ফিলিস্তিনের পক্ষে শ্লোগান দেওয়ায় নেসেট অধিবেশন থেকে ইসরায়েলি এমপি বহিষ্কার

ইসরায়েলের সংসদ নেসেটে দাঁড়িয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে শ্লোগান দেওয়ায় আরব সংসদ সদস্যদেরকে জোরপূর্বক নেসেট থেকে বের করে দিয়ে সংসদের নিরাপত্তারক্ষীরা। গতকাল সোমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে।

ইসরায়েলের সংসদ নেসেটের ১২০ সদস্যের মধ্যে ১৮ জন আছেন ‘ইসরায়েলি আরব’। অর্থাৎ ইসরায়েলের নাগরিক হলেও তাদের ভাষা আরবি। এদের মধ্যে ১১ জন মুসলমান আছেন। এই আরব ইসরায়েলি এমপিদের সমন্বয়ে গঠিত ‘আরব জয়েন্ট লিস্ট’ দলটি ইসরায়েলের সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম দল। এরা সব সময়ই ইসরায়েলের জায়নবাদী নীতির বিরুদ্ধে এবং জেরুজালেমের উপর ফিলিস্তিনের পক্ষে সোচ্চার।

প্রতিবাদরত আরব এমপিদের দিকে ছুটে যাচ্ছে নেসেটের নিরাপত্তারক্ষীরা; Source: Ariel Schalit/ Reuters

সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা দিলে অন্য অনেকের মতো আরব জয়েন্ট লিস্টও তার বিরোধিতা করে। যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের মধ্যপ্রাচ্য সফরের ধারাবাহিকতায় ইসরায়েলের নেসেটে বক্তব্য রাখার কর্মসূচী গৃহীত হলে, তারা এর প্রতিবাদ করে এবং তা বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়। দলটির প্রধান আইমান ওদেহ বলেন, পেন্সের ভাষণ বর্জন করা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। তিনি মাইক পেন্সকে একজন বিপজ্জনক ব্যক্তি হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, তার উদ্দেশ্য পুরো অঞ্চলকে ধ্বংস করে দেওয়া।

গতকাল সোমবার মাইক পেন্স যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম উপ রাষ্ট্রপতি হিসেবে নেসেটে ভাষণ দেন। কিন্তু তার বক্তব্য শুরুর সাথে সাথেই ইসরায়েলি আরব সংসদ সদস্যরা প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে। তারা শ্লোগান দেয়, “জেরুজালেম হচ্ছে ফিলিস্তিনের রাজধানী।” তারা আল-আকসা মসজিদ কম্পাউন্ডের ছবি সম্বলিত পোস্টারও উঁচু করে তুলে ধরে। এর সাথে সাথেই নিরাপত্তারক্ষীরা ছুটে আসে এবং আরব এমপিদেরকে জোর করে বাইরে নিয়ে যায়।

দলটির এক নেতা, জামাল জাহালকা আল-জাজিরার সাথে সাক্ষাৎকারে বলেন যে, তারা ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে। ট্রাম্প শুধু ফিলিস্তিনিদেরই শত্রু না, তিনি শান্তি প্রক্রিয়ারও শত্রু। তিনি আরও বলেন, তারা মাইক পেন্সের বক্তব্যের প্রতিবাদ করার জন্যই উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। পেন্স এ অঞ্চলে একজন অনাহুত ব্যক্তি।

জামাল জাহালকা তাদেরকে জোরপূর্বক বহিষ্কারের নিন্দা জানান। তিনি বলেন, নিরাপত্তারক্ষীরা তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে এবং টেনে-হিঁচড়ে বের করে এনেছে, যদিও তারা নিজেরাই বের হয়ে যেতে প্রস্তুত ছিলেন। তিনি নেসেটেরও সমালোচনা করেন এই বলে, নিয়ম অনুযায়ী নেসেট থেকে তাদের নাম ঘোষণা করা হয়নি যে, তাদেরকে বের হয়ে যেতে হবে। সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূতভাবেই তাদেরকে বের করা হয়েছে।

তবে তিনি মনে করেন, তাদের প্রতিবাদ সফল হয়েছে। তিনি বলেন, তাদের উপর নির্দয়ভাবে আক্রমণ করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বিষয়টি মিডিয়া উঠে আসার ফলে বিশ্ববাসী জানতে পারছে যে, খোদ জেরুজালেমেই ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার মানুষ আছে।

আরব এমপিদেরকে বহিষ্কারের পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু সহ অন্যান্য এমপিরা মাইক পেন্সকে দাঁড়িয়ে সম্মান দেখান। মাইক পেন্স তার ভাষণে ট্রাম্পের ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং ঘোষণা দেন যে, ২০১৯ সালেই তারা ইসরায়েলের রাজধানী তেল-আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করবেন।

ফিচার ইমেজ- Ariel Schalit/ Reuters

Related Articles

Exit mobile version