ম্যারাডোনাকে দেখলে তখন বেশ অবাক লাগে। খর্বকায় ঝাকড়া চুলের পেটানো শরীরের সেই ম্যারাডোনাকে খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়। বয়স ত্রিশ পার হয়েছে। খুব বেশি বয়স, তা কিন্তু নয়; কিন্তু তিনি যেন আরও বুড়িয়ে গেছেন। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন তাকে তিলে তিলে শেষ করে দিয়েছে। আগে থেকেই ম্যারাডোনার উচ্চতা বেশি ছিল না। কিন্তু নিজের দেহের প্রতি যত্নবান না হবার কারণে খুব বিশ্রীভাবে মোটা হয়ে গেছেন। এখন ফুটবল থেকে তার প্রেম বেশি কোকেনের উপর। এমন একজনের উপর ভরসা করা যায়?
হয়তো যায় না। কিন্তু আর্জেন্টিনার প্রত্যেক ফুটবলপ্রেমী আরও একবার আশায় বুক বেঁধেছিল, আরও একবার মনপ্রাণ দিয়ে বিশ্বাস করেছিল। কারণ, মানুষটা ম্যারাডোনা।
১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপের আসর বসলো এমন এক দেশে, যে দেশের সাথে ফুটবলের সম্পর্ক বা ইতিহাস তেমন নেই। কিন্তু আকর্ষণের কমতি ছিল না। একে তো বিশ্বকাপ, তার উপরে ফুটবলপ্রেমীদের জন্য বড় আকর্ষণ ছিল ম্যারাডোনার আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফেরা। আমেরিকায় যখন বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে, ম্যারাডোনা কোকেন সেবনের জন্য দুই বছরের নির্বাসন থেকে মাত্র ফিরেছেন। অনেকদিন থেকে তার ফুটবলের সাথে সম্পর্ক নেই। নতুন করে শুরু করবেন সেটাতেও বাধা। শারীরিকভাবে তিনি তখনও সম্পূর্ণ সুস্থ নন। মুটিয়ে যাওয়া শরীরে তাকে চেনা দায়। কিন্তু এরপরও তিনি দলে ডাক পেলেন। কারণ ফুটবল-ঈশ্বর যখন মাঠে নামতে প্রস্তুত, কোচ আলফিও বাসিলে তখন না ডেকে কীভাবে থাকতে পারেন!
১৯৯১ সাল। ইতালিয়ান লিগে বারির বিপক্ষে নাপোলির ম্যাচের পর ম্যারাডোনার ডোপ টেস্টে পজিটিভ রিপোর্ট আসল। যদিও পুরো ইতালিজুড়েই ততদিনে কানাঘুষো চলত যে ম্যারাডোনা কোকেনে আসক্ত। তবে এই রিপোর্ট প্রথম তার সত্যতা বয়ে আনলো। ফুটবল থেকে ১৫ মাসের জন্য নিষিদ্ধ হলেন আর্জেন্টিনার মহাতারকা। একই সাথে চোখের পলকে ঈশ্বরের আসন থেকে টেনে মাটিতে নামিয়ে আনা হল তাকে। রাজার হালে ইতালিতে এসেছিলেন তিনি। এরপর বনে গিয়েছিলেন ‘নেপলসের ঈশ্বর’। কিন্তু শেষবেলায় ম্যারাডোনা এই দেশ ছাড়লেন ভিখারির বেশে। ফিরে গেলেন তার জন্মস্থানে। বেছে নিলেন ফুটবলবিহীন এক নির্বাসিত জীবন, যেখানে অন্ধকার ছাড়া আর কিছু নেই।
১৯৯২ সাল। ম্যারাডোনা ফিরে গেলেন স্পেনের সেভিয়াতে। সেখানে তার সাথে আবার দেখা হল বিশ্বকাপজয়ী কোচ বিলার্দোর সাথে। তবে সেভিয়াতে খুব বেশিদিন থাকলেন না তিনি। এক বছর পরেই আবার আর্জেন্টিনায় ফেরত আসলেন। যোগ দিলেন নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজ ক্লাবে। যদিও এই ক্লাবেও বেশিদিন ছিলেন না, খেলেছিলেন মাত্র ৫ ম্যাচ। আসলে নাপোলি থেকে একরকম বিতাড়িত হবার পর ম্যারাডোনার ক্লাব ফুটবল ক্যারিয়ার প্রায় শেষই হয়ে গিয়েছিল।
ম্যারাডোনা যখন জীবন, ফুটবল, ও মাদকের নেশাকে তালগোল পাকিয়ে শূন্যতায় খাবি খাচ্ছেন, তার দেশ আর্জেন্টিনাও বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব ধুঁকে ধুঁকে পার করছে। বুয়েন্স এইরেসে নিজের মাঠে আর্জেন্টিনাকে ৫-০ গোলে হারায় কলম্বিয়া। আলবিসেলেস্তেরা বিশ্বকাপের চূড়ান্ত মঞ্চে পৌঁছাল নতুন কোচ বাসিলের দৌলতে। তিনি এসে আগের কোপা আমেরিকাজয়ী দলকেই পুনরায় ডাকলেন। ডিয়েগো সিমিওনে, ক্লদিও ক্যানিজিয়া, এবং গ্যাব্রিয়েল বাতিস্ততা ছিলেন সেই দলের প্রাণ। বিশ্বকাপের মূল দলেও তারা থাকলেন। সাথে যোগ দিলেন আবেল বালবো, আরিয়েল ওর্তেগা ও দলনেতা ম্যারাডোনা।
আমেরিকা বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করার জন্য আর্জেন্টিনাকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই লেগের প্লে-অফ ম্যাচ খেলতে হয়েছিল। এই ম্যাচ সামনে রেখে ঘোষণা করা দলেই ম্যারাডোনা ফিরলেন। নিজের দেশকে বাঁচানোর শেষ সুযোগ তার হাতে। অস্ট্রেলিয়ার মাঠে গিয়ে আর্জেন্টিনা ১-১ গোলে ড্র করে ফিরল। ঘরের মাঠে ম্যারাডোনার একমাত্র গোলে সেবার আর্জেন্টিনা ‘৯৪ বিশ্বকাপ নিশ্চিত করে।
তবে বিশ্বকাপের মূলপর্বে প্রবেশ করার আগে একটি ঘটনা বলে নেওয়া আবশ্যক। অস্ট্রেলিয়ার সাথে প্লে-অফের প্রথম ম্যাচে কিন্তু ম্যারাডোনা নিজেকে দল থেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। কেন তিনি এমন একটি সিদ্ধান্ত নিলেন, তা জানার জন্য সাংবাদিকরা তাকে চাপ দিতে শুরু করে। কিন্তু ম্যারাডোনা আসলে মানসিকভাবে তখনও প্রস্তুত ছিলেন না। কাগজের লোকেরাও হাল ছাড়ার পাত্র নন, তারা নাছোড়বান্দার মত ম্যারাডোনার বাসার সামনে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকলেন। এমন কী কারণ ছিল যে ম্যারাডোনা এমন একটি ম্যাচে নিজেকে সরিয়ে রাখলেন, তার পেছনের যুক্তি তাদের লাগবেই! এক পর্যায়ে ম্যারাডোনা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়লেন। ছুটে বাসা থেকে বেরিয়ে আসলেন বন্দুক হাতে, শূন্যে একটি গুলি ছুড়লেন; এমনকি শেষমেশ বন্দুকের বাট দিয়ে সাংবাদিকদের আঘাত করাও শুরু করলেন। তার এমন আচারণ থামাতে সেদিন পুলিশ পর্যন্ত ডাকতে হয়েছিল।
ম্যারাডোনার এমন কাণ্ডের পর ফিফা নিয়ে ইউরোপে নতুন করে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল। ফিফা নাকি জানত, ম্যারাডোনা বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়েও মাদক সেবন শুরু করতে পারেন। খেলার মাঝে সে যাতে হুট করে অসুস্থ না হয়ে যায়, এজন্য ম্যারাডোনার সাথে নিষিদ্ধ বস্তু নেবার পাস করে দিতে চেয়েছিল তারা। ফিফা নাকি চায়নি, তাদের সে বছরের আসরে এমন একজন তারকা ছাড়াই আয়োজন করতে।
২১ জুন ১৯৯৪। অনেক জল ঘোলার পর বিশ্বকাপ মাঠে গড়িয়েছে। আর্জেন্টিনা প্রথম ম্যাচ খেলতে নামবে গ্রিসের সাথে। ফক্সবোরো স্টেডিয়ামে ৫৪ হাজার দর্শকের সামনে ম্যারাডোনা ফিরলেন বিশ্বকাপ মঞ্চে। গ্রিস দুর্বল দল, বিপরীতে আর্জেন্টিনা দারুণ শক্তিশালী। বিশ্বকাপের প্রতিটি পর্বে ম্যারাডোনার পাশে অন্তত একজন খেলোয়াড় তার যোগ্য সঙ্গীর ভূমিকা পালন করেছে। একসময় বুরুচাগা-প্যাসারেল্লা ছিলেন, এরপর আসলেন ক্যানিজিয়া। ‘৯৪ বিশ্বকাপে সে স্থান নিলেন বাতিস্তুতা নামক ২১ বছর বয়সী এক তরুণ। ম্যারাডোনা আর আগের মতো গতিশীল ফুটবল খেলছেন না। পাক্কা নাম্বার টেন হিসেবে নেমে মধ্যমাঠে তাকে দেখা যাচ্ছে। খুব ড্রিবল নয়, পায়ের কারিকুরি ছাড়াই গ্রিসের খেলোয়াড়দের তার দিকে টেনে নিচ্ছেন অবলীলায়। ম্যারাডোনার এমন সহজিয়া ফুটবল খেলার দিনে জ্বলে উঠলেন ক্যানিজিয়া। দুই মিনিটে খুলে গেল তার গোলের খাতা। এরপর ৪৪ এবং ৯০ মিনিটে পেনাল্টি থেকে নিজের তৃতীয় গোল করে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে তিনি পেয়ে গেলেন হ্যাটট্রিক।
কিন্তু ম্যাচের ৬০ মিনিটে ফক্সবোরো স্টেডিয়ামে এক স্বর্গীয় মুহূর্ত এসেছিল। ক্যানিজিয়া-সিমিওনের সাথে বল দেয়া-নেয়া করতে করতে জটলার ভেতর ছোট্ট একটি ফাঁক দেখতে পান ম্যারাডোনা। ডি-বক্সের প্রায় বাইরে থেকেই তার জোরালো শট খুঁজে পায় গ্রিসের গোলপোস্ট। দানবীয় এক চিৎকার দিয়ে বুনো উল্লাস করতে করতে তিনি ছুটে যান ক্যামেরার দিকে। ততক্ষণে তার বাকি সতীর্থরা ছুটে এসে তাকে জাপটে ধরেছে। মাঠে থাকা অনেকেই ততক্ষণে ভেবে ফেলেছে, ফুটবল-ঈশ্বর ফিরে এসেছেন! কিন্তু আসলে এই গোল ছিল আর্জেন্টিনার এক মহানায়কের শেষ, ফুটবল-দেবতার ফুটবল জীবনের সমাপ্তি।
২৫ জুন, ১৯৯৪। গ্রুপপর্বে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হলো নাইজেরিয়ার সাথে। সে বছরের নাইজেরিয়া দল প্রতিপক্ষ হিসেবে দারুণ শক্তিশালী ছিল। তাদের দলের অধিকাংশ খেলোয়াড় খেলতেন ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাবে। মাত্র ৮ মিনিটে গোল দিয়ে তারা আলেবিসেলেস্তে শিবিরে শঙ্কা তৈরি করলো। তবে মাত্র ৯ মিনিটের ব্যবধানেই বাতিস্ততার সামনে স্লান হয়ে গেল নাইজেরিয়ানদের সকল আশা-ভরসা। ২১ ও ২৮ মিনিটে পরপর দুই গোল দিয়ে আর্জেন্টিনাকে জয় এনে দেন বাতিস্ততা। তার দ্বিতীয় গোল বানিয়ে দেওয়া ছাড়া ম্যারাডোনা তেমন কিছুই করে দেখাতে পারেননি এই ম্যাচে। কিন্তু বাতিস্ততার গোলে তার বুনো উল্লাস বারবার টিভি ক্যামেরায় ধরা পরল।
মাঠে যখন এমন উত্তেজক ম্যাচ চলছে, খেলা থেকে বেশ দূরে ফিফার কর্মকর্তাদের সাথে দাঁড়িয়ে আছেন ডাঃ রবের্তো পেদ্রো। আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের চিকিৎসক হিসেবে আছেন তিনি। সেখানে নাইজেরিয়া দলের চিকিৎসকও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আলাপ হচ্ছিল, শরীরে বলবর্ধক আছে কি না, তা দেখার জন্য দলের কোন কোন খেলোয়াড়কে ডোপ টেস্ট করা হবে। ফিফার সব টুর্নামেন্টে ডোপ টেস্ট একটি নৈমিত্তিক প্রক্রিয়া। সেখানে যে কাউকে তারা এই পরীক্ষার জন্য বেছে নিতে পারে। বৈঠকশেষে লটারি করে নাম বাছাই করা হল। তাতে উঠলো ম্যারাডোনার ১০ নম্বর। ম্যাচ শেষ হতে দেখা গেল, ফিফার এক নার্সের হাত ধরে হেসে হেসে গল্প করতে করতে ম্যারাডোনা মাঠ ছাড়ছেন। ম্যারাডোনার সাথে নাইজেরিয়ার আরও এক খেলোয়াড় সেদিন মূত্রের নমুনা দিলেন।
পরের দিনই খবরটি আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশানের কাছে চলে এলো। আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান হুলিও গ্রন্দোনা কাছ থেকে জরুরি টেলিফোন পেলেন ড: পেদ্রো। হুলিও জানালেন,
‘একটা সমস্যা তো হয়েছে। ম্যারাডোনার মূত্রে বলবর্ধক নমুনা পাওয়া গেছে। আপনাকে সেপ ব্লাটারকে ফোন করতে হবে।’
গ্রন্দোনা ড. পেদ্রোকে ব্ল্যাটারের মোবাইল নম্বর দিয়ে বললেন,
‘ তাকে ফোন করুন, তারপর আমাকে জানান তিনি কী বলেন।’
ড: পেদ্রো বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও তৎকালীন ফিফা প্রেসিডেন্টকে ফোনে পেলেন না। কিছুক্ষণ পর অন্য টিম ডাক্তার বিশ মিনিট চেষ্টার পর সেপ ব্লাটারকে ফোনে পেলেন।
তিনি ড: পেদ্রোকে জানালেন,
“ব্লাটার তাকে বলেছে ‘দেখুন আমার তো কিছু করার নেই। পরীক্ষার ফল পজিটিভ এসেছে। এখানে আমার হাত নেই।”
কিন্তু ড. পেদ্রোর কাছে সবকিছু অবাস্তব মনে হতে লাগলো। কারণ নিষিদ্ধ কোনো ওষুধ তিনি ম্যারাডোনাকে কখনোই দেননি। সেপ ব্লাটারকে তিনি ফোন করেছিলেন এই কথা বলার জন্যই।
চারদিন পর, ২৯ জুন সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেল। ফিফা্র হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সেপ ব্লাটার জানালেন,
“ম্যারাডোনার মূত্রের নমুনা সকল পরীক্ষায় বলবর্ধকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে। আর্জেন্টিনা বনাম নাইজেরিয়া ম্যাচে নিষিদ্ধ বলবর্ধক ব্যবহারের নিয়মবিধি লংঘন করায় তাকে বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
ফিফা সাধারণত দুই ধাপে এই পরীক্ষা করে থাকে। তারা খেলোয়াড়দের থেকে মূত্রের দু’টি ভিন্ন নমুনা নিত, যাকে বলা হয় স্যাম্পল ‘এ’ ও স্যাম্পল ‘বি’। পরীক্ষায় স্যাম্পল ‘এ’ পজিটিভ আসার পর খেলোয়াড় ও দলের কর্মকর্তাদের সামনে স্যাম্পল ‘বি’ পুনরায় পরীক্ষা করা হতো। ম্যারাডোনার দুটো নমুনাতে নিষিদ্ধ পদার্থ শনাক্ত করা হয়। এফিড্রিন, নরেফ্রিড্রিন, মেটাফেড্রিন, নরমেটাফেড্রিন, সিউডোএফিড্রিন নামক পদার্থ পাওয়া যাবার কারণে তাকে সে বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে এ সকল পদার্থ থেকে গুরুতরভাবে নিষিদ্ধ ছিল এফিড্রিন। তবে নানা মুনির নানা মত, এই বিষয় নিয়েও অনেক ধোঁয়াশা আছে। অনেক বিশেষজ্ঞ পরবর্তীতে জানান, এ সকল ওষুধ ঠাণ্ডা, কাশি, ও অ্যালার্জি সংক্রান্ত কারণে দেয়া হয়ে থাকে।
কিন্তু এফিড্রিন ম্যারাডোনার শরীরে এলো কীভাবে? পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ম্যারাডোনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক তাকে ওজন কমানোর জন্য একটি ওষুধ দিয়েছিলেন, যার একটা উপাদান ছিল নিষিদ্ধ এফিড্রিন। ড. পেদ্রো এবং দলের সঙ্গে যুক্ত অন্য সকল সদস্য জোর গলায় বলেছিলেন, তারা এই ওষুধের বিষয়ে কিছুই জানতেন না। হয়তো ম্যারাডোনা নিজেও জানতেন না যে, ঐ ওষুধে নিষিদ্ধ এফিড্রিন রয়েছে।
বোস্টনের ফক্সবোরো স্টেডিয়ামে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ঐ ম্যাচ ছিল আর্জেন্টিনার জার্সিতে ম্যারাডোনার শেষ ম্যাচ। অবশ্য তার ফুটবল ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ বললেও তেমন ভুল হবে না। নিষিদ্ধ হয়ে স্টেডিয়াম থেকেই তিনি দেখেছিলেন তার দেশের পরপর দুই হার। দলনেতাকে হারিয়ে আর্জেন্টিনা আর উঠে দাড়াতেই পারেনি। বুলগেরিয়া ও রোমানিয়ার সাথে হেরে সেবার আলবিসেলেস্তেদের বিশ্বকাপ মিশন শেষ হয়।
১৯৯৪ সালে আকাশী-সাদা রঙের জার্সিকে বিদায় জানিয়ে ম্যারাডোনা কি কখনও ফেলে আসা দিনগুলোর কথা ভেবেছেন? নাকি তার খামখেয়ালী জীবন শুধুই বর্তমান নিয়েই থেকেছে? ম্যারাডোনা যদি একবার পিছনে ফিরে তাকাতেন, তবে অসামান্য এক দৃশ্যপট হয়তো তার সামনে ভেসে উঠতো। সেখানে আলো ও অন্ধকারের অদ্ভুত এক মিলমিশ হয়ে আছে। কিন্তু তার মাঝে উঁকি দেয় সোনালি এক ট্রফি, যে ট্রফি মনে করিয়ে দেয় ফুটবল ইতিহাসের এক গ্রেটের গল্প। ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা, নিজেকে যিনি নিয়েছিলেন সবার থেকে উপরে, আবার নিজেই ঠেলে নামিয়েছেন সবার নিচে।