২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর তুর্কি–সিরীয় সীমান্তে তুর্কি বিমানবাহিনীর একটি ‘জেনারেল ডাইন্যামিক্স এফ–১৬ ফাইটিং ফ্যালকন’ যুদ্ধবিমান রুশ বিমানবাহিনীর একটি ‘সুখোই সু–২৪এম’ বোমারু বিমানকে ভূপাতিত করে এবং বিধ্বস্ত বিমানটি থেকে প্যারাশুটের মাধ্যমে অবতরণের সময় রুশ বৈমানিক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ওলেগ পেশকভ তুর্কি–নিয়ন্ত্রিত সিরীয় মিলিট্যান্ট গ্রুপ ‘সিরিয়ান তুর্কমেন আর্মি/সুরিয়ে তুর্কমেন ওর্দুসু’র (তুর্কি: Suriye Türkmen Ordusu) সদস্যদের হাতে নিহত হন।
এই ঘটনা বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে, কারণ তুরস্ক মার্কিন–নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ‘ন্যাটো’র সদস্য এবং ১৯৫২ সালের পর ন্যাটোভুক্ত কোনো রাষ্ট্র কোনো সোভিয়েত/রুশ সামরিক বিমান ভূপাতিত করেনি। সর্বশেষ ১৯৫২ সালের ১৮ নভেম্বর তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমান রাশিয়ার) প্রশান্ত মহাসাগরীয় বন্দরনগরী ভ্লাদিভোস্তকের নিকটে মার্কিন নৌবাহিনীর বিমানবাহী জাহাজ ‘ইউএসএস ওরিস্কেনি’ থেকে আগত ৪টি ‘গ্রামান এফ৯এফ–২’ যুদ্ধবিমানের সঙ্গে সোভিয়েত বিমানবাহিনীর ৪টি ‘মিকোইয়ান–গুরেভিচ মিগ–১৫’ যুদ্ধবিমান আকাশযুদ্ধে লিপ্ত হয়। এ সময় মার্কিন বৈমানিকরা ৩টি সোভিয়েত মিগ–১৫ যুদ্ধবিমানকে ভূপাতিত করে এবং এর ফলে ৩ জন সোভিয়েত বৈমানিক (ক্যাপ্টেন নিকোলাই বেলিয়াকভ, সিনিয়র লেফটেন্যান্ট আলেক্সান্দর ভান্দায়েভ এবং সিনিয়র লেফটেন্যান্ট ভ্লাদিমির পাখোমকিন) নিহত হন।
স্বাভাবিকভাবেই ১৯৫২ সালের ঘটনার প্রায় ৬৩ বছর পর এবং স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের প্রায় ২৫ বছর পর সংঘটিত এই ঘটনা বিশ্ব রাজনীতিতে একটি নতুন মাত্রা সংযোজিত করে। এই ঘটনার ফলে চলমান সিরীয় যুদ্ধ একটি নতুন স্তরে প্রবেশ করে এবং রুশ–তুর্কি, রুশ–ন্যাটো ও রুশ–উপসাগরীয় আরব সম্পর্কে একটি বিস্তৃত মাত্রার সঙ্কটের সৃষ্টি হয়। উল্লেখ্য, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে একটি কার্যকরী ও সাধারণভাবে উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, এবং রাশিয়ায় ভ্লাদিমির পুতিনের ও তুরস্কে রেজেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ানের রাজনৈতিক উত্থানের পর এই সম্পর্ক আরো বিস্তৃত রূপ লাভ করে। ২০১৫ সালের নভেম্বরে তুরস্ক যখন রুশ বিমানটি ভূপাতিত করে, সেসময় রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে অন্তত বাহ্যিকভাবে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় ছিল। এজন্য তুরস্ক কর্তৃক রুশ বিমান ভূপাতিত করার ব্যাপারটি ছিল রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের জন্য তুলনামূলকভাবে অপ্রত্যাশিত।
তুরস্ক কেন রুশ বিমানটি ভূপাতিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল? এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপট কী ছিল? তুরস্কের এই পদক্ষেপের পর তুরস্কের মিত্র রাষ্ট্রগুলো, রাশিয়া এবং অন্যান্য আঞ্চলিক রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? কেনই বা এই ঘটনার ফলে সৃষ্ট রুশ–তুর্কি সঙ্কট একটি পূর্ণাঙ্গ রুশ–তুর্কি যুদ্ধে রূপ নিল না? এগুলোই এই নিবন্ধের মূল আলোচ্য বিষয়।
পটভূমি: সিরীয় যুদ্ধ, তুর্কি–সিরীয় দ্বন্দ্ব এবং রুশ সামরিক হস্তক্ষেপ
২০১০ সালের ডিসেম্বরে তিউনিসিয়ায় তীব্র সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয় এবং শীঘ্রই আরব বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে এই আন্দোলনের ধারা ছড়িয়ে পড়ে। আরব বিশ্বের কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলোর বিরুদ্ধে এই আকস্মিক গণবিক্ষোভের উদগীরণকে প্রচারমাধ্যম ‘আরব বসন্ত’ (Arab Spring) হিসেবে অভিহিত করে। আরব বসন্তের ফলে ২০১১–১২ সালের মধ্যে তিউনিসিয়া, লিবিয়া, মিসর ও ইয়েমেনের সরকারগুলোর পতন ঘটে। কুয়েত, ওমান, জর্দান, লেবানন ও মরক্কোয় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ প্রশমিত করার জন্য সেখানকার সরকারগুলো নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সৌদি আরব, ফিলিস্তিন, সুদান ও মৌরিতানিয়াসহ আরো কয়েকটি আরব রাষ্ট্রে বিক্ষোভ দেখা দেয়, কিন্তু সেগুলো ইতিপূর্বে উল্লিখিত রাষ্ট্রগুলোর বিক্ষোভের মতো তীব্র রূপ ধারণ করেনি বা কোনো ধরনের তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আনয়নে সফল হয়নি। বাহরাইনে সরকারবিরোধী বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে বাহরাইনি সরকারের আহ্বানে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (সংক্ষেপে ‘ইমারাত’) ও কুয়েত সেখানে সামরিক হস্তক্ষেপ করে এবং বিক্ষোভ দমন করে।
আরব বসন্ত সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করে লেভান্টাইন–ভূমধ্যসাগরীয় আরব রাষ্ট্র সিরিয়ায়। ১৯৬৩ সাল থেকে ‘আরব সমাজতান্ত্রিক বাআস দল – সিরিয়া অঞ্চল’ (আরবি: حزب البعث العربي الاشتراكي – قطر سوريا, ‘হিজব আল–বাআছ আল–আরাবি আল–ইশতিকরাকি – কুতর সুরিয়া’) সিরিয়ার শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত এবং ১৯৭০ সাল থেকে আল–আসাদ পরিবার উক্ত দল ও সিরীয় রাষ্ট্রের মূল নিয়ন্ত্রক। ২০১১ সালের মার্চে সিরীয় সরকারের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া বিক্ষোভ ক্রমশ একটি রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। সিরীয় সশস্ত্রবাহিনী ও সিরীয় সরকারপন্থী বিভিন্ন মিলিশিয়ার বিরুদ্ধে সিরীয় সরকারবিরোধী নানাবিধ মিলিট্যান্ট গ্রুপ তীব্র যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং বিভিন্ন বিদেশি শক্তি এই গৃহযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটোভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর অধিকাংশ ও বিভিন্ন আঞ্চলিক রাষ্ট্র (যেমন: সৌদি আরব, ইমারাত ও কাতার) প্রথম থেকেই সিরীয় সরকারবিরোধী মিলিট্যান্ট গ্রুপগুলোকে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করতে থাকে এবং ২০১৪ সাল নাগাদ সিরিয়া ও ইরাকভিত্তিক আন্তর্জাতিক মিলিট্যান্ট গ্রুপ ‘আইএসআইএল/আইএস’কে (ইংরেজি: Islamic State of Iraq and the Levant, ‘ISIL’; আরবি: الدولة الاسلامية في العراق والشام, ‘আদ–দাওলাহ আল–ইসলামিয়াহ ফিল–ইরাক ওয়াশ–শাম’) দমনের কারণ দেখিয়ে মার্কিন–নেতৃত্বাধীন জোট সিরিয়ায় আক্রমণ চালায়।
সিরীয় যুদ্ধের আগের দশকে তুরস্ক ও তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রতিবেশী সিরিয়ার মধ্যে সামগ্রিকভাবে সুসম্পর্ক বজায় ছিল। কিন্তু সিরীয় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তুরস্ক সিরীয় সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে, সিরীয় রাষ্ট্রপতি বাশার আল–আসাদকে পদত্যাগের আহ্বান জানায় এবং বিভিন্ন সিরীয় মিলিট্যান্ট গ্রুপকে অস্ত্রশস্ত্র, অর্থ, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সমর্থন প্রদান করতে আরম্ভ করে। বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে হাজার হাজার মিলিট্যান্ট সিরীয় যুদ্ধে সিরীয় মিলিট্যান্টদের পক্ষে অংশগ্রহণের জন্য তুরস্কের মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় প্রবেশ করে। যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে তুরস্ক (ও অন্যান্য রাষ্ট্র) যেসব সিরীয় মিলিট্যান্ট গ্রুপকে সমর্থন প্রদান করে, সেগুলোর মধ্যে ছিল ‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মি/আল–জায়শ আস–সুরি আল–হুর’, ‘জায়শ আল–ফাতাহ’ এবং ‘সুরিয়ে তুর্কমেন ওর্দুসু’ জোটসমূহ। বর্তমানে তুরস্ক যেসব সিরীয় মিলিট্যান্ট গ্রুপকে সমর্থন দিচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি/আল–জায়শ আল–ওয়াতানি আস–সুরি’, ‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মি/আল–জায়শ আস–সুরি আল–হুর’, ‘সুরিয়ে তুর্কমেন ওর্দুসু’ এবং ‘হায়াত তাহরির আল–শাম’ জোটসমূহ। এছাড়া ইতিপূর্বে এই মর্মে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে যে, তুরস্ক আইএসকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করেছে।
উল্লেখ্য, তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল ‘আদালেত ভে কালকিনমা পার্তিসি/জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি’কে (তুর্কি: Adalet ve Kalkınma Partisi, ‘AKP’) আদর্শিকভাবে বহুজাতিক ইসলামপন্থী সংগঠন ‘সোসাইটি অফ দ্য মুসলিম ব্রাদারহুডে’র (আরবি: جماعة الإخوان المسلمين, ‘জামায়াত আল–ইখওয়ান আল–মুসলিমিন’) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আরব বসন্ত শুরু হওয়ার পর একেপি–নিয়ন্ত্রিত তুরস্ক আরব বিশ্বজুড়ে ধর্মনিরপেক্ষ কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলোর পতনকে সাধারণভাবে সমর্থন করে, কারণ তাদের ধারণা ছিল, এই রাষ্ট্রগুলোতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পৃক্ত দলগুলো নির্বাচনের মাধ্যমে এই রাষ্ট্রগুলোর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারবে এবং এর ফলে এই রাষ্ট্রগুলো তুর্কি প্রভাব বলয়ের অন্তর্ভুক্ত হবে। কার্যত তিউনিসিয়ায় ‘এন্নাহদা মুভমেন্ট’ (আরবি: حركة النهضة, ‘হারাকাতুন–নাহদাহ’; ফরাসি: Mouvement Ennahdha) ও মিসরে ‘ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি’র (আরবি: حزب الحرية والعدالة, ‘হিজব আল–হুররিয়াহ ওয়াল–আদালাহ) রাজনৈতিক উত্থান এবং তিউনিসিয়া ও মিসরের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কের বিস্তৃতি তুর্কি সরকারের এই ধারণাকে আরো সুদৃঢ় করে।
আঙ্কারার ধারণা ছিল, সিরীয় গৃহযুদ্ধে সিরীয় সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে সিরিয়াতেও অনুরূপ একটি তুর্কিপন্থী সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবে এবং এর ফলে সিরিয়া তুর্কি প্রভাব বলয়ের অন্তর্ভুক্ত হবে। সিরিয়া প্রায় চার শতাব্দী ধরে তুরস্ককেন্দ্রিক ওসমানীয় রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল এবং এজন্য তুর্কি জাতীয়তাবাদী ও নব্য–ওসমানীয়বাদীরা সিরিয়াকে স্বাভাবিক ও ঐতিহাসিকভাবে তুর্কি প্রভাব বলয়ের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। ২০১২ সালের আগস্টে তদানীন্তন তুর্কি প্রধানমন্ত্রী এরদোয়ান একটি ভাষণে মন্তব্য করেছিলেন, তুর্কিরা দামেস্কের উমাইয়া মসজিদের প্রাঙ্গণে নামাজ আদায় করবে! এর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় তুর্কি ভূরাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।
কিন্তু সিরীয় যুদ্ধের গতি ক্রমশ তুরস্কের প্রতিকূলে চলে যেতে শুরু করে। সিরীয় সরকারের ভিত্তি তিউনিসিয়া, মিসর, লিবিয়া ও ইয়েমেনের ক্ষমতাচ্যুত সরকারগুলোর তুলনায় অধিকতর শক্ত হিসেবে প্রমাণিত হয় এবং তারা সামরিক শক্তির সাহায্যে বিদ্রোহ দমনের প্রচেষ্টা চালায়। যুদ্ধের ফলে লক্ষ লক্ষ বেসামরিক সিরীয় নাগরিক সিরিয়ার বাইরে বিভিন্ন রাষ্ট্রে আশ্রয় গ্রহণ করে এবং এদের মধ্যে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষকে তুর্কি সরকার আশ্রয় প্রদান করে, যেটি তুরস্কের জন্য ক্রমশ একটি গুরুতর অভ্যন্তরীণ সমস্যায় রূপান্তরিত হয়। এদিকে আইএসের উত্থানের পর সিরিয়ায় কোন ধরনের নীতি অনুসরণ করা হবে, সেটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুরস্কের বিরোধ দেখা দেয়। তদুপরি, সিরিয়ায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে একদিকে তুরস্ক ও কাতার এবং অন্যদিকে সৌদি আরব ও ইমারাতের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। কার্যত দুই পক্ষ ভিন্ন ভিন্ন সিরীয় মিলিট্যান্ট গ্রুপকে সমর্থন করতে থাকে।
সিরীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধ পরিচালনার পাশাপাশি তুরস্ক ক্রমশ সরাসরি সিরীয় সশস্ত্রবাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে থাকে। ২০১২ সালের ২২ জুন সিরীয় সেনাবাহিনীর একটি এয়ার ডিফেন্স ইউনিট সিরীয় আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগে তুর্কি বিমানবাহিনীর একটি ‘ম্যাকডনেল ডগলাস আরএফ–৪ই ফ্যান্টম টু’ রিকনিস্যান্স বিমানকে ভূপাতিত করে এবং এই ঘটনায় ২ জন তুর্কি বৈমানিক (ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট গোখান এরতান এবং ফ্লাইং অফিসার হাসান হুসেইন আকসয়) নিহত হন। ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর তুর্কি সেনাবাহিনী তুর্কি–সিরীয় সীমান্তবর্তী একটি সিরীয় ঘাঁটির ওপর গোলাবর্ষণ করে এবং এর ফলে ৩ জন সিরীয় সৈন্য নিহত হয়। ২০১৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তুর্কি বিমানবাহিনীর একটি ‘এফ–১৬’ যুদ্ধবিমান তুর্কি আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগে সিরীয় বিমানবাহিনীর একটি ‘মিল মি–১৭’ হেলিকপ্টারকে ভূপাতিত করে। ২০১৪ সালের ২৩ মার্চ তুর্কি বিমানবাহিনীর একটি ‘এফ–১৬’ যুদ্ধবিমান তুর্কি আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগে সিরীয় বিমানবাহিনীর একটি ‘মিকোইয়ান–গুরেভিচ মিগ–২৩’ যুদ্ধবিমানকে ভূপাতিত করে। ২০১৫ সালের ১৬ মে তুর্কি বিমানবাহিনীর ২টি ‘এফ–১৬’ যুদ্ধবিমান তুর্কি আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগে সিরীয় বিমানবাহিনীর একটি ‘মোহাজের–৪’ ড্রোনকে ভূপাতিত করে।
এদিকে সিরীয় যুদ্ধের শুরু থেকেই সিরিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র ইরান সিরীয় সরকারকে সহায়তা করে আসছিল এবং ইরানি সৈন্যরা ও ইরানি–সমর্থিত বিভিন্ন মিলিশিয়ার (যেমন: লেবাননভিত্তিক ‘হিজবুল্লাহ’ এবং পাকিস্তানভিত্তিক ‘লিওয়া আজ–জায়নাবিউন’) সদস্যরা সিরীয় সরকারের পক্ষে যুদ্ধ করছিল। একই সঙ্গে সিরিয়ার আরেক ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া যুদ্ধের শুরু থেকেই সিরীয় সরকারকে সহায়তা করছিল। কিন্তু ২০১৫ সালের প্রথমার্ধে সিরীয় সরকার যুদ্ধক্ষেত্রে মিলিট্যান্টদের নিকট পর্যুদস্ত হয় এবং তাদের পরিস্থিতি নাজুক বলে প্রতীয়মান হয়। এই পরিস্থিতিতে ২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর রাশিয়া সরাসরি সিরীয় যুদ্ধে সিরীয় সরকারের পক্ষে সামরিক হস্তক্ষেপ করে। তখন থেকে রুশ সেনাবাহিনীর একটি অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র সৈন্যদল, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, স্পেশাল অপারেশন্স ফোর্সেস, সামরিক পুলিশ, সামরিক, বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ এবং রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত মার্সেনারি সংগঠন ‘ওয়াগনার গ্রুপ’ সদস্যরা সিরীয় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করছে। অবশ্য সিরিয়ায় মোতায়েনকৃত রুশ সৈন্যের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম (৪,০০০ থেকে ৬,০০০ জনের মধ্যে) বলে ধারণা করা হয়।
রুশরা সিরীয় সরকার, ইরান, ইরাক, হিজবুল্লাহ আর সিরীয়–সমর্থিত ও ইরানি–সমর্থিত বিভিন্ন মিলিশিয়ার সঙ্গে তাদের সামরিক কার্যক্রম সমন্বয় করতে থাকে, এবং আইএস–সহ সিরীয় সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিভিন্ন মিলিট্যান্ট গ্রুপের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করতে শুরু করে। এর ফলে সিরীয় যুদ্ধে চাকা ক্রমশ সিরীয় সরকারের পক্ষে ঘুরতে শুরু করে। স্বাভাবিকভাবেই মিলিট্যান্ট গ্রুপগুলোর সমর্থক রাষ্ট্রগুলো (যেগুলোর মধ্যে তুরস্কও ছিল) রাশিয়ার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। ফলে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর পাশাপাশি তুরস্কও সিরিয়ায় রুশ সামরিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা যুদ্ধে লিপ্ত হয়, এবং বিপরীতক্রমে রাশিয়াও সিরীয় যুদ্ধে পশ্চিমা ও তুর্কি ভূমিকার বিরুদ্ধে নিজস্ব প্রচারণা যুদ্ধ চালায়।
সিরিয়ায় রুশ–তুর্কি দ্বন্দ্ব ও প্রক্সি যুদ্ধ
সিরিয়ায় রুশ সামরিক হস্তক্ষেপের কয়েক দিনের মধ্যেই তুর্কি সরকার দুবার তুরস্কে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আন্দ্রেই কারলভকে তলব করে এবং রুশ বিমান দুবার তুর্কি আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে, এই মর্মে অভিযোগ উত্থাপন করে। রুশদের বক্তব্য অনুযায়ী, একটি রুশ বিমান খারাপ আবহাওয়ার কারণে খুব স্বল্প সময়ের জন্য তুর্কি আকাশসীমায় অনুপ্রবেশ করেছিল এবং অপরটির সম্পর্কে তারা তদন্ত করে দেখার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু তুর্কিরা এই ব্যাপারে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখাতে থাকে। তুর্কি রাষ্ট্রপতি এরদোয়ান মন্তব্য করেন যে, তুরস্কের ওপর আক্রমণ ন্যাটোর ওপর আক্রমণ হিসেবে পরিগণিত হবে এবং রাশিয়া যদি তুরস্কের মতো একটি ‘বন্ধু’কে হারায়, সেক্ষেত্রে রাশিয়ার ‘প্রচুর ক্ষতি’ হবে। ন্যাটো তুর্কি অবস্থানের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে। প্রত্যুত্তরে রুশ উপ–প্রতিরক্ষামন্ত্রী আনাতোলি আন্তোনভ এই বিষয়ে আলোচনার জন্য তুর্কি কর্মকর্তাদের মস্কোয় আমন্ত্রণ জানান।
২০১৫ সালের ৩ থেকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে রুশ ও তুর্কি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা রুশ বিমান কর্তৃক তুর্কি আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগের বিষয়ে অন্তত পাঁচবার আলোচনা করেন। ১৫ অক্টোবর তুর্কি সরকার দাবি করে যে, তুর্কি বিমানবাহিনী সিরিয়া থেকে তুর্কি আকাশসীমা লঙ্ঘনকারী একটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে এবং মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেন যে, উক্ত ড্রোনটি রুশ–নির্মিত গোয়েন্দা ড্রোনের অনুরূপ। কিন্তু তুর্কি সরকার সরাসরি রাশিয়াকে দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকে এবং রুশ কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন যে, রুশরা সিরিয়ায় কোনো ড্রোন হারায়নি। ১৭ অক্টোবর তুর্কি প্রধানমন্ত্রী আহমেত দাভুতোলু মন্তব্য করেন যে, তুর্কি আকাশসীমা লঙ্ঘনকারী প্রতিটি আকাশযানকে ভূপাতিত করা হবে। ৬ নভেম্বর তুরস্কের প্রতি সমর্থন প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে মার্কিন বিমানবাহিনী তুরস্কের মার্কিন–নিয়ন্ত্রিত ইনজিরলিক বিমানঘাঁটিতে ৬টি যুদ্ধবিমান মোতায়েন করে।
নভেম্বরের মাঝামাঝি নাগাদ রাশিয়ার ওপর তুর্কি আক্রোশ তীব্র রূপ ধারণ করে। রুশ হস্তক্ষেপের কারণে সিরিয়ায় তুর্কি ভূরাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, এটি ছিল তুর্কি ক্ষোভের মূল কারণ। এর পাশাপাশি তাৎক্ষণিক কারণ হিসেবে যুক্ত হয়েছিল তুর্কি–নিয়ন্ত্রিত ‘সুরিয়ে তুর্কমেন ওর্দুসু’র ওপরে রুশদের ব্যাপক আক্রমণ। উল্লেখ্য, সিরিয়ায় রুশ সামরিক অভিযানের ঘোষিত লক্ষ্য ছিল আইএসকে প্রতিহত করা, কিন্তু কার্যত রুশরা আইএসের পাশাপাশি অন্যান্য সিরীয় মিলিট্যান্ট গ্রুপের ওপরেও প্রচণ্ড আক্রমণ চালাতে থাকে। ১৯ নভেম্বর থেকে রুশ ও সিরীয় বিমানবাহিনী সিরিয়ার লাতাকিয়া প্রদেশে অবস্থিত আল–রাবিয়া অঞ্চলের (তুর্কমেন নাম ‘বায়িরবুজাক’) ওপর ব্যাপক বোমাবর্ষণ শুরু করে। অঞ্চলটিতে প্রায় ৯০,০০০ তুর্কমেন বসবাস করত এবং প্রায় সাড়ে তিন বছর যাবৎ অঞ্চলটি তুর্কি প্রক্সিদের নিয়ন্ত্রণাধীনে ছিল, যাদের মধ্যে ছিল ‘সুরিয়ে তুর্কমেন ওর্দুসু’। এই অঞ্চলে রুশ সামরিক অভিযান ছিল রুশদের ওপর তুর্কিদের ক্ষোভ বৃদ্ধির তাৎক্ষণিক কারণ।
১৯ নভেম্বর তুর্কি সরকার রুশ রাষ্ট্রদূত আন্দ্রেই কারলভ ও রুশ সামরিক অ্যাটাশে কর্নেল আন্দ্রেই দোভগেরকে তলব করে এবং জানায় যে, তুরস্ক রাশিয়া কর্তৃক তুর্কি সীমান্ত লঙ্ঘন ও সিরীয় তুর্কমেনদের ওপর রুশ বোমাবর্ষণ বরদাস্ত করবে না। রুশ ও সিরীয়রা তুর্কিদের বক্তব্য অগ্রাহ্য করে, কারণ আল–রাবিয়া/বায়িরবুজাক অভিযান ছিল তাদের জন্য কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী লাতাকিয়া অঞ্চলকে পুরোপুরি সিরীয় সরকারের কর্তৃত্বাধীনে নিয়ে আসা ও এই অঞ্চলে অবস্থিত রুশ নৌঘাঁটিকে সুরক্ষিত রাখা, মিলিট্যান্ট–নিয়ন্ত্রিত ইদলিব ও আলেপ্পো অভিমুখে অভিযান পরিচালনার পথ পরিষ্কার করা, বিভিন্ন মিলিট্যান্ট গ্রুপের পক্ষে যুদ্ধরত চেচেন মিলিট্যান্টদের এই অঞ্চল থেকে অপসারণ করা, সিরীয় সুন্নি সম্প্রদায় ও তুরস্কের মধ্যে যেন কোনো সাধারণ সীমান্ত না থাকে সেটি নিশ্চিত করা এবং অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্তৃক গৃহীত সিরিয়া সংক্রান্ত যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব বাস্তবায়নের আগে সিরীয় সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডের পরিমাণ যত বেশি সম্ভব সম্প্রসারিত করা – এগুলো ছিল রুশ–সিরীয় আল–রাবিয়া/বায়িরবুজাক অভিযানের উদ্দেশ্য। এজন্য মস্কো বা দামেস্ক এই অভিযান বন্ধ করতে আগ্রহী ছিল না।
সু–২৪এম শুটডাউন ও রুশ বৈমানিকের মৃত্যু
এমতাবস্থায় ২৪ নভেম্বর সকাল ৯টা ২৪ মিনিটে তুর্কি বিমানবাহিনীর একটি ‘এফ–১৬’ যুদ্ধবিমান তুর্কি–সিরীয় সীমান্তে ‘এআইএম–১২০ অ্যাডভান্সড মিডিয়াম–রেঞ্জ এয়ার–টু–এয়ার মিসাইলে’র সাহায্যে রুশ বিমানবাহিনীর একটি ‘সু–২৪এম’ বোমারু বিমানকে ভূপাতিত করে। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ২টি রুশ বোমারু বিমান সিরীয় মিলিট্যান্টদের ওপর বোমাবর্ষণের পর লাতাকিয়ায় অবস্থিত রুশ–নিয়ন্ত্রিত হিমেইমিম বিমানঘাঁটিতে ফিরছিল। তুর্কি কর্মকর্তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, রুশ বিমান দুইটি তুর্কি আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছিল এবং প্রায় ১৭ সেকেন্ড তুর্কি আকাশসীমায় অবস্থান করেছিল। তাদের ভাষ্যমতে, রুশ বিমান দুটিকে ৫ মিনিটের মধ্যে অন্তত ১০ বার সতর্ক করা হয়েছিল এবং তুর্কি আকাশসীমায় প্রবেশ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছিল। কিন্তু রুশ কর্মকর্তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, বিমান দুটি তুর্কি আকাশসীমা লঙ্ঘন করেনি এবং বরাবরই সিরীয় আকাশসীমায় অবস্থান করছিল। ভূপাতিত বিমানের নেভিগেটরের ভাষ্যমতে, তারা তুর্কি আকাশসীমা লঙ্ঘন করেননি এবং তুর্কিরা আক্রমণ চালানোর আগে তাদেরকে কোনো সতর্কবার্তা প্রদান করেনি।
রুশ বিমান দুটি প্রকৃতপক্ষেই তুর্কি আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছিল কিনা, সেটি যাচাই করার কার্যত কোনো উপায় নেই। কিন্তু ভূপাতিত বিমানটির ‘হিট সিগনেচার’ থেকে একটি বিষয় সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, তুর্কিরা যখন রুশ বিমানটিকে ভূপাতিত করে, তখন বিমানটি সিরীয় আকাশসীমায় অবস্থান করছিল। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, বিমানটি যখন ভূপাতিত হয়, তখন এটি তুর্কি সীমান্ত থেকে প্রায় ১ কি.মি. দূরে এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬,০০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থান করছিল। বিমানটিতে তুর্কি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার পর বিমানের বৈমানিক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ওলেগ পেশকভ এবং নেভিগেটর ক্যাপ্টেন কনস্তান্তিন মুরাখতিন প্যারাশুটের সাহায্যে অবতরণের জন্য বিমান থেকে ঝাঁপ দেন। বিমানটি সিরীয় ভূখণ্ডে পতিত হয়। এদিকে তুর্কিরা প্রথম রুশ বিমানের ওপর আক্রমণ করার পরপরই অপর রুশ বিমানটি সেখান থেকে সরে পড়ে। উল্লেখ্য, রুশ বোমারু বিমান দুটিতে এয়ার–টু–এয়ার মিসাইল ছিল না এবং বিমান দুটি আকাশযুদ্ধের জন্য নয়, বরং ভূমিতে অবস্থিত লক্ষ্যবস্তুর ওপর আক্রমণ পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হতো।
তুরস্ক কর্তৃক রুশ বিমান ভূপাতিত করার ঘটনাটি ছিল রুশ–তুর্কি সম্পর্কে বড় মাত্রার একটি সঙ্কট সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট। কিন্তু আরেকটি ঘটনা এই সঙ্কটের মাত্রাকে বহুগুণে তীব্র করে তোলে। ঘটনাটি হচ্ছে: রুশ বৈমানিক দুজন বিধ্বস্ত বিমান থেকে অবতরণের সময় ‘সুরিয়ে তুর্কমেন ওর্দুসু’র অন্তর্ভুক্ত ‘ইকিঞ্জি সাহিল তুমেনি/দ্বিতীয় উপকূলীয় ডিভিশন’–এর (তুর্কি: İkinci Sahil Tümeni) সদস্যরা তাদেরকে দেখতে পায় এবং তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। যে দলটি রুশ বৈমানিকদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছিল, তাদের দলনেতা ছিলেন তুর্কি নাগরিক এবং তুর্কি উগ্র জাতীয়তাবাদী সংগঠন ‘উলকু ওজাকলারি’র (তুর্কি: Ülkü Ocakları) সদস্য আল্পআরসলান চেলিক। উল্লেখ্য, ‘উলকু ওজাকলারি’কে তুর্কি উগ্র জাতীয়তাবাদী ও উগ্র ডানপন্থী দল ‘মিল্লিয়েতচি হারেকেত পার্তিসি/ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টি’র (তুর্কি: Milliyetçi Hareket Partisi, ‘MHP’) আধা–সামরিক সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ‘এমএইচপি’ বর্তমান তুর্কি আইনসভায় তুরস্কের ক্ষমতাসীন দল ‘একেপি’র সমর্থক।
১৯৭৭ সালে গৃহীত ‘জেনেভা কনভেনশনে’র অতিরিক্ত প্রোটোকল অনুসারে, বিধ্বস্ত বিমান থেকে অবতরণকারী কোনো বৈমানিকের ওপর আক্রমণ চালানো নিষিদ্ধ এবং এরকম পরিস্থিতিতে কোনো বৈমানিক ভূমিতে অবতরণের পর তার ওপর আক্রমণ চালানোর আগে তাকে আত্মসমর্পণ করার সুযোগ দিতে হবে। সুতরাং বিধ্বস্ত ‘সু–২৪এম’ থেকে অবতরণের সময় রুশ বৈমানিকদের ওপর পরিচালিত আক্রমণ ছিল আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে যুদ্ধাপরাধ। কিন্তু মিলিট্যান্টরা এসবের তোয়াক্কা না করে গুলি ছুঁড়তে থাকে এবং তাদের গুলিতে ৪৫ বছর বয়সী লেফটেন্যান্ট কর্নেল পেশকভ নিহত হন। এই ঘটনার পর প্রকাশিত একটি ভিডিওতে তাদেরকে পেশকভের লাশের কাছে উল্লাস করতে দেখা যায়। পরবর্তীতে দেখা যায় যে, পেশকভের শরীরে আটটি গুলি লেগেছিল।