বক্সিং ডে’তে অনুষ্ঠিত দুটি টেস্টের মধ্য দিয়ে একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের ইতি ঘটেছে। এই দশকে আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন ১২ দেশের মোট ৬০০ জন ক্রিকেটার। এদের মধ্য থেকে সেরা ১১ জনকে নিয়ে সাজানো হলো রোর বাংলার (২০১০-১৯) দশকের সেরা টেস্ট একাদশ।
১. স্যার অ্যালেস্টার কুক (ইংল্যান্ড)
এই দশকে টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন ইংল্যান্ডের ওপেনার অ্যালেস্টার কুক। ক্রিকেটে ব্যাট হাতে অসাধারণ সব স্মৃতি রেখে যাওয়া কুক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর নাইটহুড উপাধি লাভ করেন তিনি। এই দশকে সবচেয়ে বেশি ১১১ ম্যাচ খেলে সবচেয়ে বেশি ৮,৮১৮ রান সংগ্রহ করেছেন কুক। তিনি ২৩টি শতক এবং ৩৭টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৪৬.৪১ ব্যাটিং গড়ে এই রান সংগ্রহ করেছেন।
অন্যান্য ব্যাটসম্যানরা যেখানে দেশের মাঠের তুলনায় বিদেশের মাটিতে রান কম তোলে, সেখানে কুক বিদেশের মাটিতেও ব্যাট হাতে সফল ছিলেন। বিদেশের মাঠে তার বেশ কিছু দুর্দান্ত ইনিংস রয়েছে। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের মাঠে তার সফলতা ছিল উল্লেখযোগ্য। এই দুই দেশে তিনি যথাক্রমে ৪৮.৯৪ এবং ৫১.৪৫ ব্যাটিং গড়ে রান করেছেন।
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২০১০-১১ মৌসুমের অ্যাশেজে ধারাবাহিকভাবে রান করে ইংল্যান্ডকে অ্যাশেজ ঘরে নিতে বড় ভূমিকা রাখেন তিনি। পাঁচ ম্যাচের অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়াকে ৩-১ ব্যাবধানে পরাজিত করেছিল ইংল্যান্ড। সিরিজের তৃতীয় টেস্টে পার্থে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ঐ ম্যাচের দুই ইনিংসে যথাক্রমে ৩২ ও ১৩ রান করেছিলেন। এছাড়া সিরিজের বাকি সব ইনিংসেই পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। মোট সাত ইনিংস ব্যাট করে তিনটি শতক এবং দুটি অর্ধশতকের সাহায্যে ১২৭.৬৬ ব্যাটিং গড়ে ৭৬৬ রান করেছিলেন তিনি। এরপর ২০১২ সালে ভারতের মাটিতে অধিনায়ক হিসাবে খেলতে এসে সিরিজ জিতে ঘরে ফেরেন তিনি। সিরিজ জয়ে তার ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। চার ম্যাচের মধ্যে তিনটি শতক হাঁকিয়ে ৮০.২৮ ব্যাটিং গড়ে ৫৬২ রান করেছিলেন তিনি।
২. ডেভিড ওয়ার্নার (অস্ট্রেলিয়া)
অ্যালেস্টার কুকের পর এই দশকে ওপেনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন ডেভিড ওয়ার্নার। টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্ট হিসাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণ করার পর টেস্ট ক্রিকেটেও দাপটের সাথে খেলে যাচ্ছেন। ২০১১ সালে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৮৩ ম্যাচে ২৩টি শতক এবং ৩০টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৪৮.২১ ব্যাটিং গড়ে এবং ৭৩.০৪ স্ট্রাইক রেইটে ৭,০৮৮ রান সংগ্রহ করেছেন। গতবছর নিষেধাজ্ঞার কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে একবছরের জন্য দূরে না থাকলে তার রান সংখ্যা আরও বেশি থাকতো। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সর্বশেষ অ্যাশেজের মধ্য দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটের প্রত্যাবর্তন হয়েছিল তার। তবে ব্রডের বিপক্ষে প্রায় প্রতি ম্যাচেই অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হয়েছিল তাকে।
অ্যাশেজের ভরাডুবির পর পাকিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছিলেন তিনি। দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে ১৫৪ রানের ইনিংস খেলার পর অ্যাডেলেডে দ্বিতীয় টেস্টে অপরাজি ৩৩৫ রানের ইনিংস খেলেন। ওয়ার্নার ঘরের মাঠে দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করলেও ইংল্যান্ড, ভারত, শ্রীলংকা, নিউ জিল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠে নিজের স্বভাবসুলভ ব্যাটিং করতে পারেননি। এই পাঁচ দেশে তার ব্যাটিং গড় ২০-৩০ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। নেই কোনো শতক।
তবে অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় তার ব্যাটে ঠিকই হাসে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০১৪ সালে কেপটাউন টেস্টের দুই ইনিংসে যথাক্রমে ১৩৫ এবং ১৪৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ডেল স্টেইন, মরনে মরকেল এবং ফিল্যান্ডারদের বিপক্ষে। আফ্রিকা মহাদেশে এখন পর্যন্ত ছয় টেস্টে তিনটি শতক এবং চারটি অর্ধশতকের সাহায্যে ৬৩.৩৩ ব্যাটিং গড়ে ৭৬০ রান করেছেন। অস্ট্রেলিয়াতে ৪২ ম্যাচে ১৭টি শতক এবং ১২টি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৬৪.৫৯ ব্যাটিং গড়ে ৪,৩২৮ রান করেছেন।
ঘরের বাইরে তেমন সফলতা না পেলেও ঘরের মাঠে তিনি বেশ সফল। টেস্টের প্রথম দিনের লাঞ্চ ব্রেকের আগে শতক। টেস্টে দ্বিতীয় দ্রুততম অর্ধশতক হাঁকানোর রেকর্ড। ভারতের বিপক্ষে ৬৯ বলে শতক এবং নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে একদিনে ২৪৪ রান করার কীর্তি টেস্টে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের পক্ষে কিছু উদাহরণ হিসাবে দাঁড়ায়।
উল্লেখযোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী: এই দশকে ওপেনারদের মধ্যে শুধুমাত্র ডেন এলগার ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের মাঠে শতক হাঁকাতে পেরেছেন। এই বাঁহাতি ওপেনার ৬০ টেস্টে ১২টি শতক এবং ১৩টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৩৮.৫৮ ব্যাটিং গড়ে ৩,৬৬৬ রান করেছেন। বাংলাদেশের তামিম ইকবালও ওপেনিংয়ে নিয়মিত রান পেয়েছেন। তিনি ৪৬ ম্যাচে আটটি শতক এবং ২৫টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৪১.৭৮ ব্যাটিং গড়ে ৩,৭১৯ রান করেছেন।
৩. কেন উইলিয়ামসন (নিউ জিল্যান্ড)
কেন উইলিয়ামসন যখন ব্যাট-প্যাড তুলে রাখবেন, তখন তিনি নিউ জিল্যান্ডের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হিসাবে যে ক্যারিয়ার শেষ করবেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। ভারতের বিপক্ষে ২০১০ সালে আহমেদাবাদে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল তার। অভিষেক ম্যাচে ১৩১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে নিজের আগমনী বার্তা দিয়েছিলেন তিনি। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ২০টি শতক হাঁকিয়েছেন। ইতিমধ্যে ২১টি শতক হাঁকিয়ে নিউ জিল্যান্ডের হয়ে টেস্টে সবচেয়ে বেশি শতক হাঁকানোর রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন তিনি।
উইলিয়ামসন তার ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ ইনিংস তিন নাম্বারে খেলেছেন। এই দশকে এই পজিশনে সবচেয়ে বেশি রানও করেছেন তিনি। ৭৮ ম্যাচ খেলে ২১টি শতক এবং ৩১টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৫১.৪৪ ব্যাটিং গড়ে ৬,৩৭৯ রান করেছেন। ২০১৬ সালে অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তিনি আরও দায়িত্বশীল হয়ে ওঠেন। অধিনায়ক হিসেবে ৩০ ম্যাচে আটটি শতক এবং ১২টি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৫৫.৭৬ ব্যাটিং গড়ে ২,৩৪২ রান সংগ্রহ করেছেন। তিনি তার টেস্ট ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি অসাধারণ ইনিংস খেলেছেন। যার মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ১৬৬ রানের ইনিংস এবং গতবছর আবুধাবিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩৯ রানের ইনিংসটি তার সেরা ইনিংসের মধ্যের উপরের দিকে থাকবে। দ্বিতীয় ইনিংসে নিউ জিল্যান্ড যখন চার উইকেট হারিয়ে ১২ রানে পিছিয়ে ছিলেন, সেখান থেকে দুর্দান্ত এই ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেন উইলিয়ামসন।
উল্লেখযোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী: শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তী ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারা এই দশকের পুরো সময় খেলেননি। তিনি সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন ২০১৫ সালে। এই দশকে তিনি ৪৬ ম্যাচ খেলে ১৭টি শতক এবং ২০টি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৬১.৪০ ব্যাটিং গড়ে ৪,৮৫১ রান সংগ্রহ করেছেন।
৪. স্টিভেন স্মিথ (অস্ট্রেলিয়া)
লর্ডসে ২০১০ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে স্পেশালিষ্ট লেগস্পিনার হিসাবে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল স্টিভেন স্মিথের। বোলার হিসেবে ২০১০ সালের জুলাই থেকে এবং ২০১১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচটি টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন। এরপর ২০১৩ সালে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে দলে ডাক পান তিনি। ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে নেমে প্রথম ইনিংসে ৯২ রান করেন স্মিথ। দ্য ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের ১২ তম টেস্টে প্রথম শতক হাঁকানোর পর থেকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
স্টিভ স্মিথ ২০১৪ সালে ৮১.৮৫ ব্যাটিং গড়ে ১,১৪৬ রান। ২০১৫ সালে ৭৩.৭৪ ব্যাটিং গড়ে ১,৪৭০ রান। ২০১৬ সালে ৭১.৯৩ ব্যাটিং গড়ে ১,০৭৯ এবং ২০১৭ সালে ৭৬.৭৬ ব্যাটিং গড়ে ১,৩০৫ রান সংগ্রহ করেছেন। ২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় বল টেম্পারিংয়ের দায়ে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ২০১৯ সালের অ্যাশেজ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ফেরেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটে ফিরেই দলকে অ্যাশেজ ঘরে ফিরিয়ে নিতে বড় ভূমিকা পালন করেন। সাত শতাধিক রান করে জেতেন অ্যাশেজ সেরার পুরস্কার। শুধুমাত্র স্মিথ এবং ব্রায়ান লারা গত ৪০ বছরে ভিন্ন দুটি সিরিজে সাত শতাধিক রান করার কীর্তি গড়েছেন।
তিনি ব্যাট হাতে প্রায় সব কন্ডিশনেই রান করেছেন। এশিয়াতেও ১৩ ম্যাচে করেছেন বরাবর ১২০০ রান। এছাড়া দুই শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ভারত এবং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার সফলতা আকাশচুম্বী। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৭ ম্যাচে ১১টি শতক এবং ভারতের বিপক্ষে দশ ম্যাচে হাঁকিয়েছেন সাতটি শতক। স্টিভ স্মিথ এই দশকে ৭২ ম্যাচে ২৬টি শতক এবং ২৮টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৬২.৮৪ ব্যাটিং গড়ে ৭,১৬৪ রান করেছেন।
উল্লেখযোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী: দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তী ব্যাটসম্যান হাশিম আমলা দশকের শুরুতেই ইংল্যান্ড, ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার মাঠে দুর্দান্ত সব ইনিংস খেলেছিলেন। ক্যারিয়ারের শেষ কয়েকবছর আশানুরূপ পারফর্ম করতে না পারলেও পুরো দশক হিসাবে তার পরিসংখ্যান বেশ ভালো। তিনি এই দশকে ৪৯.৯৬ ব্যাটিং গড়ে ৬,৬৯৫ রান সংগ্রহ করেছেন। ইংল্যান্ডের জো রুট এই দশকে টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বাধিক রান সংগ্রহ করেছেন। তবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এখনও টেস্ট শতক হাঁকাতে না পারা এবং অধিনায়ক হিসেবে ৪২.৫৩ ব্যাটিং গড়ের কারণে দশকের সেরা একাদশে তার জায়গায় স্মিথ জায়গা করে নিয়েছেন।
৫. বিরাট কোহলি – অধিনায়ক (ভারত)
দুই দশকের বেশি সময় ধরে ভারতের ব্যাটিংয়ের মূল স্তম্ভ ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। এই দশকের শুরুতে তিনি তার শেষের শুরুতে ছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর তার অভাববোধ করতে দেননি বিরাট কোহলি। ক্যারিয়ারের শুরুতে সাদা বলের ক্রিকেটে নিয়মিত রান করলেও লাল বলে ধারাবাহিকভাবে বড় ইনিংস খেলতে পারছিলেন না কোহলি। তবে শচীন টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর তার জায়গায় ব্যাট করে বড় ইনিংস খেলা শুরু করেন কোহলি। ২০১৪-১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাদের বিপক্ষে ৭০০ এর উপর রান করে টেস্টে ধারাবাহিকভাবে রান করা শুরু করেন তিনি। ঐ সিরিজেই ভারতের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি। অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়ার পর তার মধ্যে রানের ক্ষুধা আরও বেড়ে যায়। ইতিমধ্যে ভারতের সবচেয়ে সফল টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে নিজের নাম ইতিহাসের পাতায় লেখানো কোহলি অধিনায়ক হিসাবে ৫৩ ম্যাচে ২০টি শতক এবং ১২টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৬৩.৮০ ব্যাটিং গড়ে ৫,১০৪ রান করেছেন।
বিরাট কোহলি এই দশকে সবচেয়ে বেশি ২৭টি শতক এবং সাতটি দ্বিশতক হাঁকিয়েছেন। তিনি যে কয়টি দেশের বিপক্ষে টেস্ট খেলেছেন, সব দলের বিপক্ষে শতক হাঁকিয়েছেন। ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে কীভাবে ব্যাট করতে হয় সেটা ভুলে গেলেও চার বছর পর একই দেশে রানের ফোয়ারা ছুটিয়েছিলেন তিনি। একাই দলের হাল ধরে একের পর এক দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। ২০১১ সালে টেস্ট অভিষেক ঘটার পর এই দশকে ৮৪ ম্যাচে ৫৪.৯৭ ব্যাটিং গড়ে ৭,২০২ রান সংগ্রহ করেছেন তিনি।
উল্লেখযোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী: পাকিস্তানের কিংবদন্তী ব্যাটসম্যান ইউনিস খান এই দশকে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্ট শতক হাঁকিয়েছিলেন। তিনি দেশের মাঠে একটি টেস্ট না খেলেও ৫৫ ম্যাচে ১৮টি শতক এবং ১২টি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৫৪.৩৭ ব্যাটিং গড়ে ৪,৮৩৯ রান সংগ্রহ করেছেন।
৬. এবি ডি ভিলিয়ার্স – উইকেটরক্ষক (দক্ষিণ আফ্রিকা)
মার্ক বাউচারের অবসরের ডি ভিলিয়ার্স বেশ কিছু দিন উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব সফলতার সাথে পালন করেছিলেন। তিনি এই দশকে ২২টি টেস্ট উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন। উইকেটরক্ষক হিসেবে এই দশকে সবচেয়ে বেশি তিনবার সিরিজ সেরার পুরস্কার জিতেছেন ভিলিয়ার্স। আর কোনো উইকেটরক্ষক এই পুরস্কার একবারের বেশি জিতেনি। তিনি দলের প্রয়োজনের তাগিদে নিজের ব্যাটিং স্টাইল এবং রান তোলার গতি যখন-তখন বদলাতে পারেন। গতবছর হুট করে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর আগে এই দশকে ৬০ ম্যাচে ১৩টি শতক এবং ২৭টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৫৭.৪৮ ব্যাটিং গড়ে ৫,০৫৯ রান সংগ্রহ করেছেন। উইকেটরক্ষক হিসেবে ২২ ম্যাচে তার ডিসমিসাল সংখ্যা ৮৪টি। যার মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক এক ইনিংসে ছয়টিও রয়েছে।
ডি ভিলিয়ার্স তার ক্যারিয়ার সেরা অপরাজিত ২৭৮ রানের ইনিংস খেলেছেন এই দশকে। ২০১০ সালে আবুধাবিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিনি এই ইনিংস খেলেছেন। তিনি উইকেটরক্ষক হিসেবে এই দশকে টেস্ট ক্রিকেটে মোট ২২ ম্যাচ খেলেছেন। এই ২৪ ম্যাচে সাতটি শতক এবং ছয়টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৫৯.৬৯ ব্যাটিং গড়ে ১,৯৭০ রান সংগ্রহ করেছেন। উইকেটরক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার সেরা ১৬৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পার্থে। ক্যারিয়ারে উইকেটরক্ষক হিসেবে খেলা ২৪ ম্যাভে তার ব্যাটিং গড় ৫৭.৪১। শুধুমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলা ম্যাচে তার ব্যাটিং গড় ৪৮.৮৯।
উল্লেখযোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী: উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে তার জায়গায় আসতে পারেন বিজে ওয়াটলিং। এই দশকে উইকেটরক্ষক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ডিসমিসাল (২২৬) এবং সবচেয়ে বেশি রান (৩,২২৪) তার। ব্যাটসম্যান হিসেবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী মাইকেল ক্লার্ক। সাবেক অজি অধিনায়ক এই দশকে ৫৯ ম্যাচে ১৬টি শতক এবং ১০টি অর্ধশতকের সাহায্যে ৪৮.৬২ ব্যাটিং গড়ে ৪,৭১৭ রান সংগ্রহ করেছেন। যার মধ্যে ২০১২ সালে ১০৬.৩৩ ব্যাটিং গড়ে ১,৫৯৫ রান করেছেন। ঐ বছর তিনটি দ্বিশতক সহ ক্যারিয়ার সেরা অপরাজিত ৩২৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।
৭. সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)
টেস্ট ক্রিকেটে এই দশকে অলরাউন্ডার হিসেবে শুধুমাত্র সাকিব আল হাসান ৩,৫০০+ রান করার পাশাপাশি ১৫০+ উইকেট শিকার করেছেন। বাংলাদেশের বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার এই শতাব্দীতে একমাত্র অলরাউন্ডার হিসাবে এক ম্যাচে দশ উইকেট শিকারের পাশাপাশি শতক হাঁকিয়েছেন। এছাড়া এই দশকে ইনিংসে শতক হাঁকানোর পাশাপাশি পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন দুবার। তিনি ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন।
সাকিব আল হাসান ব্যাট হাতে নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে ২১৭ রান করে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসের নতুন রেকর্ড গড়েছিলেন, যা পরে মুশফিক টপকে যান। এছাড়া শ্রীলঙ্কায় নিজেদের শততম টেস্ট ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ১১৬ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে দলের জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন। মিরপুরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বল হাতে দশ উইকেট শিকারের পাশাপাশি প্রথম ইনিংসে গুরুত্বপূর্ণ ৮৪ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি।
সাকিব এই দশকে ৪২টি টেস্ট ম্যাচ খেলে পাঁচটি শতক এবং ২১টি অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৪২.৫২ ব্যাটিং গড়ে ৩,১৪৭ রান সংগ্রহ করেছেন। বাঁহাতি স্পিন বোলিংয়ে ৪২ ম্যাচে শিকার করেছেন ১৬২ উইকেট। যার মধ্যে ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন ১৩বার এবং ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করেছেন দুবার।
উল্লেখযোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী: অলরাউন্ডার কোটায় সাকিবের সাথে এই দশকে সমানে সমান লড়াই করেছেন বেন স্টোকস। অভিষেকের পর থেকে কখনও ব্যাট হাতে, প্রয়োজনে বল হাতে অসাধারণ সব স্পেল উপহার দিয়েছেন তিনি। কেপটাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাত্র ১৯৮ বলে ২৫৮ রান। হেডিংলিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দশকের সেরা ইনিংস খেলে দলকে এক উইকেটের জয় এনে দেওয়া এসব স্টোকসের টেস্ট ক্যারিয়ারের শিরোনাম। তিনি এই দশকে ৬০ ম্যাচে ৩৫.৭২ ব্যাটিং গড়ে ৩,৭৮৭ রান করার পাশাপাশি ১৩৯ উইকেট শিকার করেছেন।
৮. ডেইল স্টেইন (দক্ষিণ আফ্রিকা)
২০০৪ সালে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটা স্টেইন তার ৯৩টি টেস্টের মধ্যে ৫৯ ম্যাচ খেলেছেন এই দশকে। শেষ তিন চার বছরে ইনজুরির সাথে যুদ্ধ করা স্টেইন শেষপর্যন্ত গত আগস্টে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানান। বিদায় জানানোর আগে টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা পেসার হিসাবে নিজের নাম আলোচনায় রেখে গেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট উইকেট শিকার করে এই পেসার।
তিনি পেস সহায়ক উইকেটের পাশাপাশি উপমহাদেশেও সফল ছিলেন। তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেছিলেন এশিয়াতেই। ২০১০ সালে ভারতের বিপক্ষে নাগপুরে সুইং অনন্য দৃষ্টি স্থাপন করে মাত্র ৫১ রানের বিনিময়ে সাত উইকেট শিকার করেছিলেন স্টেইন। এর তিন বছর পর জোহানসবার্গে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ৬০ রানের বিনিময়ে ১১ উইকেট শিকার করেছিলেন, যা এক ম্যাচে তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার। ১১ উইকেটের মধ্যে প্রথম ইনিংসে মাত্র আট রান খরচায় ছয় উইকেট শিকার করে পাকিস্তানকে ৪৯ রানে গুটিয়ে দেন।
স্টেইনের বোলিং গড় এবং স্ট্রাইক রেট তার সমসাময়িক অন্যান্য পেসারদের তুলনায় বেশ ভালো। তিনি এই দশকে পেসারদের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করেছেন দুর্দান্ত স্ট্রাইক রেট এবং গড়ে। এই দশকে খেলা ৫৯ ম্যাচের মধ্যে ২২.২৯ বোলিং গড়ে এবং ৪৩.৯ স্ট্রাইক রেটে ২৬৭ উইকেট শিকার করেছেন। ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন ১৫ বার এবং ম্যাচে দশ উইকেট দুবার।
উল্লেখযোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী: স্বদেশী তরুণ পেসার কাগিসো রাবাদা সম্পর্কে ডেল স্টেইন বলেছিলেন, সে আমার চেয়েও ভালো বোলার। তাই রাবাদা সম্পর্কে অন্যকিছু না বলাই শ্রেয়। যা বলার স্টেইনই বলে দিয়েছেন। তবে এই দশকের সেরা একাদশে সুযোগ না পেলেও আগামী দশকে যে তার হতে যাচ্ছে তা এখনি বলা যায়। টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকের মাত্র দুই বছরের মাথায় রাবাদা টেস্ট র্যাংকিংয়ের শীর্ষে উঠে এসেছিলেন। ইতিমধ্যে সবচেয়ে কমবয়সী বোলার হিসেবে টেস্টে ১৫০ উইকেটের মাইলফলক অতিক্রম করেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত ৪১ ম্যাচে নয়বার ইনিংসে পাঁচ উইকেট এবং চারবার ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করে ২২.৫৭ বোলিং গড়ে ও ৪০.০০ স্ট্রাইক রেটে ১৯০ উইকেট শিকার করেছেন তিনি।
৯. স্টুয়ার্ট ব্রড (ইংল্যান্ড)
এই দশকে টেস্ট ক্রিকেটে মাত্র দুজন বোলার চার শতাধিক উইকেট শিকার করেছেন। এর মধ্যে একজন স্টুয়ার্ট ব্রড। অ্যান্ডারসনের সাথে জুটি বেধে পুরো দশক জুড়েই ইংল্যান্ডকে বহু টেস্ট ম্যাচ জিতিয়েছেন তিনি। তার দুর্দান্ত সব বোলিং স্পেল ক্ষণিকের মধ্যে ম্যাচের গতিপথ বদলে দিতে পারে। এই দশকে তার সেরা বোলিং স্পেল হিসাবে সবার উপরে থাকবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৯.৩ ওভারে মাত্র ১৫ রান দিয়ে আট উইকেট তুলে নেওয়া। যার ফলে অস্ট্রেলিয়া মাত্র ৬০ রানে গুটিয়ে যায়। নটিংহ্যামের ঐ টেস্টে অ্যান্ডারসনবিহীন ইংল্যান্ডের পেস অ্যাটাকের গুরুদায়িত্ব ছিল তার হাতে, যা তিনি ভালোভাবে পালন করেছিলেন।
বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে ব্রডের সফলতা চোখে পড়ার মতো। সর্বশেষ অ্যাশেজেও তিনি বাঁহাতিদের বিপক্ষে কতটা সফল তার প্রমাণ রেখেছিলেন ওয়ার্নার-হ্যারিসদের বিপক্ষে। এই ডানহাতি পেসার এই দশকে ১১১টি টেস্ট ম্যাচ খেলে ২৭.৬৫ বোলিং গড়ে ৪০৩ উইকেট শিকার করেছেন। ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন ১৪ বার এবং ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করেছেন দুবার।
১০. নাথান লায়ন (অস্ট্রেলিয়া)
শেন ওয়ার্নের বিদায়ের প্রায় পাঁচ বছর পর তার যোগ্য উত্তরসূরি হিসাবে নাথান লায়নকে খুঁজে পেয়েছিল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। ২০১১ সালে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটার পর এখন পর্যন্ত খেলে ফেলেছেন ৯৫টি টেস্ট। তিনিই একমাত্র স্পিনার যিনি অস্ট্রেলিয়া, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ডের মাটিতে ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন। এছাড়া বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজেও পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। এই দশকে স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকার করা লায়ন অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় শেন ওয়ার্ন এবং গ্লেন ম্যাকগ্রার পরেই আছেন।
নাথান লায়ন তার ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ ম্যাচ উপমহাদেশের বাইরের খেলা সত্ত্বেও স্পিনার হিসাবে এই দশকে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকার করেছেন। একটানা বল করার ক্ষেত্রেও তার জুড়ি নেই। তিনি একমাত্র বোলার হিসাবে এই দশকে চার হাজারের অধিক ওভার বল করেছেন। তিনি ৯৫ টেস্টে ৩২.১১ বোলিং গড়ে ৩৮০ উইকেট শিকার করেছেন। ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন ১৬ বার এবং ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করেছেন দুবার। তিনি ঘরের মাঠে ৪৭ ম্যাচে শিকার করেছেন ১৮১ উইকেট। অ্যাওয়েতে ৪৪ ম্যাচে ১৮৪ উইকেট এবং নিরপেক্ষ ভেন্যুতে চার ম্যাচে ১৫ উইকেট শিকার করেছেন।
তার সেরা পারফরমেন্সের মধ্যে ২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে অ্যাডেলেইড টেস্টে ১২ উইকেট শিকার করেছিলেন। ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা স্পিন ভালো খেলে এমন কথা প্রচলিত আছে ক্রিকেট পাড়ায়। তাদের বিপক্ষে পেসবান্ধব পরিবেশে ১২ উইকেট শিকার করে ম্যাচ জেতানো বেশ বড় অর্জন। এছাড়া তাদের বিপক্ষেই তাদের মাটিতে টেস্টের প্রথম দিনে ৫০ রানের বিনিময়ে আট উইকেট শিকার করা এই দশকের সেরা বোলিং স্পেলগুলোর মধ্যে উপরের দিকে থাকবে।
উল্লেখযোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী: ভারতের স্পিনার রবীচন্দ্রন অশ্বিন এই দশকে ৭০ ম্যাচে ৩৬২ উইকেট এবং শ্রীলঙ্কার রঙ্গনা হেরাথ ৭২ ম্যাচে ৩৬৩ উইকেট শিকার করেছেন। তবে তারা বেশিরভাগ ম্যাচ খেলেছেন স্পিন সহায়ক উইকেটে। উপমহাদেশের বাইরে তাদের পারফরমেন্স ছিল গড়পড়তা। অশ্বিন তো ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে কখনও ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করতে পারেননি।
১১. জেমস অ্যান্ডারসন (ইংল্যান্ড)
এই দশকে টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকার করেছেন জেমস অ্যান্ডারসন। পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বল করা বোলারও তিনি। বয়স এবং ইনজুরির কাছে হার না মেনে বয়স ৩৭ হওয়ার পর এখনও খেলে যাচ্ছেন। বহুদিন পর ইনজুরি কাটিয়ে ফিরে এসে বক্সিং ডে টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ইনিংসেই প্রথম ওভারে উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি। এই দশকে ১০৬ ম্যাচে ২৪.৩৫ বোলিং গড়ে ৪২৯ উইকেট শিকার করেছেন। ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন ২০ বার এবং ম্যাচে দশ উইকেট শিকার করেছেন তিনবার।
ইতিমধ্যে গ্লেন ম্যাকগ্রাকে টপকে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকার করার রেকর্ড নিজের দখলে নেওয়া অ্যান্ডারসনের ক্যারিয়ারের শুরুতে অপবাদ ছিল যে, তিনি শুধু ঘরের মাঠেই ভালো। তবে বেশ কিছু দিন ধরেই অ্যাওয়ে টেস্টেও সফলতা পেয়েছেন তিনি। এই দশকে ৩০টি অ্যাওয়ে টেস্টে ১৬৫ উইকেট শিকার করেছেন। যার মধ্যে ব্রিজটাউনে দুবার, কেপটাউন, অ্যাডেলেইড এবং গলেও পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন।
উইকেট থেকে একটু বাড়তি সুবিধা পেলে অ্যান্ডারসন হয়ে যান আনপ্লেয়েবল। তখন নতুন লাল বলে তার বল মোকাবেলা কঠিন কাজগুলোর মধ্যে একটি হয়ে পড়ে। দুদিকেই সমানভাবে সুইং করাতে পারেন তিনি। যার ফলে পুরো দশক জুড়েই সফলতা পেয়েছেন। ইংল্যান্ডে তার সফলতার পাল্লা বরাবর ভারি ছিল। এই দশকেও ২১.১৪ বোলিং গড়ে ২৮৬ উইকেট শিকার করেছেন।