দেড় দশকে লেখা হলো যে উত্তেজনায় ভরা গল্প, তারই সমাপ্তি দৃশ্যে কী চূড়ান্ত ট্র্যাজেডি!
উনি দু’গোল করছেন তো তিনি হ্যাটট্রিক; মাঝমাঠ থেকে একজনের ড্রিবলিং নজর কাড়ছে তো পরদিনই অন্যজন তা ভুলিয়ে দিচ্ছেন দর্শনীয় এক হেডে; একটা প্রজন্ম তো বেড়ে উঠল মেসি-রোনালদোর এহেন দ্বৈরথ দেখেই। দু’জনই যেহেতু বিশ্বকাপের আগে জানিয়েছিলেন ‘এবারই শেষ’, ওই প্রজন্ম তৈরি হয়ে ছিল অন্তিম যুদ্ধ দেখার। কিন্তু, ভাগ্যনিয়ন্তা তো চিত্রনাট্যে লিখে রেখেছিলেন অ্যান্টি-ক্লাইম্যাক্স। একজন দলকে সেমিফাইনালে তুললেন কালজয়ী সব পারফরম্যান্সে, অন্যজন যেন হারিয়ে গিয়েছেন মহাকালে। দলের অধিনায়ক হয়ে বিশ্বকাপে এসেও কি না হারিয়ে ফেললেন একাদশে থাকার যোগ্যতাই!
ভক্ত-সমর্থকদের আবেগের বাঁধ এরপরে ভেঙেছে খুব স্বাভাবিকভাবেই। মেসি-ভক্তরাও তো না বলে পারেননি, ‘নাহ, যতই প্রতিদ্বন্দ্বী হোক, তবু এমন বিদায় মানা যাচ্ছে না।’ এরই ফাঁকে বেরোল আরেক দল, যারা হতে চাইল দার্শনিক; সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সয়লাব হয়ে গেল এমন এক বক্তব্যে, যার সারমর্ম, ‘রোনালদো পরিশ্রমী ঠিক আছে, তবে পরিশ্রমের একটা মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ আছে। মেসি প্রতিভাবান তো, শেষ পর্যন্ত আসলে তারই জয় হয়।’
নিখাদ আবেগে ভরা এসব কথাকে আসলে যুক্তি-তর্ক দিয়ে খণ্ডন করতে যাওয়া বৃথা। তবু, কাতারে কাতারে মানুষ যখন পড়ে যাচ্ছেন এমন বক্তব্যের ফাঁদে, তখন তো একটু খতিয়ে দেখতেই হয়, আদতেই কি মেসি বেশি প্রতিভা নিয়ে জন্মেছেন কি না।
মেসি কি বেশি প্রতিভাবান?
ফুটবলারদের প্রতিভা মাপা হচ্ছে কীভাবে, প্রশ্নটা আসলে সেখানেই। ভালো দৌড়াতে পারা, শক্তপোক্ত শরীর থাকা, অনেক উঁচুতে লাফাতে পারা, দারুণ রিফ্লেক্স – ভালো ফুটবলার হওয়ার রাস্তা তো অনেকগুলোই। কেউ ফুটবলার হতে চাইছে, আপনি তো তাকে গিয়ে বলতে পারবেন না, ‘তোমার মধ্যে ওই গুণটা থাকলেই তোমার সর্বকালের সেরা ফুটবলার হওয়া নিশ্চিত।’ বরং, এটা বলা যেতে পারে, নিজের ভেতরে যে প্রতিভা লুকানো, সেটা খুঁজে বের করতে পারলেই হওয়া যায় সফল ফুটবলার।
হ্যাঁ, অস্বীকার করার উপায় নেই, কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কিছু মানুষ কিছু বাড়তি সুবিধা পেয়েই থাকেন স্রষ্টার তরফ থেকে। কারও শরীরে বিপাকীয় ক্রিয়া ভালো হয়, কেউ কেউ অবিশ্বাস্য দ্রুততায় সর্বোচ্চ গতিবেগ ছুঁতে পারেন। এসব মানদণ্ড আমলে নিলে রোনালদো যে বিধাতার আনুকূল্য খুব ভালোভাবেই পেয়েছেন, সে কথা বলতে কোনো বাধা থাকে না।
মাঠে তার চিতার মতো ক্ষিপ্রতা দেখে বিস্মিত হননি, এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ২০১২ সালে স্কাই স্পোর্টস একটা প্রামাণ্যচিত্র বানিয়েছিল তাকে নিয়ে, যেখানে বেরিয়ে আসে রোনালদো গতির চূড়ায় উঠতে পারেন খুব দ্রুত, অনেকটা স্প্রিন্টারের মতো। এবং সেখানেই গবেষকেরা বলেছিলেন, মাঠে রোনালদোর এই অবিশ্বাস্য দ্রুতগতির রহস্য লুকিয়ে তার শরীরের গঠনে। ত্রিমাত্রিক স্ক্যানার দিয়ে করা রোনালদোর ভিজ্যুয়াল প্রোফাইল থেকে জানা যাচ্ছে, তার উচ্চতা ভালো (১৮৫.১ সেন্টিমিটার)। তার উরুর পরিধি ৬১.৭ সেন্টিমিটার, যা কি না একজন গড়পড়তা মানুষের চেয়ে ঢের বেশি। তার শরীরে চর্বির পরিমাণ সুপারমডেলের চেয়েও তিন শতাংশ কম। স্প্রিন্টারের মতোই লম্বা পা নিয়ে জন্মেছেন তিনি, শরীরের ধাত মধ্যম দূরত্বের দৌড়বিদের মতো, আর উরু পেয়েছেন হাই জাম্পারের মতো – মাঠে রোনালদো সাফল্যের পেছনে শরীরের এই সুষম গঠনের ভূমিকা অত্যন্ত। যে শারীরিক সুবিধা নিয়ে অলিম্পিকের তিনটা ভিন্ন ডিসিপ্লিনে অনায়াসে লড়াই করা যায়, স্রষ্টা রোনালদোকে তা দিয়েছেন একটা শরীরেই।
তবে এই শারীরিক সুবিধাগুলো তো জন্মের পর সুপ্তই ছিল। এমনকি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে খেলা শুরুর পরও তার রুগ্ন শরীর নিয়ে হাসি-তামাশা করেছিলেন তার সতীর্থরা। রোনালদোর কৃতিত্ব, নিজের শরীরটাকে বুঝতে পেরে তিনি শ্রম দিয়েছিলেন শরীরকে আরনল্ড শোয়ার্জনেগার বানাতে। রোনালদোর কৃতিত্ব: চারিদিকে এত প্রলোভন থাকা সত্ত্বেও তিনি মনকে বোঝাতে পেরেছিলেন, ‘স্রষ্টা আমাকে কিছু বাড়তি সুবিধা দিয়েছেন, এসব হেলায় হারানো উচিত হবে না।’
এবার আসুন মেসির প্রতিভায়। প্রকৃতিগতভাবে তার উচ্চতা বাড়বে না ৪’৭” ফুটের বেশি, বাবা-মায়েরও সামর্থ্য ছিল না উচ্চমূল্যের চিকিৎসা চালানোর; বার্সেলোনা এমন সময়ে তার ফুটবলীয় সামর্থ্যের বিনিময়ে বুঝে নিল তার চিকিৎসার ভার — এসব ফের বললে আপনার কাছে চর্বিত চর্বণই ঠেকবে। আপনি খুব সম্ভবত এটাও জানেন, খুব ছোট থাকতে তাকে শুনতে হয়েছিল, ফুটবল খেলার মতো যথেষ্ট লম্বা নন তিনি।
কেন এমন কথা বলা হয়েছিল, সেগুলো তো বের হয়ে আসে খালি চোখেই। কম উচ্চতা মানে ছোট ছোট পদক্ষেপ, সহজ বাংলায় যার অনুবাদ করা যেতে পারে দ্রুত দৌড়ানোর অক্ষমতা। তাই টানা দৌড়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে পারার কথা নয় মেসির। শারীরিক শক্তিতেও মেসি পিছিয়ে ছিলেন সমবয়সী বাকিদের চেয়ে, ফুটবলের মতো শারীরিক চাহিদাপূর্ণ খেলায় যেটা থাকা অনেকটা বাধ্যতামূলকই। আর ব্রিটিশ জার্নাল অব স্পোর্টস মেডিসিনের গবেষণালব্ধ ফল হচ্ছে,
'ক্রীড়াক্ষেত্রে এলিট পারফরম্যান্স নির্ভর করে ট্রেনিং আর জিনগত প্রভাবক দুটোর ওপরই।'
শক্তি-সামর্থ্য যখন জিন থেকেই পাওয়া যায়নি, তখন মেসিও আর চেষ্টা করেননি প্রতিপক্ষকে শক্তিতে হারানোর। বরং ছোট থেকেই প্রতিপক্ষের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাওয়ার গুণটা আয়ত্ত করতে চেষ্টা করেছিলেন তিনি, আমরা যাকে ড্রিবলিং বলি। এবং খর্বাকৃতির শরীর তাকে সাহায্য করেছিল ওই গুণ অর্জনেই।
ছোট শরীর বলে তার শরীরের ভরকেন্দ্র মাটির কাছাকাছি থাকে, শরীরের ভারসাম্য রক্ষা সহজ হয় লম্বা খেলোয়াড়দের চেয়ে। মাঠে মেসি যে খুব সহজেই উপুড় হয়ে পড়ে যান না, তার রহস্য এখানেই।
আর ফুটবল খেলাটা তো টানা দৌড়ের নয়, এখানে কখনো পাশাপাশি, কখনো খুব দ্রুত ৩৬০ ডিগ্রি বাঁক নিতে হয়, সুযোগ বুঝে গতি কমাতে বা বাড়ানোর মতো জটিল মুভমেন্টের আশ্রয় নিতে হয়। এবং যাদের পায়ের পদক্ষেপ নাতিদীর্ঘ, তারাই এই কাজগুলো ভালো করতে পারেন। তাদের জন্য প্রতিক্রিয়া দেখানো সহজ হয় লম্বা পায়ের ফুটবলারদের চেয়ে। ডিয়েগো ম্যারাডোনা, পেলে, নেইমার কিংবা হালফিলের এডেন আজার, অ্যালেক্সিস সানচেজ – ভালো ড্রিবলারদের উচ্চতা কম হওয়ার রহস্য আসলে এটাই।
তবে বাকি সবার চেয়ে তো মেসি অনন্য হয়ে গেছেন তার সহিষ্ণুতা আর হুট করেই গতি বদলে ছুটে চলায়। বিশ্বাস না হলে নেইমারকেই দেখুন। মেসির মতোই সময়ের সেরা ড্রিবলারদের একজন তিনি, মেসির চেয়ে বয়সে অনেক ছোটও, কিন্তু চোটে পড়ে ম্যাচ মিস করার সংখ্যায় ইতোমধ্যেই ছাড়িয়ে গেছেন মেসিকে। শুধু নেইমার নন, ভালো ড্রিবলাররা লম্বা ক্যারিয়ার পেয়েছেন, এমন উদাহরণ বেশ বিরলই।
কী কারণে, তার ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন লিভারপুলের জন মুরস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। এবং সেখানেই বেরিয়ে এসেছে, একটানা দৌড়ালে শরীর থেকে যে শক্তি খরচ হয়, তার চেয়ে ঘুরপথে নড়লে-চড়লে, সহজে বললে ড্রিবলাররা যেসব নড়াচড়ার আশ্রয় নেন আরকি – অনেক বেশি শক্তি লাগে। তাই উইং ধরে কিলিয়ান এমবাপে এক টানে এগিয়ে গেলে তিনি যতটা ক্লান্ত হন, তার চেয়ে মাঠের মাঝ দিয়ে প্রতিপক্ষের চার-পাঁচজন খেলোয়াড় টপকে একবার বল বের করতে নেইমার অনেক বেশি শক্তি হারান। যে কারণে তার মাংসপেশিতে ল্যাকটিক এসিড জমা হয় বেশি, তার শরীর দ্রুত নিস্তেজ হয়ে পড়ে। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের ট্যাকলে তার ভেঙে পড়ার সম্ভাবনাও তাই বাড়ে।
বার্সেলোনায় আগমনের পর মেসিকে নজর দিতে হয়েছে এই সহিষ্ণুতা বাড়াতেই। এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ জানা যায়নি, তবে বিশেষজ্ঞেরা অনুমান করেন, এই সহিষ্ণুতার জিনও মেসির ভেতরেই গাঁথা ছিল। কেননা, পর্তুগালের বেইরা ইন্টেরিয়র বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাপত্রের সারাৎসার বলছে,
'পিক অক্সিজেন আপটেক (পড়ুন, সহিষ্ণুতা) ৪০-৭০ শতাংশ ক্ষেত্রেই জিন দ্বারা প্রভাবিত।'
মেসির কাজ ছিল, শরীরে লুকিয়ে থাকা এই সহিষ্ণুতাকে অনুশীলন করে, ব্যায়াম করে মাঠে নামানো।
তবে কাজটা কিন্তু সহজও ছিল না। মেসিও যদি চাইতেন, রোনালদোর মতো বডি বিল্ডারের শরীর গড়ে তাক লাগিয়ে দেবেন সবাইকে, এটা তার খেলায় ক্ষতিই করত। কারণ শরীরের পেশি ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তোলা যদি শক্তি বাড়ায়, সঙ্গে সঙ্গে কমিয়ে দেয় চটপটতাও। মেসির ফুটবলটা যেহেতু তৎপরতা-নির্ভর, মেসিকে তাই শক্তি বা সহিষ্ণুতা বাড়াতে হতো মাংসপেশি না ফুলিয়েই। মেসি সেই কাজটাই করেছেন।
রোনালদো কি বেশি পরিশ্রমী?
২০০৬ বিশ্বকাপে জার্মানির হয়ে পারফরম্যান্স অ্যানালিস্টের কাজ করা ক্রেইগ ফ্রিডম্যান বলছিলেন, শরীর গড়ে লাভ হয় না, যদি না শরীরকে সঠিক দিকে কাজে লাগানোর মতো যথেষ্ট টেকনিক্যাল দক্ষতা না থাকে। রোনালদো কিংবা মেসি, দু’জনই যে সেই দক্ষতা অর্জন করেছেন, তা বলা নিশ্চয়ই বাহুল্যই হবে।
তা তারা দক্ষতা অর্জন করলেন কী করে? ‘আউটলায়ার্স’ বইটা পড়া থাকলে আপনি তো জানেনই, ১০ হাজার ঘণ্টা কোনো কাজে শ্রম দিলেই হওয়া যায় ওই ক্ষেত্রে সফলদের একজন। স্কাই স্পোর্টসের যে প্রামাণ্যচিত্রের কথা বলা হয়েছিল লেখার গোড়াতে, সেখানেও দেখা গিয়েছিল, একজন পেশাদারের সঙ্গে অপেশাদারের পার্থক্য হয়ে যায় চর্চায়, অভিজ্ঞতায়। বারংবার অনুশীলনের মাধ্যমে তাদের অবচেতন মন তথ্যগুলো এমনভাবে জমাট করে নেয় যে, ম্যাচ পরিস্থিতিতে সামান্য ইঙ্গিতেই তাদের মন ধরে ফেলে, পরমুহূর্তে তাদের কী করতে হবে।
মেসি বা রোনালদো – দু’জনের কেউই তো ফুটবলীয় দক্ষতা রপ্ত করে জন্মাননি, তাদের গায়ে-গতরে খেটেই সেই দক্ষতা অর্জন করতে হয়েছে। দুজনের মধ্যে কার কম-বেশি, এই প্রশ্নে পৃথিবী বরাবরই রোনালদোর ত্যাগ-তিতিক্ষা বড় করে দেখেছে। যদিও ‘রোনালদোর চাইতে মেসি কম পরিশ্রম করেন’ – এর স্বপক্ষে নিরেট প্রমাণাদি হাজির করতে পারতে পারেননি কেউই। এমন বক্তব্যকে গালগল্প বলেছেন দু’জনের সঙ্গেই খেলা কার্লোস তেভেজও। আর সাবেক ফরাসি ডিফেন্ডার বিজেন্তে লিজারাজুকে যদি বিশ্বাস করা যায় তো মানতে হবে, উচ্চতায় ছোট হওয়ার কারণে মেসিকেই পরিশ্রম করতে হয়েছে বেশি। ২০১১ সালে ফিফাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন,
‘কিছু ক্ষেত্রে সব বিষয় যাদের পক্ষে কাজ করে, তারা কঠোর পরিশ্রমের রাস্তা বাছে না। আমরা যারা ছোট-খাটো দেখতে, তারা যখন কোনো কিছু করব বলে মনস্থির করি, তখন কিন্তু সামর্থ্যের ১২০ ভাগ ঢেলে দিই।’
– বিজেন্তে লিজারাজু, সাবেক ফরাসি ডিফেন্ডার
শরীরটাই ড্রিবলিংয়ের জন্য আদর্শ, তবুও প্রতিদিনই অনুশীলনে লাঞ্জেস, স্কিপ ড্রিলের আশ্রয় নেন মেসি, গতি বাড়াতে কাজ করেন। এমনও তো গুঞ্জন আছে, শরীরকে নমনীয় করতে দিনে অন্তত এক ঘন্টা স্ট্রেচিং করেন এই আর্জেন্টাইন তারকা। ক্যারিয়ারের দৈর্ঘ্য বাড়াতে বিসর্জনের থালায় তুলেছেন কোলা-পিৎজার মতো সব জিভে জল আনা খাবার। সাধে তো আর মেসি বলেননি,
“I start early and I stay late, day after day, year after year. It took me 17 years and 114 days to become an overnight success.”
– লিওনেল মেসি
***
এত দূর পড়ে আসার পর একটা সত্যি আপনার বোঝার কথা, শারীরতাত্ত্বিক সুবিধা মেসি-রোনালদো দু’জনেই পেয়েছেন। তার চেয়েও বড় কথা, তারা দু’জনেই তাদের শরীর আর খেলার ধরনটা খুব ভালো বুঝেছেন। এ কারণেই মেসি যেমন রোনালদোর গোলার মতো শটকে নিজের রুটি-রুজি বানাননি, রোনালদোও চাননি লম্বা শরীর নিয়ে কোমরের দুলুনিতে ডিফেন্ডার গলে বেরিয়ে যেতে।
শরীরের ধরন বুঝেই দু’জন বেছেছেন সাফল্য প্রাপ্তির ভিন্ন দুই তরিকা, খেটেছেনও ওই কারণেই। রোনালদো তার স্বর্ণালি সময়ে লাফাতে পারতেন একজন গড়পড়তা এনবিএ তারকার চেয়েও উঁচুতে। উরু তো এমনিতেই হাই জাম্পারের মতো, সঙ্গে পেটের পেশিগুলোও রোনালদোকে সাহায্য করত এই উচ্চতা পেতে। জিমে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ঘাম ঝরিয়ে রোনালদোকে ওই পেটানো শরীর বানাতে হয়েছে এই জন্যে, সঙ্গে রোনালদোকে জানতে হয়েছে কলাকৌশলও। হেড করার সময় রোনালদো যে তার পা দুটো নিজের শরীরের পেছনে লুকিয়ে ফেলতেন, এ কারণেই তিনি বাতাসে ভেসে থাকতে পারতেন অন্য সকলের চেয়ে বেশি। আর আমাদের মনে হতো, মাধ্যাকর্ষণের টান সত্য, তবে রোনালদো ছাড়া আর সকলের জন্য।
মেসি আবার খেটেছেন নিজের ড্রিবলিং দক্ষতা বাড়াতে। পা যদিও ছোট, কিন্তু এই পায়েই যে গতি জমা আছে, সেটাকে ব্যবহার করেই কেড়ি কেটে বেরিয়ে যেতে চেয়েছেন প্রতিপক্ষকে ছিটকে, ছুঁতে চেয়েছেন সাফল্যের স্বর্ণশিখর। তিনি তার লক্ষ্যে সফলই বোধহয়, নয়তো তার পায়ে বল গেলেই আমাদের কেন মনে হবে, ‘ইশ, ফুটবল খেলাটা কী সোজা!’
মোদ্দা কথা এটাই, মেসি-রোনালদো নিয়ে বিতর্ক বহু হয়েছে, সামনে আরও হবে। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, ওই তর্কে ‘প্রতিভাই সব’ উপসংহার যেন না টানা হয়। একভাবে না অন্যভাবে, ঐশ্বরিক দয়াদাক্ষিণ্য সকলেই পেয়েছেন। এবং কাজ করার আগ পর্যন্ত ওই দানগুলো সুপ্তই থেকেছে সবার জীবনে। মেসি-রোনালদোর কৃতিত্ব: জীবনের আর সকল মোহ ত্যাগ করে তারা কেবল ওই দানটাকে সুবিধামতো ব্যবহারের কথাই ভেবেছেন, সেটা বাস্তবায়ন করেও দেখিয়েছেন।
কাজটা কে কতটা ভালো পেরেছেন, তার ফয়সালা না হয় আপনিই করবেন!