গত দশকে ওয়ানডে ক্রিকেটে অনেক নতুনত্ব এসেছে। নতুন বিশ্বচ্যাম্পিয়নের দেখা মিলেছে। ভারতের শিরোপা খরা দূর হয়েছে। সহযোগী দেশগুলো আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড বড় বড় দলের বিপক্ষে জয়ের মুখ দেখছে। গত দশকে অনেক কিংবদন্তী ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। আগমন ঘটেছে অনেক কিংবদন্তীর। একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে ওয়ানডে ক্রিকেটে খেলেছেন ১,০৮৪ জন ক্রিকেটার। এদের মধ্যে সেরা ১১ জন ক্রিকেটারকে নিয়ে সাজানো হলো রোর বাংলার দশকের সেরা ওয়ানডে একাদশ।
১. রোহিত শর্মা (ভারত)
ভারতের তারকা ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মার পুনর্জন্ম ঘটেছিল এই দশকে। অভিষেকের প্রায় অর্ধ যুগ পর ২০১৩ সালে ওপেনার হিসাবে খেলতে নেমে ভাগ্য বদলে যায় রোহিতের। ওয়ানডেতে ২০১৩ সালের পর ওপেনার হিসাবে খেলতে নেমে ১৩২ ইনিংসে ৬০ ছুঁই ছুঁই ব্যাটিং গড়ে ৬,৯৪৮ রান সংগ্রহ করেছেন। শতক হাঁকিয়েছেন ২৬টি এবং অর্ধশতক ৩১টি। শচীন টেন্ডুলকার ২০১০ সালে ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি করার আগপর্যন্ত অনেকেই ভেবেছিল ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকানো আকাশকুসুম কল্পনা ছাড়া কিছু নয়। টেন্ডুলকার ডাবল সেঞ্চুরির খাতা খুলে দেওয়ার পর থেকে রোহিত একাই তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। সর্বোচ্চ ২৬৪ রানের ইনিংস খেলে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ড গড়েন তিনি, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংসের চেয়ে ২৭ রান বেশি।
দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রোহিত শর্মা সর্বশেষ বিশ্বকাপে রেকর্ড সংখ্যক পাঁচটি শতক হাঁকিয়েছিলেন। তিনি দেশের মাঠে ধারাবাহিকভাবে সফলতা পেয়ে থাকেন, তা সবার জানা। তবে দেশের বাইরেও কম যান না। তার ২৮টি ওয়ানডে সেঞ্চুরির মধ্যে ১৮টি এসেছে দেশের বাইরে। রোহিত শর্মা এই দশকে ১৮০ ম্যাচে ২৮টি শতক এবং ৩৯টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৫৩.৫৬ ব্যাটিং গড়ে এবং ৯০.৬৩ স্ট্রাইক রেটে ৮,২৬৯ রান সংগ্রহ করেছেন। গত দশকে সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রাহকদের তালিকায় তিনি দ্বিতীয় স্থানে আছেন।
২. হাশিম আমলা (দক্ষিণ আফ্রিকা)
হাশিম আমলার ধীরে-সুস্থে ব্যাটিংয়ের কারণে অনেকে তাকে টেস্ট স্পেশালিষ্টের ক্যাটাগরিতে ফেলে দিয়েছেন। আধুনিক ওয়ানডে ক্রিকেটের সবচেয়ে আন্ডাররেটেড ব্যাটসম্যান তিনি। গত দশকে তিনি বেশিরভাগ সময় বিরাট কোহলির চেয়ে দ্রুত রান করেছেন। আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে দুই থেকে সাত হাজার পর্যন্ত প্রতি হাজার রান তিনি অন্যান্য সব ব্যাটসম্যানের চেয়ে দ্রুত সংগ্রহ করেছেন।
হাশিম আমলা ওয়ানডেতে সাত হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করতে খেলেছেন ১৫০ ইনিংস। যা বিরাট কোহলির ১৬১ ইনিংসের চেয়ে ১১ ইনিংস কম। ক্যারিয়ারের শেষদিকে ফর্ম হারিয়ে না ফেললে তার ওয়ানডে পরিসংখ্যান আরও ঈর্ষণীয় হতো। তারপরেও তিনি গত দশকে ওয়ানডেতে তৃতীয় সর্বাধিক রান সংগ্রহ করছেন। শতক হাঁকানোর দিক থেকেও বিরাট এবং রোহিতের পরে অবস্থান করছেন। তিনি ২০১০-১৯ সালের মধ্যে ১৫৯ ম্যাচে ৪৯.৭৬ ব্যাটিং গড়ে এবং ৮৯.১১ স্ট্রাইক রেটে ৭,২৬৫ রান সংগ্রহ করেছেন। শতক হাঁকিয়েছেন ২৬টি এবং অর্ধশতক ৩৩টি।
৩. বিরাট কোহলি (ভারত)
একসময় মনে করা হতো শচীন টেন্ডুলকারের ওয়ানডে রেকর্ডের ধারে-কাছেও কেউ যেতে পারবে না। ১৮,৪২৬ রান এবং ৪৯টি সেঞ্চুরি ছিল অন্যান্য ব্যাটসম্যানের কাছে স্বপ্নের মতো। তবে বিরাট কোহলি পুরো দশক জুড়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করে সবার ধারণা বদলে দেন। ৩১ বছর বয়সেই ৪৩টি শতক এবং ১১,৬০৯ রান সংগ্রহ করে ওয়ানডে রেকর্ডের পাতা নতুন করে সাজানোর পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।
গত দশকের সেরা ওয়ানডে ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজের নাম ইতিহাসের পাতায় লেখানো বিরাট কোহলি ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান হওয়ার দৌড়ে অনেকটা এগিয়ে আছেন। তিনি গত দশকে ২২৭ ম্যাচে ৬০.৭৯ ব্যাটিং গড়ে এবং ৯৪.১১ স্ট্রাইক রেটে ১১,১২৫ রান সংগ্রহ করেছেন। শতক হাঁকিয়েছেন ৪২টি এবং অর্ধশতক ৫২টি। গত দশকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ শতক হাঁকানো রোহিত ও আমলার মোট শতক ৫৪টি। বিরাট একাই হাঁকান ৪২টি। এতেই বোঝা যায়, পুরো দশকে জুড়ে তিনি কতটা আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন।
৪. এবি ডি ভিলিয়ার্স (দক্ষিণ আফ্রিকা)
মাঠের চারদিকে রান তোলার ক্ষমতা থাকার কারণে ক্রিকেট পাড়ায় ডি ভিলিয়ার্স ৩৬০ ডিগ্রী নামে পরিচিত। তার বিধ্বংসী ব্যাটিং এবং চারদিকে বাউন্ডারি আদায় করে নেওয়ার সক্ষমতার কারণে তার বিপক্ষে বল করতে অনেক বোলারই কঠিন সময় পার করে। তিনি ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততম অর্ধশতক, শতক এবং দেড়শত রানের ইনিংস খেলেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১৫ সালে জোহানসবার্গে মাত্র ১৬ বলে অর্ধশতক হাঁকানোর পর ৩১ বলে শতক হাঁকিয়েছিলেন। একই বছর এবং প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সিডনীতে মাত্র ৬৪ বলে ১৫০ রানের ইনিংস খেলে দ্রুততম দেড়’শ রান তোলার রেকর্ডও নিজের করে নেন।
গত দশকে ওয়ানডেতে ২৪ জন ব্যাটসম্যান চার হাজার রান সংগ্রহ করেছেন। যার মধ্যে শুধুমাত্র ডি ভিলিয়ার্স বলের চেয়ে রান বেশি করেছেন। তিনি ১০৯.৭৬ স্ট্রাইক রেটে রান করেছিলেন। গত দশকে কমপক্ষে এক হাজার রান করেছেন এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যাটিং গড় ডি ভিলিয়ার্সের। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ওয়ানডে খেলা এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান গত দশকে ১৩৫ ম্যাচে ৬৪.২০ ব্যাটিং গড়ে এবং ১০৯.৭৬ স্ট্রাইক রেটে ৬,৪৮৫ রান সংগ্রহ করেছেন। যার মধ্যে ২১টি শতক এবং ৩৩টি অর্ধশত রানের ইনিংস রয়েছে।
৫. সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)
গত দশকে ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বাধিক উইকেট শিকার করেছেন সাকিব আল হাসান। স্পিনারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। সেই সাথে ব্যাট হাতেও করেছেন চার হাজারের অধিক রান। দশকের সেরা ওয়ানডে একাদশে তাই তার জায়গা অনিবার্য। ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময়ে মিডল-অর্ডারে ব্যাট করা সাকিব গত কয়েকবছরে টপ-অর্ডারে ব্যাটিং করে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। তিনি গত বছর তিনে ব্যাট করে ১১ ইনিংসে দুটি শতক এবং সাতটি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৯৩.২৫ ব্যাটিং গড়ে ও ৯৫.৮৮ স্ট্রাইক রেটে ৭৪৬ রান সংগ্রহ করেছেন।
সাকিব আল হাসান গত দশকে ব্যাট হাতে ১৩১ ম্যাচে ৩৮.৮৭ ব্যাটিং গড়ে এবং ৮৬.০৭ স্ট্রাইক রেটে ৪,২৭৬ রান সংগ্রহ করেছেন। পাঁচটি শতক এবং ৩৫টি অর্ধশতকের সাহায্যে তিনি এই রান সংগ্রহ করেন। সেরা স্পিনার হিসাবে দশক শেষ করা সাকিব বল হাতে ৩০.১৫ গড়ে এবং ৩৮.২ স্ট্রাইক রেটে ১৭৭ উইকেট শিকার করেছেন। ওভার প্রতি রান খরচ করেছেন ৪.৭২ রান। ইনিংসে চার উইকেট আটবার এবং পাঁচ উইকেট দুবার শিকার করেছেন।
৬. মহেন্দ্র সিং ধোনি (উইকেটরক্ষক, অধিনায়ক) (ভারত)
শেষ কয়েকবছরে ধীরগতিতে ব্যাটিং করার কারণে বেশ কয়েকবার সমালোচনার সম্মুখীন হওয়া ধোনি তার ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। তিনি ধীরগতিতে ব্যাট করলেও ম্যাচের অবস্থা অনুযায়ী ব্যাট করে গত কয়েকবছরে ভারতকে একাধিক ম্যাচ জিতিয়েছেন। ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তার বিকল্প নেই। তার নেতৃত্বগুণে ভারত ২০১১ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জেতে। এছাড়া ২০১৩ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতেও তরুণ দল নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় করে আসে ভারত। তার দেখানো পথেই এখন ভারত ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি।
এমএস ধোনি গত দশকে ১৯৬ ম্যাচ খেলেছেন। যার মধ্যে ১৬১ ইনিংস ব্যাট করে ৫০.৩৫ ব্যাটিং গড়ে এবং ৮৫.৭৯ স্ট্রাইক রেটে ৫,৬৪০ রান সংগ্রহ করেছেন। শতক হাঁকিয়েছেন চারটি এবং অর্ধশতক ৩৯টি। উইকেটরক্ষক হিসাবেও তিনি বেশ সফল। এখনও চোখ ধাঁধানো সব স্ট্যাম্পিং করে থাকেন তিনি। গত দশকে ১৭০টি ক্যাচ নেওয়ার পাশাপাশি ৭২টি স্ট্যাম্পিং করেছেন তিনি। মোট ২৪২টি ডিসমিসাল নিয়ে তিনি গত দশকে সবচেয়ে বেশি ডিসমিসালের তালিকায় শীর্ষে আছেন তিনি।
৭. জস বাটলার (ইংল্যান্ড)
ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য জস বাটলার। জো রুট, ইয়োন মরগান, বেন স্টোকস, জনি বেয়ারস্টো এবং জেসন রয়দের পরে ব্যাট করতে নেমেও তিনি একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি উইকেটের পিছনেও ইংল্যান্ডের আস্থা বাটলারের উপর। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে কমপক্ষে ৪০ ব্যাটিং গড় আছে এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইক রেট জস বাটলারের। ইনিংসের শেষের ওভার গুলোতে দ্রুত রান তোলা কিংবা একপাশ আগলে রেখে দলকে নাটকীয় জয় এনে দেওয়া সবই করে দেখিয়েছেন বাটলার।
২০১২ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক ঘটার পর ১১৭ ইনিংসে ৪০.৮৮ ব্যাটিং গড়ে এবং ১১৯.৮৩ স্ট্রাইক রেটে ৩,৮৪৩ রান সংগ্রহ করেছেন। শতক হাঁকিয়েছেন নয়টি এবং অর্ধশতক ২১টি। শতক হাঁকাতে তার তাড়াহুড়ো চোখে পড়ার মতো। তার দ্রুততম সাতটি শতক পূর্ণ হয়েছে যথাক্রমে ৪৬, ৫০, ৬০, ৬১, ৬৬, ৭৩ এবং ৭৫ বলে। এই একাদশে উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব না পেলেও উইকেটের পেছনেও বেশ সফল তিনি। গত দশকে ধোনির পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০২টি ডিসমিসাল আছে বাটলারের।
৮. মিচেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া)
ইনিংসের শুরুতে, মাঝপথে কিংবা শেষে। যখনি দলের উইকেটের প্রয়োজন পড়ে তখনই অধিনায়ক মিচেল স্টার্কের শরণাপন্ন হন। ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে কম ম্যাচে (৭৭) ১৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করা এই বাঁহাতি পেসার তার গতি এবং সুইং দিয়ে ব্যাটসম্যানদের ধরাশায়ী করেন যেকোনো পরিবেশে। তার হাত ধরেই অস্ট্রেলিয়া ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ঘরে তোলে। আসরের প্রতিটি ম্যাচেই তিনি দুর্দান্ত বোলিং করে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারও জিতে নেন।
বিশ্বকাপের জন্যই তিনি তার সেরাটা তুলে রাখেন। মাত্র দুই আসরে অংশগ্রহণ করে ১৪.৮১ বোলিং গড়ে ৪৯ উইকেট শিকার করেছেন। গত দশকে পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আধিপত্য বিস্তার করা স্টার্ক ৮৫ ম্যাচে ২০.৯৯ বোলিং গড়ে এবং ২৫.০ স্ট্রাইক রেটে ১৭২ উইকেট শিকার করেছেন। ইকোনমি রেট ৫.০২। তিনি গত দশকে সবচেয়ে বেশি ১৮ বার ইনিংসে চারের অধিক উইকেট শিকার করেছেন। ১১ বার চার উইকেট এবং সাতবার পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন তিনি।
৯. ইমরান তাহির (দক্ষিণ আফ্রিকা)
স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারিদের তালিকায় সাকিব আল হাসানের পরেই অবস্থান করছেন দক্ষিণ আফ্রিকার লেগস্পিনার ইমরান তাহির। বয়স ত্রিশ অতিক্রম করার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা দেওয়ার পর দৌড়েই চলছেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এই স্পিনার। গত দশকে লেগস্পিনের পুনর্জন্ম ঘটানো ইমরান তাহির ওয়ানডেতে ১৫০ উইকেট শিকার করেছেন শেন ওয়ার্নের চেয়ে পাঁচ ম্যাচ কম খেলে (৮৯)।
২০১১ সালে এশিয়ার মাটিতে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে স্পিন ডিপার্টমেন্ট শক্তিশালী করার জন্য ইমরান তাহিরকে জাতীয় দলে ডাক দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। সুযোগ পেয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে বেশি সময় নেননি তিনি। অভিষেক ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চার উইকেট শিকার করেন। বিশ্বকাপ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখার পর বিশ্বকাপেই নিজের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন তিনি। বিশ্বকাপের তিন আসরে ২২ ম্যাচ খেলে ৪০ উইকেট শিকার করে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে এবং লেগ স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েন তিনি। গত দশকে মোট ১০৭ ম্যাচ খেলে ২৪.৮৩ বোলিং গড়ে ও ৩২.০ স্ট্রাইক রেটে ১৭৩ উইকেট শিকার করেছেন তাহির। ইনিংসে সাতবার চার উইকেট এবং তিনবার পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন।
১০. ট্রেন্ট বোল্ট (নিউ জিল্যান্ড)
নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে অন্যান্য দল কত রান সংগ্রহ করবে তা নির্ভর করে বাঁহাতি পেসার ট্রেন্ট বোল্টের প্রথম স্পেলের উপর। ন্যাচারাল সুইং বোলার বোল্ট উইকেটের দু’দিকেই সুইং করাতে পারেন বলে ব্যাটসম্যানরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন। কিউইদের বহু ম্যাচের জয়ের নায়ক বোল্টের অভিষেকের পর থেকে নিউ জিল্যান্ড টানা দুই বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছে। দলকে ফাইনালে ওঠাতে তার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। দুই বিশ্বকাপে ১৯ ম্যাচ খেলে ২১.৭৯ বোলিং গড়ে ৩৯ উইকেট শিকার করে ইতিমধ্যে বিশ্বকাপে নিউ জিল্যান্ডের সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারি হিসাবে নিজের নাম লেখিয়েছেন তিনি।
গত দশকে ট্রেন্ট বোল্ট ১২ ইনিংসে চার বা ততোধিক উইকেট শিকার করেছেন। এই তালিকায় তার উপরে আছেন শুধুমাত্র মিচেল স্টার্ক (১৮) ও লাসিথ মালিঙ্গা (১৪)। তিনি মাত্র ৮৯ ম্যাচে ২৫.০৬ বোলিং গড়ে ও ২৯.৭ স্ট্রাইক রেটে ১৬৪ উইকেট শিকার করেছেন। ইনিংসে সাতবার চার উইকেট এবং পাঁঁচবার পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন। সেরা বোলিং ফিগার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩৪ রানে সাত উইকেট।
১১. লাসিথ মালিঙ্গা (শ্রীলঙ্কা)
গত দশকের একমাত্র বোলার হিসাবে দুই শতাধিক উইকেট শিকার করেছেন শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা। তিনি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি সাকিব আল হাসানের চেয়ে ৭১ উইকেট বেশি শিকার করেছেন। দুর্দান্ত লাইন লেন্থ, লেইট সুইং ও মরণঘাতি সব ইয়র্কার তার সাফল্যের মূলমন্ত্র। সাদা বলের ক্রিকেটে তার সাফল্য রেকর্ডের পাতায় অক্ষুণ্ণ থাকবে। ক্যারিয়ারের শেষের দিকে বয়সের চাপে গতি কিছুটা কমে গেলেও এখনও তার লাইন লেন্থে ব্যাটসম্যানরা পরাস্ত হয়ে পড়ে।
লাসিথ মালিঙ্গা গত দশকে সবচেয়ে বেশি আটবার ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন। তিনি ১৬২ ম্যাচের ১৫৮ ইনিংস বল করে ২৮.৭৪ বোলিং গড় ও ৩১.৫ স্ট্রাইক রেটে ২৪৮ উইকেট শিকার করেছেন। ইনিংসে ছয়বার চার উইকেট এবং আটবার পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন। ইনিংসের শেষদিকে বোলিং করার কারণে এবং গত কয়েক বছরে বেশকিছু ম্যাচে খরুচে বোলিং করায় তার ইকোনমি রেট ৫.৪৬।
দ্বাদশ ব্যক্তি: হাশিম আমলার মতো নিউ জিল্যান্ডের মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান রস টেইলরও আধুনিক ক্রিকেটে আন্ডাররেটেড ব্যাটসম্যান। কিউই এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান গত দশকে সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রাহকদের তালিকায় পঞ্চম স্থানে অবস্থান করছেন। তিনি ১৪৫ ইনিংসে ব্যাট করে ৫৪.০১ ব্যাটিং গড়ে ৬,৪২৮ রান সংগ্রহ করেছেন। শতক হাঁকিয়েছেন ১৭টি এবং অর্ধশতক ৩৯টি।