“Please don’t call me arrogant, but I am a European champion and I am a Special One.”
২০০৪ সালে পোর্তোকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতানোর পর ধনকুবের রোমান আব্রামোভিচের ডাকে সাড়া দিয়ে চেলসির ম্যানেজার হয়ে আসেন হোসে মরিনহো, এবং ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই নিজেকে এভাবে পরিচয় দেন তিনি। এবং ফুটবল বিশ্ব পেয়ে যায় একজন স্বঘোষিত ‘স্পেশাল ওয়ান’কে।
এরও অনেকদিন আগেকার কথা। মরিনহো তখন সবে নয় বছরের এক বালক। ক্রিসমাসের দিন দুপুরে পরিবারের সবাই মিলে খেতে বসেছিলেন তারা। এক পর্যায়ে তাদের বাসার টেলিফোনটি বেজে ওঠে, এবং তার বাবা উঠে যান ফোন ধরতে। অপরপ্রান্ত থেকে তাকে জানানো হয়, স্থানীয় ক্লাবের ম্যানেজার পদ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন তিনি। মুহূর্তের মধ্যে সুন্দর ক্রিসমাসের দুপুরটা গোটা পরিবারের জন্য বিভীষিকায় রূপ নেয়। খাওয়াটাও আর শেষ করা হয় না।
উপরের দুইটি ঘটনার মধ্যে সাদৃশ্য কেবল এটুকুই নয় যে দুইটির সাথেই মরিনহো জড়িত। সেই শৈশবেই মরিনহো তার বাবার অভিজ্ঞতা মারফত জেনে গিয়েছিলেন, ফুটবলে যেকোনো কিছুই সম্ভব। এমনকি এখানে একজন মানুষ ক্রিসমাসের দিনেও তার চাকরি হারাতে পারে। এই শিক্ষার সাথে বর্তমানের যোগসূত্র খুঁজে বের করতে পারি আমরা। ফুটবলে সবই সম্ভব, এমনকি সম্ভব ‘স্পেশাল ওয়ান’-এর বহিষ্কৃত হওয়াও।
আর অদ্ভুত ব্যাপারটা কী, জানেন? সর্বশেষ দুইবারই ‘স্পেশাল ওয়ান’ বহিষ্কৃত হয়েছেন ডিসেম্বর মাসেই, ক্রিসমাসের মাত্র কিছুদিন আগে। ২০১৫ সালে চেলসি তাকে বহিষ্কার করে ১৭ ডিসেম্বর, আর এবার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড তাকে বহিষ্কার করলো ১৮ ডিসেম্বর।
বলাই বাহুল্য, ক্রিসমাসের সাথে মরিনহোর বৈরিতা আজন্মের। তারপরও সিলভার লাইনিং যদি কিছু থাকে, পরিবারের সাথে এবারের ক্রিসমাসটা বেশ ভালোই কাটবে তার। অন্তত ‘যেকোনো মুহূর্তে ছাঁটাই হতে পারি ‘এমন আতঙ্কের চেয়ে ‘ছাঁটাই হয়ে গেছি’ নিশ্চিত হয়ে পরিবারের সাথে কিছু নির্ভার সময় কাটানোটাই কি শ্রেয় নয়?
ক্রিসমাসের ছুটি মরিনহো পরিবারের সাথে মনের মতো করে কাটান, এমনটাই আমাদের সকলের কাম্য। তবে ক্রিসমাস শেষে যখন ক্যালেন্ডারের পাতা উলটে নতুন একটি বছরের আগমন ঘটবে, নিজের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজাও মরিনহোর জন্য অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়বে।
মরিনহোর সময় কি তাহলে শেষ?
ওল্ড ট্রাফোর্ডে থাকাকালীন একটি অভিযোগ নিয়মিতই তাড়া করে বেড়িয়েছে মরিনহোকে, তা হলো – তার খেলার ধরণ আধুনিক ফুটবলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ম্যানচেস্টার সিটির পেপ গার্দিওলা, লিভারপুলের জার্গেন ক্লপ কিংবা টটেনহ্যামের মাউরিসিও পচেত্তিনো যেখানে ইতিবাচক, আগ্রাসী ও দৃষ্টিনন্দন ফুটবল খেলে দর্শকদের মন জয় করা থেকে শুরু করে সাফল্য লাভ সবক্ষেত্রেই এগিয়ে ছিলেন, সেখানে মরিনহোর চিরাচরিত রক্ষণশীল ঘরানার ফুটবল ইদানিং তাকে তেমন কোনো সুখবর দিতে সমর্থ হচ্ছিল না।
রেড ডেভিলদের ম্যানেজার হিসেবে মরিনহোর ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ক্যারিয়ারের কফিনে শেষ পেরেক হয়ে আসে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিভারপুলের কাছে ৩-১ ব্যবধানের হার। চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই নিদারুণ অবস্থার ভিতর দিয়ে যাচ্ছিলো তারা। ১৭ ম্যাচ শেষে তারা আছে টেবিলের ষষ্ঠ অবস্থানে, শীর্ষে থাকা লিভারপুলের চেয়ে পুরো ১৯ পয়েন্ট পেছনে। আরও ভয়ংকর ব্যাপার হলো, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার ন্যূনতম যোগ্যতা হিসেবে যেখানে সেরা চারের ভিতর থাকতে হয়, সেই অবস্থান থেকেও ১১ পয়েন্ট পেছনে তারা। লিভারপুলের সাথে তাদের যে ব্যবধান, এর চেয়ে রেলিগেশন জোনের সাথে তাদের ব্যবধান আরও কম!
এমন নয় যে মরিনহো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে কোনো সাফল্যই পাননি। বরং নিজের প্রথম মৌসুমেই তিনি জিতেছিলেন ইংলিশ লিগ কাপ ও ইউরোপা লিগ। দ্বিতীয় মৌসুমে যদিও কোনো ট্রফি তিনি ঘরে তুলতে পারেননি, তবে শেষ করেছিলেন লিগের দ্বিতীয় হিসেবে, যা কিনা ফার্গুসন-পরবর্তী যুগে প্রিমিয়ার লিগে রেড ডেভিলদের সর্বোচ্চ অর্জন।
কিন্তু তৃতীয় মৌসুমে এসেই যেন একেবারে খেই হারিয়ে ফেলেন তিনি। অবস্থা এতটাই শোচনীয় হয়ে পড়ে যে, চিরকালের উচ্চাকাঙ্ক্ষী, আশাবাদী ও সাফল্য-বুভুক্ষু মরিনহো নিজের লক্ষ্যের লেভেল নামিয়ে আনেন তার নিজস্ব স্ট্যান্ডার্ডের চেয়েও অনেক নিচে। গত মাসেই তিনি বলেছিলেন, বছর শেষে লিগের সেরা চারে থাকতে পারলেই খুশি থাকবেন তিনি!
মরিনহোর মতো একজন সর্বজয়ী কোচ যখন সামান্য ঘরোয়া লিগের সেরা চারে উত্তীর্ণ হওয়াকেই ‘অর্জন’ বলে মনে করেন, তখন প্রশ্ন উঠতে বাধ্য, শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে তার সময় কি তবে শেষ? তিনি কি হারিয়ে ফেলেছেন তার ‘মিডাস টাচ’?
ইগোই কি কাল হয়েছে মরিনহোর?
ফুটবল কোনো একক খেলা নয়, এটি একটি দলীয় খেলা। তাই এই খেলায় যখন কেউ বাদবাকি সবাইকে ছাপিয়ে একাই একনায়ক হয়ে উঠতে চায়, তার ফল কখনোই ভালো হয় না। ম্যানেজার হিসেবে নিজের শেষ তিন ক্লাবে গিয়ে এই সত্য হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন মরিনহো।
রিয়াল মাদ্রিদের মতো বিশ্বসেরা ক্লাবে, বিশ্বসেরা খেলোয়াড়দের ম্যানেজ করতে গিয়ে বরং ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন তিনি। চক্ষুশূলে পরিণত হন অনেক সিনিয়র খেলোয়াড়েরই। ফলে সেখানে বেশিদিন টিকতে পারেননি তিনি।
তার মেয়াদ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি পুরনো ক্লাব চেলসিতে গিয়েও। একসময় যেই ক্লাবের ট্রফি কেস ভরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি, দ্বিতীয় দফায় সেই ক্লাবে গিয়েই নিজেকে কেমন যেন আউটসাইডার হিসেবে আবিষ্কার করেন তিনি। অবশ্য তাতে অন্যদের যতটা না দায়, তার চেয়ে তার দায় বহুগুণে বেশি। তার ব্যক্তিগত ইগোর কারণেই অনেক খেলোয়াড়ের সাথেই বিরোধ সৃষ্টি হয় তার। ড্রেসিংরুমে তার বিরোধী একটি শিবির গজিয়ে যায়। তাকে যতজন চায়, তার চেয়ে বেশিজনই চায় না। কারণ একটিই – তার নিজেকে সর্বেসর্বা ভাবা, কাউকে তোয়াক্কা না করা। এ কারণেই চেলসিতে দ্বিতীয় মেয়াদে তিনটি মৌসুম সম্পন্ন করতে পারেননি তিনি।
একই চিত্রের পুনরাবৃত্তি হয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে এসেও। এখানেও নিজেকে সর্বোচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে দলের স্বার্থ বেমালুম ভুলে যান তিনি। তাই তো শেষ তিন ম্যাচে দলের অন্যতম প্রধান অস্ত্র পল পগবাকে শুরুর একাদশেই রাখেন না তিনি। এমনকি লিভারপুলের বিপক্ষে হারের দিন পগবাকে বদলি খেলোয়াড় হিসেবেও নামাননি। এই সবই করেছেন পগবার প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে। তাই তো আমরা মরিনহোর বিদায়ে টুইটারে উদযাপন করতে দেখি ১১৬ মিলিয়ন ডলারে তুরিন থেকে ওল্ড ট্রাফোর্ডে আসা পগবাকে।
এছাড়াও প্রকাশ্যে মরিনহো সমালোচনা করেছেন দলের একাধিক খেলোয়াড়ের, যাদের মধ্যে রয়েছেন লুক শ’ ও অ্যান্থনি মার্শালও। এমনকি আড়াই বছরে ৪৭০ মিলিয়ন ডলার খরচের স্বাধীনতা পাওয়ার পরও তার সম্পর্কে অবনতি ঘটে এড উডওয়ার্ডের সাথেও, কারণ ক্লাবের বোর্ড তার ইচ্ছানুযায়ী একজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার এনে দিতে ব্যর্থ হয়েছে। অবশ্য এক্ষেত্রে মরিনহোর ক্ষোভের কারণ বোধগম্য; মরিনহো চলতি মৌসুমে ইতিমধ্যেই লিগে ২৯ গোল হজম করে ফেলেছে, যা গত গোটা মৌসুমের চেয়ে বেশি।
সব মিলিয়ে এটিও প্রমাণিত সত্য যে, সাম্প্রতিক সময়ে নিজের ইগোকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা মরিনহোর ব্যর্থতার পেছনে একটি বড় প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে।
সামনে কি অপেক্ষা করছে মরিনহোর জন্য?
খুব বেশিদিন যে মরিনহো বেকার বসে থাকবেন না, তা অনুমান করা কঠিন কিছু নয়। কিন্তু এখন বড় প্রশ্ন হলো, তার পরবর্তী গন্তব্য কী হতে চলেছে? এক্ষেত্রে মরিনহোর সামনে বেশ কিছু অপশন খোলা আছেঃ
- পর্তুগিজ জাতীয় দলের দায়িত্ব নিতে পারেন
- ছোট লিগের বড় দলে যোগ দিতে পারেন
- ইংল্যান্ডেই থাকতে পারেন
- স্পেনে বা ইতালিতে ফিরতে পারেন
জাতীয় দলের দায়িত্ব গ্রহণ : নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে পর্তুগিজ জাতীয় দলের দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন তিনি। পর্তুগাল যে কোচ হিসেবে তাকে লুফে নেবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মরিনহো কি পারবেন এত তাড়াতাড়ি ক্লাব ফুটবল ছেড়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলের সাথে মানিয়ে নিতে? সম্ভবত, না। কেননা ক্লাব ফুটবলে যেমন তিনি প্রতিদিন ফুটবল নিয়ে কাজ করে চলেন, আন্তর্জাতিক ফুটবলে সে সুযোগ তিনি পাবেন না। তার নিজের ভাষাতেই, আন্তর্জাতিক ফুটবলে মাসে একটি ম্যাচ হয়, আর দুই মাসে একটি ট্রেনিং সেশন! আর তাই তার লক্ষ্য হলো, কোচিং ক্যারিয়ারের একদম শেষ পর্যায়ে গিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে যোগ দেয়া। অন্য আরেকবার তিনি বলেছিলেন, পর্তুগাল জাতীয় দলের কোচ হিসেবেই ক্যারিয়ার শেষ করতে চান তিনি। যেহেতু তার বয়স কেবল ৫৫, তাই এত শীঘ্রই নিশ্চয়ই তিনি ফুটবলকে বিদায় বলার চিন্তাভাবনা করছেন না।
ছোট লিগের বড় দলে যোগদান : এখন পর্যন্ত চাইনিজ সুপার লিগে কোচিং করিয়েছেন ম্যানুয়েল পেলেগ্রিনি, লুই ফেলিপে স্কলারি, ফ্যাবিও ক্যাপেলো, ফ্যাবিও ক্যানাভারোর মতো নামজাদা ম্যানেজাররা। সেই তালিকায় যুক্ত হতে পারেন মরিনহোও। কিন্তু বলাই বাহুল্য, ইউরোপের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁঝ তিনি চীনের ছোট লিগে গিয়ে পাবেন না। সেক্ষেত্রে তিনি আকৃষ্ট হতে পারেন কেবল একটি কারণেই, আর তা হলো খুব বড় অংকের কোনো আর্থিক চুক্তি। সেখানকার একটি ক্লাব ইতিমধ্যেই মরিনহোকে নেয়ার জন্য দু’হাত খুলে বসে আছে। গুয়াংজো এভারগ্রান্দে সাত বছর পর এবার ব্যর্থ হয়েছে লিগ শিরোপা জিততে। বর্তমান কোচ ফ্যাবিও ক্যানাভারোও পারেননি বোর্ডকর্তাদের মন জয় করতে। তাই মরিনহোর পক্ষে খুবই সম্ভব সেখানে ক্যানাভারোর স্থলাভিষিক্ত হওয়া।
এছাড়া তিনি যেতে পারেন রাশিয়াতেও। সেখানকার জেনিত সেইন্ট পিটার্সবার্গ বা স্পার্তাক মস্কোতে তিনি নতুন যাত্রা শুরু করতেই পারেন। কিন্তু সমস্যা হলো, সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ান লিগের কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতিই হয়নি। সর্বশেষ তিন বছরে এ লিগের কোনো ক্লাব চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বেও উত্তীর্ণ হয়নি। সুতরাং ইউরোপের লিগগুলোর মধ্যে রাশিয়ান লিগ কোনোভাবেই মরিনহোর স্ট্যান্ডার্ডের সাথে যায় না।
ইংল্যান্ডেই থেকে যাওয়া : এই মুহূর্তে মরিনহোর পরিবার বাস করছে লন্ডনে। ইতিমধ্যেই তাদের নিয়ে পর্তুগাল, ইংল্যান্ড, ইতালি, স্পেন, এবং আরেক দফা ইংল্যান্ড ঘুরে ফেলেছেন তিনি। এবার পরিবার নিয়ে একটু থিতু হওয়ার আশা তিনি করতেই পারেন। সেক্ষেত্রে তার ইংল্যান্ডেই থেকে যেতে চাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কোনো শীর্ষস্থানীয় ইংলিশ ক্লাব কি তাকে পেতে চাইবে? তার খেলার ধরণ যে আর প্রিমিয়ার লিগের দ্রুতগতির ফুটবলের সাথে খাপ খায় না, সে প্রমাণ তো দৃশ্যমান। ফলে কোনো শীর্ষস্থানীয় ক্লাব তাকে নিযুক্ত করার ঝুঁকি এই মুহূর্তে অন্তত নিতে চাইবে কিনা, চিন্তার বিষয়। তবে মাঝারি মানের কোনো দল তাকে চাইতেই পারে। কিন্তু মরিনহোর যে ইগো, তাতে তিনি নিজে কি মাঝারি মানের কোনো দলের ম্যানেজার হওয়াটাকে সন্তোষজনক বলে মনে করবেন?
স্পেনে বা ইতালিতে প্রত্যাবর্তন : বিভিন্ন প্রতিবেদনে এমন খবর উঠে এসেছে যে, রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ নাকি মরিনহোকে ফিরে পেতে চান। ২০১০ সাল থেকে তিন বছর এই ক্লাবের সাথে কাটিয়েছেন তিনি, জিতেছেন লা লিগা ও কোপা দেল রে। কিন্তু দলের অনেক খেলোয়াড়ের সাথেই তার ঠিকঠাক বনিবনা হয়নি। বিশেষ করে ইকার ক্যাসিয়াস, সার্জিও রামোস ও মার্সেলোর সাথে তার বিরোধ সর্বজনবিদিত। এখন খেলার মাঠের পাশাপাশি ড্রেসিংরুমেও রিয়ালের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা রামোস। তার আপত্তি সত্ত্বেও পেরেজ মরিনহোকে নিয়োগ দেবেন কিনা, সেটিই দেখার বিষয়।
অপরদিকে মরিনহোর সম্ভাব্য অপর গন্তব্য হতে পারে ইন্টার মিলান। লুসিয়ানো স্পালেত্তির অধীনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। অপরদিকে স্যান সিরোতে দুই বছর থাকাকালীনই মরিনহো পৌঁছেছিলেন সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায়। এ ক্লাবের হয়ে তিনি দুইটি সিরি-আ, একটি কোপা ইতালিয়া ছাড়াও জিতেছিলেন একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা। সুতরাং ইন্টার মিলানের যেমন এখন মরিনহোকে দরকার, তেমনি মরিনহোর জন্যও নতুন কোনো ক্লাব কিংবা মাদ্রিদের চেয়ে মিলানই হতে পারে অধিক স্বস্তিদায়ক ঠিকানা।
শেষ প্রশ্ন : মরিনহো কি এখনও স্পেশাল ওয়ান?
“Of course. Did you never spend time reading the philosopher Hegel? He said, ‘The truth is in the whole. It’s always in the whole that you find the truth.”
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে প্রিমিয়ার লিগ না জিততে পারলেও কি তিনি একজন গ্রেট ম্যানেজার থাকবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে এভাবেই দার্শনিক হেগেলের উক্তি টেনে এনেছিলেন মরিনহো। এবং এর মাধ্যমে তার ব্যক্তিগত দর্শনও খুবই পরিষ্কার। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন তো কী হয়েছে, নিজেকে নিশ্চয়ই তিনি এখনও ‘স্পেশাল ওয়ান’-ই মনে করেন। এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি নিজেকে ‘স্পেশাল ওয়ান’ মনে করেন, আপনার-আমার তো এর বিপক্ষে কিছু বলার নেই। কারণ প্রথমেও এই খেতাব তাকে আমরা দিইনি, তিনি নিজেই নিজেকে দিয়েছিলেন!
চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/