ক্রিকেট নির্বাচকদের কাজটার মতো কষ্টের কাজ পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। বিশেষ করে, পৃথিবীর ‘উপমহাদেশ’ নামক অঞ্চলটাতে আবালবৃদ্ধবনিতা প্রত্যেকেই যখন একেকজন ক্রিকেট নির্বাচক, তখন আনুষ্ঠানিক নির্বাচক কমিটির কাজটা আরও বেশি কঠিন। দল ঘোষণা করবার পর থেকে শুরু হয় ‘অমুক কেন, তমুক নেই কেন’ বিষোদ্গার, আর শেষ হয় দল ম্যাচ হারার পর ‘নির্বাচকরা তো খেলা না দেখেই বাছাই করে’ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়ে।
একবার মান্নাভা প্রসাদের কাজটা চিন্তা করুন! ভারত ক্রিকেট দলের প্রধান নির্বাচক হিসেবে তার দায়িত্ব, সার্ধশত কোটি মানুষের দেশ থেকে সেরা পনেরো বাছাই করা। সেই পনেরো আবার যেনতেন কোনো সিরিজে নয়, খেলবে বিশ্বকাপে।
মান্নাভা প্রসাদের এখনকার সময়টা যে কাটছে ভীষণ ব্যস্ততায়, সে আর বলতে! সেরা পনেরো বাছাই করতে হবে যে!
বিগত দিনের পারফরম্যান্স, ইংল্যান্ডের মাটিতে ভালো করবার সম্ভাবনার নানা সূত্র মিলিয়ে কারা ঘুরপাক খাচ্ছেন প্রসাদের মাথায়, কেমন হতে পারে ভারতের বিশ্বকাপ স্কোয়াড, কারাই বা হতে পারেন বিকল্প, সেটাই পড়ুন বাকি লেখাটুকুতে।
পজিশন: ওপেনিং
সমস্ত ক্রিকেটীয় অনিশ্চয়তা মাথায় রেখেও বেশ ঘোষণার সুরেই বলে ফেলা যায়, বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে বিপক্ষের নতুন বলটা রোহিত আর ধাওয়ানই মোকাবেলা করবেন। ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে আজ অব্দি ভারত ম্যাচ খেলেছে ১৪৮টি, তার মাঝে ১০১ ম্যাচেই নতুন বল সামলানোর দায়িত্বটা ছিল এই দু’জনের ব্যাটে। দু’জনে যে বেশ সার্থকতার সঙ্গে এ দায়িত্ব পালন করেছেন, সে তো এই সময়কালে ৪৫.৪১ গড়ে ৪৫৪১ রানই প্রমাণ করে। সমসাময়িক বাকিদের ছাপিয়ে তাদের লড়াইটা এখন সবসময়ের সেরা জুটিগুলোর সাথে। সবচেয়ে বেশি রান করা জুটির তালিকায় এখন তারা আছেন সাত নম্বরে।
বিশ্বকাপে যে ভারতের ব্যাটিংয়ের ভিত্তিটা তারাই গড়ে দেবেন, সেটা বেশ নির্দ্বিধায়ই বলা যায়। তবুও যেটুকু দ্বিধা কাজ করতে পারে, সেটা চোটের কথা মাথায় এনে। লোকেশ রাহুল কিংবা আম্বাতি রায়ুডুরা তো তৈরিই আছেন, আজিঙ্কা রাহানেও আছেন বিকল্প হয়ে।
পজিশন: ওয়ান ডাউন
রোজ সকালে সূর্য ওঠা নিয়ে যেমন খবর হয় না, তেমনি কিছুদিন বাদে বিরাট কোহলির সেঞ্চুরি করাটাও বোধহয় খবরের কাগজে ঠাঁই পাবার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। যা কিছু নিত্য, যা প্রায় প্রতি ম্যাচেই ঘটে, তা কী করে খবর হয়!
‘অতিমানবীয়’, ‘অতিপ্রাকৃত’ বিশেষণের নিয়মিত ব্যবহারে শব্দগুলো হয়ে গিয়েছে ক্লিশে। ব্যবহার না করেই বা উপায় কী! টানা তিন ম্যাচে তিন সেঞ্চুরি, হরহামেশাই জোড়া সেঞ্চুরি, নিয়ম করে ম্যাচসেরা-সিরিজসেরার খেতাব বাগিয়ে নেয়া, দিনকয়েক আগেও স্পর্শাতীত ভাবা রেকর্ডগুলোকে চোখের পলকে নিজের করে নেয়া, কারণে-অকারণে খবরের পাতায় বিরাট কোহলির নামটা ধ্রুবই।
শচীন টেন্ডুলকারের সবচেয়ে দ্রুত ১০,০০০ রানে পৌঁছানোর মাইলফলক ভেঙে দিয়েছেন ৫৪ ইনিংস কম খেলে। আগ্রাসনের সঙ্গে যোগ ঘটিয়েছেন শিল্পের, ৫৯.৫৮ গড়ের সঙ্গে ৯২.৯৬ স্ট্রাইক রেটে ওয়ানডে ব্যাটিংকে দান করেছেন নতুন সংজ্ঞা। ভারত ছাপিয়ে গোটা ক্রিকেটেরই পোস্টারবয় এখন একজন বিরাট কোহলি।
ওয়ান ডাউনে খেলার মতো ব্যাটসম্যানের অভাব নেই ভারতে। শ্রেয়স আয়ার আছেন, গত বছরই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ কাঁপিয়ে আসা শুভমান গিল আছেন। কিন্তু ভারত অত বিকল্প খুঁজতে যাবে কেন, যখন একজন বিরাট কোহলি আছেন!
বিরাট কোহলি বিশ্বকাপে যাচ্ছেন এ বছরে ১১ ম্যাচে ৬১১ রান নিয়ে, দলের অধিনায়ক হয়ে।
পজিশন: মিডল অর্ডার
বিশ্বকাপের আগে ভারতের যদি চিন্তার জায়গা কিছু থেকে থাকে, তবে এই মিডল অর্ডারই। কেবল গত বছরই চার থেকে সাত এই চার পজিশনের যথাযথ উত্তর খুঁজে পেতে ভারত চেষ্টা করেছে ১১ জন ভিন্ন ব্যাটসম্যানকে। এরপরও যখন ২০১৮ সালে মিডল অর্ডার থেকে রান এসেছে মোটে ৭৯৬, গড়টা পঁচিশের ঘরে আর স্ট্রাইক রেটটা চুয়াত্তরের কম, তখন তো চিন্তা করতেই হচ্ছে!
মহেন্দ্র সিং ধোনির কথাই ধরা যাক। তাকে নিয়ে আদতে প্রশ্ন ওঠারই কোনো সুযোগ নেই। বিরাট কোহলির দলে ধোনিই সর্বেসর্বা। এ বছর এখন পর্যন্ত ৯ ম্যাচ খেলে রান করেছেন ৩২৭। চিরকালের খেলা শেষ করে আসার গুণটা ধরে রেখেছেন এখনও, ৪ ম্যাচে অপরাজিত থাকার কারণে গড়টা তাই বিস্ময়জাগানিয়া, ৮১.৭৫।
তবে যা ধরে রাখতে পারেননি, আগের সেই বিধ্বংসী ধোনিকে। গত বছর স্ট্রাইক রেট ছিল রীতিমতো টেস্ট মেজাজি, ৬৭.২৮। এ বছর খানিকটা বেড়ে হয়েছে ৭৮.২৩, কিন্তু এটাও যে আজকের ক্রিকেটের সঙ্গে বেমানান। আধুনিক ক্রিকেটে ওভারপ্রতি ছয় রানই যখন নিয়ম, তখন ধোনির এমন ধীরগতির ব্যাটিং ভারতের বিশ্বকাপ জয়ের মিশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে কি না, এমন প্রশ্ন উঠছে।
তবে দলে তার জায়গা প্রশ্নবিদ্ধ করার সামর্থ্য অবশ্য কারো হয়নি। ব্যাটসম্যান ধোনির বেশ কিছু ভালো বিকল্প মিললেও উইকেটরক্ষক ধোনির জায়গাটা নেবার সাধ্যি কার! তার চেয়েও বড় কথা, বিরাট কোহলির অধিনায়কত্বের ফাঁকফোকরটা যে ধোনিই সারিয়ে রাখেন, সেটা তো সদ্যসমাপ্ত অস্ট্রেলিয়া সিরিজেই প্রমাণিত। ধোনি তাই বিশ্বকাপে যাচ্ছেন দলে জায়গা নিশ্চিত ধরে নিয়েই। আর যে কারণে স্কোয়াডের দ্বিতীয় পছন্দ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে ঋষভ পান্ত, আর পুরো জীবনটাই ধোনির ছায়ায় পার করে দেয়া দীনেশ কার্তিককে।
নিদাহাস ট্রফির সেই পাগলাটে ম্যাচের পর দীনেশ কার্তিক সুযোগ পেয়েছেন ১২ ওয়ানডেতে। বারবার সেই ব্যাটিংয়ের স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে চাইলেও হয় সুযোগটা পান না, নয়তো সুযোগের ব্যবহারটা করতে পারেন না। ১৪ বলে ২৫ কিংবা একশ স্ট্রাইক রেটে ৩৮ রান করেছেন কখনো কখনো, তবে ভারতের তিন ব্যাটিং মহীরুহের জন্যে পরের ম্যাচে হয়তো আর ব্যাটিংয়েরই সুযোগ পাননি। স্কোয়াডে জায়গা পাবার সেরকম কোনো দাবিও তাই তুলতে পারেননি, ১২ ম্যাচে একবারও পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি।
তার চেয়ে বরং ঋষভ পান্তের জন্যেই দলে জায়গা পাবার সমীকরণ মেলানো সহজ। খেলেছেন মোটে পাঁচ ম্যাচ, রান করেছেন ৯৩, অপরাজিত থাকতে পারেননি একটি ম্যাচেও। কিন্তু প্রশ্নটা ‘কতক্ষণ উইকেটে ছিলেন’ ছাপিয়ে যখন ‘কীভাবে উইকেটে ছিলেন’, তখন ঋষভ পান্তের বিকল্প আর কেউ নেই। ১৩০.৯৮ স্ট্রাইক রেট এখনকার ক্রিকেটেও বেশ বড়সড় ব্যাপার বটে, তবে ঋষভ পান্তের জন্যে ‘এ আর এমন কী’। তার আইপিএল স্ট্রাইক রেট যে ১৬৭!
এমন ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলাটাই তাই দীনেশ কার্তিকের বদলে তাকে জায়গা করে দিতে পারে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের উত্তাপটা এখনো সেভাবে গায়ে লাগেনি, দেড়শ কোটি মানুষের চাপটা বুঝবার আগেই বিশ্বকাপ খেলে ফেলা, বেশ এক ব্যাপার হবে!
অবশ্য স্কোয়াডে পান্তের জায়গা পেলেও একাদশে জায়গা হবে কি না, তা নিয়ে বেশ কিন্তু আছে। ‘কেননা’, ‘কিন্তু’র উত্তরে আম্বাতি রায়ুডু আর কেদার যাদব আছেন।
নতুন রূপে দেখা দেওয়া ধোনি পাঁচে খেলবেন, কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে এমন ঘোষণা দিয়েই দেয়া যায়। চারে কে খেলবেন, এই উত্তর খুঁজে পেতে ভারত চেষ্টা করেছে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারকে দিয়ে, তবে দুই উইকেট পতনের পর আম্বাতি রায়ুডুকেই প্যাভিলিয়নের সিঁড়ি ভেঙে সবচেয়ে বেশিবার ক্রিজে নামতে দেখা গেছে।
২০১৮ সালের আইপিএলে ৬০২ রান করে দলে জায়গা পাবার দাবিটা জানিয়েছিলেন। দলে জায়গা পেয়ে এখন অবধি ৪২.৬০ গড় আর ৮৩.০২ স্ট্রাইক রেটে ৬৩৯ রান করে বিশ্বকাপের দলেও টিকে থাকার ভিত্তি গেড়েছেন। বিশ্বকাপেও দলকে শক্ত ভিত্তি এনে দিতে পারবেন কি না, সেটা সময়ই বলবে!
আর তিনি না পারলেও কেদার যাদব তো আছেনই। ২০১৭ সাল থেকে পাল্লা দিয়ে ব্যাটিং গড় বাড়িয়েছেন, স্ট্রাইক রেট আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও এখনও সেটাকে একশর নিচে নামতে দেননি। তার চেয়েও বড় কথা, দলের প্রয়োজনে নিজেকে ভেঙেচুরে ভারতের বিকল্প হয়েছেন।
ক্যারিয়ার ব্যাটিং গড় ৪৩.৪৮ হলেও, যে পজিশনে তার খেলার কথা রয়েছে, সেই ছয় নাম্বার পজিশনেই তার পারফরমেন্স সবচেয়ে উজ্জ্বল। ৫৪ গড়ের সাথে ১০৮.৭২ স্ট্রাইক রেট, ভারতের চাওয়া-পাওয়ার সমস্ত দাবিই মেটাচ্ছেন যেন!
উপরি হিসেবে দলে যোগ করেছেন বোলিং বৈচিত্র্য। রাউন্ড আর্ম বোলিং অ্যাকশনকে নতুন মাত্রা দিয়ে অধিনায়ককে করে দিচ্ছেন মাঝের কয়েকটি ওভার, প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা চড়াও হতে গিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন উইকেট, এই ভারতে কেদার যাদবের বিকল্প কোথায়!
মিডল অর্ডারেও তাই শ্রেয়স আয়ার, সুরেশ রায়না কিংবা মনীশ পান্ডের জায়গা খুঁজে পাওয়াটা সহজ নয়। এমনকি নিজের ওপেনিং পজিশন ছেড়ে আসা লোকেশ রাহুল স্কোয়াডে এলেও, একাদশে সুযোগ পাবার সম্ভাবনা সীমিত।
পজিশন: অলরাউন্ডার
সব ঠিক থাকলে এখন এখানে কেবল এবং কেবলমাত্র হার্দিক পান্ডিয়াকে নিয়েই লেখার কথা ছিল। কিন্তু এখন সব ঠিক নেই, হার্দিক পান্ডিয়াও আর কপিল দেব হবার দৌঁড়ে এগিয়ে নেই, বিজয় শংকর এসে গেছেন।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে ভারত যতক্ষণ ম্যাচে ছিল, সেটা হার্দিক পান্ডিয়ার জন্যেই ছিল। ৪৩ বলে ৭৬ রানের ইনিংসে প্রতিটি ভারতীয়ের মাঝেই বিশ্বাস ছড়িয়েছিলেন, ‘হার্দিক পান্ডিয়া আছেন!’
অবশ্য হার্দিক কোথায় ছিলেন না! আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে মুহুর্মুহু চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছোটানো, শেষ মুহূর্তের টুকরো ঝড়ে রানটাকে বিপক্ষের নাগালের বাইরে নিয়ে যাওয়া, নতুন বলে সুইং, ইনিংসের মধ্যভাগে প্রতিপক্ষের রানের জোয়ারে বান দেয়া, দারুণ সব ক্যাচ কিংবা ফিল্ডিং, ম্যাচের যেকোনো পরিস্থিতিতে হার্দিক পান্ডিয়ার ডাক পড়াটা অবধারিতই ছিল।
ডাক পড়েছিলো কফি উইথ করন অনুষ্ঠানেও। গোলটা বাঁধলো সেখানেই, অনুষ্ঠানে আপত্তিকর মন্তব্যের জেরে জুটলো ভারত দলে নিষেধাজ্ঞা।
শচীন টেন্ডুলকারের অবসরের পর স্টেডিয়ামে বিরাট কোহলির নামে স্লোগান উঠতেই মুহূর্ত দেরি হয়নি, হার্দিক পান্ডিয়াকে পেছনে ফেলে অন্য কারও উঠে আসাটা অবধারিতই ছিলো!
এসেছেনও, বিজয় শংকর। বিশ্বকাপের ঠিক আগে আগে অভিষিক্ত এই অলরাউন্ডারের কাছে প্রত্যাশাটা হার্দিকের মতো নয়, ইনিংস শেষ করার বদলে তার কাছে চাওয়াটা মিডল অর্ডারে স্থিতিশীলতা আনয়ন, সাথে কেদার যাদবের সাথে মিলে পঞ্চম বোলারের কোটা পূরণ, এইতো। বিজয় শংকর সে আবদার পূরণ করেছেন অভিষেকের পর খেলা ৯ ম্যাচেই।
এখন দেখা যাচ্ছে, ভারত এতটুকু পেয়েই খুশি। যে কারণে হার্দিক পান্ডিয়া নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরলেও দলে ফিরতে পারেননি এখনও। বিশ্বকাপ দলেও বিজয় শংকরের আড়ালে ঢাকা পড়ে যাবেন কি না, সেটাই এখন প্রশ্ন।
পজিশন: স্পিনার
দুই ফিঙ্গার স্পিনারের যুগ পেরিয়ে ভারত এখন প্রবেশ করেছে রিস্ট স্পিনারের যুগে। কুলদীপ যাদব আর যুজবেন্দ্র চাহাল, ভারত স্কোয়াডের নিয়মিত সদস্য। অবশ্য গত এশিয়া কাপে রবীন্দ্র জাদেজা আবারও ওয়ানডে দলে ফেরার কারণে, লড়াইটা হয়ে গিয়েছে ত্রিমুখী।
কুলদীপ যাদব অবশ্য এ সমস্ত লড়াইয়ের ঊর্ধ্বে। ২০১৭ সালে অভিষেকের পর আজ অব্দি খেলা ৪৪ ম্যাচে উইকেট পেয়েছেন ৮৭টি। বাঁহাতি এই চায়নাম্যান বোলারের ইকোনমি রেটটাও এ যুগের ক্রিকেটে বেমানান, ওভারপ্রতি রান খরচ করেছেন মোটে ৪.৯৩। মাঝের ওভারগুলোতে উইকেটপ্রাপ্তি আর রান আটকানো, দুই কাজই যাকে দিয়ে হচ্ছে, তাকে বাদ দেবার ঝুঁকি ভারত নেবে কি করে!
কুলদীপের কিছু আগে চাহালের অভিষেক হলেও দু’জনের উত্থানটা হয়েছে মোটামুটি একইসঙ্গে। দু’জনে মিলে খেলেছেন ২৩ ওয়ানডে, ওভারপ্রতি পাঁচের কম রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন ৭৫ উইকেট। দু’জনে মিলে গড়ে তুলেছেন ভয়ংকর ‘কুলচা’ জুটি। চাহালের দলে জায়গা পাওয়াটা তাই নিশ্চিতই ছিল।
কিন্তু… দৃশ্যপটে রবীন্দ্র জাদেজাও আছেন।
এমনিতে জাদেজার নামটা এই তালিকাতে আসার কথাই না। ঘরোয়া ক্রিকেটে যার নামের পাশে তিনটি ট্রিপল সেঞ্চুরি শোভা পায়, তাকে একজন বোলার বলে চালিয়ে দেয়াটা বড় অন্যায়।
অবশ্য পরিস্থিতির উপর দায় চাপিয়ে এ অন্যায় করা যায়। বিশ্বকাপটা ইংল্যান্ডে, কোনো অধিনায়কের চাওয়াটা যদি হয় একজনমাত্র অলরাউন্ডার, সেক্ষেত্রে একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের চাহিদাটাই বেশি। হার্দিক পান্ডিয়া আর বিজয় শংকর ইতিমধ্যেই সে পজিশনের জন্যে নিজেদের মধ্যে ইঁদুর-বিড়াল খেলছেন।
জাদেজাকে তাই নামতে হচ্ছে চাহালের সঙ্গে লড়াইতে। গত বছরের এশিয়া কাপে দলে ফেরার পরে যে ১৫ ম্যাচ খেলেছেন, তাতে ৩৬ গড়ে নিয়েছেন মাত্র ১৯ উইকেট, কুলদীপের সঙ্গে জুটিটাও ঠিক জমছে না। তবুও স্ট্যাম্প বরাবর অনবরত বল করে যাওয়া, ক্ষিপ্রগতির ফিল্ডিংয়ের কারণে জাদেজাও চাহালের সঙ্গে দৌঁড়ে এসেছিলেন।
আর ভারতের মিডল অর্ডারের ভঙ্গুরতার সুযোগ নিয়ে জাদেজা দৌঁড়ে এগিয়ে গিয়েছেন অনেকটাই। তার ব্যাটিংটা যে চাহালের চেয়ে কয়েক আলোকবর্ষ ভালো!
পজিশন: পেসার
বুমরাহর সাথে আর কারা?
প্রশ্নটা হওয়া উচিৎ এমনই। অভিষেকের পর থেকে আলোর রোশনাই ছড়িয়ে নিজেকে এতটাই উপরে তুলে নিয়েছেন, তাকে সেখান থেকে টেনে নামানোর সাধ্যি হয়নি কারও। ইনিংসের শুরু, মাঝে কিংবা শেষে, উইকেট চাইলে কিংবা রান কমাতে চাইলে, বুমরাহই কোহলির ‘গো টু বোলার’। পরিসংখ্যানে চোখ বুলালেই তো সে আরও পরিষ্কার হয়। যার কারণে অন্য পেসাররা চেষ্টা করছেন বাকি থাকা পেস বোলারের স্পটে নিজের নাম খোদাই করতে।
এমনিতে বুমরাহর সাথে ভুবনেশ্বরের জুটিটাই জমে ভালো। তবে মাঝে চোটের আঘাত আর তারপর ফর্ম হারানো, ভুবনেশ্বর এখন আর দলের বোলিং আক্রমণের নেতা নন। ২০১৮ এশিয়া কাপের পরে খেলা ১৩ ম্যাচে ২২ উইকেট নিলেও ইকোনমি রেট ছয় ছাড়াচ্ছে মাঝেমাঝেই।
সুযোগে ইন্ডিয়া বাজিয়ে দেখেছে মোহাম্মদ শামিকে। পারফরম্যান্স যেন ভুবিরই কার্বনকপি; ১৩ ম্যাচে ২২ উইকেট, ইকোনমি রেটটাও ছয়ের বেশি।
এ দু’জনের কেউই যে বুমরাহর সঙ্গী হবেন, সে সম্ভাবনাই বেশি। এ দু’জনকে পেরিয়ে খলিল আহমেদ, উমেশ যাদবদের কেউ, কিংবা চমকে দিয়ে নতুন কেউ সুযোগ পাবেন কি না, সেটা জানতে আর কিছুদিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
চলুন, অপেক্ষা করি!