২০০৯ সাল। পেপ গার্দিওলার বার্সেলোনা গোটা স্পেন থেকে ইউরোপ শাসন করলেও দলগতভাবে রিয়াল মাদ্রিদ তখনও শক্তিমত্তার শীর্ষে। ফার্গুসনের আবিষ্কার ক্রিষ্টিয়ানো রোনালদো তখন সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। সার্জিও রামোস বা মার্সেলো তখনও ২৫ বছর পার করেনি, রক্ষণে অ্যাজেকিয়েল গ্যারাইয়ের মতো তরুণও আছে। আছে মধ্যমাঠে আরও এক আর্জেন্টাইন ফার্নান্দো গ্যাগোর সাথে ব্রাজিলের কাকা। আক্রমণভাগে ফ্রান্সের তরুণ স্ট্রাইকার করিম বেনজেমা সদ্যই অলিম্পিক লিঁও থেকে মাদ্রিদে এসেছেন, বয়স মাত্র ২১। স্ট্রাইকার হিসেবে তিনি প্রতিভাবান, সামনে অপার সম্ভাবনা তার। আর আছেন একজন আর্জেন্টাইন, রিভারপ্লেট থেকে ১২ মিলিয়ন ইউরোতে লস ব্লাঙ্কোসরা যাকে কিনেছিল সেই ২০০৬ সালে। বিগত মৌসুমে যিনি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে করেছেন ২২ গোল। এ মৌসুমেও গোলধারা বজায় রেখেছেন। ফ্রান্সের বেনজেমা আর আর্জেন্টিনার এ আনকোরা স্ট্রাইকারকে ধরা হচ্ছে রিয়াল মাদ্রিদের ভবিষ্যত আক্রমণের কান্ডারি।
অক্টোবর ১০, ২০০৯। ২০১০ বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব। ডিয়েগো ম্যারাডোনার অধীনে আর্জেন্টিনার শোচনীয় অবস্থা। বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলা নিয়েই সংশয় আলবিসেলেস্তেদের। বলিভিয়ার মতো দল আর্জেন্টিনাকে ৬-১ গোলে বিধ্বস্ত করেছে। আর্জেন্টিনা টানা হেরেছে ইকুয়েডর, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ের সাথে। পরবর্তী বাঁচা-মরার ম্যাচ পেরুর বিপক্ষে। জিতলে বিশ্বকাপে খেলার আশা বেঁচে থাকবে, হেরে গেলে মেসির আর্জেন্টিনা ছাড়াই অনুষ্ঠিত হবে ২০১০ বিশ্বকাপ। পেরুর বিপক্ষে ম্যারাডোনা দলে ডাকলেন রিয়াল মাদ্রিদের সেই আনকোরা তরুণ স্ট্রাইকারকে। ভয়ঙ্কর গুরুত্বপূর্ণ সেই ম্যাচে অভিষেক হলো তার। ৪৮ মিনিটে পাবলো আইমারের ডিফেন্সচেরা পাসে আর্জেন্টিনাকে প্রথম গোল এনে দেন সে তরুণ। যদিও সেই ম্যাচে সমস্ত দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছিল ৯২ মিনিটে গোল করে জয় এনে দেওয়া মার্টিন পালের্মো। প্রথম ম্যাচে নিজেকে প্রমাণ করলেও সমস্ত আলোচনা ও দৃষ্টিশক্তির বাইরে থেকে গেলেন। সেদিন যেমন তার নাম হয়নি, পরবর্তীতে তার ব্যর্থতাকে খুব করে রটানো হয়েছে প্রত্যেক সময়। তিনি আর্জেন্টিনার ইতিহাসে সব থেকে নিন্দিত ও অপছন্দের স্ট্রাইকার, গঞ্জালো হিগুয়াইন।
পেরুর বিপক্ষে মার্টিন পালের্মো হয়তো সে যাত্রায় আর্জেন্টিনাকে রক্ষা করেছিলেন। কিন্তু দলের প্রয়োজন ছিল হিগুয়াইনকেও। হার্নান ক্রেসপো সদ্যই অবসর নিয়েছেন। তার রেখে যাওয়া শূন্যস্থান পূরণের জন্য সে সময় তেমন কেউ ছিল না। সার্জিও আগুয়েরোকে কখনও আর্জেন্টিনা তাদের একাদশে নিয়মিত রাখেনি। প্রিমিয়ার লিগের মতো কঠিন লিগে গোল করাকে ডাল-ভাত বানিয়ে ফেলার পরও তার সুযোগ হয়নি। তাই ক্রেসপোর পর আর্জেন্টিনার একমাত্র ‘নাম্বার নাইন’ এর সুযোগ ছিল গঞ্জালো হিগুয়াইনের। কিন্তু কে জানতো যে, তার ক্যারিয়ার এমন প্রশ্নবিদ্ধ হবে!
২০১০ বিশ্বকাপ। ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির কাছে লজ্জাজনকভাবে হেরে যাবার পরও এ বিশ্বকাপটি হিগুয়াইনের জন্য ছিল আর্শীবাদস্বরূপ। যে বিশ্বকাপে লিওনেল মেসির মতো খেলোয়াড় কোনো গোল করতে পারেননি, সেখানে হ্যাটট্রিকসহ হিগুয়াইন করেছিলেন ৪ গোল। বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করা আর্জেন্টাইনের সংখ্যা মাত্র তিনজন, এর মধ্যে একজন হিগুয়াইন।
২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনাল। ম্যারাডোনা বদলে আর্জেন্টিনার কোচের দায়িত্বে আলেহান্দ্রো গঞ্জালেজ সাবেয়া। আর্জেন্টিনার ভরসা করার মতো স্ট্রাইকার তখন একজনই, হিগুয়াইন। দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের পর চার বছর পার হয়ে গেছে। হিগুয়াইন তখন আরও বেশি পরিণত। ২০১০ বিশ্বকাপের সময় দল ও দলের পারফরম্যান্স কিছুই ঠিক ছিল না। তবে ব্রাজিল বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা শক্তিতে সবসময়ই এগিয়ে। আক্রমণভাগ থেকে রক্ষণ, সবখানেই তারকা খেলোয়াড়দের জয়জয়কার। আর্জেন্টিনা আকর্ষণীয় পারফরম্যান্স উপহার দিয়েই ফাইনালে উঠেছিল। জার্মানির বিপক্ষে ফাইনালে ম্যাচের চার মিনিটের মাথায় সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন হিগুয়াইন। ২০ মিনিটে টনি ক্রুসের ভুল পাসে বল তার নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। সামনে শুধু ম্যানুয়েল নয়ার। কিন্তু হিগুয়াইন শট নেন গোলবারের বাইরে। আরও একটি সহজ সুযোগ হাতছাড়া। অতিরিক্ত সময় মারিও গোৎজের গোলে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ অধরাই থেকে যায়।
পরের বছর কোপা আমেরিকা। জেরার্দো মার্টিনোর আর্জেন্টিনা ঠিকই ফাইনালে উঠেছে। ফাইনালে ৯০ মিনিট পর্যন্ত হিগুয়াইন মাঠে নিজের ছায়া হয়ে থাকলেন। শেষ মিনিটে লাভেজ্জির বানিয়ে দেওয়া একটি গোলসুযোগ হাতছাড়া করেন তিনি। ফলে, চিলির সাথে নির্ধারিত খেলা শেষে কোনো গোল না হবার কারণে টাইব্রেকারে পৌঁছায় ম্যাচ। বিশ্বকাপ হারানোর পর জাতীয় দলের হয়ে কিছু জেতার সুযোগ কেউই হেলাফেলা করে হাতছাড়া করতে চাইবে না। হিগুয়াইনও চাননি। কিন্তু পেনাল্টি নিতে এসে বল আকাশে তুলে মারলেন। তার ভুলের সুযোগ চিলি নিতে একবিন্দুও ভুল করল না। আর্জেন্টিনা হারলো আরও একটি ফাইনালে।
২০১৬ সাল। আবারও কোপা আমেরিকা। আবারও ফাইনালে আর্জেন্টিনা ও চিলি। আগের বছর ফাইনাল হারের ক্ষত তখনও তরতাজা। এ কোপা আমেরিকায় কেউ চায়নি হিগুয়াইন আর্জেন্টিনার প্রধান স্ট্রাইকারের ভূমিকায় থাকুক। কিন্তু জেরার্ড মার্টিনো আরও একবার তার উপর ভরসা রাখলেন। ভেনেজুয়েলা ও যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে জোড়া গোল দিয়ে তিনি মাটিনোর ভরসার প্রতিদান দিলেন। কিন্তু ফাইনালে সেই জুজু আবার তার ঘাড়ে চেপে বসে। ম্যাচে শুরুর দিকে চিলি ডিফেন্ডারের ভুল পাস ধরে দারুণ এক গোলের সুযোগ তৈরি করেছিলেন হিগুয়াইন। কিন্তু একা ব্রাভোকে পেয়েও তিনি বল জালে জড়াতে পারেননি। সহজ সুযোগ এভাবে হারানোর ফলে এ ম্যাচও আবার টাইব্রেকারে গড়ায়। তাতে মেসি বনে যান খলনায়ক। আর্জেন্টিনা হারে আরও একটি ফাইনাল। সঠিক সময় গোল করতে পারলে টাইব্রেকার নামক ভাগ্য পরীক্ষায় আর্জেন্টিনাকে যেতে হতো না।
২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ। ‘১৬ এর কোপা আমেরিকার পর আর্জেন্টিনা কখনও ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারেনি। কোচ পরিবর্তন হয়েছে দুবার। বিশ্বকাপটা খেলাই হতো না, যদি না একজন মেসি আর্জেন্টিনাতে থাকতেন। হিগুয়াইনও প্রায় ‘বুড়িয়ে’ গেছেন। বিশ্বকাপ শুরুর আগে স্পেনের সাথে ৬ গোল খাওয়া ম্যাচে প্রমাণ করলেন তার দিন শেষ। তবুও হোর্হে সাম্পাওলি তাকে দলে রাখলেন। কারণ তার ট্যাকটিক্সে স্ট্রাইকারের পজিশন ছেড়ে নিচে নেমে এসে আক্রমণ তৈরি করার দক্ষতা থাকতে হয়। এবং তা একমাত্র হিগুয়াইনের আছে। তাই সময়ের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার ইকার্দির বদলে দলে হিগুয়াইন থাকলেন। তবে তার থাকা বা না থাকা প্রায় একই ছিল। ধুঁকতে থাকা আর্জেন্টিনা ফ্রান্সের কাছে হেরে খুব দ্রুতই বিদায় নিয়েছে।
তবে সাম্পাওলি যদি তার ট্যাকটিক্সের কারণে হিগুয়াইনকে দলে রাখেন, বাউজা-টাটা মার্টিনো-সাবেয়া কেন হিগুয়াইনকে দলে রেখেছিলেন বারবার ব্যর্থ থাকার পরও? এর উত্তর, লিওনেল মেসি। প্রথম থেকেই মাঠে মেসির সাথে হিগুয়াইনের বোঝাপড়া অন্য সব স্ট্রাইকারের তুলনায় ভালো। তাই মেসি যদি স্বচ্ছন্দ্যে খেলতে পারেন, এবং এজন্য যদি হিগুয়াইনকে দরকার হয়, তবে ক্ষতি কী? রিয়াল মাদ্রিদে বেনজেমা ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ভেতরও একই অবস্থা ছিল। বারবার ফ্লপ থাকার পরও বেনজেমা প্রতি ম্যাচে নামতেন। ফলে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো তার সুবিধাটুকু সম্পূর্ণ পেতেন। এজন্য লাভবান হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। তবে আর্জেন্টিনা যে খুব সুফল পেয়েছে, তা বলা ভুল হবে। হিগুয়াইনের থাকার পরও মাঝে মাঝে মেসি খুব সুবিধা করতে পারেননি। উল্টো হিগুয়াইন দলকে ফেলেছেন খাদের কিনারায়।
হিগুয়াইনের ব্যর্থতার গল্প তো শোনা গেল। এবার আর্জেন্টিনার হয়ে তার ক্যারিয়ারের কথা শোনা যাক। আশ্চর্য শোনালেও এ কথা সত্য যে, যার তিন তিনবার ফাইনালে এমন ব্যর্থতার কাব্য রয়েছে, তার কিন্তু বড় টুর্নামেন্টে পারফর্মেন্স মন্দ নয়। আর্জেন্টিনার হয়ে অভিষেকের পরের বছর হিগুয়াইন বিশ্বকাপ খেলেন। সেখানে হ্যাটট্রিকসহ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪ গোল করেন তিনি, যেখানে সে সময়ে দলের সব থেকে বড় তারকার মেসির কোনো গোলই ছিল না!
পরের বছর কোপা আমেরিকায় গোল করেন ১টি, সেটাও ছিল উরুগুয়ের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের মতো বড় ম্যাচে। ২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আর্জেন্টিনার হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোল করেন হিগুয়াইন। বাছাইপর্বে নিয়মিত গোল করলেও বিশ্বকাপটা তার ভালো কাটেনি, যদিও তিনি গোল করেছিলেন কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে। তার করা একমাত্র গোলেই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল আর্জেন্টিনা।
ধরা হয়ে থাকে, ‘১৪ বিশ্বকাপ ফাইনালে পৌঁছানোর পেছনে সকল অবদান মেসির, যিনি শুধুমাত্র গ্রুপ পর্বে ৪ গোল করে আর্জেন্টিনাকে পরের পর্বে পৌঁছে দিয়েছিলেন। তবে সে সময়ে আর্জেন্টিনা দল মেসি ছাড়াও গ্রুপ পর্ব পার করার মত ক্ষমতা রাখতো। তারকাপূর্ণ দলটি ইরান, বসনিয়া বা নাইজেরিয়াকে হারাতে পারবে না, ব্যাপারটি হাস্যকর। কিন্তু বেলজিয়ামের মতো দলের বিপক্ষে গোল করে ম্যাচ জেতানোর পরও হিগুয়াইন কোনো বাহবা পাননি। তার ভাগ্যে সবসময় জুটেছে নিন্দুকের সমালোচনা।
কোপা আমেরিকা ‘১৫-তে তার ২ গোল আছে; গ্রুপপর্বে একটি, অন্যটি সেমি ফাইনালে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে। ২০১৬ শতবর্ষী কোপা আমেরিকায় হিগুয়াইনের গোল ৪টি। দুটি কোয়ার্টার ফাইনালে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে এবং অন্য দুটি সেমিফাইনালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে। শুধুমাত্র ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে তার বলার মতো কোনো অর্জন নেই।
কিন্তু যে স্ট্রাইকার বরাবরই বড় মঞ্চে গোল করেছেন, তিনি কেন এমন নিন্দিত? বড় মঞ্চে হিগুয়াইন নিয়মিত গোল করেছেন ঠিকই। তবে সে গোলগুলো দেখলে বোঝা যাবে, গোল করার প্রতি তার অবদান কতটুকু ছিল। কোপা আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে দুই গোল ছিল সম্পূর্ণ মেসির বানিয়ে দেওয়া। শুধু বল নিয়ন্ত্রণে এনে ফাঁকা জালে গোল করা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না ইগুয়াইনের। ভাগ্যের জোরে গোল করেছেন ঠিকই, কিন্তু তার গোলগুলোতে কোনো সৌন্দর্য ছিল না।
আর্জেন্টিনার তিনটি ফাইনালেও তার সামনে এরকম অনেক সহজ সুযোগ এসেছিল। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে সে সব গোল সুযোগ হাতছাড়া করে তিনি আর্জেন্টিনার বিষ নজরে পড়েছেন। তার ভুলগুলো এতটাই অমার্জনীয় ও শিশুসুলভ যে, দ্বিতীয়বার যদি স্বয়ং হিগুয়াইনও এসব সুযোগ পেতেন, মনে হয় না সেগুলো আবার ফসকে যেতো!
কিন্তু হিগুয়াইন আর্জেন্টিনার হয়ে গোল করেছেন। নাপোলি বা রিয়াল মাদ্রিদের হয়েও তার গোলসংখ্যা কম নয়। তবে ফাইনালের মতো ম্যাচে হিগুয়াইনের ভীত নড়ে যায়, এমনটা দেখা গেছে ক্লাবের কিছু ম্যাচেও। তাই একজন স্ট্রাইকার হিসেবে দুর্বল দিক ছিল তার মানসিকতা। আর তিনি যখন একটি ফাইনাল ম্যাচ খেলতে নেমেছেন, আগের ব্যর্থতাগুলো তাকে আরও দুর্বল করে দিয়েছে। কোপা আমেরিকা ‘১৫ ফাইনালে টাইব্রেকারে তার নেওয়া পেনাল্টিই ম্যাচের চাপ সহ্য করতে না পারার বড় উদাহরণ।
একজন স্ট্রাইকার গোলের সম্ভাবনা নষ্ট করবেনই। যদি শতকরায় পরিমাপ করা যায়, তাহলে হয়তো একজন পরিণত স্ট্রাইকার ১০০% এর ভেতর গড়ে ৩০% গোল সুযোগ নষ্ট করেন। কিন্তু আর্জেন্টিনায় হিগুয়াইন বড় ম্যাচে গোল করলেও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মিস করেছেনই প্রায় ৭০% গোল। তাই আর্জেন্টিনার হয়ে ৩২ গোল, অথবা বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক, কেউ মনে রাখেনি। এবং এজন্য দেশের মানুষ যে তার প্রতি কতটা বিরক্ত ও কেমন ক্ষোভ জমিয়ে রেখেছে, তিনি তা জানতেন। তাই অবসর নেবার ঘোষণাতে প্রায় সরাসরিভাবে জানিয়েছেন তার আক্ষেপ,
‘আমি ভেবে দেখেছি, আর্জেন্টিনার জার্সিতে আমার সময় শেষ। এখন জাতীয় দলের বাইরে থেকে সব কিছুই দেখবো, অনেকে খুশি হবে। কোচের সাথে কথা বলে আমার অবস্থা তাকে বুঝিয়ে বলেছি। তাই এখন জাতীয় দলে আমার থাকা বা না থাকার দুশ্চিন্তাকে সরিয়ে রাখতে পারেন।’
পৃথিবীর মানুষের মনে বেঁচে থাকতে হলে হয় বিখ্যাত হতে হয়, নয়তো কুখ্যাত। মাঝামাঝি অবস্থানে থাকা কোনো ব্যক্তিকে কেউ মনে রাখে না। পেরুর বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে গোল দিয়ে হয়তো হিগুয়াইন চেয়েছিলেন হার্নান ক্রেসপোর মতো বিখ্যাত হতে। চেয়েছিলেন আর্জেন্টিনার জার্সিতে শিরোপা তুলে ধরতে। কিন্তু ভাগ্য ও ইতিহাস তাকে কুখ্যাত করে তুলেছে। জাতীয় দলের হয়ে তার গোলসংখ্যা ম্যারাডোনার কাছাকাছি। তবে পার্থক্য হলো, ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনাকে একক প্রচেষ্টায় বিশ্বকাপ এনে দিয়েছিলেন, আর হিগুয়াইন হলেন সম্পূর্ণ উল্টো।