এবার কি সাকিব মূল্য পাবেন?

তের সংখ্যাটিকে ‘অশুভ’ বানানোর জন্যে মানুষের চেষ্টার তো কোনো কমতি নেই। নরওয়েজিয়ানরা যেমন মনে করেন, দুঃখ ও কলহের দেবতা লকি আমন্ত্রিত না হয়ে দেবতা ভালহাল্লার ভোজসভায় ঢুকে পড়ার কারণে নাকি তার মৃত্যু হয়েছিল। এবং তিনি ছিলেন ভোজসভায় যোগদানকারী তেরতম ঈশ্বর। খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসীরা আবার মনে করেন, বাইবেলে ‘দ্য লাস্ট সাপার’ এর কাহিনীই তের সংখ্যাটিকে অশুভ প্রমাণের জন্য যথেষ্ট।

সাকিব আল হাসান বোধহয় এসব সংখ্যাতত্ত্বে তেমন বিশ্বাস করেন না। অলরাউন্ডার হিসেবে সময়ের সেরা ছাড়িয়ে বহুদিন ধরেই তাকে সবসময়ের সেরাদের সঙ্গে লড়াইয়ে নামানোর প্রচেষ্টা ছিলো তার ভক্তদের। কিন্তু এতে ক্রিকেট বিশ্লেষক কিংবা আলোচকদের আপত্তিটা ছিল সর্বদাই। তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটেই নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডারের স্বীকৃতি পেলেও বিশ্ব ক্রিকেট তার শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকারে দ্বিধায় ভুগেছে সবসময়েই।

সে সংশয়ের খাতায় বোধহয় দাঁড়ি পড়লো এবারে। দাঁড়ি টানলেন সাকিব আল হাসান, নিজের অতিমানবীয় পারফরম্যান্সে। বিশ্ব ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চকে এতটাই নিজের করে নিয়েছেন যে বাকিসব মহাতারকাও তার পাশে জ্বলছেন মিটিমিটি করে। নাকউঁচু ব্রিটিশরাও ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছে, এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার সাকিবই!

বিশ্বকাপ তো সাকিবেরই; Image credit: IDI/Getty Images

তের সংখ্যাটিকে সাকিবের অলক্ষুণে ভাবার যে কোনো সম্ভাবনা নেই, তার উত্তর এতসব অর্জনের আড়ালেই লুকিয়ে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যে পার করছেন নিজের তেরতম বর্ষ।

১.

২০০০ সালকে বলা যেতে পারে বাংলাদেশের ক্রিকেটের বাঁকবদলের মুহূর্ত। যার পেছনে কারণ দাঁড় করানো যেতে পারে দুটি। প্রত্যক্ষ কারণ, বাংলাদেশ টেস্ট আঙিনায় পা রাখার অধিকার পায় সে বছরই। পরোক্ষ কারণ, তর্কাতীতভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলেন সে বছরই। সাকিব আল হাসান বিকেএসপিতে ভর্তি হয়েছিলেন ২০০০ সালে। নিজের ক্রিকেট প্রতিভা বিকশিত হবার পেছনে সাকিব যে প্রতিষ্ঠানের দেখেন অপরিসীম ভূমিকা।

লড়াকু মানসিকতা আমার জন্মগত। তবে বিকেএসপিতে ভর্তি হবার পরে যা হয়েছে, এই মানসিকতার সঙ্গে সুযোগ-সুবিধা আর অনুশীলনের সংযোগ ঘটেছে।

কেন তিনি এ দেশের সেরা ক্রিকেটার, তা নিয়ে শব্দ খরচ করা অপচয়ই হবে। টানা ৪৫ ম্যাচে জয়হীন এক দল যে দেড় দশকের ব্যবধানে বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তিদের একজন হয়ে উঠতে যাচ্ছে তা তো ওই দলে একজন সাকিব আল হাসান নামের অতিমানব ছিলেন বলেই।

২.

বিশ্বকাপে ভারতকে ধরে দেয়া, সাকিব আল হাসান সেখানে ছিলেন অপরাজিত ৫৩ রান করে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথমবার পরাজিত করা, সাকিব সেদিন গায়ানার মাটিতে ছিলেন দুই উইকেট নিয়ে। প্রথমবারের মতো বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজ জয় করেছিল ২০০৯ সালে, সাকিব সে সিরিজে হয়েছিলেন সিরিজ-সেরা। নিউজিল্যান্ডকে একা হাতে বাংলাওয়াশ, এশিয়া কাপে বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো ফাইনালের স্বাদ পাওয়ানো, নিশ্চিত পরাজয়ের দুয়ার থেকে দলকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে পৌঁছানো, এ দেশের ক্রিকেট থেকে সাকিব নামটা বাদ দেবেন কী করে!

ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেছিলেন যেদিন; Image credit: AFP

৩.

বিশ্ব ক্রিকেটাঙ্গনেও সাকিবকে বাদ দেয়ার কোনো সুযোগ কি তিনি রেখেছিলেন! প্রথমবার আইসিসির নাম্বার ওয়ান ওডিয়াই অলরাউন্ডারের স্বীকৃতি পেয়েছিলেন ২০০৯ সালে, এবার বিশ্বকাপেও গিয়েছিলেন এক নাম্বার অলরাউন্ডার হিসেবেই। মাঝের সময়টায় অলরাউন্ডার র‍্যাঙ্কিংয়ে তার নামটা প্রথমে ছিলো না, এমন দিন বিশ্ব ক্রিকেটে আসেনি খুব বেশি।

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার টালবাহানায় অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টেস্ট খেলার সুযোগ পাননি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দশ বছর কাটিয়েও। সুযোগ পেয়েছিলেন ২০১৭ সালে, প্রথম সুযোগেই বাজিমাত। ইনিংসে ৮৪ রান, ম্যাচে ১০ উইকেট, বাংলাদেশ পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টেস্ট ম্যাচ জয়ের স্বাদ। বিশ্ব ক্রিকেটে নিজের নামটা খোদাই করে দিয়েছিলেন সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েই।

৪.

কিন্তু ওই যে খামতির কথা বলছিলাম। এতদিন ধরে এত দেশে ক্রিকেট খেলার পরেও সাকিব যেন তার প্রাপ্য সম্মানটুকু পাননি। আর এই যথাযথ মূল্য না পাওয়ার কারণটিও কৌতূহল জাগানিয়া। পারফরম্যান্স বলে, সাকিব যেকোনো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেই ভীতিজাগানিয়া। তিনি যাদের পক্ষে বা বিপক্ষে খেলেছেন, সে দলের খেলোয়াড় কিংবা কোচ বলেন, ‘সাকিব ভয়ংকর।’ তাবৎ দুনিয়ার ফ্র‍্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে তিনি হটকেক। তবুও তাকে একবাক্যে সেরার স্বীকৃতি দিতে নারাজ অনেকে। সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারদের ছোট্ট তালিকায় জায়গা দেয়া দূরে থাক, বর্তমান সময়ের সেরার স্বীকৃতিও তো তাকে দিতে চাননি অনেক ক্রিকেট বিশ্লেষকই। সাকিব না জাদেজা, এমন প্রশ্ন তো ছুঁড়ে দিয়েছিল ‘ক্রিকেটের মক্কা‘ খ্যাত লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড কর্তৃপক্ষ। সাকিবকে সেরা বলতে গেলে বিশ্ব ক্রিকেটের কুলীনকূলের কেন এত দ্বিধা, তা এক রহস্য। হয়তো তিনি তাদের কেউ নন বলে, হয়তো বা তার দলের নাম বাংলাদেশ বলে!

৫.

কিছুটা দায় বোধহয় সাকিবেরও ছিল। ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অনবদ্য শতক আর ২০১২ টি-২০ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপরাজিত ৮৪ রানের ইনিংস বাদে আইসিসি টুর্নামেন্টে মনে রাখার মতো ম্যাচ কোথায় সাকিবের!    

যা ছিল আইসিসি টুর্নামেন্টে সাকিবের মনে রাখার মতো একমাত্র ইনিংস, ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে; Image credit: Getty Images

একদিবসী ক্রিকেট বিশ্বকাপে তো ছিলেন আরও ম্লান। বিশ্বকাপ অধ্যায় অর্ধশতক দিয়ে শুরু করলেও পরের ২০ ম্যাচে একই মাইলফলকে পৌঁছুতে পেরেছিলেন মোটে চারবার, ব্যাটিং গড় ছিল মাত্র ৩০।

বোলিং রেকর্ড ছিল এর চেয়েও করুণ। ২০১৫ বিশ্বকাপ অব্দি খেলা ২১ ম্যাচে উইকেট পেয়েছিলেন মাত্র ২৩টি। বিশ্বকাপের মঞ্চে পাঁচ উইকেট তো বাংলাদেশের বোলারদের জন্যই ছিল সোনার হরিণ, সাকিব ম্যাচে চার উইকেটই পেয়েছিলেন মাত্র একবার। বাংলাদেশের ক্রিকেটের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া সাকিব বিশ্বকাপের মঞ্চে ম্যাচের মোড় ঘোরাতে পারেননি একদমই! বিশ্বও তাই সাকিবকে ভালোর স্বীকৃতি দিয়েই দায় সেরেছিল, সেরা বলতে চায়নি।

৬.  

কিন্তু ধরায় ২০১৯ বিশ্বকাপ এলো। আইপিএলে অলস সময় কাটিয়ে সাকিব আল হাসান নিজেকে তুলে ধরতে এলেন।

প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। মুশফিকের হাফ সেঞ্চুরি, মোস্তাফিজের তিন উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে শুভসূচনাই করেছিল বাংলাদেশ৷ তবে সবাইকে ছাপিয়ে ম্যাচের কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন একজনই, সাকিব আল হাসান। ৭৫ রানের ইনিংসের পরে বোলিংয়েও ১ উইকেট তুলে নিয়ে সেদিন পৌঁছেছিলেন ২৫০ ওয়ানডে উইকেটের ল্যান্ডমার্কে, ক্যারিয়ারে ৫,০০০ রান তো ছুঁয়েছিলেন এরও আগে। দুয়ে মিলে পৌঁছেছিলেন এমন এক মাইলফলকে, সাকিব আল হাসানের আগে যেখানে পা পড়েছিল মাত্র চারজনের। আব্দুল রাজ্জাক, শহীদ আফ্রিদি, সনাথ জয়াসুরিয়া আর জ্যাক ক্যালিসের।

৫০০০+ রান এবং ২০০+ উইকেটের যুগল কীর্তি  আছে যাদের

  • আব্দুল রাজ্জাক- ৫০৮০ রান, ২৬৯ উইকেট।
  •  শহীদ আফ্রিদি- ৮০৬৪ রান, ৩৯৫ উইকেট
  •  সনাথ জয়াসুরিয়া- ১৩০৪০ রান, ৩২৩ উইকেট।
  •  জ্যাক ক্যালিস- ১১৫৭৯ রান, ২৭৩ উইকেট।
  •  সাকিব আল হাসান- ৫৮৫৬ রান, ২৫২ উইকেট।

রেকর্ড অর্জনের সময়সীমায় সাকিব অবশ্য ছাড়িয়ে গিয়েছেন বাকিদের। ১৯৯ ম্যাচেই সাকিব অর্জন করেছেন এমন কৃতিত্ব, ২৫৮ ম্যাচে একই মাইলফলকে পৌঁছে সবচেয়ে কাছাকাছি আছেন পাকিস্তানের আবদুল রাজ্জাক। বাকিদের লেগেছিলো আরও বেশি ম্যাচ।

সাকিব, সবচেয়ে দ্রুত; Image credit: espncricinfo 

কিংবদন্তিদের কাছ থেকে এমন রেকর্ড কেড়ে নেয়া তার জন্যে আর নতুন কী! এর আগে যেমন নিয়েছেন, নিয়েছেন ওই ম্যাচের পরেও। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ২য় ম্যাচটিকেই ধরুন। সাকিব আল হাসান সেদিন খেলতে নেমেছিলেন ক্যারিয়ারের ২০০তম ওয়ানডে ম্যাচ। বাংলাদেশের জন্যে তা-ই হতে পারতো এক রেকর্ড। এর পূর্বে এমন অর্জনে পৌঁছেছেন মাত্র দুজনই, মাশরাফি বিন মর্তুজা আর মুশফিকুর রহিম।

কিন্তু সাকিব আল হাসান নিজের সীমাকে কবেই বা বাংলাদেশের মানদণ্ডে সীমাবদ্ধ করে রেখেছিলেন! রাখেননি সেদিনও, বাকি ব্যাটসম্যানরা যেখানে প্রতিপক্ষের বোলিংয়ে হাঁসফাঁসে মরেছেন, সেখানে তিনি ছাড়িয়েছিলেন পঞ্চাশ, ক্যারিয়ারে ৪৪তম বারের মতো৷ এরপরে বোলিংয়ে আরও দুই উইকেট, ম্যাচ জমিয়ে তোলার সব সরঞ্জাম জোগাড় করেছিলেন তো তিনিই। শেষ অব্দি অবশ্য জয়ের বন্দরে পৌঁছুতে পারেননি বাংলাদেশকে, তবে তিনি নিজে ঠিকই পৌঁছেছিলেন জ্যাক ক্যালিসের আরেকটু কাছে।

দলের মধ্যমণি সাকিবকে ঘিরে সতীর্থদের উল্লাস; Image credit: Getty Images 

একই ম্যাচে ব্যাটিংয়ে পঞ্চাশের বেশি রান এবং বোলিংয়ে দুই কিংবা তার বেশি উইকেট দখল, এমন কিছু তার ৩২৮ ম্যাচের ক্যারিয়ারে জ্যাক ক্যালিস অর্জন করেছিলেন ২৩ বার। সাকিব আল হাসান একই রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন ক্যালিসের চেয়ে ১ বার কম, ম্যাচ খেলেছেন অবশ্য পাক্কা ১২৮টি কম। আরও বহু রেকর্ডের মতো এই রেকর্ডেও সাকিব ক্যালিসকে ছাড়িয়ে যাবেন, এ তো অবধারিতই। আর একবার ছাড়িয়ে গেলে নিকট ভবিষ্যতে হাতছাড়া হবার আশঙ্কাও সামান্যই। ১৬ বার একই রেকর্ড অর্জন করে, সাকিব-ক্যালিসের সবচেয়ে ধারেকাছে আছেন যিনি, সেই সনাথ জয়াসুরিয়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়েছেন আজ আট বছর হয়।

ইনিংসে পঞ্চাশোর্ধ্ব রান + দুইয়ের বেশি উইকেট:    

ক্রিকেটার

কত ম্যাচে

কত বার

সাকিব আল হাসান

২০০

২২

জ্যাক ক্যালিস

৩২৮

২৩

শহীদ আফ্রিদি

৩৯৮

১৫

সনাথ জয়াসুরিয়া

৪৪৫

১৬

কিন্তু এবার বিশ্বকাপে সাকিব যে এসেছেন বাকিদের সঙ্গে তার আলোকবর্ষ ব্যবধান বোঝাতে। এবারের আগের ২১ ম্যাচে যেখানে তার সর্বোচ্চ রান ছিল ৬৩, এবার সেখানে তুলে নিলেন সেঞ্চুরিই, ইংল্যান্ডের পরে উইন্ডিজের বিপক্ষেও। বিশ্বকাপে সাত ম্যাচ পেরিয়ে এসে অর্ধশতকের দেখা পাননি কেবল এক ম্যাচেই, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০ জুনের ওই ম্যাচেও করেছিলেন বলের সাথে পাল্লা দিয়ে ৪১ রান। বিশ্বকাপে তিন ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ এখনও আছে সেমিফাইনালের দৌড়ে। আর টুর্নামেন্টের ৩৩ ম্যাচ পেরিয়ে এসে টুর্নামেন্ট-সেরার পুরষ্কার জয়ের দৌড়ে সাকিব আছেন সবার চেয়ে এগিয়ে।

৮.

দশ দলের বিশ্বকাপ, তাতে খেলছেন ১৫০ জন ক্রিকেটার। কেউ হয়তো বা দলে জায়গা পেয়েছেন দলের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে, কেউ বা সেরা বোলার হয়ে। তবে দুই ভূমিকাতেই নিজেকে দলের সেরা দাবি করতে পারেন একজনই, সাকিব আল হাসান।

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচ পর্যন্ত ২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিব রান করেছেন ৪৭৬, ৯৯.১৬ স্ট্রাইক রেটে। তালিকার প্রথম দশে থাকা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র অ্যারন ফিঞ্চই রান তুলেছেন তার চেয়ে দ্রুতগতিতে (স্ট্রাইক রেট ১০৩.৯৮)। শীর্ষ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় সাকিব আল হাসান অবস্থান করছেন তিন নম্বরে। অস্ট্রেলিয়ার উদ্বোধনী জুটির অংশীদার ওয়ার্নার আর ফিঞ্চই আছেন তার ওপরে, সাকিবের চেয়ে এক ইনিংস বেশি খেলে। এখন অব্দি ৪৮ বার বলকে সীমানাছাড়া করেছেন সাকিব, অন্য সবার চেয়ে বেশি।

২০১৯ বিশ্বকাপে এমন মুহূর্ত বারেবারে এনেছেন সাকিব; Image credit: Getty Images 

বাংলাদেশ দলের মোট রানের ২৬.৮৭ শতাংশই এসেছে সাকিবের ব্যাটে। নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন (৩১.১০ শতাংশ) আর রোহিত শর্মা-ই (২৮.৯০ শতাংশ) দলের রানে অবদান রেখেছেন তার চেয়ে বেশি।

কিন্তু রোহিত শর্মা আর উইলিয়ামসনের তো বল হাতে অবদান রাখার সুযোগ নেই। সাকিবের যে সুযোগ রয়েছে এবং সাকিব সে সুযোগ দু’হাত ভরেই নিচ্ছেন।                 

বাংলাদেশ দলে যদিও তার চেয়ে বেশি রান করেননি আর কেউ, তবে বোলিংয়ে তার সমান ১০ উইকেট পেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান আর মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। বাকি দুই পেসার ওভারপ্রতি রান খরচা করেছেন ৬.৭ করে, সাকিব সেখানে ৫.৫৭ হারে । বিশ্বকাপে ৫ উইকেট না পাওয়ার যে অতৃপ্তি বাংলাদেশের বোলারদের ছিল, তা-ও দূর করেছেন এবারে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে তার ২৯ রানে ৫ উইকেট প্রাপ্তি, এবারের বিশ্বকাপেরই সেরা বোলিং ফিগার এখন অব্দি।

৯.

বিশ্বকাপের মঞ্চে ব্যাটে-বলে এমন অতিমানবীয় পারফরম্যান্সকে অস্বীকার করতে পারেনি বিশ্ব ক্রিকেটের কুলীনেরা। হাসি তাকে ঘোষণা দিয়েছেন ‘বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে‘, সমসাময়িক বাকিদের সাথে তুলনায় যতি পড়েছে, সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডারের তালিকায় সাকিব আসবেন কি না, এমন আলোচনা এবারে জোরেশোরে ডালপালা মেলেছে।

পরিসংখ্যান বহু আগে হতেই তো বলছিলো, সাকিব আল হাসান সর্বকালের সেরা হবার সব যোগ্যতাই পূরণ করেছেন৷ বড় মঞ্চকে আলোকিত না করতে পারার ব্যর্থতাও ঘুচিয়ে দিয়েছেন ২০১৯ বিশ্বকাপে।

সাকিব আল হাসান এবারে তাই প্রাপ্য শ্রদ্ধাটুকু আশা করতেই পারেন৷ এরপরেও যদি বিশ্ব দ্বিধান্বিত থাকে, সাকিবের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, ‘আর কী করতে হবে!’

This article is in Bangla language. Why Shakib Al Hasan deserves more respect than he gets is discussed in this article. Necessary hyperlinks are added inside.

Featured image © Getty Images          

Related Articles

Exit mobile version