Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

৩৬০ আউলিয়ার দেশে ভ্রমণের বাকি ইতিবৃত্ত

আগের পর্বের পর।

মালনীছড়া চা বাগান

সিলেটে গিয়ে চা বাগান দেখবেন না তা কি হয়? হয়তো ভাবছেন চা বাগান দেখতে তো শ্রীমঙ্গল যেতে হবে। শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি চা চাষ হলেও দেশের সবচেয়ে পুরোনো ও প্রথম বাণিজ্যিক চা বাগানটি সিলেটে। ১৮৫৪ সালে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চা উৎপাদনের লক্ষ্যে মালনীছড়া চা বাগানটি গড়ে তোলা হয়। এটি সিলেট শহরের ভেতরেই, বিমানবন্দরের কাছে।

মালনীছড়া চা বাগান © শাহনূর হাবিব মুনমুন

যারা পুরোনো বাড়ি ঘর ও স্থাপত্য দেখতে চান তারা সিলেট শহরে এমন জায়গা পেয়ে যাবেন। তবে এর অধিকাংশই সেভাবে সংরক্ষিত নয় এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন। সুরমা নদীর তীরে কীন ব্রিজের পাশে, আলী আমজাদের ঘড়ির কাছে রয়েছে সারদা হল। কাছেই সার্কিট হাউজের নতুন বিল্ডিংটির পাশে রয়েছে পুরানো ভবনটি। শহরে রয়েছে ২৫০ বছরের পুরানো রেজিস্টার ভবন। আরো রয়েছে–

  • জিন্দা বাজারে রেডক্রিসেন্ট মাতৃমঙ্গল- এটি পূর্বে জোয়ারমহল মাতৃমঙ্গল ছিলো।

  • নগেন্দ্র চৌধুরির বাড়ি- এখন সিলেট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।

  • সিলেট মহিলা কলেজ- চৌহাট্টায় অবস্থিত এ কলেজ ভবনটি দান করেছিলেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের জমিদার রাজেন্দ্র চৌধুরী।

  • রশীদ মঞ্জিল- এটি পূর্ব দরগাহ গেইটে অবস্থিত। বাড়িটির মালিক ছিলেন ব্রিটিশ-ভারতের এমএলএ রশীদ চৌধুরী।

  • আলতাফ ভিলা- আম্বর খানায় অবস্থিত।

  • পাঠানটুলা মিনিস্টার বাড়ি- আসামের শিক্ষামন্ত্রী আব্দুল হামিদের বাড়ি বলে একে ‘মিনিস্টার বাড়ি’ ডাকা হয়। 

  • মজুমদার বাড়ি- এয়ারপোর্ট রোডের কাছে নরওয়ের একটি খ্রিস্টিয় মিশন।

  • রামকৃষ্ণ মিশন- নাইওরপুলে অবস্থিত।

  • সিলেট এমসি কলেজ – কলেজের ইংরেজি ও গণিত বিভাগ অবস্থিত পুরোনো দুটি ভবনে যার নির্মাণ শৈলী দেখার মতো।

  • জৈন্তা রানীর বাড়ি- সিলেট-তামাবিল সড়কে অবস্থিত।

হযরত শাহ পরাণ (র:) এর মাজার

হযরত শাহ পরাণ (র:) এর মাজার অবস্থিত খাদিম নগরে। এটি সিলেট-তামাবিল সড়ক থেকে ০.৩ কিলোমিটার ভেতরে এক টিলার উপরে অবস্থিত। সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ভাড়া করে বা জাফলং এর বাসে করে সিলেট-তামাবিল সড়কে নেমে যাওয়া যাবে শাহ পরাণ (র:) এর মাজারে। সড়ক থেকেই চোখে পড়বে মাজারে ফটক।

শাহ পরাণ (র:) এর মাজার; Image Source: wikimedia.org

শাহ পরাণ (র:) ছিলেন সম্পর্কে শাহ জালাল (র:) এর ভাগ্নে। শাহ জালাল (র:) যখন সিলেট আসেন তখন তারই সাথে এসেছিলেন শাহ পরাণ (র:)। এমন কি শাহ জালাল (র:) দরগায় তার সাথেই থাকতেন শাহ পরাণ (র:)। এক সময়ে শাহ জালাল (র:) এর নির্দেশেই তিনি আলাদা আস্তানা করেন। শাহ পরাণ (র:) মাজারটি এক উঁচু টিলার উপরে অবস্থিত। টিলায় ওঠার জন্য দু’পাশে রয়েছে সিঁড়ি। হযরত শাহ পরাণ (র:) এর সমাধিটি টিলার উপরেই এক প্রকাণ্ড গাছের নিচে। এ গাছটিকে স্থানীয়রা ‘আশা গাছ’ বলেন।

এ গাছটির একটি বিশেষত্ব রয়েছে, গাছটিতে একই সাথে ডুমুর ও আম হয়। এসব ডুমুর ও আম তবারক হিসেবে দশনার্থীদের দেওয়া হয়। কথিত আছে, শাহ জালাল (র:) এর ছুঁড়ে মারা লাঠিটি যেখানে পড়েছিল সেখানেই এ গাছটি জন্মেছে। আর এ গাছটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল শাহ পরাণ (র:) এর আস্তানা। অনেকে বিশ্বাস করেন, এ গাছটি ছুঁয়ে মানত করলে তা পূরণ হয়। মাজারে আরো রয়েছে একটি মোগল স্থাপত্যের গড়নে গড়া তিন গোম্বুজ বিশিষ্ট্ একটি মসজিদ। এখানে যে পুকুরটি রয়েছে এতে অনেকে মানতের পর গোসল করে থাকেন।

তিন গোম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি; Image Source: steemit.com

রাতারগুল

সিলেট শহর থেকে রাতারগুল যাওয়া যায় সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ও লেগুনা ভাড়া করে, আগে যেতে হবে মোটর ঘাটে। অটোরিক্সা বা লেগুনা ভাড়া করার আগে ভাড়া অবশ্যই একটু যাচাই করে নেওয়া ভালো কেননা এখানে প্রতিনিয়ত পর্যটক আসেন ফলে অটোরিক্সা ও লেগুনা চালকেরা সবসময়েই অতিরিক্ত লাভের আশায় সুযোগের সন্ধানে থাকে। দলে সদস্য সংখ্যা বেশি হলে সেই ক্ষেত্রে লেগুনা ভাড়া করাই সুবিধাজনক।

শহরের আম্বরখানা থেকে সিএনজি ভাড়া করা যাবে ও লেগুনা ভাড়া করা যাবে মাজার/দর্গা গেইট থেকে। শহর থেকে মোটর ঘাটে যেতে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার মতো লাগতে পারে। মোটর ঘাটে পৌঁছে সেখান থেকে নৌকা ভাড়া করে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট বা জলাবনে প্রবেশ করতে হবে। হাওড়/খালের পানিতে একটি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে সেটা হচ্ছে জোঁক। পা ঝুলিয়ে বসতে চাইলে স্রোত আছে এমন পানিতে পা ডুবিয়ে বসবেন। কারণ স্রোত আছে এমন পানিতে জোঁক থাকে না।

বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুল; Image Source: dailybdnews.net

রাতারগুল সম্পর্কে নতুন করে তেমন বলার কিছু নেই। এর সৌন্দর্য সম্পর্কে প্রায় সকলেই জানেন। বর্ষা আর শীতে এখানের রূপ থাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। যারা সবুজ ভালোবাসেন আর সবুজের মাঝে হারিয়ে যেতে চান তাদের জন্য বর্ষা মৌসুম উপযুক্ত। এখানে আসলে ওয়াচ টাওয়ারে উঠতে ভুলবেন না।

ওয়াচ টাওয়ারের উপর থেকে রাতারগুল; Image Source: tritiyoprojonmo.com

আর বৃষ্টির ব্যাপারটি মাথায় রেখে ছাতা নিয়ে বের হওয়াই শ্রেয়। তবে না আনতে পারলে সমস্যা নেই, ঘাটে ভাড়ায় পাওয়া যাবে ছাতা ও মাথাল। ২০ থেকে ৫০ টাকায় এগুলো ভাড়া করা যাবে। ডিঙ্গিগুলোতে সাধারণত ছাউনি থাকে না। যারা সাতার জানেন না চাইলে ঘাট থেকে লাইফ জ্যাকেটও ভাড়া নিতে পারেন।

শেষ বিকেলের আলোয় রাতারগুল; Image Source: prothom-elo.com

বিছানাকান্দি

রাতারগুল থেকে ট্রলারে করে অথবা সিএনজিতে বিছানাকান্দি যাওয়া যায়। সিএনজিতে যাওয়ার পথ খুব একটা সুবিধাজনক নয়। রাস্তায় অনেক খানা-খন্দ রয়েছে। ট্রলারে করে রাতারগুল থেকে বিছানাকান্দি যেতে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা লাগবে। অনেকে উচ্চ শব্দ সহ্য করতে পারেন না। যাদের উচ্চ শব্দে সমস্যা হয় তারা ট্রলারে করে গেলে সাথে অবশ্যই ইয়ারপ্লাগ অথবা উন্নতমানের হেডফোন রাখবেন শ্যালোইঞ্জিনের শব্দ থেকে বাঁচতে।

রোদেলা দিনে এমনই দেখায় বিছানাকান্দি; Image Source: dailybdnews.net

বিছানাকান্দি যেতে জলপথে এমন অনেক কিছুই চোখে পড়বে আপনার যা হয়তো আগে দেখেননি- ভাসমান স্কুল, ছোট ছোট দ্বীপে দু’একটা বাড়ি, হাওড়ের মাঝখানে হঠাৎ একটা দ্বীপে গরু-মহিষ- ভেড়ার বিচরণ আর হাওড়ের অথৈ পানিতে এদের সাঁতার কাটার দৃশ্য ইত্যাদি। আমরা যারা শহুরে জীবনযাপন করি তারা হয়তো ভেবে কুল পাবো না কিভাবে এরা চারপাশে পানি নিয়ে জীবনযাপন করছে! সারি সারি পাথর বোঝাই করে হাওড়ের পাশে বাঁধা দেখলে বুঝবেন বিছানাকন্দি পৌঁছে গেছেন।

বিছানাকান্দি পৌঁছে ইঞ্জিনের শব্দ ও দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা ভ্রমণের ক্লান্তি চলে যাবে নিমিষেই– এমনই সৌন্দর্য এ জায়গার। বিছানাকন্দির পথে দূর থেকে যে মেঘগুলো দেখা যাবে, কাছে গেলে সেগুলো হয়ে যাবে পাহাড়। যদি কোনো বৃষ্টিস্নাত দিনে সেখানে যান তবে মেঘালয়ের পাহাড়গুলো দেখবেন মেঘে ঢাকা। 

ধোঁয়া নাকি মেঘ? © মোহাইমিনুল ইসলাম

হ্যাঁ, শুধু তাকিয়েই দেখতে পাবেন। এখানে চারপাশে যে পাহাড়গুলো রয়েছে তার সবগুলোই ভারতের মেঘালয়ের অন্তর্ভুক্ত, তাই যাওয়ার কোনো উপায় নেই। পানিতে নেমে এগুলো দেখে শুধু হা-হুতাশই করতে পারবেন। এখানে দিনের একটা সময় কয়েক ঘণ্টার জন্য ইন্ডিয়ান হাট বসে। ভারতের ভূখণ্ডেই এ হাট বসলেও হাটের সময়ে বাঙালিদের জন্য এটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

পাহাড়গুলো সব মেঘালয়ের অন্তর্ভুক্ত © জ্যাজী জাবের

এখানে দুপুরে খাবার জন্য কিছু অস্থায়ী হোটেল আছে। খাবারের মেন্যু খুব বিশেষ কিছু নয়। পাওয়া যায় ভাত, ভর্তা, ভাজি, ডাল, শুটকি ইত্যাদি। যারা খোলা পানি খেতে চান না সাথে রাখতে পারেন মিনারেল ওয়াটার।

এমনই কিছু অস্থায়ী খাবার হোটেল আছে পর্যটকদের জন্য © সাকিব শরীফ

পান্থুমাই ঝর্ণা

পান্থুমাই  বা পাং-থু-মাই মূলত একটা গ্রামের নাম। গোয়াইন ঘাটে অবস্থিত এ গ্রামটি। মোটর ঘাট থেকে ট্রলারে গোয়াইঘাট যেতে পারেন, আবার অটোরিক্সা নিয়েও যেতে পারেন অথবা বিছানাকান্দি দেখে সেখান থেকে অটোরিক্সা বা মোটরসাইকেলে করে যেতে পারেন পান্থুমাই গ্রামে। যারা ট্রলারে করে গোয়াইন ঘাট যাবেন তাদের ঘাট থেকে অটোরিক্সায় করে পান্থুমাই গ্রামে যেতে হবে।

জনপ্রতি ভাড়া ২০-৩০ টাকা পড়বে। পান্থুমাই গ্রামটি দেখার মতো তবে পর্যটকরা যায় মূলত ঝর্ণা দেখতে। ঝর্ণাটি মেঘালয়ে পাহাড় থেকে লেকে এসে মিশে। লেকটি বাংলাদেশের মধ্যে হলেও পাহাড় বা ঝর্ণা কোনোটিই বাংলাদেশের মধ্যে পড়েনি। তাই দূর থেকে দেখেই সাধ মেটাতে হবে। ঝর্ণাটির নাম পান্থুমাই নয়। অনেকের মতে এটি বড়হিল ওয়াটারফল।

ভরা মৌসুমে এমনই দেখায় পান্থুমাই-এর বড়হিল ওয়াটারফল; Image Source: dailybdnews.net

একদিনেই যদি রাতারগুল, বিছানাকান্দি ও পান্থুমাই যেতে চান তাহলে ভোরে রওনা দিতে হবে সিলেট শহর থেকে যাতে নয়-দশটার মাঝে রাতারগুল ঘুরে শেষ করতে পারেন। এর পরপরই বিছানাকান্দি বা পান্থুমাই এর দিকে রওনা হলে সন্ধ্যা নাগাদ ঘোরা হয়ে যাওয়ার কথা।

ফিচার ইমেজ – offroadbangladesh.com

Related Articles