২০১৫ সালে মুক্তি পায় ‘উলফ ওয়ারিয়র’ নামের একটি মুভি, ব্যবসাফল এই মুভিটির সিক্যুয়েল তৈরি হয় দুই বছরের মধ্যেই। মুভিটিতে পিপলস লিবারেশন আর্মির এক অফিসারকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে রেখে গল্প এগিয়ে যায়, প্রবল জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে সিনেমাটিতে দেখানো হয় চীনের শত্রুদের ধ্বংস করে দেয়ার গল্প। জাতীয় নিরাপত্তার সংকট দেখিয়ে তৈরি করা এই সিনেমাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে সাধারণ চীনাদের মধ্যে, চীনা জাতীয়তাবাদী উন্মাদনা ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ছবিটি।
উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই চীনে ক্ষমতায় আছে চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি, প্রতিবেশী দেশগুলোর ব্যাপারে চীনারা সবসময়ই রক্ষণশীল কায়দায় সম্পর্ক বজায় রাখে। চীনা কূটনীতিবিদরা সাধারণত যেকোনো ঘটনায় দ্রুত প্রত্যুত্তর দেন না, লো-প্রোফাইল বজায় রেখে সমস্যাগুলোকে সমাধান করতে চান কূটনৈতিক উপায়ে। এর মধ্যে, কোনো দেশকে পরামর্শ না দেওয়ার চীনা নীতি প্রতিবেশী দেশগুলোতে চীনের ইতিবাচক ছবি নির্মাণে সহযোগিতা করেছে, রাজনৈতিক প্রক্রিয়াগুলো হস্তক্ষেপ না করায় চীন পেয়েছে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের অবারিত সুযোগ।
চীনের রক্ষণশীল রাজনৈতিক অবস্থান থেকে বিবর্তন ঘটেছে গত কয়েক বছরে, চীনের পররাষ্ট্রনীতি ক্রমাগত হয়ে উঠেছে আক্রমণাত্মক। বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত চীনা কূটনীতিবিদরা দ্রুত মন্তব্য করছেন বিভিন্ন দেশের ইস্যুতে, করছেন বিতর্কিত মন্তব্যও। ‘উলফ ওয়ারিয়র’ মুভিতে যেমন পিএলএর অফিসার একাই লড়ে চান চীনের স্বার্থ রক্ষা করতে, তেমনি চীনা কূটনীতিবিদেরা বিভিন্ন দেশে একইভাবে যেন একাই লড়াই করে আদায় করছেন চীনের জাতীয় স্বার্থ। উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেট হিসেবে যারা পরিচিত, তারা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেছেন, সংবাদমাধ্যমে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন।
চীনের পররাষ্ট্রনীতিতে এই পরিবর্তন চীনকে আরো বিতর্কের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। দীর্ঘ সময় ধরে চীন কর্তৃত্ববাদী দেশগুলোকে সমর্থন দিয়ে আসছে, মানবাধিকারের ধারণাকে পাশে রেখে অর্থনৈতিক লক্ষ্যকে মুখ্য করে নীতি নির্ধারণ করেছে। ফলে, একটা দীর্ঘ সময়ে ধরেই পাশ্চাত্য গণমাধ্যমগুলোর নেতিবাচক প্রচারের শিকার হয়েছে চীন, চীনারা শিকার হয়েছে বর্ণবাদী আচরণের। তবে, সরাসরি পাশ্চাত্যের স্বার্থের সাথে সংঘাত না হওয়ায় চীনের শান্তিপূর্ণ উত্থান বাধাগ্রস্ত হয়নি। কিন্তু, উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসির কারণে চীন তুলনামূলকভাবে বেশি ভঙ্গুর সম্পর্কের সামনে পড়েছে, একইসাথে মুখোমুখি হতে হচ্ছে পশ্চিমা গণমাধ্যমের নেতিবাচক প্রচারণার।
এর মধ্যেও চীনা জাতীয়তাবাদী উন্মাদনার মধ্যে বিস্তার ঘটেছে উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসির, উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোম্যাটরা চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পেয়েছেন দ্রুত পদোন্নতি। চীনের উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসি চূড়ায় পৌঁছায় করোনা মহামারির সময়ে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন করোনা মহামারির বিস্তারের জন্য চীনকে দায়ী করেন, করোনাভাইরাসকে উহান ভাইরাস হিসেবে আখ্যায়িত করেন, চীনও পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার শুরু করে। তখনকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান টুইট করেন, যুক্তরাষ্ট্রই চীনের অর্থনৈতিক অগ্রগতি আটকাতে নিজেদের গবেষণাগারে তৈরি ভাইরাস চীনে ট্রেনিং করতে আসা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে ছড়িয়েছে। কানাডার সাথেও কূটনৈতিক দ্বৈরথ চলেছে চীনের, একই ঘটনা ঘটেছে ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথেও।
এর মধ্যে চীন শিরোনাম হয়েছে ভারতের সাথে সীমান্ত বিরোধে জড়িয়ে, বিতর্কিত এলাকায় চীন আর ভারত দ্রুতগতিতে নির্মাণ করছে নিজেদের অবকাঠামো। গালওয়ান ভ্যালিতে পিপলস লিবারেশন আর্মির সদস্যদের সাথে সংঘাত ঘটে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সদস্যদের, দুই পক্ষেই হতাহত হয় সংঘাতে। ২০২২ এর ডিসেম্বরে আবার হিমালয়ের তাওয়াং অঞ্চলের ইয়াংটসে অঞ্চল দখলের চেষ্টা করে চীন, সেখানে সংঘাতে আহত হয়েছে দুই পক্ষের সৈন্যরাই।
কেন উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসি?
চীন দীর্ঘ সময় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করেনি, পৃথিবীর অন্যান্য দেশকেও চীনা বাজারে প্রবেশ করতে দেয়নি। এই সময়ে চীনের সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি ব্যর্থ হয়, চীন মুখোমুখি হয় শতাব্দীর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের। মাও সেতুংয়ের পর নিজেদের রাজনৈতিক নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে, পরিবর্তন আসে নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গিতেও। চীন আশির দশকে বাজার অর্থনীতিতে প্রবেশ শুরু করে, পরবর্তী কয়েক দশকে চীনের অর্থনীতির আকার বেড়েছে কয়েক গুণ। অনেকগুলো কারণেই চীন উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসি বেছে নিয়েছিলো।
প্রথমত, সম্প্রতি চীনে কট্টর জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটেছে, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নিজের নেতৃত্বের বৈধতার প্রয়োজনে সেই জাতীয়তাবাদী উন্মাদনাকে উস্কে দিয়েছেন। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যরা শি জিন পিংয়ের ‘গ্রেট চায়না ড্রিমে’ আসক্ত হয়েছে, চীনকে প্রাপ্য অবস্থানে নিতে কূটনীতিবিদদের আগ্রাসী ভূমিকাকে সমর্থন করেছে। চীনা জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটেছে নিজস্ব সরকারব্যবস্থা আর সংস্কৃতি নিয়ে, জাতীয়তাবাদের বিকাশে ভূমিকা রেখেছে চীনা তাত্ত্বিকদের আলোচনা। জাতীয়তাবাদী চেতনাই চীনের নেতৃত্বকে উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসি গ্রহণে উদ্ধুদ্ধ করেছে।
দ্বিতীয়ত, চীন গত কয়েক দশকে অর্থনীতিতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছে, চীনের জিডিপির আকার বেড়েছে কয়েক গুণ। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই জাপানকে পেছনে ফেলে দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে চীন, কম মূল্যের শ্রম আর বিনিয়োগের প্রাচুর্যকে কাজে লাগিয়ে চীনের অর্থনীতি ছাড়িয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্রকেও।
চীনের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে প্রতিদ্বন্দ্বীরা সহজভাবে মেনে নেয়নি, চীনকে বাজারে অবন্ধুসুলভ প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। চীনের অর্থনৈতিক অগ্রগতি বার বার নেতিবাচক সংবাদের শিরোনাম হয়েছে পাশ্চাত্যের মিডিয়াগুলোতে, চীনা অভিবাসীরাও মুখোমুখি হয়েছেন বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণের। চীন আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে হয়েছে সাংবাদিক বহিষ্কারের ঘটনা, দুই দেশই অপর দেশের গণমাধ্যমের কাজকে করেছে সীমিত। রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিসরে এই বৈষম্যমূলক আচরণ চীনকে নিজের সফট-পাওয়ার ব্যবহারে আগ্রহী করে তোলে, চীন চ্যালেঞ্জ করে বসে পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রব্যবস্থাকেই। বিকল্প বিশ্বব্যবস্থা তৈরির প্রচেষ্টাও চীনকে উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসি গ্রহণে আগ্রহী করে তোলে।
বাস্তববাদী তাত্ত্বিকরা বাণিজ্যকে দেখে প্রতিযোগিতার দৃষ্টিকোণ থেকে, যেখানে এক পক্ষের লাভ মানে অন্য পক্ষের ক্ষতি। চীন তৃতীয় বিশ্বের পরে প্রথম বিশ্বের বাজার পুরোপুরি দখল করে নিলে পাশ্চাত্যের উৎপাদকেরা বাজারে প্রাসঙ্গিকতা হারাবে। আবার, আন্তর্জাতিক রাজনীতির অরাজকতার মধ্যে নিজের স্বার্থ ধরে রাখতে হলে রাষ্ট্রের নিজেকেই উদ্যোগ নিতে হয়। উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসি এমনই উদ্যোগ, চীনের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা আর প্রতিরক্ষা জোরদারের জন্য।
তৃতীয়ত, চীনের প্রেসিডেন্টরা সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে পারেন, প্রতি মেয়াদের সময়কাল পাঁচ বছর। শি জিন পিং ক্ষমতায় থাকার এই সীমারেখা তুলে দিয়েছেন নিজের জন্য। এরমধ্যে, কোভিড-১৯ মহামারির মোকাবেলার ক্ষেত্রে তার জিরো-কোভিড নীতি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে, প্রশ্ন উঠে শি জিন পিং এর নেতৃত্বের কার্যকারিতা নিয়েও। সমালোচনা আর ভিন্নমতকে দমন করতে শি জিন পিং জাতীয়তাবাদকে ব্যবহার করা শুরু করেন, শুরু করেন শক্তি প্রদর্শনের। অভ্যন্তরীণ ভিন্নমত দমনে শি জিন পিং যেসব গ্রেপ্তার আর নিপীড়ন চালান, সেগুলো থেকে চীনা নাগরিকদের মনোযোগ সরাতেও জাতীয়তাবাদের তাস খেলেছেন শি জিন পিং। উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসি গ্রহণের এটিও একটি কারণ।
চতুর্থত, বর্তমান ভূরাজনীতির অন্যতম একটি ক্ষেত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীন কৃত্রিম দ্বীপ বানিয়ে নিজেদের দখল তৈরির চেষ্টা করছে, অন্যদিকে বাজারের আকার বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটিজিকে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতাও চীনকে উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসি গ্রহণে আগ্রহী করেছে।
চীন কেন উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসি থেকে সরে যাচ্ছে?
চীন বেশ কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে নিজেদের উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছে। এর শুরু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কিন গ্যাংকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের দায়িত্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রাষ্ট্রদূত করার মধ্যে দিয়ে। কিন গ্যাংয়ের পূর্বসূরি চুই টিয়ানকির যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির উপর ব্যাপক জানাশোনা ছিল, ছিল নীতিনির্ধারণী পরিসরে ব্যক্তিগত যোগাযোগও। সেখানে তুলনামূলকভাবে অনভিজ্ঞ কিন গ্যাংকে নিয়োগের কারণ চুই টিয়ানকির উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসি অনুসরণ। কিন গ্যাং উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসির অনুসারী নন, রাষ্ট্রদূত হওয়ার পর তিনি বার বার উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসির পরিবর্তে পিসফুল ডিপ্লোমেসির কথা বলেছেন।
চীনের উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসি থেকে সরে আসার পরবর্তী অগ্রগতি ঘটে গত নভেম্বরে, বালিতে জি-২০ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে। সেখানে দ্বিপাক্ষীয় বৈঠক হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের মধ্যে, দুই পক্ষ সম্মত হয় একসাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করার। জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক ম্যাক্রোইকোনমিক্স স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা আর বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে একসাথে কাজ করতে সম্মত হয় দুই পক্ষ।
দুই পক্ষের কাছাকাছি আসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ। ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ বৈশ্বিক জ্বালানি প্রবাহের চক্রকে পরিবর্তন করে দিয়েছে, বাধাগ্রস্ত করছে বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা। এরমধ্যে ইউরোপের দিক থেকে একটি সম্মিলিত অবস্থান এসেছে রাশিয়ার যুদ্ধের বিপক্ষে, পাশ্চাত্যের দেশগুলো রাশিয়ার মিত্র দেশগুলোর ব্যাপারেও নিচ্ছে রক্ষণশীল অবস্থান। অনেক দেশই এই পরিস্থিতিকে দেশকে দেখছে বাইনারি অবস্থা হিসেবে, যেখানে রাশিয়া বা ইউক্রেনের পক্ষ নিতে হবে।
চীন আর ভারতের মতো অনেক দেশই নিজেদেরকে এই বাইনারি সমীকরণে নিতে চায়নি। কিন্তু, রাশিয়ার সাথে মিত্রতা রক্ষা করতে গিয়ে চীন ইউরোপ আর আমেরিকার বাজার হারাতে চায় না, চায় না উন্নয়নশীল বিশ্বে নিজের প্রভাব বিস্তারের সুযোগকে নষ্ট করতে। সামনের দিনগুলোতে হয়তো চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে আরো কাছাকাছি আসতে দেখা যাবে। অর্থাৎ, উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসি আর চীনের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে পারছে না।
এর মধ্যে, গত বছরের শেষে পরিবর্তন আসে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে, ওয়াং ইকে সরিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা কিন গ্যাংকে। প্রথাগতভাবে, ওয়াং ইকেও পরিচিত ছিলেন উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসির সমর্থক হিসেবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে পরিবর্তনের পরের সপ্তাহেই পরিবর্তন আসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের পদে, সরিয়ে দেওয়া হয় উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসির ধ্রুপদী ডিপ্লোমেট ঝাও লিজিয়ানকে।
ঝাও লিজিয়ান পাকিস্তানে চীনের রাষ্ট্রদূত থাকার সময় থেকেই সামাজিক যোগাযযোগ মাধ্যমে সরব ছিলেন, করেছেন বিভিন্ন আক্রমণাত্মক মন্তব্য, হয়েছেন বিতর্কিত। কিন্তু, খুব দ্রুতই তিনি পদোন্নতি পেয়েছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে, হয়ে উঠেছিলেন উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেটের উদাহরণ। সম্প্রতি তাকে পদায়ন করা হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সীমান্ত বিষয়ক বিভাগের ডেপুটি হেড হিসেবে। সাধারণত, চীনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্ররা পরবর্তীতে দ্রুত পদোন্নতি পান, পান গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং একসময় ছিলেন এই দায়িত্বে। উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেট ঝাও লিজিয়ানকে সমপদমর্যাদার একই পদে বদলি করা হলেও পূর্বসূরিদের বিবেচনায় এটি শাস্তিমূলক বদলিই।
চীন যখন সবচেয়ে বেশি উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসির চর্চা করেছে, তখনও চীনের সকল ডিপ্লোম্যাটের সমর্থক ছিলেন না। রাজনৈতিক লক্ষ্যের সাথে তাল মিলিয়ে কিছু ডিপ্লোম্যাট উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসি করেছেন, জাতীয় স্বার্থকে তারা এর মাধ্যমেই আদায় করতে চেয়েছেন। উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসির তীব্র প্রচার-প্রসারের যুগেও চীনা তাত্ত্বিকদের অনেকে একে সমর্থন করেননি, চীনকে আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সহজ লক্ষ্যে পরিণত করতে চাননি। বর্তমানে চীনের রাজনৈতিক লক্ষ্য পরিবর্তন আসছে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও সরছে উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোমেসির কৌশল থেকে। উলফ ওয়ারিয়র ডিপ্লোম্যাটদের অগুরুত্বপূর্ণ পদে বদলিই এর প্রমাণ, চীনের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অন্যান্য পদক্ষেপও এর প্রমাণ।