দিনকয়েক আগেই কিংবদন্তী আর্সেনাল ও বার্সেলোনা স্ট্রাইকার থিয়েরি অঁরিকে মোনাকোর নতুন কোচ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। শৈশবের বেড়ে ওঠা ক্লাবে কোচ হিসেবে যোগদান বেশ রোমাঞ্চকর হলেও থিয়েরি অঁরিকে মুখোমুখি হতে হচ্ছে বিশাল চ্যালেঞ্জের। দুই মৌসুম আগেও চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনাল খেলা মোনাকো চলতি মৌসুমে ১০ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে আছে রেলিগেশন জোনে। লিওনার্দো জারডিমের অধীনে দারুণ খেলা মোনাকো এই কোচের অধীনেই মুখ থুবড়ে পড়েছে লিগ ওয়ানে। ফলাফলস্বরুপ চাকরি থেকে বরখাস্ত হন জারডিম। তবে এই ভরাডুবির পেছনে সবচেয়ে বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে মোনাকোর প্রতিভাবান সব খেলোয়াড় বিক্রয়। চলুন দেখে আসা যাক জারডিমের অধীনেই মোনাকোর সেরা দশ খেলোয়াড় বিক্রয়ের হালচাল।
ইয়ানিক কারাস্কো
বেলজিয়ান ক্লাব গেঙ্ক থেকে মাত্র ১৭ বছর বয়সী কারাস্কোকে ২০১০ সালে দলে ভেড়ায় মোনাকো। প্রথম দুই মৌসুমে অনিয়মিত থাকলেও ২০১২-১৩ মৌসুমে জারডিমের অধীনে দুর্দান্ত খেলা শুরু করেন কারাস্কো। তাতেই তার উপর নজর পড়ে এটলেটিকো বস দিয়েগো সিমিওনের। পরবর্তী মৌসুমেই স্পেনে পাড়ি জমান এই বেলজিয়ান উইঙ্গার। আড়াই বছর এটলেটিকোর হয়ে খেলার পর বিশাল অঙ্কের লোভনীয় প্রস্তাবে চীনে পাড়ি জমান কারাস্কো।
বর্তমান ক্লাব: ডালিয়ান ইয়াইফাং
মোনাকো থেকে যোগদান: অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ
ট্রান্সফার মূল্য: ২২.৫ মিলিয়ন ইউরো
জিওফ্রে কনডগবিয়া
২০১৩ সালে সেভিয়া থেকে জিওফ্রে কনডগবিয়াকে দলে ভেড়ায় মোনাকো। রানিয়েরির অধীনে সেবার মোনাকো দলের অপরিহার্য অংশ হয়ে ওঠেন তিনি। সেবার রানিয়েরির অধীনে মোনাকোও লিগ ওয়ানে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। তবে পরের বছর জারডিম দায়িত্বে এলে কনডগবিয়ার পরিণতিও হয় কারাস্কোর মতো। এক মৌসুম জারডিমের অধীনে খেলার পরের বছরেই ইন্টারের উদ্দেশ্যে ক্লাব ছাড়েন এই ফরাসি। তবে সান সিরোতে প্রথম একাদশে নিয়মিত হতে পারেননি কখনো, যার দরুন কিছুদিন পরেই ক্লাব ছেড়ে আবার স্পেনেই ফিরে যান কনডগবিয়া। বর্তমানে ভ্যালেন্সিয়ার হয়ে খেলছেন এই ফরাসি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার।
বর্তমান ক্লাব: ভ্যালেন্সিয়া
মোনাকো থেকে যোগদান: ইন্টারন্যাশিওনাল
ট্রান্সফার ফি: ২৭ মিলিয়ন
তিমুয়ে বাকোয়োকো
২০১৭ সালে মোনাকোর অভাবনীয় সাফল্যের পেছনের তারকাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বাকোয়োকো। যদিও প্রথমদিকে জারডিমের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে বাকোয়োকোর। একটি ম্যাচের সাব নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় এই দুজনের মাঝে। তবে দ্রুতই জারডিমের অধীনে নিজেকে অন্যতম সেরা হিসেবে তুলে ধরেন বাকোয়োকো। বাকোয়োকোর দারুণ পারফরম্যান্সে ইউরোপের বড় বড় ক্লাবগুলো তাকে দলে ভেড়ানোর জন্য রীতিমতো যুদ্ধ শুরু করে। সেই যুদ্ধে জয়ী হয় চেলসি। তবে তার জন্য তাদের পকেট থেকে খসে ৪০ মিলিয়ন ইউরো। দুঃখের বিষয়, চেলসিতে পুরোপুরি ফ্লপ হন বাকোয়োকো। তাই এক বছর পরেই চেলসি বাকোয়োকোকে ধারে পাঠায় এসি মিলানে। হয়তো মোনাকো ছাড়াই বাকোয়োকোর ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো।
বর্তমান ক্লাব: এসি মিলান (লোন)
মোনাকো থেকে যোগদান: চেলসি
ট্রান্সফার ফি: ৪০ মিলিয়ন ইউরো
ফাবিনহো
২০১৭ সালে মোনাকোর সাফল্যে নিজেকে নতুন করে চিনিয়েছেন এই ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার। রিও আভে থেকে ধারে মোনাকোতে এসেছিলেন ফাবিনহো। ২০১৪ সালে স্থায়ীভাবে তাকে কিনে নেয় মোনাকো। লিওনার্দো জারডিমের অধীনে এক বহুমুখী প্রতিভাধর খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন ফাবিনহো। রাইট ব্যাক ও ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে খেলা ফাবিনহো ২০১৪ থেকেই নিয়মিত পারফরম্যান্স করে গেছেন। তাই ফাবিনহোর উপর বড় ক্লাবগুলোর চোখ ছিলো আগে থেকেই। এই বছরই ৪০ মিলিয়ন এর বেশি ইউরো দিয়ে ক্লপ এনফিল্ডে নিয়ে আসেন ফাবিনহোকে।
বর্তমান ক্লাব: লিভারপুল
মোনাকো থেকে যোগদান: লিভারপুল
ট্রান্সফার ফি: ৪০.৫ মিলিয়ন ইউরো
বার্নার্ডো সিলভা
লিসবনে জন্মানো এই পর্তুগিজ মিডফিল্ডার ক্যারিয়ার শুরু করেন বেনফিকার হয়ে। জারডিম দায়িত্বে এসে ধারে মোনাকোতে নিয়ে আসেন বার্নার্ডোকে। বার্নার্ডোর খেলায় মুগ্ধ হয়ে ছয় মাস পরেই শীতকালীন দলবদলে স্থায়ীভাবে তাকে কিনে নেন জারডিম। তবে পেপ গার্দিওলার চোখে পড়ার পর থেকেই তাকে ইতিহাদে নিয়ে আসার জন্য তোড়জোড় শুরু করে ম্যানচেস্টার সিটি। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে তাকে কিনে নেয় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দলটি। গার্দিওলার অধীনে এখন পর্যন্ত ভালোভাবেই নিজের সেরাটা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
বর্তমান ক্লাব: ম্যানচেস্টার সিটি
মোনাকো থেকে যোগদান: ম্যানচেস্টার সিটি
ট্রান্সফার ফি: ৪৫ মিলিয়ন ইউরো
বেঞ্জামিন মেন্ডি
জারডিমের ট্যাক্টিকসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছিলো ফুলব্যাকদের। হাই প্রেসিং ঘরানার ফুটবল খেলা মোনাকোর হয়ে এই কাজটি সবচেয়ে দারুন ভাবে পালন করেছিলেন ফ্রেঞ্চ ফুলব্যাক বেঞ্জামিন মেন্ডি। পেপ গার্দিওলার প্লেয়িং স্টাইলের সাথে বেঞ্জামিন মেন্ডিও কার্যকর খেলোয়াড়। প্রথম মৌসুমে ফুলব্যাকের অভাবে ভোগা সিটি ২০১৭ গ্রীষ্মকালীন দলবদলে কিনে নেয় বেঞ্জামিন মেন্ডিকে। প্রথম মৌসুমে ইনজুরির দরুন বেঞ্চে কাটালেও ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য ছিলেন মেন্ডি। এই মৌসুমে নিজেকে সবে মাত্র মেলে ধরতে শুরু করেছেন মেন্ডি।
বর্তমান ক্লাব : ম্যানচেস্টার সিটি
মোনাকো থেকে যোগদান : ম্যানচেস্টার সিটি
ট্রান্সফার ফি : ৫১.৭৫ মিলিয়ন ইউরো
অ্যান্থনি মার্শিয়াল
অঁরির সাথে ক্যারিয়ার শুরু থেকেই তুলনা হওয়া মার্শিয়াল মোনাকোর হয়েই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন। জারডিমের অধীনে ২০১৪-১৫ মৌসুমে ৪৮ ম্যাচ খেলে ১২ গোল করলেও খেলার স্টাইল দিয়ে নজর কাড়েন। এদিকে ফরোয়ার্ডের অভাবে ভোগা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড হঠাৎ করেই দলে ভেড়ায় এই তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে। মাঝে মাঝে জ্বলে উঠলেও নিজের নামের প্রতি এখনো তেমন সুবিচার করতে পারেননি আন্থনি মার্শিয়াল।
বর্তমান ক্লাব: ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
মোনাকো থেকে যোগদান: ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
ট্রান্সফার ফি: ৫৪ মিলিয়ন ইউরো
থমাস লেমার
২০১৫ সালে আরেক ফরাসি ক্লাব কায়েন থেকে মোনাকোতে আসেন থমাস লেমার। গতি ও বুদ্ধিদীপ্ত পাসিং দিয়ে মোনাকোর উইংয়ে ক্যারিশমা দেখাতেন এই ফরাসি খেলোয়াড়। ফ্রান্সের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা লেমারকে নিয়ে প্রতি মৌসুমেই দলবদলের গুঞ্জন উঠেছিলো। জারডিমের অধীনে দারুণ ফুটবল খেলা অন্যতম এই তারকা অবশেষে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিশ্বকাপ শেষে যোগ দেন স্প্যানিশ ক্লাব অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদে। ট্রান্সফারের মূল্যটাও কম নয়। ৬৩ মিলিয়ন ইউরো।
বর্তমান ক্লাব: অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ
মোনাকো থেকে যোগদান: অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ
ট্রান্সফার ফি: ৬৩ মিলিয়ন ইউরো
হামেস রদ্রিগেজ
২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট জেতা হামেস রদ্রিগেজ বিশ্বকাপের পরপরেই যোগ দেন রিয়াল মাদ্রিদে। তবে জারডিমের অধীনে একটি ম্যাচও খেলতে পারেননি এই কলম্বিয়ান সেনসেশন। ২০১৪ সালের জুনে ক্লাবের দায়িত্ব নেন জারডিম। সেই সময়ই ক্লাব ছাড়েন হামেস। তার শূন্যস্থান পূরণ করতেই বার্নার্ডো সিলভাকে মোনাকোতে নিয়ে আসেন জারডিম। তবে রিয়ালে জিদানের অধীনে কম সময় খেলার অজুহাত দেখিয়ে ২০১৬ সালে ধারে বায়ার্নে যোগ দেন হামেস।
বর্তমান ক্লাব: বায়ার্ন মিউনিখ (ধারে)
মোনাকো থেকে যোগদান: রিয়াল মাদ্রিদ
ট্রান্সফার ফি: ৬৭.৫ মিলিয়ন ইউরো
কিলিয়ান এমবাপ্পে
দুই বছর আগে জারডিমের অধীনে এক মৌসুমে ২৬ গোল ও ৮টি এসিস্ট করে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন এক টিনএজার। মাত্র ১৯ বছর বয়সী এই ফুটবলারকেই ভাবা হয় ভবিষ্যতের ফুটবলের পোস্টারবয়। ২০১৭ সালে কিনে নেওয়ার শর্তে ধারে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ে যোগ দেন এমবাপ্পে। বিশ্বকাপে ফ্রান্সের হয়ে শিরোপা জেতার পাশাপাশি সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরষ্কারটিও বাড়ি নিয়ে যান এই তরুণ। তাকে হারালেও বিনিময়ে মোনাকোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে ১৬৬ মিলিয়ন ইউরো। আর এই ফি-তেই এমবাপ্পে বনে যান নেইমারের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামী খেলোয়াড়।
বর্তমান ক্লাব: প্যারিস সেইন্ট জার্মেই
মোনাকো থেকে যোগদান: প্যারিস সেইন্ট জার্মেই
ট্রান্সফার ফি: ১৬৬ মিলিয়ন ইউরো