উইঘুর মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করতে চীনে ‘গোপন ক্যাম্প’ নির্মাণ

চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে কয়েক হাজার মুসলমানকে কোনো বিচার ছাড়াই আটক করে রেখেছে চীনা সরকার। যদিও দেশটির সরকার বরাবরের মতো তা অস্বীকার করে আসছে। সরকারের দাবি- 

সেখানে মানুষ স্বেচ্ছায় একটি বিশেষ ‘কারিগরি স্কুলে’ শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য গমন করছে। সেখানে তারা সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মীয় চরমপন্থা মোকাবিলা করার কৌশল রপ্ত করছে। 

কিন্তু ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি উক্ত স্কুল নামক ক্যাম্পটির উপর স্যাটেলাইট ও অন্যান্য মাধ্যমে তদন্ত চালাতে শুরু করে। সম্প্রতি তারা ক্যাম্পটি সম্পর্কে বেশ কিছু রহস্যময় ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে পেয়েছে। কী সেই রহস্য?  

২০১৫ সালের ১২ জুলাই স্যাটেলাইটে ধারণকৃত এক ছবিতে চীনের বহু পশ্চিমে একটি শূন্য মরুভূমি ও মরুদ্যান দেখতে পাওয়া যায়। সেখানে দেখা যায়, ধূসর বালু কণাগুলো বাতাসের সাথে খেলা করছে। তখনও ভাবা যায়নি, এই জায়গাটিতে মানবাধিকার লংঘনের মতো কোনো ঘটনা ঘটতে পারে।  

২০১৫ সাল ও ২০১৮ সালের তোলা ছবির মধ্যে দৃশ্যমান পার্থক্য; Image Source: bbc.com

কিন্তু এর মাত্র তিন বছরের মাথায়, গত ২২ এপ্রিল সেই একই জায়গা থেকে স্যাটেলাইটে ধারণকৃত এক ছবিতে নতুন কিছুর সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে দেখতে পাওয়া যায় এক বিশাল স্থাপনা, যার চারিদিক ঘিরে নিশ্চিত করা হয়েছে উন্নতমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। স্থাপনাটি ঘিরে রাখতে তৈরি করা হয়েছে ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বহির্মুখী নিরাপত্তা দেয়াল, যার পাহারার জন্য নির্মাণ করা রয়েছে আবার ১৬টি উঁচু গার্ড টাওয়ার।

এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বছরের শুরুর দিকে জিনজিয়াং প্রদেশের একদল মুসলমানকে নিয়ে এই ক্যাম্পটির কার্যক্রম শুরু হয়। সেই সূত্রের ভিত্তিতে, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রাপ্ত ছবি ও গুগল ম্যাপের সাহায্য নিয়ে সেখানে গবেষণা চালাতে শুরু করে বিবিসির একটি গবেষক দল। 

গবেষণায় দেখা যায়, চিহ্নিত জায়গাটি জিনজিয়াং প্রদেশের রাজধানী উরুমকি থেকে প্রায় এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত ছোট একটি শহর দাবাংচেনের পাশ ঘেঁষে গড়ে উঠেছে। এসব তথ্য উপাত্ত হাতে আসার পর বিবিসির একটি দল সেখানে সরেজমিনে তদন্ত করতে যায়। সেই বর্ণনা বিবিসিতে তুলে ধরেছেন গবেষক ও সাংবাদিক জন সুডওয়ার্থ। বাকি বর্ণনা তার মুখে থেকেই শোনা যাক।  

স্যাটেলাইটে ধারণকৃত গোপন ক্যাম্পের ছবি; Image Source: bbc.com

আমরা পথে পথে শ্বাসরুদ্ধকর পুলিশি তল্লাশি থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করতে থাকলাম। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না, তারা প্রত্যেক সাংবাদিককে তন্ন তন্ন করে সার্চ করলো। অবশেষে আমরা বিমানে করে উরুমকি বিমানবন্দরে অবতরণ করলাম। 

কিন্তু দাবাংচেন পৌঁছার সাথে সাথে কমপক্ষে পাঁচটি গাড়ি আমাদের অনুসরণ করতে শুরু করলো। গাড়ির মধ্যে রয়েছে ইউনিফর্ম পরিহিত ও সাদা পোশাকের একদল সশস্ত্র পুলিশ সদস্য। আর তাদের নির্দেশনায় রয়েছেন কয়েকজন পুলিশ অফিসার ও সরকারি কর্মকর্তা। 

আমরা সহসাই বুঝে গেলাম, ক্যাম্প পরিদর্শন ও আমাদের কাছে থাকা তথ্য-উপাত্ত যাচাই করার জন্য যে কয়দিন এখানে অবস্থান করতে হবে, সে কয়দিন কোনোভাবেই ভালো যাবে না। 

Image Source: bbc.com

প্রশস্ত রাস্তা দিয়ে দ্রুততার সাথে আমরা আমাদের গাড়ি চালাতে থাকলাম। কারণ, আমরা বুঝে গেছি তারা আমাদের দফায় দফায় গতিরোধ ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইবে।

যখন আর মাত্র কয়েকশ মিটার পথ বাকি, তখন সেই অনাকাঙ্ক্ষিত দৃশ্য ধীরে ধীরে আমাদের সামনে এসে হাজির হতে শুরু করলো। স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত প্রথম ছবিতে যেখানে আমরা ধুলোবালি পূর্ণ বিশাল শূন্য জায়গা পড়ে থাকতে দেখেছিলাম, সেই জায়গা এখন আর খালি নেই। সেখানে দীর্ঘ জায়গা জুড়ে এক বিশাল প্রকল্প গড়ে উঠেছে।  

জায়গাটি দেখে মনে হবে, মরুভূমির মধ্যে একটি ছোট শহর গড়ে উঠেছে। দীর্ঘকায় ক্রেনগুলো যেন আমাদের উপর দৈত্যের মতো ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছে। ধূসর রঙয়ের সারি সারি ভবন। প্রতিটি ভবন চার তলা বিশিষ্ট। 

বিবিসি সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধারণকৃত ছবি, এর থেকে আর সামনে অগ্রসর হতে পারেনি তারা; Image Source: bbc.com

আমরা দূর থেকেই ক্যামেরা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জায়গাটি ধারণ করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু একটু সামনে এগোতেই হঠাৎ করে পেছনে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা আমাদের ঘিরে ধরলেন।

তারা আমাদের গাড়ি থামিয়ে দিলেন। আমরা তাদের সাথে কথা বলতে চাইলে ধমকের সুরে আমাদের ক্যামেরা বন্ধ করতে বললেন। এবং আমাদের দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে বললেন। 

কিন্তু এর ফাঁকেই আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ধারণ করে ফেলতে সক্ষম হই। সেখানে এমন কিছু কর্মযজ্ঞ রয়েছে, যা বহির্বিশ্বের মানুষের কাছে এখনো সম্পূর্ণ অজানা। 

বিবিসি সাংবাদিকদের গাড়ি থামিয়ে দিয়েছে পুলিশ; Image Source: bbc.com

পৃথিবীর এই দুর্গম এলাকা থেকে গুগল আর্থ যে ছবি গ্রহণ করে, তা হয়তো বছর বা মাস শেষে আপডেট করা হয়।

তাই আমরা আরও অধিক তথ্য অনুসন্ধানের জন্য অন্য আরও কয়েকটি স্যাটেলাইটের উন্মুক্ত ছবি অনুসন্ধান করতে থাকলাম, যেমন আমরা ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি ‘সেন্টিনেল’ এর ডাটাবেজ ঘাঁটতে থাকলাম। সেখান থেকে আরও কিছু স্বচ্ছ ছবি পেলাম। যদিও সেসব ছবিরও রেজুলেশন খুব কম ছিল। কিন্তু আমরা যা খুঁজছিলাম, তা ঠিকই পেয়ে গেলাম।  

এই অক্টোবরে (২০১৮) সেন্টিনেল প্রদত্ত এক স্বচ্ছ ছবিতে দেখতে পেলাম, আমরা যা কল্পনা করেছিলাম, তার থেকেও বড় কিছু সেখানে আয়োজন করা হচ্ছে। আমরা ভেবেছিলাম, সেখানে একটি বড় আবদ্ধ ক্যাম্প গড়ে তোলা হচ্ছে। কিন্তু না, এবার আরও বড় কিছু দেখতে পেলাম, এককথায় এক মহাযজ্ঞের দুর্গ। 

স্পষ্টভাবে দেখতে পেলাম, এর গঠনপ্রকৃতি পুরোপুরি একটি বড়সড় কারাগারের মতো। বিশেষত, কয়েক বছর আগে জিনজিয়াং প্রদেশে নির্মিত কারাগারের সাথে এর রয়েছে অনেক মিল। এমন পরিস্থিতি দেখে আমরা আমাদের নজর দাবাংচেনে স্থির করে রাখলাম। স্যাটেলাইট আমাদের ক্রমাগত ভয়ঙ্কর সব তথ্য-উপাত্ত প্রদর্শন করতে লাগলো। 

Image Source: bbc.com

সেসব তথ্যের কথা কোনোভাবেই খোলাখুলি বলা সম্ভব নয়, কেউ যদি স্বেচ্ছায় আতঙ্কিত হতে চায়, তাকে হয়তো আমাদের এই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার দৃশ্যে স্বাগত জানানো যেতে পারে।

এরপর আমরা ঐ শহরের বিভিন্ন নম্বরে এলোমেলোভাবে ফোন করতে শুরু করলাম। উদ্দেশ্য বাড়তি কিছু তথ্য জেনে নেওয়া। তাদের কাছে আমরা জানতে চাইলাম-

১৬টি ওয়াচ টাওয়ার বিশিষ্ট বিশাল এই কমপ্লেক্সের কর্তৃপক্ষ আমাদের প্রামাণ্যচিত্র তৈরিতে এমন ক্ষিপ্তভাবে বাধা প্রদান করলো কেন?

এক হোটেলের মালিক আমাদের বলল-

এটি একটি পুনঃশিক্ষা প্রদান কেন্দ্র। 

পাশ থেকে আরেকজন দোকানদার তার সাথে ঐক্যমত পোষণ করে বলে উঠল-

হ্যাঁ, হ্যাঁ, এটি একটি পুনঃশিক্ষা প্রদান কেন্দ্র। এখানে এখন প্রায় ১০ হাজার মানুষ আছে। তাদের সকলের চিন্তাভাবনার মধ্যে কিছু না কিছু সমস্যা আছে।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত প্রামাণ্যচিত্রের একটি দৃশ্য; Image Source: bbc.com

বিশাল সুযোগ সুবিধাপূর্ণ এই কথিত স্কুলের পাঠ্যসূচী সাজানো হয়েছে একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। জিনজিয়াং প্রদেশ থেকে যেসব মানুষ এই কথিত স্কুলে যায়, তারা সবাই তাদের পূর্বের চিন্তাভাবনা ত্যাগ করে একটি নতুন চিন্তা-চেতনা নিয়ে বের হয়ে আসে।   

পূর্বেই বলা হয়েছে, চীনা কর্তৃপক্ষ এখানে যে মুসলমানদেরকে বিনা বিচারে আটকে রাখা হচ্ছে, তা বরাবর অস্বীকার করে আসছে। 

আসলে তারা ‘শিক্ষা’ শব্দটি কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে, কেননা এটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করে। তাদের এই ভয়াবহ পরিকল্পনার কথা বিশ্ববাসী জানতে পারলে প্রায় সকল আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে পাহাড়সম সমালোচনা আসতে শুরু করবে। তাই তারা এমন দ্বিমুখী ও প্রোপাগান্ডামূলক প্রচারণা চালিয়ে আসছে। মূলত এর মধ্য দিয়ে তারা ক্যাম্পের ভয়াবহতাকে দীর্ঘমেয়াদে টিকিয়ে রাখতে চায়। 

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ক্যাম্পটি নিয়ে একটি ঝকঝকে ও চমকপ্রদ প্রতিবেদন সম্প্রচার করা হয়েছে। সেখানে দেখানো হয়েছে, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ক্লাসরুমে ছাত্ররা মনোযোগ সহকারে ক্লাস করছে, নিজ উদ্যোগে বাড়ির কাজ করে আনছে ও নির্দিষ্ট পাঠ্যসূচী সুন্দরভাবে অধ্যয়ন করছে প্রভৃতি।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত প্রামাণ্যচিত্রের একটি দৃশ্য; Image Source: bbc.com

কিন্তু সেই প্রতিবেদনে এই শিক্ষার ভিত্তিমূল কিংবা কাদেরকে তারা ছাত্র হিসেবে বাছাই করছেন অথবা কতদিন মেয়াদে তাদেরকে এখানে শিক্ষা দেয়া হবে, তা কিছুই উল্লেখ করা হয়নি।

কিন্তু তারা প্রতিবেদনের মধ্যে একটি ‘ক্লু’ বা সংকেত ঠিকই দিয়ে ফেলেছে: প্রতিবেদনে যারা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তাদের কণ্ঠস্বর ছিল আতংকগ্রস্ত ও স্বীকারোক্তিমূলক। যেমন- একজন ক্যামেরার সামনে বলে ফেলেছে-

আমি আমার ভুলগুলো গভীরভাবে অনুধাবন করতে পেরেছি। আমি একজন ভালো মানুষ হওয়ার ব্যাপারে ‘শপথ’ গ্রহণ করেছি। আমি বাড়ি ফেরার পর তা বাস্তবায়ন করতে শুরু করবো। (এখানে শপথ শব্দটি ইঙ্গিতপূর্ণ) 

আমরা এসব সুযোগ সুবিধা প্রদানের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে যা বুঝতে পেরেছি, তা হলো- এদেরকে চীনা ভাষা শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও আইনি প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে দুর্ধর্ষ যোদ্ধায় পরিণত করা হবে, যাতে তারা নিজেদের ভাষা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ঐতিহ্য থেকে সরে আসতে পারে।  

এখন এসব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে একে আপনি স্কুল বলবেন নাকি ক্যাম্প বলবেন, তা আপনার ব্যাপার। তবে যা-ই বলুন না কেন, উপলক্ষ্য সেই একই।

পুলিশের এমন অবস্থান কীসের ইঙ্গিত প্রদান করে? Image Source: bbc.com

প্রামাণ্যচিত্রে দেখা যায়, সবার জন্য একটি নির্দিষ্ট ড্রেস কোড আছে। সেই অনুসারে কোনো নারী শিক্ষার্থী মাথায় স্কার্ফ পরিধান করতে পারবে না।

জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় ১ কোটি উইঘুর মুসলিম রয়েছে। তারা সকলে তুর্কি ভাষায় কথা বলে। জীবনযাপনে তাদের সাথে চীনের সংখ্যাগরিষ্ঠ হান জনগোষ্ঠীর চেয়ে মধ্য এশিয়ার মুসলিম প্রধান জনগোষ্ঠীগুলোর সাথে অধিক মিল পাওয়া যায়। 

দক্ষিণের কাশগর শহরের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়, এই শহরটির ভৌগোলিক অবস্থা বিবেচনায় বেইজিংয়ের চেয়ে বাগদাদের সাথে বেশি মিল পাওয়া যায়। সাংস্কৃতিক মিলের দিক থেকেও শহরটি বাগদাদের কাছাকাছি। পাশাপাশি, ইতিহাসের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে উইঘুর মুসলিমরা চীনা শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা ও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। ফলে এই আধুনিক যুগে এসেও উইঘুর মুসলিমদের সাথে চীনের মূল কর্তৃপক্ষের একটি দূরত্বমূলক সম্পর্ক অব্যাহত আছে। 

চীনে কমিউনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠার পূর্বে একবার জিনজিয়াং চীনের হাত থেকে মুক্ত হয়ে দীর্ঘদিন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে টিকে ছিল। এখনো মাঝে মধ্যে তাদের মধ্যে সেই স্বাধীনতাকামী ভাব দেখা যায়।  

কাশগর শহর; Image Source: wikipedia.org

বিভিন্ন খনিজ সম্পদ, বিশেষত তেল ও গ্যাসের কারণে চীন এই অঞ্চলে ব্যাপক বিনিয়োগ করে থাকে, যা চীনের দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে বড় ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে উইঘুরদের মধ্যে তীব্র বিতৃষ্ণা ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে সম্প্রতি সরকারি খাতে উইঘুরদের জমাকৃত করের পরিমাণও ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

যদিও চীনা সরকার এসব সমালোচনার জবাবে বরাবর বলে আসছে যে জিনজিয়াং অধিবাসীদের জীবনযাত্রার মান অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে জিনজিয়াং প্রদেশে দাঙ্গা, অন্তঃসাম্প্রদায়িক সংঘাত ও পুলিশি সহায়তায় পূর্ব পরিকল্পিত হামলায় অন্তত কয়েকশ’ মানুষ প্রাণ হারায়। এতে উইঘুরদের মধ্যেও কিছু উগ্রবাদ ছড়িয়ে পড়ে।  

২০১৩ সালে বেইজিংয়ের তিয়েন আমেন স্কয়ারে এক অতর্কিত হামলায় দুজন পথচারী নিহত হয়। উক্ত হামলায় তিনজন উইঘুর বিদ্রোহী জড়িত ছিল বলে অভিযোগ করা হয়। ঘটনাটি ছোট হলেও চীনা কর্তৃপক্ষ একে খুব বড় সঙ্কট আকারে দেখতে শুরু করে।

জিনজিয়াং প্রদেশে সার্বক্ষণিক মোতায়েন থাকে অতিরিক্ত পুলিশ; Image Source: bbc.com

পরের বছর জিনজিয়াং প্রদেশ থেকে প্রায় ২,০০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কুমিং শহরের ট্রেন স্টেশনে একটি হামলার ঘটনা ঘটে। সেখানে ছুরিকাঘাতে ৩১ জন মানুষের মৃত্যু হয়। এর সাথেও উইঘুরদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে। 

তারপর থেকে জিনজিয়াং প্রদেশের উপর চীনা সরকার কড়া নজরদারি আরোপ করে। বিভিন্ন বিধি-নিষেধ ও অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়ন করা হয়। উইঘুরদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যাপক পরিসরে ক্যামেরা ও উন্নত প্রযুক্তি ডিভাইস শহরের বিভিন্ন স্থানে লাগিয়ে দেয়া হয়। এ যেন নিজ দেশের মানুষের বিরুদ্ধেই যুদ্ধের সর্বাত্মক প্রস্তুতি। 

সর্বশেষ উইঘুরদের জন্য নির্মিত এই গোপন ক্যাম্প কি তাহলে তাদের নির্মূল করার শেষ পদক্ষেপ? 

অনুসন্ধানে এমন বাস্তব ঘটনাও পাওয়া গেল- ২০০২ সালে জিনজিয়াং প্রদেশ থেকে রেইলা আবু লাইতি নামের এক তরুণী যুক্তরাজ্যে পড়ালেখা করতে যান। সেখানে তিনি ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করার জন্য এক ব্রিটিশ পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। গত গ্রীষ্মের ছুটিতে তার মা তার সাথে দেখা করার জন্য লন্ডনে আসেন।

রেইলা আবু লাইতি; Image Source: bbc.com

তার মায়ের নাম জিমুক্সুনিয়ার পিডা। বয়স ৬৬ বছর। তিনি পেশায় একজন প্রকৌশলী। তিনি চীনের একটি রাষ্ট্রীয় কোম্পানিতে দীর্ঘদিন যাবত চাকরি করছেন। বেড়ানো শেষে গত ২ জুলাই তিনি ফের জিনজিয়াং এ ফিরে যান।

তিনি দেশে ফিরে গেলে মেয়ে একদিন তাকে ফোন করেন। মা প্রথমে তাকে জানান, তিনি নিরাপদেই দেশে ফিরেছেন। কিন্তু তারপর যা বলতে শুরু করেন, তা ছিল রীতিমতো ভয়ঙ্কর কিন্তু সংক্ষিপ্ত। রেইলা বলেন,  

এরপর তিনি আমাকে বলেন যে, পুলিশ আমাদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে। আমি বুঝতে পারি এটি একটি পূর্ব পরিকল্পিত তল্লাশি, আর এর উদ্দেশ্য হলাম আমি। পুলিশ মায়ের কাছে আমার সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য চাইলো। যেমন যুক্তরাজ্যে আমার বসবাসের ঠিকানা, মায়ের ব্রিটিশ পাসপোর্ট, আমার অধ্যয়নরত কোর্সের নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রভৃতি। এই বর্ণনা দেয়ার পর মা কল কেটে দিলেন।

রেইলা আবু লাইতির মা জিমুক্সুনিয়ার পিডা; Image Source: bbc.com

রেইলা জানান, তারপর চীনে ব্যবহৃত একটি ম্যাসেজিং অ্যাপ দিয়ে তার মা তাকে একটি অডিও ম্যাসেজ পাঠান। সেখানে তার মা বলেন-

আমাকে আর কল দিও না! আমাকে আর কোনোদিন কল দেবে না!    

এটিই ছিল রেইলার কাছে মায়ের শেষ স্মৃতি। তিনি বুঝতে পারেন তার মাকে সেই ভয়ঙ্কর ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি বলেন,

আমার মাকে কোনো কারণ ছাড়াই আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি যতটুকু জানি, চীন সরকার উইঘুরদের আত্মপরিচয় দুনিয়া থেকে মুছে দিতে চায়।

তাহলে কি রেইলার এই আশঙ্কার দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে চীনা সরকার?

This is a Bangla article. It's about the China's hidden camps

One reference is hyperlinked inside the article and other are mentioned below-

1. China's hidden camps, BBC

2. One million Muslim Uighurs held in secret China camps: UN panel, Al Jazeera

3. U.N. says it has credible reports that China holds million Uighurs in secret camps, Reuters

4. The Guardian view on Xinjiang: China’s secret camps are at last in the spotlight, The Guardian

Featured image: bbc.co.uk

Related Articles

Exit mobile version