Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নব্বই দশকের যে কার্টুনগুলোর কথা কখনো ভোলা যাবে না

১৯৯২-৯৩ সালের কথা। সাবির আর সাবাব দুই ভাই (কাল্পনিক), স্কুল থেকে ফিরেই তারা বসে পড়ত টেলিভিশনের সামনে। প্রতিদিন দুপুর ৩টা থেকে শুরু হতো একটা না একটা কার্টুন। নিত্যদিনের পড়াশোনার ফাঁকে এই আধা ঘণ্টার কার্টুন শো-ই ছিল তাদের জীবনে স্বস্তির এক ঝলক দমকা বাতাসের মতো। শুধু সাবির কিংবা সাবাবই না, নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশী বেশির ভাগ শিশুরই বিনোদনের প্রধান অবলম্বন ছিল গডজিলা, ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট, সামুরাই এক্স, পপাই, টম অ্যান্ড জেরি, উডি উডপেকার, জুমানজি কিংবা বানানাস ইন পাজামাস-এর মতো কার্টুনগুলো।

নব্বইয়ের দশকের মাঝমাঝি সময়ে এই তালিকায় যুক্ত হয় মীনা কার্টুনের নাম। তখন তো আর এখনকার মতো চ্যানেলের ছড়াছড়ি ছিল না, বিজ্ঞাপনের ভিড়ে মূল অনুষ্ঠান হারিয়ে যাওয়ার আশংকাও ছিল না। তাই শিশুদের সাথে তাদের বাবা-মায়েরাও যে একই কার্টুনে মজে থাকতেন তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

মীনা

নয় বছর বয়সী উচ্ছল, প্রাণবন্ত, সাহসী আর প্রগতিশীল মেয়ে মীনা। সে স্কুলে যেতে চায়, নতুন কিছু শিখতে চায়, জানতে চায়। বাবা-মায়ের শত আদরের সেই মেয়েটি সমাজের নানা বৈষম্য আর অযাচিত প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। ছোট ভাই রাজু, পোষা টিয়াপাখি মিঠু, ছোট বোন রাণী, বাবা, মা, দাদি, বন্ধু-বান্ধব, গ্রামবাসী এই নিয়েই তার জীবন। ইউনিসেফ এবং হান্না-বারবারা কার্টুনসের সহায়তায় প্রচারিত এই কার্টুনটির সাথে বাংলাদেশের কমবেশি প্রায় প্রতিটি শিশুই পরিচিত।

মীনা; Source: hatekhari24.com

বাল্যবিবাহ বন্ধ করা, স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি ল্যাট্রিন নির্মাণ ও ব্যবহারে উৎসাহিত করা, মেয়েদের স্কুলে পাঠানো, অপরিণত মেয়েদের বিয়ে নয় বরং স্কুলকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া, যৌতুক বন্ধ করা, ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্য সমান পুষ্টি ও সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা, সম-অধিকার পেলে মেয়েরাও অনেক কিছু করতে পারে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হয় মীনা। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোতে বাংলা, ইংরেজি, উর্দু, হিন্দি এবং নেপালি ভাষায় প্রচারিত এই শিক্ষামূলক কার্টুনটির মাধ্যমে বিনোদনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা ও তার প্রতিকারের বিষয়ে আপনা থেকেই সচেতন হতে শেখে শিশুরা। মীনার মতো এত জনপ্রিয় কার্টুন বাংলাদেশে খুব কমই আছে।

গডজিলা

অ্যাডেলাইডের আগের দুটো প্রোডাকশন ‘ম্যান ইন ব্ল্যাকঃ দ্য সিরিজ’ এবং ‘এক্সট্রিম ঘোস্টবাস্টার্স’ এর স্টাইলের সাথে মিল রেখে ১৯৯৮ সালের ২ সেপ্টেম্বর তোহোর গডজিলার অনুসরণে অ্যাকশন, সায়েন্স ফিকশন, থ্রিলার ঘরানার একটি কার্টুন তৈরি করে ডেভিড হার্টম্যান, স্যাম লিউসহ বেশ কয়েকজন নির্মাতা। ৪০ এপিসোডের এই কার্টুনটিতে মূলত মানবিক পরিবেশ বা বাস্তুসংস্থানের সংরক্ষণে ভূমিকা রাখা এক দল গবেষককে চিত্রায়িত করা হয়েছে।

গডজিলা; Source: godzilla-movies.com

দর্শক কি আদৌ কোনোদিন ভুলতে পারবে দানবাকৃতির মিউট্যান্ট প্রাণীগুলোর অনিষ্ট থেকে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষা দেয়া গডজিলাকে? কিংবা ইয়ান জিয়েরিংয়ের নেপথ্য কণ্ঠে উপস্থাপিত বলিষ্ঠ চরিত্রের অধিকারী ড. নিককে? শৈশবের সঙ্গী এলসি চ্যাপম্যান, ম্যান্ডেল ক্র্যাভেন, র‍্যান্ডি হার্নান্দেজ, মনিকা দুপ্রে অথবা বিশ্লেষণধর্মী রোবট নাইজেল আজীবন তাদের মানসপটে এক আনন্দের শিহরণ বইয়ে দিয়ে যাবে। এই কার্টুনের উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে ‘গডজিলা’ নামে সিনেমাও বানানো হয়েছে।

ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট অ্যান্ড দ্য প্ল্যানেটিয়ার্স

পাঁচ প্ল্যানেটিয়ার্স বা মর্ত্যবাসীর আংটি থেকে বের হওয়া পাঁচ ধরনের ক্ষমতা ‘আর্থ, ফায়ার, উইন্ড, ওয়াটার ও হার্ট’ (মাটি, আগুন, বাতাস, পানি ও হৃৎপিণ্ড) একত্রিত হয়ে হাজির হওয়া ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট আর তার মুখ নিঃসৃত সেই অমোঘ বাণী ‘আই অ্যাম ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট’- নব্বই দশকের যেকোনো কার্টুনপ্রেমীকে নস্টালজিক করে দিতে বাধ্য! আমেরিকান অ্যানিমেটেড পরিবেশবাদী টেলিভিশন প্রোগ্রামের পক্ষ থেকে কার্টুনটি নির্মাণ করেন টেড টার্নার এবং বারবারা পাইল।

১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত প্রচারিত এই সিরিজটির দর্শকপ্রিয়তার কারণে বাধ্য হয়ে ১৯৯৩ সালে সিরিজটির সিক্যুয়াল ‘দ্য নিউ অ্যাডভেঞ্চারস অফ ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট’ নির্মাণ করেন হান্না-বারবারা এবং টার্নার প্রোগ্রাম সার্ভিস। ভিলেন চরিত্রে খ্যাতনামা সব অভিনেতারা কণ্ঠ দেয়ায় সে সময় গোটা যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে এশিয়ায়ও ব্যাপক নন্দিত হয়ে ওঠে ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট।

ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট অ্যান্ড দ্য প্ল্যানেটিয়ার্স; Source: syfy.com

পরিবেশ ধ্বংসকারী হগিশ গ্রিডলির অতর্কিত আক্রমণে নিজের বিশ্রামাগার, অরণ্য সব হারিয়ে পৃথিবীর প্রাণীদের অস্তিত্ব সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন প্ল্যানেটের আত্মা গায়া। তিনি পৃথিবীর বুক থেকে কোয়ামে, লিংকা, হুইলার, গি এবং মা-টি নামক পাঁচজনকে বেছে নিয়ে পাঁচটি বিশেষ ক্ষমতাধর আংটি উপহার দেন তাদের। বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ দূষণ আর বাস্তুসংস্থানের জন্য হুমকি স্বরূপ কার্যক্রম বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয় তারা। কোনো বিপদে পড়লে পাঁচ আংটির ক্ষমতা মিলিয়ে তারা ডেকে আনে এই গ্রহের দলনেতা ক্যাপ্টেন প্ল্যানেটকে। কী চমৎকার একটি ধারণার মাধ্যমে কোমলমতি শিশুদের মনে পরিবেশ রক্ষার চেতনা প্রবেশ করিয়ে দেয় এই কার্টুনটি! এই কার্টুনের উপর ভিত্তি করে ২০১৮ সালে লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও একই নামে একটি চলচ্চিত্র দর্শকদের উপহার দিতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। চলচ্চিত্রটিতে নাম ভূমিকায় গ্লেন পাওয়েলের অভিনয় করার জোর সম্ভাবনা আছে।

পপাই দ্য সেইলর ম্যান

‘আই অ্যাম পপাই দ্য সেইলর ম্যান’ থিম সং গাওয়া আর স্পিনিচ (পালংশাক) খেয়ে শত্রুদের সাথে ঢিশুম ঢিশুম করা পপাই চরিত্রটির প্রতি যেন এক ধরনের নেশা ধরে যায় শিশুদের। তাই তো ১৯১৯ সাল থেকে প্রকাশিত থিম্বল থিয়েটার কার্টুন ধারাবাহিকের দশ বছর বয়সে আগমন ঘটা এই চরিত্রটি ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত কাঁপিয়েছে টেলিভিশন জগত। আর এখন ইউটিউবের দুনিয়ায়ও তার কদর কোনো অংশে কম নেই। মার্কিন কার্টুনিস্ট এলিজে ক্রিসলার সেগার এই জনপ্রিয় কার্টুনের নির্মাতা। ১৯৩০ এর দশকে পপাই একটি জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্রে পরিণত হয়।

পপাই দ্য সেইলর ম্যান; Source: comicvine.com

উইলিয়াম বিলি কস্টেলোর নেপথ্য কণ্ঠে পপাই চরিত্রটি কিন্তু একটা সময় হুইফল হেনের মাথায় হাত বুলিয়ে শক্তি অর্জন করতো। ১৯৩২ সালের পরে এই বিষয়টি পরিবর্তন করে পালংশাকের আইডিয়াটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। স্ত্রী অলিভ অয়েল আর একমাত্র সন্তান সুইপিয়াকে সাথে নিয়ে কখনো কখনো সে শার্লক হোমসের মতো গোয়েন্দাগিরিতেও নেমে যায়। দু-তিন কৌটা স্পিনিচ খেয়ে অবলীলায় সে সুপারম্যানের মতো এক হাতে ট্রাক পর্যন্ত উঁচু করে ফেলতে পারে! তার এই জনপ্রিয়তা কার্টুন চরিত্র থেকে শুরু করে কমিকস বই, ভিডিও গেম, আর্কেড এমনকি বড় পর্দায় পর্যন্ত তাকে স্থান করে দিয়েছে। চলচ্চিত্রে পপাইয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অস্কার জয়ী অনবদ্য অভিনেতা রবিন উইলিয়ামস।

বানানাস ইন পাজামাস

‘আমি যা ভাবছি তুমিও কি তাই ভাবছ বি১?’

‘আমারও তা-ই মনে হচ্ছে বি২।’

বানানাস ইন পাজামাস; Source: glive.co.uk

হেলেনা হ্যারিসের ‘বানানাস ইন পাজামাস’ সিরিজের মানবরুপী দুই বানানা বি১ আর বি২ মাথা ঘুরিয়ে হাসিমুখে যে বিনোদন ১৯৯৫ সাল থেকে এই পর্যন্ত দিয়ে আসছে, তার কোনো তুলনা হয় না। এটি মূলত একটি অস্ট্রেলিয়ান শিশুতোষ টেলিভিশন শো যা পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন ভাষায় ডাবিং করে প্রচারিত হয়েছে। সেই ধারায় বাদ যায়নি বাংলাদেশও। ক্যারি ব্লিটনের বানানাস ইন পাজামাস গান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মাণ করা হয় এই টেলিভিশন সিরিজটি।

সঙ্গী তিন টেডি বিয়ার অ্যামি, লুলু আর মর্গান, র‍্যাট ইন অ্যা হ্যাট আর বি১, বি২ ‘কাডলস অ্যাভিনিউ’ নামক একটি এলাকায় একসাথে বসবাস করে। তাদের দৈনন্দিন জীবনের হাসি, আনন্দ, নাচ, গান, পারস্পারিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা, বন্ধুত্ব আর দুষ্টুমির গল্প ‘বানানাস ইন পাজামাস’। সাউদার্ন স্টার এন্টারটেইনমেন্টের এই সিরিজটি থেকে ২০০৮ সালে নির্মাণ করা হয় একটি চলচ্চিত্র।

সামুরাই এক্স

সেই ১৯৯৪ সালের কথা। তখন না ছিল এত টিভি চ্যানেল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট; না ছিল এখনকার মতো হাজারো সহস্র মাঙ্গা সিরিজ (জাপানিজ অ্যানিমে)। তাই তখন রাজত্বটা ছিল রুরৌনি কেনশির একার। নবুহিরো ওয়াৎসুকির লেখা সচিত্র এই সিরিজটিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ১৮৭৮ সালের জাপানিজ মেইজি পিরিয়ডের কথা। সে সময়ের এক দুর্ধর্ষ তলোয়ার যোদ্ধা কেনশি জাপানের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। শান্তি, সংঘর্ষ, প্রেম সবকিছু মিলিয়ে অসাধারণ এই সিরিজটি দেখলে অ্যানিমেশন চরিত্র কেনশির প্রতি মায়া জন্মাতে বাধ্য।

সামুরাই এক্স; Source: pinimg.com

কেনশির গল্প নিয়ে পরবর্তীতে দুটি চলচ্চিত্র, মাঙ্গা, অ্যানিমে ফিল্ম সিরিজ সহ ছোট পর্দা, বড় পর্দায় অসংখ্য অনুষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে।

ফিচার ইমেজ- apple.com

Related Articles