সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ম্যাচের শেষ বলে বিজয়ী দল নির্ধারণ হওয়ার ঘটনা নিয়মিত দেখা যায়। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে এমন ঘটনা নিয়মিত দেখা যায় না। কারণ এই ফরম্যাটে দ্রুত রান তোলার কোনো তাড়া নেই। নির্দিষ্ট সময় শেষ হওয়ার পর ম্যাচ অমীমাংসিতভাবে শেষ হয়। তাই টেস্ট ক্রিকেটে কম রানের ব্যবধানে ম্যাচ জয়ের ঘটনা খুবই বিরল।
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে চার কিংবা এর চেয়ে কম রানের ব্যবধানে ম্যাচ জয়ের ঘটনা ঘটেছে মাত্র পাঁচবার। নাটকীয়তায় ভরপুর এই পাঁচটি ম্যাচ সম্পর্কে চলুন জেনে আসা যাক।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম অস্ট্রেলিয়া – ১৯৯৩
১৯৯৩ সালের ২৩ জানুয়ারি, অ্যাডিলেড ওভালে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পাঁচ ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ১-০ তে পিছিয়ে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের চতুর্থ টেস্টে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। অস্ট্রেলিয়ার গতিময় উইকেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই করেছিলেন সিমন্স এবং হেইন্স। এই দুজন উদ্বোধনীয় উইকেট জুটিতে ৮৪ রান যোগ করেছিলেন। দুই ওপেনার উইকেটে সেট হওয়ার পরেও নিজেদের ইনিংস বড় করতে পারেননি। হেইন্স ৪৫ রানে এবং সিমন্স ৪৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন। এরপর ব্রায়ান লারা এবং জুনিয়র মারি ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের আর কোনো ব্যাটসম্যান উইকেটে থিতু হতে পারেননি। লারা ৫২ রান এবং মারি অপরাজিত ৪৯ রানের ইনিংস খেলেন।
মার্ভ হিউজেস ৬৪ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট শিকার করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৫২ রানে আটকে রাখতে সাহায্য করেন। জবাবে অস্ট্রেলিয়া নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২১৩ রান সংগ্রহ করে। ব্যাট হাতেও অস্ট্রেলিয়ার স্টার পারফর্মার ছিলেন মার্ভ হিউজেস। তিনি দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৩ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়া স্টিভ ওয়াহ ৪২ রান তোলেন। কার্টলি অ্যামব্রোস ৬ উইকেট শিকার করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩৯ রানের লিড এনে দেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে অফস্পিনার টিম মে’র ঘূর্ণিতে ১৪৬ রানে সবক’টি উইকেট হারায়। তিনি মাত্র ৯ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট শিকার করেন। অধিনায়ক রিচি রিচার্ডসনের ৭২ রানের ইনিংসের সুবাদে অস্ট্রেলিয়াকে ১৮৬ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পার্থের চতুর্থ ইনিংসে এই রান তাড়া করে ম্যাচ জেতা সহজ কাজ যে নয় সেটা শুরু থেকেই অস্ট্রেলিয়াকে উপলব্ধি করায় উইন্ডিজ পেসাররা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকা অস্ট্রেলিয়া ৭৪ রান তুলতেই ৭ উইকেট হারিয়ে বসে। সেখান থেকে টেল-এন্ডারদের সাথে দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন অভিষিক্ত জাস্টিন ল্যাঙ্গার। শেন ওয়ার্ন, টিম মে’র সাথে জুটি গড়ে দলকে ১৪৪ রানে পৌঁছে দিয়ে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন ল্যাঙ্গার।
তখনও জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিলো ৪২ রানের। ক্রিজে তখন দশ নাম্বার ব্যাটসম্যান টিম মে এবং এগারো নাম্বার ব্যাটসম্যান ক্রেগ ম্যাকডারমট। তারা দুজন ঐদিন অস্ট্রেলিয়ার জন্য ত্রাতা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের মতো দেখে-শুনে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়াকে প্রায় নাটকীয় জয় এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু জয় থেকে মাত্র ২ রান দূরে থাকতে ওয়ালশের বলে উইকেটরক্ষক মারির হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ম্যাকডারমট। জয় থেকে মাত্র ১ রান দূরে থাকতে অস্ট্রেলিয়া নিজেদের সবক’টি উইকেট হারায়। তখনও ৪২ রানে অপরাজিত ছিলেন টিম মে। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ১ রানের ব্যবধানে জয় পাওয়ার একমাত্র ঘটনা এটি।
অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ড – ২০০৫
২০০৫ সালের অ্যাশেজ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টটি টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের অন্যতম সেরা একটি ম্যাচ। ঐ অ্যাশেজে ব্যাটে-বলে নিদারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে দুই দলই সিরিজটিকে স্মরণীয় করে রেখেছে।
অপ্রতিরোধ্য অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে পরাজয়ের পর দ্বিতীয় টেস্টে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর মাত্র ২ রানে ম্যাচ জিতে নেয় ইংল্যান্ড।
ইংল্যান্ডের দেওয়া ২৮২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকা অস্ট্রেলিয়া। ফলে শুরু থেকেই ম্যাচের লাগাম ইংলিশদের হাতে ছিলো। একপর্যায়ে অজিদের সংগ্রহ ছিলো ৭ উইকেটে ১৩৭ রান। সেখান থেকে দলকে জয়ের স্বপ্ন দেখান মাইকেল ক্লার্ক, শেন ওয়ার্ন, ব্রেট লি এবং মাইকেল ক্যাসপ্রোভিচ।
শেন ওয়ার্নকে সাথে নিয়ে মাইকেল ক্লার্ক অষ্টম উইকেট জুটিতে ৩৭ রান যোগ করেন। এরপর হার্মিসনের স্লোয়ারে পরাস্ত হয়ে ৩০ রান করা ক্লার্ক বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন। ক্লার্কের বিদায়ের পর ক্রিজে ব্রেট লি অজিদের জয়ের স্বপ্ন দেখাতে থাকেন। ওয়ার্নকে সাথে নিয়ে নবম উইকেট জুটিতে ৪৫ রান এবং ক্যাসপ্রোভিচকে সাথে নিয়ে শেষ উইকেট জুটিতে ৫৯ রান যোগ করেন তিনি। কিন্তু জয় থেকে মাত্র ২ রান দূরে থাকতে হার্মিসনের বাউন্সার সামলাতে না পেরে উইকেটরক্ষক জোন্সের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ২০ রান করা ক্যাসপ্রোভিচ। ব্রেট লি দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৩ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন। এদিন টেল-এন্ডারদের ব্যাটিং দক্ষতায় অস্ট্রেলিয়া নাটকীয় এক জয় পেয়েই যাচ্ছিলো। কিন্তু শুরু থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে রাখা ইংল্যান্ড শেষ হাসি হাসে।
বার্মিংহ্যামে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে দুই দলই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে। টসে হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পাওয়া ইংল্যান্ড নিজেদের প্রথম ইনিংসে মাত্র ৭৯.২ ওভারে ৪০৭ রান সংগ্রহ করে। ওপেনার ট্রেসকোথিক ১০২ বলে ৯০ রান এবং ফ্লিনটফ ৬২ বলে ৬৮ রানের ইনিংস খেলেন। জবাবে অস্ট্রেলিয়া নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৭৬ ওভারে ৩০৮ রান সংগ্রহ করে। ল্যাঙ্গার, পন্টিং অর্ধশতক হাঁকালেও নিজেদের ইনিংস লম্বা করতে ব্যর্থ হন। ফলে ইংল্যান্ড ৯৯ রানের লিড নেয়।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দ্রুত রান তোলার পাশাপাশি দ্রুত উইকেট হারাতে থাকে ইংল্যান্ড। শেন ওয়ার্নের স্পিন এবং ব্রেট লির গতির সামনে ইংল্যান্ডের টপ অর্ডার দাঁড়াতে পারেনি। ওয়ার্ন ৬টি এবং লি ৪টি উইকেট শিকার করেন। অন্যান্য ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মধ্য দিয়েও ফ্লিনটফ তার স্বভাবসুলভ ব্যাটিং করে ৭৩ রান তুলে ইংল্যান্ডকে ২৮১ রানের লিড নিতে সাহায্য করেন।
ম্যাচের দুই ইনিংসে অর্ধশতক হাঁকানো ফ্লিনটফ বল হাতেও দুই ইনিংস মিলিয়ে ৭ উইকেট শিকার করেন। ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত পারফর্ম করার ফলস্বরূপ ম্যাচ সেরার পুরস্কার তার হাতেই ওঠে।
ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়া – ১৯০২
১৯০২ সালের অ্যাশেজ সিরিজের চতুর্থ টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ১২৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ড জয় থেকে ৪ রান দূরে থেকে ১২০ রানে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ৩ রানে পরাজিত হয়।
অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা ইংল্যান্ডের একপর্যায়ে ৩ উইকেটে ৯২ রান ছিলো। সেখান থেকে ইংলিশদের জয় সময়ের ব্যাপার ছিলো। কিন্তু হিউ ট্রাম্বল এবং জ্যাক সাউন্ডার্সের বোলিং তোপের মুখে ২৮ রান তুলতেই শেষ ৭ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। ট্রাম্বল ৬ উইকেট এবং সাউন্ডার্স ৪ উইকেট শিকার করেন।
এর আগে ম্যানচেস্টার টেস্টে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া ২৯৯ রান সংগ্রহ করে। এই রান সংগ্রহে বড় ভূমিকা পালন করেন ভিক্টর ট্রাম্পার। তিনি ১১৫ মিনিট ব্যাট করে ১০৪ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়া রেগি ডাফ ৫৪, ক্লেম হিল ৬৫ এবং অধিনায়ক জো ডার্লিং ৫১ রানের ইনিংস খেলেন। জবাবে স্ট্যানলি জ্যাকসনের ১২৮ এবং লেন ব্রাউন্ডের ৬৫ রানের ইনিংস সত্ত্বেও ইংল্যান্ড নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২৬২ রানে থেমে যায়।
প্রথম ইনিংসে ৩৭ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বিল লকউডের বোলিং তোপের মুখে পড়ে ৮৬ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট শিকার করা এই মিডিয়াম পেসার দ্বিতীয় ইনিংসে ২৮ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে জো ডার্লিং (৩৭) এবং সিড গ্রেগরি (২৪) ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যান দুই অংকের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি। শেষপর্যন্ত বোলারদের কল্যাণে তাদের ইনিংস দুটি ম্যাচজয়ী ইনিংসে পরিণত হয়।
অস্ট্রেলিয়া বনাম ইংল্যান্ড – ১৯৮২
১৯৮২ সালের বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ২৯২ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিলো সফরকারী ইংল্যান্ড। মেলবোর্নে চতুর্থ ইনিংসে ২৯২ রান তাড়া করতে নেমে ৩৯ রানের মধ্যে দুই টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যান কেপলার ওয়েসলেস এবং গ্রেগ চ্যাপেলের উইকেট হারিয়ে পথ হারায় অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু চতুর্থ উইকেট জুটিতে কিম হিউজেস এবং ডেভিড হুকস ১০০ রানের জুটি গড়ে অজিদের ম্যাচে ফেরান। হিউজেস ৪৮ রান করে এবং হুকস ৬৮ রান করে দ্রুত ফিরে গেলে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে স্বাগতিকরা। অস্ট্রেলিয়া ২১৮ রানের মাথায় ৯ উইকেট হারানোর পর ইংল্যান্ডের জয় সময়ের ব্যাপার ছিলো। তবে তা হতে দিচ্ছিলেন না অ্যালান বোর্ডার এবং জেফ থমসন। তারা শেষ উইকেট জুটিতে ৭০ রান যোগ করে অজিদের জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন।
ইয়ান বোথাম অস্ট্রেলিয়াকে নাটকীয় জয় পেতে দেননি। এগারো নাম্বার ব্যাটসম্যান জেফ থমসনকে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়ে ইংল্যান্ডের ৩ রানের জয় নিশ্চিত করেন। শেষপর্যন্ত অ্যালান বোর্ডারের অপরাজিত ৬২ রানের ইনিংস বিফলে যায়।
মেলবোর্ন টেস্টে দুই দলই সমানে সমানে লড়াই করে। টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করার আমন্ত্রণ পাওয়া ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ২৮৪ রান সংগ্রহ করে। জবাবে অস্ট্রেলিয়া ৩ রানের লিড নিয়ে ২৮৭ রানে সবক’টি উইকেট হারায়। ইংল্যান্ড তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ২৯৪ রান সংগ্রহ করে। ফলে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ২৯২ রানের।
নরমান কাওয়ান্সের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে একপর্যায়ে ইংল্যান্ডের জয় সময়ের ব্যাপার ছিলো। কিন্তু সেখান বোর্ডার-থমসনের সাহসী ব্যাটিংয়ে জয়ের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলো অস্ট্রেলিয়া। শেষপর্যন্ত কোনো অঘটন ঘটেনি। ম্যাচসেরা কাওয়ান্সের ৬ উইকেট শিকারের কল্যাণে ইংল্যান্ড ৩ রানের জয় পায়।
পাকিস্তান বনাম নিউ জিল্যান্ড – ২০১৮
পাকিস্তানের মাটিতে ক্রিকেট নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের ঘরের মাঠে পরিণত হয়েছে। সেখানে তাদের বিপক্ষে জয় পাওয়া বেশ কঠিন কাজ। এশিয়ার বাইরের দলগুলোর জন্য তো সেটা আরও কঠিন কাজ। নাটকীয়ভাবে, নিউ জিল্যান্ড সেই কঠিন কাজটিই করে দেখালো। আবুধাবিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪ রানের জয় তুলে নেয় কিউইরা। ক্রিকেট বিশ্বে পাকিস্তান আন-প্রেডিক্টেবল দল হিসাবে পরিচিত। আবুধাবি টেস্টে সেটি আরও একবার প্রমাণিত করেছে তারা।
নিউ জিল্যান্ডের দেওয়া ১৭৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৪৮ রানে ৩ উইকেট হারানোর পরেও আসাদ শফিক এবং আজহার আলীর ৮২ রানের জুটির উপর ভর করে জয়ের পথেই ছিলো পাকিস্তান। আসাদ শফিক ব্যক্তিগত ৪৫ রানে এবং দলীয় ১৩০ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন সাজঘরে ফেরেন, তখনও ম্যাচের লাগাম পাকিস্তানের হাতে। সেখান থেকে আরও ১৭ রান যোগ করে ইনফর্ম ব্যাটসম্যান বাবর আজম রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন। এরপরেই শুরু হয় অভিষিক্ত স্পিনার এজাজ প্যাটেলের ঘূর্ণি জাদু। তিনি সরফরাজ আহমেদ, বিলাল আসিফ এবং হাসান আলীকে দ্রুত ফিরিয়ে দিয়ে নিউ জিল্যান্ডকে জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন। তখনও উইকেটের একপ্রান্ত আগলে রেখে ব্যাট করে যাচ্ছিলেন আজহার আলী।
শেষপর্যন্ত জয় থেকে মাত্র ৫ রান দূরে থাকতে এজাজ প্যাটেলের বলে ব্যক্তিগত ৬৫ রানে আম্পায়ার্স কলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরেন আজহার আলী। পাকিস্তানের শেষ ৬ উইকেট মাত্র ২৪ রানের মধ্যে তুলে নিয়ে ৪ রানের নাটকীয় জয় পায় নিউ জিল্যান্ড। অভিষেক ম্যাচেই ৭ উইকেট শিকার করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন এজাজ প্যাটেল। এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করে নিউ জিল্যান্ড ১৫৩ রানে সবক’টি উইকেট হারিয়েছিলো, যার মধ্যে অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন একাই করেন ৬৩ রান। জবাবে পাকিস্তান নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২২৭ রান সংগ্রহ করে। ৭৪ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে নিকোলস এবং ওয়াটলিংয়ের অর্ধশতকের উপর ভর করে ২৪৯ রান সংগ্রহ করে সফরকারীরা। অভিষিক্ত এজাজ প্যাটেলের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে তাদের অর্ধশতক দুটি ভেস্তে যায়নি।