বিন লাদেন গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে সৌদি আরব!

সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সৌদি বিন লাদেন গ্রুপের ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে সৌদি আরব। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির সম্পত্তির কিছু অংশ বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্তও বিবেচনাধীন আছে। অভ্যন্তরীণ সূত্রের বরাত দিয়ে গতকাল এ সংবাদ প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স

সৌদি বিন লাদেন গ্রুপ সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে প্রভাবশালী নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। পবিত্র কাবা শরিফের সংস্কার, পরিবর্ধন থেকে শুরু করে সৌদি আরবের অধিকাংশ বৃহৎ উন্নয়নমূলক প্রকল্পেই এই প্রতিষ্ঠানটি জড়িত। বর্তমানে তাদের উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে আছে ১২৩ কোটি মার্কিন ডলার চুক্তির বিনিময়ে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন, জেদ্দা টাওয়ার নির্মাণ। সৌদি আরব ছাড়াও কাতার, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া সহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে কোম্পানীটির বিভিন্ন প্রকল্প চলমান আছে।

সৌদি আরবের রাজ পরিবারের সাথে বিন লাদেন গ্রুপের সম্পর্ক বেশ ভালো ছিল। কিন্তু ২০১৫ সালে পবিত্র হারাম শরিফের সংস্কার কার্যক্রম চলাকালে কোম্পানীটির একটি ক্রেন ধ্বসে ১০৭ জন নিহত হওয়ার পর থেকে কোম্পানীটি সরকারি চাপের মুখে পড়ে। ঐ ঘটনার পর থেকে কোম্পানীটি নতুন কোনো সরকারি প্রকল্প পায়নি। ফলে তাদের অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয় এবং কয়েক হাজার কর্মীকে ছাটাই করতে বাধ্য হয়।

গত ৪ নভেম্বর, সৌদি আরবের যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশে সৌদি রাজপরিবারের একাধিক রাজপুত্র এবং ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যে কথিত দুর্নীতি বিরোধী অভিযান চালানো হয়, তাতে সৌদি বিন লাদেন গ্রুপের চেয়ারম্যান বকর বিন লাদেন সহ লাদেন পরিবারের আরো কিছু সদস্যকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, যারা সবাই কোম্পানীটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত।

সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, তাদের মুক্তির ব্যাপারে সরকারের সাথে দেন দরবার চলছে। মুক্তির জন্য তাদেরকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হতে পারে, অথবা বিন লাদেন কোম্পানীর কাছে সৌদি সরকারের যে ৩০ বিলিয়ন ডলার দেনা আছে, তা থেকে বড় একটি অংশ ছাড় দিতে হতে পারে।

বকর বিন লাদেন; Source: arabianbusiness.com

বিন লাদেন পরিবারের সদস্যদেরকে গ্রেপ্তারের পরপরই সৌদি আরবের অর্থ মন্ত্রণালয় কোম্পানীটির ব্যবসা দেখাশোনার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি তৈরি করেছিল, যাদের মধ্যে তিনজন সরকারী প্রতিনিধি, আর বাকি দুজন বিন লাদেন পরিবারের সদস্য। কোম্পানীটির মূল মালিকানা যদিও এখনও বিন লাদেন পরিবারের হাতেই, কিন্তু সরকারের সাথে তাদের চলমান দেন-দরবারই শেষ পর্যন্ত তাদের ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে।

উল্লেখ্য, বিন লাদেন কোম্পানীটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ওসামা বিন লাদেনের বাবা মোহাম্মদ বিন লাদেন। কোম্পানীটির বর্তমান চেয়ারম্যান বকর বিন লাদেনও ওসামা বিন লাদেনের সৎ ভাই। অবশ্য ওসামা বিন লাদেনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে কোম্পানীটির বা এর কোনো কর্মকর্তার কোনো সম্পর্ক নেই।

বকর বিন লাদেন একাই কোম্পানীটির ২৩.৫৮% শেয়ারের মালিক। তার বিপুল সম্পত্তি এবং রাজ পরিবার ও জেদ্দা প্রশাসনের উপর তার বিশাল প্রভাবের কারণে তাকেই জেদ্দার প্রকৃত শাসক বলে মনে করা হতো। কিন্তু যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিশেষ অভিযানে ক্ষমতাসীন বিভিন্ন রাজপুত্র অথবা কোটিপতি ব্যবসায়ীরা কেউই নিস্তার পায়নি। সৌদি সরকারের সাথে বিন লাদেন গ্রুপের শেষ পর্যন্ত কী ধরনের আপোষ হয়, তার উপর অনেকাংশেই অন্যান্য আটক ব্যবসায়ীদের ভবিষ্যত, কোম্পানীটির ভবিষ্যত এবং একইসাথে মোহাম্মদ বিন সালমানের ভিশন উচ্চাভিলাষী ২০৩০ এর সাফল্য নির্ভর করবে।

ফিচার ইমেজ- Faisal Al Nasser/ REUTERS

Related Articles

Exit mobile version