১৮ বছর বয়সী সৌদি তরুণী রাহাফ মোহাম্মেদ। মৃত্যুভয়ে পরিবারের কাছ থেকে পালিয়েছিলেন তিনি। এ বছরের ৫ জানুয়ারি কুয়েত থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পথে তিনি ব্যাংকক এয়ারপোর্টে ট্রানজিট করতে গিয়ে থাই কর্তৃপক্ষের হাতে ধরা পড়েন। এরপর তিনি থাইল্যান্ডের বিমানবন্দরের হোটেল কক্ষে নিজেকে আটকে রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে ফেরত না পাঠানোর আবেদন জানান। অনলাইনে সেটি ভাইরাল হওয়ার ফলে বিশ্বব্যাপী তার পক্ষে প্রবল জনমত গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে থাই কর্তৃপক্ষ তাকে কুয়েতে (যেখান থেকে তাকে সৌদি আরবে পাঠানো হতো) ফেরত না পাঠিয়ে সাময়িকভাবে নিজেদের দেশে থাকতে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন ইউএনএইচসিআর তাকে ‘শরণার্থী’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে নিজেদের নিরাপত্তায় নিয়ে আসে। ১১ জানুয়ারি তিনি কানাডায় আশ্রয় লাভের অনুমোদন পান, এবং ১২ জানুয়ারি টরন্টোয় পা রাখেন।
যেমনটি আগেই বলা হয়েছে, মৃত্যুভয়ে পালিয়েছিলেন তিনি। কারণ ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করায় তার পরিবারের সদস্যরা তার উপর প্রচন্ড ক্ষুব্ধ ছিল, তাকে নির্মমভাবে অত্যাচার করে যাচ্ছিল, এবং তাকে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছিল। তাছাড়া সৌদি আরবের আইন অনুযায়ীও ধর্মত্যাগকারীকে মৃত্যুদন্ডের বিধান রয়েছে। রাহাফের ভাষ্যমতে, তাকে যদি পুনরায় পরিবারের কাছে বা সৌদি আরবে ফিরিয়ে দেয়া হয়, তাহলে তার মৃত্যু অবধারিত।
এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, মৃত্যুভয়ই রাহাফের পলায়নের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ। কিন্তু এটিই কি একমাত্র কারণ? হিউম্যান রাইটসের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সাম্প্রতিক সময়ে রাহাফের মতো অনেক সৌদি নারীই যে পালিয়ে এসেছে, আসার চেষ্টা করেছে, বা এখনও চেষ্টা অব্যহত রেখেছে, এর পেছনে আরো বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
সবচেয়ে বড় কারণটি হলো সৌদি আরবের ‘অমানবিক’ পুরুষ অভিভাবকত্ব ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থার ফলে সৌদি নারীরা নিয়মতান্ত্রিক বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, তাদের উপর প্রতিনিয়ত গৃহ-নির্যাতন চালানো হচ্ছে, সর্বোপরি তাদের জীবন এতটাই দুর্বিষহ করে তোলা হচ্ছে যে, রাহাফ কিংবা এমন অনেক নারী স্বাধীন জীবনের আশায় দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসার মতো ঝুঁকি নিতে বাধ্য হচ্ছে। অথচ তারা খুব ভালো করেই জানে, যদি ধরা পড়ে যায় তাহলে তাদের বাঁচার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি।
সৌদি আরবের পুরুষ অভিভাবকত্ব ব্যবস্থা অনুযায়ী, একজন নারী জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই কোনো না কোনো পুরুষের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকবে। অর্থাৎ প্রতিটি সৌদি নারীর অবশ্যই একজন পুরুষ অভিভাবক থাকা বাধ্যতামূলক, যেটি সাধারণত হয়ে থাকে তাদের বাবা বা স্বামী। তবে এই দুইয়ের অনুপস্থিতিতে ভাই বা পুত্রও অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারে। এই অভিভাবকরাই ওই নারীর হয়ে তার জীবনের সকল বড় বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। কোনো ক্ষেত্রেই নারীর ব্যক্তিগত মতামতের কোনো মূল্য থাকবে না।
শুধু সৌদি আরবই নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশেও কমবেশি পুরুষ অভিভাবকত্ব ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। তবে নিঃসন্দেহে সৌদি আরবেই এই ব্যবস্থা সংস্লিষ্ট আইনকানুন সবচেয়ে বেশি কড়া, যে কারণে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, দৃশ্যত সেখানে নারীর কোনো অধিকারই নেই। বেশিরভাগ সৌদি নারী মুখ বুজে এই অধিকারহীন জীবন মেনে নিলেও, কিছু কিছু নারী বিদ্রোহ করে বসে; তারা পালানোর পথ খুঁজতে থাকে, এবং অনেকে সত্যি সত্যি পালিয়ে যায়ও।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, প্রধানত দশটি কারণে এসব বিদ্রোহী নারী পরিবার ও দেশ ছেড়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়।
ভ্রমণ বা পাসপোর্ট লাভের স্বাধীনতা নেই
সৌদি আরবে নারীদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমনের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ বিধি-নিষেধ ও নিয়ম-কানুনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, অন্য আর কোনো দেশেই এমন নজির নেই। একজন সৌদি নারী তার পুরুষ অভিভাবকের অনুমোদন ছাড়া দেশের বাইরে কোথাও যাওয়া তো দূরে থাক, এমনকি পাসপোর্টের জন্য আবেদনও করতে পারে না। কোনো কোনো নারী তাদের অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত ঘরের বাইরেও পা রাখতে পারে না। কোনো নারী যদি নিজের ইচ্ছায় বেরিয়ে যায়, তাহলে তার অভিভাবক আদালতে আবেদন করতে পারে সেই নারীকে নিজের পরিবারে ফিরে আসার নির্দেশ দিতে। ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতিও ছিল না।
যাতায়াতের এই কড়াকড়ির কারণে সৌদি নারীদের পক্ষে দেশ ত্যাগ করা খুবই দুরূহ কাজ। এ কারণে অনেক নারী তাদের পুরুষ অভিভাবকের ফোন হ্যাক করে ট্র্যাভেল পারমিশন সেটিংস পরিবর্তনের চেষ্টা করে। অনেকে আবার পরিবারের সাথে বিদেশে বেড়াতে গিয়ে পালিয়ে যায়, কারণ বিদেশের মাটিতে তাদেরকে সৌদি আরবের মতো অত বেশি আইনের মারপ্যাঁচের ভিতর দিয়ে যেতে হয় না।
বিয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনো স্বাধীনতা নেই
কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে সৌদি নারীদের নিজস্ব কোনো মতামতকে গ্রাহ্য করা হয় না। সে যদি কাউকে বিয়ে করতে চায়, তাহলে তাকে অবশ্যই পুরুষ অভিভাবকের লিখিত অনুমতি নিয়ে সেটি করতে হবে। আবার নারী যদি কাউকে বিয়ে করতে সম্মত না থাকে, তাহলেও তার কিছু করার থাকে না, কেননা নারীর সম্মতি কেবল মৌখিকভাবেই নেয়া হয়ে থাকে, ফলে চাইলেই জোরপূর্বক তার মুখ থেকে ‘হ্যাঁ’ বলিয়ে নেয়া সম্ভব।
সৌদি আইন অনুযায়ী নারীদের বিয়ের কোনো ন্যূনতম বয়সসীমা নেই। সৌদি গণমাধ্যমগুলোতে প্রায়ই এমনকি ৮-৯ বছরের মেয়েদের বিয়ের সংবাদও উঠে আসে। এ বছরের ৯ জানুয়ারি দেশটির শুরা কাউন্সিল প্রস্তাব দিয়েছে, মেয়েদের বিয়ের বয়স সর্বনিম্ন ১৮ বছর করার, তবে আদালতের অনুমোদন অনুযায়ী মেয়েদেরকে ১৫ থেকে ১৮ বছরের মধ্যেও বিয়ে দেয়া যাবে। তবে প্রস্তাবনাটি এখনো সৌদি মন্ত্রিপরিষদ কর্তৃক পাসের অপেক্ষায় আছে।
গৃহ-নির্যাতন
সৌদি নারীরা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি গৃহ-নির্যাতনের শিকার হয়। কেবল ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর থেকে ২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত এক বছর সময়কালের মধ্যেই সৌদি শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নারীদের ৮,০১৬টি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল, যার বেশিরভাগের জন্যই দায়ী ছিল সেসব নারীর স্বামীরা। ২০১৩ সালে সৌদি আরব গৃহ-নির্যাতনকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করলেও এখনও এই আইনের কোনো সুষ্ঠু প্রয়োগ দেখা যায়নি। দেশটির জাতীয় পরিবার প্রতিরক্ষা প্রকল্পের মতে, ৩৫ শতাংশ সৌদি নারীই সহিংসতার শিকার হয়। কিন্তু বিচারের আশায় পুলিশ কিংবা আদালতের দ্বারস্থ হতে গেলেও নারীদের সাথে একজন পুরুষ আত্মীয় থাকা প্রয়োজন বলে বেশিরভাগ নারী নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হওয়ার পরও কোনো অভিযোগ দায়ের করে না।
চাকরিক্ষেত্রে বৈষম্য
সৌদি আরব সরকার সাম্প্রতিক সময়ে নারীদের কর্মসংস্থানের অনেক নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এখন সরকারি চাকরি করতে গেলে আগ্রহী নারীদের উপর পুরুষ অভিভাবকত্ব ব্যবস্থার কড়াকড়ি চাপিয়ে দেয়া হয় না বটে, কিন্তু বেশিরভাগ প্রাইভেট ফার্মে চাকরি নিতে গেলে নারীদেরকে এখনো সঙ্গে করে পুরুষ অভিভাবকের অনুমতিপত্র নিয়ে যেতে হয়। তাছাড়া এমন অনেক চাকরিই আছে যেখানে কোনোভাবেই নারীদেরকে সুযোগ দেয়া হয় না। যেমন: একজন সৌদি নারীকে গাড়ি চালক বা বিচারক হিসেবে চাকরি দেয়া হয় না।
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বৈষম্য
২০১৪ সালে রাষ্ট্রকর্তৃক নিয়ম জারি করা হয়েছে যে, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে একজন নারীর নিজস্ব সম্মতি প্রদানই যথেষ্ট। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা হলো, বেশিরভাগ হাসপাতালেরই আভ্যন্তরীণ বিধি মোতাবেক, একজন নারীকে কোনো বিশেষ চিকিৎসা দেয়ার আগে অবশ্যই তার পুরুষ অভিভাবকের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। সঠিক সময়ে পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি না পাওয়ায়, অনেক সৌদি নারীকে দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক অবনতির শিকার হতে হয়, এমনকি কখনো কখনো অকালমৃত্যুও বরণ করতে হয়।
বিচ্ছেদ, সন্তানের হেফাজত ও উত্তরাধিকারে অসাম্য
অন্যান্য অনেক মুসলিম-অধ্যুষিত দেশের মতো, সৌদি আরবের আইনের মূল ভিত্তিও ইসলামী শরিয়া আইন। কিন্তু তফাৎটা হলো, অধিকাংশ দেশের মতো সৌদি আরবের কোনো লিখিত পরিবার আইন নেই।
দেশটিতে পুরুষদের জন্য বিচ্ছেদ যতটা সহজ, নারীদের জন্য ঠিক ততটাই কঠিন। পুরুষেরা কোনো শর্ত ছাড়াই একতরফাভাবে তাদের স্ত্রীদের তালাক দিতে পারে। এবং তারা যে তাদের স্ত্রীদের তালাক দিতে চলেছে, সেটি স্ত্রীদেরকে জানানোরও কোনো প্রয়োজন নেই, না সেই স্ত্রীদের রয়েছে আদালতে উপস্থিত হয়ে বিচ্ছেদের ফরমান গ্রহণের কোনো আবশ্যকতা।
অবশ্য সৌদি কর্তৃপক্ষ জানুয়ারিতে চালু করেছে একটি প্রজ্ঞাপন ব্যবস্থা, যা অনুসারে স্বামীরা আদালতে বিচ্ছেদের আবেদন করলে, স্ত্রীরা টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে সেটি জেনে যাবে। কিন্তু বাস্তবে এখনো দেখা যাচ্ছে অনেক পুরুষই তাদের স্ত্রীকে একতরফাভাবে, মৌখিক তালাক দিয়ে দিচ্ছে, এবং সেটির কোনো লিখিত দলিল তৈরিরও প্রয়োজন বোধ করছে না। ফলে পরবর্তীতে নারীদেরকে নিজ উদ্যোগেই আদালতে গিয়ে প্রমাণ করতে হচ্ছে যে তাদের স্বামীরা তাদেরকে তালাক দিয়েছে।
অথচ নারীদের জন্য একতরফা তালাকের কোনো সুবিধা নেই। কেউ যদি স্বামীর সাথে বিচ্ছেদে আগ্রহী হয়, তাহলে তাকে প্রলম্বিত প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে যেতে হয়, আর এজন্য প্রচুর খরচও হয়। নারীদের সামনে দুটি পথ খোলা রয়েছে। এক হলো তারা খুল তালাক চাইতে পারে, যেখানে তাদের স্বামী এই শর্তে তাদের সাথে বিচ্ছেদে রাজি হবে যে, তাদের স্ত্রীদেরকে যৌতুকের পুরো টাকা ফিরিয়ে দিতে হবে, অথবা অন্য উপায়টি হলো স্বামীর নামে কোনো একটি অভিযোগ এনে সেটির কারণবশত তালাক চাওয়া, যেজন্য প্রথমে আদালতে স্বামীর বিরুদ্ধে সেই অভিযোগটি অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে। যেহেতু কোনো লিখিত পরিবার আইন নেই, তাই বিচারককে নিজের বিবেচনায়ই স্থির করতে হয় যে, স্বামীর আসলেই কোনো দোষ আছে কি না। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এই পুরো প্রক্রিয়া চলাকালে স্বামীই তার স্ত্রীর অভিভাবকের দায়িত্বে থাকে, অর্থাৎ সে চাইলেই তার স্ত্রীর উপর নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারে বা নিজের ইচ্ছানুযায়ীকে স্ত্রীকে পরিচালিত করতে পারে। ফলে এমন বিচ্ছেদের মামলায় একজন নারীর জয়ের সম্ভাবনা থাকে একদমই ক্ষীণ।
বিচ্ছেদের পর আদালত মায়ের কাছে সন্তানের হেফাজতের অধিকার দিতে পারেন, কিন্তু সেই মায়ের কোনো অধিকারই থাকবে না সন্তানের বৈধ অভিভাবক হওয়ার। সাধারণত ৭ বছর বয়সেই কন্যাসন্তানকে তার বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে হয়। আর পুত্রসন্তানেরা ৯ বছর বয়সে নিজেরাই বেছে নেয়ার সুযোগ পায় যে তারা বাবার সাথে নাকি মায়ের সাথে থাকবে।
২০১৪ সালে অবশ্য একটি ইতিবাচক আইন প্রণীত হয়েছে, যেটি অনুসারে সন্তান মায়ের কাছে থাকলে সেই মা সন্তানের দলিল-দস্তাবেজ নিজের কাছে রাখার সুযোগ পাবে এবং যেকোনো সরকারি বা দাপ্তরিক কাজে সেগুলো ব্যবহার করতে পারবে। এই অধিকারের ফলে মায়েরা এখন নিজেরাই সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করতে পারছে, হাসপাতালে বা ডাক্তারের কাছে নিয়ে সন্তানের চিকিৎসা করাতে পারছে, এমনকি সন্তানের পরিচয়পত্রও গ্রহণ করতে পারছে। অবশ্য এরপরও বাবার কাছেই সন্তানের ভ্রমণের অনুমতি প্রদান কিংবা কন্যাসন্তানের বিয়ে দেয়ার অধিকার থাকে।
উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে, ইসলামী শরিয়া অনুসারে নারীরা পুরুষদের অর্ধেক সম্পদের মালিক হয়।
অভিভাবকত্ব স্থানান্তরের চ্যালেঞ্জ
বিশেষ কোনো প্রয়োজন হলে নারীরা এক পুরুষ আত্মীয় থেকে অন্য পুরুষ আত্মীয়ের কাছে তাদের অভিভাবকত্ব স্থানান্তর করতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রেও তাদেরকে খুবই জটিল আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। অভিভাবকত্ব পরিবর্তন করতে হলে পূর্ববর্তী অভিভাবকের বিরুদ্ধে নারীদের যে অভিযোগ, তা আদালতে অবশ্যই প্রমাণ করতে হয়। কিন্তু এই প্রমাণের বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রেই অনেক সময়সাপেক্ষ হয়, এবং বহু চেষ্টা তদবিরের পরও অনেক সময় নারীরা আদালতের সবুজ সংকেত অর্জনে ব্যর্থ হয়।
জেল বা আশ্রয়কেন্দ্র ত্যাগের উপর আরোপিত বিধি-নিষেধ
সৌদি আরবের জেলখানা ও কিশোর আটককেন্দ্রগুলো নারীদেরকে কেবলমাত্র তখনই মুক্তিলাভের অনুমতি দেয়, যখন তারা তাদের কোনো বৈধ পুরুষ আত্মীয়কে হাজির করতে পারে। কিন্তু কোনো নারীর পরিবার যদি তাকে ফিরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন সেই নারীকে তার শাস্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও বন্দি অবস্থায় থাকতে হয়। শুধু পরিবারের সাথে বনিবনা হয়ে গেলে কিংবা নতুন কোনো পুরুষ অভিভাবক জোগাড় করতে পারলেই সেই নারীকে মুক্তি দেয়া হয়। এজন্য অনেক নারী বাধ্য হয়ে জেলের ভিতরই অন্য কোনো পুরুষ বন্দিকে বিয়ে করে, তাকে তার বৈধ অভিভাবক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে বাধ্য হয়।
বিদেশে পড়াশোনায় বাঁধা
সৌদি পুরুষেরা যেমন সহজেই সরকারি বৃত্তি নিয়ে বাইরের কোনো দেশে পড়াশোনার জন্য যেতে পারে, নারীদের সেই সুযোগ নেই। কিন্তু নারীদেরকে অবশ্যই কোনো পুরুষ অভিভাবকের অনুমোদন নিয়ে তারপর বৃত্তির জন্য আবেদন করতে হয়। তাছাড়া ব্যবহারিকভাবে এই আইনের প্রয়োগ না থাকলেও, লিখিত আছে যে একজন নারীকে বিদেশে পড়াশোনা করতে হলে, সেই পুরোটা সময় তাকে অবশ্যই একজন পুরুষ আত্মীয়ের অধীনে থাকতে হবে।
রাজনৈতিক নিপীড়ন
ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের অধীনে, সৌদি কর্তৃপক্ষ বিদ্রোহী, মানবাধিকার কর্মী এবং স্বাধীন যাজকদের উপর দমন-পীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এবং ২০১৮ সালে এই দমন-পীড়নের প্রভাব সেসব নারী অধিকার কর্মীদের উপরও শুরু হয়েছে, যারা দেশটিতে পুরুষ অভিভাবকত্ব ব্যবস্থা নির্মূলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। ২০১৮ সালের ১৫ মে, সৌদি আরবে নারীদের গাড়ি চালানোর উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার মাত্র কিছুদিন আগে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেশের খ্যাতিমান নারী অধিকারকর্মীদের গ্রেফতার করতে শুরু করে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে, যা সুস্পষ্টভাবেই তাদের আন্দোলনের সাথে সম্পর্কিত।
নভেম্বর মাস পর্যন্ত অন্তত দশজন নারী কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই বন্দি ছিলেন, যদিও অনেকেই অনুমান করেছিল তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হবে তাতে তাদের প্রত্যেকের সর্বোচ্চ ২০ বছর করে কারাদন্ড হতে পারে। ঠিক ঐ সময়ই বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন প্রতিবেদন করা শুরু করে যে, সৌদি তদন্তকারীরা জেলের ভেতর অন্তত চারজন নারীর উপর অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছে। তারা নারীদেরকে বৈদ্যুতিক শক দিয়েছে, তাদের ঊরুতে চাবুক দিয়ে আঘাত করেছে, এবং যৌন নির্যাতনও চালিয়েছে।
চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/