কোটা সংস্কার আন্দোলন বা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় ঘটনার বিবরণ নিয়ে ফেসবুকে লাইভ সম্প্রচার করতে দেখা গেছে অনেককেই। কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে মানুষ আজকাল সাথে সাথে মোবাইলে অকুস্থলের ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছে। প্রিয়জনের জন্মদিন উদযাপনের ভিডিও অনেক সময়ই ফেসবুকে শেয়ার করে মানুষ। অথবা দেশের কোথায় কোন উন্নয়ন কাজ হচ্ছে বা কোথায় অনিয়ম জেঁকে বসেছে, এসব নিয়েও ফেসবুক তথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ সম্প্রচারের মাধ্যমে অনেকেই এখন আমাদের পরিচিতমুখ হয়ে উঠছেন।
এই ঘটনাগুলোর পেছনে যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তা হলো স্মার্টফোন তথা মোবাইল। মোবাইলের কারণে আজকাল সবাই তার চারপাশের সংবাদ অন্যদের সাথে শেয়ার করার সুযোগ পাচ্ছেন। অনেকেই নিজের অজান্তেই একজন সাংবাদিকের ভূমিকা পালন করছেন। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আপনিও হয়ে উঠতে পারেন একজন সফল মোবাইল জার্নালিস্ট। আজকের আয়োজন মোবাইল জার্নালিজমের আদ্যোপান্ত নিয়ে।
মোবাইল জার্নালিজম কী?
মোবাইল জার্নালিজম (MoJo: Mobile Journalism/Mobile Journalist) আসলে কী? সহজ কথায়, মোবাইল ফোন তথা স্মার্টফোন দিয়ে যে সাংবাদিকতা করা হয় তাকেই মোবাইল জার্নালিজম বলে। অর্থাৎ আপনি আপনার আশপাশে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা আপনার মোবাইল ফোন দিয়ে ধারণ করে, সম্পাদনার মাধ্যমে সংবাদ উপযোগী করে তুলতে পারলেই সেটি হবে মোবাইল জার্নালিজম। কিন্তু বর্তমানে এই ধারণায় কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। মোবাইল শব্দটির অর্থ হচ্ছে সচল বা চলমান। তাই মোবাইল জার্নালিজম বিশেষজ্ঞদের অনেকের মতে, এই ধরনের সাংবাদিকতা করার জন্য কেবল মোবাইলই ব্যবহার করতে হবে ব্যাপারটা মোটেও তা-ই নয়। বিবিসি রেডিও ফাইভ লাইভ-এর মোবাইল জার্নালিস্ট নিক গারনেটের মতে,
লোকজন এই ভেবে ভুল করে যে মোবাইল জার্নালিজমের মানেই হচ্ছে মোবাইল ব্যবহার করে সাংবাদিকতা করা। ব্যাপারটা মোটেও এরকম নয়। আসলে মূলত মোবাইল জার্নালিজম হচ্ছে রিপোর্টারের মোবাইল (চলমান অর্থে) হওয়া।
অর্থাৎ গারনেটের মতে, একজন রিপোর্টার যখন খুব সহজে যেকোনো স্থানে অবস্থান করে, যেকোনো অবস্থায়, যেকোনো বিষয়ের খবরাখবর তৎক্ষণাৎ অডিয়েন্সের সাথে শেয়ার করতে পারবেন, সেটাই হবে মোবাইল জার্নালিজম। চিরায়ত পদ্ধতিতে সাংবাদিকতা করতে হলে একজন রিপোর্টারকে অনেক উপকরণ, যেমন- ভারী ক্যামেরা, বুম, সরাসরি সম্প্রচারের সরঞ্জাম এবং এগুলো পরিচালনার জন্য বাড়তি ক্রু বহন করতে হয়। ফলে তিনি চাইলেই যখন ইচ্ছে তখনই সংবাদ দেওয়া শুরু করতে পারেন না। কিন্তু একজন মোবাইল জার্নালিস্টের এসবের বালাই নেই। তিনি ইচ্ছে করলেই একা কাজ করতে পারেন। সরাসরি সম্প্রচার করার জন্য তাকে বিশাল ও জটিল আউটসাইড ব্রডকাস্টিং ভ্যান (OBV) ব্যবহার করতে হয় না, বরং দ্রুতগতির ইন্টারনেট কানেকশন ব্যবহার করে তিনি শুধু তার ছোট্ট স্মার্টফোনটি দিয়েই দর্শকের উদ্দেশে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারেন। রিয়েল-টাইম সাংবাদিকতার জন্য বর্তমান বিশ্বে মোবাইল জার্নালিজম একটি অনন্য মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
একজন মোবাইল জার্নালিস্ট সহজে বহনযোগ্য অন্য কোনো ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করতে পারেন মোজো করার জন্য। যেমন ধরুন, ছবি তোলার জন্য তিনি স্মার্টফোনের বদলে ডিএসএলআর ক্যামেরাও ব্যবহার করতে পারেন, কারণ এই ক্যামেরা অনায়াসে যত্রতত্র ব্যবহার করা যায়। তবে মোবাইল সাংবাদিকতায় মূলত প্রাইমারি ডিভাইস হিসেবে স্মার্টফোন ব্যবহার করা হয়। ছবি তোলা, ছবি এডিটিং, ভিডিও করা, মানুষের ইন্টারভিউ নেয়া এসব কাজের জন্য আধুনিক স্মার্টফোনগুলো বেশ পারদর্শী। অবশ্য অনেক মোবাইল জার্নালিস্ট ল্যাপটপ ব্যবহার করেন তার সংবাদটি সম্পাদনা করার জন্য। কিন্তু এতকিছু সত্ত্বেও মোবাইল জার্নালিজমের মূল কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে একটি স্মার্টফোন।
মোবাইল জার্নালিজমের উদাহরণ
ফটোগ্রাফি: ২০০৭ সালে টাইম ম্যাগাজিন ‘Firsts’ নামের ৪৬টি ছবির একটি সিরিজ প্রকাশ করে। এই ছবিগুলো আইফোনে তোলা হয়েছিল।
রেডিও: প্রায় এক দশক ধরে রেডিও জার্নালিস্টরা তাদের রেকর্ডিং ডিভাইস হিসেবে স্মার্টফোন ব্যবহার করে আসছেন। ২০১১ সালের দিকে বিভিন্নধরণের অডিও এডিটিং অ্যাপ বাজারে আসায় অনেক রেডিও জার্নালিস্ট তাদের মূল রেকর্ডিং ডিভাইস হিসেবে স্মার্টফোন ব্যবহার করা শুরু করেন।
টেলিভিশন: স্মার্টফোনের উন্নত ক্যামেরা ও বিভিন্ন ফিচার সম্বলিত অ্যাপলিকেশন্সের দরুন এখন অনেক শীর্ষস্থানীয় নিউজ এজেন্সির সাংবাদিকেরা তাদের রিপোর্টিং-এর সম্পূর্ণ কাজ মোবাইলে করে থাকেন। এছাড়া অনেক সাংবাদিক মোবাইলে রিপোর্ট ধারণ করে তা পরবর্তী সময়ে কম্পিউটারের সাহায্যে এডিট করেন।
মাল্টি-প্লাটফর্ম: বিবিসি রিপোর্টার নিক গারনেট ২০১৫ সালে নেপালের ভূমিকম্প কাভার করার জন্য মূলধারার সরঞ্জাম ব্যবহারের পাশাপাশি স্মার্টফোনও ব্যবহার করেছেন। ২০১৭ সালের দিকে আইরিশ ব্রডকাস্টার RTE ‘মোবাইল শর্টস’ নাম দিয়ে সোশাল মিডিয়া ও টেলিভিশনের জন্য স্মার্টফোন কন্টেন্ট বানাতে শুরু করে। এই ধরণের কন্টেন্টগুলোতে মূলধারার নিউজ স্ট্রাকচারের বদলে সাধারণ মানুষের আগ্রহকে (Human Interests) বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। ফলে দেখা যায়, অনেক সময় নিউজরুম টিভি স্টোরি থেকে মানুষের এসব কন্টেন্টে বেশি আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
ভার্টিকাল স্টোরিটেলিং: সোশাল মিডিয়া বিশেষত ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট ইত্যাদির জন্য আজকাল প্রায় পোট্রের্ট মোডে কন্টেন্ট বানানো হয়। ‘হ্যাশট্যাগ আওয়ার স্টোরিজ’-এর সেলফি জার্নালিজম, ভার্টিকাল স্টোরিটেলিং-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
মোবাইল জার্নালিজমের একটি দারুণ উদাহরণ হতে পারে এই ফিচারটি। এই ফিচারটি লেখক তার স্মার্টফোন দিয়ে লিখেছেন। ফিচারের সম্পাদনার কাজটিও তিনি অনেকাংশেই স্মার্টফোন দিয়ে সম্পন্ন করেছেন। ফিচারটি মূল সাইটে আপলোড করার সময় তিনি কম্পিউটার ব্যবহার করেছেন। এক্ষেত্রে মোবাইল ও কম্পিউটার, দুটোই সহজে বহনযোগ্য হওয়ায় তিনি যেমন লেখাটি বাসায় শুয়েবসে লিখতে পেরেছেন, তেমনি আবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে লেখার সুযোগ পেয়েছেন। এই লেখার মন্তব্য অংশে তিনি ইচ্ছে করলে যেকোনো পাঠকের মন্তব্যের প্রতিউত্তর দিতে পারেন। আর এই ধরণের প্রত্যেকটি কাজই মোবাইল জার্নালিজমের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচিত।
বর্তমানে প্রায় সব মিডিয়া হাউজ, নিউজ এজেন্সি মোবাইল জার্নালিজম নিয়ে কাজ করছে। বিবিসি, সিএনএন-এর মতো শীর্ষস্থানীয় নিউজ এজেন্সিগুলোর মোবাইল জার্নালিজম নিয়ে আলাদা ডিপার্টমেন্ট আছে। এসব ডিপার্টমেন্টে মোবাইল জার্নালিজম নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত মোবাইল জার্নালিজমকে আরও সহজ করে তোলার জন্য নতুন নতুন অ্যাপলিকেশন্স তৈরি হচ্ছে। বিশেষত সোশাল মিডিয়ার অডিয়েন্সদেরকে এঙ্গেজ করার জন্য এখন মোবাইল জার্নালিজম একটি অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।
মোবাইল বনাম টিভি ক্যামেরা
Closer to the Story? Accessibility and mobile journalism শিরোনামে পানু কারহুনেন নামক একজন ফিনিশ সাংবাদিক রয়টার্স ইনস্টিটিউটের জন্য একটি রিসার্চ পেপার প্রকাশ করেন। এই পেপারে তিনি মাঠপর্যায়ে পর্যবেক্ষণ করে দেখান কিভাবে মোবাইল জার্নালিজম অভিগম্যতার (Accessibility) ওপর প্রভাব ফেলে।
মোবাইল জার্নালিজমের মাধ্যমে সাংবাদিকরা ঘটনা বা সাবজেক্টের খুব কাছে চলে যেতে পারেন। কারহুনেন এগারজন মোবাইল জার্নালিস্টের কাছ থেকে ইন্টারভিউ নেন। তারা বলেছেন, যেসব জায়গায় টিভি ক্যামেরা ও একাধিক ক্রু নিয়ে যাওয়া অসম্ভব সেসব জায়গাতেও তারা স্টোরি কাভার করেছেন স্মার্টফোন দিয়ে। বেশিরভাগ মোবাইল জার্নালিস্টের মতে, মানুষ টিভি ক্যামেরার চেয়ে মোবাইল ক্যামেরায় কথা বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
এই দাবি প্রমাণ করতে কারহুনেন একটি পরীক্ষার আয়োজন করেন। ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকির একটি শপিং সেন্টারে একজন মোবাইল জার্নালিস্ট ও দুইজন টিভি ক্যামেরা ক্রু ৪০০ জন মানুষের সাক্ষাৎকার (vox pop) নেন। এর মধ্যে ২০০ জনের ইন্টারভিউ নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন একজন মোবাইল জার্নালিস্ট। আর বাকি ২০০ জনের ইন্টারভিউর জন্য একটি টিভি ক্যামেরা ও দুজন টিভি ক্রুকে ব্যবহার করা হয়েছিল। ফলাফল হলো চমকপ্রদ। দেখা গেল, ৩৩.৫ শতাংশ মানুষ মোবাইল জার্নালিস্টকে ইন্টারভিউ দিয়েছেন যেখানে মাত্র ২১ শতাংশ মানুষ টিভি ক্যামেরায় কথা বলেছেন।
পরীক্ষাটি আপনারাও দেখে নিতে পারেন।
কারহুনেন তার গবেষণাপত্রে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে,
স্টোরি কভারিং-এর ক্ষেত্রে অনেক সময়ই গতানুগতিক টিভি সাংবাদিকতার চেয়ে মোবাইল জার্নালিজম বেশি সুযোগ পেয়ে থাকে। কেবল একটি ফোন নিয়ে একা কাজ করার সুবাদে মোবাইল জার্নালিস্টরা প্রায়শই স্টোরি ও সাবজেক্টের অনেক কাছাকাছি চলে যেতে পারেন।
অবশ্য এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, টিভি ক্যামেরার চেয়ে অনেক অংশেই প্রযুক্তিগতভাবে স্মার্টফোন পিছিয়ে। কিন্তু বর্তমান সোশাল মিডিয়ার বিস্তারের যুগে মোবাইল জার্নালিজম সাংবাদিকতা দুনিয়ার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।
মোজো টিপস
বর্তমান সময়ে প্রায় সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন। তাই যে কেউ তার মোবাইল ফোন দিয়ে যেকোনো ঘটনা ছবি, ভিডিও বা অডিওর মাধ্যমে সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতুলতা ও সহজলভ্যতার কারণে যেকোনো ব্যক্তিই যেকোনো ঘটনা সবার সামনে তুলে ধরতে পারেন। কিন্তু একজন পেশাদার মোবাইল সাংবাদিককে তার কাজে আরেকটু সচেতন হতে হয় কারণ তা না হলে বাকি সবার সাথে তার আর কোনো পার্থক্য থাকে না। মূলধারার একজন সাংবাদিককে শুধু খবর সংগ্রহের কাজে পারদর্শী হলেই চলে, কারণ সংবাদ সম্পাদনা বা সেটা পাঠানোর দায়িত্ব কখনো কখনো অন্য কেউ পালন করে থাকেন। কিন্তু একজন মোজো হবেন ‘জ্যাক অভ অল ট্রেডস’, মানে তিনি যেমন খবর সংগ্রহের ক্ষেত্রে সাংবাদিকতার সর্বোচ্চ মানদণ্ড বজায় রাখার চেষ্টা করবেন, তেমনি মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারের প্রযুক্তিগত দিকগুলোও থাকবে তার নখদর্পণে। কারণ মোবাইল জার্নালিস্টরা কাজ করেন ‘লোন উলফ’ হিসেবে, সংবাদ ধারণ করা থেকে শুরু করে তা সম্পাদনা করে নিউজ রুম অব্দি পাঠানোর সব কাজ তাকে একা করতে হয়, এক্ষেত্রে দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির হাত লাগানোর তেমন একটা সুযোগ নেই।
মোবাইল জার্নালিজম ব্যক্তিত্ব ইভো বরাম তার ব্লগে কাজ শুরু করার পূর্ব-প্রয়োজনীয় কিছু টিপস দিয়েছেন। এটি SCRAP নামে পরিচিত।
গল্প (Story): কী নিয়ে বলবেন, কেন বলবেন আর কাদের উদ্দেশে বলবেন।
চরিত্র (Character): কাদের কাছ থেকে ইন্টারভিউ নেবেন এবং সম্পাদনার সময় কোন জায়গায় ইন্টারভিউগুলো ব্যবহার করবেন।
বিশ্লেষণ (Resolution): কীভাবে মোজোটি সম্পাদনা করবেন, স্টোরির সমাপ্তি কী হবে।
বাস্তবতা (Actuality): কী বা কতটুকু রেকর্ড করবেন এবং এডিটিংয়ের জন্য আর কী কী লাগবে।
প্রোডাকশন (Production): মাঠপর্যায়ে ও সম্পাদনার কাজ করার জন্য কী কী সরঞ্জাম প্রয়োজন হবে।
পূর্বপ্রস্তুতি
স্মার্টফোন দিয়ে কাজ শুরু করার আগে কিছু পূর্বপ্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।
ব্যাটারির চার্জ: মোবাইলে কাজ করার সবচেয়ে বড় অসুবিধাগুলোর একটি হচ্ছে এর চার্জ দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া। কাজ করার মাঝখানে ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে গিয়ে ফোন বন্ধ হয়ে গেলে আপনার নিশ্চয় ভালো লাগবে না। তাই মোবাইল জার্নালিজম করার আগে ফোন ভালোভাবে চার্জ দিয়ে নিন। এছাড়া আপনি একটি পাওয়ার ব্যাংকও সাথে রাখতে পারেন।
স্টোরেজ: স্মার্টফোনগুলোতে নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত আপনি ভিডিও রেকর্ডিং বা ছবি তুলতে পারবেন। তাই কখনো কখনো মোবাইলের ডিফল্ট স্টোরেজে আপনার জায়গা সংকুলান না-ও হতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনাকে বাড়তি জায়গা মানে এক্সটার্নাল মেমরি কার্ড সঙ্গে রাখতে হবে। আর ঘর থেকে বের হওয়ার আগে আপনার ফোনের সবধরনের মেমরি ক্লিয়ার করে নিন।
লেন্স পরিস্কার: স্মার্টফোনের লেন্সের জন্য কোনো আবরণ না থাকায় এটি পরিবেশের ধুলাবালির সংস্পর্শে এসে অস্বচ্ছ হয়ে যেতে পারে। তাই ছবি তোলা বা ভিডিও রেকর্ডিং শুরু করার আগে লেন্সটি পরিস্কার করে নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে আপনি আপনার শার্ট বা টিস্যু ব্যবহার করতে পারেন।
এয়ারপ্লেন মোড: অডিও রেকর্ড বা ভিডিও গ্রহণের সময় যদি ফোনে কোনো কল আসে তাহলে চলমান ফাইলটি হারিয়ে যেতে পারে। তাই কাজ শুরুর আগে সবসময় ফোনের এয়ারপ্লেন/ফ্লাইট মোড চালু করে দিতে হবে।
বাড়তি ফোন: পারলে আরেকটি স্মার্টফোন সঙ্গে রাখুন। কারণ স্মার্টফোনে যেকোনো সময় প্রযুক্তিগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে। আবার অনেক সময় দীর্ঘক্ষণ ধরে স্মার্টফোনে কাজ করলে এটি গরম হয়ে যায়। তাই এসব অসুবিধামুক্ত থাকার জন্য আরেকটি স্মার্টফোন সাথে রাখতেই পারেন।
ডেটা প্যাক: যেহেতু আমাদের দেশে ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক এখনো সব জায়গায় খুব একটা সহজলভ্য নয় তাই আপনাকে অনেকক্ষেত্রে মোবাইল ইন্টারনেট ডেটা প্যাক ব্যবহার করতে হবে। কখনো কখনো অকুস্থল থেকে সরাসরি সম্প্রচারের প্রযোজন হতে পারে। তাই আগেভাগেই ডেটা প্যাক ক্রয় করে রাখা উচিত।
এডিটিং অ্যাপলিকেশন্স: ছবি বলুন বা অডিও রেকর্ডিং, সবকিছুরই সম্পাদনা করতে হয়। ছবিতে কখনো ইফেক্ট ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে, ভিডিওতে সাবটাইটেল লাগতে পারে, অডিও কাটছাঁট করতে হতে পারে। তাই এসবের জন্য আগেভাগেই বিভিন্ন এডিটিং অ্যাপ্লিকেশন ফোনে ইনস্টল করে রাখতে হবে এবং এগুলোর কাজ সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখতে হবে।
ছবি তোলা
ক্যামেরা: ছবি তোলার জন্য আপনি স্মার্টফোনের ডিফল্ট ক্যামেরা ব্যবহার করতে পারেন। তবে বর্তমানে বাড়তি সুবিধাযুক্ত আরও অনেক থার্ড পার্টি ক্যামেরা অ্যাপ রয়েছে যেগুলো দিয়ে বেশ ভালো মানের ছবি তোলা যায়। প্রয়োজনে এসব অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।
আলোর ব্যবহার: সবসময় প্রাকৃতিক আলো ব্যবহারের চেষ্টা করুন। স্মার্টফোনে আজকাল উন্নতমানের ফ্ল্যাশলাইটের ব্যবস্থা রয়েছে কিন্তু এই ফ্ল্যাশলাইট ব্যাটারির ক্ষমতা খুব দ্রুত নিঃশেষ করে দেয়। সম্ভব হলে অন্য যেকোনো উৎস থেকে আলো ব্যবহার করুন।
ফোকাস: ক্যামেরার ফোকাস ও এক্সপোজার ঠিক করে নিন।
গ্রিড: গ্রিডের মাধ্যমে রুল অভ থার্ড ব্যবহার করে দৃষ্টিনন্দন ছবি তোলা যায়। এছাড়া ফ্রেম সোজা রাখতে গ্রিড বেশ সাহায্য করে।
নো ডিজিটাল জুম: মোবাইলের জুম ব্যবহার করলে ছবির মান কমে যায়। তাই জুম ব্যবহার না করে সাবজেক্টের কাছে গিয়ে ছবি তোলার চেষ্টা করুন। একই নিয়ম ভিডিওর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
ট্রাইপড বা স্ট্যান্ডের ব্যবহার: ছবি তোলার সময় হাত কাঁপলে সেই ছবি ভালো ওঠে না। কোনো স্ট্যান্ড বা ট্রাইপডের ওপর ফোন রেখে ছবি তোলা উচিত।
প্যানোরামা: বিস্তৃত এলাকা ফ্রেমের মধ্যে আনতে প্যানোরামা মোডে ছবি তুলতে পারেন।
ভিডিও ধারণ
রেজলুশন: আমরা সাধারণত স্মার্টফোনে ভিডিও ধারণ করার সময় সর্বোচ্চ রেজলুশনে তথা ১০৮০ পিক্সেলে ধারণ করি। এতে ফাইলের আকৃতিও অনেক বড় হয়ে যায়। কিন্তু মোবাইল জার্নালিজমের ক্ষেত্রে এত বড় ফাইল আপলোড করা বা নিউজ রুমে পাঠানো বেশ ঝক্কির কাজ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এক্ষেত্রে ভিডিও ধারণ করার আগে সেটিংস অপশন থেকে রেজলুশন ৭২০ পিক্সেল সিলেক্ট করতে হবে।
ফ্রেম সাইজ: ফ্রেম সাইজ নির্ভর করবে আপনি কোন মাধ্যমের জন্য মোজো করছেন। টেলিভিশনের জন্য হলে সাধারণত ল্যান্ডস্কেপ মোডে ১৬:৯ অনুপাতে শুট করতে হয়। তবে সোশাল মিডিয়ায় ব্যবহারের জন্য হলে পোট্রের্ট মোডও গ্রহণযোগ্য।
ভিডিওর অডিও: স্মার্টফোনে ভিডিও ধারণ করার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ঠিকঠাকমতো অডিও পাওয়া। আজকাল অনেক ধরনের মাইক্রোফোন পাওয়া যায় যেগুলো আপনি স্মার্টফোনের সাথে কানেক্ট করে খুব ভালো মানের অডিও পেতে পারেন। তবে বিকল্প হিসেবে হেডফোনের মাইক্রোফোন ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া ভিডিওতে ভালো অডিও পেতে হলে আপনি আরও কয়েকটি কাজ করতে পারেন। যেমন- সাবজেক্টের কাছাকাছি গিয়ে ভিডিও ধারণ করতে পারেন, নিরিবিলি স্থানে ইন্টারভিউ নিতে পারেন, বক্তাকে অনুরোধ করতে পারেন একটু উচ্চস্বরে কথা বলতে।
কম্পনমুক্ত শট: ভিডিও ধারণ করার জন্য ট্রাইপড ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে হাতজোড়া যদি বুকের কাছে এনে শুট করতে পারেন তাহলে ভিডিও কম কাঁপবে।
ভিডিওর দৈর্ঘ্য: সাধারণত প্রতিটি শট ১০-১৫ সেকেন্ড করে নেওয়া হয়। কারণ এতে করে পরে সম্পাদনা করতে সুবিধা হয়। আর তাছাড়া একটি শট পর্দায় বেশিক্ষণ থাকা উচিত নয়।
শটের বৈচিত্র্য: ওয়াইড শট, লং শট, মিডিয়ায় শট, ক্লোজআপ শটের ব্যবহার আপনার ভিডিওতে বৈচিত্র্য আনবে। তাছাড়া প্রয়োজনে আপনি পিটিসি (Piece to Camera: রিপোর্টারের ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলা) যোগ করতে পারেন আপনার ভিডিওতে।
আইলাইন: ভিডিওতে কথা বলার সময় ফোনের স্ক্রিনের দিকে নয়, বরং লেন্সের দিকে তাকান। এতে করে আপনার আইলাইন (Eyeline) ঠিক থাকবে।
হাতের অবস্থান: অনেক সময় ছবি তোলা বা ভিডিও করার পর আমরা দেখি আমাদের হাত ফ্রেমের মধ্যে ঢুকে গেছে। তাই ভিডিও করার সময় হাতের অবস্থান সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।
আলোর ব্যবহার, জুমিং-এর ক্ষেত্রে ছবি তোলার নিয়মগুলো প্রযোজ্য।
অডিও ধারণ
মাইক্রোফোন: আপনার স্মার্টফোনের মাইক্রোফোনের অবস্থান সম্পর্কে ধারণা নিন। অডিও রেকর্ড করার সময় যদি হাতের আড়ালে মাইক্রোফোন ঢাকা পড়ে যায় তাহলে কথা ঠিকমতো শোনা যাবে না।
দূরত্ব: যদি মাইক্রোফোন ছাড়া অডিও রেকর্ড করতে হয় তাহলে বক্তার মুখের চার থেকে ছয় ইঞ্চি দূরে ফোনটি ধরতে হবে।
সম্পাদনা
ক) ভিডিওর ক্ষেত্রে সহজ ভাষা ব্যবহার করুন। ছোট ছোট শব্দ ও অ্যাক্টিভ ভয়েস ব্যবহার করা উচিত।
খ) অনেক সময় ভিডিওর ভাব প্রকাশ করার জন্য ইমোটিকন ব্যবহারের কথা বলা হয়। তবে অপ্রয়োজনে ইমোটিকন না ব্যবহার করাই শ্রেয়।
গ) মোজো ভিডিওগুলো খুব বেশি লম্বা না করাই উত্তম। দেড় থেকে দুমিনিটেই ফুটিয়ে তুলতে হবে পুরো গল্প। এখানেই মোজোর সার্থকতা।
ঘ) ছবি থেকে অপ্রয়োজনীয় অংশ ক্রপ করে কেটে বাদ দিতে হবে। যদি এক্ষেত্রে ছবির পিক্সেল ডেনসিটি কমে যায় তবে না কাটা উচিত। তখন এডিট করে ছবির মূল সাবজেক্টের ওপর ফোকাস করে ইচ্ছে হলে বাকি অপ্রয়োজনীয় আশপাশ ঝাপসা করে দিতে পারেন।
ঙ) ছবি বা ভিডিওতে প্রয়োজনবোধে ইফেক্টের ব্যবহার করুন।
স্মার্টফোন, এডিটিং অ্যাপ, ট্রাইপড, মাইক্রোফোন ইত্যাদি ব্যবহার করে তৈরি একটি কন্টেন্ট দেখে নিতে পারেন।
মোজো টুকিটাকি
মোজো কিট
একজন মোবাইল জার্নালিস্টের মোজো কিটে যেসব সরঞ্জাম থাকা উচিত তা হলো স্মার্টফোন, ট্রাইপড, স্মার্টফোন ফটোগ্রাফি গ্রিপ, তারবিহীন ও তারসহ মাইক্রোফোন, উইন্ডশিল্ড মাইক্রোফোন, স্টোরেজ ডিভাইস, যেমন- মাইক্রো সিকিউর ডিজিটাল (এসডি) কার্ড বা পেনড্রাইভ, বাড়তি ব্যাটারি অথবা পাওয়ারব্যাংক ইত্যাদি।
মোজো ব্যক্তিত্ব
আধুনিক সময়ের মোবাইল জার্নালিজম বিশেষজ্ঞ কয়েকজন ব্যক্তিত্ব হলেন গ্লেন মুলচে, মার্ক সেটল, স্টিফেন কুইন, ইভো বরাম প্রমুখ। এদের মধ্যে গ্লেন মুলচে RTE-এর সাবেক মোজো গুরু। বর্তমানে তিনি টাইটানিয়াম মিডিয়া নামের একটি মিডিয়া ট্রেনিং সেন্টার পরিচালনা করেন। মার্ক সেটল বিবিসির মোবাইল জার্নালিজম ট্রেইনার। স্টিফেন কুইন প্রায় ১৯টি দেশে সাংবাদিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মোবাইল জার্নালিজমের ওপর ট্রেনিং দিয়েছেন। ইভো বরাম আরেকজন মোজো ট্রেইনার। স্টিফেন কুইন ও ইভো বরাম মিলিতভাবে মোবাইল জার্নালিজম নিয়ে একাধিক বইও লিখেছেন।
মোবাইল অ্যাপলিকেশন্স
অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম চালিত স্মার্টফোনে মোবাইল জার্নালিজমের জন্য সাধারণত KineMaster, Quik, PowerDirector ইত্যাদি অ্যাপলিকেশন্স ব্যবহার করা হয়। আর আইওএস চালিত স্মার্টফোনের জন্য রয়েছে iMovies, Mojo-Stories Editor, FiLMiC Pro, Videon, Voice Memos ইত্যাদি অ্যাপলিকেশন্স।
মোজোফেস্ট
মোজোফেস্ট হচ্ছে বিশ্বব্যাপী পেশাদার স্মার্টফোন কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের বার্ষিক মিলনমেলা। এই প্রোগ্রামে ফটোগ্রাফি, ফিল্মমেকিং, ভিজুয়াল স্টোরিটেলিং, সোশাল মিডিয়া কন্টেন্ট, অডিও প্রোডাকশন ইত্যাদি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়। এবছরের মোজোফেস্ট আয়ারল্যান্ডের গ্যালওয়েতে আগামী ০৬-০৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশে মোবাইল জার্নালিজম
বাংলাদেশে বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকতা বিষয়ে মোবাইল জার্নালিজমের ওপর কোর্স চালু করেছে। শিক্ষার্থীরা এই কোর্সের মাধ্যমে হাতে কলমে মোবাইল জার্নালিজম শিখতে পারছে। মূলধারার পেশাদার সাংবাদিকতা জগতে মোবাইল জার্নালিজম নিয়ে কাজ করছে প্রথম আলো। প্রথম আলো‘র মোবাইল জার্নালিজম স্পেশালিষ্ট ও ট্রেইনার ড. কাবিল খান জামিল জানান,
আমরা এখন আমাদের সংবাদপ্রবাহ পুনর্গঠনের জন্য মোবাইল জার্নালিজম ব্যবহার করছি। দেশব্যাপী আমাদের সকল রিপোর্টারদেরকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমভিত্তিক অডিয়েন্সদের জন্য অডিও ভিজুয়াল কন্টেন্ট বানানোয় উৎসাহিত করা হচ্ছে।
মোবাইল জার্নালিজস্টরা এখন যেমন তাদের পত্রিকা বা টিভি চ্যানেলের মূল সাইটের জন্য মোজো কন্টেন্ট তৈরি করছেন, তেমনিভাবে তারা ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব ইত্যাদিতে নিজেদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকেও কন্টেন্ট শেয়ার করছেন। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত ও উপকূলীয় অঞ্চলে মোবাইল জার্নালিস্টরা বেশ ভালো কাজ করছেন।
সম্প্রতি এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে আসেন Hashtag Our Stories-এর প্রতিষ্ঠাতা, সিএনএনের প্রাক্তন সিনিয়র সোশাল মিডিয়া রিপোর্টার (স্ন্যাপচ্যাট), মোবাইল জার্নালিজম স্পেশালিষ্ট ইউসুফ ওমর, সাথে ছিলেন অ্যান্ডি বার্জেস। ড. কাবিল খান জামিলের উপস্থিতিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ডয়েচে ভেলের সহযোগিতায় তারা দিনব্যাপী মোবাইল জার্নালিজমের ওপর শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। এছাড়া গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার কারওয়ান বাজারের টিসিবি ভবনে মোবাইল জার্নালিজমের ওপর আরেকটি ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়। মোবাইল জার্নালিজমের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইউসুফ ওমর ও অ্যান্ডি বার্জেস কথা বলেন উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সাথে। কীভাবে মোবাইল জার্নালিজমের মাধ্যমে আরো বেশি অডিয়েন্সকে যুক্ত করা যায়, কীভাবে বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো যায় এসব বিষয়ে নানা পরামর্শ দেন দুজন। সোশাল মিডিয়ার আরও ফলপ্রসূ ব্যবহার এবং লাইভ সম্প্রচার প্রসঙ্গেও কথা বলা হয়। দু’ভাগে বিভক্ত ওয়ার্কশপটির প্রথম অংশে মোজো নিয়ে বিভিন্ন তাত্ত্বিক আলোচনা করা হয় এবং লাঞ্চের পর ব্যবহারিক মোজো নিয়ে ধারণা দেওয়া হয়।
ওয়ার্কশপটি শেষ হয় একটি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যেখানে নির্দিষ্ট সময়সীমার ভেতর প্রতিযোগীদের একটি মোজো কন্টেন্ট বানাতে দেওয়া হয়।
বিতর্ক: ইজ মোজো ডেড?
বিবিসির সাংবাদিক, মোবাইল জার্নালিজম বিশেষজ্ঞ নিক গারনেট বছরখানেক আগে একটি আর্টিকেলে মত প্রকাশ করেন যে, মোবাইল জার্নালিজম মারা গেছে।
The term, ‘Mobile Journalism’ is dead and we should stop using it.
গারনেটের মতে, বর্তমানে সবার কাছে যেহেতু স্মার্টফোন আছে তাহলে যেকেউ ‘মোবাইল জার্নালিস্ট’ হয়ে যেতে পারে। ছবি তোলা, ভিডিও ধারণ এবং সম্পাদনার কাজ সম্পর্কে ধারণা থাকলে যেকোনো ব্যক্তিই ভালো মানের কন্টেন্ট তৈরি করতে পারেন। সুতরাং তাদের সাথে আর পেশাদার মোবাইল জার্নালিস্টদের সাথে মূলত কোনো পার্থক্য রইল না। আবার আপনি আপনার বন্ধুর জন্মদিন উদযাপনের ভিডিও যে মোবাইল দিয়ে রেকর্ড করছেন, একজন মোবাইল জার্নালিস্টও তার নিউজ তৈরি করার জন্য একই মডেলের ফোন ব্যবহার করছে। দুজনেই যেহেতু একই পদ্ধতিতে কাজ করছে, একই ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করছে তাহলে মোজো আর বাকিদের মধ্যে পার্থক্য কী রইল? নিকের মতে,
ব্যাপারটা এমন হয়ে গেছে যে, একসময় যেমন সবার কাছে, সেটা সাংবাদিক হোক বা সাধারণ কেউ, কাগজ কলম ছিল, এখন ঠিক তেমনিভাবে সবার কাছেই ফোন আছে, এডিটিংয়ের জন্য অ্যাপ্লিকেশন্স আছে। আমাদের সবার কাছে একই ধরনের উপকরণ আছে আর আমরাই মূলত ঠিক করি সেই উপকরণ দিয়ে আমরা কী করব।
তবে গারনেটের এই ধারণার বিপক্ষে কথা বলেছেন অনেকে। বলা হচ্ছে, গুটেনবার্গ প্রিন্টিং প্রেস আবিষ্কার করার আগে বইয়ের ওপর কর্তৃত্ব শুধু গির্জার পাদ্রিদের কাছে ছিল। বই ছিল দামী এবং বই তৈরি করা ছিল কষ্টকর। কিন্তু প্রেস আবিষ্কার করার পর ইচ্ছে করলে যে কেউই লেখক হয়ে বই ছাপাতে পারত। অনেকে হয়তো চেষ্টাও করেছে, কিন্তু সবাই সফল হয়নি। কাজের কাজ যা হয়েছে, প্রিন্টিং প্রেস আবিষ্কার হওয়ার পর পাদ্রীদের হাত থেকে বইয়ের ওপর একাধিপত্য চলে গিয়েছে। অধুনা মোবাইল জার্নালিজমের ব্যাপারটাও এরকম।
মোজোর ভবিষ্যৎ
যেহেতু প্রযুক্তির উত্তরোত্তর উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে, সুতরাং ভবিষ্যতে মানুষের হাতে আরও উন্নত ফিচার সম্বলিত স্মার্টফোন আসবে। হয়তো মোবাইল জার্নালিজমের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা সহজে বহনযোগ্য ডিভাইস তৈরি করা হবে, যা দিয়ে সবধরনের সাংবাদিকতার কাজ সারা যাবে। মোবাইল জার্নালিজম মূলধারার সাংবাদিকতার জায়গা দখল করতে না পারলেও এই ধারার পাশেপাশে সমানতালে এটিও এগিয়ে যাবে। কারণ ভবিষ্যতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো হবে অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছানোর সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম আর এই প্লাটফর্মের জন্য এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি উপযোগী মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে মোবাইল জার্নালিজম।
সুতরাং, বেরিয়ে পড়ুন, ক্যাপচার করুন, শেয়ার করুন- হয়ে যান একজন স্মার্ট মোবাইল জার্নালিস্ট।