স্বাধীনতা আমাদের সামনে হাজির হতে পারে বিভিন্ন আঙ্গিকে। ধরাবাঁধা কোনো সংজ্ঞা নেই তার। মানবিক মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত হতে না দিয়ে এটি যেমন নতুন দিনের সূচনা এনে দিতে পারে, তেমনই টেনে দিতে পারে যবনিকাপাত।
ভাগীরথী সাহার কথাই ধরা যাক। নামটি আমরা ক’জন স্মরণ করতে পারি? সেই সাহসী নারীর কথা বলছি, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের হাতে বন্দী হয়ে যিনি নিয়মিত শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু দিনশেষে এসব তার ইস্পাত-দৃঢ় মনোবলকে একচুলও নড়াতে পারেনি। হাসিমুখেই তিনি সবকিছু মেনে নিয়েছেন, যেন এসব ছিল তার ‘ভাগ্যের লিখন’। পাকিস্তানি হানাদারদের সন্দেহের সুযোগ না দিয়ে প্রাণপ্রিয় মুক্তিসেনাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন। এসব তথ্য মুক্তিসেনাদের অভিযানে বহুকাঙ্ক্ষিত সফলতা এনে দিয়েছে।
কিন্তু সুদিন খুব বেশি স্থায়ী হয়নি। ভাগীরথী ধরা পড়ে যান পাকিস্তানিদের হাতে, তার উপর নেমে আসে অত্যাচারের খড়গ। মোটরসাইকেলের সাথে বেঁধে তাকে ঘোরানো হলো পুরো গ্রামে। এরপরই মুক্তির স্বাদ পান ভাগীরথী। দুর্ভোগের দিনগুলোর বেলা ফুরোয়। তার ক্ষতবিক্ষত দেহ ছুড়ে ফেলা হয় বলেশ্বর নদীতে। চিরমুক্তির পানে তার আত্মার প্রস্থান ঘটলো এই নশ্বর পৃথিবী থেকে।
আমি ভাগীরথী সাহার এই অসম আত্মত্যাগের কথা জানতে পেরেছি ফেসবুকের একটি ভিডিওর মাধ্যমে, যেটি প্রকাশিত হয়েছিল রোর বাংলার ফেসবুক পেজে।
যখন এই ভিডিওর মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, দেশের তরে এমন মহান আত্মত্যাগের পরও ভাগীরথী বলার মতো কোনো স্বীকৃতি পাননি, স্বাধীন দেশে তার সন্তানেরা অবহেলিত হয়ে এককোণায় পড়ে আছে, তখন নিজের অজান্তেই আমার চোখ ছলছল করছিল।
একটি অসাধারণ কাহিনী, সাথে চিত্তাকর্ষক দৃশ্য, এবং শব্দের শক্তিশালী ব্যবহার– কেবল দুই মিনিট দৈর্ঘ্যের ভিডিও হলেও এটি আমার মতো অনেকের মধ্যেই হয়তো এক অন্যরকম অনুভূতি জাগাতে সক্ষম হয়েছে। দেশের জন্য আরও যারা এমন আত্মত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদের সম্পর্কে জানার ইচ্ছা বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে।
‘ফ্রিডম স্যানিটারি ন্যাপকিন’ একাত্তরে বিশেষ অবদান রাখা নারীদের প্রতি সম্মাননাস্বরূপ পাঁচটি ভিডিও নিয়ে একটি সিরিজ প্রকাশ করেছে, নাম- ‘অদম্য নারীদের বীরগাথা‘। এই ভিডিও সেই সিরিজেরই অংশ।
ভাগীরথী সাহার কাহিনীর পাশাপাশি আরও বেশ কিছু কাহিনী নিয়েও ভিডিও নির্মাণ করা হয়েছে। যেমন- ‘শহীদ আজাদের মা’ সাফিয়া বেগমের আত্মত্যাগের ব্রত, বীরপ্রতীক কাঁকন বিবির যুদ্ধকাহিনী, রাখাইন কিশোরী প্রিন্সা খে-র সুচতুর বিষপ্রয়োগে চৌদ্দ পাকিস্তানি সেনার মৃত্যু এবং বীরাঙ্গনা ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর মুক্তির সংগ্রাম ও স্বাধীনতা-পরবর্তী জীবনের লড়াইয়ের গল্প, ঠিক যেভাবে তিনি পরাধীন দেশটাকে স্বাধীন করেছিলেন।
এই মহান মানুষদের সম্মানিত করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ফ্রিডম স্যানিটারি ন্যাপকিনের এই প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এটা সফলভাবে একটা বার্তা দিতে পেরেছে– গৌরব নিহিত প্রতিরোধে, স্বাধীনতা নিহিত সংকল্পে, আর মর্যাদা নিহিত কর্মে।
ভিডিও সিরিজটি দেখতে স্ক্যান করুন: