২০১৭ সালের শীতকালীন দলবদলে চাইনিজ সুপার লিগের দলগুলো খরচ করেছিলো ৩৩১ মিলিয়ন ইউরো, যা কি না প্রিমিয়ার লিগের উচ্চসারির সবগুলো দলের খরচের চেয়ে ১২৬ মিলিয়ন ইউরো বেশি। ২০১৬ সাল থেকেই হঠাৎ করেই চাইনিজ সুপার লিগের ক্লাবগুলো অঢেল টাকা ঢালতে শুরু করে। বিরাট অঙ্কের ট্রান্সফার ফি ছাড়াও লোভনীয় বেতনের অফারে অনেক খেলোয়াড়ই পাড়ি জমিয়েছেন চীনে। তবে বর্তমানে বিদেশি খেলোয়াড় কেনার ক্ষেত্রে কিছু বিধি আরোপ হওয়াতে আগের তুলনায় এই খরচ কিছুটা কমেছে। তবে এত খরচ করে ইউরোপিয়ান লিগের খেলোয়াড়দের উড়িয়ে আনার ফলে আসলেই কি পরিবর্তন হয়েছে খেলার? এই খেলোয়াড়রাও কি নিজেদের মানিয়ে নিয়ে দিতে পেরেছেন সেরাটা? আজ আমরা দেখবো চাইনিজ লিগের সবচেয়ে দামী দশ খেলোয়াড় ও লিগে তাদের অবদান।
১০. অডিওন ইঘালো
ওয়াটফোর্ড থেকে চ্যাংচুন ইতাই
ফি: ২০ মিলিয়ন ইউরো
ওয়াটফোর্ডে যোগদান করার পর প্রথম দুই সিজনে নিজের প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছিলেন ইঘালো। দুই মৌসুমে সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩৯ গোল করেছিলেন তিনি। কিন্তু এরপরেই খেই হারিয়ে ফেলেন। ২০১৬/১৭ মৌসুমে ২০ ম্যাচ খেলে গোল করেন মাত্র ২টি। তাই পাড়ি জমান চাইনিজ লিগে।
সেখানে গিয়ে আবার নিজেকে খুঁজে পান এই নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড। চীনে এসে ৫৫ ম্যাচ খেলে ২৯ গোল করেন তিনি। এই বছরে ক্লাবটির অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হয় অডিওন ইঘালোর নাম।
৯. রামিরেস
চেলসি থেকে জিয়াংসু সুনিং
ফি: ২৫ মিলিয়ন ইউরো
এনগোলো কান্তে যুগের আগে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে টানা ছয় মৌসুম কাটিয়েছেন রামিরেস। অবশেষে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে চেলসি ছেড়ে জিয়াংসুতে যোগ দেন তিনি।
কিন্তু ধীরে ধীরে খেই হারিয়ে ফেলেন রামিরেস। প্রথম মৌসুমে কিছুটা ভালো খেললেও ধার কমতে থাকে তার। তাই পরবর্তীতে তার জায়গা হয় সাইডবেঞ্চে। মাঝে বেনফিকাতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করলেও যেতে পারেননি। জিয়াংসু সুনিংয়ের হয়ে রামিরেস সর্বশেষ মাঠে নামেন ২০১৮ সালের মে মাসে।
৮. এন্থনি মডেস্টে
এফসি কোলন থেকে তিয়াঞ্জিন কুয়াঞ্জিয়ান
ফি – ২৫.৮ মিলিয়ন ইউরো
২০১৭ সালের জুলাইতে কোলন থেকে তিয়াঞ্জিনে পাড়ি জমান ফরাসি স্ট্রাইকার এন্থনি মডেস্টে। প্রথম মৌসুমেই ২৯ ম্যাচ খেলে ১৬ গোল করেন তিনি। কিন্তু তারপরে নিজে থেকেই আর থাকতে চাননি চীনে।
আপিল করে চুক্তির বছর কমিয়ে আনতে চেয়েছিলেন তিনি। তখনই চাইনিজ ক্লাবটির সাথে ঝামেলা বাধে তার। তবে এতকিছুর মধ্যেও এই নভেম্বরে মডেস্টের আগের ক্লাব ঘোষণা দেয় যে, তারা আবার মডেস্টেকে দলে ভিড়িয়েছে। ব্যাপারটি মোটেও হালকাভাবে নেয়নি তিয়াঞ্জিন। তারা আপিল করেছে ফিফার সর্বোচ্চ আদালতের কাছে।
৭. ইয়ানিক কারাস্কো
এটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে ডালিয়ান ইয়াফিং
ফি – ২৭ মিলিয়ন ইউরো
ডালিয়ান ইয়াফিং ক্লাবটি ২০১৮ সালে বেশ কিছু তারকা খেলোয়াড়দের দলে ভেড়ায়, যার মধ্যে ইয়ানিক কারাস্কো ছাড়াও রয়েছেন জোসে ফন্ট ও নিকোলাস গাইতান।
চীনে পাড়ি জমালেও রবার্তো মার্টিনেজ কারাস্কোকে রেখেছিলেন বিশ্বকাপ দলে। অবশ্য ডালিয়ান ইয়াফিংয়ের হয়ে ভালো পারফর্ম করেই দলে জায়গা ধরে রেখেছেন তিনি। গত মৌসুমে ২৬ ম্যাচ খেলে ক্লাবটির হয়ে ৭টি গোল এবং ৯টি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি, যার ফলে প্রথম বিভাগে জায়গা ধরে রাখে ক্লাবটি।
জোর গুঞ্জন রয়েছে যে, ২০১৯ সালে আবার ইউরোপে ফিরতে যাচ্ছেন কারাস্কো। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও আর্সেনাল নাকি কারাস্কোকে দলে ভেড়ানোর ব্যাপারে আগ্রহও প্রকাশ করেছে।
৬. জ্যাকসন মার্টিনেজ
অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে গুয়াংজু এভারগ্রান্ডে
ফি – ৩১ মিলিয়ন ইউরো
৩১ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ২০১৬ সালে স্প্যানিশ ক্লাব অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ছেড়ে চীনে পাড়ি জমান জ্যাকসন মার্টিনেজ। কিন্তু অ্যাটলেটিকো ও পোর্তোর হয়ে দুর্দান্ত খেললেও চীনে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে খুঁজতে শুরু করেন তিনি। নিজের প্রথম ১৬ ম্যাচে গোল করেন মাত্র ৪টি, যেখানে পোর্তোর হয়ে মার্টিনেজের ১৩৬ ম্যাচে গোল রয়েছে ৯২টি।
গুয়াংজু এভারগ্রান্ডে বাজে পারফর্মের জন্য মার্টিনেজকে ধারে মাঠায় পর্তুগালের দ্বিতীয় বিভাগের একটি দলে। তবে এই বছরের শেষেই গুয়াংজুর সাথে চুক্তি শেষ হবে তার। তখন হয়তো আবারো ইউরোপের মাঠেই দেখা যাবে তাকে।
৫. সেডরিক বাকাম্বু
ভিলারিয়াল থেকে বেইজিং সিনোবো
ফি: ৩৫.৩ মিলিয়ন ইউরো
২০১৮ সালে হঠাৎ করে সবাইকে চমকে দিয়ে চাইনিজ লিগে পাড়ি জমান ভিলারিয়াল স্ট্রাইকার সেডরিক বাকাম্বু। অথচ সেই মৌসুমেও ভিলারিয়ালের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন তিনি।
এই পারফরম্যান্সের ধারা তিনি বজায় রেখেছেন চীনে গিয়েও। বেইজিং ক্লাবের হয়ে প্রথম ২৮ ম্যাচে গোল করেন ২৩টি। বাকাম্বুর অসাধারণ পারফর্মেন্সের উপর ভর করে চাইনিজ এফএ কাপ জিতে নেয় বেইজিং। পাশাপাশি লিগেও চতুর্থ হয় ক্লাবটি।
৪. এলেক্স টেক্সেইরা
শাখতার দোনেতস্ক থেকে জিয়াংসু সুনিং
ফি – ৩৬.৪ মিলিয়ন ইউরো
বিশ্বকে চমকে দিয়ে ২০১৬ সালে এল্কস টেক্সেইরা যোগ দেন চাইনিজ ক্লাব জিয়াংসু সুনিংয়ে। অথচ লিভারপুলের মতো বড় ক্লাবও দলে ভেড়াতে চেয়েছিলেন এই ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকারকে। তবে বিরাট অঙ্কের টাকার ডাক উপেক্ষা করতে না পেরেই চাইনিজ লিগে পাড়ি জমান তিনি।
শুরু থেকেই ক্লাবকে সামনে থেকে টেনে নিয়ে গেছেন টেক্সেইরা। ক্লাবটির হয়ে ১০২ ম্যাচ খেলে সরাসরি ৭২ গোলে অবদান রেখেছেন তিনি, যার মধ্যে তার গোল রয়েছে ৪৫ টি। তবে মাথা গরম করে বেশ কিছু ম্যাচে বহিষ্কৃতও হয়েছেন তিনি।
৩. পাউলিনহো
বার্সেলোনা থেকে গুয়াংজু এভারগ্রান্ডে
ফি – ৪৪.২ মিলিয়ন ইউরো
২০১৫ সালে টটেনহাম হটস্পার থেকে গুয়াংজুতে যোগদান করেন পাউলিনহো। কিন্তু ২০১৮ সালে বার্সেলোনার কাছে বিক্রয় করার একবছর পরেই ৪৪.২ মিলিয়ন ইউরোতে তাকে পুনরায় কিনে নেয় গুয়াংজু এভারগ্রান্ডে।
এই ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার প্রথম দফার চেয়ে দ্বিতীয় দফায় আরো দুর্দান্ত হয়ে ফেরেন। দ্বিতীয় দফায় এসে ক্লাবের হয়ে ১৯ ম্যাচেই ২০ গোলে অবদান রেখেছেন পাউলিনহো, যার কারণে লিগে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয় তারা।
২. হাল্ক
জেনিত সেইন্ট পিটার্সবার্গ থেকে সাংহাই শেনহুয়া
ফি – ৪৬.১ মিলিয়ন ইউরো
প্রিমিয়ার লিগকে উপেক্ষা করে ২০১৬ সালেই চাইনিজ লিগে পাড়ি জমিয়েছন হাল্ক। তবে চীনে নিজেকে দারুণভাবে মানিয়ে নিয়েছেন এই ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার। পাওয়ার ফুটবল খেলা হাল্ক যেকোনো পজিশনেই খেলতে পারেন। তাই মাত্র ৮৭ ম্যাচে ৫২ গোলের পাশাপাশি ৪৩ গোলে সহযোগিতাও করেছেন তিনি।
আর অধিনায়কের বাহুবন্ধনী পরে ২০১৮ সালে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে প্রথমবারের মতো লিগ চ্যাম্পিয়ন করেন হাল্ক।
১. অস্কার
চেলসি থেকে সাংহাই শেনহুয়া
ফি – ৬০ মিলিয়ন ইউরো
২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে ৬০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে চেলসি থেকে অস্কারকে দলে ভেড়ায় সাংহাই। সেই অস্কারই এখন পর্যন্ত চাইনিজ লিগের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড়। সামনে পুরো ক্যারিয়ার পড়ে থাকলেও টাকার জন্য চীনে পাড়ি জমানোর জন্য অস্কারকে শুনতে হয়েছে বিস্তর সমালোচনা। তবে এতসব সমালোচনাও দমাতে পারেনি অস্কারকে। চাইনিজ লিগে শুরু থেকেই খেলছেন দুর্দান্ত।
প্রথম মৌসুমে ৩৯ ম্যাচে ১৭ গোলে সহায়তা করেছেন অস্কার, যা সেই মৌসুমের সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টও ছিলো। এর পাশাপাশি ৯টি গোলও করেছেন তিনি।
গত বছর অস্কার সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৬ গোলের পাশাপাশি ২৪টি গোলে সহায়তা করেন। এর সুবাদেই প্রথমবারের মতো লিগ শিরোপা ঘরে তোলে সাংহাই শেনহুয়া।