চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে দেখা মিলল কিছু তরুণের। যারা পুরনো বইয়ের দোকানে গিয়ে দোকানদারদের বলছেন, কিছু বই সম্ভব হলে তাদেরকে দান করতে, অথবা স্বল্পমূল্যে বিক্রি। জিজ্ঞেস করতেই সাদিয়া সুলতানা নামের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানালেন, তারা ‘ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজ’ নামের একটি সংগঠনের উদ্যোগে চট্টগ্রামে আয়োজন করতে চলেছেন একটি বই বিনিময় উৎসবের। সেই উৎসবের জন্য বই সংগ্রহ করতেই এই ফাল্গুনের দুপুরে তাদের বইয়ের খোঁজে বের হওয়া।
বই বিনিময়ের সংস্কৃতি বাংলাদেশে এখনও বেশ বড় পরিসরে গড়ে ওঠেনি। আমাদের কাছে এখনও বই উৎসব বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গন কিংবা জেলা শহর আর মফস্বলে বইয়ের বেশ কিছু স্টলের দৃশ্য। আর বইয়ের বিনিময় বলতে আমাদের চেনা দৃশ্য হলো, স্কুল বা পাড়ার বন্ধুর সাথে তিন গোয়েন্দা, সায়েন্স ফিকশন বা জনপ্রিয় উপন্যাসের বইয়ের হাত বদল। আর একটু বয়স হলে কিছু বইয়ের বিনিময় হয়তো হয়, তবে তা বেশিরভাগ সময়েই প্রয়োজনে, শখ কিংবা নিয়মিত অভ্যাস হিসেবে নয়।
এর বাইরে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে বইমেলা ব্যতীত বই নিয়ে উৎসবের কোনো রেওয়াজ গড়ে উঠেনি তেমন একটা। অথচ জার্মানি, লন্ডনসহ সারা দুনিয়ায়, এমনকি আমাদের প্রতিবেশী ভারতেও প্রায় দেখা যায়, বিশাল একেকটা সড়ক ছেয়ে গেছে বইয়ে। যে কেউ এখান থেকে বই নিয়ে যেতে পারছেন, পারছেন রেখে যেতেও। এমন নয় যে, সেসব দেশে প্রকাশনীগুলোর ব্যবসা রমরমা নয় কিংবা সেখানে বইমেলা হয় না। যারা খোঁজ রাখেন তারা জানেন, এবং তাদের প্রকাশনাগুলোর মান দেখেই আঁচ করতে পারেন যে, কত দারুণ সব কাজ সেখানে নিয়মিতই হয়। তাহলে এভাবে মুক্ত আয়োজনে বই বিনিময়ের কারণ কী?
মূলত এধরনের আয়োজনের লক্ষ্যই থাকে, জ্ঞানের বিনিময়। আনুষ্ঠানিক বইমেলার বাইরে সমাজের নানান রকমের মানুষের অংশগ্রহণে এরকম বিনিময় উৎসবের আবেদন নিশ্চয়ই আমাদের দেশেও আছে। আর এখন করোনার দুর্যোগের মাঝে মানুষ নতুনভাবে অনেক কিছুই শিখেছে, যা হয়তো সেভাবে ভাবা হয়নি আগে। মানুষ বিকল্প তৈরি করতে জানছে। অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে, হচ্ছে কনসার্টও। ঠিক তেমনই আমাদের দেশে এক দারুণ নতুন আয়োজন হতে চলেছে বই বিনিময় উৎসব। দেশের বিভিন্ন জেলার শিল্প-সাহিত্য নিয়ে আগ্রহী তরুণেরা এগিয়ে আসছে এমন আয়োজন নিয়ে।
বরিশালে ৫ মার্চ থেকে বই বিনিময়ের আয়োজন করেছে ‘গ্রন্থদ্বীপ’, সিলেটে ‘ইনোভেটর’- এর আয়োজনে এই উৎসব চলছে ৬ মার্চ থেকে, চাঁদপুরে ৫ মার্চ থেকে উৎসবের আয়োজন করেছে ‘পূর্ণয়’।
এর আগে সাড়া জাগিয়ে শুরুটা করেছিল ‘বুক ব্যাংক’, ফেব্রুয়ারির শুরুতে খুলনায় বই বিনিময় উৎসবের আয়োজন করে। এরপর ফেব্রুয়ারির শেষদিকে ‘বই বন্ধু’র আয়োজনে ঢাকায়ও হয়েছে জমজমাট বই বিনিময় উৎসব।
আসছে ১১ মার্চ চট্টগ্রামে এমনই একটি দিনব্যাপী আয়োজন করতে চলেছে চট্টগ্রামের তরুণদের সংগঠন ‘ফেইল্ড ক্যামেরা স্টোরিজ’। সেদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে এই উৎসব। সংগঠনটির পরিচালক সাইদ খান সাগর জানান, ‘বই নয়, জ্ঞানের বিনিময়’ এমন স্লোগান নিয়ে নগরীর ব্যস্ততম জায়গা জামালখান মোড়ে খোলা আকাশের নিচে বই বিনিময় উৎসবের আয়োজন করতে চলেছেন তারা। ৫ হাজার বই বিনিময়ের লক্ষ্য থাকছে এই আয়োজনে। সংগঠনটির আরেক পরিচালক অংকন দে জানান, সম্পূর্ণ বিনামূল্যে অনলাইন এবং অফলাইন রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে যে কেউই তার বই এখানে রেখে যেতে পারবেন, পাশাপাশি ক্যাটাগরি অনুসারে নিয়ে যেতে পারবেন তার পছন্দের বই। উৎসবে অংশ নেওয়ার জন্য মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করেছেন আয়োজকেরা। চট্টগ্রামে এই বই বিনিময় উৎসবকে সামনে রেখে ক্যাম্পেইন চলছে অনলাইনে এবং অফলাইনে, চলছে বই সংগ্রহ।
দারুণ এই উৎসবে অংশ নিতে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে এই ইভেন্ট লিংক থেকে: https://fb.me/e/3vc13ZuIp। সারাদেশের তরুণেরা এগিয়ে আসুক এমন আরও সব উৎসব নিয়ে, জ্ঞান বিনিময়ের উৎসাহ ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে।