করোনাভাইরাস যেভাবে আঘাত হানছে সাংবাদিকতার ওপর

অতিক্ষুদ্র এক ‘সৃষ্টি’, খালি চোখে যার অস্তিত্ব দৃষ্টিগোচর হয় না, তা-ই কিনা টালমাটাল করে দিয়েছে আর্কটিক থেকে আলাস্কা! ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছে পৃথিবীর তাবৎ দিকপাল বিজ্ঞানীদের! করোনাভাইরাস সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ঘরের পাশের বশির হোসেন থেকে শুরু করে যুক্তরাজ্যের প্রেসিডেন্ট বরিস জনসন। বোঝা যাচ্ছে না ভাইরাসটির খামখেয়ালিপনা। বিজ্ঞানী, চিকিৎসকেরা যেমন পেরে উঠছেন না এই ক্ষুদ্রকায় ভাইরাসটির সঙ্গে, আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান যেমন অপ্রতুল ঠেকছে, ঠিক তেমনিভাবে পৃথিবীব্যাপী সাংবাদিকেরাও মুখোমুখি হচ্ছেন এ অদৃশ্য শত্রুর।

সাংবাদিকদের কাজ সঠিক তথ্য যথাসময়ে মানবজাতির সম্মুখে পেশ করা, ভবিষ্যতের ইতিহাসকে বর্তমানে বসে লিপিবদ্ধ করা। তাই তাদেরকে সর্বদা সতর্ক থাকতে হয় যেন তাদের হিসেবের খাতায়, তথ্যের ভাণ্ডারে কোনো ভুল-ত্রুটি না থাকে। করোনাভাইরাসের এই মহা দুর্যোগের সময় এ চ্যালেঞ্জ যেন সাংবাদিকদের সামনে আরও তীব্ররূপে প্রকট হয়ে উঠছে। বিশ্বব্যাপী সাংবাদিক সমাজকে একটি অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে কোভিড-১৯। বাকিসব খাতের মতো এ খাতও আক্রান্ত হচ্ছে অতিমারী দ্বারা। সাংবাদিকতা শিল্প, সাংবাদিকদের পেশাদারিত্ব সবকিছু নিয়ে আজকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। এমনিতেই আধুনিক পৃথিবীর তথ্যপ্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতার সাথে তাল সামলাতে প্রতিনিয়ত যুঝে যাচ্ছে সাংবাদিকতার ভাগ্য, করোনাভাইরাস যেন তাই মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাকিসব খাতের মতো সাংবাদিকতাও আক্রান্ত হচ্ছে অতিমারী দ্বারা; Image Source: Orlando Sierra/AFP via Getty Images

অর্থনৈতিক আঘাত

পূর্ব থেকেই সাংবাদিকতায় বিজ্ঞাপনের বেশ আকাল লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর এ সঙ্কট তীব্রতর রূপ ধারণ করেছে। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাও অর্থনৈতিক চাপের মুখে রয়েছে। ফলে বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলো থেকে আগের মতো আর বিজ্ঞাপন আসছে না। এছাড়া গণমাধ্যমগুলোর ডিজিটাল সংস্করণেও আগের তুলনায় বিজ্ঞাপন কমে গেছে। কারণ বর্তমানে বেশিরভাগ প্রধান সংবাদই করোনাভাইরাস সম্পর্কিত নেতিবাচক সংবাদ হওয়ায় অনেক প্রতিষ্ঠানই এসব সংবাদের ভেতরে নিজেদের বিজ্ঞাপন প্রকাশকে অনুপযুক্ত ভাবছে।

ফলে অর্থনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে মিডিয়া হাউজগুলোতে। সাংবাদিকদের বেতন কমে যাচ্ছে বা বকেয়া পড়ছে। অনেক সাংবাদিক ছাঁটাইয়ের শিকার হচ্ছেন। দ্য গার্ডিয়ান-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের সংবাদপত্রগুলো তাদের ডিজিটাল রেভিনিউ থেকে আরও ৫৭ মিলিয়ন ডলার হারাতে পারে যদি বর্তমান করোনাভাইরাস সঙ্কট আরও তিন মাস ধরে চলতে থাকে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের ওয়েবসাইটে দেখানো বিজ্ঞাপন থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ ইতোমধ্যে হারিয়ে ফেলেছে। অর্থনৈতিক এ বিপর্যয় সামলাতে অনেকে মনে করছেন, এ সময় রাষ্ট্রসমূহের উচিত গণমাধ্যমগুলোর সাহায্যে এগিয়ে আসা। এ অবস্থায় সরকারি প্রণোদনা শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে পারে। ডেনমার্কের সরকার স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর জন্য ২৪ মিলিয়ন ইউরো প্রণোদনার চিন্তা করছে। সাংবাদিকতার মতো এ পবিত্র পেশাটিকে টিকিয়ে রাখতে হলে উন্নয়নশীল দেশের সরকারগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে, নচেৎ করোনাভাইরাস বিলীন হওয়ার সাথে সাথে অনেক সংবাদ প্রতিষ্ঠানও বিলীন হয়ে যাবে।

স্বাধীন সাংবাদিকতায় সঙ্কট

সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে গিয়ে অনেক জায়গায় সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত হয়ে পড়েছে। বৈশ্বিক এ সঙ্কটে সাংবাদিকদের ইনফোডেমিক ও ভুয়া তথ্য প্রতিরোধে স্বাধীনভাবে কাজ করাটা জরুরি হলেও মনে হচ্ছে এখনই তারা সবচেয়ে বেশি হুমকি, প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন। রাষ্ট্রের সেন্সরশিপ, প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের চাপ ইত্যাদির কারণে করোনাভাইরাস সম্পর্কিত সঠিক তথ্য অনেক ক্ষেত্রেই জনগণের নিকট পৌঁছাচ্ছে না।

একটি দেশ যদি করোনাভাইরাস সংক্রান্ত তথ্য গোপন করতে চায়, তাহলে বাটারফ্লাই ইফেক্টের মতো তার নেতিবাচক প্রভাব পুরো বিশ্বের ওপর পড়বে। কারণ করোনাভাইরাস একটি বৈশ্বিক মহামারি, তাই একে মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজন বৈশ্বিক সহায়তা ও তথ্য বিনিময়। তাই সঠিক তথ্য প্রচারিত না হলে বা ভুল তথ্য প্রকাশিত হলে, তাতে এ সঙ্কট দূর করতে আরও বেশি সময় লাগতে পারে।

প্রতিদিনই বিশ্বের নানা প্রান্তে সাংবাদিকেরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন; Image Source: picture alliance/dpa

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স জার্মানি-এর পরিচালক ক্রিশ্চিয়ান মির ডয়েচে ভেল-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে মুক্ত-গণমাধ্যম চর্চা’র ওপর আমরা যে আঘাত দেখতে পাচ্ছি তা একেবারে আনকোরা নতুন কিছু নয়। এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা এর আগেও ছিল, এখন করোনা পরিস্থিতিতে বেড়ে গিয়েছে। বিভিন্ন কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আগের চেয়ে বেশি শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিকে তারা একটি অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে সাংবাদিকতার স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করছেন।’

চীনের পরিস্থিতিকে সবচেয়ে ভয়াবহ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশটির অনেক নাগরিক-সাংবাদিক উহানের হাসপাতালগুলোকে নিয়ে সংবাদ প্রচার করার পর সাময়িকভাবে বা পুরোপুরি দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে গেছেন। তারা সরকারের ব্যর্থতাকে তুলে ধরেছিলেন। সরকার তাই এমন ব্যবস্থা নিয়েছে যাতে তথ্য প্রকাশিত হতে না পারে। চীনের বাইরেও আরও অনেক দেশ আছে যেগুলোতে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশে সরকারের বিধিনিষেধ রয়েছে। আর্মেনিয়া, সার্বিয়া, হাঙ্গেরি প্রভৃতি দেশ গণমাধ্যমের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছে। ভাইরাস আর চাপ- দুটোই যুগপৎ বাড়ছে।

নিরাপত্তা ঝুঁকি

সাংবাদিকতার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো ঘটনাস্থলে গিয়ে সরেজমিনে সংবাদ সংগ্রহ করা। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে মাঠপর্যায়ের সাংবাদিকতা প্রায় থমকে গিয়েছে। সাংবাদিকদের সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হচ্ছে, ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ফলে অনেকক্ষেত্রে প্রশ্ন-পাল্টা প্রশ্ন করার সুযোগও সীমিত হয়ে যাচ্ছে। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রায় শতাধিক সাংবাদিক ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। এছাড়া প্রতিদিনই বিশ্বের নানা প্রান্তে সাংবাদিকেরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। করোনা ছাড়াও আরও নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে সাংবাদিকদের। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক সাংবাদিক শারীরিক আক্রমণ ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন।

কারিগরি পরিবর্তন

বৈশ্বিক সাংবাদিকতায় চিরাচরিত প্রথাকে আগাগোড়া পাল্টে দিয়েছে করোনাভাইরাস। এখন আর সাংবাদিকেরা ঘটনাস্থলে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। সংবাদ উৎসসমূহ সীমিত হয়ে গেছে। সাংবাদিক ও সংবাদ উৎসের মধ্যকার পারস্পরিক বোঝাপড়া ও মিথস্ক্রিয়ায় দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। টেলিভিশন সাংবাদিকতায় নতুন নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়েছে। ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রীর পাশাপাশি কারিগরি ডিভাইসগুলোকেও নতুন করে অ্যাসেস্বল করতে হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে।

এখন আর স্টুডিওতে বসে টকশো করার সুযোগ নেই। এর পরিবর্তে ইন্টারনেট প্রযুক্তির ওপর ভরসা করতে হয়েছে। ইন্টারনেটের ক্রমাগত উন্নতির কারণে ভবিষ্যত সাংবাদিকতায় প্রিন্ট মিডিয়া টিকে থাকবে কি না এ আশঙ্কা আগেই ছিল। করোনাভাইরাস যেন এ শঙ্কাকে আরও বেশি সত্য করে তুলছে। যদি বর্তমান সাংবাদিকতা পরিস্থিতি ভবিষ্যতে নিউ নর্মালে পরিণত হয়, তাহলে এজন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে প্রিন্ট মিডিয়া।

সাংবাদিকদের সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হচ্ছে; Image Source: Niall Carson/PA Wire/PA Images

তথ্য যাচাই

আমরা শুধু একটা মহামারির বিরুদ্ধে লড়ছি না, বরং সেই সাথে আমাদেরকে তথ্যবন্যার (Infodemic) বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করতে হচ্ছে।

এমন মন্তব্য করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালক তেদ্রস আধানম। কোভিড-১৯ নিয়ে অজস্র গুজব ছড়িয়েছে। বিশেষত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে এসব গুজব দাবানলের মতো চারদিকে ছড়িয়ে গেছে। আতঙ্কিত মানুষ এসব গুজবে অনেক সময় বিশ্বাসও করেছে। এর সাথে রয়েছে প্রয়োজনীয়, অপ্রয়োজনীয় তথ্যের ছড়াছড়ি। ফলে কার্যকর তথ্য অপ্রোয়জনীয় তথ্যের ভীড়ে হারিয়ে যাচ্ছে। সাংবাদিকদের জন্য এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে কোনটি প্রকাশ করার যোগ্য আর কোনটি নয় সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া।

এসবের সাথে রয়েছে ভাইরাস নিয়ে অহরহ গবেষণা। প্রি-প্রিন্ট জার্নালগুলোতে নিয়মিতই করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হচ্ছে, যেগুলোতে পিয়ার-রিভিউড জার্নালের মতো অত বেশি ভেরিফিকেশনের প্রয়োজন হয় না। ফলে বিভ্রান্ত হচ্ছেন সাংবাদিকেরা। তারা বুঝে উঠতে পারছেন না কোন গবেষণাটি নির্ভরযোগ্য আর কোনটি নয়। আবার অনেক সময় তারা মহামারি নিয়ে এমন সব বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন যারা আদতে ওই সুনির্দিষ্ট বিষয়ে অতটা পারদর্শী নন। ফলে আখেরে ক্ষতি হচ্ছে পাঠকদের। ফ্যাক্টচেক, ইনফোডেমিক সামলাতে আগের চেয়ে বেশি নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে সাংবাদিকদের।

ক্রীড়া সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ

প্রধান সমস্যা হচ্ছে ব্রেকিং নিউজ জানতে হলে মাঠে যাওয়ার বিকল্প নেই। কিন্তু এখন তো আমরা মাঠে যেতে পারছি না, তাই নিউজটা ঠিকমতো তৈরি হচ্ছে না। মাঠপর্যায়ের ইনভেস্টিগেটিভ নিউজ করার বদলে আমাদের এখন স্পেশাল স্টোরি করতে হচ্ছে। বেশিরভাগ সময় সাক্ষাৎকার নিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। 

কিন্তু সাক্ষাৎকার নেওয়াটাও আগের চেয়ে কঠিন হয়ে গেছে। আগে আমরা খেলোয়াড়রা মাঠে অনুশীলনের ফাঁকফোকরে তাদের সাক্ষাৎকার নিতাম, কিন্তু এখন ফোনের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে। ফোনে সবসময় তাদের পাওয়াও যায় না। আবার অনেকে ফোনে স্বস্তিবোধ করেন না। সামনাসামনি কারও সাথে কথা বলা আর ফোনে কথা বলায় বিস্তর পার্থক্য আছে, সেটা আমরা দু’পক্ষই টের পাই। এছাড়া ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম করতে গেলে অন্যান্য সমস্যা তো রয়েছেই। অফিসে কাজ করার যে সমন্বয় পদ্ধতি রয়েছে, অনলাইনে তা পুরোপুরি কার্যকর হয় না। এসবের পাশাপাশি যোগাযোগ শৈথিল্য তো রয়েছেই।

বাংলাদেশে ক্রীড়া সাংবাদিকতার বর্তমান পরিস্থিতিকে এভাবেই বর্ণনা করেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর ক্রীড়া প্রতিবেদক শামস রহমান। মাঠের খেলাধুলা থেমে যাওয়ায় সাংবাদিকতার এ শাখাটি এখন অনেকটা অলস সময় পার করছে। স্বাভাবিক সময়ে যখন ক্রীড়া সাংবাদিকেরা দম ফেলার ফুরসত পেতেন না, ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাঠে বসে থাকতে হতো মিনিটে মিনিটে খেলার আপডেট জানানোর জন্য, তাদের হাতে এখন অফুরন্ত সময়।

কিন্তু তা-ই বলে দুনিয়াজুড়ে ক্রীড়া সাংবাদিকেরা থেমে নেই। তাদের আধেয়ে এসেছে নতুনত্ব, বৈচিত্র্য। তারা এখন আলোকপাত করছেন কীভাবে করোনাভাইরাস খেলাধুলার ওপর প্রভাব ফেলছে। তাদের বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনগুলো পাঠককে ভাবাতে শেখাচ্ছে। তারা স্মৃতিচারণ করছেন সোনালী অতীতের ম্যাচ, পরিসংখ্যান ইত্যাদি নিয়ে। লিখছেন খেলোয়াড়দের ফিটনেস নিয়ে। সেলিব্রিটি খেলোয়াড়দের দৈনন্দিন জীবন তুলে ধরছেন তাদের অনুরাগীদের সামনে। সবসময় খেলাই দেখতে হবে এমন তো নয়, যিনি খেলছেন তার সম্পর্কে একটু জানলেই বা ক্ষতি কী!

ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিবেদন

সাধারণ পাঠকের কাছে নিয়মিত সংবাদ পরিবেশনেও ভাবতে হচ্ছে সাংবাদিকদের। প্রতিবেদনগুলো যেন পাঠকের মনে প্যানডেমিক নিয়ে আরও আতঙ্ক তৈরি না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হচ্ছে তাদেরকে। সংবাদের ভেতর সংবেদনশীল শব্দ লেখার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হচ্ছে সাংবাদিকদের।

এএফপির চোখে প্যানডেমিক জার্নালিজম

মফস্বলের স্থানীয় পত্রিকা থেকে শুরু করে বিখ্যাত সংবাদসংস্থা; করোনাভাইরাসের কালো ছায়া সবার ওপরই পড়েছে। প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা আজাঁস ফ্রান্স প্রেস (এএফপি)-এর গ্লোবাল নিউজ ডিরেক্টর ফিল চেটউইন্ড এক নিবন্ধে বর্ণনা করেছেন কীভাবে সংস্থাটির হাজার মানুষে গমগম করা প্যারিস অফিস এখন মাত্র জনা পঞ্চাশেক কর্মী দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এশিয়া থেকে ইউরোপ ছাড়িয়ে সর্বত্র করোনাভাইরাস সংশ্লিষ্ট সংবাদের পেছনে ছুটেছেন এবং ছুটে চলেছেন এএফপি’র সাংবাদিকেরা। নতুন নতুন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন তারা, সেগুলোকে আবার কাটিয়েও উঠেছেন। খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছে চলমান পরিস্থিতির সাপেক্ষে।

প্রথমদিকে করোনাভাইরাস নিয়ে কাজ করাটাকে স্বাভাবিক বলে মনে হয়েছিল তাদের কাছে, কারণ এর আগে সার্স, মার্স, ইবোলার মতো মহামারি কাভার করার অভিজ্ঞতা রয়েছে সংবাদকর্মীদের। কিন্তু ধীরে ধীরে কোভিড-১৯ পুরোদস্তুর ভিন্নরূপ নেওয়ায় সাংবাদিকতার সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেল। প্যানডেমিকের কেন্দ্রস্থলে থেকে সাংবাদিকদের কাজ চালিয়ে যাওয়া ক্রমশ অসম্ভব হয়ে পড়লো। তাদেরকে এপিসেন্টারগুলো থেকে সরিয়ে নেওয়া হলো। তখন সংবাদ সংগ্রহের জন্য পুরোপুরি আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ওপরই নির্ভর করতে হলো। তাই এএফপির ২০০টি ব্যুরো অফিস ও ১,৭০০-এর মতো সাংবাদিক এখন নিয়মিত ভার্চুয়ালি কাজ করছেন। বিশাল নিউজরুমের আজ আর কোনো অস্তিত্ব নেই। ফিল চেটউইন্ডের ভাষায়,

আমাদের সাংবাদিকতার সবরকমের কাজই দূর থেকে সম্পন্ন করা সম্ভব অনুধাবন করতে পেরে আমরা নিজেরাই যারপরনাই বিস্মিত হয়েছি। … আমরা শিখেছি, আমরা মানিয়ে নিয়েছি, এবং ভিন্নসব পদ্ধতিতে গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য নিউজস্টোরি সরবরাহ করে যাচ্ছি।

বর্তমান ইনফোডেমিক ও ভুয়া তথ্য থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া সাংবাদিকতার জন্য অপর একটি আয়াসসাধ্য কাজ। এএফপি তাই তাদের পাঠকদের সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে আলাদা ফ্যাক্টচেকিং সাইট চালু করেছে। আর ওই সাইটে সঠিক তথ্যের খোঁজে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে মানুষ। অর্থাৎ পাঠকেরাও ‘নিউ নর্মাল’ সাংবাদিকতার সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন অনেকটা।

সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সাক্ষাৎকার গ্রহণ; Image Source: Chris Granger/NOLA.com

সামগ্রিকভাবে করোনা অতিমারী, সাংবাদিকতার পরিভাষায়, একটি হিউম্যান-ইন্টারেস্ট স্টোরি। এ যেন মানবসভ্যতার বিরুদ্ধে এক অদৃশ্য শক্তির লড়াইয়ের গল্প যেখানে যুদ্ধের আসল নায়কেরা সবাই মুখোশের আড়ালে রয়ে গেছেন। আর এই সংশপ্তকদের সবার সামনে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার দায়িত্বটাও সাংবাদিকদের। এ কাজে প্রতিদিন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন সাংবাদিকেরা। চিত্রসাংবাদিকদের ছবিতে ফুটে উঠেছে ফেইসমাস্ক পরতে পরতে মুখে কালশিটে পড়ে যাওয়া সেবিকাদের মুখশ্রী। হাসপাতালগুলোর ভেতর থেকে যুদ্ধজয়ের গল্প পৃথিবীকে জানাচ্ছেন সাংবাদিকেরা। কিন্তু এ কাজ করার জন্য একই যুদ্ধে সামিল হতে হচ্ছে তাদেরকেও।

সাংবাদিকতার কারিগরী কাজের পরিবর্তনগুলোর সাথে খুব দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছে বৈশ্বিক এ সংবাদসংস্থাটিকে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য প্রয়োজন হয়েছে দীর্ঘদেহী বুম। অনেকে স্বীয়বুদ্ধিবলে নিজেদের বুম নিজেরাই তৈরি করে নিয়েছেন। লকডাউনে থাকা সুনসান শহরের নিস্তব্ধতা ধরার জন্য ব্যবহার করতে হয়েছে আকাশচারী ক্যামেরা। এসব কারিগরী পরিবর্তন কোভিড-১৯ সংক্রমণের আগে কেউ চিন্তাও করতে পারেনি।

বাংলাদেশে করোনাকালীন সাংবাদিকতা

অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সাংবাদিকেরা করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক সাংবাদিক ইতোমধ্যে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও সাংবাদিকেরা যথেষ্ট সহায়তা পাচ্ছেন না এই দুর্যোগকালীন সময়ে।

লকডাউনে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়ায় পত্রিকা বিক্রি কমে গেছে, বিজ্ঞাপনের সংখ্যা আগের চেয়ে আরও কমের দিকে যাচ্ছে। এছাড়া রয়েছে আর্থিক লেনদেনজনিত সমস্যা। জনবল কমে যাওয়ায় অনুষ্ঠান ও সংবাদ সম্প্রচারে অনেক চ্যানেলকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অর্থনৈতিক সঙ্কট রোধে সরকার ইতোমধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করলেও সংবাদমাধ্যমগুলোর জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট সহায়তার কথা শোনা যায়নি।

ফেইসমাস্ক পরিহিত একজন সাংবাদিক; ঢাকা, বাংলাদশ; Image Source: ZH Chowdhury

গবেষণা

যেহেতু করোনাভাইরাসের আক্রমণ এখনো থিতিয়ে পড়েনি, তাই সাংবাদিকতা জগতের ‘ড্যামেজ রিপোর্ট’ পেতে আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে ইতোমধ্যে এসংক্রান্ত সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা শুরু হয়েছে। অতিমারীর কারণে বৈশ্বিক সাংবাদিকতায় কী কী পরিবর্তন সূচিত হয়েছে তা খুঁজে বের করার জন্য যৌথভাবে নতুন একটি গবেষণা শুরু করেছে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর জার্নালিস্টস (আইসিএফজে), ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টো সেন্টার ফর ডিজিটাল জার্নালিজম। এ গবেষণার উদ্দেশ্যগুলো হচ্ছে:

  • সাংবাদিতার ওপর করোনাভাইরাসের প্রভাব এবং সাংবাদিকেরা কীভাবে প্যানডেমিক মোকাবেলা করছেন তা খুঁজে বের করা।
  • সাংবাদিকতার চর্চা ও ব্যবসায়িক প্রক্রিয়ায় কী পরিবর্তন সূচিত হয়েছে তা জানা।
  • ডিসইনফরমেশন কীভাবে ছড়াচ্ছে এবং কীভাবে প্রতিরোধ করা হচ্ছে তা জানা।
  • সাংবাদিকদের নিরাপত্তাঝুঁকি ও সেগুলোর প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে জানা।
  • প্যানডেমিকের কারণে কীভাবে বৈশ্বিক মুক্ত-গণমাধ্যম চর্চা ব্যাহত হচ্ছে, হুমকির মুখে পড়ছে, বা বিদ্যমান হুমকিগুলোকে আরও বেশি প্রলুব্ধ করছে তা খুঁজে বের করা।

‘করোনাভাইরাস যেমন মৃত্যুর মিছিল তৈরি করছে, তেমনি অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানও এর আঘাতে কুপোকাত হয়েছে। সাংবাদিকতার ওপর এ ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার জন্য আমাদের মানসম্মত গবেষণা প্রয়োজন। বর্তমান গবেষণার লক্ষ্যও তাই।’ এমনটাই জানিয়েছেন আইসিএফজে’-এর গ্লোবাল ডিরেক্টর অভ রিসার্চ জুলি পসেটি। জরিপনির্ভর গবেষণাটিতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের গণমাধ্যমকর্মী ও সংবাদসংস্থাগুলোর নিকট থেকে জরিপের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। প্রাপ্ত তথ্য মূল্যায়ন করে জানা যাবে কীভাবে অতিমারীর কারণে চিরায়ত সংবাদ-সংগ্রহ ও প্রকাশনা পদ্ধতি পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে।

সমাধান সল্যুশনস জার্নালিজমে?

If it bleeds, it leads.

পত্রিকা খুললেই আজকাল শুধু নেতিবাচক খবর- এমন অনুযোগ প্রায়শই করতে শোনা যায় অনেককে। তাদের এ দাবী অমূলক নয়, আজকালকার পত্রিকা বা নিউজ চ্যানেলগুলোতে দুঃসংবাদের খবরই আমরা যেন বেশি দেখতে পাই। এমন কোনো দিন নেই যেদিন দুর্নীতি, অপরাধ, দুর্ঘটনা ইত্যাদির খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় না। সাংবাদিকেরা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে থাকা এ পাপাচারগুলো পাঠকের সামনে তুলে ধরেন বলে তাদেরকে ‘ওয়াচডগ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়।

কিন্তু এ ধরনের সংবাদ যে পাঠকসমাজের মননে নেতিবাচকতার একটি অনুভূতি তৈরি করে দিচ্ছে না তা অস্বীকার করা যাবে না। নিয়মিত এসব নেতিবাচক সংবাদের কারণে আজকাল অনেক পাঠক/দর্শক সংবাদ এড়িয়ে যাচ্ছেন, সাংবাদিকতার পরিভাষায় যাকে ‘news fatigue’ বলা হয়। রয়টার্স ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অভ জার্নালিজম-এর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বিশ্বের ৩২ শতাংশ পাঠক স্বেচ্ছায় খবর দেখা বা শোনা বাদ দিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের ৫৮ শতাংশ পাঠক জানিয়েছেন, তারা সংবাদ এড়িয়ে চলেন কারণ এগুলো তাদের মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সমস্যাসঙ্কুল সংবাদগুলো প্রচার করে সাংবাদিক কোনো ভুল অবশ্যই করছেন না, কিন্তু পাঠকের জন্য এটি একটি দৃশ্যমান সমস্যাও বটে। আর এ সমস্যার সমাধান হিসেবে দেখা হচ্ছে সল্যুশনস জার্নালিজম বা কনস্ট্রাকটিভ জার্নালিজমকে।

Image Courtesy: Kevin Lamarque/Reuters

আপনার এলাকার তিনটি সমস্যার কথা ভাবতে বললে আপনি ফটাফট সেগুলো বলে দিতে পারবেন। কিন্তু কখনো কি এ সমস্যাগুলোর সমাধানের কথা আপনার মাথায় এসেছিল? সম্ভবত না, কারণ সমস্যা সমাধানের কথা চিন্তা করার চেয়ে সেই সমস্যা নিয়ে আলোচনা করাটা ঢের বেশি সহজ।

সল্যুশনস জার্নালিজমের মূল বৈশিষ্ট্য হলো, সমস্যা নয় বরং সমস্যার সমাধানের ওপর প্রামাণিক উপায়ে আলোকপাত করা। একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। বিশ্বে প্রতিবছর বিশাল পরিমাণ খাবারদাবার নষ্ট হয়। সাংবাদিকেরা এ নিয়ে প্রচুর রিপোর্ট করেছেন এবং ওই রিপোর্টগুলো দেখে আপনি হয়তো দুঃখ পেয়েছেন, মনে মনে ঐ অপচয়কারীদের গালমন্দ করেছেন। এ খবরটি আপনার মনকে তেতো করে দিয়েছে। কিন্তু আপনি যদি জানতেন যে উচ্ছিষ্ট খাবারগুলো সংগ্রহ করে সেগুলো দিয়ে মিথেন গ্যাস বানাচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান, তাহলে নিশ্চয়ই আনন্দিত হতেন।

সল্যুশনস জার্নালিজমের মূল নির্যাস হলো এটাই। পৃথিবীতে সমস্যা আছে, আর এ সমস্যাগুলোর সমাধানও রয়েছে। সাংবাদিকেরা সারাক্ষণ সমস্যাগুলোর পেছনে পড়ে না থেকে বরং এগুলো কী উপায়ে সমাধান করা হচ্ছে তা নিয়ে সংবাদ প্রচার করুক। সমস্যার সমাধানগুলো যেসব কারণে সফলভাবে কাজ করছে সেগুলোর প্রমাণ পাঠকের সামনে তুলে ধরুক। মানুষের সৃজনশীলতাকে সবার সামনে পরিচিত করাক।

ঢাকা শহরে গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় নির্বাচনী পোস্টার দিয়ে শহর ছেয়ে যাওয়ার অনেক সংবাদ আমরা দেখেছি। এ পোস্টারগুলো কী কী উপায়ে পরিবেশ দূষণ করতে পারে তা নিয়ে প্রচুর প্রতিবেদন, কলাম, রিপোর্ট গণমাধ্যমে এসেছে। কিন্তু এ সমস্যাটির চমৎকার একটি সমাধান করেছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন নামক একটি সংগঠন। তারা এ পোস্টারগুলোকে সংগ্রহ করে পথশিশুদের জন্য খাতা বানিয়েছে, ঠোঙা তৈরি করেছে। সংবাদপত্রে এ খবরটির গুরুত্ব পাওয়াটাই হচ্ছে সল্যুশনস জার্নালিজম। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, সাংবাদিককে ওই সংগঠন নিয়ে ভালো ভালো কথা বলতে হবে। তিনি বিদ্যমান সমস্যাটি সমাধানের এ সুন্দর উপায়টি বস্তুনিষ্ঠতার সাথে নিরপেক্ষদৃষ্টিতে তুলে ধরতে পারেন।

করোনাভাইরাসের এ দুর্বিপাকের সময়ে যখন আমরা প্রতিনিয়ত মৃত্যু সংবাদ শুনতে শুনতে ক্লান্ত, বিপর্যস্ত- তখন সল্যুশনস জার্নালিজম হতে পারে এ থেকে মুক্তির একটি উপায়। ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব সফলতা অর্জিত হয়েছে, সেগুলোর পেছনের কারণগুলো পাঠকের সামনে তুলে ধরলে তারা জানতে পারবেন কোন কোন উপায়, সতর্কতা অবলম্বন করলে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সম্ভব।

নিউজিল্যান্ডের মতো করোনাপ্রতিরোধে প্রায় সফল দেশগুলোর সফলতার পেছনের কারণ নিয়ে সংবাদ প্রচার করলে হয়তো অন্যান্য রাষ্ট্রও উক্ত পদ্ধতিগুলো গ্রহণ করতে পারে। রয়টার্স ইনস্টিটিউট-এর গবেষণায় মানুষের খবর না দেখার পেছনে আরেকটি কারণ হিসেবে, মানুষ কোনো খারাপ খবর শুনে সে প্রসঙ্গে ভালো কিছু করতে না পারার অপারগতাকে দেখানো হয়েছে। যদি করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সফল ঘটনাগুলো সংবাদে দেখানো হয়, তাহলে অন্যরা সেই পদ্ধতি অবলম্বন করে ভাইরাস প্রতিরোধে নিজ নিজ স্থান থেকে ভূমিকা রাখতে পারেন।

সল্যুশনস জার্নালিজম নেটওয়ার্ক-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ডেভিড ব্রনস্টেইন-এর ভাষায়:

করোনাভাইরাসের মতো আমাদের সমাজে আরও অনেক সমস্যা রয়েছে যেগুলোর তড়িৎ সমাধান দরকার। আর যেসকল আইডিয়া, মডেল এসব সমস্যাগুলো সমাধানে ফলপ্রসূ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে, সেসব আইডিয়া আর মডেলগুলো আমাদের সমাজ, ও সাংবাদিকতার এগিয়ে যাওয়ার পাথেয় হিসেবে বিবেচনা করে সেগুলোকে আমাদের সংবাদে নিয়মিত যথাযথভাবে ও বস্তুনিষ্ঠতার সাথে উপস্থাপন করাটা জরুরি।

লকডাউনে হাঁপিয়ে ওঠা মানুষগুলোর জন্য সল্যুশনস জার্নালিজম মানসিক অবসাদ ঘোচাতে দারুণ টোটকা হতে পারে। তবে এ ধরনের সাংবাদিকতার জন্য খারাপ সংবাদগুলোও এড়িয়ে যাওয়া চলবে না বা রাষ্ট্রের সফলতার দাবিকে বিনা প্রশ্নে মেনে নেওয়া যাবে না। সল্যুশনস জার্নালিজম-এর ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, এর মাধ্যমে যেন কোনো একক ব্যক্তিকে দেবতার আসনে বসিয়ে দেওয়া না হয়, বা এমন কোনো সমাধানের পথ দেখানো না হয় যেখানে প্রমাণের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। এমনকি শুধু শুধুই মানবিক আবেদন সৃষ্টি করার জন্যও সল্যুশনস জার্নালিজমকে ব্যবহার করা উচিত নয়।

This is a Bangla language article about how coronavirus pandemic affecting journalism around the world. Necessary references are hyperlinked.

Featured Image: AP Photo/Andrew Medichini

Related Articles

Exit mobile version