মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেন। জার্মানির গোলরক্ষক। অনেকেই ম্যানুয়েল নয়্যারের সঠিক বিকল্প মনে করেন তাকে। কিন্তু অধিনায়ক নয়্যারের কারণে জার্মান পোস্টের নিচে খুব একটা দাঁড়ানো হয় না। তবে বার্সেলোনায় তিনি প্রথম পছন্দ। একান্ত সাক্ষাৎকারে টের স্টেগেন কথা বলেছেন বার্সেলোনা, রোনালদো, মেসি ও জার্মানি নিয়ে। রোর বাংলার পাঠকদের জন্য সেটি প্রকাশ করা হলো।
রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদ থেকে চলে গেলেন। আপনার কী মনে হয়, বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের লড়াইটা এবার কেমন হবে?
এটা বদলাবে না। অবশ্যই সে (রোনালদো) রিয়াল মাদ্রিদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ছিলো। একইরকম সে এখন জুভেন্টাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। তবে আমাদের জন্য এতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ওদের (রিয়াল মাদ্রিদে) আরও অনেক ভালো খেলোয়াড় আছে, যাদের নিয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। তারা ঠিকই ভালো একটা মৌসুম কাটাবে। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর জন্য তেমন কিছু বদলাবে না। যদিও ওদের ওপর রোনালদোর প্রভাবটা অনেক বেশি ছিলো। দেখুন, আমরাও এই সময়ে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাকে হারিয়েছি। আমার মনে হয়, ওদের জন্য ব্যাপারটা এরকমই।
আপনার কী মনে হয়, বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদের লড়াইটার বিশেষত্ব কী?
গত কয়েক বছর ধরে দুই দল অনেক কাছাকাছি মানের ফুটবল খেলছে। বার্সা এই সময়ে অনেক এগিয়ে এসেছে। আমরা এই সময়ে অনেক ট্রফি জিতেছি। আমরা বড় প্রতিদ্বন্দ্বী। সেই সাথে স্পেনের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও একটা ব্যাপার। তবে আমার মনে হয়, ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে আমরা খুবই ফুটবল নিয়ে ভাবি। আমরা আমাদের ভক্তদের জন্য, সমর্থকদের জন্য, নিজেদের জন্য, ক্লাবের জন্য সবকিছু জিততে চাই।
বিশ্বের আর কোথাও কি এত বড় প্রতিদ্বন্দ্বীতা লক্ষ্য করেছেন আপনি?
আমার ধারণা, বিশ্বজুড়ে এটাই সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বীতা। হ্যাঁ, আরও অনেক এরকম বড় ম্যাচ হয়তো আছে। কিন্তু আমার ধারণা রিয়াল মাদ্রিদ বনাম বার্সেলোনা সবসময় সবচেয়ে বড় লড়াই।
রাশিয়া বিশ্বকাপে যাওয়া এবং টুর্নামেন্ট বেঞ্চে বসে বসে খেলা দেখা, এটা কতটা কঠিন অভিজ্ঞতা?
খুব কঠিন। আপনাকে কল্পনা করতে পারতে হবে যে, আপনি খুব ভালো একটা মৌসুম কাটালেন এবং বিশ্বকাপে গেলেন একটা স্বপ্ন নিয়ে। তারপর আপনি একটা ম্যাচও খেলতে পারলেন না। অবশ্যই ওরকম একটা অবস্থায় বসে থাকাটা মজার ব্যাপার নয়। আমি জানতাম, আমি যদি খেলতে না-ও পারি, আমাদের দলের পাশে থাকতে হবে এবং সব সময় ১০০ শতাংশ দিয়ে তৈরি থাকতে হবে। আমি মনে করি, আমি যা করার তা করতে পেরেছি; দরকার হলে আবার করবো। আমরা খুব দুর্ভাগা যে, আমরা গ্রুপপর্বের পর আর এগোতে পারিনি।
আপনার কী মনে হয়, জার্মানরা এই গ্রুপপর্ব থেকে ছিটকে যাওয়া থেকে কী শিক্ষা নিতে পারে?
প্রথমত, এটা বলা খুব কঠিন যে, আমরা ঐ ঘটনা থেকে আদৌ কিছু শিখেছি কি না। কারণ, ঐ ম্যাচের পর আমরা এখনও কোনো ম্যাচ খেলিনি। আমাদের অনেক সমস্যা নিয়ে কাজ করতে হবে। আমার মনে হয়, ঐ বাদ পড়ার পর এখন আগামী দিনে এ নিয়ে অনেক আলোচনা হবে। আমাদের অনেক কিছুই এখন ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে হবে।
মেসুত ওজিলকে নিয়ে এখন একটা মিশ্র আলোচনা হচ্ছে। অন্য অনেক খেলোয়াড় নিয়েই কথা হচ্ছে। তবে আমার মনে হয়, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো আমাদের সবাইকে ফুটবলে মনোযোগ দিতে হবে। সবাইকে জাতীয় দলের অংশ হয়ে উঠতে হবে। আমার মনে হয়, এটাই গত কয়েক বছরে হারিয়ে গিয়েছিলো। ফলে আমাদের এত চমৎকার একটা দেশের হয়ে খেলতে পেরে সবাইকে সুখী হতে জানতে হবে, যাতে করে আমরা ৮০ মিলিয়ন মানুষের সামনে মাঠে নেমে মাথা উঁচু রাখতে পারি।
ক্লাবের প্রসঙ্গে আসা যাক। ব্রাজিল থেকে আসা দুই নবাগত ম্যালকম ও আর্থারকে কেমন মনে হচ্ছে?
আমি ওদের সাথে সম্প্রতিই, এই ক’দিন আগে পরিচিত হয়েছি। আমি মানুষ হিসেবে ওরা কেমন, সেটা বলতে পারি। কারণ, দুই-তিন-চার দিনে কাউকে ফুটবলার হিসেবে মূল্যায়ন করে ফেলা যায় না। আমি মনে করি, ওরা লকার রুমে দারুণ মানিয়ে গেছে। খুব মজার ছেলে। ওরা রোমার বিপক্ষে ডালাসে যখন খেললো, তখন কিছুটা দেখেছি। দুজনই অনেক সম্ভাবনাময় এবং মজার ফুটবলার। আমাদের জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে, ওরা যেন এখানে স্বচ্ছন্দবোধ করে এবং দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে। ওরা ব্রাজিলিয়ান এবং পর্তুগিজে কথা বলে। সেটা স্প্যানিশ থেকে খুব আলাদা নয়। শুরুতে ওদের হয়তো একটু কষ্ট হবে। তবে আস্তে আস্তে ওরা অভ্যস্ত হয়ে যাবে। আমার মনে হয়, একজন জার্মান খেলোয়াড়ের চেয়ে ওদের এখানে মানিয়ে নেওয়া সহজ। আর ফুটবলটা তো একটা আন্তর্জাতিক ব্যাপার এবং এর একটা নিজস্ব ভাষাও আছে। ফলে খুব একটা শব্দ দরকার হয় না।
লিওনেল মেসিকে নিয়ে একটু কথা বলুন। অনুশীলনে তার পেনাল্টি ঠেকানো কতটা কঠিন?
আমি একবার একটা অফিশিয়াল ম্যাচে তার মুখোমুখি হয়েছিলাম। সেই থেকে বুঝি, তার বিপক্ষে খেলার চেয়ে তার দলে খেলাটাই ভালো। এটা শুধু মেসির ব্যাপার নয়। আমাদের দলে অনেক ভালো খেলোয়াড় আছে। তবে অবশ্যই সে একা পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। সেই সাথে আমাদের আরও অনেক খেলোয়াড় আছে, যারা পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। মাঠে যেসব খেলোয়াড় থাকে, তারা সবাই লিওর কাছ থেকে শিখতে পারে।
শুধু ফুটবল নয়, এই মানুষটা মানসিকভাবে কতো শক্তিশালী সেটাও একটা শেখার ব্যাপার। দেখুন একবার যে, সে এই সর্বোচ্চ স্তরে কতগুলো বছর ধরে খেলে যাচ্ছে। সবসময় স্কোর করছে, প্রতিদিন সে নিজের কাজ করছে এবং আগের চেয়ে ভালো হওয়ার চেষ্টা করছে। এই ব্যাপারটাই ওর কাছ থেকে সবাই শিখতে পারে। সে আসলে যেকোনো মানুষের জন্য একজন আদর্শ হয়ে উঠতে পারে। সে এমন একজন লোক, যে প্রতিদিন নিজের স্কিল বাড়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সে প্রতিনিয়ত নিজেকে ও দলকে আরও ভালো করার জন্য পরিশ্রম করে। প্রত্যেকের আসলে এভাবে চিন্তা করা উচিত। ওর সাথে কাজ করা, অনুশীলন করা খুব সহজ। কারণ, সে খুব বিনয়ী একজন মানুষ। যখন ফুটবলের কথা আসবে, এমন কোনো ব্যাপার নেই, যা সে মাঠে করতে পারে না।
যখন পেনাল্টি কিকের প্রশ্ন আসে, আপনি মানসিকভাবে কিভাবে শট নিতে আসা খেলোয়াড়ের চেয়ে এগিয়ে থাকতে চান?
এজন্য প্রস্তুতি নিতে হয়। আপনাকে জানতে হয়, আগে সে কী কী করেছে। একটা অনুমান আপনাকে করতেই হয় যে, সে কোথায় মারতে পারে। অবশ্যই আপনি অতীতের সব ভিডিও দেখে ফেলতে পারনে; কিন্তু কখনোই আসলে এটা জানা যায় না যে, কী ঘটতে চলেছে। প্রত্যেকের কিছু ভিন্ন ভিন্ন স্টাইল থাকে। ফলে আমি আমার সবকিছু এখানে বলে দেবো না। কারণ, আমি এখনও তো খেলছি। একজন গোলরক্ষক হিসেবে পেনাল্টি সামলানোর প্রত্যেকের কিছু ব্যক্তিগত রহস্য থাকে।
আপনি কি ছোটবেলা থেকে গোলরক্ষকই ছিলেন?
না। আগে আমি মাঠের মধ্যে খেলতাম। পরে আস্তে আস্তে গোলরক্ষক হয়েছি।
কোন পজিশনে খেলতেন?
আহ। সে অনেক বদল হয়েছিলো। শুরুতে ফরওয়ার্ড ছিলাম। তারপর আস্তে আস্তে পিছিয়েছি। পেছাতে পেছাতে গোলে চলে এসেছি। এটাই আমার জীবন।
লোকে আপনাকে সুইপার কিপার মনে করে। সেটা কি আপনি এই আগে ওপরে খেলতেন বলে একটা সুবিধা পান?
মাঠের অন্যান্য পজিশনের স্বাদটা জানা থাকলে তো ভালো হয়। তবে তখন আমি আসলে অনেক ছোট ছিলাম। আসলে আমার পায়ের স্কিলটা সবসময়ই ভালো। আপনি আজকাল অনেক এই আধুনিক গোলরক্ষক পাবেন। তাদের সবার ভিন্ন ভিন্ন স্টাইল আছে।