ওই বলটার নাগাল পাওয়ার কথা নয় এমনিতে। বাবর আজম ক্রিজ ছেড়েছিলেন বল ছোড়ারও দেড় দিন আগে, দেখতে পেয়ে মার্ক ওয়াট বলটা ঠেলে দিয়েছিলেন ওয়াইড লাইনেরও অনেক বাইরে। মহেন্দ্র সিং ধোনি হলে হয়তো শট না খেলেই ক্রিজে ফেরার চেষ্টা করতেন শেষ মুহূর্তে, উইকেটে থাকলে এমন কত শট খেলা যাবে! কিন্তু বাবর আজম তো ধোনি নন। তাছাড়া ততক্ষণে ইনিংসের ১৬ নম্বর ওভার পেরিয়ে গেছে, নিজেও পেয়ে গেছেন টুর্নামেন্টে চতুর্থ ফিফটি, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এর আগে যে কৃতিত্ব ছিল মাত্র দু’জনের। বাবর আজম তাই শটটা খেলতেই চাইলেন। যেন ‘আউট তো হতেই হবে’ মেনে নিয়েই।
কিন্তু বাবর আউট হলেন না সে বলে। ডান হাত ব্যাট থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া সেই শটে বলটা ব্যাটে লাগল ততটাই, যতটা লাগলে বলটা উইকেটকিপারের গ্লাভস অব্দি না যায়। যদি কেবল একটি ডেলিভারিতে পাকিস্তানের ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যাত্রার বর্ণনা করতে হয়, তো সেটা খুব সম্ভবত স্কটল্যান্ড ম্যাচের ১৭ নম্বর ওভারের এই তিন নম্বর বলটাই হবে। এই পাকিস্তান তো যা-ই ছুঁতে চাইছে, কোনো না কোনোভাবে ঠিকই নাগাল পেয়ে যাচ্ছে!
***
নাগাল পাওয়ার শুরু বিশ্বকাপের আগে থেকেই। বিশ্বকাপ অংশগ্রহণটা এবার ভারতেরই অধিকার, ওই দেশের নামটাই প্রচারিত হচ্ছে সবখানে; তবে করোনার কারণে খেলাগুলো হচ্ছে আরব আমিরাতের মাটিতে। সেই আরব আমিরাত, প্রায় দশ বছর ধরে পাকিস্তান যাকে ঘর মেনে এসেছে! গত দু’বছর পিএসএলের ম্যাচ ছাড়া খেলা হয়নি সেখানে; তবে বিশ্বকাপ শুরুই করেছিল সর্বশেষ ১১ ম্যাচে জয়ের রেকর্ড নিয়ে, সুপার টুয়েলভ পর্ব শেষ হতে হতে যেটা বেড়ে পৌঁছেছে ১৬-০তে।
কিন্তু জয়গুলো তো এমনি এমনি আসেনি, মাঠের পারফরম্যান্সেই জিততে হয়েছে। আর পাকিস্তান ‘সিকান্দর’ হচ্ছে প্রায় সব জায়গাতেই।
ওপেনিং জুটির কথাতেই আসা যাক প্রথমে। এই বিশ্বকাপের আগে – টি-টোয়েন্টিতে কমপক্ষে ৫০০ রান করেছেন – এমন উদ্বোধনী জুটিগুলোর মধ্যে তাদের ৫২.১০ গড়টাই ঠাঁই পাচ্ছিল সবার ওপরে। আর বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্ব শেষ হতে হতে দেখা যাচ্ছে, যেকোনো উইকেটে গড়া জুটিগুলোকে বিবেচনায় নিলেও এক বিরাট কোহলি-মহেন্দ্র সিং ধোনি জুটিটাই উঠতে পারছে তাদের ওপরে।
তবুও একটা ভয় ছিল এই জুটি নিয়ে। সেরকম ‘মারতে পারেন’ বলে তো পরিচিতি নেই দু’জনের একজনেরও। বাবর আজম আর মোহাম্মদ রিজওয়ানের স্ট্রাইকরেট দেখলে যা বিশ্বাস করাটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, দু’জনে একত্রে ব্যাট করে ওভারপ্রতি রান তুলেছেন ৯.১৬ করে; এ বছর পাকিস্তান অন্য যেই দুই জুটি চেষ্টা করেছিল ওপেনিংয়ে, রিজওয়ান-শারজিল খান (৮.২৩), রিজওয়ান-হায়দার আলী (৮.২৭) জুটির চেয়ে যা প্রায় ১ রান বেশি।
আর বিশ্বকাপে এসে তো তারা দেখালেন, এমন একটা জুটিই পাকিস্তান খুঁজে ফিরছিল হাজার বছর ধরে। এবারের বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচেই পাকিস্তান প্রথম দশ ওভার শেষে হারায়নি ২ উইকেটের বেশি, উদ্বোধনী জুটিই ইনিংসের প্রথম অর্ধেকটা পার করে দিয়েছে দুই ম্যাচে। যে ভারত ছিল বিশ্বকাপে পাকিস্তানের জন্য এক মস্ত ধাঁধার নাম, আগে ১২ বার খেলেও হারানো যায়নি যাদের, এবার ১৩তম বারে এসে গেরো খুলেছে। সেটা সম্ভব হয়েছে বাবর-রিজওয়ানের অপরাজিত ১৫২ রানের উদ্বোধনী জুটিতে! পরে দু’জনে সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ করেছেন নামিবিয়ার বিপক্ষেও। সব মিলিয়ে এই বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান তুলেছে এই জুটিই, সেটাও ১২৮ স্ট্রাইকরেটে।
তবে রিজওয়ান-বাবরের জুটিটা যে মঞ্চ এনে দিত বাকিদের, তারা সেটা কাজে লাগাতে পারছিলেন না দেখেই ঘটছিল সমস্যা। বিশ্বকাপের আগে ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যা নিয়ে নিজের দুশ্চিন্তা লুকাননি বাবর আজমও।
‘মিডল-অর্ডার আর ডেথ বোলিং — এই দুটো জায়গায় আমরা সংগ্রাম করছি। বেশ কিছু সময় ধরেই করছি। ভিন্ন ভিন্ন কম্বিনেশন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি আমরা, কিন্তু ফল পাচ্ছি না।’
গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এই বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত যে ২০টা টি-টোয়েন্টি খেলেছে পাকিস্তান, তাতে খুশদিল শাহ, শোয়েব মাকসুদ, আজম খান, ইফতিখার আহমেদসহ ১৬ জন ব্যাটারকে ওই চার পজিশনে চেষ্টা করেছে পাকিস্তান। এবং তাদের সম্মিলিত ১২.৮৯ গড়টা এই বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে অংশ নেওয়া ১২ দলের ভেতর সর্বনিম্ন। ১১৯.৭৩ স্ট্রাইকরেটই অবশ্য শঙ্কার ছিল বেশি।
বিশ্বকাপে এসে মিডল-অর্ডারে পাকিস্তান আস্থা রাখতে চেয়েছে মোহাম্মদ হাফিজ-শোয়েব মালিকদের ওপর। ২০২০ সালের ফর্ম (১৫২.৫৭ স্ট্রাইকরেটে ৮৩ গড়) হারানোটা অবধারিতই ছিল হাফিজের জন্য, তবে দলের চার নম্বর ব্যাটসম্যানের ১১.৫৫ গড় তো একটু বেশিই বাজে। হাফিজ ফর্মে ফেরেননি বিশ্বকাপের প্রথম তিন ম্যাচেও। তবুও সমস্যা হয়নি, বৈতরণি পার করে দেওয়ার জন্য মালিক-আসিফ আলী ছিলেন বলে।
বিশ্বকাপের প্রাথমিক স্কোয়াডে ছিলেন না; তবে আরেক ‘শোয়েব’, মাকসুদের চোটে বিশ্বকাপের দরজা খুলেছে মালিকের। ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপে ব্যাট হাতে দুরন্ত ফর্মটাও যার পেছনে ভালোই ভূমিকা রেখেছে। মালিক সে ফর্মটা টেনে এনেছেন বিশ্বকাপেও। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ফিফটি করেছেন ১৮ বলে; এর আগে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের লাগামটা যখন প্রায় ছুটে যাচ্ছে পাকিস্তানের কব্জা থেকে, তখন ইশ সোধিকে চার আর মিচেল স্যান্টনারের ৪ বলে ১৩ নিয়ে ম্যাচে। বুঝিয়েছেন, বয়স চল্লিশ পেরোলেও চালশে তো হনইনি, বরং হাড়গুলো ভেলকি দেখাতে তৈরি এখনো।
তবুও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে মালিক পার্শ্বচরিত্রই, নায়কের সাজপোশাক আসিফ আলীর জন্যই বরাদ্দ ছিল বলে। হাফিজ-মালিকের কেউই নন, এই মুহূর্তে মিডল-অর্ডারে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ভরসার নাম আসিফ আলী। এবারের ন্যাশনাল টি-টোয়েন্টি কাপে কমপক্ষে ২৫ বল ব্যাট করেছেন, এমন ব্যাটারদের মধ্যে আসিফ আলীর ১৭৪.৬৪ স্ট্রাইকরেটটাই সবচেয়ে বেশি। অবশ্য স্ট্রাইক রেট আর ছক্কা মারার ক্ষমতার কারণেই তো পাকিস্তানের জাতীয় দলে এসেছিলেন তিনি। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ২০১৯-এর গোড়া থেকে যে ১২৩ জন ব্যাটার ৭৫০ বল মোকাবেলা করেছেন টি-টোয়েন্টিতে, এর মধ্যে কেবল মাত্র ছ’জনই প্রতি ১০ বলে অন্তত একবার ছক্কা হাঁকাতে পেরেছেন। আসিফ সে ছ’জনের তালিকায় জায়গা পাচ্ছেন বলে ঘোষণাই দেওয়া যায়, বিরল এক প্রতিভাই এসেছেন পাকিস্তান ক্রিকেটের রাডারে।
কিন্তু সেই প্রতিভাকে জাতীয় দলে ঠিকঠাক কাজে লাগানো যাচ্ছিল না বলেই কথা উঠছিল। এবারে অবশ্য সেই সমস্যা নেই। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ৩ ছক্কা দিয়ে শুরু, পরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে করিম জানাতের পরপর ৪ বলে মেরেছেন ৪ ছক্কা। যদিও করেছেন ৫৭ রান, তবে সেটা টুর্নামেন্ট-সেরা ২৪৭.৮৩ স্ট্রাইক রেটে। সে তালিকায় পরের দুটা নামই শোয়েব মালিক আর মোহাম্মদ হাফিজ। প্রথমে উইকেট ধরে রেখে পরে হাত খোলার যে কৌশল হাতে নিয়েছে পাকিস্তান, সেটা বুমেরাং হয়ে ফেরত আসেনি তাদের কারণেই।
***
জুটি বেঁধে শিকার করাটা পাকিস্তানের জন্য নতুন কোনো গল্প নয়। পাকিস্তানের ‘টু ডব্লিউ’ জুটি একে অন্যের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেই নাকি ধ্বসিয়ে দিতেন প্রতিপক্ষকে! পাকিস্তান বোধহয় তাদেরই উত্তরসূরি পেয়ে গেছে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে, এক পেসার আর স্পিনারের জুটিতে।
শাহীন শাহ আফ্রিদির অভিষেকের পর থেকে এই বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত যদি হিসাব করা হয়, ৬১ ইনিংসে প্রথম ওভারে বল করতে এসে ২০ বারই প্রথম ওভারে উইকেট তুলে নিয়েছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি; এক ওভারে দুই উইকেট নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে একবার, সব মিলিয়ে প্রথম ওভারে উইকেট তাই ২১টা। আফ্রিদির পরের নামটাই ইমাদ ওয়াসিম, ৫৬ ওভার বল করে যিনি উইকেট নিয়েছেন ১৩টা।
এই বিশ্বকাপে দু’জনের জুটিটা আরও ভালো জমেছে যেন। পাকিস্তানের পুরো বিশ্বকাপের সুরটা বেঁধে দিতে আফ্রিদি সময় নিয়েছিলেন চার বল, রোহিত শর্মাকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠিয়েছিলেন প্লাম্ব এলবিডব্লিউয়ে। পরের ওভারেই লোকেশ রাহুলকে যে বলটায় বোল্ড করেছেন, ‘বল অব দ্য সেঞ্চুরি’র আলোচনায় সেটা জায়গা না পেলেই বরং বিস্মিত হতে হবে।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসে ইমাদের কাজটা থাকে মূলতঃ রান আটকানোর। যে কাজটা ক্যারিয়ারজুড়ে বেশ সার্থকতার সঙ্গেই করে আসছিলেন তিনি, ৬.৭৭ ইকোনমি রেট তেমনই সাক্ষ্য দেয়। যদিও এ বছরটা একটু বাজেই কাটছিল, বিশ্বকাপের আগে পাওয়ারপ্লেতে ৭ ওভার বল করে ওভারপ্রতি রান হজম করেছিলেন ৯ করে। তবে বিশ্বকাপ এসেই ফিরে পেয়েছেন নিজেকে; পরিসংখ্যানই বলছে, এখন পর্যন্ত ৫ ম্যাচে ৯ ওভার বল করে রান দিয়েছেন ৫০। এর মধ্যে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটায় তার ১৭ রানের ওভারটা ভুলে যান, বাকি ৮ ওভারে ৪.১২ ইকোনমি রেটটা তো তাজ্জবই বানাবে। বাবর আজম এবার তাকে ব্যবহারও করছেন চাতুর্যের সঙ্গে। বিশ্বকাপে প্রথম যে ৩৬টা বল করেছেন ইমাদ, তার মাত্র একটিই ছিল বাঁহাতিদের বিপক্ষে। বাঁহাতিদের বিপক্ষে ৭.৫ ইকোনমিটা হয়তো খারাপ নয়, কিন্তু ডানহাতিদের বিপক্ষে ইমাদের ইকোনমি তো ছয়েরও কম।
সব মিলিয়ে এবারের বিশ্বকাপের পাওয়ারপ্লেতে পাকিস্তানের ইকোনমি রেট ৭.০৫, উইকেটও এসেছে ৮টা। পাকিস্তান যে জিতে চলেছে, জয়রথটা শুরু হচ্ছে ম্যাচের প্রথম ছয় ওভারেই।
ইমাদকে পাকিস্তান ব্যবহার করছে ইনিংসের মাঝের ওভারগুলোতেও। সঙ্গে তিনি পাচ্ছেন আরেক স্পিনার শাদাব খানকে। ক্যারিয়ারের শুরুর দুই বছরে বল হাতে দারুণ সার্ভিস দিলেও ২০১৯ থেকেই একটু যেন ফর্মটা পড়ে গিয়েছিল তার, কুঁচকির চোটই যার পেছনে কারণ। ওই বছরের অক্টোবর থেকে এ বছরের মার্চ অব্দি টি-টোয়েন্টিতে তার বোলিং গড় বেড়ে পৌঁছেছিল ৪২-এ, ইকোনমি রেটটাও হয়ে গিয়েছিল ৮.৪৬।
ব্যাট হাতে মাঝে নিজেকে নতুন উচ্চতায় তুলে নিলেও পাকিস্তান যে তার বোলিংটাই চায়, সেটা জানা ছিল শাদাবেরও। কুঁচকির চোটটাও সেরে উঠেছে মাঝে, বিশ্বকাপে তাই সেই শুরুর শাদাবের দেখাই মিলেছে। টুর্নামেন্টে যে ১৯ ওভার করেছেন শাদাব, তার সবগুলোই ৭-১৫ নম্বরের ওভারের মাঝে, ওভারপ্রতি ৫.৮৯ করে রান খরচা করেছেন বলে তাকে নিয়ে ভিন্ন কোনো ভাবনার কারণও নেই।
তাদের ছাড়া হাসান আলী, হারিস রউফ কিংবা হাফিজকেও পাকিস্তান ব্যবহার করেছে ইনিংসের ওই পর্যায়ে। এবং, এক হাসান আলী ছাড়া সেরকম দুশ্চিন্তা জাগানোর মতো বোলিং করেননি কেউই। তিনি ছাড়া কারও ইকোনমিই তো আট ছাড়ায়নি!
পাকিস্তানের এই বোলিংয়ে যদি ‘অ্যাকিলিস হিল’ খুঁজতে হয়, তো সেটা হাসান আলীই। একটা সময় ইনিংসের মাঝের ওভারগুলোতে পাকিস্তানের মূল ভরসা ছিলেন তিনি। উইকেটে বল ফেলে স্কিড করাতে পারেন বলে উইকেটও পেতেন বেশ। ২০২১ সালেও বেশ দারুণ ফর্মেই ছিলেন। কিন্তু বিশ্বকাপে এসেই সব গুবলেট পাকিয়ে গেল যেন, ইনিংসের মাঝপথে তো নয়ই, সাফল্য পাননি অন্য ভাগেও। সুপার টুয়েলভের সবগুলো ম্যাচ খেলে ৫ উইকেট, ৮.৫৭ ইকোনমি রেটটাই যদিও ভালো করতে চাইবেন তিনি।
হাসান আলীর বাজে ইকোনমিটা প্রভাব ফেলছে পাকিস্তানের ডেথ বোলিংয়েও। এমনিতেই গত কয়েক বছরে ম্যাচের প্রথম ছয় ওভারে পাওয়া মোমেন্টামটা ইনিংসের শেষ পর্যন্ত ধরে রাখাটা বড় সমস্যা ছিল পাকিস্তানের জন্য। বিশ্বকাপে এসে সেটা যদিও হয়েছে ৯.৩, তবে এটাকেও তো মন্দের ভালো কাতারেই রাখতে হবে। যদিও ইনিংসের ১৬-২০তম ওভারে হারিস রউফ আলো ছড়াচ্ছেন ঠিকই।
ধূমকেতু হয়ে দেখা হারিস রউফকে এতদিন ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারছিল না পাকিস্তান। এমনিতে তার ক্যারিয়ার ইকোনমি রেট ৭.৫ হলেও পাকিস্তানের জার্সিতে ওই সংখ্যাটাই হয়ে যাচ্ছিল ৯ ছুঁইছুঁই। তবে এই বিশ্বকাপে এসে যেন এরও যেন সমাধান পেয়ে গেছে তারা। রউফকে ইনিংসের পরের অর্ধের জন্যই জমিয়ে রাখা হচ্ছে। বিশ্বকাপের প্রথম তিন ম্যাচ শেষে ইকোনমি রেট ছিল মাত্র ৭, নামিবিয়া-স্কটল্যান্ড যেটাকে কমিয়ে দিয়েছে। ইনিংসের শেষ ওভারেও ইকোনমি রেট মাত্র ৬.৭, সঙ্গে উইকেটও পেয়েছেন ৬টি। পাকিস্তানের প্রত্যাশা এখন একটাই, সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তার সঙ্গে সঙ্গে আপন আলোয় জ্বলে উঠবেন শাহীন শাহ আফ্রিদি আর হাসান আলীও।
এমনিতে সর্বাঙ্গসুন্দর ‘ইউটোপিয়া’র খোঁজ তো কল্পনাতেই মেলে। কিন্ত যেভাবে পরের পর বিন্দু জুড়ে যাচ্ছে, তাতে ওই ডেথ বোলিংয়ের ধাঁধা মিললে এবার পাকিস্তান বোধহয় সেই কল্পনার দেশটাই হয়ে উঠবে!