লা লিগাকে মূলত দুই ঘোড়ার লড়াই নামেই অধিকাংশ দর্শকের কাছে পরিচিত। কালভদ্রে দুই ঘোড়ার লড়াই তিন ঘোড়ার লড়াইয়ে পরিণত হয়। প্রত্যেক মৌসুমে লিগ জয়ের যুদ্ধ বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের ভেতর হলেও বর্তমানে এদের সঠিক প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। কিন্তু এই তিন দলের বাইরে সেভিয়া, ভ্যালেন্সিয়া, অ্যাটলেটিকো ক্লাব বা ভিলারিয়ালের মতো ক্লাবগুলো সেভাবে কখনো লিগ জেতার দৌড়ে টিকে থাকতে পারে না।
ইংল্যান্ডে কয়েকদিন আগে বন্ধ হলেও স্পেনে দলবদলের মৌসুম চালু ছিল ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এবং এই সময় পর্যন্ত স্পেনের ক্লাবগুলো চেষ্টা চালিয়ে গেছে দলের শক্তিমত্তা বৃদ্ধি করার। যদিও লিগের প্রধান তিন দল একদম শেষ সময়ে সেভাবে কোনো ট্রান্সফার করেনি। শুধু লিগ তালিকার নিচের দিকে থাকা কিছু ক্লাব ট্রান্সফার করেছে। তাই দেখে নেওয়া যাক, এবারের গ্রীষ্মকালীন দলবদল শেষে স্পেনের লা লিগার মুখ্য ক্লাবগুলোর শক্তিমত্তা কেমন হলো।
রিয়াল মাদ্রিদ
তাদের প্রিয় জিজু আবার মাদ্রিদে ফিরেছে, এ খবর বর্তমানে বেশ পুরনো। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বিদায়ের পর তাদের একাদশে একজন তারকা খেলোয়াড়ের প্রয়োজন ছিল। কয়েকবারের প্রচেষ্টায় সেই শূন্যস্থানে মাদ্রিদ এনেছে বেলজিয়ান সুপারস্টার এডেন হ্যাজার্ডকে। হ্যাজার্ড যে বিশ্বসেরাদের একজন, তা নিয়ে কোনো দ্বিধা নেই। লস ব্লাংকোসদের একাদশে প্রয়োজন ছিল একজন সুপারস্টারের, মাদ্রিদ সে প্রয়োজনকে মিটিয়েছে।
একমাত্র স্ট্রাইকার করিম বেনজেমাও প্রায় ফুরিয়ে গেছেন। তার পজিশনে নতুন সংযোজন সার্বিয়ান তরুণ লুকা ইয়োভিচ। লেফটব্যাকে মার্সেলোনার নতুন প্রতিদ্বন্দ্বী ফারলান্ড মেন্ডি ও রক্ষণে এডার মিলিতাও। তো, এটা পরিষ্কার, মাদ্রিদের যে পজিশনে খেলোয়াড় দরকার ছিল, তা তারা পূরণ করেছে।
কিন্ত এই কয়েকজন খেলোয়াড় কি যথেষ্ট? ইয়োভিচ, মেন্ডি ও মিলিতাও, কেউই পরিক্ষিত নন। স্পেনের আবহাওয়ার সাথে মিলিয়ে নিতেও তাদের বেশ সময় লাগবে। আর আদৌ তারা প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে কি না, তা সময় বলে দেবে।
এদের বাইরে যে পজিশনে খেলোয়াড় রিয়াল মাদ্রিদের প্রয়োজন ছিল, সে পজিশন নিয়ে তারা সেভাবে ভাবেনি। মধ্যমাঠে ক্যাসেমিরো অদ্বিতীয়। কিন্তু মদ্রিচ ও ক্রুস বেশ কয়েক মৌসুম ধরেই ফর্মের সাথে যুদ্ধ করছেন। অথচ এই পজিশনে খেলার মতো কোনো খেলোয়াড় কেনেনি রিয়াল মাদ্রিদ। উল্টে দলে রেখেছে হামেস রদ্রিগেজ ও ইসকো আলারকনকে, যারা ঠিক মধ্যমাঠে খেলার মতো খেলোয়াড় নন।
লা লিগায় নতুন মৌসুমে যে তিন ম্যাচ হয়েছে, তাতে তেমন সুবিধা করতে পারেননি মেন্ডি ও ইয়োভিচরা। হ্যাজার্ড এখনও মাঠে নামতে পারেননি ইনজুরির কবলে পড়ে। হামেস ও ইসকোকে খেলানোর জন্যও জিদান তার ট্যাকটিক্স ও ফর্মেশনে আমূল পরিবর্তন এনেছেন। যদিও ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে মূল দলও তেমন সুবিধা করতে পারেনি, আসার বাণী শোনাতেও পারেননি হামেস বা ইসকো। দলকে যতটুকু টানছেন, সেটা তাও পুরনো কাণ্ডারি বেল আর বেনজেমা।
হ্যাজার্ড দলে ফিরলে হয়তো দৃশ্যপটে পরিবর্তন আসবে। ধীরে ধীরে মাঠে ফিরবে নতুন সাইনিংয়েরা। তবে ফিরে আসার প্রক্রিয়া যদি বেশি ধীরগতির হয়, তবে আবারও সম্পূর্ণ মৌসুম হারিয়ে ফেলতে পারে রিয়াল মাদ্রিদ। কারণ গ্যালাকটিকো গড়ে তুললেই যে সাফল্য ধরা দেয় না, তা এর আগে হাতেনাতে টের পেয়েছে ‘লস ব্লাংকোস’রা।
বার্সেলোনা
দলবদলের এ মৌসুমে বার্সেলোনা বেশ দারুণ একটি নাটক রচনা করল, যদিও তাতে কাতালানদের তেমন লাভ হয়নি। বেশ কয়েকবারের প্রচেষ্টার পরও নেইমারকে পুনরায় ক্যাম্প ন্যুতে ফিরিয়ে আসতে পারেনি কাতালান ক্লাবটি। পিএসজিকে দেওয়া বেশ কয়েকটি প্রস্তাবে তারা জুড়ে দিয়েছিল দেমবেলে-রাকিটিচের নাম। তাই নেইমার আসতে ব্যর্থ হলেও দলে থাকা খেলোয়াড়দের চটিয়ে দিয়েছে বার্সেলোনা।
তবে নেইমার নাটক ছাড়া দলবদলের সময়টা বেশ কেটেছে তাদের। মধ্যমাঠে সার্জিও বুসকেটসের সময় প্রায় ফুরিয়ে এসেছে, তাই দলে প্রয়োজন ছিল তার উত্তরসূরীকে। বার্সেলোনাও ভুল করেনি, বুসকেটসের উত্তরসূরী হিসেবে এনেছে নেদারল্যান্ডের মিডফিল্ডার ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংকে। গত মৌসুমে কাতালানদের সমস্যা ছিল লেফটব্যাক পজিশনে, পুরো একটি মৌসুম টানা খেলার ধকল সামলাতে পারেননি জর্ডি আলবা। তাই মৌসুমের শেষের দিকে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তার ফর্মহীনতা প্রকাশ পেয়ে যায়। তাই আলবার বিকল্প হিসেবে রিয়াল বেটিস থেকে বার্সেলোনা কিনেছে জুনিয়র ফিরপোকে,যে কি না মৌসুমে কম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নেমে আলবাকে সাহায্য করবে তার ফর্ম ও ফিটনেস ধরে রাখতে।
তবে এ মৌসুমের সবথেকে বড় চমক ছিল আতোঁয়া গ্রিজমানকে কেনা। নেইমার বার্সেলোনা ছাড়ার পর তারা উসমান দেমবেলেকে কিনেছিল তার পজিশনে। কিন্তু তিন মৌসুম সুযোগ পেলেও দেমবেলে নেইমারের শূন্যস্থান পূরণ করতে পারেননি। তাই ম্যালকমকে বিক্রি করে দিয়ে বার্সেলোনার আক্রমণের নতুন সংযোজন ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা গ্রিজমান, যিনি এক মৌসুমে মেসির সাথে পাল্লা দিয়ে গোল করার ক্ষমতা রাখেন।
এছাড়াও বার্সেলোনা ‘বি’ দল থেকে মূল দলে খেলার সুযোগ পেয়েছেন রাইটব্যাক মুসা ওয়াগে ও স্ট্রাইকার কার্লোস পেরেজ। মেসি ও সুয়ারেজের ইনজুরির কারণে মৌসুমের শুরুর দিকের ম্যাচে পেরেজ আরম্ভ করলেও বার্সেলোনা তেমন সাফল্য পায়নি। প্রথম তিন ম্যাচে জিততে পেরেছে মাত্র এক ম্যাচ। তাই গুরুত্বপূর্ণ কিছু দলবদল করার পরও বার্সেলোনা মেসি ছাড়া যে বরাবরই অচল, তা নিয়তি আবার বুঝিয়ে দিল।
মেসি ও সুয়ারেজ ইনজুরি থেকে ফিরে হয়তো আক্রমণের হাল ধরবেন। ভালভার্দে নিজেও লা লিগার সাথে যথেষ্ট মানানসই। লিগ কীভাবে জেতাতে হয়, তা খুব ভালোভাবে জানলেও ভালভার্দে চ্যাম্পিয়নস লিগে ব্যর্থ। এবারও কি তার পুনরাবৃত্তি হতে চলছে?
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ
সদ্য শেষ হওয়া চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ১৬’র ম্যাচে জুভেন্টাসের মাঠে রোনালদোর অতিমানবীয় পারফরম্যান্সের সামনে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের লজ্জাজনক হার। তারপর শুরু হলো ক্লাব থেকে বিদায়ের পালা। গডিন, ফেলিপে লুইজ, লুকাস হার্নান্দেজ থেকে রদ্রি এবং গ্রিজমান, সবাই দল ছেড়ে পাড়ি জমালেন বিভিন্ন ক্লাবে। এই অবস্থা দেখে অনেকে ভেবেছিল, সিমিওনের হাত ধরে যে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের উত্থান হয়েছিল, তার শেষের শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু ট্রান্সফার মার্কেটে সরব থেকে তা আর হতে দেয়নি ক্লাবটি।
তারা যেমন খেলোয়াড় বিক্রি করেছে, সেই বিক্রিত অর্থ দিয়ে সেই পজিশনেই গুরুত্বপূর্ণ, অথচ আনকোরা সব খেলোয়াড় দলে ভিড়িয়েছে। প্রথমে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে রদ্রি ম্যানসিটিতে চলে যাওয়ায় সে পজিশনে অ্যাটলেটিকো কিনেছে মার্কোস লরেন্তেকে। গত মৌসুমে লা লিগায় অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার মারিও হেরমেসোকে আর ফেলিপেকে সস্তাতে পেয়েছে তারা। আর লুকাস হার্নান্দেজর মতো একজন খেলোয়াড়ের শূন্যতা পূরণ করেছে রেনান লদি নামক এক অখ্যাত ব্রাজিলিয়ানকে দিয়ে, যিনি মৌসুমের শুরুতে প্রত্যাশামাফিক পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে নজর কেড়েছেন।
গ্রিজমানকে বার্সেলোনায় কাছে বিক্রিত অর্থ তারা খরচ করেছে পর্তুগীজ এক তরুণ তুর্কিকে। এরকম তরুণের পেছনে বিরাট অর্থ খরচ করা যে ভুল ছিল না, তা জোয়াও ফেলিক্স লা লিগার মাত্র ৩ ম্যাচেই প্রমাণ করে ফেলেছেন।
গ্রিজমান, লুকাসদের নিয়ে অ্যাটলেটিকো যে যুগের শুরু করেছিল, সেটা বদলে লদি, হেরমেসো ও ফেলিক্সদের নিয়ে সিমিওনে আরেক আনকোরা যুগের পত্তন করলেন। এবং এদের নিয়ে যে সিমিওনে বহুদূর যাবেন, তা প্রি-সিজন এবং লা লিগার প্রথম ম্যাচগুলো দেখেই বোঝা যায়। তাই এবার শুধু বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ শুধু নয়, সবকিছু ঠিকমত চললে এবারের লা লিগা হবে তিন সমান শক্তির লড়াই।
সেভিয়া
বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ ও অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের পর লা লিগায় চতুর্থ শক্তিশালী দল বলা যায় সেভিয়াকে। যদিও ইতিহাস ও শক্তিমত্তায় সেভিয়া বাকি তিন ক্লাব থেকে ঢের পিছিয়ে। তবে এই সেভিয়া টানা তিনবার ইউরোপা জিতে কয়েক মৌসুম আগে বেশ নাম কুড়িয়েছিল। তারপর মাঝের কয়েক মৌসুম আর কোনো প্রতিযোগিতায় সুবিধা করতে পারেনি তারা।
গত কয়েক মৌসুমে তারা তাদের সেরা খেলোয়াড়গুলো হারিয়েছে। কিন্তু তাদের বদলে নতুন খেলোয়াড় সেভাবে দলে ভেড়াতে পারেনি। এবারও একাদশের প্রথম পছন্দের বেশি কিছু খেলোয়াড় সেভিয়া ছেড়েছেন। তবে পার্থক্য হলো, শূন্যস্থান পূরণ করতে পেরেছে তারা। ওয়াসিম বেন ইয়েদার, পাবলো সারাবিয়া, লুইস মুরিয়েল ও কুইসি প্রোমেসকে বিক্রি করে বেশ ভালো অর্থ পেয়েছিল সেভিয়া। এছাড়াও কয়েকজনকে লোনে পাঠিয়ে ও অপ্রয়োজনীয় খেলোয়াড় বিক্রি করে নতুনভাবে দল গঠনের প্রথম ধাপে এগিয়েছিল তারা।
ধারে আন্দ্রে সিলভা ও বেন ইয়েদারের বিদায়ের পর স্ট্রাইকার পজিশনে সেভিয়া কিনেছে লুক ডি ইয়ং ও হাভিয়ের হার্নান্দেজকে। নতুন উইঙ্গার রনি লোপেজ ও লুকাস অকোম্পোসকেও দলে ভিড়িয়েছে তারা। এছাড়াও মধ্যমাঠ, রক্ষণ ও নতুন গোলরক্ষক হিসেবে প্রায় ১১ জনের মতো নতুন খেলোয়াড় এবার সেভিয়া দলে।
তাই হুয়ান লোপেতেগির নতুন সেভিয়ার সাথে গত মৌসুমের সেভিয়ার কোনো মিল নেই। ৪-৩-৩ ফর্মেশনে নতুন মৌসুমে এখনও কোনো ম্যাচ হারেনি তারা। আদতে লিগ জেতা জন্য প্রায় অসম্ভব। তবে লা লিগায় চতুর্থ হয়ে শেষ করার ক্ষমতা এবার তাদের আছে। আর এবার সেভিয়া ইউরোপা লিগ খেলবে, এবং তাদের লড়াইও শুরু হবে তুলনামূলক সহজ গ্রুপ থেকে। তাই আশা করা যায়, লোপেতেগির অধীনে একদম ভরাডুবির মৌসুম যাবে না স্প্যানিশ ক্লাবটির।
ভ্যালেন্সিয়া
দলের অবস্থা খুব দুর্দান্ত নয় তাদের। উঠতি যে কয়জন ফুটবলার তাদের ছিল, তারাও বিভিন্ন সময়ে পাড়ি জমিয়েছেন ইউরোপের বড় ক্লাবে। কিন্তু মার্চেলিনহোর অধীনে বর্ষীয়ান কিছু ফুটবলার নিয়ে গত মৌসুমে চমক দেখায় দলটি। লিগে চতুর্থ হবার পাশাপাশি জায়গা করে নেয় চ্যাম্পিয়নস লিগের মূলমঞ্চেও।
গত মৌসুমে তাদের আক্রমণভাগ সচল রেখেছিলেন রদ্রিগো ও সান্তি মিনা। মাঝমাঠ থেকে তাদের বলের যোগান দিতেন দানি পারেহো ও কার্লোস সোল্যার। তবে এবার সান্তি মিনা, রুবেন ভেযো, নেতো মুরারা ও সিমোনে জাজাকে বিক্রি করে ভিড়িয়েছে বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা তরুণ স্ট্রাইকার মাক্সিমিলিয়ানো গোমেজ, বার্সেলোনার দ্বিতীয় পছন্দের গোলরক্ষক সিলেসেন ও ডিফেন্ডার ইলিয়াকিম মাঙ্গালাকে। যদিও রাইটব্যাকে নতুন আরেকজন এসেছেন, স্পোর্টিং সিপি থেকে থিয়েরি কোরেইরা।
মার্চেলিনহো সাধারণত ৪-৪-২ ফর্মেশন ব্যবহার করেন। আক্রমণভাগের দায়িত্বে গোমেজ ও রদ্রিগো। আর মধ্যমাঠে ভরসা পারেহো, ফ্রান্সিসকো ককলান। যদিও গোলরক্ষণে সিলেসেনকে রেখে গ্যারাই আর দিয়াখবের রক্ষণও খারাপ না। তাই লা লিগার চতুর্থ পজিশনের জন্য সেভিয়ার সাথে ভালোমতোই যুদ্ধ হবে ভ্যালেন্সিয়ার। আর চ্যাম্পিয়নস লিগে শেষ ১৬-তে পৌঁছাতে পারলে তা হবে তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য।
তবে গত মৌসুমের ভ্যালেন্সিয়ার উত্থান ও বিগত দুই মৌসুম ধরে কোচ এই দলটির ভাবমূর্তির পরিবর্তন ঘটিয়েছিল। নতুন মৌসুমের ৩টি ম্যাচে আশানরূপ পারফরম্যান্স না হবার কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়। যদিও মার্চেলিনহোকে বিদায় করার প্রধান কারণ, তার সাথে ভ্যালেন্সিয়ার সভাপতির শীতল সম্পর্ক চলছিল।
ভ্যালেন্সিয়ার নতুন কোচ অ্যালবার্ট সেলাদেস। কোনো বড় দলকে কোচিং করাননি তিনি। ছিলেন বিশ্বকাপে স্পেনের সহকারী কোচ হিসেবে। যদিও স্পেনের অনুর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে তার কোচিং ইতিহাস নেহায়েত খারাপ নয়। লা লিগায় তার অভিষেক অবশ্য হয়েছে খারাপভাবে। প্রথম ম্যাচেই বার্সেলোনার কাছে বিধ্বস্ত হয় তার দল।
সেল্টা ভিগো
মৌসুমের শুরুতে সেল্টা ভিগো তাদের সেরা স্ট্রাইকারকে হারিয়েছে। তবে গোমেজকে ভ্যালেন্সিয়াতে বিক্রি করে দিলেও তারা সান্তি মিনাকে দলে নিয়ে এসেছে, যেখানে তিনি গত মৌসুমে ভ্যালেন্সিয়ার সেরা খেলোয়াড়দের একজন ছিলেন। তাই ইয়াগো আসপাসের সঙ্গী হিসেবে সান্তি মিনা সেল্টা ভিগোর আক্রমণভাগের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠবেন।
মধ্যমাঠে তাদের নতুন দুই সংযোজন ডেনিস সুয়ারেজ ও রাফিনহা আলকানতারা। রাফিনহাকে লোনে আনলেও স্প্যানিশ প্লে-মেকার ডেনিসকে বার্সেলোনা থেকে পাকাপাকিভাবে কিনে নিয়েছে মৌসুমের শুরুতে। তবে অল্প কয়েকজন খেলোয়াড় কিনে নতুন মৌসুম শুরু করার পরও প্রথমেই চমক দেখিয়েছে তারা। নিজেদের মাঠে তাদের বিস্তর আধিপত্যের উদাহরণ আছে। তবে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে হার দিয়ে শুরু করলেও সেল্টা ভিগো রুখে দিয়েছে সেভিয়া ও ভ্যালেন্সিয়ার মতো তুলনামূলক শক্তিশালী দলকে। গতবার কোনোমতে রেলিগেশন জোন পার করা সেল্টা ভিগো এবার প্রত্যাশামাফিক পারফরম্যান্স ধরে রাখলে আগামী মৌসুমে ইউরোপা খেলার সুযোগ পেয়ে যেতে পারে।
রিয়াল বেটিস
মধ্যমসারির ক্লাব হয়ে রিয়াল বেটিস এবার বড়সড় চমকের সৃষ্টি করেছে। পিএসজি থেকে কেনা আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার জিওভানি লো সেলসো এক মৌসুমে ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোর চোখে পড়ে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব টটেনহাম হটস্পার লোনে তাকে দলে ভেড়ায় এবং চুক্তি অনুযায়ী পরবর্তী মৌসুমে লো সেলসো হবেন স্পার্সদের স্থায়ী খেলোয়াড়। এই তারকাকে বিক্রি করে বেশ ভালো পরিমাণ অর্থ পেয়েছিল তারা, যদিও ফরাসি মিডফিল্ডার নাবিল ফেকিরকে কিনতে সে পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হয়নি তাদের। আর নাবিল ফেকিরের প্রতিভা আর দক্ষতা নিয়েও দ্বিধা থাকার কথা নয়।
ফরোয়ার্ড পজিশনে তাদের আরেকটি সেরা দলবদল হলো, এসপানিওল থেকে বোর্হা ইগলেসিয়াস। স্প্যানিশ এই ফরোয়ার্ড গত মৌসুমে ৩৭ ম্যাচে ১৭ গোল করেছেন। নতুন মৌসুমে বেটিসের হয়ে একই ফর্ম ধরে রাখতে সক্ষম হলে আক্রমণভাগ নিয়ে আর চিন্তা থাকবে না।
এছাড়াও বেটিস উইংগার জুয়ানমি ও লেফটব্যাক অ্যালেক্স মরেনোকে বেশ সস্তায় পেয়েছে। তবে এ মৌসুমে তাদের প্রধান ভুল, তাদের সেরা তারকাদের ধরে রাখতে না পারা। যদিও লো সেলসোর পর জুনিয়র ফিরপো ও পাও লোপেজকে উপযুক্ত মূল্যে বিক্রি করেছে রিয়াল বেটিস।
ফিরপো, লোপেজ, লো সেলসো ও সার্জিও ক্যানালেসকে নিয়ে প্রাক্তন কোচ সেতিয়েন যে আশা দেখিয়েছিলেন, তা বেশিদিন টেকেনি। নতুন কোচ রুবি উচ্চমানের কোনো ট্যাকটিশিয়ান নন। তবে তার লা লিগায় অভিজ্ঞতা কাজে দেবে বলে আশা করাই যায়।
গেতাফে
সেল্টা ভিগো, রিয়াল বেটিস বা সেভিয়াকে পেছনে ফেলে অপ্রত্যাশিতভাবে লিগে পঞ্চম হয়েছিল গেতাফে। পেপে বোর্দালাসের অধীনে হোর্হে মলিনা, জেইমি মাতা ও আনহেল রদ্রিগেজের উপর ভর করে গতবার লিগে দুর্দান্ত খেলেছিলেন তারা। যদিও এরা সবাই ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে। প্রতি মৌসুমে প্রত্যাশামাফিক পারফরম্যান্স তাদের কাছ থেকে আশা করা যায় না।
আর এ মৌসুমে লোনে উইঙ্গার কেনেডি ও লেফটব্যাক কুকুরেয়া ছাড়া তেমন গুরুত্বপূর্ণ ট্রান্সফার করতে পারেনি তারা। তাই হয়তো গতবারের আকস্মিক সাফল্য এবার আর হচ্ছে না। মৌসুমের প্রথম তিন ম্যাচে জয় পায়নি তারা, যদিও ড্র করেছে দুইটি ম্যাচেই। হয়তো তালিকার প্রথম দশে থেকে কোনোক্রমে মৌসুম শেষ করতে পারবে গেতাফে।
এছাড়াও, তালিকার সেরা দশে লড়ে যাবার মতো দলগুলোর মধ্যে অন্যতম অ্যাটলেটিক ক্লাব, ভিয়ারিয়াল, এসপানিওল ও রিয়াল সোসিয়েদাদ। এই ক্লাবগুলো দলবদলের মৌসুমে সেভাবে সক্রিয় না থাকলেও পুরনো দল নিয়েই নতুন মৌসুম শুরু করতে যাচ্ছে। যার ভেতর অ্যাটলেটিক ক্লাব মৌসুম শুরু করেছে বার্সেলোনাকে নিজেদের মাঠে হারিয়ে।
বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ বা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ বাদে বাকি দলগুলো চ্যাম্পিয়নস লিগ বা ইউরোপা লিগের মঞ্চে ত্রাস না ছড়াতে পারলেও লিগের ম্যাচে এসব দলের বিপক্ষেই বড় দলগুলো হোঁচট খায়। যেমন, চলতি মৌসুম শুরু হতে না হতেই ভিয়ারিয়ালের মাঠে পয়েন্ট হারিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। রিয়াল ভ্যালাদোলিদের মতো ছোট দলও নিজেদের মাঠে রুখে দিয়েছে জিদান বাহিনীকে। বার্সেলোনাও ওসাসুনার মাঠে ড্র করেছে, আর অ্যাটলেটিকো ক্লাবের মাঠে গিয়ে তো প্রথম ম্যাচে হারের তিক্ত স্বাদই নিয়ে ফিরেছে। আর রিয়াল সোসিয়েদাদ, ভিয়ারিয়াল অথবা অ্যাটলেটিক ক্লাবের মাঠ প্রত্যেক দলের জন্য দুর্গ। তাই, আদতে তিন ক্লাবের ম্যাড়মেড়ে লড়াই মনে হলেও বাকি মধ্যমসারির মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইটা কিন্তু বেশ জমজমাটই হবে।