বর্তমানে আমরা প্রায় সবাই স্মার্টফোন ব্যবহার করি। আর এর মাঝে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীর সংখ্যাই আমাদের মধ্যে বেশি। অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের একটি অন্যতম দরকারি ফিচার হলো ওটিজি (OTG)। এই ফিচারের মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি অনেকগুলো কাজ করতে পারবেন আপনার স্মার্টফোনের সাহায্যে। তবে সেগুলো জানার আগে চলুন জেনে নেই ওটিজি আসলে কী।
ওটিজি কী?
ওটিজি (OTG) এর পূর্ণরূপ হলো USB On-The-Go। ২০০১ সালে উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কোনো একটি ইউএসবি ডিভাইসকে হোস্ট হিসাবে ব্যবহার করে অন্য একটি ইউএসবি ডিভাইস এটির সাথে যুক্ত করা যায়। সহজ করে বলতে গেলে, ওটিজি এমন এক প্রযুক্তি যার মাধ্যমে আপনি আপনার ফোনের সাথে বিভিন্ন ইউএসবি ডিভাইস, যেমন- পেনড্রাইভ, মাউস, কিবোর্ড সহ অনেক কিছুই যুক্ত করতে পারবেন। তবে এসব সুবিধা পেতে হলে আপনার ফোনটিকে অবশ্যই ওটিজি সাপোর্টেড হতে হবে।
কীভাবে বুঝবেন আপনার ফোনটি ওটিজি সুবিধাযুক্ত কিনা?
বর্তমানে প্রায় সব নতুন স্মার্টফোনেই ওটিজি সুবিধাটি দেওয়া থাকে। এক্ষেত্রে আপনার ফোনটিতে ওটিজি সুবিধা রয়েছে কিনা তা যদি আপনি না জেনে থাকেন, তবে আপনি আপনার ফোনটি কেনার সময় যে বাক্সটিতে ফোন ছিলো সেটি কিংবা সেটির ভিতরে থাকা নির্দেশিকাটি চেক করতে পারেন। সেখানে যদি ‘ওটিজি সাপোর্টেড’ লেখা থাকে তবে আপনি ওটিজির সুবিধাগুলো ভোগ করতে পারবেন। ফোনের বাক্সটি যদি না থাকে, তবে আপনি আপনার ফোনের মডেলটি লিখে গুগল করে জেনে নিতে পারেন আপনার ফোনটি ওটিজি সমর্থন করে কিনা। এছাড়াও আপনি প্লে স্টোর থেকে ‘USB OTG Checker’ নামের অ্যাপটি ডাউনলোড করেও সহজে জেনে নিতে পারেন আপনার ফোনটিতে ওটিজি সুবিধা রয়েছে কিনা। যদি আপনার ফোনটি ওটিজি সমর্থিত হয়ে থাকে তবে ওটিজির বিভিন্ন সুবিধাগুলো পেতে আপনার প্রয়োজন হবে একটি ওটিজি ক্যাবল (OTG Cable)। ওটিজি ক্যাবলের মাধ্যমে বিভিন্ন ইউএসবি ডিভাইসকে ফোনের সাথে যুক্ত করা হয়। এটি আপনি যেকোনো মোবাইলের দোকান থেকে খুব অল্প মূল্যেই কিনে নিতে পারবেন।
এখন চলুন জেনে নেই, আপনার ফোনের ওটিজি সুবিধা দিয়ে আপনি যে চমৎকার কাজগুলো করতে পারবেন তার সম্পর্কে।
১. ব্যবহার করা যাবে মাউস ও কিবোর্ড
যারা পিসির মতো মোবাইলেও মাউস কিংবা কিবোর্ড ব্যবহার করতে চান, তারা খুব সহজেই ওটিজির মাধ্যমে ফোনে এগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। শুধু একটি ওটিজি ক্যাবল ফোনে যুক্ত করে এর সাথে আপনার ইউএসবি কিবোর্ড কিংবা মাউসটি যুক্ত করুন। তাহলেই কাজ করতে পারবেন মাউস কিংবা কিবোর্ড দিয়ে।
মাউস যুক্ত করে মূলত বড় স্ক্রিনের ফোন কিংবা ট্যাব আপনি সহজে ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়াও যদি কোনোভাবে আপনার ফোনটির ডিসপ্লে ফেটে যায় কিংবা টাচ নষ্ট হয়ে যায় তাহলে সহজেই আপনি ফোনের সাথে মাউস যুক্ত করে ফোনের সব কাজ করতে পারবেন। নষ্ট ফোনের বিভিন্ন ডাটা অন্য জায়গায় কপি করে নিতে পারবেন। আর যারা পিসিতে লেখালেখি করে অভ্যস্ত, তারা ফোনের সাথে পিসির কিবোর্ডটি যুক্ত করে তা দিয়ে সহজেই ফোনে লেখালেখি করতে পারবেন।
২. চার্জ দেওয়া যাবে অন্য ফোন
মনে করুন, আপনার বন্ধুর ফোনটিতে একেবারেই চার্জ নেই। যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যাবে। ফোনটি চার্জ দেওয়ার মতো কোনো মাধ্যমও আশেপাশে নেই। তবে আপনার ফোনটিতে প্রায় ফুল চার্জ রয়েছে। এখন কী করবেন? এমন পরিস্থিতিতে আপনি খুব সহজেই আপনার ফোনটি দিয়ে আপনার বন্ধুর ফোনটি চার্জ দিতে পারবেন, যদি আপনার ফোনটি ওটিজি সাপোর্টেড হয়ে থাকে।
এভাবে চার্জ দেওয়ার জন্য আপনার ফোনটির সাথে আপনার বন্ধুর ফোনটি ওটিজি ক্যাবলের মাধ্যমে যুক্ত করুন। তাহলেই আপনার বন্ধুর ফোনটি স্বয়ংক্রিয় ভাবে চার্জ হতে শুরু করবে। এভাবে আপনি অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন ছাড়াও অন্য যেকোনো ফোন চার্জ দিতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে একটি ব্যাপার মনে রাখতে হবে। সেটি হলো, এ পদ্ধতিতে ফোন চার্জ দিতে হলে আপনার ফোনের ব্যাটারির ধারণক্ষমতা আপনি যে ফোনটি চার্জ দিবেন তার থেকে বেশি হতে হবে। অর্থাৎ যে ফোনটি আপনি চার্জ দিতে চান তার ব্যাটারির ধারণক্ষমতা যদি ২০০০ mAh হয় তবে আপনার ফোনের ব্যাটারির ধারণক্ষমতা ২০০০ mAh এর বেশি হতে হবে।
৩. যুক্ত করা যাবে গেম কন্ট্রোলার
আপনি কি স্মার্টফোনে গেম খেলতে ভালোবাসেন? তাহলে আপনার জন্য রয়েছে সুখবর। আপনি খুব সহজেই ওটিজির মাধ্যমে আপনার ফোনটিতে যুক্ত করতে পারবেন গেম কন্ট্রোলার।
যারা পিসি কিংবা প্লে স্টেশনে গেম খেলতে গেম কন্ট্রোলার ব্যবহার করে অভ্যস্ত, তারা এ পদ্ধতিতে গেম কন্ট্রোলারটি দিয়ে অ্যান্ড্রয়েড ফোনেও বিভিন্ন গেম খেলতে পারবেন। বর্তমানে বিভিন্ন অ্যান্ড্রয়েড গেমেও এক্সটার্নাল গেম কন্ট্রোলারের মাধ্যমে গেম খেলার অপশন দেওয়া থাকে। এক্ষেত্রে ফোনে ওটিজি ক্যাবলের মাধ্যমে গেম কন্ট্রোলার বা জয়স্টিক ফোনে যুক্ত করে বিরক্তিকর টাচ কন্ট্রোল বাদ দিয়ে গেম কন্ট্রোলার দিয়েই আপনি খেলতে পারবেন আপনার পছন্দের গেমটি।
৪. যুক্ত করা যাবে পোর্টেবল স্টোরেজ
ফোনের ওটিজি সুবিধার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি ফোনের সাথে পেনড্রাইভ, পোর্টেবল হার্ড ড্রাইভ, মেমরি কার্ড রিডার ইত্যাদি যুক্ত করতে পারবেন।
আপনার প্রিয় ল্যাপটপটি হয়তো আপনার পাশে নেই। কিন্তু আপনার ফোনের দরকারি ফাইলগুলো আপনি কোথাও জমা রাখতে চাচ্ছেন। ওটিজির মাধ্যমে ফোনে সহজেই পেনড্রাইভটি যুক্ত করে তার মধ্যে ফোনের দরকারি ফাইলগুলো জমা রাখতে পারবেন। এছাড়াও ওটিজির মাধ্যমে আপনি গান, ভিডিও কিংবা অন্য কিছু ফোনে কপি না করে সরাসরি পেনড্রাইভ কিংবা পোর্টেবল হার্ড ড্রাইভ থেকে প্লে করতে পারবেন।
৫. যুক্ত করতে পারবেন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট
আপনি জানেন কি ওটিজির মাধ্যমে আপনি আপনার ফোনটি যুক্ত করতে পারবেন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সাথে! হ্যাঁ, আপনার বাসায় যদি কোনো ওয়াইফাই রাউটার না থাকে আর আপনি যদি আপনার পিসির সাথে যুক্ত ইন্টারনেট সুবিধা আপনার ফোনে ব্যবহার করতে চান তাহলে খুব সহজেই ওটিজির মাধ্যমে আপনি ফোনে ব্রডব্যান্ড সংযোগ দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন হবে একটি ইউএসবি ইথারনেট এডাপ্টার।
এই এডাপ্টারটি ওটিজি ক্যাবলের সাথে যুক্ত করলেই আপনি ফোনে সরাসরি ব্যবহার করতে পারবেন আপনার পিসির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট।
৬. প্রিন্ট করা যাবে ফোন থেকেই
জরুরী মুহূর্তে যদি আপনার কম্পিউটারটির কোনো সমস্যা হয়ে থাকে আর আপনার যদি তখনই কোনো কিছু প্রিন্ট করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে, তাহলে আপনি ওটিজির মাধ্যমে আপনার ফোনের সাথে প্রিন্টারটি যুক্ত করতে পারবেন। ফলে সহজেই আপনি সরাসরি ফোন থেকে প্রিন্ট করতে পারবেন আপনার দরকারি ডকুমেন্টটি।
এক্ষেত্রে কম্পিউটারের কোনো প্রয়োজন হবে না। ফোনে সংরক্ষিত ডকুমেন্টটি আপনি ফোনের প্রিন্ট কমান্ডের সাহায্যে প্রিন্ট করতে পারবেন প্রিন্টার দিয়ে। তবে ফোনে যদি প্রিন্টিংয়ের অপশনটি না থাকে, তবে আপনি প্লে স্টোর থেকে PrinterShare অ্যাপটি ডাউনলোড করে এর মাধ্যমে সহজেই প্রিন্ট করতে পারবেন আপনার ফোনটি থেকে।
ফিচার ইমেজ – cnet.com