২০০২ সালে ইউএস ওপেন ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আন্দ্রে আগাসিকে হারিয়ে পিট সাম্প্রাস যখন নিজের ১৪ তম গ্র্যান্ডস্লাম জেতেন, তখন সবার চোখ কপালে। ১৪টি গ্র্যান্ডস্লাম! এই রেকর্ড কি ভাঙা সম্ভব আদৌ? মাত্র ২৭ বছর বয়সে টেনিস ইতিহাসের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় ফেদেরার এই রেকর্ড ভাঙেন, এরপর ভাঙেন নাদাল। ২০১৮ সালে সেই ইউএস ওপেনেই সাম্প্রাসের ১৪ সংখ্যায় পৌঁছে গেলেন হার না মানা এক সার্ব, নোভাক জকোভিচ।
রজার ফেদেরার কে? সর্বকালের সেরা তকমা ছাড়াও খুব সংক্ষেপে বলা যায়, একটি প্রজন্মের কাছে টেনিসের সবকিছু তিনিই। এখনো ফেদেরার বাদ গেলে সেই টুর্নামেন্টের টিআরপি কমে যায়! এরপরেই আসে রাফায়েল নাদালের নাম। এক আজন্ম যোদ্ধা, যিনি সংখ্যাতাত্ত্বিকভাবে ফেদেরারের খুব কাছাকাছি। এই দুজনকে বলা হয় ‘জনতার চ্যাম্পিয়ন’। যে টার্ফেই খেলতে যান এই দুজন, জনতা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। কে কার সমর্থক তার ভেদাভেদ না করে এই দুজনকে মাঠে বা মাঠের বাইরে জনতা কুর্নিশ করতে থাকে। কিন্তু নোভাক জকোভিচ? না, তিনি কোনো ‘জনতার চ্যাম্পিয়ন’ না। অদ্ভুত আচরণের জন্য দুয়োও পান মাঝে মাঝে। টেনিস জগতে জনপ্রিয়তায় তিনি ফেদেরার-নাদালের সমকক্ষ নন, কিন্তু এই সার্বিয়ানই হয়ে দাঁড়িয়েছেন দুই মহারথীর সকল রেকর্ডের প্রতি এক হুমকি।
উত্থানপর্ব
জকোভিচের জন্ম যুগোস্লাভিয়ায়, তখনো সার্বিয়ার জন্ম হয়নি। র্যাকেটে হাতেখড়ি মাত্র ৬ বছর বয়সে। এরপর বয়সভিত্তিক পর্ব ধরে উঠে আসতে থাকেন। সবচেয়ে মজাদার তথ্য হলো, জুনিয়র পর্যায়ে জকোভিচের তেমন বলার মতো কোনো শিরোপাই নেই। জুনিয়র টেনিস থেকে পেশাদার টেনিসে যখন পা দেন ২০০৫ সালে, তখন রজার ফেদেরার তার সেরা সময় পার করছেন। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে কোয়ালিফায়ার পেরিয়ে মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন নোভাক। সেই পথে তিনি হারান ভাভরিংকা নামের এক সুইসকে।
প্রথম রাউন্ডেই নোভাক মুখোমুখি হন মারাত সাফিনের সাথে। পাত্তাই পাননি সেই টুর্নামেন্টের ভবিষ্যত চ্যাম্পিয়ন সাফিনের কাছে। সেবার ফ্রেঞ্চ ওপেন, উইম্বলডন আর ইউএস ওপেনেও বেশি দূর যাওয়া হয়নি তার। টেনিস খেলার সাথে ফুটবলের একটা বড় ফারাক হলো, ফুটবলে পেলে, এম্বাপ্পেরা ১৮ বছর বয়সেই মিরাকল দেখিয়ে দিতে পারেন, কিন্তু টেনিসে ঠিক তেমনটা না। অমিত প্রতিভার সাথে একটু অভিজ্ঞতাও দরকার হয়। ফেদেরার, সাম্প্রাস, আগাসিদের কেউই হঠাৎ করে এসেই গ্র্যান্ডস্লাম জিততে পারেননি। জকোভিচও সেই অভিজ্ঞতা অর্জনের সময়টাই কাটাচ্ছিলেন তখন।
কিন্তু কিছু ব্যতিক্রমও থাকে। ২০০৫ সালে মাত্র ১৯ বছরের নাদাল ফ্রেঞ্চ ওপেন জিতে নেন। প্রায় সমবয়েসী নোভাক তখনো পেশাদার সার্কিটে ধুঁকছেন। কোনো গ্র্যান্ডস্লামেই শুরুর দিকের বাঁধাই পার হতে পারছেন না। ২০০৬ সালের নোভাক হঠাৎ করেই বদলে যান ২০০৭ এ এসে। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ৪র্থ রাউন্ডে হেরে যান রজার ফেদেরারের কাছে। এরপর খ্যাতনামা মাস্টার্স ইন্ডিয়ান ওয়েলসের ফাইনালে ওঠেন, যেখানে নাদালের কাছে পরাজিত হন। টেনিসে ‘সানশাইন ডাবলস’ নামে একটা শব্দ আছে। মর্যাদাকর দুটো মাস্টার্স ইন্ডিয়ান ওয়েলস আর মিয়ামি ওপেন দিনকয়েক ব্যবধানে পরপর শুরু হয়। তখন দিনগুলো বেশ রৌদ্রোজ্জ্বল থাকে বিধায় এদের একসাথে এই নামে ডাকা হয়। সানশাইন ডাবলসের প্রথমটির ফাইনালে নাদালের কাছে হেরে গেলেও এর কয়েকদিন পরেই মিয়ামি ওপেনের কোয়ার্টারে নাদালকেই হারিয়ে দেন নোভাক, ওঠেন ফাইনালে। ক্যারিয়ারের প্রথম মাস্টার্স জিতে নেন সেখানেই।
সেবার ক্যারিয়ারের প্রথমবারের মতো উইম্বলডনের সেমিফাইনালে ওঠেন, কিন্তু নাদালের সাথে খেলার মাঝ পর্যায়ে চোটের জন্য খেলা ছেড়ে দেন। ফ্রেঞ্চ ওপেনেও সেমিফাইনালে ওঠেন, কিন্তু লাল মাটির সম্রাট নাদালের কাছে আবার হেরে যান। এছাড়াও ছোটখাট কিছু টুর্নামেন্ট জেতা শুরু করেন। আসল খেল দেখান রজার্স কাপ নামক মাস্টার্সে। কোয়ার্টার ফাইনালে র্যাংকিংয়ের ৩ এ থাকা রডিক, সেমি ফাইনালে ২ এ থাকা নাদাল আর ফাইনালে শীর্ষ বাছাই রজার ফেদেরারকে হারিয়ে পুরো টেনিস বিশ্বকে তার আগমন বার্তা জানান দেন। টেনিস লিজেন্ড বিয়ন বোর্গ তো বলেই দেন, “আমি খুব শীঘ্র ওর হাতে গ্র্যান্ডস্লাম দেখছি!” এরই কয়েকদিন পর বছরের শেষ গ্র্যান্ডস্লাম ইউএস ওপেনের ফাইনালে উঠে যান সবাইকে অবাক করে। সেখানে হেরে যান রজার ফেদেরারের কাছে। মাত্র এক বছর আগেও যিনি সেকেন্ড রাউন্ড পেরোতে গিয়ে ধুঁকতেন, সেই নোভাক পৃথিবীর সূর্যকে একবার পূর্ণ প্রদক্ষিণের আগেই নিজেকে নিয়ে যান টেনিসের সেরাদের কাতারে।
২০০৮ সালটা শুরু করেন ঠিক যেখান থেকে শেষ করেছিলেন আগের বছর। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ফাইনালে ওঠেন কোনো সেট না হেরে। সরাসরি সেটে হারান রজার ফেদেরারকে। ফাইনালে সোঙ্গাকে হারিয়ে বিয়ন বোর্গের কথাকে সত্য প্রমাণ করে জিতে নেন প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন এরপর থেকে তাকে দিয়েছে দু’হাত ভরে। এরপর ফ্রেঞ্চ ওপেনে উঠে যান সেমিতে, কিন্তু আবার সেখানে নাদালের কাছে পরাজয়। উইম্বলডনে সবাইকে চমকে দিয়ে বাদ পড়ে যান দ্বিতীয় রাউন্ডে। ইউএস ওপেনে আবার উঠে আসেন সেমি ফাইনালে, সামনে সেই ফেদেরার। ফেদেরার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের হারের প্রতিশোধ নেন নোভাককে হারিয়ে। মাস্টার্স ও অন্যান্য এটিপিতেও নোভাক হতে থাকেন ভালো রকমের ধারাবাহিক। জন্ম নেয় টেনিসের বিখ্যাত ‘বিগ থ্রি’র, ফেদেরার-নাদাল-জকোভিচ ত্রয়ীর আনুষ্ঠানিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার শুরু হয়।
সাফল্যের উর্ধক্রমে সাময়িক স্থবিরতা
২০০৯ থেকেই নোভাকের ক্যারিয়ারে খানিকটা স্থবিরতা আসে। টেনিসের সাফল্য বলতে গ্র্যান্ডস্লামগুলোর সাফল্যকেই মূলত বোঝানো হয়। আর সেই গ্র্যান্ডস্লামগুলোতেই নোভাক ব্যর্থ হতে থাকেন। নাদাল-ফেদেরারের আধিপত্য ও মারের উত্থান- সব মিলিয়ে দুই বছরে একবার ফাইনাল ছাড়া বলার মতো তেমন কিছু নেই তার। মাঠে হাস্যরসের জন্য ‘জোকার’ তকমা পেলেও তা নিয়ে অল্পবিস্তর সমালোচনাও হতে থাকে। টেনিস এলবো চোটের জন্যও ভুগতে থাকেন। সেই সময়ে নাদাল ছিলেন সবচেয়ে সফল। মাত্র ২৪ বছর বয়সে নাদালের অর্জন দেখে সবাই ধরেই নিয়েছিলেন যে, নাদাল খুব ভাল ব্যবধানেই রজারকে পেছনে ফেলবেন। কিন্তু স্প্যানিশ ম্যাটাডোর এসে ঠেকেন জোকোভিচের দেয়ালে! ২০১১ থেকে নোভাকের উর্ধমুখী যাত্রা শুরু। নোভাক আর রাফার বয়সের ব্যবধান ছিল মাত্র এক বছর। যে বয়সে নাদালের গ্র্যান্ডস্লাম ছিল ১১টি সেই সময়ে নোভাকের ছিল মাত্র ১টি। এর পরই নোভাক যুগ শুরু।
একচ্ছত্রাধিপত্যের শুরু
নোভাকের ২০১১ সালকে পিট সাম্প্রাস বলেছেন তার জীবদ্দশায় দেখা কোনো খেলোয়াড়ের এককভাবে সেরা বছর। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, উইম্বলডন আর ইউএস ওপেন সহ পাঁচটি মাস্টার্স জিতে নেন। কেবল ফ্রেঞ্চ ওপেনে ফেদেরারের কাছে হেরে যান সেমিতে। নাদাল, ফেদেরার, মারে যে-ই এসেছেন তার সামনে, হয়েছেন পরাস্ত। এরপর ২০১২ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনাল গ্র্যান্ডস্লাম ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা। ৫ ঘন্টা ৫৩ মিনিটের ম্যারাথনে নাদালকে ‘নাদাল-স্টাইল’ দিয়েই হারান। সাধারণত সবাই নাদালের ফোরহ্যান্ডকে সমীহ করে দুর্বল ব্যাকহ্যান্ডকেই নিশানা করে। সেই ম্যাচের আগবধি নোভাকও তা-ই করতেন। সেই ম্যাচে তিনি নাদালকে ফোরহ্যান্ডেই নিশানা করেন আর র্যালিগুলো বড় করতে থাকেন। শারীরিক সক্ষমতার চূড়ান্ত নিদর্শন নাদালকে শারীরিক শক্তিতেই হারান।
ডায়েটের আমূল পরিবর্তন নোভাককে শারীরিকভাবে করে তোলে আরো সমর্থ। আর সেই ম্যাচের পর মানসিকভাবে আর কখনো ব্যাকফুটে থাকতে হয়নি। ২০১২, ২০১৩ তে চারটি গ্র্যান্ডস্লামের তিনটিরই ফাইনালে ওঠেন তিনি। ২০১৩-তে অস্ট্রালিয়ান ওপেনে তার আধিপত্য বজায় রাখেন মারেকে হারিয়ে, যদিও উইম্বলডন ফাইনালে হারেন এই মারের কাছেই। ইউএস ওপেন ফাইনালে হেরে যান নাদালের কাছে।
২০১২ এর পরে ফর্মহীনতায় ভুগতে থাকা ফেদেরার যখন নিজেকে কিছুটা খুঁজে পেতে থাকেন, ঠিক সেই সময় জোকোভিচ তার পুনরায় গ্র্যান্ডস্লাম জেতার অপেক্ষাটা বাড়িয়ে দেন। ২০১৪ সালের উইম্বলডনের ফাইনালে ফেদেরারকে তার প্রিয় সার্ফেসে মহাকাব্যিক এক লড়াইয়ে হারিয়ে নিজের ২য় উইম্বলডন ট্রফিটি জিতে নেন। কিন্তু নাদালের কাছে বারবার ফ্রেঞ্চ ওপেনে পরাস্ত হয়েছেন নোভাক। তার সেরা সময়েও এই লাল দুর্গে হানা দিতে পারেননি তিনি। ২০১৫ সালে নাদালকে যখন জোকোভিচ হারান ফ্রেঞ্চ ওপেন কোয়ার্টার ফাইনালে, ভাবা হচ্ছিল এবার শেষপর্যন্ত আরাধ্য ট্রফিটি জিততে চলেছেন! কিন্তু ফাইনালে হেরে গেলেন ভাভরিংকার কাছে।
২০১৫ সালের উইম্বলডন ফাইনালে রজার ফেদেরারকে হারান। ২০১৫ সালের শেষ গ্র্যান্ডস্লাম ইউএস ওপেনের ফাইনালে আবার ফেদেরারকে হারিয়ে বছরের চারটি স্লামের মধ্যে ৩টিই জিতে নেন নোভাক। ২০১৬ সালেও তার জয়রথ বজায় রইলো। সেমি ফাইনালে ফেদেরার আর ফাইনালে মারেকে হারিয়ে রেকর্ড ৬ষ্ঠ বারের মতো অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে নেন নোভাক। এরপর সেই আরাধ্য ট্রফিটি ধরা দেয়। ২০১৬ সালের ফ্রেঞ্চ ওপেনে মারেকে হারিয়ে ক্যারিয়ার স্লাম পূর্ণ করেন নোভাক। ২০১৬ সালের ইউএস ওপেনে ফেদেরারকে হারিয়ে ফাইনালে আবার উঠলেও সেখানে হেরে যান ভাভরিংকার কাছে। ভাবা যায়? ২০১৫-২০১৬ এর মাঝে আটটি গ্র্যান্ডস্লামের মধ্যে মাত্র একটির ফাইনাল মিস হয়েছিল তার? ঠিক যে সময়টায় ফেদেরার ফর্মে ফিরছেন, সেই সময়েই নোভাকের পুনরায় অপ্রতিরোধ্যতার শুরু। পাঁচবার ফেদেরার হারেন নোভাকের কাছে এই সময়টায়। এরপরই নোভাকের ক্যারিয়ারের নিম্নযাত্রা শুরু।
শীর্ষ হতে পতন ও প্রত্যাবর্তন
২০১৭ সালে মারাত্মক চোটের কবলে পড়েন নোভাক। কোচ বরিস বেকারের সাথে সম্পর্ক চুকে যায়। যে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে তার এত সাফল্য, সেখানে ১১৭তম এক খেলোয়াড়ের কাছে ১ম রাউন্ডে হেরে যান। কোচ হয়ে আসেন আগাসি। কিন্তু তার সেই অপ্রতিরোধ্যতার লেশমাত্রও আর ছিল না। ২০১৭ এর চারটি গ্র্যান্ডস্লামই দুটি করে জিতে নেন ফেদেরার আর নাদাল। অস্ত্রোপচারের জন্য টেনিস থেকে দূরে সরে যান নোভাক।
২০১৮ সালের শুরুটাও ফেদেরার-নাদালময়। প্রথম দুই স্লামই তাদের ঘরে ওঠে। জোকোভিচ কোয়ার্টারের গন্ডিও পেরোতে পারেননি। মিয়ামিতে অবাছাই খেলোয়াড়ের কাছে হেরে যান প্রথম রাউন্ডেই। ভাবা হচ্ছিলো, ফেদেরার-নাদালের দাপট আর নতুন প্রজন্মের উঠে আসার ফলে নোভাক হয়তো আর গ্র্যান্ডস্লাম জিততেই পারবেন না। নিজেও ভেবেছিলেন এবারের উইম্বলডন খেলবেন না। তার পুরনো কোচ আবার তার সাথে একত্র হন। দোটানায় থাকা নোভাক উইম্বলডন খেলতে আসেন, এতদূর যে যাবেন তা কেউ ভাবেনি। সেমি ফাইনালে পাঁচ সেটের এক অসামান্য লড়াইয়ে নাদালকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠেন আর অ্যান্ডারসনকে হারিয়ে সবার প্রত্যাশার বাইরে গিয়ে জিতে নেন চতুর্থ উইম্বলডন।
এরপর ক্যারিয়ারে একমাত্র অধরা মাস্টার্স সিনসিনাটিও জিতে নেন ফেদেরারকে হারিয়ে। ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে তারই আছে সব মাস্টার্স ট্রফি জয়ের রেকর্ড। বছরের শেষ গ্র্যান্ড স্লামে প্রত্যাশিতভাবেই ফেভারিট জকোভিচ যখন দেল পোর্তোকে হারিয়ে শিরোপাটি উঁচিয়ে ধরেন, ততক্ষণে আমেরিকার মাটিতেই আমেরিকান কিংবদন্তী পিট সাম্প্রাসের ১৪টি গ্র্যান্ডস্লাম সংখ্যাকে স্পর্শ করা হয়ে গেছে। পাঁচ মাস আগেও যাকে নিয়ে এত সন্দেহ ছিল যে, আর কি স্বরুপে ফিরতে পারবেন, সেই নোভাক বছর শেষ করলেন সাফল্যের দিকে দিয়ে ফেদেরার-নাদালকে টপকে।
নোভাক হারতে জানেন না। ম্যাচ পয়েন্টে দাঁড়িয়ে থাকলেও মুখে হাসি মিলিয়ে যায় না। এমন অনেক ম্যাচ তিনি হারের শেষ প্রান্ত থেকে এসে জিতেছেন। প্রায় সব কোর্টেই তিনি সমান দক্ষ। নাদালের মতো ক্লে কোর্টের রাজা না থাকলে নিশ্চয়ই সেখানেও আরো সাফল্য আসতো। হার্ড কোর্টের খেলোয়াড় হলেও গ্রাস কোর্টের ট্রফি চারটি। অনেকবার উঠেছেন লাল মাটির ফাইনালে। সবচেয়ে বেশি মাস্টার্সও তারই।
যখন ভাবা হচ্ছিলো নাদাল সহজে টপকে ফেলবেন ফেদেরারকে, তখন নাদালের অগ্রযাত্রা থেমে যায় জকোভিচ-দেয়ালে। নাদালের অফফর্মের সময় যখন ফেদেরার নিজেকে ফিরে পাচ্ছিলেন, তখন ফেদেরারের অপেক্ষাটা বাড়িয়ে দেন একমাত্র জকোভিচ। তিনি জনতার চ্যাম্পিয়ন না, কিন্তু তিনি কারো শ্রেষ্ঠত্ব অকপটে স্বীকার করেননি। নিজেকে বারবার বদলেছেন, ভেঙে গড়েছেন। শুধু বদলাননি মানসিকতা। হার না মানা মানসিকতা, প্রচন্ড পরিশ্রমী খেলার ধরণ আর প্রতিটি পয়েন্ট জেতার অদম্য ইচ্ছা নাদাল থেকে মারে সবাইকে বলতে বাধ্য করেছে যে, সেরা সময়ের জকোভিচই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। নতুন করে ফর্মে ফেরা জকোভিচের সামনে ফেদেরার-নাদাল উভয়েরই অর্জন এখন শঙ্কার মাঝে! টেনিস জোকোভিচের কাছে কৃতজ্ঞ, কেননা এই লিকলিকে সার্বের কারণেই টেনিস খেলাটি দুই ঘোড়ার দৌড় হয়ে যায়নি, একটা প্রজন্ম স্বচক্ষে দেখতে পেরেছে ইতিহাসের সেরা ত্রিমুখী লড়াই।
ফিচার ছবিসত্ত্ব: WLWT-TV