ইয়াসির আলী রাব্বি: টেকনিক্যাল ব্যবচ্ছেদ

ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিচিত মুখ তিনি, নিয়মিত পারফরমারদের একজনও। ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো ডাক পেয়েছিলেন জাতীয় দলে, এরপর দলের সাথে ঘুরেছেন পুরো দুই বছর। অবশেষে ২০২১ সালের নভেম্বরে এসেছে লাল-সবুজের ক্যাপটা মাথায় পরার সুযোগ। আর সেই সুযোগটা ইয়াসির আলী চৌধুরী রাব্বি লুফে নিয়েছেন দুই হাতে, নিজেকে জাতীয় দলের মোটামুটি ‘অবিচ্ছেদ্য’ অংশ করে তুলেছেন। মাত্র একটা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেললেও অস্ট্রেলিয়াগামী বিমানে ঠিকই নিজের জায়গা করে নিয়েছেন এই ছাব্বিশ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।

চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের টেকনিক্যাল ব্যবচ্ছেদই আজকের আলোচনা। টেকনিক্যাল ব্যবচ্ছেদের শুরুতে ইয়াসির আলীর তূণের অস্ত্রগুলো সম্পর্কে ধারণা নেওয়া যাক।

লেট কাট

লেট কাট খেলছেন ইয়াসির; Image Source: Rabbiholebd

পেস-স্পিন দুই ধরনের বোলিংয়ের বিপক্ষেই লেট কাট খেলতে দেখা যায় ইয়াসির আলীকে। স্বাভাবিকভাবে অফ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরের ব্যাক অব লেন্থের বলগুলোকেই লেট কাটের জন্য বেছে নেন ইয়াসির। ওভার দ্য উইকেটে বোলিংয়ে আসা ডানহাতি পেসারের বিপক্ষে সামনের পাকে অফ স্ট্যাম্পের লাইনে এনে পেছনের পায়ে ভর করে লেট কাট খেলেন ইয়াসির, বাঁহাতি পেসারের বিপক্ষে সামনের পা আসে মিডল স্ট্যাম্প পর্যন্ত।

স্কয়ার কাট

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইয়াসিরের স্কয়ার কাট; Image Source: Rabbiholebd

লেগ বা মিডল-লেগ স্ট্যাম্পে গার্ড নেওয়ার পর বোলারের বল ছোঁড়ার আগ মুহূর্তে পেছনের পাকে আরেকটু পেছনে নিয়ে যান ইয়াসির, এরপর সামনের পাকে অফ-মিডল স্ট্যাম্পের লাইনে এনে খেলেন স্কয়ার কাট।

বিপিএলেও রয়েছে ইয়াসিরের স্কয়ার কাটের উদাহরণ; Image Source: Rabbiholebd

লেট কাটের ক্ষেত্রে যেমন বাঁহাতি পেসারের বিপক্ষে সামনের পাকে মিডল স্ট্যাম্প পর্যন্ত নিয়ে আসেন, এক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটে।

কভার ড্রাইভ, লফটেড কভার ড্রাইভ

ব্যাকফুট কভার ড্রাইভ খেলছেন ইয়াসির; ; Image Source: Rabbiholebd

ফ্রন্টফুটের তুলনায় ইয়াসিরকে ব্যাকফুটে কভার ড্রাইভ খেলতে বেশি দেখা যায়। স্পিনারদের বলের পিচিং দ্রুত বুঝতে পারা তার সহজাত, তাই দ্রুত বলের লাইনলেন্থ বুঝে সেই অনুসারে পায়ের কাজটা সম্পন্ন করতে পারেন তিনি। এক্ষেত্রে যেমন প্রথমে সামনের পাকে একটু সামনে আনলেও বোলার বল ছোঁড়ার মুহূর্তে বলের পিচিং বুঝে তিনি দ্রুত সামনের পাকে লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে নিয়ে গেছেন, পেছনের পাকে নিয়ে এসেছেন অফ স্ট্যাম্পের লাইনে। এরপর পেছনের পায়ে ভর করে খেলেছেন কভার ড্রাইভ।

কখনো কখনো লফটেড কভার ড্রাইভও খেলতে দেখা যায় ইয়াসিরকে; Image Source: Rabbiholebd

মাটিতে কামড়ানো শটের পাশাপাশি কভার দিয়ে উড়িয়ে মারতেও দেখা যায় ইয়াসিরকে। এক্ষেত্রেও স্পিনারদের বিপক্ষে দ্রুত বলের পিচিং বোঝার সুবিধাটা কাজে লাগান তিনি, শুধু ব্যাট ঘুরানোর সময়ে লক্ষ্যটা থাকে কভারের ফিল্ডারের মাথার ওপর দিয়ে বলকে সীমানাছাড়া করা।

অফ ড্রাইভ, লফটেড অফ ড্রাইভ

ইয়াসিরের অফ ড্রাইভ; Image Source: Rabbiholebd

 

ব্যাকফুট কভার ড্রাইভ পছন্দ করলেও অফ ড্রাইভের ক্ষেত্রে ফ্রন্টফুটে আসতে দেখা যায় ইয়াসির আলীকে। লেগ বা মিডল-লেগ স্ট্যাম্পে গার্ড নেওয়ার পরে বলের পিচিং অনুসারে ফ্রন্টফুটে এসে অফ ড্রাইভ করেন তিনি।

স্ট্রেইট ড্রাইভ, লফটেড স্ট্রেইট ড্রাইভ

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইয়াসিরের স্ট্রেইট ড্রাইভ; Image Source: Rabbiholebd

ইয়াসিরের অন্যতম দর্শনীয় শট স্ট্রেইট ড্রাইভ। সামনের পাকে মিডল স্ট্যাম্পের লাইনে এনে, বলের লাইনে চোখ রেখে সজোরে মাটি কামড়ানো স্ট্রেইট ড্রাইভ করতে পারেন ইয়াসির। বোলার ভাগ্যক্রমে হাত বা পা লাগাতে না পারলে ঐ বল বাউন্ডারি ছোঁয়ার আগে থামে না।

জায়গা করে নিয়ে স্ট্রেইট ড্রাইভ খেলছেন ইয়াসির; Image Source: Rabbiholebd

ডানহাতি বোলার রাউন্ড দ্য উইকেটে এলে, অথবা লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে বল পিচ করলে, ইয়াসির লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে সরে এসে জায়গা করে নিয়ে স্ট্রেইট ড্রাইভ খেলেন। এক্ষেত্রে ফ্রন্টফুটকে লেগ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরে নিয়ে সজোরে বোলারের মাথার উপর দিয়ে বলকে সীমানাছাড়া করেন তিনি। উপরের ছবিতে স্ট্রেইট ড্রাইভে চার আদায় করতে দেখা যাচ্ছে ইয়াসিরকে।

স্ট্রেইট ড্রাইভ খেলে চারের পাশাপাশি ছক্কাও আদায় করতে পারেন ইয়াসির; Image Source: Rabbiholebd

শুধু চার না, বিপিএলে স্ট্রেইট ড্রাইভে ছক্কাও আদায় করতে দেখা গেছে ইয়াসিরকে। বলের পিচিংয়ের ওপর নির্ভর করে কখনো ডাউন দ্য উইকেটে এসে, আবার কখনো ক্রিজের একটু ভেতরে গিয়ে স্ট্রেইট ড্রাইভ করে ছক্কা মেরে থাকেন ইয়াসির।

অন ড্রাইভ, লফটেড অন ড্রাইভ

দৃষ্টিনন্দন লফটেড অন ড্রাইভ খেলছেন ইয়াসির; Image Source: Rabbiholebd

স্ট্রেইট ড্রাইভের মতো ইয়াসিরের লফটেড অন ড্রাইভগুলোও অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। লফটেড অন ড্রাইভের ক্ষেত্রে তিনি স্বাভাবিকভাবেই সামনের পাকে সরিয়ে আনেন লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে। একই সাথে পেছনের পা মিডল-লেগ থেকে সরে আসে অফ-মিডল বা অফ স্ট্যাম্পের মধ্যে। এরপর সজোরে লং অনের উপর দিয়ে তুলে মারেন, দারুণ পেশিশক্তির কারণে যার বেশিরভাগই আছড়ে পড়ে গ্যালারিতে।

সুইপ, স্লগ সুইপ

ইয়াসিরের স্লগ সুইপও দারুণ দৃষ্টিনন্দন; Image Source: Rabbiholebd

প্রথাগত সুইপ শট খেলতে তেমন দেখা না গেলেও, স্পিন এবং পেস, উভয় ধরনের বোলিংয়ের বিরুদ্ধেই ইয়াসিরের অন্যতম প্রিয় শট স্লগ সুইপ। বলের পিচিং অনুযায়ী সামনের পাকে লেগ স্ট্যাম্পের লাইনে, বা লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে এনে পেছনের হাঁটু ভাঁজ করে স্লগ সুইপ করেন ইয়াসির, লক্ষ্য থাকে ডিপ মিড উইকেটের বাউন্ডারি।

তবে ইয়াসিরের তিন-চার বছর আগের স্লগ সুইপ আর সাম্প্রতিক স্লগ সুইপের মধ্যে একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য দেখা গেছে, পার্থক্যটা যতটা স্লগ সুইপ খেলার ধরনে, এর চেয়ে বেশি ফলাফলে। ছবিতে যেমনটা দেখা যাচ্ছে, ২০১৮-১৯ এর বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে স্লগ সুইপ করছেন ইয়াসির। ফলাফলটা যদিও এই ছবি থেকে বোঝা সম্ভব না, তবে এই বলে বাউন্ডারিতে ধরা পড়তে পড়তে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। পরের দুটো ছবি দেখা যাক।

প্রথাগত সুইপ তেমন খেলতে দেখা যায় না ইয়াসিরকে; Image Source: Rabbiholebd

বাঁয়ের দুটো স্লগ সুইপই ২০১৮-১৯ বিপিএলের। দুটো স্লগ সুইপেই ফলাফল হিসেবে চার পেয়েছিলেন তিনি। আর সর্বডানের লফটেড সুইপে বাউন্ডারিতে ধরা পড়েছিলেন ইয়াসির।

স্লগ সুইপে ছক্কা পাওয়ার হার বেড়েছে ইয়াসিরের; Image Source: Rabbiholebd

 

তবে গত দুই-তিন বছরে মাসল পাওয়ারের বেশ উন্নতি করেছেন তিনি। এখন স্লগ সুইপে ছক্কা পাওয়ার হার বেড়েছে। বাঁয়ের ছবিটা ২০১৮-১৯ বিপিএলের, বাকি দুটো সর্বশেষ ২০২২ বিপিএলের। তবে স্লগ সুইপগুলোর ফলাফল অভিন্ন, ছক্কা।

পুল

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পুল শট খেলছেন ইয়াসির; Image Source: Rabbitholebd

তবে স্কয়ার কাট, অন ড্রাইভ বা স্লগ সুইপ যতই দর্শনীয় হোক না কেন, ইয়াসিরের সবচেয়ে কার্যকরী আর রানপ্রসবা শট পুল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে পুল খেলে অন্তত তিনটা বাউন্ডারি আদায় করেছিলেন ইয়াসির। অফ স্ট্যাম্পের লাইনে সামনের পাকে এনে, পেছনের পাকে আরেকটু পিছনে নিয়ে সজোরে পুল শট খেলেন ইয়াসির।

বাঁহাতি পেসারের বিপক্ষেও পুল খেলতে পারেন ইয়াসির; Image Source: Rabbitholebd

তবে এক্ষেত্রে যেটা গুরুত্বপূর্ণ, পিচ করার পরে একটু ধীরে আসা বলগুলোতে ভালো পুল শট খেলেন ইয়াসির আলী। আর বাংলাদেশের পিচগুলো বরাবরই এজন্য আদর্শ, পুল খেলতে তাই বাধা নেই তার।

ইয়াসিরের কিছু দুর্দান্ত পুল শট; Image Source: Rabbitholebd

 

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডের ভেন্যু সেঞ্চুরিয়নের পিচও এমনই ধীরগতির ছিল, একই পিচ ছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগেও। ইয়াসির তাই পুল শটটা দারুণ উপভোগ করেছেন।

স্পিনের বিপক্ষেও পুল শট খেলতে পারেন ইয়াসির; Image Source: Rabbitholebd

 

স্পিনারের বিপক্ষেও পুল শট খেলতে দেখা গেছে ইয়াসিরকে। সামনের পা’কে প্রথমে মিডল স্ট্যাম্পের লাইনে আনলেও বলের পিচিং বুঝে খুব দ্রুত সামনের পাকে লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে এবং পেছনের পাকে অফ স্ট্যাম্পের লাইনে এনেছেন ইয়াসির। এরপর সজোরে পুল, এবং বাউন্ডারি আদায়।

পুল শটের আরো কিছু উদাহরণ; Image Source: Rabbitholebd

চাইলে উদাহরণ দেওয়া যায় আরো। খুব দ্রুত বলের পিচিং বুঝে প্রথমে সামনের পা, এরপর খুব দ্রুত দুই পায়ের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটিয়ে পুল করেন ইয়াসির।

ফ্লিক

ফ্লিকটা খারাপ খেলেন না ইয়াসির; Image Source: Rabbitholebd

ফ্লিকটাও ভালোই খেলেন ইয়াসির। বলের লাইনে গিয়ে ব্যাকফুটে বা ফ্রন্টফুটে ফ্লিক খেলতে পারেন তিনি। ছবিতে যেমনটা দেখা যাচ্ছে, সামনের পা’কে অফ স্ট্যাম্পের বাইরে এনে পেছনের পা’কে অফ স্ট্যাম্পের লাইনে এনে ফ্লিক শট খেলছেন তিনি।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইয়াসিরের চোখধাঁধানো ফ্লিক; Image Source: Rabbitholebd

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও একটা চোখধাঁধানো ফ্লিক খেলেছিলেন ইয়াসির। সামনের পা’কে অফ স্ট্যাম্পের বাইরে এনে সামনের পায়েই ভর করে যে শটটা তিনি খেলেছিলেন, ফলাফল হিসেবে ডিপ মিড উইকেটের উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে বলটা আছড়ে পড়েছিল গ্যালারিতে। ছবিটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের যেকোন পাঁড় সমর্থকের চোখে লেগে থাকার কথা।

‘চিকি’ শট

বিপিএলে স্কুপ শট খেলছেন ইয়াসির; Image Source: Rabbitholebd

 

স্কুপ, রিভার্স সুইপ বা সুইচ হিটের মতো চিকি শট খেলতে তেমন একটা দেখা যায় না ইয়াসিরকে। ২০১৮-১৯ বিপিএলে একটা স্কুপ খেলেছিলেন বটে, এরপর সাম্প্রতিক সময়ে ঐ পথে খুব একটা হাঁটতে দেখা যায়নি তাকে, প্রথাগত ক্রিকেটীয় শট খেলেই রান আদায় করেছেন ইয়াসির আলী।

শক্তির জায়গা

ইয়াসির আলীর শক্তির জায়গাগুলো এতক্ষণে পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার কথা। বেশ ভালো টেকনিকের এই ব্যাটসম্যান বোলারদের বলের পিচিং দ্রুত পড়ে ফেলার ক্ষমতা রাখেন, বিশেষ করে স্পিনারদের। কখন ডাউন দ্য উইকেটে এসে লং অনের উপর দিয়ে তুলে মারবেন, কখন ব্যাকফুটে গিয়ে পুল করবেন, কখন স্লগ সুইপ করবেন, কখন জায়গা করে এক্সট্রা কভার আর লং অফের মাঝ দিয়ে উড়িয়ে মারবেন, এটা খুব ভালো বোঝেন। এর সাথে দারুণ পেশিশক্তি যোগ হয়ে একটা দারুণ সমন্বয় গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশের সীমিত ওভারের দলের পাজলের যে ‘মিসিং পিস’, অর্থাৎ একজন পাওয়ার হিটারের অভাব, ঐ অভাবটা খুব ভালোভাবে পূরণের সামর্থ্য আছে ইয়াসির আলীর।

দুর্বলতার জায়গা

শক্তির পাশাপাশি ইয়াসিরের কয়েকটা দুর্বলতার জায়গাও আছে, একে একে সেগুলো দেখা যাক।

নতুন বলের ইনসুইং

পেসারদের নতুন বলের বিপক্ষে ইয়াসিরের দুর্বলতা লক্ষ্যণীয়।

হাসান আলীর বলে বোল্ড ইয়াসির; Image Sorce: AFP/ Getty Images

পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে ইনিংসের দ্বিতীয় নতুন বলের বিপক্ষে ইয়াসির স্বচ্ছন্দ ছিলেন না। হাসান আলীর ইনসুইঙ্গারে বোল্ড হয়েই তার ইনিংসের সমাপ্তি ঘটেছিল।

ফারুকীর বলে ছত্রখান ইয়াসিরের স্ট্যাম্প; Image Sorce: AFP/ Getty Images

আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেও একই দৃশ্য। যদিও সেটা ইয়াসিরের অভিষেক ম্যাচ ছিল, তবুও বাংলাদেশের শুরুর ব্যাটিং বিপর্যয়ে বাঁধ দিতে পারেননি তিনি, ফজল হক ফারুকীর ইনসুইঙ্গারে বোল্ড হয়ে বিদায় নিয়েছেন।

শরীর বরারব ধেয়ে আসা শর্ট বল

ওয়াগনারের বলে আউট হচ্ছেন ইয়াসির; Image Sorce: NZC

এমনিতে শর্ট বলে ইয়াসিরতের তেমন দুর্বলতা লক্ষ্য করা না গেলেও একটা বিশেষ ক্ষেত্রে তাঁর দুর্বলতা দেখা গেছে। যে সকল পিচে বল পিচ করার পরে দ্রুত ব্যাটে আসে, সেই সব পিচে শরীর বরাবর ধেয়ে আসা শর্ট বলে ইয়াসিরের দুর্বলতা আছে। এক্ষেত্রে সামনের পা’কে দ্রুত সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য, অর্থাৎ বড় স্ট্রাইড নিয়ে ফেলার কারণে দ্রুত ধেয়ে আসা বলগুলোকে ঠিকভাবে ব্যাটে বলে করতে পারেন না ইয়াসির। ডিফেন্স করতে চাইলেও ব্যাটের বাইরের কানায়, বা গ্লাভসে লেগে বল হাওয়ায় ভেসে ওঠে। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে বাঁহাতি পেসার নিল ওয়াগনার এভাবেই আউট করেছিলেন ইয়াসিরকে।

রাবাদার বাউন্সারে কুপোকাত ইয়াসির; Image Source; Rabbitholebd

একই ঘটনা ঘটেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও। প্রশ্ন জাগতে পারে, প্রথম ওয়ানডেতে এত অসাধারণ পুল শট খেলা ইয়াসির কেন দ্বিতীয় ওয়ানডেতে শর্ট বলে আউট হলেন?

উত্তরটা লুকিয়ে আছে দুই ম্যাচের ভেন্যুতে। প্রথম ম্যাচের ভেন্যু ছিল সেঞ্চুরিয়ন, যা অপেক্ষাকৃত ধীরগতির উইকেট। অর্থাৎ এই পিচে বল পড়ার পরে একটু ধীরে আসে, যার মিল আছে বাংলাদেশের পিচের সাথে। ইয়াসির ঐ পিচে চমৎকার খেলেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচ ছিল জোহানেসবার্গে, যা অপেক্ষাকৃত দ্রুতগতির পিচ, বল পড়ে দ্রুত ব্যাটে আসে। এক্ষেত্রে শরীর বরাবর দ্রুত ধেয়ে আসা শর্ট বলটা ঠিকভাবে ‘নেগোশিয়েট’ করতে পারেননি ইয়াসির। ফলাফল: আউট।    

একই ভাবে আউট হতে দেখা গেছে বিপিএলেও; Image Source; Rabbitholebd

বিপিএলেও ইয়াসিরের এই দুর্বলতাটা চোখে পড়েছে। সেই বডিলাইন বরাবর শর্ট বল, তবে এক্ষেত্রে ডিফেন্স নয়, পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন ইয়াসির।

স্লোয়ার

বামের ছবিতে আউট, ডানের ছবিতে ছক্কা; Image Source; Rabbitholebd

টি-টোয়েন্টির রমরমা যুগে পেসারদের অন্যতম অস্ত্র স্লোয়ার। কমবেশি সব ব্যাটসম্যানই স্লোয়ারে ভুগে থাকেন, বোলার বল ছোঁড়ার মুহূর্তে স্লোয়ার পড়তে না পারলে সেই ভোগান্তির শেষ পরিণতি হয় উইকেট। ইয়াসিরকেও মাঝেমধ্যে স্লোয়ারে ভুগতে দেখা গেছে, বিশেষ করে যখন তিনি স্লোয়ার পড়তে পারেননি। উপরে বাঁয়ের ছবিতে, আন্দ্রে রাসেলের স্লোয়ারটা পড়তে পারেননি ইয়াসির, ছক্কার চেষ্টা করলেও বল লেগেছে ব্যাটের ‘টো এন্ড’-এ। ফলাফল: লং অফে ক্যাচ। ডানের ছবিতে সৌম্য সরকারের ঘণ্টায় ৯৮.৪ কিলোমিটার গতির স্লোয়ারটা ঠিকই পড়তে পেরেছেন ইয়াসির, পুল করেছেন লং অনের উপর দিয়ে, সীমানাছাড়া হয়েছে বল। তাই একটা বিষয় নিশ্চিত, পেশিশক্তির কারণে, স্লোয়ারটা দ্রুত ধরতে পারলে সেটাকে পুল করতে ইয়াসিরের চেয়ে যোগ্য ব্যাটসম্যান বাংলাদেশে বিরল।

স্পিনারদের টার্ন বুঝতে না পারা

টার্ন বুঝতে না পেরে আউট হচ্ছেন ইয়াসির; Image Source; Rabbitholebd

স্পিনারদের বল পিচিং খুব দ্রুত বুঝতে পারলেও বলের টার্ন বুঝতে না পেরে বেশ কয়েকবার আউট হতে দেখা গেছে ইয়াসিরকে। কখনো স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ভুল করেছেন, আবার কখনো টার্ন বুঝতে না পেরে আরাফাত সানির আর্মারে বোল্ড। টেস্টে একবার কেশব মহারাজের বাঁহাতি স্পিনের টার্ন বুঝতে না পেরে বোল্ড হয়েছেন, আরেকবার দিয়েছেন রিটার্ন ক্যাচ। ওয়ানডেতে লেগ স্পিনার রশিদ খানের টার্ন বুঝতে না পেরে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন।

ইয়াসির হতে পারেন বাংলাদেশের তুরুপের তাস; Image Source: Getty Images

তবে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যেহেতু অস্ট্রেলিয়ায়, স্পিনারদের টার্ন বুঝতে না পারার ব্যাপারটা খুব বেশি ভোগানোর কথা নয় ইয়াসিরকে। বরং, যেহেতু তাঁর মিডল অর্ডারেই ব্যাট হাতে নামার কথা, শরীর বরাবর ধেয়ে আসা শর্ট বল আর স্লোয়ারগুলো ঠিকভাবে বুঝতে পারার ব্যাপারটা নিয়ে আরেকটু কাজ করা প্রয়োজন। এই ব্যাপারটা ঠিক করতে পারলে ইয়াসির আলী হতে পারেন অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বাংলাদেশের তুরুপের তাস, আর বাংলাদেশও শেষের ওভারগুলোতে সজোরে ব্যাট চালানোর মতো একজন ‘পাওয়ার হিটার’ও পায় তাতে!

This article is in Bengali language. It is a technical analysis of Yasir Ali Chowdhury Rabbi, the right-handed middle-order batsman from Bangladesh, who is called up for the upcoming T20 World Cup.

Featured Image: Getty Images

References: 
1. https://www.espncricinfo.com/player/yasir-ali-629059
2. https://www.cricbuzz.com/profiles/9869/yasir-ali
3. http://www.howstat.com/cricket/statistics/Players/PlayerOverview_ODI.asp?PlayerId=6456

Related Articles

Exit mobile version