বিশ্বকাপ দোরগোড়ায়। এরই মধ্যে ইংল্যান্ডে নিজ নিজ প্রস্তুতি শুরু করেছে অংশগ্রহণকারী দলগুলো। প্রস্তুতি ম্যাচও শেষ হয়েছে। প্রতিটি দল তাদের প্রতিপক্ষের জন্য আলাদা আলাদা রণপরিকল্পনা করে চলেছে। তবে এশিয়ার দলগুলোর জন্য সবচেয়ে ভাবনার বিষয়, ইংলিশ কন্ডিশন। সবকিছু মাথায় রেখে তারাও এগিয়ে নিচ্ছে নিজেদের শেষ সময়ের প্রস্ততি।
বলা হচ্ছে, এযাবৎকালের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবার। প্রতিটি দল যেমন নিজেদের সেরা ক্রিকেটার নিয়ে দল তৈরি করার চেষ্টা করেছে, তেমনই নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে আসা এই ক্রিকেটারদের সবাই দেশকে গর্বিত করতেই চাইবে। সে কারণেই প্রস্তুতি ম্যাচেও চলছে চোখরাঙানি পারফরম্যান্স। চলছে র্যাংকিং, অঘটন, চোকিং আর পারফরম্যান্স নিয়ে কাটাছেঁড়া। কোন দল ফেবারিট, কার দিকে চোখ থাকবে সবচেয়ে বেশি, এসব আলোচনা চায়ের কাপে তুলছে ঝড়। মোদ্দা কথা, বিশ্বকাপের আয়েশী আয়োজন শুরু হয়েছে সব ক্রিকেটপ্রেমীর মধ্যে। কিন্তু এতকিছুর মধ্যে বিশ্বকাপ নিয়ে কী ভাবছেন অংশগ্রহণকারী ১০ দলের অধিনায়করা? ফেবারিট কিংবা দল, এবারের বিশ্বকাপে কারা এগিয়ে? কীভাবে এগিয়ে?
ইংল্যান্ডে এসব আলোচনা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন সব দলের অধিনায়ক। তারা কীভাবে দেখছেন এবারের বিশ্বকাপ, সেটা নিয়েই এই আয়োজন।
অ্যারন ফিঞ্চ (অস্ট্রেলিয়া)
ভালো একটা প্রশ্ন। আমি মনে করি, ভারতের পাশাপাশি ইংল্যান্ড শেষ কয়েক বছর ধরে দারুণ ফর্মে আছে। সম্ভবত তাদের সেরা পারফরম্যান্সও এই মুহূর্তে লক্ষণীয়। তো সবকিছু মিলিয়ে আপনাকে স্বীকার করতেই হবে, এবারের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড অবশ্যই ফেবারিট দল।
অস্ট্রেলিয়া দলের কিছু সদস্যের বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আগে থেকেই ছিল, অনেকের এবার হবে। ছয়জনের শিরোপাজয়ী দলে থাকার অভিজ্ঞতা রয়েছে। এগুলো সবই টুর্নামেন্টে বাড়তি অনুপ্রেরণা দেয়, আশা জাগায়। তবে এবারের বিশ্বকাপ একেবারেই আলাদা ঘরানার। অনেক বেশি চাপ থাকবে। আশা করি, এবারের টুর্নামেন্টটা দারুণ হবে।
ইয়োন মরগান (ইংল্যান্ড)
আমার আসলে কোনো ধারণাই নেই। এই মুহূর্তে কোনো নির্দিষ্ট দল অন্য কোনো দলের চেয়ে এগিয়ে আছে বলে মনে করছি না। অর্থাৎ, সবার চেয়ে এগিয়ে আছে এমন কোনো দল আমার চোখে পড়ছে না। ১০ দলের বিশ্বকাপে, ১০টি দলই বিশ্বের সেরা দল। সবাই মিলেই ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টে অংশ নিতে যাচ্ছে। তো আশা করছি ম্যাচগুলো খুব ভালো হবে। আমরা সত্যিই মাঠে নামার জন্য মুখিয়ে আছি।
অবশ্যই ঘরের মাঠে স্বাগতিকরা বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকে। যেটাকে আমরা ক্রিকেটের ভাষায় বলে থাকি, ‘হোম অ্যাডভান্টেজ’। আমরা নিজেদের পুরনো পরিচিত বিছানায় ঘুমোতে পারবো, মাঠে নামলেই গ্যালারিতে পরিবারের সব সদস্যকে দেখতে পাবো। সবচেয়ে বড় কথা, বছরের পর বছর যে মাটিতে আমরা নিজেদেরকে প্রস্তুত করেছি, সেখানেই অনুশীলন করতে পারবো। কিন্তু এটা মনে রাখবেন, ক্রিকেটের জন্য ইংল্যান্ড দারুণ একটা জায়গা। আপনি যদি এই (পাশে থাকা অন্যান্য অধিনায়কদের ইঙ্গিত করে) তাদের সবাইকে জিজ্ঞেস করেন, জানতে পারবেন তারা সবাই এখানে খেলতে ভালোবাসে।
বিরাট কোহলি (ভারত)
বিশ্বকাপকে সামনে রেখে আমাদের প্রস্তুতি ম্যাচও টেলিভিশনে দেখানো হচ্ছে। তো আমরা যেখানেই খেলি না কেন, আমাদের উপর চাপ থাকবেই।
তবে আমি এটাকে যেভাবে দেখি তা হলো, বিশ্বের যেখানেই আমরা খেলি না কেন, সেখানেই আমাদের অনেক বড় সমর্থকগোষ্ঠী পাওয়া যাবে। তবে আমি এখানে অ্যারনের সাথে একমত। ইংল্যান্ড সম্ভবত তাদের নিজের পরিচিত কন্ডিশনের কারণে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে শক্ত প্রতিপক্ষ। আবার আমি মরগানের সাথেও একমত, বিশ্বকাপে অংশ্রহণকারী ১০ দলই দারুণ ব্যালান্সড এবং শক্তিশালী। তার চাইতেও বড় কথা, টুর্নামেন্টে প্রত্যেকে আলাদা আলাদা করে নিজের খেলাটি খেলবে, যা আরও চ্যালেঞ্জিং। আমার কাছে মনে হয়, এটাই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে সেরা ব্যাপার হতে যাচ্ছে। আমি এযাবৎকালের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বকাপ হিসেবে এবারের আসরকে দেখছি।
সরফরাজ আহমেদ (পাকিস্তান)
যেমনটা মরগান আর কোহলি বললেন, এবারের সবগুলো দল সত্যিই ব্যালান্সড। সবাই খুব ভালো অবস্থানে আছে, সবার প্রতি আমার শুভকামনা। আমি মনে করি, দর্শকরা এবার খুব উপভোগ করবে।
হ্যাঁ, অবশ্য পাকিস্তান ইংল্যান্ডে খুব ভালো করে। আমি ১৯৯২ সালের টেস্ট সিরিজের কথা বলি, কিংবা ১৯৯৯ বিশ্বকাপ, অথবা ২০১৭ (চ্যম্পিয়নস ট্রফি) যদি দেখেন, ইংল্যান্ডে বরাবরই পাকিস্তান খুব ভালো অবস্থানে থাকে। সবকিছু মিলিয়েই আমি আত্মবিশ্বাসী, ইনশাআল্লাহ আমরা খুব ভালো করবো।
কেন উইলিয়ামসন (নিউজিল্যান্ড)
আগের বিশ্বকাপে খেলেছে এমন কিছু ক্রিকেটার এবারের আসরে অংশ নিচ্ছেন। এটা দারুণ ব্যাপার, অর্থাৎ কিছু অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের দেখা পাওয়া যাবে। এমনিতে চার বছরের ব্যবধানে অনুষ্ঠেয় এই টুর্নামেন্টে অনেক নতুন ক্রিকেটার পাওয়া যাবে। ধারণা করছি এখন দলগুলো নিয়ে তাদের র্যাংকিং, কোন দল ফেবারিট, আন্ডারডগ; এগুলো নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু সবকিছু ছাড়িয়ে আমার ভাবনা হলো, এই আলোচনাগুলোতেই লক্ষণীয় যে দলগুলো কতটা ব্যালান্স। যখন ম্যাচের দিন আসবে, যেকোনো দল যেকোনো কিছু করতে পারে; যেগুলো কি না সত্যিকার অর্থেই রোমাঞ্চপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টের স্বাদ দেবে।
দ্বিমুথ কারুনারত্নে (শ্রীলঙ্কা)
ইংল্যান্ডে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি, এখানে আমাদের খেলার অভিজ্ঞতাও ভালো। আমরা চেষ্টা করবো ভালো করার, নিজেদের সেরাটা দেওয়ার। আমরা বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ইংলিশ কন্ডিশনের সাথে মানিয়ে নিতে একটু সময় নিয়েই ইংল্যান্ডে এসেছি। এই মুহূর্তে আমরা দল হিসেবে ভালো ‘শেপে’ আছি। চেষ্টা করবো টুর্নামেন্টে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার।
ফাফ ডু প্লেসি (দক্ষিণ আফ্রিকা)
আপনি যদি সাম্প্রতিক সময়ের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অনুসরণ করে থাকেন, তাহলে হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে এখনকার ম্যাচগুলো ‘হোম’ কিংবা ‘অ্যাওয়ে’; খুব প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়। ব্যাপারটা আর এমন নয় যে কেবল স্বাগতিক দলগুলোই ডমিনেট করছে। তো, অন্যান্য দলের অধিনায়করা যেমন বলছেন, আমি নিজেও তেমনটাই নতুন এই টুর্নামেন্টে খেলার জন্য মুখিয়ে আছি। প্রত্যেকে প্রত্যেকের বিপক্ষে একবার করে খেলবে। দারুণ একটা টুর্নামেন্ট হবে।
মাশরাফি বিন মুর্তজা (বাংলাদেশ)
অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের সংমিশ্রণে আমাদের দলটা সম্ভবত আমাদের বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা দল। কিছু তরুণ ক্রিকেটার আছে যারা খুব ভালো করছে। সবকিছু মিলিয়েই আমরা বেশ রোমাঞ্চিত।
জেসন হোল্ডার (উইন্ডিজ)
প্রতিটি দলের বিপক্ষে খেলতে পারাটা আমাদের জন্য দারুণ ব্যাপার। আমরা বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করার জন্য অনেক খেটেছি, যার অর্থ হলো বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে সেরা ১০ দল। আমরা চাই সবাই মিলে নিজেদের সেরা খেলা উপহার দিতে। ম্যাচে যারা জয়ী হবে তারা জয় পাওয়ার উপযুক্ত।
গুলাবদিন নাইব (আফগানিস্তান)
আফগানিস্তানে শান্তি ফিরেছে। এর পেছনে ক্রিকেটের প্রভাব অনেক বেশি। আমরা খুব খুশি। আশা করি এই খুশি থাকাটাই আমাদেরকে ভালো পারফরম্যান্স করতে এগিয়ে রাখবে। এত মানুষের সামনে খেলতে পারবো ভেবে আমরা রোমাঞ্চিত। এখানে বিশ্বের সেরা ১০ দল অংশ নিয়েছে। আমরা তাদের অংশ হতে পারে, আফগানিস্তানকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়ে গর্বিত বোধ করছি।