গত বৃহস্পতিবার রাশিয়া ও সৌদি আরবের খেলা দিয়ে শুরু হয়ে গেছে বিশ্বকাপ। আগামী প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলবে প্রথমপর্বের খেলা। এরপর দল নেমে আসবে ষোলোটায়। সেখান থেকে শুরু হবে নক আউট পর্বের খেলা। আর ১৫ জুলাই ফাইনাল দিয়ে পর্দা নামবে এই আসরের।
বিশ্বকাপ মানেই নানা ধরনের গল্প।
এই যেমন বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগেই একটি গল্প জন্ম দিয়ে ফেললো ফেভারিট স্পেন। তাদের কোচ হুলেন লোপেতেগিকে বিশ্বকাপ শুরুর দু’দিন আগে নিজেদের নতুন কোচ বলে ঘোষণা দিয়ে দিলো রিয়াল মাদ্রিদ। ফলে টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিন নিজেদের এই প্রধান কোচকে বরখাস্ত করে দিলো স্পেন। ইতিমধ্যে তারা নতুন কোচ ফার্নান্দো হিয়েরোর অধীনে বিশ্বকাপ শুরুও করে দিয়েছে। প্রথম ম্যাচে তারা পর্তুগালের সাথে ৩-৩ গোলে ড্র করেছে। সেই ম্যাচেই আবার হ্যাটট্রিক করে গল্প জন্ম দিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
এসব গল্পের পাশে আছে অর্থের ঝনঝনানির গল্প। বিশ্বকাপ মানে প্রচুর টাকা আর প্রচুর সংখ্যার গল্প। ফোর্বস ম্যাগাজিন সেসব টাকার হিসেব নিয়ে প্রকাশ করেছে এক মজার প্রতিবেদন। সেটাই রইলো আজ।
১২ : এবার বিশ্বকাপে ১২টি দলকে স্পন্সর করছে অ্যাডিডাস। ক্রীড়াসামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তারাই সবচেয়ে এগিয়ে আছে। খুব কাছাকাছি আছে অ্যাডিডাসের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী নাইকি। তারা স্পন্সর করছে ১০টি দলকে। এরপর পুমা ৪টি দলকে, নিউ ব্যালান্স দুটি দলকে স্পন্সর করছে।
৩০৯ মিলিয়ন ডলার: এবার বিশ্বকাপে তিন মহাতারকা লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও নেইমারের গত ১২ মাসে মোট আয়। তারা বেতন, বোনাস ও স্পন্সর থেকে এই আয় করেছেন। এই তিন তারকা আছেন ফোর্বসের সেরা আয় করা একশ অ্যাথলেটের তালিকায় সেরা ৫ জনের মধ্যে। এর মধ্যে লিওনেল মেসি ও রোনালদোর জন্য বিশ্বকাপ জেতার এটাই সম্ভবত শেষ সুযোগ। অন্যদিকে নেইমার চেষ্টা করবেন তার ফেভারিট ব্রাজিলকে ষষ্ঠ শিরোপাটা এনে দিতে। বিশেষ করে গত বছর নিজেদের মাটিতে যেভাবে বিদায় হয়েছিলো, সেই দুঃখ ঘোচানোর চ্যালেঞ্জ এবার তার কাঁধে।
৩.৪ বিলিয়ন: বিশ্বকাপকে ফিফা সবসময় বিশ্বের বৃহত্তম ক্রীড়া ইভেন্ট বলে দাবি করে আসছে। তারা আশা করছে, এবারের বিশ্বকাপ মাঠে ও মাঠের বাইরে ৩.৪ বিলিয়ন মানুষ সরাসরি উপভোগ করবে। ২০১৪ বিশ্বকাপের জার্মানি ও আর্জেন্টিনার মধ্যে অনুষ্ঠিত ফাইনাল ম্যাচই ১ বিলিয়ন মানুষ দেখেছিলো। তুলনার জন্য বলা যায়, প্রতি বছর সুপার বোল দেখে ১৫০ মিলিয়ন মানুষ।
১১০ ডলার: ফাইনালের টিকিটের সর্বনিম্ন মূল্য। এই দামে সবচেয়ে কম আকর্ষণীয় এই টিকিট কিনতে পারবে কেবল রাশিয়ান নাগরিকেরা। অন্যদিকে এই ফাইনালে ১,১০০ ডলারের টিকিটও আছে। উদ্বোধনী ম্যাচে ৫০-৫৫০ ডলারের টিকিট ছিলো।
১.১৮ মিলিয়ন ডলার: ২০১৪ ফাইনাল ম্যাচের সময় যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ এই দামেও বিজ্ঞাপন প্রচার হয়েছে। এটা জানিয়েছে স্ট্যান্ডার্ড মিডিয়া ইনডেক্স।
২.৪ মিলিয়ন: খেলা শুরুর আগে এই পরিমাণে টিকিট বিক্রি হয়েছে। ৮ লাখ ৭১ হাজার ৭৯৭টি টিকিট কিনে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে স্বাগতিক রাশিয়ানরাই। এরপর ৮৮ হাজার ৮২৫টি টিকিট কিনেছে আমেরিকানরা। আর ব্রাজিলিয়ানরা কিনেছে ৭২ হাজার ৫১২টি টিকিট।
৪/১: পুরো টুর্নামেন্টে বাজির দরে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ব্রাজিল। তাদের বাজির দর ৪/১। এরপরই আছে জার্মানি (৯/২), স্পেন (১৩/২), ফ্রান্স (১৩/২) এবং আর্জেন্টিনা (৯/১)।
৩.৪ মিলিয়ন: ২০১৪ বিশ্বকাপে সবমিলিয়ে দর্শক ছিলো এই পরিমাণে। প্রতি খেলায় গড়ে দর্শক ছিলো ৫৩,৫৯২ জন। যদিও দর্শক উপস্থিতির দিক থেকে এখনও সবার ওপরে আছে ১৯৯৪ সালের যুক্তরাষ্ট্র আসর। সেবার মোট ৩.৬ মিলিয়ন দর্শক মাঠে গিয়ে খেলা দেখেছেন।
৮ মিলিয়ন: বিভিন্ন দেশের এই পরিমাণে জার্সি একা অ্যাডিডাসই বিক্রি করেছিলো ২০১৪ সালে। এবার প্রতিষ্ঠানটি তাদের এই সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করছে। যদিও ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাষ্ট্র না থাকায় সংখ্যাটা পার করা একটু কঠিন হবে।
১৮.২ মিলিয়ন: ২০১৪ বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্র বনাম পর্তুগাল ম্যাচে ইএসপিএনের দর্শক ছিলো এরকম। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোনো ফুটবল ম্যাচে এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যার দর্শক।
৩৮ মিলিয়ন ডলার: বিশ্বকাপজয়ী দল এই পরিমাণে অর্থ পাবে। রানার্স আপ দল পাবে ২৮ মিলিয়ন ডলার। তৃতীয় স্থান অধিকারী দল পাবে ২৪ মিলিয়ন ডলার, গ্রুপপর্ব থেকে যে ১৬ দল বাদ পড়বে তারাও ৮ মিলিয়ন ডলার করে পাবে।
১১১ মিলিয়ন ডলার: বেতন, বোনাস ও স্পন্সর থেকে লিওনেল মেসির সর্বশেষ ১২ মাসে আয়। তিনি এবারের বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া খেলোয়াড়দের মধ্যে সর্বোচ্চ আয়ের অ্যাথলেট। ফোর্বসের এই বছরের তালিকায় সবার ওপরে আছেন যথারীতি বক্সার ফ্লয়েড মেওয়েদার। এরপরই আছেন লিওনেল মেসি। তিন নম্বরে আছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। চার নম্বরে আরেক বক্সার কনর ম্যাকগ্রেগর। আর পাঁচ নম্বরে আছেন পিএসজি তারকা নেইমার।
আছেন ৯ জন ফুটবলারও। শীর্ষ পাঁচে এই সময়ের সেরা তিন তারকা তো আছেনই, এছাড়া আছেন ৩৫ নম্বরে গ্যারেথ বেল। ৫২ নম্বরে আছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ফরাসি তারকা পল পগবা। অস্কার আছেন তার একধাপ নিচেই। এভারটনের ওয়েইন রুনি আছেন ৫৮ নম্বরে। দুই ধাপ নিচে আছেন বার্সেলোনার আরেক তারকা লুইস সুয়ারেজ। আর ৮৬ নম্বরে আছেন সার্জিও আগুয়েরো।
১৭৭ মিলিয়ন ডলার: ২০১৪ বিশ্বকাপে বিজ্ঞাপন থেকে ইউনিভিশন আয় করেছিলো সর্বোচ্চ এই ১৭৭ মিলিয়ন ডলার। এরপর ইএসপিএনের আয় ছিলো ৬৫ মিলিয়ন ডলার এবং এবিসি আয় করেছিলো ৪৭ মিলিয়ন ডলার।
৩২২ মিলিয়ন: রোনালদোর মোট সোশ্যাল মিডিয়া ফলোয়ার। ফেসবুক, টুইটার ও ইনস্ট্রাগাম মিলিয়ে তিনিই আছেন সবার ওপরে।
৪০০ মিলিয়ন ডলার: ৩২ দলকে এবার মোট এই পরিমাণ পুরষ্কারের অর্থ দেওয়া হবে। এর মধ্যে টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই দলগুলোকে প্রস্তুতির জন্য ১.৫ মিলিয়ন ডলার করে দিয়ে দিয়েছে ফিফা।
৪২৫ মিলিয়ন ডলার: ফক্স টিভি শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপ সম্প্রচারের জন্য এই অর্থ খরচ করেছে। অন্যদিকে তেলেমুন্ডো ৬০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে স্প্যানিশ ভাষাভাষীদের জন্য এই দুটি বিশ্বকাপ সম্প্রচারের স্বত্ত্ব কিনতে গিয়ে।
১.৬৫ বিলিয়ন ডলার: ২০১৫-১৮ সাইকেলে ফিফার মার্কেটিং থেকে আয়। পরের চার বছরের সাইকেলে তাদের আয় ১.৮ বিলিয়ন ডলারে পরিণত হবে বলে আশা করছে ফিফা।
৩ বিলিয়ন ডলার: ২০১৫-১৮ চার বছরের সাইকেলে ফিফার টিভি স্বত্ত্ব থেকে আয়। পরের চার বছরে এই আয় ৩.৫ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছাবে বলে তাদের আশা।
৬.১ বিলিয়ন ডলার: ২০১৫-১৮ এই চার বছরে ফিফার মোট আয়। এটা আগের চার বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। এই আয়ের মধ্যে ৪ বিলিয়ন ডলারই আসছে কেবল ২০১৮ বিশ্বকাপ থেকে।
১১.৬ বিলিয়ন ডলার: এই বিশ্বকাপে রাশিয়ার বিভিন্ন প্রকল্পে সম্ভাব্য ব্যয় হচ্ছে এরকম।
১৪ বিলিয়ন ডলার: ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৬ বিশ্বকাপ থেকে এরকম আয় হবে। কানাডা, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্র ২০২৬ বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ত্ব পেয়েছে। তারা আশা করছে ১৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করবে তারা এই টুর্নামেন্ট থেকে। অন্যদিকে ফিফা ওখান থেকে ১১ বিলিয়ন ডলার আয় করতে চায়।