সাবেক ডাচ লিজেন্ড ইয়োহান ক্রুইফ তার সাফল্যময় ফুটবলার ক্যারিয়ার শেষে ১৯৮৫-৮৬ সিজনে আয়াক্সের কোচ হিসেবে কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন। আয়াক্সে দুর্দান্ত দুই মৌসুম কাটানোর পর ক্রুইফ বার্সেলোনার কোচ হিসেবে যোগদান করেন। তখনকার সময়ে বেশিরভাগ ফুটবল দলই মিডফিল্ডে ওভারলোড করে দুইজন স্ট্রাইকার নিয়ে খেলত। ক্রুইফ আরো একধাপ এগিয়ে তার ৪-৩-৩ ফর্মেশনের সাথে টোটাল ফুটবলের থিউরি একত্র করে তৈরি করলেন ৩-৪-৩ ডায়ামন্ড ফর্মেশন, যার সাফল্যে বার্সেলোনা তখনকার দলটি ঠাঁই করে নেয় ইতিহাসের পাতায় এবং ক্রুইফকে পৌছে দেয় ফুটবল ইতিহাসের সেরা ফিলোসফারদের কাতারে।
যেভাবে ৩-৪-৩ ডায়ামন্ড ফর্মেশন তৈরি হলো
ট্যাক্টিকাল ফুটবলে ইয়োহান ক্রুইফের মূল আদর্শ ছিলেন ডাচ কিংবদন্তি রাইনাস মিশেল। ক্রুইফ মিশেলের অধীনে আয়াক্স এবং বার্সেলোনায় সর্বমোট ৭ বছর খেলেছিলেন। মিশেল ছিলেন বহুল প্রচলিত ফুটবল কনসেপ্ট ‘টোটাল ফুটবল’-এর জনক, যে সিস্টেমে নিজের কোচিং ক্যারিয়ারে ক্রুইফ রীতিমতো বৈপ্লবিক বিবর্তন ঘটিয়েছিলেন। মিশেলের টোটাল ফুটবল দর্শনের মূল ভিত্তি ছিল খেলোয়ারদের ক্রমাগত পজিশন পরিবর্তন করে প্রতিপক্ষের ‘ম্যান-ওরিয়েন্টেড ডিফেন্সিভ সিস্টেম’কে নষ্ট করে দেওয়া এবং প্রতিপক্ষ অর্ধে ফাঁকা জায়গা তৈরি করে স্ট্রাইকারদের গোল করার সুযোগ করে দেওয়া। মিডফিল্ডে বাড়তি ওভারলোডের জন্য রাইনাস মিশেল ৪-৩-৩ ফর্মেশনের পরিবর্তে ৪-৪-২ ফর্মেশন ব্যবহার করতেন।
ক্রুইফ তার কোচিং ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময়ই দলকে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে খেলাতেন। কিন্তু মিশেলের টোটাল ফুটবল কনসেপ্ট মেইনটেইন করার জন্য ক্রুইফের সিস্টেমে মিডফিল্ডে ডায়ামন্ড শেইপ তৈরি করার প্রয়োজন পড়ত। মিডফিল্ডে ডায়মন্ড শেইপ থাকার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, এতে মিডফিল্ডারদের পরষ্পরের মধ্যে অনেকগুলো বাড়তি পাসিং লাইন তৈরি হয় এবং প্রতিপক্ষের প্রেসিংয়ের বিরুদ্ধে বল দখলে রেখে প্রতিপক্ষ অর্ধে অগ্রসর হতে সুবিধা হয়। এক্ষেত্রে ক্রুইফ যদি তার ফর্মেশনকে ৪-১-২-১-২ ফর্মেশনে পরিবর্তন করেন, তবে মিডফিল্ডে ডায়ামন্ড শেইপ তৈরি করা সম্ভব। তবে এই ফর্মেশনের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে, অপনেন্ট থার্ডের ওয়াইড এরিয়ায় কোনো খেলোয়াড় না থাকায় ওয়াইড এরিয়া কাজে লাগানো সম্ভব হয় না।
এক্ষেত্রে আরেকটি সমাধান হতে পারে যদি ক্রুইফ তার ওয়াইড সেন্টার মিডফিল্ডারদেরকে আরেকটু ওয়াইড এরিয়ায় পরিচালনা করেন, তবে অপনেন্ট থার্ডের ওয়াইড এরিয়া কাজে লাগানো সম্ভব। কিন্তু এক্ষেত্রে দুই ওয়াইড সেন্টার মিডফিল্ডারদের মধ্যে দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় সেন্টার এরিয়ায় ঠিকভাবে ডায়মন্ড শেইপ তৈরি করে পাসিং করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।
তখনকার সময়ে বেশিরভাগ ফুটবল দলই ৪-৪-২ ফর্মেশনে খেলত। কিন্তু ক্রুইফের মতে, প্রতিপক্ষের ২ জন স্ট্রাইকারকে মার্ক করার জন্য ব্যাকলাইনে ৪ জন ডিফেন্ডার রাখা অপচয় ছাড়া আর কিছুই না। তার মতে, ব্যাকলাইনে ৩ জন ডিফেন্ডারই যথেষ্ট প্রতিপক্ষের ২ স্ট্রাইকারকে আউটনাম্বার্ড করার জন্য। এজন্য ক্রুইফ রাইনাস মিশেলের ৪-৪-২ ফর্মেশনের সাথে ৪-৩-৩ ফর্মেশনের বিবর্তন ঘটিয়ে তৈরি করলেন ৩-৪-৩ ডায়মন্ড ফর্মেশন, যেখানে মিডফিল্ডে ডায়মন্ড শেইপ এবং মাঠের প্রত্যেকটা পজিশনে নিউমেরিক্যাল সুপিওরিটি উভয়ই পাওয়া সম্ভব।
ক্রুইফের ৪-৩-৩ ফর্মেশনের পরিবর্তে ৩-৪-৩ ডায়মন্ড ফর্মেশনে দল অপারেট করার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল ৪-৩-৩ ফর্মেশনে বল পজেশন থাকা অবস্থায় প্রতিপক্ষ অর্ধে ৬-ভার্সাস-৮ সিচুয়েশন তৈরি হয়, এক্ষেত্রে খেলোয়ারদের পক্ষে ফ্রি স্পেস তৈরি করে প্রতিপক্ষ বক্সে থ্রেট তৈরি করা অনেক বেশি কঠিন হয় এবং মিডফিল্ডে ডায়ামন্ড শেইপ তৈরি করা সম্ভব হয় না। এজন্য ক্রুইফ একজন ডিফেন্ডারকে সড়িয়ে একজন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার নিয়ে এলেন মিডফিল্ডে ডায়ামন্ড তৈরি করার জন্য। তারপরও ডিফেন্সে ৩-ভার্সাস-২ পজেশন থাকায় ব্যাকলাইনে নিউমেরিক্যাল সুপিওরিটি তৈরি করে মিডফিল্ডারদের সাথে পাসিং অপশন তৈরি করতে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। প্রতিপক্ষ অর্ধে একজন বাড়তি ম্যান থাকায় তখন ৭-ভার্সাস-৮ অবস্থান তৈরী হয় এবং এতে ফ্রি পাসিং ফ্লো চালু রাখা অনেক বেশি সহজ হয়ে পড়ে।
বিল্ড আপ প্লে এবং খেলোয়ারদের রোল
ক্রুইফের বিল্ডআপ সিস্টেমের মূল ভিত্তি ছিল ব্যাকলাইন থেকে খেলা বিল্ডআপ করা। ব্যাকলাইন থেকে বল প্রোগ্রেশনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রোল পালন করতেন লিবারো (লিবারো একটি ইতালিয়ান শব্দ, যার অর্থ বল প্লেয়িং সুইপার) রোলে খেলা সেন্টারব্যাক। ক্রুইফের বার্সেলোনা দলে লিবারো রোলে খেলতেন ডাচ লিজেন্ড রোনাল্ড ক্যোমান এবং দুই ওয়াইড সেন্টারব্যাক রোলে খেলতেন নান্দো এবং নাদাল। ক্রুইফের সিস্টেমে থ্রি ম্যান ব্যাকলাইন থাকলেও তারা সাধারণ ফ্ল্যাট ব্যাক-থ্রির মতো পজিশন নিতেন না। এক্ষেত্রে লিবারো রোলে খেলা ক্যোমান বাকি দুই ওয়াইড সেন্টারব্যাকের থেকে কিছুটা নিচে পজিশন নিয়ে থাকতেন। ফলে ব্যাকলাইনেও ডায়ামন্ড শেইপ তৈরি হতো মিডফিল্ডের মতোই এবং কোম্যানের জন্য প্রতিপক্ষের প্রেস উপেক্ষা করে ব্যাকলাইন থেকে বল প্রোগ্রেস করতে তুলনামূলকভাবে অনেক সুবিধা হত।
ব্যাকলাইন থেকে বিল্ডআপ করার মূল উদ্দেশ্য ছিল বল পজেশন ধরে রাখা এবং মাঠকে যতটুক সম্ভব বড় করে প্রতিপক্ষের প্রেসিং করার সুযোগ কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা। মিডফিল্ডের ডায়মন্ড শেইপ লিবারো রোলে থাকা ক্যোমানের জন্য অনেকগুলো পাসিং অপশন তৈরি করে দিত। ডিফেন্সিভ থার্ডে প্রতিপক্ষের সাথে ৩-ভার্সাস-২ অবস্থান তৈরি হওয়ায় প্রতিপক্ষের স্ট্রাইকারদের পক্ষে প্রেস করা বেশ কঠিন ছিল। এজন্য প্রতিপক্ষের স্ট্রাইকাররা লিবারো রোলে থাকা ক্যোমানকে প্রেস করে বল পজেশন দখল করার চেষ্টা করত। এ সময় দুই ওয়াইড সেন্টারব্যাক বল পজেশন নিজের দখলে নিয়ে উপরে উঠে যেতেন। তখন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার রোলে থাকা পেপ গার্দিওলা নিচে ড্রপ করে সেই স্পেস কভার করতেন। তবে ক্যোমানের ড্রিবলিং স্কিল অনেক ভালো থাকায় অনেক সময় ক্যোমান ড্রিবল করে প্রতিপক্ষ স্ট্রাইকারদের প্রেস বিট করে উপরে উঠে যেতেন, এ সময় যথারীতি পেপ গার্দিওলা ক্যোমানের ফেলে আসা স্পেস কভার করার জন্য নিচে ড্রপ করতেন।
ক্রুইফের দলের মূল ইঞ্জিন ছিলেন হোল্ডিং মিডফিল্ডার রোলে খেলা পেপ গার্দিওলা। গার্দিওলার মূল রোল ছিল বল পজেশন থাকার সময় সেন্টার এরিয়ায় পজিশন হোল্ড করে রাখা, কখনোই সেন্টার সার্কেল এরিয়া থেকে বেশি দূরে না যাওয়া এবং সিঙ্গেল পিভট রোলে দলকে অপারেট করা। দলের বল পজেশন থাকা অবস্থায় তার প্রধান কাজ ছিল মিডফিল্ডের সেন্টার লাইনের কাছাকাছি বল রিসিভ করে তার উপরে থাকা টিমমেটদের পজিশন যাচাই করে সবচেয়ে ভালো পজিশনে থাকা টিমমেটের কাছে বল সার্কুলেট করা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিল মিডফিল্ডের ডায়ামন্ড শেইপ, ফলে তার কাছে অনেকগুলো পাসিং অপশন থাকতো এবং প্রতিপক্ষের প্রেসকে বিট করে টিমমেটের কাছে সফলভাবে বল পাস দিতে সুবিধা হতো। গার্দিওলার ওয়াইড মিডফিল্ডারকে ছোট পাস দিয়ে ওয়ান টাচ পাসিং কম্বিনেশনের শুরু করতেন অথবা উইঙ্গারদের ডায়াগনাল পাস দিতেন এবং এতে করে উইঙ্গারদের সামনে ওয়ান-ভার্সাস-ওয়ান অবস্থার তৈরি হতো।
অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের রোল ছিল অনেকটাই সেকেন্ড স্ট্রাইকারদের মতো। ক্রুইফ তাকে বল রিসিভ করে কুইক টার্ন করে ড্রিবল করে অ্যাটেম্পট নেওয়াতে চাইতেন না। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের মূল রোল ছিল ইন-বিটুইন-দ্য-লাইনে এসে যেকোনো ওয়াইড মিডফিল্ডারের সাথে ওয়ান-টাচ পাসিং করে সতীর্থ উইঙ্গারদের জন্য ওয়াইড এরিয়া উন্মুক্ত করে সরাসরি কাট-ইন করার সুযোগ করে দেওয়া। ক্রুইফের টিমে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার রোলে খেলতেন বাকেরো। তিনি দলের প্রয়োজনে প্রতিপক্ষ বক্সে গিয়ে ওভারলোড তৈরি করতেন অথবা মিডফিল্ডে ওভারলোডের প্রয়োজন হলে মিডফিল্ডে ড্রপ করে টিমমেটদের জন্য বাড়তি পাসিং অপশন তৈরি করতেন।
ক্রুইফের দলের ক্রিয়েটিভিটির মূল উৎস ছিল দুই ওয়াইড মিডফিল্ডার ইউসেবিও এবং আমোর। তাদের মূল রোল ছিল অপনেন্ট থার্ডের দিকে রান নিয়ে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের সাথে কুইক ওয়ান-টু-ওয়ান পাসিং করে ফরোয়ার্ডদের জন্য অ্যাটাকিং থার্ডে ফ্রি স্পেস তৈরি করে দেওয়া এবং তাদের গোলস্কোরিং সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। ফরোয়ার্ড মুভমেন্টের ক্ষেত্রে তারা প্রতিপক্ষ অর্ধের হাফ স্পেস এরিয়া বেশি ব্যবহার করতেন। বল পজেশন থাকা অবস্থায় তারা হাইলাইনে উঠে প্রতিপক্ষ অর্ধে ওভারলোড তৈরি করতেন এবং দ্রুত অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার অথবা ফরোয়ার্ডদের সাথে পজিশন রোটেশন করে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের মার্কিংকে নষ্ট করে দিতেন।
ক্রুইফের পজিশনাল ফ্লুইডিটি তার দলকে ফাইনাল থার্ডে ভয়াবহ করে তুলত। দলের মূল স্ট্রাইকার রোলে খেলতেন লাউড্রপ, তবে তিনিই ছিলেন ফাইনাল থার্ডের মূল প্লেমেকার। লাউড্রপ প্রথাগত স্ট্রাইকারদের মতো প্রতিপক্ষ বক্সে পজিশন ধরে না রেখে মিডফিল্ডে ড্রপ করে প্রতিপক্ষ মিডফিল্ডারদের বিপক্ষে ৫-ভার্সাস-৪ অবস্থার তৈরি করতেন। ফলস নাইনের মতো মিডফিল্ডে ড্রপ করে ফ্রি টিমমেটকে প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ও মিডফিল্ড লাইনের মাঝে স্পেস তৈরি করার সুযোগ করে দিতেন। এক্ষেত্রে যদি প্রতিপক্ষ সেন্টারব্যাক তাকে মার্ক করে মিডফিল্ডে চলে আসতেন, তবে ডিফেন্সলাইনে অনেক ফ্রি স্পেস তৈরি হতো এবং অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার সেই ফ্রি স্পেসে রান নিয়ে গোলস্কোরিং সুযোগ তৈরি করতেন।
উইঙ্গারদের রোল ছিল যতটুক সম্ভব ওয়াইড এরিয়ায় পজিশন নিয়ে প্রতিপক্ষ ডিফেন্সলাইনকে প্রসারিত হতে বাধ্য করা এবং সেন্টার এরিয়ায় স্পেস তৈরি করা। তারা ফাইনাল থার্ডে প্রতিপক্ষ ফুলব্যাকদের সাথে ওয়ান-ভার্সাস-ওয়ান পজিশন তৈরি করতেন এবং দুই ক্রিয়েটিভ মিডফিল্ডারদের ফরোয়ার্ড রান ট্র্যাক করে সেন্টার এরিয়ায় কাট-ইন করতে চেষ্টা করতেন।
অফ দ্য বল পজিশনিং এবং প্রেসিং
ক্রুইফের ফিলোসফির বেসিক থিওরি ছিল, যদি তার দলের কাছে বল পজেশন থাকে, তাহলে প্রতিপক্ষ কোনোভাবেই গোল করতে পারবে না। এজন্য তার টিমের খেলোয়াড়রা ধারাবাহিকভাবে নতুন নতুন পাসিং অপশন তৈরি করে টিমমেটদের জন্য ফ্রি-স্পেস তৈরি করার চেষ্টা করত। কিন্তু তারপরও তার দলের খেলোয়াররা মাঝেমাঝেই প্রতিপক্ষের কাছে বলের দখল হারাত।
প্রতিপক্ষের কাছে বল পজেশন থাকলে ক্রুইফ চাইতেন মাঠকে প্রতিপক্ষের জন্য যতটুক সম্ভব ছোট করে দেওয়ার জন্য। এজন্য প্রতিপক্ষে যারাই থাকুক, ক্রুইফ সবসময়ই হাইপ্রেসিং করতেন পুনরায় বলের দখল ফিরে পেতে। এক্ষেত্রে ক্রুইফ তার খেলোয়ারদের একে অপরের কাছাকাছি রাখতেন যাতে প্রতিপক্ষের পাসিং এরিয়া অনেকটা কমে যায়। প্রতিপক্ষ যদি সেন্টার এরিয়ায় বলের দখল হারায় তবে প্রতিপক্ষের সেন্টার এরিয়ার খেলোয়ারদের সাথে ওয়াইড এরিয়ার খেলোয়ারদের পাসিং চ্যানেল বন্ধ করে দিয়ে বল ক্যারিয়ারকে ক্রমান্বয়ে প্রেস করে পুনরায় বলের দখল ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হতো। ওয়াইড এরিয়ায় বলের দখল হারালে উইঙ্গারের সাথে ফুলব্যাক হাইলাইনে উঠে প্রতিপক্ষ ওয়াইড মিডফিল্ডারের সাথে ২-ভার্সাস-১ পজিশন তৈরি করতেন এবং সেন্টার এরিয়ার খেলোয়াড়রা আরো আঁটসাঁট হয়ে তার পাসিং সেন্টার এরিয়ার সাথে তার পাসিং চ্যানেল বন্ধ করে ব্লাইন্ড লং বল খেলতে বাধ্য করতেন।
ক্রুইফের ৩-৪-৩ ডায়ামন্ড ফর্মেশনের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিল ডিফেন্সিভ থার্ডের ওয়াইড এরিয়ায় কোনো খেলোয়াড় না থাকায় হাইলাইনে বলের দখল হারালে প্রতিপক্ষ উইঙ্গাররা খুব সহজেই ওয়াইড এরিয়ায় ফ্রি-স্পেস তৈরি করে গোলস্কোরিং সুযোগ তৈরি করতে পারত।
ক্রুইফের ৩-৪-৩ ডায়ামন্ড ফর্মেশন ফুটবলে আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে। ক্রুইফ যেমন বার্সেলোনাকে তাদের ইতিহাসের প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা এনে দিয়েছেন, একই সাথে ফুটবলকে নতুন এক স্টাইলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে সুন্দর ফুটবলকে আরো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন।