প্রথম যখন কম্পিউটার তৈরি হয়েছিল তখন সেগুলো সীমাবদ্ধ ছিল বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় আর গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণাগারের মাঝেই। ধীরে ধীরে কম্পিউটারের উন্নতির সাথে সাথে কম্পিউটার হাতে আসতে থাকে ধনী শৌখিন প্রযুক্তিপ্রেমীদের। কিন্তু আজকে চারপাশে তাকালে প্রায় সবার কাছেই কম্পিউটার দেখা যায়। ডেস্কটপের যুগ শেষ এখন কাঁধের ব্যাগে করে ল্যাপটপ নিয়ে পৃথিবী ঘোরে মানুষ। আর সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর, কম্পিউটারে খুঁজলে দেখা যাবে বেশিরভাগ কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম মাইক্রোসফট উইন্ডোজ। মাইক্রোসফট কর্পোরেশনের তৈরি এই অপারেটিং সিস্টেম পুরো পৃথিবী জুড়েই জনপ্রিয়। এটি চালানো যেমন সহজ, তেমনি শেখাও যায় অনেক দ্রুত। উইন্ডোজকে আজকের জায়গায় আসতে পাড়ি দিতে হয়েছে দীর্ঘ পথ। পরিবর্তন এসেছে উইন্ডোজের এক সংস্করণ থেকে অন্য সংস্করণে। কোনোটি জনপ্রিয় হয়েছে, আবার কোনোটি মোটেও জনপ্রিয়তা পায়নি। উইন্ডোজের ইতিহাস না বলে চলুন দেখে নেয়া যাক শুরু থেকে এখন পর্যন্ত উইন্ডোজের বিভিন্ন সংস্করণগুলো কেমন ছিল।
উইন্ডোজ ১.০
১৯৮৫ সালের ২০ নভেম্বর প্রথমবারের মতো মুক্তি পায় উইন্ডোজ ১.০, যা ছিল উইন্ডোজের সর্বপ্রথম সংস্করণ। এর আগে মাইক্রোসফটের DOS অপারেটিং সিস্টেমে কীবোর্ডে কমান্ড লিখে কম্পিউটার চালাতে হতো। কিন্তু উইন্ডোজ ১.০ কমান্ড লেখে কম্পিউটার চালানো থেকে মুক্তি দেয়। তবে মজার ব্যাপার হলো, উইন্ডোজ পুরোপুরি মাইক্রোসফটের মৌলিক আবিষ্কার ছিল না। গ্রাফিক্স ইউজার ইন্টারফেস ব্যবহার করে অপারেটিং সিস্টেমের কথা প্রথম বের করে জেরক্স। তাদের কাছ থেকে স্টিভ জবসের অ্যাপল এবং তারপর বিল গেটসের মাইক্রোসফট নিজেদের অপারেটিং সিস্টেম বের করে। আর সেটা নিয়ে স্টিভ জবসের সাথে বিল গেটসের মনোমালিন্যের ঘটনাও ঘটেছিল।
উইন্ডোজ ব্যবহারকারীরা মাউস পয়েন্টার ব্যবহার করে বিভিন্ন কাজ করতে পারতেন। আমাদের কাছে এটি খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার মনে হলেও আজ থেকে ৩০ বছর আগে এটি ছিল একটি যুগান্তকারী ব্যাপার। উইন্ডোজ ১.০ এর সাথে নোটপ্যাড, ক্যালেন্ডার, ক্যালকুলেটার, পেইন্ট ও ঘড়িও সংযুক্ত ছিল। রিভার্সি নামে একটি বোর্ড গেমও ছিল উইন্ডোজের প্রথম সংস্করণের সাথে।
উইন্ডোজ ২.০
ঠিক দু’বছর পর মাইক্রোসফট বাজারে আনে উইন্ডোজের দ্বিতীয় সংস্করণ, উইন্ডোজ ২.০। ১৯৮৭ সালের ৯ ডিসেম্বর বাজারে আসা এ সংস্করণটি ছিল ইন্টেলের ১৬ বিটের ২৮৬ মডেলের প্রসেসরের সাথে তাল মিলিয়ে তৈরি করা। আগের সংস্করণের থেকে গতিশীল ছিল এটি। ডেস্কটপ আইকন ও কীবোর্ড শর্টকাট যোগ করায় কাজ করার আরো দ্রুত ও সহজ হয়ে ওঠে। আইবিএম ১৯৮২ সালে ২৮৬ মডেলের প্রসেসর বাজারে ছাড়লেও তখনকার অপারেটিং সিস্টেমে কাজ করত না। কিন্তু উইন্ডোজ ২.০ সে বাঁধা অতিক্রম করে ফেলে।
উইন্ডোজ ৩.০
প্রায় আড়াই বছর পর মাইক্রোসফট বাজারে আনে উইন্ডোজ ৩.০। ইন্টেল ২৮৬ প্রসেসরের কিছু সমস্যার কারণে ও ইন্টেল ৩৮৬ মডেলের জন্য তৈরি উইন্ডোজের এ সংস্করণটি বাজারে আসে ১৯৯০ সালের মে মাসে। উন্নত প্রসেসরের কারণে আগের থেকে গতি বেড়ে যায় উইন্ডোজের। এর আগে উইন্ডোজ ও আইবিএম একসাথে ওএস/২ নামে আরেকটি অপারেটিং সিস্টেম তৈরি শুরু করেছিল। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যার কারণে ওএস/২ এর নির্মাণ পিছিয়ে গেলে মাইক্রোসফট বাজারে ছাড়ে উইন্ডোজ ৩.১ সংস্করণ।
আজকের কম্পিউটারের রূপের শুরু এই ৩.১ সংস্করণ থেকেই। ভার্চুয়াল মেমোরি, ১৬ বিট কালার, উন্নত আইকন আগের থেকে কাজ অনেক সহজ করে দেয়। ফাইল ম্যানেজার, প্রোগ্রাম ম্যানেজার, প্রিন্ট ম্যানেজার যুক্ত হয় উইন্ডোজে। বর্তমানের উইন্ডোজের সাথে আসা Hearts, Minesweeper, Solitaire গেমগুলো উইন্ডোজে যুক্ত হয়েছিল সেই ৯০ এর দশকেই। স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসায়ী এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য জনপ্রিয় হতে থাকে উইন্ডোজ।
উইন্ডোজ এনটি (Windows NT)
NT অর্থাৎ New Technology ছিল মাইক্রোসফটের প্রথম ৩২ বিট অপারেটিং সিস্টেম। কিন্তু মাইক্রোসফট প্রথমেই বুঝতে পারে সেসময়ে বাজারে থাকা কম্পিউটারগুলোর সাথে উইন্ডোজের এ সংস্করণ মানানসই ছিল না। তাই এটিকে কিছুটা পরিবর্তন করে বাণিজ্যিক সার্ভার ও নেটওয়ার্কিং এ ব্যবহার করা হতো আর সাধারণ জনগণের জন্য ১৬ বিট সংস্করণ বাজারে ছাড়া হয়। ১৯৯১ সালে বেটা সংস্করণের পর ১৯৯৩ সালে মূল সংস্করণ বাজারে আসে।
মাইক্রোসফটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় ছিল ১৯৯১ সাল। এ সময়ই মাইক্রোসফট ও আইবিএম আলাদা হয়ে যায় এবং মাইক্রোসফট সম্পূর্ণ একাকী অপারেটিং সিস্টেম তৈরি শুরু করে। আগের তৈরি করতে থাকা ওএস/২ অপারেটিং সিস্টেমটিই আইবিএমের সাথে আলাদা হবার পর নাম পায় এনটি। পরবর্তীতে মাইক্রোসফট এনটি ৩.৫১ সংস্করণ পর্যন্ত বাজারে আনে। তবে ৩.৫১ এর পরেও আরেকটি সংস্ক্ররণ এসেছিল ১৯৯৬ সালে, এনটি ৪.০ নামে।
উইন্ডোজ ৯৫
৯০ এর দশকে ইন্টারনেট ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় সহজে ও দ্রুত ইন্টারনেট চালানো সম্ভব এমন অপারেটিং সিস্টেম প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। ১৯৯৫ সালে মাইক্রোসফট বাজারে আনে উইন্ডোজ ৯৫, শুরুতে যার নাম ছিল উইন্ডোজ ৪.০। এ উইন্ডোজটি ছিল সম্পূর্ণ স্বয়ংসম্পূর্ণ অপারেটিং সিস্টেম যার জন্য DOS লাইসেন্স দরকার ছিল না। আগে উইন্ডোজ চালাতে DOS এর দরকার পড়ত, কিন্তু এবার আর সেটার দরকার পড়বে না। কেউ চাইলে MS-DOS ব্যবহার করতে পারতেন, কিন্তু তার DOS ও উইন্ডোজ দু’টোই সম্পূর্ণ স্বাধীন হয়ে যায় এবার।
উইন্ডোজ ৯৫ ও এর বিভিন্ন আপগ্রেডের সাথে মাইক্রোসফট আনে নিত্যনতুন সব চমক। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের পথ চলা উইন্ডোজ ৯৫ এর সাথেই শুরু হয়েছিল। টাস্কবার আর স্টার্ট মেন্যু সংযুক্ত হয় উইন্ডোজ ৯৫ থেকে। এছাড়াও প্রতিটি উইন্ডো মিনিমাইজ, ম্যাক্সিমাইজ ও ক্লোজ করার সুযোগ যোগ করা হয় এ সংস্করণে। উন্নত হয় ডেস্কটপ ও এর আইকনগুলোও।
উইন্ডোজ ৯৮
৯০ এর দশকে যাদের জন্ম তাদের অনেকেরই কম্পিউটারের সাথে পরিচয় এই উইন্ডোজ ৯৮ এর মাধ্যমেই। বাসাবাড়ি ও অফিসে কম্পিউটারের চাহিদা বেড়ে যাওয়াতে মাইক্রোসফট এবার মনোনিবেশ করে তাদের দিকে। তাছাড়া ইন্টারনেট ক্যাফে গড়ে ওঠায় সাধারণ মানুষের হাতের নাগালেই চলে আসে কম্পিউটার। সে লক্ষ্যেই ১৯৯৮ সালে মুক্তি পায় উইন্ডোজ ৯৮। উইন্ডোজের এ সংস্করণেই যুক্ত হয় ডিভিডি ও ইউএসবির সুবিধা। ঘরে বসে ই-মেইল পাঠানো কিংবা কম্পিউটারের ডেস্কটপে থাকা আইকনে ক্লিক করেই অনলাইন এপ্লিকেশন চালানোর সুবিধাও শুরু হয় সেসময় থেকেই। পরের বছর উইন্ডোজ ৯৮ এর আরেকটি সংস্করণ বের করে মাইক্রোসফট।
উইন্ডোজ ২০০০
২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মুক্তি পায় উইন্ডোজ ২০০০। উইন্ডোজ ৯৮ এর সুবিধাগুলোকেই আরো উন্নত করা হয় এ সংস্করণে। মূলত পেশাজীবীদের লক্ষ্যে বানানো এ সংস্করণটি বেশ জনপ্রিয়ও হয়েছিল সেসময়ে। ইন্টারনেট সহ অন্যান্য গতি দ্রুততর হওয়াতে অনেকেই এর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
উইন্ডোজ এমই (Windows ME)
উইন্ডোজ এমই (ME – Millennium Edition) মুক্তি পায় ২০০০ সালের সেপ্টেম্বরে। উইন্ডোজ ২০০০ যেমন ছিল পেশাজীবীদের জন্য, এমই তেমন ছিল বাসায় কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য। ভিডিও, মিউজিক দেখার সুবিধা দেয়ার পাশাপাশি উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সিস্টেম রিস্টোর, সিস্টেম ফাইল প্রটেকশন ও অটো-আপডেটের সুবিধাও যুক্ত হয় এটিতে। তবে ২০০০ সালে মুক্তি পাওয়া সংস্করণ দু’টিকে হারিয়ে দেয় এর পরে আসা সংস্করণটি।
উইন্ডোজ এক্সপি
মাইক্রোসফটের সবচেয়ে জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ এক্সপি। এখনো বাংলাদেশের কম্পিউটারের দোকানগুলোতে দেখা যায় উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহার করা। ২০০১ সালের অক্টোবরে বাজারে আসা উইন্ডোজ এক্সপি ছিল আগের সবগুলো সংস্করণ থেকে অনেক উন্নত। এতে ব্যক্তিগত ব্যবহারকারী ও পেশাজীবী উভয়ের জন্যই সুবিধা ছিল। হোম এডিশন ও প্রফেশনাল এডিশনের মাঝে বেছে নেওয়ার সুযোগও ছিল। উইন্ডোজ এক্সপির সাথে আসা একটি ওয়ালপেপার পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত ওয়ালপেপার। মাইক্রোসফট প্রচুর অর্থের বিনিময়ে এটি কিনেছিল, যে অর্থের পরিমাণ কখনো প্রকাশ করা হয়নি।
আগের থেকে উন্নত স্টার্টমেন্যু, টাস্কবার, কন্ট্রোল প্যানেল যুক্ত হয় এক্সপিতে। গেমিং সহ মাল্টিমিডিয়ার প্রভূত উন্নতি আসে এ সংস্করণে। মিডিয়া প্লেয়ার, উইন্ডোজ মুভি মেকার এর পাশাপাশি ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ও উইন্ডোজ মেসেঞ্জার ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিল। তবে উইন্ডোজ এক্সপির সবচেয়ে বড় খুঁত ছিল এর নিরাপত্তা। উইন্ডোজ এক্সপির ফায়ারওয়াল ডিফল্টভাবে বন্ধ করা থাকে, যা বেশিরভাগ ব্যবহারকারীরাই জানতেন না। ফলে হ্যাকারদের আক্রমণের শিকার হতে হয় অনেককে। তবে বিভিন্ন সার্ভিস প্যাকের মাধ্যমে মাইক্রোসফট নিরাপত্তা ত্রুটি অনেকটাই দূর করে ফেলে। এরপরেও উইন্ডোজ এক্সপি এতোটাই জনপ্রিয় যে ২০১৪ সালে মাইক্রোসফট এক্সপির সাপোর্ট কার্যক্রম বন্ধ করে দিলেও এখনো প্রচুর মানুষ উইন্ডোজ এক্সপি ব্যবহার করেই যাচ্ছেন।
উইন্ডোজ ভিসতা
উইন্ডোজ এক্সপির নিরাপত্তা ত্রুটির কথা মাথায় রেখে উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ উইন্ডোজ ভিসতা বাজারে আসে ২০০৬ সালে। উইন্ডোজ ভিসতার সাথে উইন্ডোজ ডিফেন্ডার স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইন্সটল হয়ে যেত। উইন্ডোজ ভিসতায় মাইক্রোসফট যুক্ত করে বিটলকার ড্রাইভ এনক্রিপশন, যা কম্পিউটারের নিরাপত্তাকে আরো দৃঢ় করে। ইউজার অ্যাকাউন্ট কন্ট্রোল সুবিধা চালু হয় উইন্ডোজ ভিসতা থেকেই।
আগের সংস্করণগুলোর থেকে আলাদা ও নতুন টাস্কবার, স্টার্ট মেন্যু চালু হয় ভিসতায়। মাল্টিমিডিয়ার জন্যও উইন্ডোজ ভিসতাতে আগের সংস্করণগুলো থেকে বেশি সুবিধা যোগ করা হয়। স্টার্টআপ করতে আগের থেকে সময় কম লাগতো এবং ল্যাপটপের ক্ষেত্রে স্লিপ মোডে ব্যাটারি কম খরচ হত। তবে উইন্ডোজ এক্সপির জনপ্রিয়তার কারণে ভিসতা খুব একটা সফল হতে পারেনি। ভিসতা বাজারে আসার পরেও অনেকেই এক্সপিতেই থেকে গিয়েছিলেন।
উইন্ডোজ ৭
২০০৯ সালে মাইক্রোসফট বাজারে আনে উইন্ডোজ ৭। ল্যাপটপ ও টাচস্ক্রিনের ব্যবহার বেড়ে যাওয়াতে তাদের কথা মাথায় রেখে বানানো হয় উইন্ডোজ ৭। টাস্কবার, স্টার্ট মেন্যু সহ প্রায় সবকিছুতেই পরিবর্তন আসে। উইন্ডোজ ভিসতা ও এক্সপির সকল সুবিধার সাথে সেগুলোকে আরো উন্নত করা হয় উইন্ডোজ ৭ এ। চালু কিংবা বন্ধ হতে আগের থেকে অনেক কম সময় লাগে উইন্ডোজ ৭ এ। হটস্পটের মাধ্যমে ইন্টারনেটে যুক্ত হবার সুবিধা চালু হয় উইন্ডোজ ৭ থেকেই। হাইবারনেট করা ফাইল ৭৫% পর্যন্ত সংকুচিত করার সুবিধা যুক্ত হয় এতে। ফলে চাইলেই কাজের মাঝে কম্পিউটার হাইবারনেট করে বিশ্রাম নেয়া বা অন্য কাজ করা যেত।
উইন্ডোজ ৮ ও উইন্ডোজ ৮.১
উইন্ডোজ ৮ কে বলা যেতে পারে মাইক্রোসফটের নতুন যুগে প্রবেশের অপারেটিং সিস্টেম। আগের উইন্ডোজগুলো থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ও নতুন রূপে বাজারে আসে ২০১২ সালের অক্টোবরে। আগের সংস্করণগুলোতে স্টার্ট বাটন থাকলেও এবার সেটি আর থাকে না। স্টার্টমেন্যুও পাল্টে যায় পুরোপুরি। এ সময় মাইক্রোসফট নোকিয়ার লুমিয়া মোবাইলের কথাও মাথায় রেখে বানিয়েছিল উইন্ডোজ ৮। পরিবর্তন আসে টাস্কবারেও, যুক্ত হয় ইউএসবি ৩.০ এর সুবিধা।
২০১৩ সালে আসে উইন্ডোজ ৮.১। দীর্ঘদিন স্টার্ট বাটনে অভ্যস্ত গ্রাহকের শুরু থেকেই উইন্ডোজ ৮ এর স্টার্ট বাটন না থাকা নিয়ে অভিযোগ করায় ফিরে আসে স্টার্ট বাটন। তবে সেটি আগের সংস্করণগুলো থেকে কিছুটা আলাদাই ছিল। এর সাথে যুক্ত হয় মাইক্রোসফট বিং (Bing) এর বিভিন্ন অ্যাপ। উইন্ডোজ ৮ ও ৮.১- দু’টো সংস্করণেই চালু ও বন্ধ হতে সময় নিতো অনেক কম।
উইন্ডোজ ১০
মাইক্রোসফটের সর্বশেষ উইন্ডোজ সংস্করণ উইন্ডোজ ১০। ২০১৫ সালের অক্টোবরে মাইক্রোসফট বাজারে ছাড়ে উইন্ডোজ ১০ এবং প্রথমবারের মতো আগের ব্যবহারকারীদের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে! একইসাথে বিনামূল্যে আপগ্রেড করার সুবিধাও দিচ্ছে উইন্ডোজ ১০ এর জন্য। তবে ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর আর কেউ বিনামূল্যে উইন্ডোজ ১০ পাবে না।
উইন্ডোজ ১০ এর স্টার্টমেন্যু আগের মতো ফিরে আসে আগের স্টার্ট বাটন সহ। তবে চেহারা পাল্টে অনেকটাই নতুন হয়েছে, একইসাথে হয়েছে ব্যবহারকারীদের জন্য সুবিধাজনক। এর সাথে যুক্ত হয়েছে করটানা নামের ভার্চুয়াল সহযোগী। উইন্ডোজ ১০ এর সাথে এসেছে মাইক্রোসফট এজ ব্রাউজার, যা তাদের ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার থেকে অনেক দ্রুত কাজ করে। মন্থর গতি এবং গুগল ক্রোম, অপেরা কিংবা মজিলা ফায়ারফক্সের কারণে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার একেবারেই ব্যবহৃত হত না। কিন্তু মাইক্রোসফট এজ এক্সপ্লোরারের সমস্যাগুলোকে অনেকটাই দূর করেছে।
উইন্ডোজ ১০ এর সাথে যুক্ত হয়েছে পেইন্ট থ্রি ডি। তবে মাঝে মাইক্রোসফট পেইন্ট বন্ধ করে দিতে চাইলেও জনগনের চাপে সে সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসে। প্রায় তিন দশক আগে তৈরি হওয়া পেইন্ট সময়ের সাথে উন্নত হয়েছে, সহজে কাজ করার জন্য জনপ্রিয়ও হয়েছে। কন্ট্রোল প্যানেল থেকে শুরু করে অনেক কিছুই বদলে গেছে উইন্ডোজ ১০ এ। সব সুবিধার দিক দিয়ে বিচার করলে ও ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে গেলে উইন্ডোজ ১০ আগের যে কোনো সংস্করণের থেকে সেরা মনে হলেও অস্বাভাবিক হবে না!