মার্ক ওডের প্রথম আঘাত
বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে ইংলিশ অধিনায়ক ইয়োন মরগান টসে জিতে অস্ট্রেলিয়াকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান। প্রথম দুই ওভারে মাত্র এক রান সংগ্রহ করলেও তৃতীয় ওভার থেকেই স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে ব্যাট করতে থাকেন ওয়ার্নার এবং ফিঞ্চ। উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে ৭.২ ওভারে ৪০ রান যোগ করার পর মার্ক ওডের বলে বাটলারের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান বিপদজনক ডেভিড ওয়ার্নার। ২৫ বলে চারটে চারে ২১ রান করেন তিনি।
ফিঞ্চ-স্মিথের ইনিংস মেরামত
ওয়ার্নার আউট হওয়ার পর ক্রিজে আসেন অজি অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ। ব্যাট হাতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খুব একটা ভালো সময় কাটাচ্ছেন না অ্যারোন ফিঞ্চ। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আট রান করার পর বাংলাদেশের বিপক্ষে করলেন ১৯ রান। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যারোন ফিঞ্চের পূর্বের রেকর্ড বেশ ভালো। অপরপ্রান্তে থাকা স্টিভ স্মিথ আগের দুই ম্যাচে অপরাজিত ছিলেন। বৃষ্টির কারণে অজিদের প্রথম দুটো ম্যাচেই পরিত্যক্ত হয়। একটিতে ছিল হারের সম্ভাবনা, আরেকটিতে জয়ের। এই দুই ডানহাতি ব্যাটসম্যান দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৯৩ বলে ৯৬ রান যোগ করে অস্ট্রেলিয়াকে বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন।
বেন স্টোকসের গোল্ডেন আর্ম
ক্রিজে দুই অজি ব্যাটসম্যান ফিঞ্চ এবং স্মিথ ক্রমশ ভয়ানক হয়ে উঠছেন। বেন স্টোকস নিজের পঞ্চম ওভারের ৫ম বলটি করেন লেগ কাটার। কিছু না বুঝেই বল সীমানা পার করার চেষ্টা চালান ফিঞ্চ। মিস টাইম হয়ে বল হাওয়ায় ভাসছিলো। মিড-অফে দাঁড়ানো অধিনায়ক মরগান বল তালুবন্দী করতে ভুললেন না। সেইসাথে অ্যারোন ফিঞ্চের ৬৪ বলে আটটি চারের সাহায্যে ৬৮ রানের ইনিংসের ইতি ঘটে।
স্টিভ স্মিথের একক লড়াই এবং ওডের ফিরতি আঘাত
ফিঞ্চের বিদায়ের পর চারে ব্যাট করতে নামা হেনরিক্স দ্রুতই ফিরে যান। তখন একপ্রান্ত আগলে রেখে ধীরে-সুস্থে খেলছিলেন স্টিভ স্মিথ। ৩১তম ওভারের তৃতীয় বলে চার হাঁকিয়ে অর্ধশতক পূর্ণ করেন স্টিভ স্মিথ। ৬৮ বলে ক্যারিয়ারের ১৭তম অর্ধশতক হাঁকানোর পর মার্ক ওডের ব্যক্তিগত ৬ষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে মিড-অফে দাঁড়ানো প্লাঙ্কেটের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন স্মিথ।
মার্ক ওড নিজের প্রথম স্পেলে ডেভিড ওয়ার্নাকে ফেরানোর পর নিজের দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম বলেই ৭৭ বলে ৫৬ রান করা অজি অধিনায়ক স্টিভ স্মিথকে সাজঘরে ফেরত পাঠান।
জেসন রয়ের দুর্দান্ত ক্যাচ
নিজের তৃতীয় স্পেলের প্রথম বলে আবারও সুযোগ তৈরি করে মার্ক ওড। স্ট্রাইকে থাকা গ্লেন ম্যাক্সওয়েল সজোরে হাঁকান। কিন্তু বল সোজা কাভারে দাঁড়ানো প্লাঙ্কেটের কাছে যায়। প্লাঙ্কেট তালুবন্দী করতে ব্যর্থ হন। এক বল পরে আবারো ম্যাক্সওয়েল উড়িয়ে মারেন। ডিপ অঞ্চল দিয়ে বল প্রায় সীমানা ছাড়া হয়ে যাচ্ছিলো। সেখান থেকে পাখির মতো উড়াল দিয়ে জেসন রয় বল তালুবন্দী করার পর ভারসাম্য ঠিক রাখতে না পেরে বল উপড়ে ছুঁড়ে মারেন এবং বাউন্ডারি লাইনের ভেতরে এসে অসাধারণ একটি ক্যাচ ধরেন। মার্ক ওড অজিদের তিন ব্যাটিং স্তম্ভকে একাই ফিরিয়ে দেন।
আদিল রশিদের স্পিন ভেলকি
বাংলাদেশের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম ম্যাচে সাইড বেঞ্চে বসেই কাটাতে হয়েছিল আদিল রশিদকে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সুযোগ পেয়েই দুই উইকেট শিকার করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও শুরুটা ভালোভাবেই করেছেন। নিজের প্রথম স্পেলে ফেরান ১৭ রান করা হেনরিক্সকে।
দ্বিতীয় স্পেলে আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেন রশিদ। নিজের নবম ওভারে ম্যাথিউ ওয়েড এবং মিচেল স্টার্ককে সাজঘরে ফেরত পাঠান। এবং নিজের শেষ ওভারে কামিন্সের উইকেট তুলে নিয়ে নিজের বোলিং কোটার ১০ ওভার শেষ করেন। ১০ ওভারে তিনি ৪১ রান দিয়ে শিকার করেছেন চার উইকেট।
ট্রাভিস হেডের ক্যামিও
মার্ক ওড এবং আদিল রশিদের বোলিং তোপের মুখে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস ২৫০ এর আগেই শেষ হওয়ার উপক্রম। সেখান থেকে ৬৪ বলে পাঁচটি চার এবং দুটি ছয়ের সাহায্যে অপরাজিত ৭১* রান করেন তিনি। তার এই ইনিংসের সুবাদে অজিরা নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেটে ২৭৭ রান করে।
আবারও ব্যর্থ জেসন রয়
নিজের শেষ সাতটি ইনিংসে যথাক্রমে ০, ২০, ১, ৮, ৪, ১ এবং ১৩ রানের ইনিংস খেলার পরেও এই মারকুটে ব্যাটসম্যানকে দলে রাখে ইংল্যান্ড। স্টার্কের করা প্রথম বলটি সীমানা ছাড়া করে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় বলেই লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন তিনি। একমাত্র রিভিউটি নিয়েও শেষ রক্ষা হলো না জেসন রয়ের।
হ্যাজলউড-স্টার্কদের বিধ্বংসী বোলিং
নিজের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলে জেসন রয়কে ফেরান মিচেল স্টার্ক। অপরপ্রান্তে থেকে বল হাতে নেয়া হ্যাজলউডও নিজের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই আরেক ওপেনার অ্যালেক্স হেইলসকে সাজঘরে ফেরত পাঠান। জেসন রয় বেশ কয়েক ম্যাচ ধরে নিষ্প্রভ থাকলেও হেইলস টুর্নামেন্টে দুই ম্যাচে দুটি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন। তাকে কোনো রান করতে দেননি হ্যাজলউড। নিজের তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলে ১৪ বলে ১৫ রান করা জো রুটের উইকেট তুলে নিয়ে অজিদের সেমিফাইনালের স্বপ্ন জোরদার করছিলেন হ্যাজলউড।
ম্যাথিউ ওয়েডের কস্টলি মিস
তিন ওভারে মাত্র ১০ রান দুই উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে ইংল্যান্ড। মোমেন্টাম নিজেদের দিকে শিফট করার জন্য কাউন্টার অ্যাটাক করেন মরগান। হ্যাজলউডের করা ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ওভারের প্রথম পাঁচ বলের তিনটে সীমানা ছাড়া করেন। ওভারের শেষ বলে আবারো হাঁকাতে গিয়ে ব্যাটে-বলে ঠিকমতো সংযোগ ঘটাতে পারলেন না। হ্যাজলউডের করা লেগ সাইডের বলটি ফাইন লেগ দিয়ে খেলতে গিয়ে কিপার ম্যাথিউ ওয়েডের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন মরগান। ঝাঁপিয়ে পড়েও বল গ্লাভসে আটকাতে পারলেন না ওয়েড।
এজবাস্টনে স্বস্তির বৃষ্টি
ছয় ওভার শেষে তিন উইকেটে মাত্র ৩৫ রান! স্টার্ক-হ্যাজলউডদের পেসে কুপোকাত ইংল্যান্ড ব্যাটিং লাইনআপ। তখনি বৃষ্টি নামে এজবাস্টনে। প্রায় একঘ ন্টা বিরতির পর পুনরায় বল মাঠে গড়ায়। বৃষ্টির কারণে কোনো ওভার কাটা যায়নি।
ইয়ন মরগানের কাউন্টার অ্যাটক
বৃষ্টি থামার পর পুনরায় খেলা শুরু হওয়ার পর অজিদের বোলারদের উপর কাউন্টার অ্যাটাক করেন মরগান। বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে তার রান ছিল ১৪ বলে ১৪। পরের ২৩ বলে ২৭ রান সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। তখনো দেখেশুনেই খেলছিলেন বেন স্টোকস।
কার্ডিফের সাকিব-রিয়াদ হয়ে এডজবেস্টনে ফিরে আসলেন মরগান-স্টোকস
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৩৩ রানে চার উইকেট হারানোর পর সাকিব-রিয়াদের জোড়া শতকে পাঁচ উইকেটের জয় পায় বাংলাদেশ। এজবাস্টনেও দৃশ্যপট একইরকম। ৩৫ রানে তিন উইকেট নেই ইংল্যান্ডের। সেখান থেকে ইনিংসের হাল ধরেন মরগান এবং স্টোকস। একপর্যায়ে আট বলে তিন রান করা স্টোকস ৩৯ বলে আটটি চার এবং একটি ছয়ের মারে অর্ধশতক তুলে নেন।
মরগানও পরের ওভারে নিজের অর্ধশতক তুলে নেন জাম্পার বলে সিঙ্গেল নিয়ে। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে সবচেয়ে বড় ভয় ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডের। সবসময় সেটা মাথায় রেখেই এগোতে হয় ব্যাটসম্যানদের। ২০ ওভার শেষে ইংল্যান্ডের তিন উইকেটে ১১২ রান প্রয়োজন ছিল বৃষ্টি আইনে। সেখানে মরগান এবং স্টোকস করলেন ১২৬ রান।
আনলাকি নাম্বার এবং আনলাকি আউট
মরগান-স্টোকস জুটি অনায়াসেই লক্ষ্যের দিকে ছুটে যাচ্ছিলেন। মরগান ৮৭ রান এবং স্টোকস ৮৫ রান নিয়ে ব্যাট করছিলেন। অজি বোলাররা কোনো সুবিধে করতে পারছিল না এই দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের সামনে। ইনিংসে ৩২তম ওভারের ৫ম বল। স্টার্কের স্লোয়ার বল খেলতে গিয়ে ঠিকমতো টাইমিং করতে পারলেন না স্টোকস। বল ক্যাচের মতো করে শর্ট মিড-উইকেটের দিকে যাচ্ছিলো। সেটার দিকেই তাকিয়ে ছিলেম নন-স্ট্রাইকে থাকা মরগান। আর অন্যদিকে স্টোকস রান নেওয়ার জন্য ছুটছিলেন।
মরগান যখন খেয়াল করলেন, স্টোকস তখন মাঝ ক্রিজে। সেখান থেকে ফিরে যাওয়া মুশকিল। অবস্থা বেগতিক দেখে মরগান নিজেই ছুটলেন। কিন্তু জাম্পার সরাসরি থ্রো-তে ৮১ বলে ৮৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংসের ইতি ঘটে। সেইসাথে তাদের দুজনের চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১৫৭ বলে ১৫৯ রানের জুটি ভাঙে। টুর্নামেন্টে এটি তৃতীয়বারের মতো ১৫৯ রানের জুটি। এর আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে হেইলস এবং রুট দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১৫৯ রান এবং ভারতের বিপক্ষে গুনাথিলাকা এবং মেন্ডিস দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১৫৯ রান যোগ করেছিলেন। তাদের জুটিটিও ভাঙে রান আউটের কবলে পড়ে।
ভাগ্যবান বাটলার
ইংল্যান্ডের ইনিংসের ৩৫তম ওভারে নিজের কোটার শেষ ওভার করতে দৌড় শুরু করেন মিচেল স্টার্ক। স্ট্রাইকে ছিলেন জস বাটলার। স্টার্কের করা প্রথম বলে পয়েন্টে কাট করতে গিয়ে ম্যাক্সওয়েলের হাতে ক্যাচ দিয়ে বসেন বাটলার। কিন্তু ম্যাক্সওয়েল বলের লাইন মিস করাতে এই যাত্রায় বেঁচে যান বাটলার। পরের ওভারে আবারেও বল হাওয়ায় ভাসিয়ে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে খেলেন বাটলার। দৌড়ে এসে বল তালুবন্দী করার চেষ্টা করেন কামিন্স। উল্টো বল হাত ফসকে বাউন্ডারিতে পরিণত হয়।
বেন স্টোকসের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস
বেন স্টোকস এর আগে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুটি শতক হাঁকিয়েছিলেন। একটি গত বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে, অপরটি গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। দুটো ইনিংসেই তিনি ১০১ রান করে থেমে গেছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে করেছিলেন ১০০ বলে ১০১ রান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৯ বলে ১০১ রান। আজকে এই দুটো ইনিংসকে ছাড়িয়ে ১০৯ বলে ১০২* রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
আবারও বৃষ্টি এবং বাংলাদেশের সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন পূরণ
বেন স্টোকস নিজের তৃতীয় ওডিআই শতক হাঁকানোর এক বল পরে এজবাস্টনে দ্বিতীয় ধাপে বৃষ্টি নামে। তখন ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ৪০.২ ওভারে চার উইকেটে ২৪০ রান। ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডে তখন ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল চার উইকেটে ২০০ রান। পুনরায় আর খেলা শুরু না হলে ইংল্যান্ডকে ৪০ রানে জয়ী ঘোষণা করা হয়। ইংল্যান্ড এক ম্যাচ হাতে রেখেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছিল। আজকের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ গ্রুপ-এ থেকে দ্বিতীয় দল হিসাবে সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করে।