স্পেন্সার ট্রেসি, যিনি তার সাবলীল অভিনয়ের জন্য দর্শকদের মনে চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন, ক্যামেরার সামনে তার পারফর্মেন্সের রহস্য হিসেবে তিনটি বাক্য বলতেন- “ঠিক সময়ে এসো, নিজের লাইন মুখস্থ কর এবং আসবাবপত্রের সাথে ধাক্কা খেয়ো না।” কখনো মুড ভালো থাকলে এই তিন লাইনের সাথে আরেকটি লাইন জুড়ে দিতেন, “দর্শককে কখনো বুঝতে দিও না তুমি অভিনয় করছ।”
স্পেন্সার ট্রেসির কথামতো দর্শককে কিছু বুঝতে না দিয়ে একটি দৃশ্যকে বাস্তবসম্মত করে তুলতে সত্যি সত্যি মদ খেয়ে মাতাল হওয়া, কখনো খেয়েদেয়ে ওজন বাড়িয়ে ফেলা, আবার কখনো কঠিন ডায়েট করে একদম জিরো ফিগার বানিয়ে ফেলা- সিনেমা জগতে এসব তো আজকাল হরহামেশাই হচ্ছে। আগে শুধু হলিউডের শিল্পীদের মধ্যে এই প্রবণতা দেখা গেলেও ইদানিং বলিউডেও শুরু হয়েছে এই ট্রেন্ড, এক কথায় যাকে বলা যায় ‘মেথড অ্যাক্টিং’।
মেথড অ্যাক্টিং মূলত অভিনয়ের একটি কৌশল যার মাধ্যমে অভিনয়শিল্পী বাস্তব জীবনে চরিত্রের গভীরে ঢুকে তার মতো জীবনযাপন করার মাধ্যমে পর্দায় সেই চরিত্রটিকে জীবন্ত করে তোলেন। এই প্রক্রিয়ায় অভিনেতা ক্যামেরার সামনে কোনো অভিনয় করেন না, বরং নিজেই ঐ চরিত্রটি হয়ে যান। তার মতো জীবনযাপন, কথাবার্তায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন এবং নিজেকে ঐ চরিত্রটি বলেই ভাবতে শুরু করেন। এর কিন্তু বহুবিধ নেতিবাচক দিক রয়েছে।
চরিত্রের প্রয়োজনে যতই আপনি অভিনেতা কিংবা দর্শক হিসেবে মেথড অ্যাক্টিং এর ফ্যান বনে যান না কেন, চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের মধ্যে এর সুফল এবং কুফল নিয়ে ঘোরতর বিতর্ক চলছে একদম শুরু থেকেই। আল পাচিনো, ডাস্টিন হফম্যান, জনি ডেপ, ডেনিয়েল ডে লুইসের মতো অভিনয়শিল্পীরা যেখানে মেথড অ্যাক্টিংকে সাদর সম্ভাষণ জানিয়ে দিনের পর দিন তা নিজেদের মধ্যে ধারণ করে যাচ্ছেন, সেখানে রাসেল ক্রো, অ্যান্থনি হপকিন্স, জেমস স্টুয়ার্টের মতো ক্ল্যাসিক অভিনেতারা মেথড অ্যাক্টিংকে স্রেফ পাগলামি বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
ক্লাসিক্যাল অ্যাক্টিং এবং মেথড অ্যাক্টিং-এর ভালো-মন্দ বিচার করার আগে দুটোর মৌলিক ধারণা সম্পর্কে একটু জেনে নেয়া যাক।
ক্লাসিক্যাল অ্যাক্টিং
ক্লাসিক্যাল অ্যাক্টিং বা শাস্ত্রীয় অভিনয় মূলত কনস্ট্যান্টিন স্ট্যানিস্লাভস্কি এবং মাইকেল সেন্ট-ডেনিসের তত্ত্ব ও পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, যেখানে শারীরিক অভিব্যক্তি, কণ্ঠস্বর, কল্পনা, ব্যক্তিগতকরণ, সংস্কার, বহিরাগত উদ্দীপনা এবং স্ক্রিপ্ট বিশ্লেষণ বেশি প্রাধান্য পায়। একে অনেক সময় ‘শেক্সপিয়ারিয়ান স্টাইল’ হিসেবেও অভিহিত করা হয়।
ক্লাসিক্যাল অভিনেতারা আবেগের চেয়ে অ্যাকশনকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেন, তার মানে এই নয় যে তারা খুব ঢালাওভাবে গড়গড় করে ডায়লগ বলে যান, বরং একটি গৎবাঁধা স্ক্রিপ্টের সাথে নিজস্ব স্টাইল মিশিয়ে তাকে প্রাণবন্ত করে তোলাই ক্লাসিক্যাল অভিনেতাদের সার্থকতা। স্ক্রিপ্ট থেকে বেরিয়ে না এসেও কিভাবে স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে একটি চরিত্রকে ওভার-দ্য-টপ ফর্মে ফুটিয়ে তোলা যায়, সেই মুনশিয়ানা দেখিয়েই আঠারো শতক থেকে বীরদর্পে সিনেমাজগতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ক্লাসিক্যাল অভিনেতারা।
মেথড অ্যাক্টিং
মেথড অ্যাক্টিং বা পদ্ধতিগত অভিনয়ের পুরো ব্যাপারটাই নির্ভর করে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি চরিত্রের মধ্যে ঢুকে গিয়ে অভিনেতার বাস্তব জীবনটাকে ঐ চরিত্রের চোখ দিয়ে দেখার উপর। ধরা যাক, সিনেমার একটি দৃশ্যে নায়ককে কাঁদতে হবে। ক্লাসিক অভিনেতারা এক্ষেত্রে গ্লিসারিন ব্যবহার করে চোখে পানি এনে কৃত্রিম আবেগ দিয়ে ডায়লগ বলে দৃশ্য শেষ করে দেন। কিন্তু মেথড অভিনেতারা ঐ একই দৃশ্যে চোখের পানি আনার জন্য অতীত জীবনের কোনো দুর্বিষহ বা যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা মনে করার ব্যাপারে নিখুঁতভাবে মনঃসংযোগ করেন। চোখের পানি তো এবার বাঁধ ভাঙতে বাধ্য! একে বলা হয় ‘সেন্স মেমোরি’, দুনিয়া জুড়ে মেথড অভিনেতারা এ পদ্ধতিই ব্যবহার করে আসছেন।
অভিনয়ের এই শৈলীটি প্রতিষ্ঠিত হয় লি স্ট্রাসবার্গের হাত ধরে। তিনি নিউ ইয়র্কের ‘অ্যাক্টরস স্টুডিও’তে থিয়েটার এবং ফিল্ম ইনস্টিটিউটের একজন প্রশিক্ষক ছিলেন। তার অপারেটিং তত্ত্ব মতে একজন অভিনেতাকে সারাক্ষণ চরিত্রটির মধ্যে ‘লাইভ’ হয়ে থাকতে হবে, এমনকি যখন সে মঞ্চে বা ক্যামেরার সামনে নেই তখনও। চরিত্রের খাতিরে মেথড অভিনেতারা তাদের ঘুম, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক, এমনকি ব্যক্তিগত পছন্দেও অনেক সময় পরিবর্তন নিয়ে আসেন!
মেথড অ্যাক্টিং যখন পাগলামি
অভিনয় খুব একটা বিপজ্জনক পেশা নয়। আধুনিক অভিনয় তো গড়ে ১০ শতাংশ পাঞ্চলাইন আর বাকি ৯০ শতাংশ ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে রবার্ট ডাউনি জুনিয়রের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে “DESTROY THE SCEPTER!” বলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। যা-ই হোক না কেন, দর্শক মজা পাচ্ছে বলেই হয়তো আমরা ‘মেথড অ্যাক্টিং’ এর উপর এত প্রশংসা পাচ্ছি। প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি চরিত্র তো শিল্পেরই বাসিন্দা। নিয়মিত অভিনেতাদের এখন পার্শ্ব চরিত্রে মেশিন হিসেবে দেখা হয়, কিন্তু মেথড অভিনেতা? তারা রীতিমতো সিনেমা উইজার্ডে পরিণত হয়েছেন। নিজেদেরকে আরও অসীম প্রতিভাবান করে তুলতে মেথড অভিনেতারাও মাঝে মাঝে পাগলামি করে বসেন। তেমন কিছু পাগলামির উদাহরণ দেখে নেয়া যাক।
লাস্ট ট্যাংগো ইন প্যারিসে মার্লন ব্রান্ডো
মার্লন ব্রান্ডো, যাকে হলিউডের উত্তম কুমার, অমিতাভ বচ্চন কিংবা রজনীকান্ত বলা হয়, তিনি তার খুব বিখ্যাত এবং বিতর্কিত একটি সিনেমা ‘লাস্ট ট্যাংগো ইন প্যারিস”-এ নায়িকার সাথে একটি ধর্ষণের দৃশ্যের জন্য সত্যি সত্যি তাকে ধর্ষণ করে বসেন। এই বিষয়টি ব্রান্ডো আর ডিরেক্টর বার্তোলুচ্চি ছাড়া আর কেউ জানত না। ১৯৭২ সালের চলচ্চিত্রটি নিয়ে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে মুখ খোলেন নায়িকা মারিয়া শিন্ডার। মেথড অ্যাক্টিং-এর নামে এমন বিকৃত রুচির পরিচয় রীতিমতো ঘৃণার উদ্রেক করে।
সুইসাইড স্কোয়াডের জারেড লেটো
সুইসাইড স্কোয়াড ছবিটিতে জোকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন জারেড লেটো। ডিসি কমিক্সের জোকার হিসেবে অভিনয় করে সুপারহিরো ব্যাটম্যানের চেয়েও যে সুপারভিলেন এত বিখ্যাত হতে পারে, তা ভাবা যায়নি আগে। চরিত্রটিকে ফুটিয়ে তুলতে লেটো আক্ষরিক অর্থেই জোকারের মতো খেত, ঘুমাত, এমনকি শ্বাসও নিত! ‘দ্য ডার্ক নাইট’ চলচ্চিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য অস্কারজয়ী অভিনেতা হিথ লেজার এ চরিত্রের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার জন্য দিনের পর দিন নিজেকে হোটেল রুমে তালাবদ্ধ করে মেথড অ্যাক্টিং এর চর্চা করেছেন বটে, তবে জারেড লেটো করেছেন ঠিক তার উল্টোটি। শুটিং সেটে জোকার সেজে আসার পাশাপাশি তিনি করতেন জোকারের মতোই নানা কাজকারবার। চরিত্রের সাথে তিনি এমনভাবে মিশে গিয়েছিলেন যে সহ-অভিনেতাদের হয়রানি করতে বুলেটের প্যাকেজ, মৃত শূকর, জীবন্ত ইঁদুর, এমনকি ব্যবহৃত কনডম পর্যন্ত পাঠিয়েছিলেন!
মাই লেফট ফুটের ডেনিয়েল ডে লুইস
মেথড অ্যাক্টিংয়ের অন্যতম দিকপাল ডেনিয়েল ডে লুইস তার পদ্ধতির কারণে রীতিমতো কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছেন। তবে চরিত্রের প্রয়োজনে তার বাড়াবাড়ি প্রায়শ’ অন্যের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ‘দ্য ক্রুডিবল’ চলচ্চিত্রের জন্য সতেরো শতকের আদলে বাড়ি নির্মাণ কিংবা ‘গ্যাংস অফ নিউ ইয়র্ক’-এর জন্য কসাইয়ের কাজ শেখা- কাঁহাতক আর এসব সহ্য করা যায়!
কিন্তু লুইসের সব বাড়াবাড়ি ছাপিয়ে গেছে ‘মাই লেফট ফুট’ চলচ্চিত্রে। এ চরিত্রটির জন্য টানা ৮ সপ্তাহ তিনি আইরিশ শিল্পী ক্রিস্টি ব্রাউনের সাথে এক পল্লী সেরেব্রাল হাসপাতালে দিন-রাত কাটিয়েছেন। সেসবও নাহয় ঠিক আছে, কিন্তু বিপত্তি ঘটল ক্যামেরা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে। সারাদিন তিনি হুইলচেয়ারে ঘোরা শুরু করলেন, হুইলচেয়ার না পেলে কারো কোলে উঠে ঘোরার বায়না শুরু করে দিলেন, অন্যের হাতে খাওয়ার জন্য প্রবল জেদ ধরে বসলেন, যেমনটা ব্রাউন করতেন।
দ্য ফলের জেমি ডোরনান
একজন সিরিয়াল কিলারের মনের মধ্যে কিভাবে ঢুকবেন আপনি? আপনি যদি অভিনেতা জেমি ডোরনান হন, তাহলে একেবারে বাস্তব জীবনে একজন নারীর পিছু নেয়া শুরু করুন। যেহেতু কাজটি পুরোপুরি গবেষণার জন্য করা হচ্ছে এবং ভদ্রমহিলা তার নিরাপত্তাহীনতার ব্যাপারে কিচ্ছু টের পাননি, কাজেই এটি মেনে নেয়া যেতেই পারে। সবটাই তো আসলে শিল্প। ডোরনানের ঘাড়ে দোষ চাপানোর আগে সেই দায় নেয়ার জন্য সংস্কৃতি তো আছেই।
মেথড অ্যাক্টিং যে কারণে বিতর্কিত
এখানেই শেষ নয়, মেথড অ্যাক্টিং নিয়ে রয়েছে আরও অনেক বিতর্কিত কাহিনী। একজন অভিনেতার মূল উদ্দেশ্য যদি হয় তার অভিনীত চরিত্রকে দর্শকের সামনে বাস্তবরূপে ফুটিয়ে তোলা, তাহলে মেথড অ্যাক্টিংকে বাহবা দেয়া যেতেই পারে। তবে মেথড আক্টিং এর বিরোধিতা করার পিছনে যুক্তিসঙ্গত বেশ কিছু কারণও রয়েছে। এবার তাহলে সেই কারণগুলো একটু দেখে নেয়া যাক।
পরিচয় সংকট
একটি চলচ্চিত্র বানাতে কতদিন সময় লাগে? ধরে নেয়া যাক তিন মাস। এই সুদীর্ঘ সময় ধরে মেথড অভিনেতারা নিজেদের যে চরিত্রের মধ্যে বন্দি করে ফেলেন, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে সবার আগে তারা যে সমস্যাটির মুখোমুখি হন তার নাম পরিচয় সংকট। না, তিনি আর ঐ চরিত্রে থাকতে পারেন, না চট করে আগের মানুষে পরিণত হতে পারেন। মাঝামাঝির এ দশায় রীতিমতো বিষণ্ণতায় ভুগতে থাকেন প্রকৃত মেথড অ্যাক্টররা।
অতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা
দীর্ঘদিনের লালিত অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসতে গেলে ঐ চরিত্রের জন্য যে মায়া জন্মায় তা অভিনেতাদের জন্য বয়ে আনে আবেগের সুবিশাল সমুদ্র। এ কারণেই লুইস হয়তো নিজের পায়ে হাঁটতে চাইতেন না।
শারীরিক ক্ষতি
বিশেষত বায়োপিকগুলোতে চরিত্রের সাথে সামঞ্জস্য রাখতে গিয়ে অভিনেতারা অল্প সময়ের মধ্যে কখনো খুব বেশি ওজন বাড়িয়ে ফেলেন, কখনোবা একদম ওজন কমিয়ে ফেলেন। তাৎক্ষণিকভাবে এর তেমন কোনো প্রভাব না থাকলেও ভবিষ্যতে এ জিনিসগুলো অভিনেতাদের শরীরের উপর খুব বাজে প্রভাব ফেলে।
মেথড অ্যাক্টিং কি শুধুই পাগলামি?
এতক্ষণ সব কিছু শুনে আপনার যদি মনে হয় মেথড অ্যাক্টিং খুব খারাপ কিছু, তাহলে আপনার ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়। শুধু ভারতীয় উপমহাদেশেই নয়, সারা বিশ্বে আমির খান নিজের একটি জায়গা তৈরি করে নিয়েছেন মেথড অ্যাক্টিংয়ের মাধ্যমে। যদিও তিনি এটিকে মেথড অ্যাক্টিং নামে আখ্যা দিতে রাজি নন, তবে তার কর্ম পদ্ধতিই বলে দেয় এটি প্রকৃত অর্থে কি।
আমির খানের তিনটি সিনেমা দাঙ্গাল, ধুম থ্রি এবং গজনী পর্যালোচনা করে দেখা গেছে দাঙ্গালের মহাবীর সিং ফোগাতের তরুণ ও বৃদ্ধ দুটি চরিত্রের জন্য তিনি যথাক্রমে ২৫ কেজি ওজন বৃদ্ধি এবং ৩২ কেজি ওজন হ্রাস করেছেন। অতিরিক্ত ২৫ কেজি ওজন নিয়েও দিন-রাত কসরত করে শিখেছেন কুস্তি। কোনো রকম বডি স্যুটের সহায়তা না নিয়ে ওয়েট ট্রেনিংয়ের সাহায্যে নিজের শরীরকে করে তুলেছেন একদম ফিট।
ধুম থ্রি সিনেমায় আমির ছিলেন একজন অ্যাক্রোব্যাট। সার্কাসের বিপজ্জনক সব শারীরিক কসরত করতে দরকার ছিল ছিপছিপে একটি শরীরের। মাত্র কয়েক মাসের কঠিন ডায়েট প্ল্যান আর কার্ডিও ভাস্কুলার ব্যায়ামের সাহায্যে তিনি অর্জন করেছেন পুরোদস্তুর একজন জিমন্যাস্টের শরীর আর আয়ত্ত করেছেন কঠিন সব অ্যাক্রোব্যাটিক কৌশল।
গজনীর মাধ্যমে হিন্দি সিনেমায় প্রথম এইট প্যাক অ্যাবস ধারার প্রচলন করেন আমির। এজন্য প্রতিদিন সকালে উঠে টানা তিন ঘণ্টার ব্যায়াম করেছেন তিনি, যার মধ্যে কার্ডিও ভাস্কুলার সিট আপের পাশাপাশি বক্সিং প্রশিক্ষণ আর ভারোত্তোলনও ছিল। খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারেও ছিল কঠিন নিয়মকানুন। প্রতিদিন ১৬টি ডিমের সাদা অংশ আর বিভিন্ন প্রোটিনযুক্ত খাবার খেতেন তিনি। আর ৩-৪ লিটার পানি পান করা তার জন্য এক রকম ফরয হয়ে গিয়েছিল।
মেথড অ্যাক্টিং এর এমন আরো ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে। রণবীর সিং ‘লুটেরা’ সিনেমার একটি দৃশ্যে নায়িকা সোনাক্ষী সিনহার সাথে চিৎকার করতে পুরো দৃশ্য জুড়ে নিজেকে পিনের খোঁচায় জর্জরিত করেন যাতে গলা থেকে ঠিকমতো চিৎকার বের হয়।
পদ্ধতি যা-ই হোক না কেন, একজন অভিনেতা তার বাস্তব জীবন আর রুপালি পর্দার জীবনের মধ্যে পার্থক্য করতে পারছেন কিনা এটা একেবারেই তার ব্যক্তিগত দক্ষতার ব্যাপার। সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি চরিত্রকে নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় বিষয়। কিন্তু সেই চরিত্রের মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলা নেহাতই বোকামি। যতদিন পর্যন্ত এ দুয়ের মধ্যে একটি সমন্বয় সাধন না হবে, ততদিন পর্যন্ত মেথড অ্যাক্টিং নিয়ে বিতর্ক চলতেই থাকবে।