটা, জেসন ডেনায়ের, টমাস ভারমায়েলেন ও ইয়ান ভার্টোঙ্ঘেন। ভারমায়েলেন, ভার্টোঙ্ঘেন ও অল্ডারওয়াইরেল্ড তিনজনই আছেন ক্যারিয়ারের প্রায় শেষলগ্নে। আগের মতো চটপটে খেলার সময়টা বেশ পেছনে ফেলে এসেছেন তারা। ভারমায়েলেনের বেশ কিছু ইনজুরি সমস্যাও রয়েছে। ইনজুরির জন্য চার মাস মাঠেই নামতে পারেননি আরেক ডিফেন্ডার ডেড্রিক বোয়াটা। কিন্তু অপ্রতুল উৎস থাকায় তাদের উপরেই ভরসা করতে হচ্ছে কোচকে।
এই পাঁচজনের মধ্যে বলতে গেলে একমাত্র ফর্মে রয়েছেন অলিম্পিক লিঁও’র ডেনায়ের। তাকে মাঝে রেখেই দুই পাশে আর দুইজনকে জায়গা দিয়ে তিনজনের ডিফেন্স লাইন তৈরি করা হবে। তিনজন একসাথে থাকাতে কোনো একজন ভুল করলে আরেকজন সেটি কভার দিতে পারার সুযোগ থাকবে। ঠিক বিশ্বমানের দাবি না করা গেলেও এভাবে তিনজনের ডিফেন্স তৈরি করে বেলজিয়াম ভালোই ফলাফল পাচ্ছে।
মধ্যমাঠ
বেলজিয়ামের নতুন প্রজন্মের প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের বেশিরভাগই রয়েছেন তাদের মধ্যমাঠে। ইউরোর জন্য তাদের মধ্যমাঠের খেলোয়াড়দের লিস্ট তুলনামূলক বেশ লম্বা। বেলজিয়াম তাদের দুই ফুলব্যাককে উইংব্যাক বা লেফট/রাইট মিডফিল্ডার হিসেবে খেলায়। তাই তাদের নাম মিডফিল্ডারদের লিস্টেই চলে আসে। এই দলের মধ্যমাঠে জায়গা পেয়েছেন ইয়ানিক কারাস্কো, টিমোথি ক্যাস্তানিয়ে, নাসের চ্যাডলি, থোরগান আজার, কেভিন ডি ব্রুইনা, লিয়েন্ডার ডেনডঙ্কার, ডেনিস প্রায়েট, ইয়োরি টিয়েলম্যানস, হ্যান্স ভানাকেন, অ্যাক্সেল উইটসেল।
এই মৌসুমে ডিএফবি পোকাল জেতা বরুশিয়া ডর্টমুন্ড দলে ছিলেন থমাস মুনিয়ের। তবে সেখানে যে তার পারফরম্যান্স খুব ভাল ছিল, তা বলা যায় না। গড়পড়তা বা এর নিচেও ধরা যায়। লুকাস পিসেক থাকায় তার সাথে ভাগাভাগি করে খেলতে হয় তাকে। এইজন্য বুন্দেসলিগায় খেলতে পেরেছিলেন মাত্র ২১টি খেলায়। আর ইংলিশ ক্লাব লেস্টার সিটিতে খেলা তরুণ ক্যাস্তানিয়ে মোটামুটি মানের একটি মৌসুম পার করেছেন। সুযোগ পেয়েছিলেন ৩৪টি খেলায়, কিন্তু পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করতে পারেননি।
ডি ব্রুইনা এই মৌসুমে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে জিতেছেন প্রিমিয়ার লিগ। এছাড়া খেলেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালেও। প্রিমিয়ার লিগের খেলোয়াড়দের ভোটে জিতেছেন মৌসুমের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাবও। ইনজুরির জন্য প্রিমিয়ার লিগে মাত্র ২৩টি খেলায় শুরু থেকে খেলার সুযোগ হয় তার। এই সময়ের মধ্যেই তিনি করেন ৬ গোল ও অন্যদের দিয়ে করান ১২টি গোল। চ্যাম্পিয়নস লিগের ৮টি খেলায় করেছেন ৩টি গোল ও ৪টি অ্যাসিস্ট।
লেস্টার সিটির হয়ে অন্যতম দারুণ মৌসুম ছিল এটি টিয়েলম্যানসের জন্য। বলতে গেলে, তিনিই ছিলেন সেই দলের সেরা মিডফিল্ডার। তার করা একমাত্র গোলে চেলসিকে হারিয়ে লেস্টার জিতেছে তাদের ইতিহাসের প্রথম এফএ কাপ। লেস্টারের হয়ে মৌসুমে মোট ৫১টি খেলায় তিনি মাঠে নেমেছিলেন, আর তাতে তার পা থেকে এসেছে ৯টি গোল ও ৬টি অ্যাসিস্ট।
ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার উইটসেল ইনজুরির জন্য এ বছরের জানুয়ারির পর আর মাঠে নামেননি। তবুও সামান্য আশার রেখা থাকায় তাকে দলে নিয়েছেন কোচ। যদি তিনি না পারেন, তবে তার জায়গায় উলভারহ্যাম্পটনের ডেনডঙ্কারকে দেখা যেতে পারে।
এছাড়া দারুণ ফর্মে থাকা ইয়ানিক কারাস্কো থাকবেন লেফট উইংব্যাক হিসেবে। গত বছর জানুয়ারিতে চীন থেকে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে আবারও ফিরেছিলেন তিনি। এই মৌসুমে তাদের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন ৩৫টি খেলায়। এই সময়ে করেছেন ৭টি গোল ও করিয়েছেন ১১টি। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে এই মৌসুমে লা লিগা জেতাতে অনেকটা অবদানই ছিল তার। কারাস্কোর বদলি হিসেবে থাকবেন এদেন আজারের ভাই বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের থোরগান আজার।
আক্রমণভাগ
বেলজিয়াম দলে অ্যাটাকার হিসেবে আছেন ৭ জন। তারা হলেন: জেরেমি ডোকু, এদেন আজার, ড্রিজ মার্টেনস, লিয়ান্দ্রো ত্রোসার্দ, মিচি বাৎসুয়াই, ক্রিস্টিয়ান বেনটেকে ও রোমেলু লুকাকু।
ক্লাবে নিজের ক্যারিয়ারের সেরা সময় কাটিয়ে জাতীয় দলে এসেছেন রোমেলু লুকাকু। এ পর্যন্ত বেলজিয়ামের জার্সি গায়ে ৫৯ গোল করা লুকাকুর নায়কোচিত নৈপুন্যে ৯ বছর পর স্কুডেট্টো জিতেছে ইন্টার মিলান। এবারের সিরি-আ’র সেরা খেলোয়াড় হওয়া লুকাকু ইন্টারের হয়ে করেছেন ৩০ গোল ও করিয়েছেন ১০ গোল। বলতে গেলে তিনিই বর্তমানে বেলজিয়ামের সবচেয়ে ইনফর্ম খেলোয়াড়।
ড্রিজ মার্টেনস এই ৩৪ বছর বয়সে এসেও নাপোলির হয়ে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এই মৌসুমে ১৭টি খেলায় শুরু থেকে খেলে তার নামের পাশে রয়েছে ৯টি গোল ও ৮টি অ্যাসিস্ট। ক্রিস্টিয়ান বেনটেকে তার ক্লাব ক্রিস্টাল প্যালেসে খুব একটা নিয়মিত পারফর্ম করতে না পারলেও ব্যাকআপ স্ট্রাইকার হিসেবে দলে এসেছেন। এই মৌসুমে তার পা থেকে এসেছে ১১টি গোল।
বেলজিয়ামের সবচেয়ে বেশি চিন্তা তাদের অধিনায়ক এদেন আজারকে নিয়ে। রিয়াল মাদ্রিদের এই ফরোয়ার্ড মৌসুমটা পার করেছেন ইনজুরি নিয়ে। ইনজুরি থেকে ফেরার পর তার পায়ে দেখা যায়নি আর আগের ঝলক। পুরো মৌসুমের হিসেবে তিনি ছিলেন সুপার ফ্লপ। লা লিগায় খেলেছেন মাত্র ১৪টি খেলায়, যাতে রয়েছে ৩ গোল ও ১ অ্যাসিস্ট। পুরো মৌসুমজুড়ে মাত্র ৯০০ মিনিটের কাছাকাছি খেলার সুযোগ হয়েছিল তার। হ্যাজার্ডের ক্লাবের এই ফর্ম যদি জাতীয় দলে চলে আসে, তাহলে যথেষ্টই ভুগতে হবে বেলজিয়ামকে।
খেলার ধরন
রবার্তো মার্টিনেজ অনেকদিন ধরেই তার দলকে ধারাবাহিকভাবে একই ফরমেশনে খেলাচ্ছেন, ৩-৪-২-১। বেলজিয়ামের এই হাইব্রিড ফরমেশন যেমন তাদের খেলা বিরক্তিকর থেকে আকর্ষণীয় করেছে, তেমনি সাফল্যও নিয়ে এসেছে।
এই ফরমেশনটাই কেন বেছে নিলেন মার্টিনেজ? প্রথম সমস্যা, বেলজিয়াম দলের প্রথম একাদশে থাকার মতো কোনো ফুলব্যাক নেই। আরো নির্দিষ্ট করে বললে, কোনো লেফটব্যাক নেই দলে। থমাস মুনিয়ের দলে থাকলেও তিনি ফুলব্যাক থেকেও একজন উইংব্যাক হিসেবেই বেশি কার্যকর। আবার রক্ষণভাগে নেই তেমন কোনো নির্ভরযোগ্য সেন্টারব্যাকও। তাই এখানে দুইজনের জায়গায় তিনজন খেলিয়ে যেকোনো ভুল সময়মতো শুধরানোর জন্য সংখ্যাতাত্ত্বিকভাবে এগিয়ে থাকেন।
দলে থাকা কেভিন ডি ব্রুইনার পাসিং স্কিল নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। আর তার প্লেমেকিং অ্যাবিলিটির পূর্ণ বিকাশের জন্য তাকে অবশ্যই রক্ষণের কাজ থেকে অব্যহতি দিতে হবে। তাই রবার্তো মার্টিনেজ একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার খেলান, যাতে করে ডি ব্রুইনা নিশ্চিন্তে তার কাজ করতে পারেন। এই জায়গাতে সচরাচর থাকেন অ্যাক্সেল উইটসেল।
ডিফেন্সিভলি বেলজিয়ামের ফরমেশন ৫-৪-১’এ পরিবর্তিত হয়। মুনিয়ের, থোরগান আজার, বা ইয়ানিক কারাস্কো – যে’ই থাকেন না কেন, নিচে নেমে এসে সেন্টারব্যাকদের সাথে যোগ দিয়ে ডিফেন্স লাইনের শেপ বজায় রাখেন। একই সাথে দুই লাইনের মাঝে খালি জায়গা তৈরি হওয়া থেকেও নিরাপত্তা মেলে।
বেলজিয়ামের আক্রমণভাগের খেলোয়াড় লুকাকু, ডি ব্রুইনা, হ্যাজার্ড, কিংবা মার্টেনস বিশ্বের যেকোনো রক্ষণভাগের জন্যই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন। এছাড়া ডি ব্রুইনার ভার্সেটাইল খেলার স্টাইলের সুবিধা নিয়ে খেলার যেকোনো সময় তার ভূমিকাও বদল করতে পারেন। এই মৌসুমে তিনি ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার, প্লেমেকার, এবং ফলস নাইন রোলে খেলেছেন – মোটামুটি সবগুলো রোলেই তিনি সফল। তার এই পজিশন বদল করে খেলাটা ম্যানচেস্টার সিটিকে ঘরোয়া ও ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় দারুণ সাহায্য করেছে।
তিনি ছাড়াও টিয়েলম্যানস দলে আসার পর বেলজিয়ামের একজন বক্স-টু-বক্স প্লেয়ারের অভাব দূর হয়েছে। লেস্টার সিটিতে খেলা টিয়েলম্যানস যেভাবে আক্রমণের সময় প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন, তেমনি রক্ষণভাগকে সাহায্য করার জন্য ট্র্যাকব্যাক করে ডিফেন্স লাইনে স্ট্যাবিলিটিও বাড়িয়ে দেন। তাকে সাহায্য করার জন্য মিডফিল্ডে থাকবেন অ্যাক্সেল উইটসেলও, যার উপস্থিতিতে টিয়েলম্যানস ফ্রি মুভমেন্ট করতে পারবেন প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের আশেপাশে। এই জুটি তাদের মধ্যমাঠে এনে দিয়েছে দারুণ ভারসাম্য।
বেলজিয়ামের খেলায় তাদের এই আক্রমণ ও মধ্যমাঠই হবে মূল অস্ত্র। একজন মারুন ফেল্লাইনির অভাব বোধ হলেও তার জায়গায় লিয়েন্ডার ডেনডোঙ্কারকে প্রমোশন দেওয়া হয়েছে।
বেলজিয়ামের আক্রমণের শুরুটা হয় ডিফেন্ডারদের পা থেকেই। তারা সেই বলটি পাঠিয়ে দেন দুই উইংব্যাকের কাছে, যাদের থেকে বল যায় আবার অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের কাছে। সেখানে থেকে বল পান স্ট্রাইকার। আবার উইংব্যাকে খেলা খেলোয়াড়েরা সরাসরি বক্সে ক্রস ফেলেন বা বক্সের একটু বাইরে থাকা অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের কাছে দেন। শ্যুট না করে তিনি আবার সামনের দিকে লাইন-ব্রেকিং পাসও খেলতে পারেন, কিংবা ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে বক্সে ঢুকে যেতে পারেন। এদেন আজার ও কেভিন ডি ব্রুইনা – দু’জনই এই কাজে দারুণ পারদর্শী।
বক্সের কাছাকাছি উঠে আসেন দুই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারের একজন। এই পজিশন থেকে হয় তারা বক্সে লাইন-ব্রেকিং পাস করেন, কিংবা শ্যুট করেন। নেহায়েত কোনোটাই করে উঠতে না পারলে উইংয়ে পাঠান ক্রসের জন্য।
দুর্বলতা
বেলজিয়ামের দুর্বলতার কথা বললে বলতে হবে তাদের রক্ষণভাগ আর এদেন আজারের কথা। ২০১৮ বিশ্বকাপে বেলজিয়াম যখন তৃতীয় হয়, সেখানে হ্যাজার্ডের ভূমিকাই ছিল মুখ্য। কিন্তু বছর ঘুরতেই তিনি যখন চেলসি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন, তখন থেকেই আজার যেন হারিয়ে খুঁজতে শুরু করেছেন নিজেকে। ফিটনেস সমস্যা, ইনজুরি, পারফরম্যান্স – সব মিলিয়ে তিনি যেন তার সেই ২০১৮-১৯ মৌসুমের ছায়ায় ঢাকা পড়েছেন।
গত মৌসুমে এই ইনজুরি সমস্যার জন্য খেলতে পারেননি অনেকগুলো ম্যাচেই। আবার যখন মাঝে মাঝে নামতেন, তার খেলা দেখে একদমই মনে স্বচ্ছন্দ হয়নি। যদিও তিনি স্কোয়াডে আছেন, তবুও তার শতভাগ ফিট হয়ে মাঠে নামতে পারার মতো সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ।
সেই সাথে তাদের রক্ষণভাগে এবার একটি বড় সমস্যা হলো বয়স। ভার্টোঙ্ঘেনের বর্তমান বয়স ৩৪ ও অল্ডারওয়াইরেল্ডের ৩২। দু’জনেই তাদের সেরা সময়টি পেছনে ফেলে এসেছেন, ক্লাবের হয়ে তাদের পারফরম্যান্সও ছিল নড়বড়ে। এছাড়া ভিনসেন্ট কোম্পানির অবসরের পর সেই শূন্যতাও পূর্ণ হয়নি সেভাবে।
বেলজিয়ামের খুব ভাল সুযোগ রয়েছে এবার শিরোপা জেতার। না জিতলেও তাদের যে সক্ষমতা, তাতে অনায়াসে সেমিফাইনাল বা ফাইনালের দেখা পাওয়া উচিত তাদের। এ পর্যন্ত যেতে পারলেও তাদের জন্য দারুণ অর্জনই হবে বৈকি। তবে তারা যে শিরোপার জন্যই নামবে, সেটা বলাই বাহুল্য। সোনালি এই প্রজন্মটি একসাথে খেলছে লম্বা একটা সময় ধরে, ২০১৪ বিশ্বকাপ বা ২০১৬তে যারা ছিলেন একদম অপরিণত, ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের পর থেকে এখন তারাই দলের মূল কাণ্ডারি। এখন সেই পরিণতির সুফল পাওয়ার সময়। বেলজিয়াম কি পারবে ‘ডার্ক হর্স’ তকমা ঝেড়ে ‘চ্যাম্পিয়ন’ তকমা গায়ে তুলতে?