বিশ্বকাপ উঠবে কার হাতে? | প্রথম পর্ব

ভারতের মাটিতে ৫ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্ব ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। পঞ্চাশ ওভারের এই বিশ্বকাপে শিরোপার জন্য লড়বে দশটি দল। শেষ পর্যন্ত শিরোপাটা উঠবে কোন দলের হাতে? দশ দলের ধারাবাহিক পর্যালোচনার প্রথম পর্বে আজ থাকছে অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান, নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তান দলের প্রিভিউ।

অদম্য অস্ট্রেলিয়া

আট বছরের ‘শিরোপা-খরা’। সেই ’১৫ সালে বিশ্বকাপ ট্রফিটা গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার ঘরে, এরপর কেটে গেছে আটটা বছর, মাঝে একবার শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ড। অন্য কোন দল হলে হয়তো সময়ের ব্যবধানকে এত বড় বলে মনে হতো না।, তবে দলটার নাম যখন অস্ট্রেলিয়া, বিশ্বকাপ-বিরহে দাঁড়ি টানার সময়টা হয়তো এসেই গেছে। ’৯৯-’০৩-’০৭ এর হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন দল বলে কথা!

Image Source: Getty Images

স্কোয়াড

প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), স্টিভ স্মিথ, আলেক্স ক্যারি, জশ ইংলিস, সীন অ্যাবোট, ক্যামেরন গ্রিন, জশ হ্যাজেলউড, ট্রাভিস হেড, মিচেল মার্শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস, ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যাডাম জাম্পা, মিচেল স্টার্ক, মারনাস ল্যাবুশেন।

শক্তিমত্তা

অলরাউন্ডারের আধিক্য। ট্রাভিস হেড, মিচেল মার্শ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস, ক্যামেরন গ্রিন অস্ট্রেলিয়া দলে অলরাউন্ডারের অভাব নেই। এদিকে প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্করাও ব্যাটিংয়ে সাহায্য করতে পারেন, আবার বোলিংয়ে প্রয়োজনে হাত ঘোরাতে পারেন স্টিভ স্মিথ, মারনাস ল্যাবুশেনরা। একাদশে এতজন অলরাউন্ডারের উপস্থিতি অস্ট্রেলিয়াকে ভারসাম্য এনে দিচ্ছে।

Image Source: Getty Images

দুর্বলতা

সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোতে বোলিং আক্রমণে বেশ অধারাবাহিকতা দেখা গেছে অস্ট্রেলিয়ার। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষের সিরিজে, এরপর ভারতের বিপক্ষেও বোলাররা অনেক বেশি খরুচে হয়ে যাচ্ছেন। লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা তো যৌথভাবে বিশ্বরেকর্ডে ভাগ বসালেন এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান খরচের দিক দিয়ে। বোলিং আক্রমণে এই অধারাবাহিকতাটা অস্ট্রেলিয়ার টিম ম্যানেজমেন্টকে চিন্তায় ফেলতে পারে, বিশেষ করে ভারত, ইংল্যান্ড, নিউ জিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের বিপক্ষে। তবে দলটা যেহেতু অস্ট্রেলিয়া, বিশ্বকাপ শুরুর সাথে সাথেই হয়তো পাল্টে যাবে তাদের বর্তমান অবস্থা।

সম্ভাবনা

মাত্রই ভারতের মাটিতে সিরিজ শেষ করলো অস্ট্রেলিয়া, সিরিজে হারলেও প্রস্তুতিটা ভালোই হয়েছে ব্যাটসম্যানদের রানের ফুলঝুরি ছুটেছে প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই, দ্রুতগতিতে রান পেয়েছেন অজি ব্যাটসম্যানরা। এই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং, সাথে প্রায় সব খেলোয়াড়ের আইপিএল খেলার অভিজ্ঞতা অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে দেবে অনেকটাই।

শঙ্কা

মিডল অর্ডার নিয়ে খানিকটা শঙ্কা থাকতেই পারে টিম ম্যানেজমেন্টের। ট্রাভিস হেড শুরুর ম্যাচগুলোতে থাকছেন না, সেক্ষেত্রে ডেভিড ওয়ার্নারের সাথে ওপেন করবেন মিচেল মার্শ, এরপর আসবেন স্টিভ স্মিথ, মারনাস ল্যাবুশেন আর অ্যালেক্স ক্যারিরা। ওয়ার্নার-স্মিথ-লাবুশেনদের নিয়ে গড়া অজি টপ অর্ডার যথেষ্ট শক্তিশালী সন্দেহ নেই, তবে কোন ম্যাচে এই টপ অর্ডার ব্যর্থ হলে মিডল অর্ডারে ম্যাক্সওয়েল-স্টয়নিস-গ্রিনরা কতটুকু এগিয়ে নিতে পারবেন দলকে, সেটা হতে পারে টিম ম্যানেজমেন্টের মাথাব্যথার জায়গা।

বাড়তি নজরে রাখবেন যাকে

Image Source: Getty Images

চলতি বছরটা বিশ্বকাপের বছর কি না, সেটা বোঝার জন্য আপনার সামনে যে যে লক্ষণগুলো উপস্থিত হবে, তার মধ্যে অন্যতম মিচেল স্টার্ক। বিশ্বকাপের বছরেই নিজেকে নতুন করে ফিরে পান এই বাঁহাতি পেসার, জ্বলে ওঠেন আপন আলোয়। পরপর দুটো বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক, নতুন-পুরনো দুই ধরনের বলেই ভীষণ কার্যকর, সামর্থ্য রয়েছে ব্যাট হাতে অবদান রাখারও। ২০১৫ সালে পেয়েছিলেন ২২ উইকেট, প্রতি উইকেটের জন্য খরচ করেছিলেন মাত্র ১০.১৮ রান আর ১৭টা বল। ’১৯-এ উইকেট সংখ্যা বেড়েছে আরো পাঁচটি। বিশ্বকাপ মানেই তাই বিধ্বংসী স্টার্ক, এই বিশ্বকাপেও তাই তার ওপর বাড়তি নজর রাখতেই হবে।

আশাবাদী আফগানিস্তান

বিশ্বমঞ্চে আট বছর আগে একটা ম্যাচ জয়ের অভিজ্ঞতা, সদ্যসমাপ্ত এশিয়া কাপে ব্যর্থতা, নবীনতম টেস্টখেলুড়ে দেশটার পক্ষে বিশ্বকাপে ভালো করার স্বপ্ন দেখাটাও কিছুটা কঠিনই বটে। তবুও চলমান বছরেই বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ জয়, পাকিস্তানের সাথে তুমুল লড়াই করা, এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিততে জিততেও শেষ মুহূর্তের হিসাবের ভুলে হেরে যাওয়া, ভারতের পরিচিত কন্ডিশনের বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের আশাটা গতবারের চেয়ে একটু বেশিই।

Image Source: AFP

স্কোয়াড

হাশমতউল্লাহ শহীদী (অধিনায়ক), রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, রিয়াজ হাসান, রহমত শাহ, নাজিবউল্লাহ জাদরান, মোহাম্মদ নবী, ইকরাম আলীখিল, আজমতউল্লাহ ওমরজাই, রশিদ খান, মুজিব উর রেহমান, নূর আহমেদ, ফজলহক ফারুকী, আব্দুল রহমান, নাভিন উল হক।

শক্তিমত্তা

রশীদ খান, মুজিব-উর রেহমান আর মোহাম্মদ নবী তো ছিলেন আগে থেকেই, এবার তাদের সাথে স্কোয়াডে যুক্ত হয়েছেন বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার নূর আহমেদও। সব মিলিয়ে, বৈচিত্র্যের দিক দিয়ে আফগানিস্তানের স্পিন আক্রমণ পৃথিবীর অন্যতম সেরা। শুধু বৈচিত্র্যই নয়, নূর বাদে বাকি তিনজন টইটম্বুর অভিজ্ঞতাতেও। মোহাম্মদ নবীর ঝুলিতে রয়েছে প্রায় দেড়শ’ ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা, রশিদ আইপিএলে খেলছেন আট মৌসুম ধরে। মুজিবও বিশ্বমঞ্চে একেবারে নতুন নন, একটা ওয়ানডে আর দুটো টি২০ বিশ্বকাপে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়েই ভারতগামী বিমানে উঠবেন তিনি।

নূর আহমেদ, মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান এবং মুজিব উর রেহমান; আফগানিস্তানের চার স্পিন ভরসা; Image Source: রশিদ খানের ফেসবুক পেইজ

তবে সবাইকে ছাপিয়ে পাদপ্রদীপের আলোটা থাকবে রশিদ খানের ওপরই। ’১৯-এর বিশ্বকাপটা একদমই ভালো কাটেনি তার, মাত্র ছয়টা উইকেট তুলেছেন তিনি, তাও উইকেটপ্রতি ৬৯ রান খরচ করে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তো বিশ্বকাপের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে বোলিংয়ের রেকর্ডটাই গড়েছিলেন তিনি, ৯ ওভারে বিলিয়েছিলেন ১০৯ রান। তবে আইপিএলের অভিজ্ঞতার কারণেই রশিদকে এড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব। বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের সাত ভেন্যু, অর্থাৎ ধর্মশালা, দিল্লি, চেন্নাই, পুনে, লক্ষ্ণৌ, মুম্বাই ও আহমেদাবাদে খেলা মোট ৩৯ ম্যাচে রশিদের উইকেট ৫০টা, বোলিং গড় ২১.৮, ওভার প্রতি রান খরচ করেছেন ৭.০৫। আইপিএলের এই পারফরম্যান্সকে জাতীয় দলের জার্সিতে অনুবাদ করতে পারলে, স্পিন আক্রমণ দিয়েই অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারে রশিদের আফগানিস্তান।

দুর্বলতা

আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় দুর্বলতার জায়গা তাদের মিডল অর্ডার ব্যাটিং। বিশেষত, দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ এবং ইব্রাহিম জাদরানের কাছ থেকে বড় ইনিংস না এলে, আফগানদের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সংগ্রহের আশাটা মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে দ্রুতই। তিন ও চার নম্বরে নামা রহমত শাহ এবং হাশমতউল্লাহ শহীদী রান পেলেও দু’জনের স্ট্রাইক রেট আধুনিক ক্রিকেটের সাথে বেমানান। ক্যারিয়ারের ৬৪টা ওয়ানডে ইনিংসের মধ্যে ১৫+ রান করেছেন এমন ইনিংসগুলোর মধ্যে মাত্র ৩টি ক্ষেত্রে শহীদীর স্ট্রাইক রেট ছিল ৯০ এর ওপরে। রহমত শাহের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা প্রায় একই, ৯৩টি ওয়ানডে ইনিংসের মধ্যে মাত্র সাতটি ১৫+ রানের ইনিংসে তার স্ট্রাইক রেট ছিল ৯০-এর ওপরে। রানের বিচারে দু’জনেই বড় ইনিংস খেলতে পারেন, তবে দলের জন্য সেটা কতটুকু কার্যকর হচ্ছে, প্রশ্নটা থেকেই যায়।

মোহাম্মদ নবী এবং নাজিবউল্লাহ জাদরান; Image Source: Getty Images

ব্যাটিং অর্ডার অনুযায়ী এরপরে আসেন মোহাম্মদ নবী ও নাজিবউল্লাহ জাদরান। দলের প্রয়োজনে দুজনেই মারকাটারি ইনিংস খেলতে পারেন, তবে সাম্প্রতিক সময়ে বড় এবং কার্যকর ইনিংস খেলার ক্ষেত্রে দুজনের ধারাবাহিকতার অভাব স্পষ্ট। এই দুজন জ্বলে উঠতে না পারলে, আফগানদের স্বপ্নের ইতি ঘটবে খুব দ্রুতই।

সম্ভাবনা

মিডল অর্ডারে দুরবস্থা থাকা সত্ত্বেও আফগানিস্তানকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ এবং ইব্রাহিম জাদরান। ২১ বছর বয়সী এই দুই ওপেনার আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে পেয়ে গেছেন যথাক্রমে পাঁচটি ও চারটি করে সেঞ্চুরি। চলমান বছরেই বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজের ম্যাচে দুই শতাশিক রানের পার্টনারশিপও করেছিলেন দুজনে। পনেরোটা ইনিংসে ওপেনিং করেছেন দুজনে, গড়ে তুলেছেন ৫১ রান। সব মিলিয়ে, গুরবাজ-জাদরানের ওপেনিং জুটির ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করবে আফগানদের বড় সংগ্রহের সম্ভাবনা।

রহমানউল্লাহ গুরবাজ এবং ইব্রাহিম জাদরান; Image Source: Getty Images

শঙ্কা

অনভিজ্ঞতা হতে পারে আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় ভয়ের জায়গা। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত দুই বার সুযোগ পেয়েছে আফগানরা, ’১৫ আর ’১৯-এ। দুই আসর মিলিয়ে জয় মাত্র একটিতে, ’১৫ এর বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ডানেডিনে। গত আসরে জিততে জিততেও পরাজয়ের স্বাদ নিতে হয়েছে পাকিস্তান আর ভারতের বিপক্ষে। এরপর ২০২২-এর এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে হাতের মুঠোয় পাওয়া জয়টা ছিটকে যায় শেষ মুহূর্তে, ২০২৩ এশিয়া কাপে একই ঘটনা ঘটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এছাড়া দ্বিপক্ষীয় সিরিজে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে ম্যাচ হারার অভ্যাস রয়েছে পাকিস্তানের। এই অনভিজ্ঞতা হতে পারে আফগানদের বড় অর্জনের পথে প্রধান বাধা।

বাড়তি নজরে রাখবেন যাকে

“সে যত বেশি সময় ধরে ব্যাট করবে, আমাদের জয়ের সম্ভাবনা তত বাড়বে।”

-জোনাথন ট্রট, প্রধান কোচ, আফগানিস্তান
রহমানউল্লাহ গুরবাজ; Image Source: Getty Images

রহমানউল্লাহ গুরবাজ। এ বছরেই আইপিএলে খেলেছেন প্রথমবারের মতো, কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে। প্রথম মৌসুম হিসেবে খুব খারাপ কাটেনি, এগারো ম্যাচে ১৩৩.৫৩ স্ট্রাইক রেটে করেছেন দুটো ফিফটি। ওয়ানডে আর টি২০তে খেলার ধরণটা ভিন্ন, কিন্তু ভারতের মাটিতে রান করার অভ্যাসটা নিশ্চয়ই কাজে দেবে গুরবাজকে। আর সেটা যদি হয়ই, ট্রট যেমনটা বলছেন, আফগানিস্তানের জয়ের সম্ভাবনাও বাড়বে।

নন্দিত নিউ জিল্যান্ড

পরপর দুটো বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেও শিরোপাটা অধরা রয়ে গেছে ব্ল্যাক ক্যাপসদের। ’১৫-এর ফাইনালে হারতে হয়েছে প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়ার কাছে, ’১৯-এর ফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে ট্রফিটা হারাতে হয়েছে বাউন্ডারি সংখ্যা বিবেচনায়। এবার অবশ্য অনেকেই হিসাবের বাইরে রাখছেন নিউ জিল্যান্ডকে, তবে কে না জানে, আন্ডারডগ হিসেবে টুর্নামেন্ট শুরু করলেও ঠিকই সময়মতো সবাইকে চমকে দিতে পারেন কিউইরা।

Image Source: Getty Images

স্কোয়াড

কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), ট্রেন্ট বোল্ট, মার্ক চ্যাপম্যান, ডেভন কনওয়ে, লোকি ফার্গুসন, ম্যাট হেনরি, টম ল্যাথাম, ড্যারিল মিচেল, জিমি নিশাম, গ্লেন ফিলিপস, রাচিন রবীন্দ্র, মিচেল স্যান্টনার, ইশ সোধি, টিম সাউদি, উইল ইয়াং

শক্তিমত্তা

টিম সাউদি তো ছিলেনই, বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে ফিরেছেন ট্রেন্ট বোল্টও। এর বাইরে পেস আক্রমণে রয়েছেন ম্যাট হেনরি আর লোকি ফার্গুসনও। লোকি ফার্গুসনের গতিটা খুব কার্যকর হতে পারে মাঝের ওভারগুলোতে, শুরুর দিকে বোল্ট-সাউদি-হেনরির সুইং সামলাতে হিমশিম খাবেন ব্যাটসম্যানরা। স্পিন আক্রমণে লেগ স্পিনার ইশ সোধি আর বাঁহাতি স্পিনার রাচীন রবীন্দ্র থাকবেন। সব মিলিয়ে খুব ভয়ঙ্কর মনে না হলেও বেশ কার্যকর হবেন এই কিউই বোলাররা।

Image Source: Getty Images

দুর্বলতা

অভিজ্ঞতার অভাব। ডেভন কনওয়ে, উইল ইয়াং, গ্লেন ফিলিপস, মার্ক চ্যাপম্যানরা খেলছেন নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ, ওয়ানডে ক্যারিয়ারও খুব লম্বা নয় কারোরই। কনওয়ে আর ইয়াং খেলেছেন ২২ ম্যাচ করে, চ্যাপম্যান ১২ ম্যাচ, ফিলিপস ২০ ম্যাচ। চাপের ম্যাচগুলোতে এই অভিজ্ঞতার অভাবটা ভোগাতে পারে কিউইদের।

সম্ভাবনা

নিউ জিল্যান্ডের এই দলে জিমি নিশাম, মার্ক চ্যাপম্যান, ড্যারিল মিচেলরা আছেন অলরাউন্ডার হিসেবে। নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটিং-বোলিংয়ে বাড়তি সুবিধা দেবেন এরা। একই সাথে এরা ম্যাচ-উইনার হওয়ায় নিজেদের দিনে একাই ম্যাচ বের করে নিতে পারবেন। এরা আগে বিভিন্ন ফরম্যাটের বিশ্বকাপেও খেলেছেন, সব মিলিয়ে ব্যাটে-বলে দারুণ ভারসাম্য এনে দিতে পারেন তারা।

শঙ্কা

মিডল অর্ডারে টম ল্যাথাম, মার্ক চ্যাপম্যান, ড্যারিল মিচেল, জিমি নিশামরা থাকবেন। তবে বিশ্বকাপের প্রথম দিকে কেন উইলিয়ামসনকে মিস করবে কিউইরা। একই সাথে রস টেলরের মতো একজন নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানের অনুপস্থিতিও ভোগাতে পারে বড় ম্যাচগুলোতে।

বাড়তি নজরে রাখবেন যাকে

Image Source: Getty Images

ডেভন কনওয়ে। চলতি বছরে ১০ ইনিংসে প্রায় ৫০ গড় আর ৯৬ স্ট্রাইক রেটে ৪৪৯ রান করেছেন এই বাঁহাতি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। চারবার পঞ্চাশ পেরিয়েছেন, যার তিনবারই একশোর্ধ্ব ইনিংসে রূপ দিয়েছেন। ইনিংসের শুরুতেই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে প্রতিপক্ষের বোলিংকে গুঁড়িয়ে দিতে পারেন, বাড়তি নজরে তাই তাকে রাখতেই হচ্ছে।

প্রত্যয়ী পাকিস্তান

সর্বশেষ এশিয়া কাপ চলাকালে দলে আঘাত হানা চোটগুলোই হয়তো সর্বনাশ করলো, নইলে এই বিশ্বকাপের দাবিদারের তালিকায় এক নম্বর জায়গাটা রাখতে হতো পাকিস্তানের জন্য। ব্যাটিং অর্ডারের শুরুতে চারজন চমৎকার ব্যাটসম্যান, এরপর কার্যকর চারজন অলরাউন্ডার, শেষে তিন বিধ্বংসী তিন পেসার, এই পাকিস্তানের তো অপ্রতিরোধ্য হওয়ার কথা! তবে খেলার আগের হিসাবের সাথে তো আর মাঠের হিসাব সবসময়ে মেলে না, পাকিস্তানের ক্ষেত্রে আরো মেলে না। তাই তো এশিয়া কাপটা পাকিস্তান শেষ করলো চার নম্বরে থেকে। তবুও পাকিস্তানের লক্ষ্যটা অটুট, বিশ্বজয়ের প্রত্যয় নিয়েই ভারতে পা রাখছে বাবর-বাহিনী!

Image Source: ICC/twitter

স্কোয়াড

বাবর আজম (অধিনায়ক), শাদাব খান, ফখর জামান, ইমাম-উল-হক, আবদুল্লাহ শফিক, মোহাম্মদ রিজওয়ান, সৌদ শাকিল, ইফতিখার আহমেদ, সালমান আলী আগা, মোহাম্মদ নওয়াজ, উসামা মীর, হারিস রউফ, হাসান আলী, শাহীনশাহ আফ্রিদি, মোহাম্মদ ওয়াসিম

শক্তিমত্তা

আইসিসির সর্বশেষ র‍্যাঙ্কিং অনুসারে, পাকিস্তানের টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান রয়েছেন বিশ্বের সেরা দশ ব্যাটসম্যানের মধ্যে। দুই ওপেনার ফখর জামান আর ইমাম-উল-হক রয়েছেন যথাক্রমে দশ ও পাঁচ নম্বর অবস্থানে, দলীয় অধিনায়ক বাবর আজম তো র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষেই। এই তিন ব্যাটসম্যানের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করবে পাকিস্তানের বড় সংগ্রহ করার ব্যাপারটা।

Image Source: Getty Images

দুর্বলতা

স্পিন বোলিং। লেগ স্পিনার শাদাব খান আর বাঁহাতি স্পিনার মোহাম্মদ নওয়াজকেই সামলাতে হবে পাকিস্তানের স্পিন আক্রমণ, পার্টটাইমার হিসেবে থাকবেন দুই অফ স্পিনার ইফতিখার আহমেদ আর সালমান আলী আগা। তবে শাদাব আর নওয়াজের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স নিয়ে নিশ্চিতভাবেই চিন্তায় থাকবে পাকিস্তানের টিম ম্যানেজমেন্ট। চলতি বছরে ১১ ম্যাচে ৩৯ গড় আর ৫.৫৪ ইকোনমিতে শাদাব উইকেট পেয়েছেন ১৩টি, তবে সর্বশেষ এশিয়া কাপে তার বোলিংয়ের বিরুদ্ধে যথেষ্ট স্বচ্ছন্দ ছিলেন বাংলাদেশ, ভারত আর শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা। নওয়াজের ইকোনমি একটু ভালো, ৫.১০, কিন্তু উইকেট দখলের দক্ষতায় তিনি বেশ পিছিয়ে। চলতি বছরে ৮টি উইকেটের প্রতিটির জন্য তাকে খরচ করতে হয়েছে ৪৩ রান। স্পিন আক্রমণটা তাই পাকিস্তানের মাথাব্যথার কারণ হতেই পারে।

Image Source: Getty Images

সম্ভাবনা

অলরাউন্ডারের আধিক্য। শাদাব খান, ইফতিখার আহমেদ, মোহাম্মদ নওয়াজ আর সালমান আলী আগা, নিয়মিত একাদশে চারজন স্পিনিং অলরাউন্ডার রাখতে পারে পাকিস্তান। অধিনায়ক বাবর আজমের কাছে তাই বোলিং অপশনের অভাব নেই, আবার ব্যাটিং অর্ডারে যেকোন প্রয়োজনে নওয়াজ বা শাদাবকে ওঠানামা করিয়ে ম্যাচ-আপ করানোর সুযোগ থাকছে টিম ম্যানেজমেন্টের সামনে।  

শঙ্কা

যত যা-ই হোক, বিশ্বকাপটা তো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের মাটিতে, বাড়তি চাপ তাই পাকিস্তানের ওপরে থাকবেই। মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বিতা তো থাকেই, ভারতের মাটিতে পাকিস্তানের খেলার অর্থ রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়ানোও। ভিসা নিয়ে খানিকটা জটিলতা ইতিমধ্যেই পোহাতে হয়েছে পাকিস্তানকে, তাছাড়া ভারতের মাটিতে কোন মাঠেই সমর্থন পাবে না তারা। এই চাপটা হয়তো তাতিয়েও দিতে পারে পাকিস্তানকে, কিন্তু দলটির নাম পাকিস্তান বলেই কোন ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে মন্তব্য করা সম্ভব নয়!

বাড়তি নজরে রাখবেন যাকে

Image Source: AFP

শাহীন শাহ আফ্রিদি। নাসিম শাহের অনুপস্থিতি আর হারিস রউফের ফিটনেস নিয়ে শঙ্কা থাকায় বাড়তি দায়িত্ব থাকবে শাহীন শাহ আফ্রিদির কাঁধে। সেই আশার প্রতিদানও দিয়ে চলেছেন শাহীন, চলতি বছরে ১২ ম্যাচে ২২ গড় আর ৫.৩০ ইকোনমিতে তুলেছেন ২৪ উইকেট। তবে এশিয়া কাপের সর্বশেষ তিন ম্যাচে শাহীনের পারফরম্যান্স নিয়ে একটু চিন্তা হতেই পারে টিম ম্যানেজমেন্টের, বাংলাদেশ, ভারত আর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বেশ খরুচে ছিলেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। শুরুর দিকের ‘ট্রেডমার্ক’ ইনসুইঙ্গিং ইয়র্কারগুলো ফুলটস বা ফুল লেন্থে পড়ে ব্যাটসম্যানের জন্য শট খেলা শহজ করে দিচ্ছিলো। নিশ্চয়ই এ নিয়ে কাজ করবেন শাহীন, পাকিস্তানের পেস আক্রমণের নেতা বলে কথা!

This article is in Bangla language. It is about the preview of the four teams, Australia, Afghanistan, New Zealand and Pakistan for the upcoming ICC Cricket World Cup 2023. Necessary photos are inserted inside.

Featured Image: Getty Image

Related Articles

Exit mobile version