৪-৪-২ ফর্মেশন-পরবর্তী যুগে ফুটবল দলগুলোর মধ্যে কৌশলগত বিভিন্ন পরিবর্তন আসতে শুরু করে, যার ফলস্বরূপ দলগুলো তাদের ফর্মেশনের ব্যবহারে কোনো একটি নির্দিষ্ট ফর্মেশনের উপর নির্ভরশীল না হয়ে খেলার পরিস্থিতি এবং নিজেদের খেলার ধরন অনুসারে ফর্মেশন বাছাই করতে শুরু করে।
এই মুহূর্তে ফুটবলের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফর্মেশনগুলোর তালিকা করলে শুরুর দিকে থাকবে ৪-৩-৩, ৪-২-৩-১, ৩-৪-৩, ৩-৫-২ ফর্মেশনগুলো। ৪-১-৪-১ ফর্মেশন এমন ফর্মেশনগুলোর মধ্যে একটি, যেটা বর্তমান সময়ে খুব বেশি ফুটবল দলকে ব্যবহার করতে দেখা যায় না। তবে দ্রুতগতির ট্রানজিশনাল ফুটবল খেলা দলগুলোর মধ্যে ৪-১-৪-১ ফর্মেশন বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
প্রথমেই কথা বলা যাক এই ‘ট্রানজিশন’ নিয়ে। ‘ট্রানজিশন’ বলতে সহজ কথায় বোঝায় এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তন। ফুটবলে খেলার গতির উপর ভিত্তি করে দলগুলোর খেলার ধরনকে দুইভাগে ভাগ করা যায়; ধীরগতির বিল্ডআপ-নির্ভর ফুটবল এবং দ্রুতগতির প্রতিআক্রমণনির্ভর ফুটবল৷ ৪-১-৪-১ ফর্মেশন ব্যবহার করা দলগুলো খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে রক্ষণভাগ থেকে আক্রমণভাগে উঠে পড়ে, এজন্য তাদের খেলার ধরনকে বলা হয় দ্রুতগতির ট্রানজিশনাল ফুটবল।
আজ আমরা কথা বলব ৪-১-৪-১ ফর্মেশন নিয়ে; কথা বলব এই ফর্মেশনে রক্ষণ এবং আক্রমণ দুই ক্ষেত্রেই কীভাবে একটি দল সব্যসাচী হয়ে ওঠে, কথা বলব এই ফর্মেশনের শক্তিমত্তা এবং সম্ভাব্য দুর্বলতাগুলো নিয়ে।
৪-১-৪-১ ফর্মেশনের গঠন
৪-১-৪-১ সিস্টেমের ধারণা একসময়ের খুব জনপ্রিয় ৪-৪-২ ফর্মেশন থেকেই এসেছে। এই ফর্মেশন মূলত ৪-৩-৩ এবং ৪-৪-২ ফর্মেশনের কিছুটা বিবর্তিত রূপ। ৪-৪-২ ফর্মেশনে রক্ষণভাগ এবং মাঝমাঠের মধ্যবর্তী জায়গায় কোনো ফুটবলার থাকে না, যে কারণে প্রতিপক্ষের প্লেমেকারদের সামনে ফাইনাল থার্ডে অনেকটা ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়ে পড়ে। এজন্য তার পক্ষে ‘বিটুইন দ্য লাইনের’ ফাঁকা জায়গায় এসে বক্সের ভেতর স্ট্রাইকারকে পাস দেওয়া কিংবা সরাসরি ড্রিবল করে গোলে শট নেওয়া উভয়ই বেশ সহজসাধ্য হয়ে পড়ে।
৪-৪-২ ফর্মেশনের এই সমস্যা ৪-১-৪-১ ফর্মেশনের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব। এই ফর্মেশনে দুই স্ট্রাইকার খেলার পরিবর্তে একজন স্ট্রাইকার এবং একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার থাকেন, যিনি রক্ষণভাগ এবং মাঝমাঠের মধ্যবর্তী জায়গায় অবস্থান করেন। ফলে অপর মিডফিল্ডাররা আরো স্বাধীনভাবে আক্রমণে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান।
৪-১-৪-১ ফর্মেশনের আরেকটি ভালো দিক হচ্ছে, এই ফর্মেশনকে আক্রমণের সময় খুব সহজেই ৪-৩-৩ অথবা ৪-২-৩-১ এবং রক্ষণের সময় ৪-৪-২ ফর্মেশনে পরিবর্তন করা যায়। এই ফর্মেশন সাধারণত ২ জন সেন্টারব্যাক, ২ জন ফুলব্যাক, ১ জন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার, ২ জন বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডার, ২ জন উইঙ্গার এবং ১ জন স্ট্রাইকার নিয়ে সাজানো হয়।
এই ফর্মেশনে খেলোয়াড়দের অবস্থানকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। চার ডিফেন্ডার এবং একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার – বিল্ডআপের সময় এই পাঁচজন সাধারণত নিজেদের অর্ধে পজিশন নিয়ে থাকে। তাদের মূল কাজ থাকে ফরোয়ার্ড পাঁচজনকে বল সরবরাহ করা।
৪-১-৪-১ ফর্মেশনে দুই বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডারই অনেকটা হাইলাইনে অবস্থান করে থাকে। ফলে মাঠের মাঝের অংশে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে নিউমেরিক্যাল সুপিওরিওরিটি অর্জন করাটা একপ্রকার অসম্ভব হয়ে পড়ে, যে কারণে রক্ষণ থেকে বিল্ডআপের সময় ডিফেন্সিভ খেলোয়াড়দের লক্ষ্য থাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাইলাইনে থাকা ফরোয়ার্ড খেলোয়াড়দের কাছে বল স্থানান্তর করা। এজন্য সাধারণত দ্রুতগতির বিল্ডআপ এবং লং বলে শক্তিশালী দলগুলোকে এই ফর্মেশনে খেলতে দেখা যায়। বিগত সময়ে পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি, মার্সেলো বিয়েলসার লীডস ইউনাইটেড এবং হোর্হে সাম্পাওলির অলিম্পিক মার্শেইকে এই ফর্মেশন ব্যবহার করে খেলতে দেখা গেছে।
খেলোয়াড়দের ভূমিকা
এই ফর্মেশনে ২ সেন্টারব্যাককে বল পায়ে শক্তিশালী হতে হয়, সেন্টার হাফে প্রতিপক্ষের বাড়তি খেলোয়াড়ের কাছে বিট হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় সাধারণত সেন্টারব্যাকরা নিজেরা বল নিয়ে সামনে না টেনে বরং ফাইনাল থার্ডে লং বল বাড়ানোর দিকে বেশি মনোযোগ দেয়।
এই ফর্মেশনে দুই ফুলব্যাকের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সেন্টারপিচে নিউমেরিক্যাল সুপিরিওরিটি না পাওয়ায় প্রতিপক্ষের প্রেসিংয়ের সামনে সাধারণত ফুলব্যাকরাই রক্ষণ থেকে আক্রমণভাগে বল এগিয়ে নেওয়ার কাজে অংশ নেয়, অথবা ফাইনাল থার্ডে লং বল বাড়ানোর চেষ্টা করে। আক্রমণের সময় দুই ফুলব্যাক ওভারল্যাপ করে ফাইনাল থার্ডে ‘ত্রিভুজ’ তৈরী করে আক্রমণের ধার বাড়ানোর চেষ্টা করে।
৪-১-৪-১ ফর্মেশনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার রোলে খেলা ফুটবলারের। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার সাধারণত ডিফেন্সিভ লাইনের কিছুটা উপরে এবং মিডফিল্ড লাইনের কিছুটা নিচে পজিশন নেয়, ফলে বিল্ডআপের সময় ডায়ামন্ড আকৃতি তৈরী করে অপনেন্টের হাই ব্লক প্রেসিং লাইনকে অতিক্রম করে বল সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া বেশ সহজতর হয়।
বিল্ডআপের সময় তিনি দুই সেন্টারব্যাকের মাঝে নেমে তাদের মাঠের দুইপাশে আরো ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ দেন। এতে করে প্রতিপক্ষের প্রেসিং জোন অনেকটা বড় হয়ে যায়, তাদের পক্ষে ডিফেন্ডারদের প্রেস করে বিল্ডআপে বাধা দেওয়াটা বেশ কঠিন হয়ে যায়।
প্রতিপক্ষের আক্রমণের সময় ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার সাধারণত দুই সেন্টারব্যাকের সামনে শিল্ডের মতো অবস্থান করেন। তার মূল কাজ থাকে প্রতিপক্ষের মূল প্লেমেকারকে সরাসরি ম্যান মার্ক করে তার ক্রিয়েটিভিটি নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া৷ এজন্য তাকে বল ইন্টারসেপশনের পাশাপাশি ট্যাকলিং এবং শট ব্লক করার ক্ষেত্রেও সমানভাবে দক্ষ হতে হয়।
৪-৩-৩ ফর্মেশনের সাথে এই ফর্মেশনের মূল পার্থক্য হচ্ছে মিডফিল্ডারদের ভূমিকায়। ৪-৩-৩ ফর্মেশনে অপর দুই মিডফিল্ডার মিডফিল্ডের আশেপাশে অবস্থান করে মিডফিল্ডে ‘নিউমেরিক্যাল সুপিরিওরিটি’ অর্জন করতে সহায়তা করে। কিন্তু ৪-১-৪-১ ফর্মেশনে দুই বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডারই সাধারণত মিডফিল্ডে অবস্থান করার পরিবর্তে প্রতিপক্ষ বক্সের আশেপাশে অবস্থান করে বক্সের বাইরে ওভারলোড তৈরি করে রক্ষণ থেকে আসা লং বল নিজেদের দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে।
দুই বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডারের মধ্যে একজন নাম্বার এইটের ভূমিকায় খেলে থাকেন, তিনি বিল্ডআপের সময় মিডফিল্ডে নেমে বল বাহকের সামনে বাড়তি পাসিং অপশন তৈরী করে বলকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেন। অপর মিডফিল্ডার আক্রমণের সময় সেকেন্ড স্ট্রাইকারের ভূমিকায় প্রতিপক্ষ বক্সে স্ট্রাইকারের তৈরি করা ফাঁকা জায়গায় পৌছে গোলে শট নেওয়ার চেষ্টা করে।
দুই উইঙ্গার টাচলাইন এরিয়ায় পজিশন নিয়ে প্রতিপক্ষ রক্ষণভাগকে প্রসারিত করার চেষ্টা করে, এতে করে প্রতিপক্ষের রক্ষনভাগের খেলোয়াড়রা অনুভূমিক বরাবর ছড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়, ফলে ফাইনাল থার্ডের হাফস্পেসে ফাঁকা জায়গা তৈরী হয়। হাফস্পেসের সেই জায়গা দিয়ে দুই বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডার ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে।
নাম্বার নাইন রোলে খেলা ফুটবলারের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তার মূল কাজ হচ্ছে বক্সের আশেপাশে পজিশন নিয়ে টিমমেটের ফাইনাল পাসের অপেক্ষায় থাকা এবং গোল বরাবর শট নেওয়ার চেষ্টা করা। এর পাশাপাশি তাকে আরেকটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ কাজেও অংশগ্রহণ করতে হয়; স্ট্রাইকার তার পজিশন থেকে মিডফিল্ডে নেমে, অথবা আড়াআড়ি রান নিয়ে তার মার্কারকে ‘আউট অব পজিশনে’ নিয়ে আসে। এতে করে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে প্রচুর ফাঁকা জায়গা তৈরী হয়। দ্বিতীয় স্ট্রাইকার সেই ফাঁকা জায়গায় অপারেট করে গোল করার চেষ্টা করে।
বিল্ডআপ
বিল্ডআপের সময় ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার দুই সেন্টারব্যাকের মাঝে নেমে তাদের দুইপাশে আরো ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ করে দেয়। ফলে দুই ফুলব্যাক আরো উপরে উঠে আক্রমণে সাহায্য করার সুযোগ পায়। দুই বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডার যতটুক সম্ভব প্রতিপক্ষের বক্সের কাছাকাছি অবস্থান করে। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের পজিশনের উপর ভিত্তি করে দলের ফর্মেশন তখন ৩-২-৩-২ অথবা ২-৩-৩-২ এ পরিবর্তিত হয়।
সেন্টার এরিয়া দিয়ে আক্রমণে যাওয়া কিছুটা কঠিন হওয়ায় এই ফর্মেশনে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় উইং এরিয়ায় ত্রিভুজ তৈরী করে সেখান থেকে দ্রুত ওয়ান-টু পাসের মাধ্যমে আক্রমণ সৃষ্টি করতে। এসময় দুই ফুলব্যাক ওভারল্যাপ করে উপরে উঠে আসে। দুই সেন্টারব্যাক অথবা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ডিফেন্সিভ থার্ড থেকে উইং বরাবর লং বল দিতে থাকে। তখন উইঙ্গার টাচলাইন বরাবর পজিশন নেয়, ফুলব্যাকের সাথে দ্রুত ওয়ান-টু পাস খেলে বক্সে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে, অথবা টাচলাইন থেকে হাফস্পেস ধরে রান নেওয়া মিডফিল্ডার বরাবর লো ক্রস করে।
আবার কখনো কখনো ফুলব্যাক, বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডার এবং উইঙ্গার মিলে ত্রিভুজাকৃতি তৈরী করে টাচলাইন এরিয়া থেকে কাটব্যাক করার পরিবর্তে বক্সের বাইরে হাফস্পেস থেকে ‘ইনসুইঙ্গিং’ ক্রস করার চেষ্টা করে।
প্রেসিং
আগেই বলেছি, ৪-১-৪-১ ফর্মেশনে দুই বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডারই প্রতিপক্ষ অর্ধের অনেকটা উপরিভাগে অবস্থান করে। স্ট্রাইকার, দুই উইঙ্গার এবং দুই বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডার, অর্থাৎ মোট পাঁচজন ফুটবলার প্রতিপক্ষের বক্সের কাছাকাছি অবস্থান করে প্রেস করায় প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের জন্য বল সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়।
ফাইনাল থার্ডে প্রেসিংয়ের সময় দলের একমাত্র স্ট্রাইকার প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের সরাসরি প্রেস করার পরিবর্তে বল পায়ে থাকা সেন্টারব্যাকের সাথে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের পাসিং লাইন বন্ধ করে রাখেন। তখন একজন বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডার উপরে এসে অপর সেন্টারব্যাককে মার্ক করে রাখে, অথবা বল বাহকের সাথে অপর সেন্টারব্যাকের পাসিং লাইন বন্ধ করে দেয়। এ সময় দুই উইঙ্গার প্রতিপক্ষের দুই ফুলব্যাককে ম্যান মার্ক করে রাখে; অপর বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডার এবং ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার মিলে প্রতিপক্ষের অপর দুই মিডফিল্ডারকে মার্ক করে রাখার চেষ্টা করে। ফলে, বলবাহকের কাছে নিজেদের স্ট্রাইকার বরাবর লং পাস বাড়ানো ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।
প্রতিপক্ষের স্ট্রাইকারকে মার্ক করার জন্য দুই সেন্টারব্যাক নিয়োজিত থাকে। একজন স্ট্রাইকারকে সরাসরি প্রেস করে, অপর সেন্টারব্যাক তখন ম্যান-মার্কিং ফ্রি হয়ে অবস্থান অবস্থান করে। প্রতিপক্ষের স্ট্রাইকার লং বল রিসিভ করতে পারলেও সেন্টারব্যাকের সরাসরি প্রেসিংয়ের কারণে তার পক্ষে পুরোপুরিভাবে বলের দখল নেওয়াটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। এই সুযোগে ম্যান মার্কিং ফ্রি থাকা অপর সেন্টারব্যাক সেকেন্ড বল জিতে বলের দখল কেড়ে নেয়। এটাই হচ্ছে এই ফর্মেশনে প্রেস করে বল কেড়ে নেওয়ার সবচেয়ে কার্যকরী উপায়।
৪-১-৪-১ ফর্মেশনে আক্রমণের সময় দুই ফুলব্যাকই ওভারল্যাপ করে প্রতিপক্ষ অর্ধে চলে যায়, যা নিজেদের রক্ষণভাগের দুইপ্রান্তে প্রচুর ফাঁকা জায়গার তৈরী করে। ফলে কোনোভাবে যদি আক্রমণের সময় বলের দখল হারায়, তখন প্রতিপক্ষের উইঙ্গাররা খুব একটা বাধার সম্মুখীন না হয়েই আক্রমণে উঠে আসার সুযোগ পেয়ে যায়। এই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়লে সাধারণত দু’টি পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়।
আক্রমণের সময় ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার প্রতিপক্ষ অর্ধে না গিয়ে নিজেদের অর্ধেই অবস্থান করে; উইং ধরে প্রতিপক্ষের উইঙ্গারদের প্রতিআক্রমণের সময় চেষ্টা করে প্রতিপক্ষের উইঙ্গারদের প্রেস করে আক্রমণের গতি কিছুটা কমিয়ে দিতে। সেই সময়ে বাকি ডিফেন্ডাররা নিজেদের পজিশনে গিয়ে সংগঠিত হয়ে ওঠার সুযোগ পায়। তবে সেটা যদি সম্ভব না হয়, তখন তিনি চেষ্টা করেন হলুদ কার্ডের বিনিময়ে হলেও কৌশলগত ফাউল করে প্রতিপক্ষের আক্রমণ নষ্ট করে দিতে।
ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার যদি যথাসময়ে ট্র্যাকব্যাক করতে ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে সেন্টারব্যাক তার ডিফেন্সিভ ফানেল থেকে বেরিয়ে উইঙ্গারকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। তখন ডিফেন্সিভ ফানেলের (ডিফেন্সিভ ফানেল হচ্ছে গোলপোস্টের মাঝখান থেকে দুই পাশ বরাবর আড়াআড়ি কাল্পনিক লাইন যেটা মাঝমাঠের সাইডলাইন পর্যন্ত বিস্তৃত। রক্ষণের সময় ডিফেন্ডাররা ডিফেন্সিভ ফানেলের মধ্যে অবস্থান করে প্রতিপক্ষের আক্রমণের হাত থেকে গোলপোস্টকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করেন। নিচের ছবি দ্রষ্টব্য।) ভেতরে যে ফাঁকা জায়গার সৃষ্টি হয়, সেটা কভার করার জন্য ফুলব্যাক দ্রুত নিচে নেমে এসে সেন্টারব্যাকের পজিশনে চলে আসেন।
যেমনটা আমরা দেখেছি, আক্রমণ কিংবা রক্ষণ উভয়ক্ষেত্রেই ৪-১-৪-১ একটি দুর্দান্ত ফর্মেশন হতে পারে। তবে এর সবটাই নির্ভর করছে খেলোয়াড়দের উপর, এবং কোচ কোন কৌশল ব্যবহার করছেন, তার উপর। ৪-১-৪-১ ফর্মেশন ব্যবহার করে একইসাথে জমাট রক্ষণ এবং ত্রাস সৃষ্টিকারী আক্রমণভাগ উভয়ই গঠন করা যায়। মডার্ন ফুটবলে দলগুলো যেভাবে দ্রুতগতির বিল্ডআপনির্ভর ফুটবলের দিকে ঝুঁকছে, তাতে করে এই ফর্মেশনের জনপ্রিয়তা দিনকে দিন বাড়তেই থাকে, সেটা এখনই চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়।