পৃথিবীর বৃহত্তম, দীর্ঘতম, ক্ষুদ্রতম, সর্বোচ্চ, সর্বনিম্নসহ আরো যত ধরনের পরিমাপ রয়েছে, সকল পরিমাপের সর্বোচ্চ বিন্দুর হিসাবটা রাখে গিনেস বুক কর্তৃপক্ষ। তারা যখন স্বীকৃতি দেয়, তখনই কেবল কোনো বিশ্ব রেকর্ড পৃথিবী জুড়ে সমাদৃত ও প্রশংসিত হয়। আর তাই এই রেকর্ড বইয়ে নাম লেখাতে কত অদ্ভুত অদ্ভুত সব কাণ্ডই না করে মানুষ! গিনেস বুকের তেমন অদ্ভুত কিছু রেকর্ড নিয়েই আজকের লেখা।
দাবা খেলার সর্ববৃহৎ আসর
২০০৬ সালে মেক্সিকোতে এক জমায়েতে একই সময়ে দাবা খেলতে বসেছিলেন ১৩,৪৪৬ জন মানুষ। সেই রেকর্ড ভাঙবার জন্য ভারতের আহমেদাবাদ রাজ্য সরকার ২০১০ সালে আরো বড় এক দাবার আসরের আয়োজন করে। আহমেদাবাদ মাঠে এই আয়োজনে দাবার টেবিলগুলোও সাজানো হয় অত্যন্ত চমৎকারভাবে। টেবিলের চাদর সাদা-কালোর নির্দিষ্ট অনুপাতে সাজানোয় পুরো আসরটিকেই মনে হয়েছে একটি বিশাল দাবার ছক। উপরন্তু, খেলোয়াড়রাও কেবল সাদা আর কালো পোশাকেই এসেছিলেন। খেলোয়াড়দের সংখ্যাটা ছিল সেদিন ২০,৪৮০!
বৃহত্তম বারবিকিউ
২০১১ সালে আর্জেন্টিনায় তৈরি করা ১৩ টন ওজনের বারবিকিউয়ের রেকর্ড ভাঙতে ২০১৭ সালে মস্ত আয়োজন করে উরুগুয়ে। ২০০ জন বাবুর্চি মিলে ১৪ ঘণ্টা পরিশ্রম করে ৬০ টন কাঠ পুড়িয়ে সাড়ে ষোল টন গরুর মাংসের বারবিকিউ প্রস্তুত করেন, যা বর্তমানে পৃথিবীর বৃহত্তম বারবিকিউয়ের রেকর্ড দখল করে রেখেছে।
পেটের উপর দিয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক গাড়ি
গিনেজ বুকে নাম ওঠাবার জন্য জীবন বাজি রেখেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের টম ওয়েন। ২০০৯ সালে শুয়ে থাকা অবস্থায় তার পেটের উপর দিয়ে যাতায়াত করে ৯টি ছোট পিক আপ ভ্যান, যেগুলোর ওজন ৩,০০০-৪,০০০ কেজি!
রূপকথার দানবদের জন্য জিনস প্যান্ট
২০১৮ সালে পেরুর রাজধানী লিমায় প্যারিস নামক এক ব্যক্তি তৈরি করেন পৃথিবীর বৃহত্তম জিনস প্যান্ট যার দৈর্ঘ্য ২১০ ফুট এবং প্রস্থ ১৪০ ফুট। এ প্যান্টের ওজন ৬ টনেরও বেশি! এ প্যান্ট কে পরিধান করবেন সেটা অবশ্য ভেবে দেখেননি বলে জানিয়েছেন প্যারিস!
মাউন্ট এভারেস্ট ঢাকা যাবে বিয়ের পোশাকে
ফ্রান্সের কড্রি শহরে একটি সাদা বিয়ের গাউন নির্মাণ করা হয়েছে যেটির ঝুলের দৈর্ঘ্য ৮,০৯৬ মিটার। গাউনটির দৈর্ঘ্য এত বেশি যে এর দ্বারা মাউন্ট এভারেস্ট শৃঙ্গকেই প্রায় ঢেকে ফেলা যাবে! ১৫ জন কর্মীর প্রায় ২ মাস সময় লেগেছে এই গাউনটি তৈরি করতে।
দীর্ঘতম নখ
১৯৫২ সালে ভারতের পুনে রাজ্যের শ্রীধর চিল্লালের বয়স ছিল ১৪ বছর। সেবছর তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন একটি বিশ্বরেকর্ড করবেন। কীভাবে? সেবছর থেকে বাম হাতের নখ কাঁটা বন্ধ করে দেন শ্রীধর এবং ২০১৮ সাল পর্যন্ত টানা ৬৬ বছর তিনি নখ কাটেননি। এই দীর্ঘ সময়ে তার সবগুলো নখের সর্বমোট দৈর্ঘ্য হয়েছিল ২৯ ফুট! অবশেষে গতবছর নিজেকে অধরা স্থানে নিয়ে গিয়ে নখ কাটেন তিনি।
প্রবীণতম উইং ওয়াকার
৬০ বছর পেরোলেই সাধারণত মানুষ কর্মজীবন থেকে নিজেকে গুঁটিয়ে নিতে শুরু করে। যাবতীয় ঝুটঝামেলা থেকে দূরে গিয়ে নিভৃতে জীবনের শেষ অধ্যায়টা কাটিয়ে দেয়াই তখন একমাত্র বাসনা হয়ে দাঁড়ায়। আর বয়স ৮০/৯০ পেরোলে তো মৃত্যুর জন্যই প্রহর গোনা শুরু হয়ে যায়। তবে যুক্তরাজ্যের থমাস ল্যাকি এক্ষেত্রে সম্পূর্ণই ব্যতিক্রম। ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে, তার বয়স যখন ৯০ বছর, গিনেজ বুকে নাম ওঠাতে তিনি চড়েছিলেন উড়ন্ত বিমানের ডানায়, যা তাকে পৃথিবীর প্রবীণতম উইং ওয়াকারে পরিণত করে।
চোখ যেন কোটরের বাইরে চলে এলো
ব্রাজিলের নাগরিক ক্লদিও পাওলো পিন্টোর বয়স যখন ৯ বছর, তখন থেকে তিনি চোখ বড় করার চেষ্টা করতে শুরু করেন নিয়মিত। আর এ কাজ করতে করতে বর্তমানে তিনি এতটাই অভ্যস্ত হয়েছেন যে তার চোখ কোটর থেকে ৭ মিলিমিটার পর্যন্ত অনায়াসে বেরিয়ে আসে, যা একটি বিশ্বরেকর্ড!
সর্বোচ্চ সংখ্যক কাপড় পরানো কুকুর
কুকুরকে অনেকেই শখের বশে কাপড় পরিয়ে থাকেন। কিন্তু বিশ্বরেকর্ড করানোর জন্য কাপড় পরানো হয়েছে, এরকমটা শুনেছেন কখনো? ২০১০ সালে ফ্লোরিডার ডানেডিনে ঘটেছিল এমন একটি অদ্ভুত ঘটনা। ৪২৬ জন ব্যক্তি তাদের প্রিয় পোষা কুকুরটিকে রঙিন পোশাক পরিধান করিয়ে একত্রিত হয়েছিলেন গিনেজ বুকে নাম ওঠাবার জন্য।
সর্বোচ্চ সংখ্যক দিন কবরে
রেকর্ড করবার জন্য চেক প্রজাতন্ত্রের ফকির বাবা ডেনেক জারাদকা যা করেছেন, তা বোধহয় পৃথিবীতে কেউই করতে চাইবেন না। তিনি টানা ১০ দিন কোনোরকম পানীয় আর খাদ্য ছাড়া একটি কফিনে বন্দী ছিলেন। কফিনটি আবার মাটিতে পুঁতেও দেয়া হয়েছিল, কেবল একটি ভেন্টিলেশন পাইপের মাধ্যমে অক্সিজেন যাতায়াতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল এতটুকুই।
দেহে বিভিন্ন অলংকার বিদ্ধ করাই যার শখ
ব্রাজিলিয়ান নাগরিক ইলাইন ডেভিডসন এমন একটি রেকর্ড গড়েছেন এবং এখনো গড়ে চলেছেন, যা আর কেউ কোনোদিন ভাঙবার কথা কল্পনাও করবে না। রেকর্ডটি হলো দেহে ছিদ্র করে নানারকম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অলংকার লাগানো। আর এই কাজ তিনি করেছেন ৬,০০৫ বার এবং এখনো করেই চলেছেন!
চুলের বীমা মহামূল্যবান
নামকরা শ্যাম্পু কোম্পানি ‘হেড অ্যান্ড শোল্ডার’ এর দুই বছরের মুখপাত্র ট্রয় পলমালুর গিনেজ রেকর্ড এ তালিকায় সবচেয়ে আরামদায়ক, সহজ এবং মূল্যবানও বটে। লন্ডন লয়েডের সাথে পলমালুর চুলের বীমা চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে ১ মিলিয়ন ডলারে। ভাবতে পারছেন? চুলের বীমা ১ মিলিয়ন ডলার; ৮ কোটি টাকারও বেশি!
বৃহত্তম জুতা
৫.৫ মিটার দৈর্ঘ্য, ২.২৫ মিটার প্রস্থ আর ১.৮৩ মিটার উচ্চতার একটি জুতা তৈরি করেছে তুরস্কের একটি জুতা নির্মাতা কোম্পানি। হ্যাঁ, আপনি ঠিক শুনছেন। পৃথিবীর বৃহত্তম জুতা হলেও এ বস্তুতে ৩০ জনের মতো আস্ত মানুষের জায়গা হয় অনায়াসে।
বৃহত্তম মানবসৃষ্ট রংধনু
গিনেজ বুকের রেকর্ডে প্রতিবছরই অসংখ্য ওলটপালট হয় এবং প্রায় সব রেকর্ডই কয়েক বছর পর পর নতুন কারো দখলে চলে যায়। তবে ২০০৪ সালের পর থেকে একটি রেকর্ডে কোনো পরিবর্তন আসেনি, আর তা হলো মানবসৃষ্ট রংধনু। সেবছর ফিলিপাইন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০,৩৬৫ জন শিক্ষার্থী ম্যানিলার রিজাল পার্কে একত্রিত হয়েছিলেন একটি কৃত্রিম রংধনু তৈরি করবার জন্য, যা আজ অবধি রেকর্ড বইয়ে অবিচল।
প্রবীণতম সংযুক্ত যমজ ভাই
যমজ শিশুর জন্মগ্রহণ অস্বাভাবিক কিছু না। তবে সংযুক্ত যমজ শিশুর জন্মগ্রহণ বেশ বিরল। এক্ষেত্রে সংযুক্ত শিশুগুলো বেশিদিন বেঁচেও থাকে না। তবে রোনি গ্যালভন আর ডোনি গ্যালভন ভাতৃদ্বয় এসব পরিসংখ্যানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বেঁচে আছেন ৬৮ বছর যাবত। ফলে তারা আজ পৃথিবীর প্রবীণতম সংযুক্ত যমজ ভাই।
দীর্ঘতম সসেজ
সসেজ খেতে কে না ভালোবাসে? ঢাকার অলিগলিতে প্রায় প্রতিটি ফাস্টফুডের দোকানেই সসেজ পাওয়া যায়। সসেজ ভক্তদের জন্য ২০১৪ সালে রোমানিয়ার প্লোয়েস্তি শহরের দুটি রেস্টুরেন্ট তৈরি করেছিল পৃথিবীর দীর্ঘতম সসেজ, যার দৈর্ঘ্য ৬২.৭৫ কিলোমিটার!
একত্রে অনেক মানুষের দাঁত ব্রাশ
গিনেজ রেকর্ড এমনই এক জিনিস যা দাঁত ব্রাশ করার মতো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারকেও রেকর্ড বইয়ে জায়গা করার মতো করে তোলে। ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি, দন্ত বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য ভারতের রাজধানী দিল্লির একটি স্কুলে একত্রে দাঁত ব্রাশ করে ১৬,৪১৪ জন মানুষ যা স্থান করে নেয় রেকর্ড বইয়ে।