বিরত থাকুন অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের ব্যবহার থেকে

১৯১০ সাল থেকে মানুষ অ্যালুমিনিয়ামকে পুরোপুরিভাবে ব্যবহার করা শুরু করে। সুইজারল্যান্ডের এমিশোফেনে ডক্টর লোবার, নেহা এন্ড শি নামক অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল রোলিং কারখানা তৈরির পর এই ধাতুর ব্যবহার আরো বেগবান হয়। ১৯১৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহার শুরু হয়। সে সময় চ্যুইংগাম, ক্যান্ডি বার ইত্যাদির মোড়ক হিসেবে ব্যবহার করা হতো এটি। পরবর্তীতে সবজি ও মাংস রান্নায়, বারবিকিউ করতে, ধোঁয়াকে খাবারের ভেতরে একটু হলেও আটকে রাখতে আমেরিকাসহ পৃথিবীর আরো দেশে শুরু হয় অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহার।

অ্যালুমিনিয়ামের মোড়কে বারবিকিউ; Source: Reader’s Digest

আর বর্তমানে আমরা দৈনন্দিন জীবনে কতখানি অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করছি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষ করে খাবারে অ্যালুমিনিয়ামের মোড়ক ব্যবহার করা আমাদের জন্য প্রাত্যহিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই অভ্যাসটি নিয়েই চিন্তিত বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, খাবার অ্যালুমিনিয়ামের মোড়কে মুড়িয়ে রাখলে সেখান থেকে খানিকটা ধাতু খাবারেও প্রবেশ করে আর তৈরি করে নানা রকমের শারীরিক সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, মানব শরীর প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অ্যালুমিনিয়াম নিঃসরণ করতে পারে। তাই শরীরের ওজনের প্রতি কিলোগ্রামে ৪৫ গ্রাম অ্যালুমিনিয়াম গ্রহণ করার ক্ষমতা আছে মানব শরীরের প্রতিদিন। তবে পরিমাণটা এর চাইতে বেশি হয়ে গেলেই সমস্যা দেখা দেয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, অনেক মানুষই এর চাইতে বেশি পরিমাণ অ্যালুমিনিয়াম গ্রহণ করেন।

অ্যালুমিনিয়ামের ফয়েলের তৈরি নানা জিনিসপত্র; Source: Bizongo – WordPress.com

বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা চালাচ্ছিলেন মানুষের শরীরে অ্যালুমিনিয়ামের প্রভাব নিয়ে। ফলাফলটা খুব বেশি ভালো আসেনি। জানা গেছে যে, অ্যালুমিনিয়াম আলঝেইমার্স রোগের জন্য অনেকটাই দায়ী। অনেক বেশি অ্যালুমিনিয়াম গ্রহণ শরীরে কোষ তৈরির পরিমাণ কমিয়ে দেয়। হাড়ের সমস্যায় ভুগছেন এমন রোগীদের জন্য এটি আরো ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। ২০১২ সালে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ইলেকট্রোকেমিক্যাল সায়েন্সে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায় যে, আমাদের খাবারের মোড়ক থেকে কতটুকু অ্যালুমিনিয়াম মিশ্রিত হবে তা নির্ভর করে তাপমাত্রা এবং এসিডিটির উপরে।

তবে মোড়ক সহকারে যে খাবারগুলো রান্না করা হয় সেগুলোতে অ্যালুমিনিয়াম আরো বেশি পরিমাণে মিশে যায় বলে জানা যায়। এন শামস ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক এবং রসায়ন বিভাগের প্রধান ঘ্যাদা বাসিয়োনি পরীক্ষার মাধ্যমে জানান যে, মানুষকে অ্যালুমিনিয়াম কতটা প্রভাবিত করতে পারবে সেটা মূলত নির্ভর করে একজন মানুষ কতটা অ্যালুমিনিয়াম গ্রহণ করতে পারেন তার উপরে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যদিও একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ উল্লেখ করে দিয়েছে।

ভবিষ্যতে ভালো কিছু আশা করলে এবং সুস্থ থাকতে চাইলে তাই আমাদের এখনই উচিৎ অ্যালুমিনিয়ামের মোড়ক ব্যবহার বন্ধ করা, বিশেষ করে খাবার রান্না করার সময়। গ্রিল করার প্রয়োজনে ব্যবহার করুন স্টেইনলেস স্টিল গ্রিলিং বাস্কেট কিংবা বারবার ব্যবহার করা যায় এমন স্কিউয়েরস বা শলা। চুলায় রোস্ট করার সময় গ্লাস প্যান ব্যবহার করুন। অর্থাৎ যতটা সম্ভব চেষ্টা করুন অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল বা মোড়ক ব্যবহার না করেই রান্না সম্পন্ন করার। বর্তমানে সুস্থ আছেন, তাই ভবিষ্যতকেও সুরিক্ষিত করুন নিজের এই একটি পদক্ষেপে।

ফিচার ইমেজ: Serious Eats

Related Articles

Exit mobile version