ফুটবলে সবচেয়ে বেশি স্পটলাইট কোন পজিশনের খেলোয়াড়েরা পায়? উত্তরটা খুবই সহজ, স্ট্রাইকাররা। গোলের খেলা ফুটবল। তাই গোলদাতারা বেশি স্পটলাইট পাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয় সবচেয়ে কম স্পটলাইট কোন পজিশনের খেলোয়াড় পায়, তাহলে? উত্তরটা হবে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার, আরো নির্দিষ্টভাবে বললে হোল্ডিং মিডফিল্ডার।
এই ধরনের মিডফিল্ডারদের মূল কাজ হচ্ছে প্রতিপক্ষ যখন আক্রমণে আসবে তখন সর্বপ্রথম সে আক্রমণ নষ্ট করার চেষ্টা করা, সাথে ডিফেন্স ও মিডফিল্ড লাইনের মধ্যে সমন্বয় সৃষ্টি করা। এই পজিশনের খেলোয়াড়দের কর্মকাণ্ড সবার নজরে হয়তো আসে না, কিন্তু ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডাররা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করলে পুরো দলকেই ভীষণ ছন্নছাড়া লাগে। বর্তমান যুগের এঙ্গোলো কান্তে, সার্জিও বুস্কেটস, ক্যাসেমিরো কিংবা আগের যুগের লোথার ম্যাথিউস হোল্ডিং মিডফিল্ডার হিসেবে আদর্শ উদাহরণ। আজ আমরা এমন একজন ফুটবলারের ব্যাপারে জানবো যিনি এই হোল্ডিং মিডফিল্ডার পজিশনে খেলে বড় অবদান রেখেছিলেন ব্রাজিলের পেন্টাজয়ে, যিনি ছিলেন ২০০৩-০৪ ইনভিন্সিবল আর্সেনাল দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তিনি গিলবার্তো আপারেসিড ডা সিলভা, যাকে আমরা গিলবার্তো সিলভা নামেই চিনি।
শৈশব ও প্রাথমিক ক্যারিয়ার
ব্রাজিলের মিনাস গেরিয়াসের ল্যাগাও ডি প্রাটা গ্রামে ১৯৭৬ সালের ৭ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন গিলবার্তো সিলভা। বাবা ছিলেন পেশায় একজন কামার আর মা ছিলেন গৃহিণী। অভাবের কারণে তিন বোনের সাথে ঘরের একটা রুমেই থাকতে হতো গিলবার্তোকে। তবে অভাবের মাঝেও গিলবার্তোর শৈশব ছিল ভাবনাহীন। এ ব্যাপারে গিলবার্তো সিলভা বলেন, “সেসময়ে আমার উপরে কোনো দায়িত্বই ছিল না, আমার একমাত্র কাজ ছিল আমার কাজিনদের সাথে রাস্তায় ফুটবল খেলা।”
রাস্তায় ফুটবল খেলতে খেলতেই একসময়ে খেলার নেশায় বুঁদ হয়ে যান গিলবার্তো সিলভা, ১৯৮৮ সালে ১২ বছর বয়সে আমেরিকা মিনেইরোর যুব দলে সুযোগ পেয়ে যান গিলবার্তো সিলভা। তবে সেটা হোল্ডিং মিডফিল্ডার হিসেবে নয়, একজন সেন্টারব্যাক হিসেবে। সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলার সুবাদে নিজের ডিফেন্সিভ সামর্থ্য বাড়ানোর সুযোগ পান গিলবার্তো সিলভা। সবকিছু ভালোই চলছিলো, কিন্তু গিলবার্তোর বয়স যখন পনেরো বছর, তখন তার বাবা কাজ থেকে অবসর নিলে পুরো পরিবারের বোঝা গিলবার্তোর উপরেই এসে পড়ে। ফলে বাধ্য হয়ে মিনেইরোর যুবদলে ছুতারমিস্ত্রি হিসেবে কাজ শুরু করেন গিলবার্তো। তিন বছর এভাবে কাজ করার পর গিলবার্তো তার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন পূরণে শেষ একটা চেষ্টা করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সেসময়ে তার মা অসুস্থ হয়ে গেলে আবারো কর্মক্ষেত্রেই ফিরে আসতে হয় তাকে। এ সময়ে গিলবার্তো ফুটবলার হওয়ার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন।
স্বপ্নের পুনরুত্থান এবং পেশাদার ফুটবলার হিসেবে যাত্রা শুরু
তখন ১৯৯৭ সাল, গিলবার্তো সিলভা ফুটবলার হওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু এসময়ে তার এক বন্ধু তাকে আবারো চেষ্টা করার জন্য উৎসাহিত করতে থাকেন। শেষপর্যন্ত বন্ধুর উৎসাহে গিলবার্তো আবারো যোগ দেন আমেরিকা মিনেরিওতে। তবে এবার আর যুবদলে না, যোগ দিলেন মূলদলেই। নিজের প্রথম সিজনেই দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন গিলবার্তো। সেন্টারব্যাক হিসেবে সেবার বেশ ভালোই খেলেন তিনি। সেবার মিনেইরো সিরি বি তে চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরের সিজনে সিরি আ-তে খেলার সুযোগ পায়। মিনেইরোর হয়ে নিজের তৃতীয় মৌসুমে ২০ ম্যাচ খেলেন গিলবার্তো। সেবার মিনেইরোর লীগে রানার্স আপ হওয়ার পিছনে সিলভার দারুণ পারফর্মেন্সের ভূমিকা ছিল।
এর পরের সিজন, মানে ২০০০ সালে, গিলবার্তো চলে যান আমেরিকা মিনেইরোর প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেটিকো মিনেইরোতে। কিন্তু নিজের প্রথম সিজনে ডান জঙ্ঘাস্থিতে আঘাত পাওয়ায় সেবার বেশ কিছু ম্যাচ মিস করেন তিনি। তবে অ্যাটলেটিকো মিনেইরোতে এর পরের সিজনেই গিলবার্তো সিলভার ক্যারিয়ার ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যায় কোচের এক সিদ্ধান্তের কারণে। সেসময়ে মিনেইরোর কোচ ছিলেন ব্রাজিলের ১৯৯৪ বিশ্বকাপজয়ী কোচ কার্লোস আলবার্তো পেরেইরা। তিনি গিলবার্তো সিলভার পাসিং অ্যাবিলিটি সামর্থ্য দেখে তাকে সেন্টারব্যাক পজিশন থেকে সরিয়ে সেন্ট্রাল ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেন।
নতুন ভূমিকায় অসাধারণভাবে মানিয়ে নেন গিলবার্তো। দুই সেন্টারব্যাক আর মিডফিল্ড লাইনের মাঝ বরাবর অবস্থান নিয়ে প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকানোর ক্ষেত্রে বেশ কার্যকরী ছিলেন তিনি। ট্যাকল খুব কমই করতেন, ট্যাকল না করে তিনি খেলোয়াড়দের পিছনে ছায়ার মতন লেগে থেকে সেই খেলোয়াড়কে পিছু হটাতেন। এ কারণেই প্রতিপক্ষের মূল স্ট্রাইকারকে মার্ক করার দায়িত্ব প্রায়শই তার উপরে ন্যস্ত হওয়া শুরু করলো আর মিনেইরোতে এ কাজটা বেশ ভালোভাবেই করা শুরু করলেন গিলবার্তো। হোল্ডিং মিডফিল্ডার হিসেবে খেলা শুরুর কারণে তার একটি স্বপ্নও পূরণ হয়ে যায়, কারণ ছোটবেলা থেকেই তিনি ব্রাজিলের লিজেন্ডারি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার দুঙ্গাকে আদর্শ হিসেবে মানতেন। এ ব্যাপারে গিলবার্তো বলেন, “আমার বাবা সবসময়ই কার্লোস দুঙ্গার কথা আমাকে বলতো আর আমিও দুঙ্গার খেলাটা খুব ভালোভাবে খেয়াল করতাম। খেলার ব্যাপারে দুঙ্গার দৃঢ় সংকল্প এবং বলটাকে ব্যবহার করার ক্ষমতা আমাকে সবসময়েই মুগ্ধ করতো। আমি সবসময় দুঙ্গার মতো খেলতে চাইতাম।” সে সিজনে দলের হয়ে তিনটি গোলও করেন গিলবার্তো।
ব্রাজিলের হয়ে অভিষেক ও বিশ্বকাপ জয়ে বড় অবদান
ক্লাবের হয়ে অসাধারণ খেলার পুরস্কার হিসেবে তৎকালীন ব্রাজিল কোচ লুই ফেলিপ স্কলারি ২০০১ সালের অক্টোবরে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচের জন্য গিলবার্তো সিলভাকে দলে ডাকেন। ৭ অক্টোবর চিলির বিপক্ষে ম্যাচে বদলি হিসেবে নেমে সেলেসাও জার্সিতে অভিষেক হয় তার, ম্যাচটা ব্রাজিল জিতে নেয় ২-০ গোলে। পরের মাসে বাছাইপর্বে বলিভিয়ার বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচে প্রথমবারের মতন মূল একাদশে সুযোগ পান তিনি, কিন্তু ম্যাচটা ব্রাজিল হেরে যায় ৩-১ গোলে! তবে নিজেদের শেষ ম্যাচে ভেনিজুয়েলাকে ৩-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করাটা নিশ্চিত করে ব্রাজিল।
২০০২ সালে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে বলিভিয়ার বিপক্ষে জোড়া গোল করে সেলেসাও জার্সিতে নিজের প্রথম গোলের দেখা পান গিলবার্তো। আইসল্যান্ডের সাথেও একটি গোল করেন তিনি। জাতীয় দলে এই পারফর্মেন্সের সুবাদে তাকে ২০০২ বিশ্বকাপ দলে সুযোগ করে দেন স্কলারি। কিন্তু ২৩ সদস্যের দলে জায়গা পেলেও শুরুর একাদশে গিলবার্তোর সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল খুবই কম, কারণ ফেলিপাওর ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার পজিশনে প্রথম পছন্দ ছিলেন এমারসন। এমারসনকে ফেলিপাও দলের অধিনায়কও করেছিলেন, তাই এমারসনকে টপকে সিলভা দলে জায়গা পাবেন না- এ কথা সহজেই অনুমান করা যাচ্ছিলো।
কিন্তু গিলবার্তোর কপাল খুলে যায় ট্রেনিং সেশনে এমারসন কাঁধের ইনজুরিতে পড়ে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেলে। এমারসনের অভাব পূরণ করার জন্য তখন ফেলিপাওর হাতে ছিল দুজন খেলোয়াড়- একজন করিন্থিয়াসের ভ্যাম্পেটা, আরেকজন গিলবার্তো সিলভা। শেষপর্যন্ত স্কলারি গিলবার্তো সিলভাকেই এই গুরুদায়িত্ব পালনের জন্য বেছে নিলেন। তবে স্কলারি নিজের ছকে কিছুটা পরিবর্তন আনলেন। চার ডিফেন্ডার খেলানোর বদলে তিনি লুসিও ও রকি জুনিয়রের সাথে লিওর ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার এডমিলসনকে একাদশে থার্ড সেন্টারব্যাক হিসেবে নিয়ে দল সাজান ৫-৩-২ ফর্মেশনে। এই ফর্মেশনে দুই উইংব্যাক কাফু ও কার্লোস আক্রমণে ওঠার পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়েছিলেন। আর এই দুজনের রেখে যাওয়া স্পেস কভার করার দায়িত্ব ছিল এডমিলসন ও গিলবার্তোর উপরে। এছাড়া ডিফেন্সিভ লাইন থেকে মিডফিল্ডে বলের যোগান দেওয়ার দায়িত্বও গিলবার্তো সিলভার ছিল। গ্রুপপর্বে এই নতুন ফর্মেশনে ব্রাজিলের খাপ খাওয়াতে একটু সমস্যা হলেও নক আউট পর্বে ব্রাজিলের ডিফেন্স এই ফর্মেশনে এক অভেদ্য দুর্গে পরিণত হয়, যে দুর্গের অদৃশ্য দেয়াল ছিলেন গিলবার্তো। নক আউট পর্বের চার ম্যাচে ব্রাজিল গোল খেয়েছিলো মাত্র একটা! গিলবার্তো সিলভা ২০০২ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের জন্য এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন যে ব্রাজিলের হয়ে নিজের অভিষেক বিশ্বকাপে প্রতিটি মিনিটেই দলের হয়ে খেলেছেন তিনি। নিজের প্রথম বিশ্বকাপেই এভাবে দলের দেয়াল হওয়ার কথা গিলবার্তো হয়তো নিজেও টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আশা করেননি।
ডিফেন্সিভ দায়িত্ব ও মিডফিল্ড নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আক্রমণেও সেই বিশ্বকাপে সাহায্য করেছিলেন গিলবার্তো। সেমিফাইনালে তুরস্কের বিপক্ষে রোনালদোর জয়সূচক গোলটির অ্যাসিস্ট ছিল তারই। ফাইনালে জার্মানির মুখোমুখি হয় ব্রাজিল। সেই ম্যাচেও এডমিলসন, লুসিও, রকি জুনিয়রের সাথে গিলবার্তো সিলভা অসাধারণ পারফর্ম করলে ক্লিনশিট নিয়েই মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল আর রোনালদোর জোড়া গোলে ২-০ গোলের জয়ে নিশ্চিত হয় ব্রাজিলের পেন্টাজয়। আর এই পেন্টাজয়ে অসামান্য অবদান রাখায় গিলবার্তো সিলভা হয়ে যান বিশ্বের অন্যতম সেরা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার।
২০০২ বিশ্বকাপজয়ের কথা উঠলেই বারবার উঠে আসে রোনালদো আর রিভালদোর কথা, কিন্তু ওই সাফল্যে গিলবার্তো সিলভার অবদানও কম ছিল না। বিখ্যাত ব্রাজিলিয়ান ম্যাগাজিন Veja গিলবার্তোর গুরুত্ব বোঝাতে বলেছিলো, “রোনালদো আর রিভালদোর যে পিয়ানোর সুরে ২০০২ সালে পুরো বিশ্ব বুঁদ হয়েছিলো, সেই পিয়ানো বহন করার দায়িত্বটা গিলবার্তো সিলভাই পালন করেছিলো।”
আর্সেনালে যোগদান
২০০২ বিশ্বকাপে অসাধারণ পারফর্ম করার কারণে বেশ কয়েকটি ইউরোপিয়ান জায়ান্ট গিলবার্তোকে দলে ভেড়ানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। শেষপর্যন্ত ৪.৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে অ্যাটলেটিকো মিনেইরো থেকে আর্সেনালে পাড়ি জমান গিলবার্তো। ২০০২ সালের ১১ আগস্ট লিভারপুলের বিপক্ষে কমিউনিটি শিল্ড কাপের দ্বিতীয়ার্ধে আর্সেনালের হয়ে অভিষেক ঘটে গিলবার্তোর। দলের হয়ে জয়সূচক গোল করে গানারদের হয়ে অভিষেকটা স্মরণীয় করে রাখেন তিনি।
প্রিমিয়ার লীগে নিজের প্রথম মৌসুমে আর্সেনালের মূল একাদশে জায়গা পাওয়ার জন্য এডুর সাথে লড়তে হয় গিলবার্তোকে। তবে দুই ম্যাচ বদলি হিসেবে নেমে ভালো খেলার পুরস্কার হিসেবে আর্সেন ওয়েঙ্গারের মূল একাদশে ঠিকই নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেন তিনি। সেই মৌসুমে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগে পিএসভির বিপক্ষে মাত্র ২০.০৭ সেকেন্ডে গোল করে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ইতিহাসে দ্রুততম গোল করার গৌরব অর্জন করেন গিলবার্তো সিলভা। সেই মৌসুমে আর্সেনাল লীগে রানার্স আপ হলেও এফএ কাপের শিরোপা ঠিকই ঘরে তুলে নেয়।
তবে আর্সেনালের হয়ে গিলবার্তোর সেরা মৌসুম ছিল ২০০৩-০৪ মৌসুম। সেই মৌসুমে প্রিমিয়ার লীগে অপরাজিত থেকে লীগ জয়ের অনন্য রেকর্ড গড়ে আর্সেনাল। আর্সেনালই প্রথম দল হিসেবে প্রিমিয়ার লীগ যুগে অপরাজিত থেকে লীগ জয়ের নজির স্থাপন করে। এখন পর্যন্ত কেউ সেই রেকর্ডে ভাগ বসাতে পারেনি! এই অনন্য নজির স্থাপনের কারণে ওই সিজনের আর্সেনাল দলটিকে ইনভিন্সিবল আর্সেনাল নামে ডাকা হয়। সেই ইনভিন্সিবল দলের অন্যতম খুঁটি ছিলেন গিলবার্তো। সেই সিজনে লীগে ৩৮ ম্যাচের মধ্যে ৩২ ম্যাচেই স্টার্টিং লাইনআপে ছিলেন গিলবার্তো সিলভা। প্যাট্রিক ভিয়েরা ও ডেনিস বার্গক্যাম্পের সাথে অসাধারণ এক মিডফিল্ড ট্রিয়ো তৈরি করেন তিনি। ডিফেন্সে তার মতন অদৃশ্য দেয়াল থাকার কারণেই বাকিরা স্বাধীনভাবে আক্রমণে যেতে পেরেছিলো। ইনভিন্সিবল টিমের একটা অংশ হওয়াটা গিলবার্তোর জন্য কতটা সম্মানের ছিল সেটা তার বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়, “৩৮ ম্যাচে অপরাজিত থেকে লীগ জেতাটা সত্যিই অসাধারণ এক অর্জন। খেলোয়াড়দের কঠোর পরিশ্রম আর কোচিং স্টাফদের নিরলস পরিশ্রমের পুরস্কার ছিল সেই সিজনটা। যতদিন বেঁচে থাকবো ওই ইনভিন্সিবল টিমকে মনে রাখবো এবং আমি ওই দলের একটা অংশ ছিলাম বলে গর্ববোধ করবো।”
২০০৪-০৫ মৌসুমটাও গিলবার্তো সিলভা অসাধারণভাবে শুরু করেন। কমিউনিটি শিল্ডের ম্যাচে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে গোল করেন আর ম্যাচটা আর্সেনাল জিতে নেয় ৩-১ গোলে। তবে সেপ্টেম্বরে বোল্টনের বিপক্ষে খেলার সময়ে পিঠের ইনজুরিতে পড়লে দীর্ঘদিনের জন্যে মাঠের বাইরে চলে যেতে হয় তাকে। ইনজুরি এতটাই গুরুতর ছিল যে গিলবার্তোর ফুটবল ক্যারিয়ারটাই হুমকির মধ্যে পড়ে গিয়েছিলো! তবে যুদ্ধে জয় করে ফিরে আসাটা তো গিলবার্তো সেই শৈশব থেকেই করে আসছেন। তাই এবারো কঠিন পরিস্থিতিকে জয় করে এপ্রিলেই আবারো আর্সেনালের হয়ে মাঠে নামেন তিনি। কিন্তু গিলবার্তোকে হারিয়ে আগের সিজনের ইনভিন্সিবল টিম লীগে বেশ কিছু ম্যাচে পয়েন্ট খোয়ায়, ফলে শেষপর্যন্ত সেবার আর্সেনাল লীগ শেষ করে দুই নাম্বারে থেকে। তবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে টাইব্রেকারে হারিয়ে সেবার এফএ কাপের শিরোপা ঠিকই ঘরে তোলে আর্সেনাল। এটা ছিল গানারদের হয়ে সিলভার দ্বিতীয়বারের মতন এফএ কাপ জয়।
২০০৫ সালে ব্রাজিলের হয়ে কনফেডারেশনস কাপ খেলতে যান গিলবার্তো। কিন্তু সেসময়ের ব্রাজিল বস পেরেইরার হোল্ডিং মিডফিল্ডার হিসেবে প্রথম পছন্দ ছিল এমারসন, তাই পুরো টুর্নামেন্টে শুধুমাত্র এক ম্যাচেই মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছিলেন গিলবার্তো। তবে ব্রাজিল সেবার ঠিকই ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনাকে ৪-১ গোলে হারিয়ে জিতে নেয় কনফেডারেশনস কাপের শিরোপা। ব্রাজিলের হয়ে এটি ছিল গিলবার্তোর দ্বিতীয় মেজর ট্রফি।
এদিকে সেসময়ে আর্সেনালের অধিনায়ক প্যাট্রিক ভিয়েরা ২০০৫-০৬ সিজনে ক্লাব ছেড়ে চলে গেলে গিলবার্তো সিলভার দায়িত্ব আরো বেড়ে যায়। বাড়তি দায়িত্ব গিলবার্তোকে আরো দায়িত্বশীল করে তোলে। লীগে সেবার তেমন ভালো করতে পারছিলো না গানাররা। শেষপর্যন্ত আর্সেনাল লীগ শেষ করে চতুর্থ স্থানে থেকে। কিন্তু উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগে সেবার নিজেদের আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায় আর্সেনাল আর তাতে গিলবার্তো সিলভার অসাধারণ ডিফেন্সিভ পারফর্মেন্স বেশ বড় ভূমিকা রেখেছিলো। তাকে সাথে নিয়ে আর্সেনালের ডিফেন্সিভ ইউনিট এতটাই অভেদ্য ছিল যে সেবার ইউসিএলের নক আউট রাউন্ডে রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাস আর ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে মোট ছয় ম্যাচে একটাও গোল খায়নি আর্সেনাল! দুর্ভেদ্য ডিফেন্সের কারণেই প্রথমবারের মতন চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে উঠে আসে আর্সেনাল আর ফাইনালে স্প্যানিশ জায়ান্ট বার্সেলোনার মুখোমুখি হয় গানাররা। কিন্তু ফাইনালের শুরুতেই আর্সেনাল গোলকিপার জেন্স লেম্যান লালকার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে ব্যাকফুটে চলে যায় আর্সেনাল। শেষপর্যন্ত বার্সার কাছে আর্সেনাল ২-১ গোলে হেরে গেলে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা জয়ের স্বাদ আর পাওয়া হয়নি গিলবার্তোর।
চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শেষ হওয়ার পরেই বিশ্বকাপ খেলতে জার্মানিতে ব্রাজিল দলের সঙ্গে যোগ দেন গিলবার্তো। কিন্তু কনফেডারেশনস কাপের মতন এই টুর্নামেন্টেও কোচ পেরেইরার হোল্ডিং মিডফিল্ডার হিসেবে প্রথম পছন্দ ছিল এমারসন। তবে এমারসনের ইনজুরির কারণে টুর্নামেন্টে ব্রাজিলের দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বদলি হিসেবে মাঠে নামেন গিলবার্তো। গ্রুপপর্বের শেষম্যাচে জাপানের বিপক্ষে শুরুর একাদশেই থাকেন তিনি। সবগুলো ম্যাচ জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই সেবার পরের রাউন্ডে যায় ব্রাজিল আর রাউন্ড অফ সিক্সটিনে ঘানার মুখোমুখি হয় ব্রাজিল। এ ম্যাচে বদলি হিসেবে নামেন গিলবার্তো আর ব্রাজিল ম্যাচটা জিতে নেয় ৩-০ গোলে। কোয়ার্টার ফাইনালে এমারসন ফিট না থাকায় আবারো শুরুর একাদশে জায়গা পান গিলবার্তো, কিন্তু জিদান জাদুতে সেবার ফ্রান্সের কাছে ১-০ গোলে হেরে যায় ব্রাজিল। কাফু, কার্লোস, রোনালদিনহো, আদ্রিয়ানো, কাকা, রোনালদোর মতন হাই প্রোফাইল তারকাদের নিয়েও কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল বিদায় নেওয়ায় সমালোচনার জালে বিদ্ধ হয় পুরো ব্রাজিল দল। শেষপর্যন্ত কোচের পদ থেকে বরখাস্ত হন পেরেইরা আর নতুন কোচ হিসেবে সিবিএফ নিয়োগ দেয় গিলবার্তো সিলভার কৈশোরের আদর্শ কার্লোস দুঙ্গাকে। নিজের আদর্শকে কোচ হিসেবে পেয়ে জাতীয় দলে নিজেকে আরো ভালোভাবে মেলে ধরার সম্ভাবনা খুঁজে পান গিলবার্তো।
এদিকে ২০০৬-০৭ মৌসুম শুরুর আগেই আর্সেনালের দুই অভিজ্ঞ খেলোয়াড় ডেনিস বার্গক্যাম্প ও সোল ক্যাম্পবেল ক্লাব ছেড়ে দিলে ক্লাবের সহ অধিনায়ক হন গিলবার্তো সিলভা। আগের সিজনের মতো এই সিজনও আর্সেনাল শেষ করে চতুর্থ স্থানে থেকেই, তবে ব্যক্তিগতভাবে গিলবার্তো ছিলেন বেশ উজ্জ্বল। আর্সেনালের নতুন স্টেডিয়াম এমিরেটসে দলের হয়ে প্রথম গোলটি করেন গিলবার্তো। শুধু তা-ই নয় ওই সিজনে লীগে মোট ১০ গোল করে আর্সেনালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতাও ছিলেন তিনি। অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞের মতেই, ২০০৬-০৭ সিজনে আর্সেনালের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন গিলবার্তো।
সেলেসাও অধিনায়ক হিসেবে কোপা আমেরিকা জয়
দুঙ্গা কোচ হওয়ার পর হোল্ডিং মিডফিল্ডার হিসেবে মূল একাদশে জায়গা নিশ্চিত হয় গিলবার্তোর। এদিকে ২০০৭ কোপা আমেরিকায় কাকা ও রোনালদিনহোর সাথে অধিনায়ক লুসিওকেও বিশ্রাম দেওয়ায় দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পান গিলবার্তো। কিন্তু টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই মেক্সিকোর কাছে ২-০ গোলে হেরে বড় একটা ধাক্কা খায় ব্রাজিল। তবে রবিনহোর নৈপুণ্যে চিলি ও ইকুয়েডরকে হারিয়ে গ্রুপ রানার্স আপ হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে চলে যায় গিলবার্তোর ব্রাজিল। কোয়ার্টার ফাইনালে চিলির মুখোমুখি হয় তারা। সেই ম্যাচে চিলিকে ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত করে সেমিতে চলে যায় ব্রাজিল। সেমিফাইনালে উরুগুয়েকে টাইব্রেকারে ৫(২)-৪(২) গোলে হারায় ব্রাজিল, টাইব্রেকারে ব্রাজিলের হয়ে তৃতীয় পেনাল্টি থেকে গোল করেন গিলবার্তো। ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বদ্বী আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হয় ব্রাজিল আর সেই ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে ৩-০ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতন কোপা আমেরিকা জিতে নেয় ব্রাজিল। ২০০৪ আসর মিস করলেও এই আসরে অধিনায়ক হিসেবে ট্রফি জিতে নেন গিলবার্তো।
এদিকে কোপা আমেরিকায় খেলার কারণে আর্সেনালের ২০০৭-০৮ সিজনের প্রি-সিজন ক্যাম্পেইন মিস করেন গিলবার্তো। এ কারণে নিয়মিত অধিনায়ক থিয়েরি অরি ক্লাব পরিবর্তন করায় সহ অধিনায়ক গিলবার্তোকে অধিনায়কত্ব না দিয়ে অধিনায়ক করা হয় উইলিয়াম গালাসকে। শুধু তা-ই নয়, ম্যাথিউ ফ্লামিনির কাছে শুরুর একাদশে জায়গাও হারান গিলবার্তো। সব মিলিয়ে আর্সেনাল কোচ আর্সেন ওয়েঙ্গারের সাথে গিলবার্তোর সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হতে থাকে। এসব কারণে ওই সিজনে বেশ কিছু ম্যাচে বেঞ্চে বসেও কাটাতে হয় গিলবার্তোকে। মোটের উপর আর্সেনালে গিলবার্তোর ভবিষ্যৎ অন্ধকার হতে থাকে।
আর্সেনাল ছেড়ে প্যানাথিনাইকোসে যোগদান
অবশেষে সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আর্সেনালের সাথে ৫ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে গ্রিক ক্লাব প্যানাথিনাইকোসে যোগ দেন গিলবার্তো সিলভা। প্রথম সিজনেই প্যানাথিনাইকোসকে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের রাউন্ড অফ সিক্সটিনে উন্নীত করতে বড় ভূমিকা রাখেন গিলবার্তো।
এদিকে ইংলিশ লীগ ছেড়ে গ্রিক লীগে খেলতে গেলেও দুঙ্গার ব্রাজিল দলে ঠিকই নিজের জায়গা ধরে রাখেন গিলবার্তো সিলভা। ২০০৮-০৯ মৌসুম শেষে কনফেডারেশনস কাপ খেলতে ব্রাজিল দলের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকা যান তিনি। ২০০৫ এর আসরে এমারসনের কারণে অধিকাংশ ম্যাচ বেঞ্চে বসে কাটালেও ২০০৯ কনফেডারেশনস কাপের প্রতিটি ম্যাচেই শুরুর একাদশে ছিলেন গিলবার্তো সিলভা। পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলে ফাইনালে চলে যায় ব্রাজিল, যেখানে চরম নাটকীয় ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রকে ৩-২ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার কনফেডারেশনস কাপের শিরোপা নিজেদের করে নেয় সেলেসাওরা। জাতীয় দলের হয়ে এটি ছিল গিলবার্তোর চতুর্থ মেজর ট্রফি।
এদিকে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে কনমেবল জোনে শীর্ষে থেকে বিশ্বকাপের টিকিট কাটে ব্রাজিল। দুঙ্গার অধীনে কোপা আমেরিকা, কনফেডারেশনস কাপের পর বাছাইপর্বেও এমন সাফল্যে সেবার ২০১০ বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে নিয়ে সবাই বেশ আশার আলো দেখতে পাচ্ছিলো। যদিও দলে বড় তারকা বলতে একমাত্র কাকাই ছিলেন, কিন্তু লুইস ফ্যাবিয়ানো, এলানো, মাইকন, লুসিও, জুলিও সিজার, গিলবার্তো সিলভাকে নিয়ে দলটা বেশ ভারসাম্যপূর্ণ ছিল। পর্তুগাল, আইভরি কোস্ট আর উত্তর কোরিয়ার সাথে পড়ায় ব্রাজিলের গ্রুপকে গ্রুপ অফ ডেথ বলা হচ্ছিলো। তবে শেষপর্যন্ত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই রাউন্ড অফ সিক্সটিনে চলে যায় ব্রাজিল। গ্রুপ পর্বে ব্রাজিলের হয়ে প্রতিটি মিনিটই খেলেছিলেন গিলবার্তো।
রাউন্ড অফ সিক্সটিনে চিলিকে ৩-০ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে চলে যায় ব্রাজিল, যেখানে প্রতিপক্ষ ছিল নেদারল্যান্ডস। শুরুতে গোল করেও দ্বিতীয়ার্ধে খেই হারিয়ে ফেলায় বৃথা যায় লুসিও, গিলবার্তো সিলভা, মাইকনদের পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলা, ২-১ এ ডাচদের কাছে হেরে বিদায় নেয় ব্রাজিল। ব্রাজিলের এই অপ্রত্যাশিত বিদায়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন গিলবার্তো, এটিই ছিল সেলেসাওদের হয়ে গিলবার্তো সিলভার শেষ ম্যাচ।
এদিকে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণার পরে প্যানাথিনাইকোসে আর এক সিজন খেলেন গিলবার্তো সিলভা। এরপর দীর্ঘ নয় বছরের ইউরোপিয়ান ক্যারিয়ার শেষ করে আবার ব্রাজিলে ফেরার ঘোষণা দেন তিনি।
ব্রাজিলে প্রত্যাবর্তন ও ফুটবল থেকে অবসর
২০১১ সালের ২৩ মে গ্রেমিওর সাথে চুক্তিবদ্ধ হন গিলবার্তো, যদিও তিনি সবসময় তার পুরনো ক্লাব অ্যাটলেটিকো মিনেইরোর হয়ে ফেরার কথাই বলেছিলেন। দুই বছর পর গিলবার্তোর সে আশাও পূরণ হয়, যোগ দেন তার পুরনো ক্লাব অ্যাটলেটিকো মিনেইরোতে।
অ্যাটলেটিকোর হয়ে ২০১৩ কোপা লিবার্তাদোরেসের শিরোপা যেতেন গিলবার্তো। শেষপর্যন্ত ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর দীর্ঘ ১৮ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারের ইতি টানার ঘোষণা দেন তিনি। ২০ বছর আগে ছুতারমিস্ত্রীর কাজ ছেড়ে যে মানুষটা ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য জীবনের সবচেয়ে বড় বাজিটা ধরেছিলেন, তিনি হয়তো নিজেও ২০ বছর পর এতগুলো অর্জনের ভাগীদার হওয়ার স্বপ্ন দেখেননি। ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ, কোপা আমেরিকা, দুটি কনফেডারেশনস কাপ কিংবা আর্সেনালের হয়ে ইনভিন্সিবল প্রিমিয়ার লীগের শিরোপাজয়- সবগুলো অর্জনেই পর্দার আড়ালের নায়ক ছিলেন গিলবার্তো সিলভা। এই টুর্নামেন্টগুলোর নাম শুনলেই অধিকাংশ মানুষ হয়তো রোনালদো, রবিনহো, অঁরি কিংবা কাকাদের নাম নেবে। কিন্তু তাতে কি! নিজের দায়িত্বটা ঠিকঠাকভাবে করতে পারার তৃপ্তিটা তো গিলবার্তো সিলভার আছে, এটাই বা কম কীসে!