২০১৬ সাল। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় নিজের মতোই দেখতে, রাশিয়ানভাষী ভিক্টোরিয়া নাসিরোভার সাথে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে ৩৫ বছর বয়সী ওলগা ইসভিকের। তাদের দুজনের ত্বকের রঙ থেকে শুরু করে চেহারার গড়ন, চুলের রঙ- সবটাই ছিল একদম কাছাকাছি। সবকিছু একদম ঠিকঠাক চলছিল। বিপত্তি বাধে যখন সেই বছরের ২৮ আগস্ট বন্ধুর জন্য বাড়িতে চিজকেক নিয়ে যান ভিক্টোরিয়া। নিজে দুই টুকরো কেক খেয়ে এক টুকরো বাড়িয়ে দেন তিনি ওলগার দিকে। কোনো সন্দেহ ছাড়াই বান্ধবীর কাছ থেকে নিয়ে কেকটা খায় ওলগা। আর তারপরই শুরু হয় ওলগার ভয়ানক রকমের অসুস্থতা।
সামান্য মাথা ঘোরানো দিয়ে শুরু হয়ে বমি পর্যন্ত যায় সেটা। সবশেষে জ্ঞান হারান ওলগা। শেষবার ভাসাভাসাভাবে দেখতে পান তিনি ভিক্টোরিয়াকে নিজের রুমের চারপাশে ঘুরে বেড়াতে। পুরো একদিন পর ওলগাকে তার বাড়ির খাটের উপরে মরার মতো পড়ে থাকতে দেখেন তারই আরেক বন্ধু। ওলগার চারপাশে তখন অনেকগুলো ওষুধ ছড়ানো। দেখে যে কারো মনে হতে পারে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন ওলগা। জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর ওলগা বুঝতে পারেন যে বাড়ি থেকে তার পাসপোর্ট, কাজের সার্টিফিকেট, স্বর্নের আংটিসহ বেশ কিছু জিনিস চুরি করা হয়েছে।
অবশ্যই সন্দেহটা গিয়ে পড়ে ওলগার বন্ধু ভিক্টোরিয়ার উপর। ততক্ষণে অবশ্য পুলিশ নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে যে এই ভিক্টোরিয়া আর যা-ই হোক ওলগার বন্ধু নয়। কারণ ভিক্টোরিয়া ওলগাকে যে চিজকেক খেতে দিয়েছিল সেটা সাধারণ কোনো কেক ছিল না, সেটাতে ছিলো মারাত্মক এক সিডেটিভ- ফেনিজেপাম (phenazepam)।
ভিক্টোরিয়াকে খুঁজতে গিয়ে নতুন এক তথ্য পায় পুলিশ। বের হয়ে আসে ২০১৪ সালে রাশিয়ায় ঘটে যাওয়া এক খুনের কথা। সেবার ভিক্টোরিয়া নাসিরোভা নিজের বন্ধু অ্যালা আলেকসেনকোকে খুন করে তার জমা টাকার সবকিছু চুরি করে ফেলে। আর এই খুনের অভিযোগ থেকে পালাতেই রাশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসে ভিক্টোরিয়া। যুক্তরাষ্ট্রে আরো অনেকগুলো দিন পালিয়ে থাকার ইচ্ছা থেকেই মূলত ওলগার সাথে বন্ধুত্ব আর তাকে খুনের চেষ্টা করে সে। কারণ আর কিছু না, ওলগার সাথে তার চেহারার অসম্ভব মিল!
ওলগার আগেও যুক্তরাষ্ট্রেই আরো অনেককে অজ্ঞান করে গয়না, টাকা আর মূল্যবান সম্পদ হাতিয়ে নেয় ভিক্টোরিয়া। সবমিলিয়ে ২০১৭ সালের মার্চে গ্রেপ্তার করা হয় ভিক্টোরিয়াকে, অ্যাটেম্পট টু মার্ডারের অভিযোগে। সাত বছর পর অবশেষে এই মামলার রায় বেরিয়েছে, আর রায় অনুযায়ী ২১ বছর জেলে কাটানোর শাস্তি পেয়েছেন ভিক্টোরিয়া। তবে ভিক্টোরিয়ার অবশ্য মানতে রাজিই নন আদালতের এই রায়। শেষ পর্যন্তও নিজেকে নিরপরাধ হিসেবেই দাবি করেছেন এই রাশিয়ান নারী। অজ্ঞান করে মানুষের সর্বস্ব লুট করাকে অপরাধ বলে মানতে রাজিই নন তিনি!