আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ এখন আছে রোমাঞ্চকর পর্যায়ে। শীর্ষ অবস্থানে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার যেমন এখনো নিশ্চিত নয় ফাইনাল খেলা, ঠিক তেমনি নিচের দিকে থাকা ইংল্যান্ডের (সাত নাম্বার অবস্থানে আছে) সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। টানা চার জয়ে, বলা ভালো, টেস্ট ক্রিকেটের বৈপ্লবিক চারটি চেজে ইংল্যান্ড শেষাংশের এই লড়াইয়ে পুরো টেবিল (আক্ষরিক অর্থেই) উলটে দেয়ার সাহস দেখাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান বেশ সুদৃঢ়, তবুও পাড়ি দিতে হবে আরো বেশ খানিকটা দুর্গম পথ। পাকিস্তান টেবিলের পাঁচ নাম্বারে আছে, দলটাকে খুব গোছালো মনে হলেও চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল খেলা এখনো অনেক কঠিন। ঠিক উপরের স্থানে মানে চার নাম্বার পজিশনে রয়েছে ভারত। গতবারের রানার্সআপ দলটি এবারও ফাইনালিস্ট হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। শ্রীলঙ্কার স্বপ্নদৌড় আরো এগোতে পারে। নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেট যেন দেখছে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন দলটি একদম অচেনা। বাংলাদেশ দলটিই শুধু তাদের নিচে অবস্থান করছে। উইন্ডিজ ও বাংলাদেশ ক্রিকেটের কোনো অগ্রগতি নেই। বহু আগেই শিরোপা-দৌড় থেকে ছিটকে গেছে তারা।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শেষার্ধের শুরুটা হয়ে গেছে। আগামী কয়েকমাসে অপেক্ষা করছে বেশ ক’টি গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ। তবে সেসব নিয়ে আলোচনার পূর্বে এই পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নশিপের জার্নিটা সংক্ষেপে পরিভ্রমণ করে নিলে সুবিধে হবে আমাদের।
শুরুটা হয়েছিল ইংল্যান্ড বনাম ভারত সিরিজ দিয়ে। প্রথম আসরের ফাইনালিস্ট ভারতই ছিল পরিষ্কার ফেভারিট। চার টেস্টে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়া সেটারই প্রমাণ বহন করে। কিন্তু করোনা মহামারীতে শেষ টেস্ট এক বছরের জন্য পিছিয়ে গেলে টেমস নদীর জল গড়িয়ে যায় বহুদূর। স্টোকস-ম্যাককালামের নতুন ইংল্যান্ড টেস্ট ক্রিকেটে দেখায় বৈপ্লবিক রূপান্তর। এই বছরের জুলাইয়ে হওয়া পঞ্চম ও শেষ টেস্ট জিতে ২-২ সিরিজ ড্র করে ফেলে ইংল্যান্ড। বিলেতের মাঠে ভারতের টেস্ট সিরিজ জিততে না পারা দেড় দশকে গিয়ে পৌঁছে, আরো বড় ব্যাপার চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে হারাতে হয় মূল্যবান কিছু পয়েন্ট। অধিকাংশ ক্রিকেট বিশেষজ্ঞের ধারণা, সিরিজটা যথাসময়ে শেষ হলে ভারতই হয়তো জিতত শেষ টেস্ট।
ইংল্যান্ডের জন্য অবশ্য উলটো। তারা লড়াইটা নতুন করে শুরুর সুযোগ পায়। নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে এই গ্রীষ্মের শুরুটা করে দুর্দান্ত। সিরিজ জেতে ৩-০’তে। টানা চারটি টেস্ট সাফল্যের সঙ্গে রান তাড়া করায় নতুন করে লিখে ইতিহাস। টেস্ট ক্রিকেটের প্রায় সার্ধশত বর্ষের ইতিহাসে এই ঘটনা আর ঘটেনি। চ্যাম্পিয়ন নিউ জিল্যান্ড ঘরের মাঠে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দু’টি মাত্র জয় ছাড়া ঝুলিতে পুরতে পারেনি আর কিছু। ভারতের মাঠে অবশ্য কানপুর ক্ল্যাসিকের জন্ম দেয়। দশম উইকেট জুটিতে আইজাজ প্যাটেল ও রাচীন রবীন্দ্রর বীরত্বে ৫৮ বলের রোমাঞ্চকর লড়াই শেষে ড্র হয় টেস্ট। ভারত হাতছাড়া করে নিশ্চিত জয়। দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে স্বাগতিকদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জিতলেও বাকি দুটো টেস্ট হেরে সিরিজ খোয়াতে হয় গত আসরের রানার্সআপদের। দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে সিরিজ জিততে না পারার ইতিহাস দীর্ঘায়িত হয় আরো। দক্ষিণ আফ্রিকা অবশ্য চমকে দিয়েছে। আসরের অর্ধেক পেরিয়েও দলটি অবস্থান করছে টেবিলের শীর্ষে। ঘরের মাঠে বাংলাদেশ ও ভারতকে হারানো দলটা নিউ জিল্যান্ডে গিয়ে ১-১ এ সিরিজ ড্র করে।
বাংলাদেশ শুরুটা ভালো করেছিল। নিউ জিল্যান্ডকে তাদেরই মাঠে হারিয়ে দেয়াটা রীতিমতো বিস্ময় উপহার দিয়েছিল। কিন্তু তারপর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটিমাত্র টেস্ট ড্র ছাড়া হেরেছে উইন্ডিজ, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। সাম্প্রতিক সময়ে রোমাঞ্চকর একটি লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে পাকিস্তান ও উইন্ডিজ-এর মধ্যকার টেস্ট সিরিজ। সেই ধারাবাহিকতায় ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে শেষ উইকেট থ্রিলারে হেরে বসে পাকিস্তান। পরের টেস্ট জিতে অবশ্য সিরিজ বাঁচায়। বাংলাদেশের বিপক্ষে একটি টেস্টের আড়াই দিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া ম্যাচ জিতলেও ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি টেস্ট ড্র করলেও হেরে যায় একটি টেস্ট। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আবার ১-১ হয় সিরিজ।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এই ২০২১-২০২৩ সাইকেলে আরেক চমকের নাম – শ্রীলঙ্কা। টেবিলের তিন নাম্বারে অবস্থান করছে। নিজের দেশে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ১-১ সিরিজ ড্র ছাড়াও উইন্ডিজের বিপক্ষে জিতেছে ২-০ তে। উইন্ডিজ আবার বাংলাদেশ ও পাকিস্তান ছাড়াও নিজেদের মাঠে হারিয়েছে ইংল্যান্ডকেও। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ১৬টি টেস্ট খেলা ইংল্যান্ড স্বদেশে ভারতের সঙ্গে ড্র করলেও অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার কাছে চূড়ান্ত নাস্তানাবুদ হয়েছে।
মাত্র তিনটি সিরিজ খেলা অস্ট্রেলিয়া আছে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে। নিজেদের মাঠে দু’টি সিরিজ বাকি আছে এখনো। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় গিয়ে তুলে নিয়েছে মূল্যবান পয়েন্ট ও পার্সেন্টেজ। মোটা দাগে পাঁচটি দল ফাইনালের পথে আছে, সঙ্গে যদি ইংল্যান্ডকে যোগ করা হয় তাহলে ছয়টি দল। অস্ট্রেলিয়াকে যদি একটি দল হিসেবে ভাবা হয়, তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে সঙ্গী হবে কোন দল? অথবা উলটে যেতে পারে পুরো চিত্রটাও। অস্ট্রেলিয়া হারিয়ে ফেলতে পারে এই বর্তমান সুদৃঢ় অবস্থানও।
আমরা এই পর্যায়ে দেখব কোন কোন সিরিজে ঘটতে পাশার দান উলটে দেয়ার মতো ঘটনা।
****
দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ড তিন টেস্টের সিরিজে মুখোমুখি হচ্ছে এই আগস্ট-সেপ্টেম্বরে। টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গে আক্রমণাত্মক মেজাজ মেশানো ইংলিশ ক্রিকেটের নতুন ব্র্যান্ডিং হচ্ছে – বাজবল। ফোর্থ ইনিংসের প্রথাগত ধারা ভেঙ্গে নতুন করে লেখা হচ্ছে ক্রিকেটের ইতিহাস। লক্ষ্য যত দুর্গম ও অনতিক্রম্য মনে হোক, স্টোকস ও ম্যাককালামের এই ইংল্যান্ড অনমনীয় নয় কিছুতেই। শেষদিনের ভাঙা পিচে সৃষ্টিসুখের জয়োল্লাস করতে চায় তারা। এবং এক-দু’বার নয়, পর পর চারবার এই উৎসব আশ্চর্য সাবলীলতায় করে দেখিয়েছেও।
টেবিলের প্রথম আসনটি দক্ষিণ আফ্রিকার দখলে থাকলেও নিরাপদ নয় এখনো। ৬৪ পয়েন্ট ও ৩৩ শতাংশ নিয়ে ইংল্যান্ডের ফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখা দুঃসাহসেরই নামান্তর। অপেক্ষা করতে হবে অন্যদের অবনমনের জন্য। সাম্প্রতিক সময়ের নিরঙ্কুশ সাফল্য ইংলিশ ক্রিকেটকে দুঃসাহসিক স্বপ্ন দেখতে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। দুরন্ত ফর্মের এই দলটা চ্যালেঞ্জ জানাবে দক্ষিণ আফ্রিকার শীর্ষ অবস্থানকে। তিন টেস্টের সিরিজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চ্যাম্পিয়নশিপে ছয়টি সিরিজের তিনটি বাকি আছে দক্ষিণ আফ্রিকার, দু’টি অ্যাওয়ে। ইংল্যান্ডের মাঠে তাদের এই অ্যাওয়ে সিরিজের ফলাফলের উপর নির্ভর করছে শীর্ষে থাকা কিংবা না থাকা। কাগিসো রাবাদা হয়তো ‘এক্স-ফ্যাক্টর’ হয়ে উঠবেন; তাই তার ফিট থাকাটা অতীব জরুরী স্বাগতিকদের। পেস বোলিংয়ে বরাবরই দক্ষিণ আফ্রিকাকে টেক্কা দেয়া কঠিন, ব্যাটিংয়ের দিক থেকে অবশ্য ইংল্যান্ডই এগিয়ে। ইংলিশ ক্রিকেটে বিপ্লবের আমেজ, খেলাটার খোলনলচে বদলে দেয়াতে তারা বদ্ধপরিকর। নিশ্চিত করে বলা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য অন্যতম কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার চ্যালেঞ্জ এখানেই শেষ নয়। যেতে হবে অস্ট্রেলিয়াতেও। আসন্ন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট গ্রীষ্মে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে তিন টেস্টের সিরিজ রয়েছে। একযুগেরও বেশি সময় ধরে নিজেদের মাঠেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জিততে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। স্যান্ডপেপার কেলেঙ্কারির পর স্মিথ ও ওয়ার্নার আবারও মুখোমুখি দক্ষিণ আফ্রিকার। আর ইংল্যান্ড বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে যদি খুব বড়সড় পরিবর্তন না ঘটে তাহলে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দু’টি দলের লড়াই হবে তা; জমজমাট ও উপভোগ্য হবে নিশ্চয়। প্যাট কামিন্সের অধীনে অজি ক্রিকেট ফিরে পেতে শুরু করেছে পুরনো অহং। জেতার জন্য শেষ সময় পর্যন্ত চেষ্টা এবং সর্বস্ব দিয়ে লড়াই; বিপরীতে দক্ষিণ আফ্রিকাও সামলে উঠছে কোটা ও ক্রিকেটারদের দেশত্যাগের ঝক্কির টালমাটাল অবস্থা। তবুও অস্ট্রেলিয়ার মাঠে অস্ট্রেলিয়া এবং বিলেতের উঠোনে ইংলিশ ক্রিকেট সামলে উঠা মুশকিল। সেই মুশকিল যদি উতরে যেতে পারে, তবে নিশ্চিত করেই বলা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকা ফাইনালিস্ট নয় শুধু চ্যাম্পিয়ন হওয়ারও যোগ্য দাবিদার।
পয়েন্ট টেবিলে অবস্থান সুসংহত করতে অস্ট্রেলিয়াকে জিততেই হবে। স্বদেশে উইন্ডিজের বিপক্ষে হয়তো তারাই চূড়ান্ত ফেভারিট। কিন্তু ফেব্রুয়ারি-মার্চের বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিটার কথাও তো মাথায় রাখতে হবে।
****
ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত যাওয়ার আগে আমাদের চোখ রাখতে হবে আগামী ডিসেম্বরে ইংল্যান্ড বনাম পাকিস্তান সিরিজের দিকে। এবারের বিলেতি গ্রীষ্ম রাঙিয়ে অবাক ক্রিকেট উপহার দেয়া এই ইংল্যান্ড উড়াল দেবে পাকিস্তান। ঐতিহাসিক এই সিরিজ ইংলিশদের জন্য তো বটেই, পাকিস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আরো বেশি। শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে দু’টি অ্যাওয়ে সিরিজে দু’টি জয় ও দু’টি হার তাদের অনেকটা ব্যাকফুটে করে দিয়েছে। ইয়াসির শাহর ইনজুরি ও ফর্মহীনতা বেশ ভোগাচ্ছে। ব্যাটিং ইউনিট ও পেস ইউনিট ঠিকঠাক হলেও আস্থাভাজন স্পিনারের বড্ড অভাব। যদিও ইংলিশ ব্যাটারদের স্পিন-দুর্বলতা আছে, তবে পাকিস্তান সেটার কতটা ফায়দা তুলতে পারবে – তাও একটা প্রশ্ন।
চ্যাম্পিয়নশিপের শেষাংশে নাটকীয়ভাবে ঘুরে দাঁড়ানো ইংলিশদের নিজেদের প্রমাণের মঞ্চ এই সিরিজ। চেনা গণ্ডির বাইরে গিয়েও ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলা যায়, বাজবল ব্র্যান্ডিংয়ের বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তার ও প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে ইংল্যান্ড অতীত ভুলে লিখতে চাইবে নতুন ইতিহাস। আর পয়েন্ট টেবিলে নিজেদের অবস্থান উন্নত করার দায় তো আছেই। নিজের কাজ ঠিকমতো করে অন্যদের পা ফস্কানোর অপেক্ষা। এই সিরিজ দিয়েই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ মিশন শেষ হবে ইংল্যান্ডের। শেষটা নিজেদের পরিকল্পনামতো উড়ন্ত অবস্থাতেই করতে চাইবে তারা। পাকিস্তান সেই সুযোগ কিছুতেই দিতে চাইবে না। চ্যাম্পিয়নশিপ লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত থাকতে চায় তারা।
ইংল্যান্ড সিরিজ শেষ হলে নিউ জিল্যান্ড আতিথ্য নেবে পাকিস্তানের। চ্যাম্পিয়নশিপের এই আসর দুঃস্বপ্নের মতো মনে রাখতে চাইবে না নিউ জিল্যান্ড। আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি ও পরিসংখ্যান সমৃদ্ধি ছাড়া নিউ জিল্যান্ডের আর কিছু পাওয়ার নেই। চাপহীন নিউ জিল্যান্ড হয়ে উঠতে পারে আরো ভয়ংকর। আইজাজ প্যাটেল, রাচীন রবীন্দ্ররা ইতোমধ্যে উপমহাদেশের মঞ্চে হার না মানা লড়াই দেখিয়েছেন, পাকিস্তানের জন্য কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠতে পারে চ্যাম্পিয়নশিপ লড়াই। অবশ্য ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফলাফল দিয়ে অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাবে এই সিরিজটার গুরুত্ব। পাকিস্তান যদি আসরের ফাইনালে থাকতে চায় তাহলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ লড়াইটা চালিয়ে যেতেই হবে। নিউ জিল্যান্ডের চেয়েও এই সিরিজটা পাকিস্তানের জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
****
আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি দিয়েই পর্দা নামবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২১-২০২৩ সাইকেলের। ভারত ও অস্ট্রেলিয়া উভয়ের জন্যই অত্যন্ত মর্যাদার এই লড়াই। এই সিরিজের চারটি টেস্টে যেকোনো কিছু হতে পারে। ২০০৪-এর পর থেকে ভারতের মাটিতে সিরিজ জেতেনি অস্ট্রেলিয়া। ২০১৭ থেকে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি ভারতে, অস্ট্রেলিয়ায় ফিরিয়ে নিতে আঁটঘাট বেঁধেই ভারতে পা রাখবে এবার ওয়ার্নার-কামিন্স-স্মিথরা। গত আসরের ফাইনালিস্ট ভারত, এবারও যেকোনো মূল্যে ফাইনাল নিশ্চিত করতে চায়। অস্ট্রেলিয়ার মতো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাভূত করে যদি পা রাখা যায়, টানা দ্বিতীয় ফাইনালে তাহলে অর্জনের আনন্দে নিশ্চিতভাবে যোগ হবে আধিপত্যবাদ ও অহংয়ের মর্যাদা। অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রেও ঠিক তা-ই। একতিল ছাড় দিতেও তারা প্রস্তুত নয়। শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান সফরের অভিজ্ঞতা ভারতের মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে সুবিধা দেবে নিশ্চয়ই। কিন্তু ভারতের বেঞ্চ-শক্তি এমন অবিশ্বাস্য পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে প্রত্যেকটা ক্রিকেটার নিজেকে নিংড়ে দিতে প্রস্তুত। অস্ট্রেলিয়ার জন্য আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে কঠিন এবারকার পরিবেশ পরিস্থিতি। উপমহাদেশের সঙ্গে দারুণ মানিয়ে নেয়ার প্রমাণ দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, তাদের পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা সফরে। দুই সফরে পাঁচ টেস্টে দু’টি জয়, দু’টি ড্র ও একটি পরাজয়। কামিন্স-হ্যাজেলউড-স্টার্ক’ত্রয়ী বহু বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ার বড় ভরসা। স্পিন ডিপার্টমেন্টে নাথান লায়নের সঙ্গে ট্রাভিস হেডও ভালো সঙ্গ দিচ্ছে। ব্যাটিংয়ে স্মিথ-ওয়ার্নারের পাশাপাশি ল্যাবুশেন-খাজা-হেডরা দায়িত্ব নিচ্ছেন। অস্ট্রেলিয়া দুর্দান্ত একটা টেস্ট দলই গড়ে তুলেছে। ভারতের ক্রিকেটেও নেই কোনো খামতি। বিদেশ-বিভূঁইয়ে ‘সোনার হরিণ’ জয় এখন সাধারণ ঘটনা। শক্তিশালী পেস ইউনিটের সঙ্গে আছে বরাবরের মতো দাপুটে স্পিন ও ব্যাটিং ইউনিট। আসন্ন ভারতীয় ক্রিকেট মৌসুম নান্দনিক ও উত্তেজনাপূর্ণ কিছু সময় নিয়েই প্রতীক্ষায়। ক্রিকেট দর্শকরা মিস করবেন না নিশ্চয়!
****
দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম ইংল্যান্ড শুরু হয়ে গেছে। মাস কয়েক পরই ইংল্যান্ড বনাম পাকিস্তান। তারপর দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম অস্ট্রেলিয়া। এবং ফেব্রুয়ারি-মার্চে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া। ক্রিকেট দর্শক মাত্রই এই চারটি সিরিজে প্রবল উত্তেজনা নিয়ে চোখ রাখবেন। চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিল উলটে যেতে পারে যেকোনো সময়েই। নিশ্চিতভাবেই অপেক্ষা করছে দারুণ কিছু ক্রিকেট মুহূর্ত।
এছাড়াও শ্রীলঙ্কা-নিউ জিল্যান্ড, ভারত-বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা-উইন্ডিজ এরকম কিছু সিরিজও চমৎকার ক্রিকেট উপহার দিতে পারে। পয়েন্ট টেবিলে অবস্থান এগোনো-পেছোনোতে রাখতে পারে ভূমিকা। তাই চ্যাম্পিয়নশিপের এই সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফাইনালের মঞ্চে যদি শ্রীলঙ্কা বা দক্ষিণ আফ্রিকার মতো কোনো দলকে দেখেন অবাক হওয়ার কিছু নেই। আবার ভারত বা অস্ট্রেলিয়ার মতো কেউ যদি বাদই পড়ে যায় তখন ভ্রু কুঁচকে রাখার উপায় নেই। জানেনই তো, ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। এখন সময় এই অনিশ্চয়তা সময় নিয়ে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগের।